নীলের_পরি (১৫)

0
10

#নীলের_পরি (১৫)

কার মায়াতে পড়ে গেলে পরি? এই একটি ম্যাসেজ পরির মাথা তে ভন ভন করে ঘুরছে। নীল তাকে এই ম্যাসেজ দিয়েছে। কিভাবে সম্ভব এটা! নীল তো জানেই না এটা যে পরির আইডি। আর তাছাড়া পরি তো বলেছে ও রূপা, তাহলে? পরির মাথা যেন কোনো কাজ ই করছে না।
এই মুহূর্তে পরির খুব অস্বস্তি হচ্ছে। আজকাল এই অস্বস্তি নামক রোগ টা যখন তখন শরীরে জেকে বসে। শরীরের নিউরন গুলো বোধহয় কাজ করছে না। পরির মাথা টাই ঘুরছে। নীল যে জেনে গেল এটা পরির আইডি। নীলের মাথার মধ্যে যদি আ ঘা ত করে এই সময় টুকু ভুলিয়ে দেওয়া যেত। তাহলে পরি সোজা নীলের মাথা তে আ ঘা ত দিত। কি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হলো! কিন্তু এই মুহূর্তে একটু ও নাভার্স হওয়া যাবে না। যদি ও নীল জেনে গেছে এটা পরি তাও পরি বলল,”মানে টা কি? পরি টা আবার কে?”

“ওহ আসলে ভুল করে তোমাকে ম্যাসেজ দিয়ে ফেলেছি রূপা।”

“ওহ।”

“হুমম। আমি তো হাফসার বান্ধবী পরি কে ম্যাসেজ দিচ্ছিলাম। কি করে যে তোমার কাছে চলে গেল।”

পরি বুঝে গেল। নীল পুরো ঢপ দিচ্ছে। কিন্তু পরি ও তো পরি কিছু তেই দোষ স্বীকার করবে না। তাই পরি বলল,”হ্যাঁ বুঝেই তো গেছেন। এত ভাব ধরে এখন আর কি হবে।”

“হাহাহা। তা হঠাৎ আমাকেই পেলে বোকা বানানোর জন্য?”

“আসলে তেমন কিছুই না। রূপা আপু আপনা কে নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিল। তাই একটু বাজিয়ে দেখলাম।”

“তা কি বুঝলে?”

“বুঝলাম আপনি একটা বজ্জাত। বারো টা নাকি জি এফ লাগে,কি ভয়ঙ্কর!”

“আহ পেলাম কোথায় এখন ও তো কয়েক জন বাকি আছে।
তা তুমি কিছু মেয়ে খুঁজে দাও না।”

“ইস ঢং। এত জি এফ দিয়ে কি হবে? বিয়ে তো একজন কেই করবেন ।”

“তা ঠিক। কিন্তু জি এফ ছাড়া কি চলে নাকি । যদি ও একজন খুচাচ্ছে কিন্তু পাত্তা দিচ্ছি না।”

পরির চোখ কপালে উঠে গেল। কি ভয়ঙ্কর ছেলে! এই ছেলের সাথে নার্ভাস হলে চলবেই না। তাই পরি বলল
“কেন? ঐ মেয়ে কি করল যে তাকে জি এফ বানানো যাবে না।”

“তা কিছু করে নি। কিন্তু আমার কাছে ফালতু মনে হয়।
হাজারো ছেলের সাথে মেলামেশা।”

নীলের কথা তে পরি অবাক হলো। যার দশ বারো টা জিএফ আছে সে নাকি ভালো মেয়ে খুঁজে তা ও জি এফ বানানোর জন্য। ব্যাপার টা কেমন ঘোলাটে হলো। পরি বলল,”দেখি মেয়ে টার ছবি।”

নীল আইডি সহ মেয়েটার ছবি দিল। মেয়েটার নাম,তানিশা ইসলাম। পরি পুরো আইডি ঘেঁটে দেখল। মেয়েটা অনেক স্মার্ট আর সুন্দরী ও বটে। কিন্তু ফেসবুকে যখন তখন লাইভ এ আসে। আর হাজারো ছেলের সাথে যোগাযোগ। বোঝাই যায় যে মেয়েটা প্লে গার্ল । কিন্তু তবু ও পরি নীল কে বলল
“মেয়ে টা তো বেশ সুন্দর।”

“বিদঘুটে। আচ্ছা একটা হেল্প করবে পরি?”

“হুম বলুন।”

“মেয়ে টা কে আচ্ছা করে বকে দিবা প্লিজ। অনেক জালাচ্ছে।”

“এহ আমি কি বলব?”

“কিছু একটা বল। কিন্তু মেয়েটা কে সরাও।”

নীলের কথা তে পরি দোটানা তে পড়ে গেল। কি করবে ও বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে বলল,”আচ্ছা বকা দিব অনেক। কিন্তু যদি আমায় কিছু বলে।”

“উহুম কিছু বলবে না। কিছু বললে আমাকে বলবা আমি গিয়ে দুটো থাপ্প ড় বসিয়ে আসব।”

নীলের কথাতে পরি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। যে ছেলে নিজেই মেয়েটার থেকে বাঁচতে চাচ্ছে সে নাকি থা প্পড় বসাবে। ভালোই গুল মারতে পারেন ওনি। পরি নীল কে বলল,”আচ্ছা। থা প্পড় মারতে ভুলবেন না কিন্তু।”

“উহু ভুলব না,প্রমিস।”

তারপর নীলের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে পরি অফলাইন হয়ে গেল। এই মূহুর্তে পরির খুব ভালো লাগছে। নীলের সাথে খুব ভালো করে কথা হয়েছে আর আজ নীল ও বেশ অনেকক্ষণ সময় দিয়েছে ওকে। ভাবতেই পরির মন বার বার শিহরিত হচ্ছে। নীল কে কী ভাবে ভালোবাসা ফেলল পরি। ইস,হঠাৎ করেই পরির খুব ভালো লাগছে। আর খুশি ও লাগছে। হাজারো অবাধ্য ইচ্ছে,ভাবনা, চিন্তা করতে করতে পরি ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল।

আজকাল নীলের সাথে প্রচুর কথা হয় পরির। সারাক্ষণ মাথায় শুধু নীল ই ঘোরে। পরি বুঝে গেছে নীল কে না চাইতে ও ভালোবেসে ফেলেছে। ভালোবাসা কখন কার সাথে হবে তা বোঝা দায়। পরি বুঝতে পারে না। ও যাকে ঘৃণা করত আজ তাকেই ভালোবাসে। সত্যি কি এমন হয়? এমনটা তো সিরিয়ালে দেখা যায়। বাস্তব জীবনে কি করে সম্ভব? আসলে আমরা মানি আর না মানি সিরিয়ালের ৯০% ই আমাদের জীবনের অংশ। কোনো না কোনো ভাবে এমনটা হয়েই যায় তাই হয়তো আজ পরি ও ঘৃণার মানুষ টাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু বলার মতো পরিস্থিতি বা ইচ্ছে নেই পরির। কারণ পরি এই প্রথম কাউকে ভালোবেসেছে বলা যায় জীবনের প্রথম ক্রাশ। পরি সব সময় এই প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে থেকেছে। আর যদি ভালোবাসার কথা বলে তো পুরো বিষয়টাই ঘেঁটে যাবে। নীলের কথা মনে পড়তেই পরি আনমনে হাসে। সত্যি সে ভালোবেসে পাগল হয়ে গেছে। কখন কি ভাবে যে ভালোবেসে ফেলল কে জানে। ইস পরি আর নীল কে নিয়ে তো ইতিহাস লেখা দরকার। অবশ্য ই দরকার কেন লেখা হবে না, এই সব ভাবতে ভাবতেই পরির ধ্যান কাটল মায়ের ডাকে। মিসেস রাহেলা দরজায় কড়া দিয়ে বললেন,”পরি এই পরি আধ ঘণ্টা হয়ে গেল গোসল কি শেষ হয় নি। তুই তো এতো দেরি করিস না।”

পরি তড়িঘড়ি করে বলল,”আর পাঁচ মিনিট আম্মু।”

পরি শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে নীলের ভাবনার মত্ত হয়ে গিয়েছিল। ভাবতেই পরি লজ্জায় নুইয়ে গেল। ইস আজকাল ভালোবাসাতে পরি বুঝি লাইলি কে ও হার মানাবে।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

যারা “চলো রোদ্দুরে ২” পড়তে আগ্রহী তারা কমেন্ট দেখুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here