ধূসর_রঙের_প্রজাপতি #ফাতেমা_তুজ #part_9

0
149

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_9

ঝিল জানালা খুলে প্রান খুলে শ্বাস নিচ্ছে। রোদ্রচ্ছন্ন আকাশ টা কুয়াশা কে ধোঁয়াশা করে দিচ্ছে। বেলা সাড়ে এগারোটা বেজে এলো যে। নদীর মাতাল হাওয়ায় মুগ্ধ হচ্ছে ঝিল। শহরের যানজট যাথে ধুলোবালি সব কিছু মিলিয়ে কেমন রোবট হয়ে গিয়েছিলো। প্রকৃতির আলো বাতাস পেয়ে যেন প্রান টা স্বস্তি পেল। কি সুন্দর এ দৃশ্য, পাখিরা উড়ে যাচ্ছে একটু দূরে যেতেই কুয়াশায় কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে। ছোট বেলার রূপকথায় যেমন জাদু বলে হাওয়া করে দেওয়া হতো ঠিক তেমনি এক অনুভূতি হচ্ছে। ঝিল আনমনেই হেঁসে উঠলো। ভাঙ্গিস অভিনব সাথে ছিলো না হলে কি এই সৌন্দর্যর স্বাদ নিতে পারতো? উঁহু পারতো না , ভগ্ন হৃদয়ে সেই ঢাকার ব্যস্ত নগরীতেই ফিরে যেতে হতো। শীতের প্রকোপ কমে আসায় গায়ের সোয়েটার টা খুলে ফেলল। তবে হালকা শীতে শরীর কুকরে যাচ্ছে কেমন। আবার সোয়েটারে ও কেমন হাঁসফাঁস লাগছে। ইসস একটু চা কিংবা কফি খেতে পারলে শরীর টা গরম হয়ে যেত। ঝিলের ভাবনার শেষ হতে না হতে অভিনব এসে হাজির।অভিনবর হাতে কাপ দেখে বেশ চমকালো। আসলেই লোকটা কি করে বুঝে গেল ওর চা কফির প্রয়োজন?

ঝিলের গভীর ভাবনার সুতো কাটলো অভিনবর কন্ঠে।
অভিনবর দিকে তাকাতেই অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কোথায় হারিয়ে যান বার বার? এতো কাছ থেকে ডাকলে ও ধ্যান ভাঙে না যে?

প্রতিউত্তরে ঝিল চমৎকার হাসলো।অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে কফি কাপ টা এগিয়ে দিলো। ঝিল মৃদু হেসে কফি টা নিলো। অভিনব কফি কাঁপে চুমুক দিয়ে বলল
_ ফটোগ্রাফি করছিলাম। হঠাৎ কফি খাওয়ার ইচ্ছে হলো ভাবলাম আপনার জন্য ও একটা নিয়ে আসি।

ঝিল কফি কাঁপে চুমুক বসিয়ে বলল
_ বাহহ কফির স্বাদ টা তো বেশ ভালো।

_ রিয়েলি ভালো হয়েছে?

_ হ্যাঁ খুব ভালো হয়েছে। অন্য রকম স্বাদ , এমন টা আমি খাই নি কখনো।

অভিনব মৃদু হাসলো। কফি কাঁপে আরেক টা চুমুক দিয়ে বলল
_ এটা আমি বানিয়েছি।

ঝিল ভ্রু কুঁচকালো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ ইউ এস এ তে থেকে কয়েক টা কফির মিনি প্যাকেট এনেছিলাম। তবে এর স্বাদ ভিন্ন হওয়ার কারন বাদামি চিনি। ব্ল্যাক কফি টা আমার ফেবরেট তাই যখন ইচ্ছে করে বানিয়ে নেই।

ঝিল ঝরা হাসলো। ওর খুব লজ্জা লাগছে এই বিদেশী ছেলেটার ও কতো গুন। আর ওহ একটা অষ্টরম্বা!

কফি শেষ করে ওয়ান টাইম কাপ দুটো তুলে নিলো অভিনব। তারপর কিছু একটা ভেবে বলল
_ লঞ্চের ছাঁদে যাবেন? আই মিন আমি ফটোগ্রাফি করবো তাই বললাম।

ঝিল প্রশস্ত হেসে বলল
_ অবশ্যই। বাট আমি ফটোগ্রাফি তে একদম কাঁচা।

অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ আচ্ছা চলুন শিখিয়ে দিবো। দেখবেন একটু তেই কেমন শিখে গেছেন।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল
_ বাই দ্যা ওয়ে এখানে কিন্তু আনলিমিটেড চা কফি দেওয়া হয়।

ঝিল মলিন হাসলো। তারপর বলল
_ ইসস আপনি তো আর আনলিমিটেড চা কফি বানাবেন না।

অভিনব বাঁকা হাসলো ঠিক যেন পাক্কা ক্রিমিনাল ।
যার অর্থ ঝিলের বোধগম্য হলো না।

*

অভিনব আর ঝিল লঞ্চের ছাঁদে চলে আসলো। ছাঁদ থেকে চারিপাশের ভিউ টা আরো অনেক বেশী সুন্দর।
ঝিল মোহনীয় চোখে চারপাশ দেখতে লাগলো।অভিনব এই ফাঁকে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। ঝিল বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলল
_ অভিনব একটা কথা বলুন তো আমরা কি পাখিদের মতো হতে পারতাম না? তখন সাড়া দুনিয়া প্রান খুলে উড়ে বেড়াতাম। খোলা হাওয়া বাতাস প্রকৃতির অসাধারন রুপ ইসসস কি ভালোই না হতো বলুন।

অভিনব ফটো ক্লিক করে নিয়ে বলল
_ হতো হয়তো। তবে একটা কথা কি জানেন আমরা মানুষ রা জীবনে সব থেকে বেশি আফসোস করি।
আমরা কখনোই নিজেদের নিয়ে পরিপূর্ণ সুখি নই।

ঝিল ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করে রইলো। অভিনব ঝিলের দিকে তাকিয়ে বলল
_ আপনি কি জানেন আমরা যতোটা নিরাপদে থাকি এই পশু পাখিরা ততোটা নিরাপদে থাকে না।

_ কেমন?

_ এই যে আমরা যখন তখন নির্বিচারে পশু পাখি হত্যা করি। ওদের জীবনের নিশ্চয়তা নেই। আই মিন সোসাইটি সেফটি নেই। কিন্তু আমাদের তো আছে। হ্যাঁ একশ ভাগ নেই কিন্তু খানিক টা তো আছে। আমাদের জন্য প্রশাসন আছে , কিন্তু ওদের নেই। ওরা সারাক্ষণ ভয়ে বেঁচে থাকে। ইনফেক্ট এখন তো বন গুলো তে ও ওদের নিরাপত্তা নেই। দুষ্কৃতী রা লুকিয়ে পশু পাখি হত্যা করছে। তবে একটা কথা কি জানেন সব শেষে আমরা যদি আমাদের জীবন নিয়ে খুশি থাকতে পারি তাহলেই সার্থকতা।এতো শত আফসোস রাখতে নেই। জন্ম যখন মানুষ হয়ে হয়েছি নিশ্চয়ই আমরা সৌভাগ্যবান।

ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। একটা মানুষ কি করে এতো সুন্দর কথা বলতে পারে? নিঃসন্দেহে এই মানুষ টা অসাধারন। ঝিলের ভেতর থেকে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো। ঝিল চোখ বন্ধ করে লম্বা করে শ্বাস নিলো। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে লাগলো। অভিনব এক পলক তাকিয়ে বলল
_ ঝিল আসুন আপনি না ফটোগ্রাফি শিখবেন?

_ হুমম আসছি।

ঝিল অভিনবর কাছে আসলো। অভিনব বেশ কয়েক টা ফটো তুলে নিয়ে বলল
_ ফটোগ্রাফির প্রথম শর্ত হচ্ছে মনোযোগ অর্থাৎ ফোকাস। আপনি যদি ফটো ক্লিক এর সময় অন্য কোথাও মনোযোগী হয়ে থাকেন তহালে কোনো ভাবেই ফটোগ্রাফি সম্ভব না। আর একটা কথা যেকোনো জিনিস কে আর্টিফিশিয়াল রূপ দিয়ে ফটো ক্লিক করবেন না।

ঝিল নাক মুখ কুঁচকে বলল
_ মানে?

_ আই মিন আপনি কোনো কিছু কে বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে ফটো ক্লিক করবেন না। তাহলে সেটা প্রানবন্ত লাগবে না। তখন মনে হবে আর্টিফিশিয়াল সেটা যাহ ফটোগ্রাফির মূল স্তরে পরে না। ফটোগ্রাফি এমন ভাবে করতে হবে যাতে ন্যাচারাল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। মনে হয় ছবি টা হাসছে।

ঝিল প্রানখোলা হাসলো। হাসতে হাসতে চারি দিকে একবার চোখ বোলালো। অভিনব সেই ফাঁকে লুকিয়ে ঝিলের একটা ছবি তুলে নিলো। ঝিলের প্রান খোলা স্বচ্ছ হাসি মাখা ছবি।

ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ আপনি নিঃসন্দেহে বাচ্চা দের খুব ভালো করে পড়াতে পারবেন। অবশ্য বড় দের ও পারবেন।

অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ আই থিংক ইউ আর রাইট মিস ঝিল।

ঝিল ভ্রু বাঁকিয়ে হালকা হাসলো। অভিনব অধর কোনে হাসি রেখে বলল
_ ইউ এস এ এর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আমি প্রাক্তন লেকচারাল।

ঝিল অবিশ্বাসের চোখে তাকালো। অভিনব দারুন হেসে বলল
_ সেখানে আপনার বয়সী কিংবা তার থেকে ও বড় আমার হাজার হাজার স্টুডেন্টস আছে। যারা আমাকে স্যার বলে সম্বোধন করে।

ঝিল লজ্জা পেল। তার থেকে বড় বড় ছেলে মেয়েরা অভিনব কে স্যার বলে ডাকে। আর ওহ নাম ধরে ডাকে। ইসস বিষয়টা কি বিদঘুটে!

ঝিলের লজ্জা মাখা মুখ টা দেখে অভিনব স্বচ্ছ হাসলো। ঝিলের অস্বস্তি বুঝতে পেরে বলল
_ ডোন্ট ওরি মিস ঝিল। আপনি হয়তো আমার স্টুডেন্ট বয়সী টেকনিক্যালি স্টুডেন্ট তো নন।

ঝিল অপ্রস্তুত হাসলো। অভিনব ঝিল কে সহজ করতে বলল
_ আপনাকে তো আমি বলেছি ই আমরা সহযাত্রী আর পূর্বপরিচিত ওহ। তাই আমরা বন্ধুদের মতোই আচারন করবো।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো । অভিনব মৃদু হাসলো। বেশ কিছুক্ষণ দুজনের মাঝে নীরবতা চললো।ঝিল নীরবতা ভেঙে বলল
_ আচ্ছা প্রাক্তন লেকচারাল বললেন যে। এখন

_ না আসলে আমি এই জব টা কখনো করতেই চাই নি। পাপার জন্য করতে হয়েছে।ভারসিটি থেকে রিকোয়েস্ট এসেছিলো পাপার কাছে। পাপার ইমেজ রক্ষা করতে গিয়ে টিচার হয়ে গেলাম। অবশ্য এক বছর ই ছিলাম। কারন ঐ সব আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি ভ্রমন প্রেমি, অতো সময় কোথায় পড়ানোর।

_ এতো স্পেশাল একটা জব করলেন না? আমেরিকার টপ ভারসিটি

অভিনব মৃদু হাসলো তারপর বলল
_ হ্যাঁ সেটা ঠিক তবে পারিবারিক বিজনেস এর থেকে অনেক শান্তির। যখন তখন যেখানে ইচ্ছে যাওয়া যায়।
নো ঝামেলা আর তাছাড়া আমি বিডি তে আসার জন্য ই জব টা ছেড়ে ছিলাম। ঐ যে দেড় বছর আগে ,

ঝিল ছোট করে ওহ বলে উত্তর দিলো।
অভিনব ঝিল কে দিয়ে বেশ কয়েকটা ফটো ক্লিক করালো। ঝিল বেশ উত্তেজিত, এতো ভালো ক্লিক ওহ কখনো করতে পারে নি। ঝিলের এক্সাইটমেন্ট দেখে অভিনব বলল
_ অনেক হয়েছে , গায়ে গরম কাপড় নেই আপনার।
ঠান্ডা লেগে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলবেন। তাড়াতাড়ি নিচে চলুন

ঝিল বাচ্চাদের মতো করতে লাগলো। অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ আসুন।

_ অভিনব প্লিজ আরেকটু থাকবো। কতো সুন্দর ক্লিক করেছি আমি প্লিজ।

_ না একদম নয়। আপনি ভ্রমনে এসেছেন , অসুস্থ হয়ে পরলে ইনজয় করতে পারবেন না। আর এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। ফটো ক্লিক করেই এতো এক্সাইটমেন্ট?

_ প্লিজ

_ উহুমমম চলুন।

ঝিল মুখ গোমড়া করে রইলো। ঠোঁট উল্টিয়ে যেতে যেতে বলল
_ লাগবে না আমার ক্লিক। আমি করবো না ফটোগ্রাফি।

ঝিলের কথা গুলো অভিনব স্পষ্ট শুনতে পেল।মেয়েটার বাচ্চাদের মতো আচারন দেখে আনমনেই হেসে উঠলো। ঝিল একটা কথা ও বলল না। সে ঠিক করে নিয়েছে অভিনবর সাথে কোনো কথা বলবে না।
নিচে নেমে অভিনব বলল
_ রাতের ভিউ টা কিন্তু অনেক সুন্দর, কিন্তু

অভিনব কে আর বলতে দিলো না ঝিল তার আগেই লাফিয়ে উঠলো। অভিনবর জ্যাকেটের হাতা টানতে টানতে বলল
_ প্লিজ প্লিজ প্লিজ এমন টা করবেন না। আমি রাতের ভিউ টা দেখবো প্লিজ। আই প্রমিস সব কথা শুনবো।

অভিনব ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো। তবে ঝিল কে সেটা বুঝতে না দিয়ে খানিক টা গম্ভীর কন্ঠে বলল
_ সত্যি তো?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব এক গাল হাসলো। ঝিল ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ আচ্ছা রূপসা সেতু কোথায় দেখলাম না তো।

_ ঐ টা তো সকাল দশটার দিকেই পার করে ফেলেছি ঝিল। তখন আপনি কেবিনে ছিলেন।

ঝিল মুখ টা গোমড়া করে রইলো। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলল
_ আপনার খুব পছন্দের?

ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ হ্যাঁ। আমার ইচ্ছে ছিলো আমি নদী পথে সেতু টা দেখবো। কিন্তু

_ আসার পথে দেখে নিবেন। এখন মন খারাপ করে রইলে পুরো ট্যুর টাই খারাপ যাবে।

ঝিল মুড ভালো করার জন্য ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। অভিনব গলা ঝেরে বলল
_ আমি ঐ বার এসে বাইক রাইড করেছিলাম রূপসা সেতু তে। বেশ ভালো লেগেছিলো ,

ঝিল মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে অভিমানী কন্ঠে বলল
_ তাতে আমার কি? আমি তো কিছুই করতে পারি নি ।
বাইক রাইড তো স্বপ্নে ও না। পাপা রা তো আমাকে বাইকে উঠতেই দেয় না। অবশ্য বাইক টা আমি ও চালাতে পারি। ধ্যাত বাইকের কথা বলে আরো মুড অফ করে দিলেন।
ভাল্লাগেনা

ঝিল হনহনিয়ে কেবিনের দিকে চলে গেল। অভিনব বোকার মতো সে দিকে চেয়ে রইলো। ঝিল যে এই ভাবে রাগ দেখাতে পারে তা ওহ ভাবতে ও পারে নি।

** ভ্রমন দেখানো হলে ও আমি সব বিস্তারিত আলোচনা করবো। কারন এতে মনে হবে আপনি নিজেই সেখানে উপস্থিত। এটা ছোট গল্প নয় তাই বিস্তারিত লেখাই এর মাহাত্ম্য । বিকেলের মধ্যে স্বপ্নের প্রেয়সী সিজন টু এর এক পার্ট পাবেন ইনশআল্লাহ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here