#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_31
বোর্ট চলছে , দূরত্ব ও বাড়ছে। শুধু চলছে না ঝিলের ছোট্ট মন। বাজে এক অনুভূতি তে ছেঁয়ে গেছে সর্বাঙ্গ। মাহেরার গালে ঠাস ঠাস চর বসিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। তবে এটা ও সত্য মাহেরা ঠিক ঠাক সাঁতার পারে না।
তবে মাহেরা যে ইচ্ছে করে নদীতে পরেছে তা ভালোই বুঝতে পারছে ঝিল। রাগের কারন টা হচ্ছে অভিনব কেন পানিতে ঝাঁপ দিয়ে দিলো। অন্য কেউ কি পারতো না ?
ঝিলের মুখ টা চুপসে গেছে। ফাঁটা বেলুন এর মতো মুখ খানি অভিনব কে পুরাচ্ছে। মনের ভেতর নীল ব্যথার আস্তরন তৈরি হলো । সে কি সত্যি ই ভুল করেছে ?
আচ্ছা মাহেরা কে পানি থেকে তোলাই কি ছিলো তাঁর অপরাধ । মানবিতার খাতিরেই তো করেছে সে।
অভিনবর সাথে একটা কথা ও হলো না আর। ঝিল আর অভিনবর মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব চলছে। বুকের ভেতর খা খা করছে।
বোর্ট লঞ্চের কাছে এসে থামলো। অভিনব ঝিলের জন্য অপেক্ষা করছে । কিন্তু ঝিল অভিনব কে পাশ কাটিয়ে একাই লঞ্চে উঠে পরলো। অভিনবর মুখ টা একটু খানি হয়ে গেল। এ কেমন যন্ত্রনা ? মেয়েটা কি তাঁর সাথে অভিমান করে রইল ?
_ অভিনব তাড়াতাড়ি আসো। ভিজে তো একাকার হয়ে আছো।
পাগল মেয়েটা কি করে যে পরলো। ওর জন্য তোমাকে কষ্ট করতে হলো।
_ ইটস ওকে মাহের। এটা টোটালি একটা এক্সিডেন ।
_ আচ্ছা আসো চেঞ্জ করে নাও।
অভিনব কথা বাড়ালো না। বুক চিরে আসা দীর্ঘশ্বাস টা লুকিয়ে লঞ্চে উঠে পরলো।
*
ঝিল বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসেছে। অভিনব মুখ গোমড়া করে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। অভিনব কে দেখে খানিক টা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। নিজেকে সামলে নিয়ে কাবাড থেকে ট্রাওয়াল টা রেখে দিলো। অভিনবর কপালে দুটো ভাঁজ পরলো । মেয়েটার আচারন অভিনবর হৃদয়ে রক্তের স্রোত নামিয়ে যাচ্ছে।
_ ঝিল
_ হুমম
অভিনব অবাক চোখে তাকালো। ঝিলের এই সাধারন আচারন টা ও তাঁকে নুইয়ে দিচ্ছে।
_ আজ একাই লঞ্চে নেমে আসলেন যে ?
ঝিল আলতো হাসলো। চুলে চিরুনি দিয়ে বলল
_ সব সময় তো কেউ আমার সাথে থাকবে না। তাই একাই চেষ্টা করলাম।
অভিনব কিছু বলল না। অভিনবর ভেজা শরীর দেখে ঝিলের কষ্ট হলো। পরক্ষণেই কষ্ট টা রাগে পরিনত হলো। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু মেয়েটা একবার ও বলল না চেঞ্জ করতে। উপায় অন্তর না পেয়ে অভিনব ট্রাওয়াল নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
ঝিলের দু চোখের কুর্নিশ নোনা জলে ভরে উঠলো। ফোন টা নিয়ে অবিনবর ছবি দেখতে লাগলো। এটা অভিনবর অগোচরে তোলা। অভিনব যখন বানর দের খাবার খাওয়াচ্ছিল ঠিক সেই সময় টায় একটা বানর অভিনবর দিকে লোলুপ দৃষ্টি তে চেয়ে ছিলো।
তখন গগন কাঁপিয়ে হেসেছিলো অভিনব। সেই হাস্য উজ্জল ছবি টা ঝিল ক্লিক করে নিয়েছিলো।
বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে ঝিল ফোন টা লুকিয়ে ফেললো। ঝিলের হাঁস ফাঁস অবস্থা দেখে অভিনবর ভ্রু বেঁকে গেল। তবে সে সেই দিকে পাত্তা দিলো না। অভিনব ঝিলের উদ্দেশ্যে বলল
_ খাবার খেতে চলুন।
_ ভালো লাগছে না।
_ আচ্ছা।
অভিনব চলে গেল। ঝিলের মন টা পুনুরায় বিষিয়ে গেল। অভিনব তাকে একবার জোর ও করলো না। দু চোখে পানি টলমল করছে। বুকের ভেতর পুরছে। তবু ও চোখ থেকে পানি ঝরতে দিলো না।
অভিনবর এই যত সামান্য অবহেলা সহস্র ব্যথার মালা গেঁধে ফেলেছে।
জানালা দিয়ে অন্ধকার আকাশ টাকে দেখছে ঝিল। মন পাঁজরে মেঘ জমেছে। আড়ালে আবডালে পরে গেছে ভালোবাসা গুলো। অভিমান যেন দ্বিগুন উৎসাহ হয়ে ফিরছে। এ কেমন জীবন? ভিত্তি হীন , নীরবতা, নীল বেদনা সব মিলিয়ে নরকীয় খেলা।
হায়রে পৃথিবী। এই সুখ তো এই দুখ। মানুষ বিচিত্র রঙের প্রানী । ঠিক তেমনি এদের অনুভূতি গুলো ও বিচিত্র। পেসারের মতো আপ ডাউন করে। ঝিল তাচ্ছিল্য হেসে পেছন ফিরে তাকালো। অভিনব কে খাবার হাতে দেখতে ভারী অবাক হলো।
বিস্ময়ে হতবাক ঝিল বেদনার স্বরে উচ্চারন করলো
_ অভিনব।
অভিনবর কোনো উত্তর নেই। অভিনব একি ভঙ্গি তে দাঁড়িয়ে আছে। যেন কোনো যন্ত্র মানব। বেশ কিছুক্ষণ সেভাবেই চলে গেল।
খাবার টা টেবিলে রেখে ঝিলের পাশে এসে বসলো। ঝিল সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। তবে কেন যেন হাসি টা বাষ্প হয়ে উবে গেল।
_ খাবার না খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পরে এটা জানেন ?
ঝিল উত্তর দিতে পারলো না। অভিনবর ভাব মুর্তি বোঝার চেষ্টা চালালো। তবে লাভের লাভ কিছু ই হলো না।
অভিনব আরেকটু কাছে এসে বলল
_ অভিমানী রাজকন্যা যখন খাবার খেতে চায় না তখন তাঁর পাপা তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।
কিন্তু আমার কাছে আপনি তো সেটা নন।বরং আপনি আমার ভবিষ্যত রাজকন্যার মাম্মা হতে পারেন।
অভিনবর কথায় চমকালো। ছেলেটার মাথা ঠিক আছে ? সে কি সব বলে যাচ্ছে।
_ এখন অব্দি আপনি ই কিন্তু আমার মন রাজ্য রানী। আমি খাইয়ে দিতে পারি তো ?
_ অভিনব !
_ উহুহহ নো মোর ওয়ার্ড । সন্ধ্যার পর আপনি নিজ থেকে তো আমার সাথে কথাই বলেন নি।
তাই এখন আমি বলবো আর আপনি শুধু ই শুনবেন।
মেয়েটা বোকা বোকা ফেস করে তাকিয়ে রইলো। সব যেন তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ।
অভিনব চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে ভাত মাখালো। ঝিলের দিকে বাড়িয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ঝিল কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।
ক্রুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে অভিনব বলল
_ হা করুন তো আমার মন রাজ্য রানী। আপনাকে না খাইয়ে আমি ও যে খেতে পারবো না।
ঝিল ভদ্র মেয়ের মতো হা করলো। অভিনব তাঁর অধর কোনে হাসি রেখে ঝিলের মুখে খাবার তুলে দিলো।
ঝিলের চোখ দুটো ছলছল করছে। অভিনবর পাঁজরে চোখের পানি গুলো আটকে গেল। ঝিলের দিকে ভ্যাগা ভ্যাগা মুখ করে বলল
_ আম স্যরি।
_ কেন ?
_ আমি শুধুই মানবিকতার খাতিরে মাহেরা কে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। আর কিছু ই নয়।
ঝিলের দু চোখ ফেঁটে কান্না আসছে। মুখ ঘুরিয়ে বলল
_ আমাক কেন বলছেন ?
অভিনব খাবার টা রেখে হাত ধুয়ে নিলো । ঝিলের হাত টা মুঠো বন্দী করে বলল
_ তাহলে কাকে বলবো ? আমার আপন কে আছে এখানে ?
_ আমি আপন ?
_ উহহুহ আপনি আমার মন রাজ্য রানী।
ঝিল আনমনেই হেসে উঠলো। নিজেদের সম্পর্কের যে যোজন যোজন দূরত্ব রয়েছে তা একদম ই খেয়াল নেই।
অভিনব ঝিলের হাত টা বুকে ছুঁইয়ে অনুনয়ের স্বরে বলল
_ মাফ করা যায় না ?
_ অভিনব।
_ মাফ করে দাও না ঝিল । দেখো বুকের ভেতর খা খা করছে। শূন্যতা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
ছলছল নয়নে তাকালো ঝিল । অভিনবর থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।
তাই খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বসলো। অভিনব ঝিলের কাছাকাছি আসতেই ঝিলের আত্মা কেঁপে উঠলো ।
_ আপনি জানেন ঝিল আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি ?
আপনার অবহেলা টুকু আমাকে কতো টা আঘাত করেছে। আগে তো এমন হয় নি এখন কেন এমন হয় ?
_ আপনি কি বলছেন ?
_ ভালোবাসি , আমি আপনাকে ভালোবাসি ঝিল । এই যে আমাদের আত্মিক যে সম্পর্ক এই সম্পর্কে ও আমি ভালোবাসি। খুব করে চাই আপনাকে।
ঝিল ঝটকা মেরে হাত টা ছাড়িয়ে নিলো। দু চোখ মুছে নিয়ে বলল
_ মাহেরা আপু আপনাকে পছন্দ করে সেটা ?
_ আমি জানি না। আমার কিচ্ছু যায় আসে না তাতে।
_ আপনি ভুল কিছু বলছেন না তো ?
_ উহহহু একদম নয়।
_ মাহেরা আপু আমার থেকে
ঝিল কে থামিয়ে দিলো অভিনব। কপালে কিঞ্চিত ভাঁজের সঞ্চার হয়েছে। দু চোখ রক্ত লাল হয়ে গেছে। অভিনবর এমন রূপ দেখে ঝিল আঁতকে উঠলো। বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।
_ মাহেরা আপনার থেকে বেশি সুন্দরী তাই তো ?
আই ডোন্ট কেয়ার । আমার বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই তাঁতে । আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না আমি আপনাকে
_ ভালোবাসি, আমি ও আপনাকে ভালোবাসি অভিনব। খুব করে চাই আপনাকে।
অভিনব অবাক চোখে তাকালো। ঝিলের ঠোঁটের কোনে লজ্জা হাসি । অভিনবর ইচ্ছে হচ্ছে ঝিল কে বুকে জড়িয়ে নিতে । কিন্তু শরীরে সে শক্তি টুকু যেন নাই। অভিনবর চোখ ভিজে গেল। প্রেমের মায়ায় চোখের নোনা জল নিতান্তই তুচ্ছ।
*
অভিনবর দিকে তাকাতেই লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে ঝিল।
একটু আগে কি বলেছে ওহ। ইসসস
অভিনব ঝিলের মুখে ভালোবাসার কথা শুনেই বেরিয়ে যায়। দম বন্ধকর অনুভূতি হচ্ছিলো। বোধহয় প্রথম প্রেমে পরার অনুভূতি ঠিক ঠাক নিতে পারে নি সে। ঝিল ওহ যেন মনে মনে তাই চাইছিলো । অভিনব চলে যেতেই বুক ভরে শ্বাস নিলো।
তবে মিনিট পাঁচেক পর ই অভিনব চলে আসলো। সেই থেকেই ছেলেটা ঝিলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঝিল মাথা উঁচু করতেই পারছে না। অভিনব আরেকটু লজ্জা দিতে রোমান্টিক গান প্লে করে দিলো।
লজ্জায় জ্বিভে কামড় দিলো ঝিল । ইসস এখন কি হবে ?
অভিনব ধীরে ধীরে ঝিলের দিকে আগালো। ঝিলের মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
_ মন রাজ্য রানী আপনি তো আমাকে মেরেই দিয়েছেন। এখন কি হবে আমার ?
আমি তো লাঘাম হীন হতে শুরু করেছি।
ঝিল মাথা নিচু করে নিলো। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল
_ আপনি খুব বাজে।
_ আচ্ছা?
_ হুমম ।
_ তা কিসের জন্য আমি বাজে? আমার জানা মতে আমি তো কিছুই করি নি।
ঝিল তেতে উঠলো। অভিনবর শার্ট খামচে ধরে বলল
_ পিঠে দু চারটে পরলে বুঝবেন। আপনি পানির মধ্য মাহেরা আপু কে জড়িয়ে ছিলেন ।
না জানি আর
_ ঝিল।
অভিনবর মুখে স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে । ঝিল ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল
_ আজ কাল কাউ কে বিশ্বাস করা যায় না। হতেই পারে আপনি
_ মারবো এক চর। কি সব বলে যাচ্ছে। আমি কিছু কেন করতে যাবো। জাস্ট মাহেরা কে এক হাতে জড়িয়ে ছিলাম । তার জন্য
ঝিল ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো। অভিনব কান্নার কারন জানতে চাইলেই কান্নার বেগ যেন বেড়ে গেল। আদুরে কন্ঠে বলল
_ আপনি মাহেরা আপুর পেটে ছুইয়েছেন। খুব খারাপ আপনি।
অভিনবর অবাক প্রায় অবস্থা , মেয়েটা এমন কেন ? পানি তে জড়িয়ে ধরলে অবশ্যই তাকে গাঁয়ের সাথে মিশিয়ে ধরতে হবে । তাই বলে অভিনব কি কোনো ফিলিংস নিয়ে ছুইয়েছে ?
হায়রে বোকা মেয়ে। নারী জাতি এমনি। পৃথিবী উল্টে গেলে ও স্বামী কে অন্য কারো সাথে মিনিট খানেক সহ্য করতে পারে না।
**আমি নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে গল্প দেরি করে দিচ্ছি না ? পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে। এস এস সি পরীক্ষার চাপ এখন অনুভব করছি ।
এক দিন পর পর গল্প দিবো। অর্থাৎ পরশু দিন বিকালে আবার গল্প পাবেন । নেক্সট বড় করে লিখার চেষ্টা করবো।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে