নিবেদিতা #পর্ব_১৭ #মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া

0
111

#নিবেদিতা
#পর্ব_১৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
______________
নিবেদিতা কী করবে বুঝতে পারছে না। সে এখনো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। নির্ণয় কোমর ধরে উঠে দাঁড়াল। নিবেদিতার বিস্মিত চোখে চোখ রেখে বলল,

“সরি। তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম।”

নিবেদিতা ভ্রু কুঁচকাল। ডাকার জন্য কেউ মুখের ওপর এমন ঝুঁকে আসে নাকি? নির্ণয়ের হঠাৎ করেই মনে হলো তার তো অফিস আছে। সে হাতঘড়িতে সময় দেখে বলল,

“সর্বনাশ! অফিসের সময় তো হয়ে গেছে প্রায়। নিবেদিতা, আমি এখন যাচ্ছি।”

নিবেদিতা নাস্তা করার কথা বলতে পারল না। নির্ণয়ও আর অপেক্ষা না করে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল। কী হলো না হলো সব যেন মাথার ওপর দিয়ে গেল নিবেদিতার। সেও উঠে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। নাস্তা বানাতে হবে। ক্লাসও আছে। সে ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা বানাতে বানাতে নাসিমা বেগমকে ভিডিয়ো কল দিল।

“কেমন আছো মা?”

নাসিমা বেগম আদুরেস্বরে বললেন,

“ভালো আছি মা। তুই কেমন আছিস?”

“ভালো।”

“নাস্তা বানাচ্ছিস?”

“হ্যাঁ। মা, তুমি কি নির্ণয় ভাইয়ার ডেনমার্কে আসার কথা জানো?”

তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন,

“কই না তো! নির্ণয় ডেনমার্কে নাকি?”

“হ্যাঁ।”

“আপা তো আমাকে কিছু বলেনি! ওখানে কেন নির্ণয়?”

“জবের জন্য নাকি এসেছে।”

“কবে গেল? তোর সাথে দেখা হয়েছে?”

“দুদিন ধরে নাকি এসেছে। দেখা করতে এসেছিল গতকাল।”

“আমাদের কাউকে কেন কিছু বলল বুঝতে পারছি না।”

“তুমি খালাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নিও। আর তার বিয়ের ব্যাপারেও তো আর কিছু শুনলাম না পরে। বিয়ে কি হয়ে গেছে?”

“না। বিয়ে হলে তো জানতাম।”

“দেশে আসার কথাই তো বলল না।”

“তা বলেনি! কিন্তু বিয়ে হলে নিশ্চয়ই বলত।”

“আচ্ছা। এখন তাহলে রাখি মা। খেয়ে ক্লাসে যাব।”

“ঠিক আছে মা। সাবধানে চলাফেরা করিস।”

“আচ্ছা।”

নাস্তা বলতে গতকালের নুডলস গরম করল আর চা বানাল নিবেদিতা। এগুলো দিয়েই সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে সে ক্লাসে চলে গেল।
.
.
মিদহাদ একটার পর একটা শার্ট চেঞ্জ করছে। কিন্তু কোনো শার্টেই তার নিজের কাছে ভালো লাগছে না। মৌটুসী তাকিয়ে আছে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। মিদহাদের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে মৌটুসী বলল,

“ভাইয়া, তোমার কি আজ কোনো ডেট আছে?”

মিদহাদ ভ্রু কুঁচকাল। মৌটুসী বলল,

“না মানে ডেটে যাবে নাকি জিজ্ঞেস করলাম।”

“তুই দেখি খুব পাকা পাকা কথা বলিস! এই ডেট কী জিনিস? আগে স্কুলের গণ্ডি তো পার হ। তারপর ডেট নিয়ে কথা বলবি।”

“ভাইয়া আমি কিন্তু এতটাও ছোটো না।”

“তাই নাকি? তোর বয়স কত বল তো?”

“ষোলো বছর।”

“ষোলো বছর? ছয় বছরের বাচ্চা একটা!”

“আমার বয়স নিয়ে তোমাকে গবেষণা করতে হবে না। তুমি বলো আমার ভাবি কে?”

“কীসের ভাবি?”

“যার সঙ্গে ডেটে যাবে বলে এত ফিটফাট হয়ে সাজুগুজু করছ।”

“কী যা তা বলছিস! কোনো ডেটে যাচ্ছি না।”

“তাহলে কোথায় যাচ্ছ?”

মিদহাদ একটা অফ হোয়াইট রঙের শার্ট গায়ে জড়িয়ে বলল,

“ডেনমার্ক।”

মৌটুসী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলল,

“ডেনমার্ক! কিন্তু কেন?”

“দরকার আছে।”

“সেই দরকারটাই বা কী?”

“তোকে এত কিছু বলব কেন?”

“আমি কেমন যেন সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছি!”

“পাবিই তো। তোর যে নাকে সমস্যা!”

মৌটুসী বায়না ধরে বলল,

“বলো না ভাইয়া ডেনমার্কে কেন যাবে? ঘুরতে? তাহলে আমিও যাব। প্লিজ, প্লিজ!”

“আর তিন ঘণ্টা পরেই আমার ফ্লাইট। এখন তো তোকে নেওয়া সম্ভব না। অন্য এক সময় নিয়ে যাব।”

“তুমি তাহলে ঘুরতেই যাচ্ছ?”

“দেখা করতে যাচ্ছি।”

“কার সাথে?” মৌটুসীর চোখে-মুখে জানার উদ্দীপনা।

“প্রাণের সাথে।”

মৌটুসী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,

“প্রাণের সাথে? কার প্রাণ?”

মিদহাদ জিভে কামড় দিয়ে বলল,

“নিবেদিতার সাথে।”

“নয়ন ভাইয়ার বোন যে?”

“হ্যাঁ।”

“ইশ! তুমি আগে বললে না কেন? তাহলে আমিও যেতে পারতাম। কত বছর হয়ে গেছে নিবেদিতা আপুকে দেখি না।”

“নেক্সট টাইম ইন-শা-আল্লাহ্।”

“মনে থাকে যেন।”

“থাকবে পিচ্চি। এখন বল এই শার্টে আমাকে কেমন লাগছে?”

“তোমাকে সব শার্টেই সুন্দর লাগছিল। এটাতেও খুব সুন্দর লাগছে। তুমি বরং এটা পরেই যাও। কয়দিন থাকবে?”

“তিন দিন।”

“মাত্র?”

“মাত্র? আমার এখানে অফিস আছে না পিচ্চি?”

“হুম তাও তো ঠিক।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যাবে ভাইয়া। আর ওখানে গিয়ে আপুর সঙ্গে আমার ভিডিয়ো কলে কথা বলিয়ে দেবে।”

“ঠিক আছে। এখন তাহলে বের হই।”

“আচ্ছা।”

মিদহাদ এবং মৌটুসী ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখল বাবা-মা ও চারজন নতুন মানুষ। এদের মধ্যে একজনকে দুজনেই চিনতে পারল। আমুদে স্বভাবের মিদহাদ তো সবার সামনে বলেই ফেলল,

“আরে মিস লতাপাতা, আপনি এখানে?”

মিদহাদের বাবা আহসান আহমেদ বললেন,

“লতাপাতা? কী বলো এসব?”

সুবর্ণলতা ভ্রুজোড়া কুঁচকে বলল,

“লতাপাতা না। সুবর্ণলতা।”

মিদহাদ বলল,

“ঐ হলো আরকি!”

সুবর্ণলতার বাবা শফিক রহমান বললেন,

“তোমরা দুজন দুজনকে চেনো নাকি?”

মৌটুসী বলল,

“দুজন না। আমরা তিনজন তিনজনকে চিনি। সুবর্ণলতা আপু একদিন আমাদের গাড়িতে লিফট্ নিয়েছিল।”

“আই সী!”

আহসান আহমেদ ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন,

“সুবর্ণলতার বাবা আমার অফিসের কলিগ শফিক রহমান। তার স্ত্রী মিতালী বেগম। আর এটা তার ছোটো মেয়ে মিষ্টি।”

মিদহাদ ও মৌটুসী শফিক রহমান এবং মিতালী বেগমকে সালাম দিল।

মমতা বেগম ছেলের হাতে লাগেজ দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

“কোথাও যাচ্ছ তুমি?”

“হ্যাঁ। ডেনমার্ক যাচ্ছি। ঘুরতে।”

“হঠাৎ?”

“আমার তো সবকিছুই হুটহাট ইচ্ছে হয়। তুমি তো জানোই।”

“আসবে কবে?” জানতে চাইলেন আহসান আহমেদ।

“তিনদিন থাকব।”

এরপর মেহমানদের উদ্দেশে বলল,

“আপনাদের সঙ্গে আজ থাকতে পারলাম না বলে দুঃখিত। সময় করে আবার আসবেন আপনারা।”

“সাবধানে যেও বাবা।” বললেন মিতালী বেগম।

“ঠিক আছে। আল্লাহ্ হাফেজ।”

সবার থেকে বিদায় নিয়ে মিদহাদ বেরিয়ে পড়ল। পথেই একবার নয়নকে কল করে জেনে নিল কোন সময়ে নিবেদিতা ভার্সিটিতে থাকবে আর কোন সময়ে বেকারিতে থাকবে।
_______

ক্লাস শেষ করে অলস ভঙ্গিতে ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছে নিবেদিতা। মাথায় শুধু নির্ণয়ের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ করে সে কেন দেশের বাইরে জব করতে আসবে? তাও আবার ডেনমার্কে! সে জানে যে, খালামনি কতটা চোখে হারায় তার ছেলেকে। সে-ই খালামনিই বা কেন অনুমতি দিল নির্ণয়কে দূরদেশে আসার? আর সুখী মেয়েটা? ওর সাথে বিয়ে হলে তো সেও এখানেই থাকবে। মাঝে মাঝে না চাইতে হয়তো দেখাও হবে। নির্ণয় কি তাকে কষ্ট দিতেই এই পরিকল্পনা করেছে? কিন্তু এমনটা সে কেন করবে? সে নির্ণয়কে ভালোবাসে বলে? ভালোবাসলেও কি শাস্তি পেতে হয়? তার খুব ইচ্ছে এই বিষয়ে সরাসরি সে নির্ণয়কে জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু কল দিলে বা সামনে গেলে সে আর কিছুই বলতে পারে না। স্ট্যাচু হয়ে যায়।

নিবেদিতা অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটার সময় নির্ণয়ের কল এলো। কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে সে গেইট দিয়ে বের হচ্ছিল। নির্ণয় বলল,

“আজকে তুমি ফ্রি কখন?”

“কেন?”

“দরকার ছিল একটু। দেখা করতাম।”

নিবেদিতা কিছু বলার পূর্বেই পেছন থেকে কারো চিৎকার শুনে পেছনে তাকাল। মিদহাদ চিৎকার করে বলছে,

“প্রাআআআআণ!”

ডাকটা বেশ লম্বা ছিল। কিন্তু নিবেদিতা বিস্মিত। সে ফোন কান থেকে নামিয়ে তাকিয়ে আছে। মিদহাদ একটা ফুলের তোড়া নিবেদিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“সারপ্রাইজ প্রাণ!”

নিবেদিতা এতটাই অবাক হয়েছে যে কিছু বলতে পারল না। নির্ণয়ও চুপচাপ ফোনের ওপাশ থেকে শুনল সব।

চলবে…

[কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here