সূচনা_পর্ব #ধূসর_রঙের_প্রজাপতি #ফাতেমা_তুজ

0
253

(১)
বিয়ে করবে না বিধায় বাসা থেকে পালিয়া আসা ঝিলের সেই বিয়ে টা হয়েই গেল। তা ও কিছু মুহূর্তের পরিচিত নিজের থেকে ১০ বছরে বড় একজনের সাথে। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে হাঁটু তে মুখ গুঁজে জড়োসড়ো হয়ে বসে আসে ঝিল। আর তার থেকে ঠিক গুনে গুনে তিন ফুট দূরত্বে চিন্তিত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে অভিনব। কি থেকে কি হয়ে গেল! গ্রামের মানুষের চিন্তা ভাবনা এতো টা বিকৃত হবে তা জানা ছিল না ওর।

কয়েক ঘন্টা আগের ঘটনা।

ইউএসএ থেকে ট্রাভেলিং এর জন্য বি ডি তে এসেছে অভিনব। তবে আর ও একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে ও আছে। কুমিল্লা রোড দিয়ে কার ড্রাইভ করছিলো ওহ। আচমকা এক টি মেয়ে গাড়ির সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে পরে।
অভিনব ঠিক সময়ে ব্রেক কষেছিলো বলে বেঁচে যায় ঝিল। তবে ঝিলের কাছে এসে কিছু বলার পূর্বেই আধো আধো চোখে জ্ঞান হারায়। অভিনব পানির ছিটে দিলে ও পরোপুরি জ্ঞান ফিরে না মেয়েটির। চারপাশ টা জঙ্গলের ঘেরা। দূর দূরান্তে শুধুই গাছ আর গাছ। অভিনব গুগল ম্যাপে লোকশন দেখে নেয়। এখান থেকে হসপিটাল বহুদূরে আর ঝিলের মাথা থেকে র’ক্ত ঝরছিলো খুব।
তাই সে কিছু না ভেবে ঝিল কে পাজা কোলে করে নিয়ে গ্রামের ভেতরে চলে আসে। গ্রামের দিক টায় রাত নয়টা মানে অনেক রাত্রি। অভিনব একটা বাড়ির কাছে গিয়ে নক করে। কয়েক বার নক করার পর ই একজন মাঝ বয়সী মহিলা দরজা খুলে দেন।

অভিনব কে দেখে সামান্য চমকে উঠেন। বিদেশি দের মতো দেখতে যুবক ছেলে তার বাড়িতে কি দরকারে আসতে পারে! ঘরে তার যুবতী মেয়েরা রয়েছে। স্বামী মারা গেছেন কয়েক বছর হলো। অভিনব অনুনয়ের স্বরে বলে
_ মাফ করবেন এতো রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য। আমি খুব বিপদে পরেছি , যদি সাহায্য করতেন।

ভদ্র মহিলা গলা ঝেরে বললেন
_ কি সাহায্য করতাম ?

অভিনব অন্ধকার থেকে একটু আলোর কাছে আসতেই, মহিলার চোখ যায় অভিনবর কোলে থাকা ঝিলের দিকে। ওনি উল্টো পাল্টা কিছু ভেবে চিৎকার করে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে আশে পাশের বাসা থেকে লোক জন চলে আসেন। সবাই কানাঘুষো শুরু করে দেয়। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তে তাকিয়ে থেকে সে দিকে পাত্তা দিলো না। খানিক টা চিৎকার করেই বলল
_ আমার কথা টা শুনুন প্লিজ। মেয়েটা আঘাতপাপ্ত , প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন। না হলে কিছু হয়ে যেতে পারে।

একজন লোক এগিয়ে আসেন। বোধহয় গ্রামের গন্য মান্য ব্যাক্তি হবেন। অভিনব কে ভালো করে দেখে রুষ্ট গলাতে বললেন
_ চলো আমার সাথে।

ঝিল কে কোলে নিয়ে লোকটার পিছু পিছু চলল ওহ। দোতলা দালান বাড়ি , তবে ছোট খাটো দালান। লোকটা একটা ঘর দেখিয়ে দিলো। অভিনব ঝিল কে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেয়। তারপর ঝিলের দিকে একপলক তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল
_ আঙ্কেল তুলো আর একটু গরম পানি হবে ?

লোকটা ইশারা করে তার স্ত্রী কে গরম পানি আর তুলো আনতে পাঠালেন। অভিনব ঝিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার কপালে আঁচড়ে পরা চুল গুলো র’ক্তে লেপ্টে আছে। মুখ টা শুষ্ক, সারা শরীর ঘামে একাকার। ভদ্র মহিলা গরম পানি আর তুলো এনে দিতেই অভিনব খুব যত্ন করে পরিস্কার করে দিলো। তবে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের হতে লাগলো বিরতহীন।অভিনবর কপালে সুক্ষ ভাঁজের সৃষ্টি হলো। ভদ্র লোক গ্রামের হাতুড়ি ডক্টর কে খবর পাঠিয়েছেন।
তিনি এসে ঝিলের মাথায় ঔষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। ঝিল কে ইনজেকশন পুস করাতে ওহ এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। অভিনব ক্লান্ত নিশ্বাস ফেলে ভদ্র লোক কে ধন্যবাদ জানালো। ভদ্র লোক কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থেকে বললেন
_ আমার সাথে একটু বাইরে আসো।

_ কিন্তু ওনি?

_ সমস্যা নাই আমার স্ত্রী আছে এখানে।

অভিনব গরম নিশ্বাস ফেলে ভদ্রলোকের সাথে বাইরে গেলো। অভিনব লক্ষ্য করলো ভদ্র লোকের মুখ টা বেশ গম্ভীর। ভদ্র লোক গলা ঝেরে প্রশ্ন ছুঁড়লেন
_ নাম কি তোমার ?
_ অভিনব সরকার ইহান।
_ বাসা ?
_ আমি ইউএসএ থেকে ট্যুরে বিডি টে এসেছি।

ভদ্রলোক সামান্য অবাক হলেন। অবশ্য অভিনব কে দেখতে বিদেশি দের মতোই লাগে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ভদ্রলোক আবার বললেন
_ মেয়েটা তোমার কে হয়?

_ আসলে আমি কুমিল্লার রোড দিয়ে ড্রাইভ করছিলাম। হঠাৎ করেই মেয়েটা আমার গাড়ির কাছে এসে পরলো।

ভদ্রলোক নাক মুখ কুঁচকে নিলেন। অভিনবর কথা ঠিক ওনার পছন্দ হলো নাহহ। আর কোনো প্রশ্ন না করে ওনি অভিনব কে ঘরে পাঠালেন। ওনার বাসার সম্মুখে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে। পুরো গ্রামে ছেয়ে গেছে একটা যুবক ছেলে যুবতী মেয়েকে কোলে নিয়ে গ্রামে ঢুকেছে।
ভদ্রলোকের বাড়ি তে গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বির দেখা মিললো। তারা সবাই মিলে আলোচনা করলেন। আশে পাশের সকলে নানা কথা বলছে। অবশ্য আজকাল ছেলে মেয়েদের বিশ্বাস করা যায় না।

অভিনব ঝিলের পাশে বসে ফোন স্ক্রল করছে। এখানে নেটওয়ার্ক নেই , বিরক্ত হলো ওহহ। ভদ্রলোক ঘরে ঢুকতেই অভিনব উঠে দাঁড়ালো। ভদ্রলোক কিছুটা বিব্রত বোধ করে শান্ত স্বরেই বললেন
_ শোনো বাবা। আমরা জানি না কি সত্যি কি মিথ্যে। তবে গ্রামের কেউ ই যবুক যুবতী কে এভাবে সহজ ভাবে নিতে পারছে না। কানাঘুষো করছে নানান কথা , আমি তোমার পক্ষ নিয়েছিলাম। কিন্তু সবার যুক্তির কাছে আমাকে নত হতে হয়েছে।

অভিনব কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। সব যেন ওর মাথার উপর দিয়ে গেল। অভিনব ধীর কন্ঠে বলল
_ আঙ্কেল ক্লিয়ার করে বলুন। কি হয়েছে কি ?

ভদ্রলোক ফোঁস করে দম ফেললেন। কেন জানি অভিনব কে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। অভিনব কে ইশারা করে বাইরে আসতে বললেন। অভিনব ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে বাইরে আসলো। আশে পাশে প্রচুর মানুষের ভীর। যেন কোনো মেলার হাঁট বসেছে। কয়েকটা লোক বলছে ঐ যে পোলা ডা আইছে। কি সুন্দর দেখতে , তবে সুন্দর পোলা রাই এইসব আকাম কুকাম করে। অভিনব নাক মুখ কুঁচকে নিলো। কি সব মুখের ভাষা!
কয়েকজন লোক এসে অভিনব কে নানান প্রশ্ন করলো। অভিনব যথাযথ উত্তর করলো। একজন বৃদ্ধ লোক তো পানের পিক ফেলে বললেন
_ গ্রামের একটা নিয়ম আছে। তোমার কথার কেউ বিশ্বাস করতেছে না। সবাই মাইয়া ডার নামে কু কিচ্চা কইতেছে। আসলে এহন তো দেহা যায় যুবক যুবতীরা বাসা থেকে পালায়া খারাপ কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
এহন তোমাগো বিশ্বাস করি কেমনে? তুমি তো আবার কইলা তুমি এই দেশের মানুষ নাহ। আর বিদেশ থেকে আইসা অনেক পোলা রাই কু কাম করে। এহন আমরা সবাই একটা সিদ্ধান্ত নিছি ।

অভিনব মনোযোগ দিয়ে প্রতি টা কথা শুনলো। ব্যগ্র কন্ঠে বলল
_ দাদা আমি তো সত্যি কথাই বলছি। আপনারা যেমন ভাবছেন তেমন কিছু না। আমি তো মনুষ্যত্বর খাতিরে মেয়েটা কে তুলে আনলাম।

একজন মহিলা চাঁপা কন্ঠে বললেন
_ ধরা পরলে কতো কথাই কয় সবাই। মাইয়া ডা হয়তো যাইবার চাইছিলো গা তহনি কোনো দুর্ঘটনায় মাথায় ব্যাথা পাইছে। যা কিছু রটে তার কিছু তো বটে তাই নাহ।

_ আন্টি আমার কথথ

সবাই মহিলার কথায় গলা খাকাড়ি দিয়ে সায় দিলো। মহিলা প্রশস্ত হাসলেন যেন কোনো বিশ্ব জয় করেছেন।

অভিনব বার বার একি কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ ওর কথা বিশ্বাস করছে নাহহ। ফোনের নেটওয়ার্ক ও নেই। বার বার বলার পর ও কেউ কোনো কথা শুনলো না।
সবার মতে কলঙ্ক যা হবার তা হইছে এখন বিয়ে দিয়া দিলে গ্রামের কোনো ক্ষতি হবে না।

বিয়ের কথাতে অভিনব চমকে তাকালো। উঁচু কন্ঠে বলল
_ এভাবে আপনারা কারো বিয়ে দিতে পারেন না। এটা অন্যায়

অভিনবর কথায় কেউ পাত্তা না দিয়ে গ্রামের হজুর কে ডাকলেন। হজুর কাজীর কাজ ও করেন। ওনার কাছে কাগজপত্র সবি আছে।

অভিনব বার বার বলল একবার বোঝার চেষ্টা করুন। কিন্তু কেউ কোনো কথা শুনলো না। ঘন্টা খানেক বাদেই ঝিলের ঘুম ভাঙ্গলো। মাথা চেপে ধরে উঠে বসলো। চোখ খুলতেই এক গাঁদা মানুষ কে দেখতে পেয়ে ভরকে গেল।
ভদ্র মহিলা আশ্বস্ত করে বললেন ওহ ঠিক আছে।ঝিলের মাথার উপর দিয়ে সব যাচ্ছে। সবাই কি বলছে এসব ওর বিয়ে? ফোন টা দৌড়ানোর সময় পরে গেছে। ব্যাগে শুধু নিজের কার্ড টা আছে। তবে কোনো নাম্বার ও নেই। একি ঝামেলা হলো! ঝিলের সামনে অভিনব কে আনা হলো। অভিনব কে একপলক দেখে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো ঝিল। একে তো জ্ঞান হারানোর সময় দেখেছিলো ওহহ। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওদের বিয়ে টা হয়ে গেল। সিনেমায় দেখেছিলো এমন , কিন্তু ওর জীবনেই এসব ঘটে গেল।

*

ঝিল মাথা নিচু করে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ভয়ে একদম চুপসে গেছে । অভিনব হালকা কেশে ঝিলের মনোযোগ নিয়ে নিলো। ঝিল মাথা উঁচু করে তাকালো। অভিনব লম্বা করে দম নিয়ে বলল
_ আপনাকে কিছু বলার ছিলো।

ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিলো। অভিনব কিছু বলবে তার আগেই গলা উঁচিয়ে বলল
_ দেখুন আপনি কে আমি জানি না , জানতে ও চাই না। আমাকে সাহায্য করেছেন তার জন্য আমি সত্যি কৃতঙ্গ। গ্রামের মানুষের উগ্র চিন্তাতে একটু আগে যা হয়ে গেল তা আমি মানি না। এখন আপনি যদি অধিকার নিয়ে আমার সাথে জোড়াজোড়ি করতে চান তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।

অভিনবর ভ্রু যুগল আড়াআড়ি হয়ে কুঁচকে গেল। বাংলার বহুল প্রচলিত সেই প্রবাদ টা মনে পরে গেল

” যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর ”

অভিনবর ভেতর থেকে কেবল দীর্ঘশ্বাস এলো। ঝিল বেডের কোনে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। ভয় পেয়েছে অনেক টা তা মুখের ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিজেকে তটস্থ করে বলল
_ আপনি ভয় পাবেন না । আমি তেমন কিছুই করবো না। শুধু মাত্র কয়েকটা কথা জানার ছিলো। আপনি আমার গাড়ির সামনে ঐভাবে দৌড়ে এসে পরলেন কেন ?

অভিনবর কন্ঠে ঝিল তাকালো। বিয়ের ঘন্টা খানেক হলে ও অভিনব কে ভালো করে দেখে নি ও। অভিনবর দিকে ভালো মতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষন করলো। লম্বাটে, সুঠাম দেহের মানুষ অভিনব। ধূসর রঙের একটা শার্ট পরে আছে সাথে সাদা কালো মিশ্রনের ব্লেজার। চুল গুলো স্লিকি, চোখের পাপড়ি ঘন। আর অতিরিক্ত ফর্সা , চেহারায় বিদেশিদের মতো ভাব। অভিনব যদি বাংলা তে কথা না বলতো তাহলে কেউ ই বিশ্বাস করতো না যে এই ছেলেটা বাঙালি।

_ দয়া করে আমাকে প্রথম থেকে শেষ অব্দি সমস্ত টা বলবেন ।

অভিনবর কথাতে ঝিল সামান্য চমকালো। মন কে শক্ত লম্বা করে দম নিয়ে বলল
_ আসলে আমার বাবা কাকা রা আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছিলো। আর তাই আমি পালিয়ে এসেছি। চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম, ক্লান্ত থাকা তে বাসে ই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।
পানির ছিটেতে চোখ খুলে তাকাই আমি। তখন দেখি তিন জোড়া চোখ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ভয় পেয়ে যাই আমি , আশে পাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠি। লোক গুলো বিকৃতি হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসে। জোড়াজোড়ি করার চেষ্টা করতেই সেফটি পিন দিয়ে আঘাত করি। লোক গুলোর হাত আলগা হতেই বাস থেকে নেমে যাই। কিন্তু একজন এসে ধরে ফেলে। হাঁটু দিয়ে ঐ লোক কে আঘাত করি।
ব্যথায় লুটিয়ে পরলেই দৌড়াতে যাই। কিন্তু অন্য দুটো লোক আবার ধরে ফেলে। ধস্তাধস্তি তে ব্যাগ থেকে ফোন পরে যায়। কোনো মতে ওদের ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাই আমি। কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড়াতে থাকি। আর তখনি আমি

_ আর তখনি আপনি আমার গাড়ির সামনে এসে লুটিয়ে পরেন। ঠিক মতো ব্রেক না কষলে এখন আপনি বেঁচে থাকতেন না। যাই হোক যাহ হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন আপনাকে ঠিক ঠাক বাসাতে পৌছে দিতে পারলেই হয়। আপনি আমাকে ভয় পাবেন না প্লিজ।

অভিনবর কথাতে লজ্জা পেল ঝিল। অভিনব মোলায়েম কন্ঠের উত্তাল ফেলে বলল
_ বাসা কোথায় আপনার।

_ মির্জাপুর।

_ আচ্ছা রেস্ট নিন।

ঝিল কিছু বলল না । বেডের কোনেই গুটি শুটি মেরে বসে রইলো। মাঝে মাঝে আড়চোখে অভিনব কে দেখে যাচ্ছে। অভিনবর ভেতর থেকে উতপ্ত শ্বাস আসে শুধু। ভারী হয় ভেতর ঘর। মেয়েটা এতো টাই ভয় পেয়েছে যে, যে ওকে বাঁচালো তাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

অভিনব ফোন হাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। নেটওয়ার্ক নেই , নেটওয়ার্ক টা থাকলে এতো কিছু হতো না। ব্যর্থ চেষ্টা শেষে অভিনব ঘুরে তাকালো। ঝিল এখনো গুটি শুটি মেরে আছে। দরজায় নক পরতেই অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নিয়ে দরজা খুলে দিলো।

ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে টেবিলে খাবার রেখে অভিনব কে বললেন
_ যা হবার তা হইয়া গেছে বাবা। মাইয়া ডা ভয় পাইছে অনেক, বউ ডারে দেইখা রাইখো।

অভিনব সম্মতি জানাতেই ভদ্র মহিলা চলে গেলেন। ন্ চাইতে ও মেয়েটি ওর বউ হয়ে গেছে। কি আশ্চর্য সত্য! দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক প্লেট খাবার ঝিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল অভিনব
_ খাবার টা খেয়ে নিন।

ঝিল অসম্মতি জানালো। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলল আবার। মেয়েটা কে বাঁচানোর পর ও মেয়েটা ওকে বিশ্বাস করে উঠতে পারে নি। অভিনব গলা ঝেরে নরম গলায় বলল
_ আমাকে বিশ্বাস নাই বা করলেন। খাবার টা তো আন্টি দিয়ে গেলেন। ওনি নিশ্চয়ই উল্টো পাল্টা কিছু মেশান নি?

অভিনবর কথাতে লজ্জা পেল ঝিল। খাবার টা নিয়ে এক সাইট করে বসলো। ওর আচরনে অভিনব অবাক হয় নি। আজকাল কাউ কে বিশ্বাস করা ঠিক নয় যে। তু ভেতর টা লজ্জায় ফেলল ওকে। একটা অজানা মেয়ে ওর সম্পর্কে কি ভাবছে! পাশে তাকালো অভিনব।সন্ধ্যা তে খেয়েছে তাই তেমন ক্ষিদে নেই ওর। তবে ঝিল এখন গোগ্রাসে গিলতে লাগলো।অভিনবর ভেতর থেকে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস বের হলো। এই পিচ্ছি মেয়েটা নাকি ওর বউ?
কয়েক ঘন্টার দেখার পর ই একটা নাবালিকা ওর বউ হয়ে গেল। মুখ ভর্তি তাচ্ছিল্য হাসলো অভিনব। তাঁর সাতাশ বছরের দীর্ঘ জীবনে এমন ঘটনা কখনো ঘটে নি। ঘটার কথা ও নয়। মানুষের বিয়ে হয় ই বা কতোবার! তবে বলতেই হয় জীবন বৈচিত্র্যপূর্ণ, কখন কি হবে কেউ বলতে পারে না।

[ গল্প টি কিছু শব্দ অধিক ব্যবহৃত হয়েছে। যাহ গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে।আমি সেটার জন্য দুঃখিত। ]

** আমি দুঃখিত কনটেস্ট না দিতে পারার জন্য।
তাই আপনাদের থেকে প্রধান চরিত্রের নাম নিতে পারলাম না। একটু চাপে আছি, ইনশআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের থেকে প্রধান চরিত্রের নাম নেওয়ার চেষ্টা করবো। আর যেকোনো গল্প তে সেই নাম ব্যবহার করবো।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

#সূচনা_পর্ব
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here