#প্রেমনগরে_প্রশান্তির_ভেলা
#আফসানা_মিমি
| ছাব্বিশ তম পর্ব |
সকলের মধ্যে বোমা ফাটানো কথা বলে নিজেই বোকা বনে গেলো নাদিফ। রুপ কানে হাত দিয়ে রেখেছে যেন পাল্টা কারোর কোন কথা কানে না আসে। রুপ লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে নয়তো।
আজাদ সাহেব ছেলের পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন,
” আগে বিয়েটা করে নে বাপ! তারপর না হয় বাচ্চার বাপ হোস।”
আজাদ সাহেব দাঁড়ালেন না, চলে গেলেন ঘরের বাহিরে। এখানে উপস্থিত থাকলে দেখা যাবে ছেলের জন্য নিজেই লজ্জা পাবে। কেননা ছেলেটা তো আজাদ সাহেবের’ই। স্বভাবের দিক দিয়েও আর কথার দিক দিয়েও বাবার মতো।
আয়েশা আজাদ এসে ছেলের কান মলে দিলেন,
” ওরে পাজি ছেলে! বাবা-মা যে ঘরে আছে দেখিসনি? মুখ এতো চলে কেন শুনি?”
” আহ মা ছাড়ো। তোমরা তো আমার জান প্রাণ। তোমাদের সামনে সবই বলা যায়। এই যে এই মেয়েকে যে ভালোবেসে ফেলেছি তাও বলে দিলাম। নতুন অতিথির আগমনের সাথে আমারও একটা ব্যবস্থা করে দাও এই আবদার করলাম।”
আয়েশা আজাদ ছেলের কথা শুনে কপালে হাত। স্বামীকে সংবাদ দিতে চলে গেলেন ঘরের বাহিরে। যাবার আগে অবশ্য সকলের উদ্দেশ্যে বলতে ভুললেন না যে, সন্ধ্যায় ছোট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে সকলে যেন উপস্থিত থাকে।
আয়েশা আজাদ চলে যেতেই ফাহিমা এবার মুখ খুলল,
” ছোট ভাইয়া তুমি এতো খারাপ আগে জানতাম না। ছিহ্ তোমার মনে এসব চলে! রুপকে বিয়ের আগেই গর্ভবতী বানিয়ে দিলে? রুপকে এখন কে বিয়ে করবে।”
নাদিফ আজ অনেক খুশি। ফাহিমার কথাতেও কোন প্রভাব ফেলেনি নাদিফের উপর। নাদিফ লজ্জায় ফাহিমার মাথার পাশে এসে বসলো। ভাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” বিয়ে তো আমি করলে অপরুপকে’ই করবো। আর বাচ্চা! সেটা তো খুশিতে বলে ফেলেছি। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না! আমি চাচ্চু হবো। আমি তো আজ’ই মসজিদে মিষ্টি বিতরণ করবো।”
নাদিফ খুশিতে চলে যাচ্ছিলো ঘর থেকে। কিন্তু পর মুহূর্তে থেমে যায় রুপকে দেখে। রুপ কানে হাত রেখে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। নাদিফ মুচকি হাসে রুপের কান্ডে। ফাহিমার উদ্দেশ্যে বলে,
” ভাবি! দুই মিনিটের জন্য চোখ,কান,নাক, মুখ বন্ধ করে রাখো তো! ”
নাদিফের কথা শুনে বোকা ফাহিমা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর কিছু একটা বুঝে চোখ বন্ধ করে রইলো।
নাদিফ রুপের মুখে হালকা ফুঁ দিয়ে দিলো। রুপের চোখ আগে থেকে আরো বুঝে গেলো। এবার চোখ বন্ধ করা অবস্থায় শব্দ করে নাদিফের উদ্দেশ্যে বলল,
” একদম কথা বলবেন না ঠোঁট কাঁ’টা বদ লোক। আপনার জন্য আমার মান সম্মান সব শেষ। দূরে যান।”
রুপের কথা শেষ হতেই রুপ নিজের অধর কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্যের আয়ত্তে চলে যায় তা অনুভব করলো। রুপের শরীর কাঁপছে। অনুভূতিরা চোখ বন্ধ করা অবস্থায় জানান দিচ্ছে রুপের সামনে নাদিফ দাঁড়ানো অবস্থায় আছে। এবং দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। রুপ চোখ আস্তে করে খুললো। পিটপিট করে নাদিফের ঠোঁটের দুষ্টু হাসি রেখা। রুপের চোখ খোলা মাত্র’ই নাদিফ শব্দ করে রুপের নাকে চুমু এঁকে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। এদিকে রুপ নাদিফকে ইচ্ছে মতো বকে যাচ্ছে এরুপ কান্ডের কারণে,
” ভেবেছিলাম আজ আপনার মনের বাসনা পূরণ করবো। কিন্তু আপনি যে আস্তো বদ লোক! আপনাকে ভালোবাসি বলবো না না না। ”
” বালে দাও আমার একমাত্র জা! আমি তোমাকে সাহায্য করবো।”
————-
মধ্যাহ্নভোজের পর নাদিফ নিজের ঘরে চলে আসলো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে বাহিরে যাবে বলে। বিছানায় বসে জরুরী কাগজপত্র ঠিকঠাক করছিলো ঠিক সেই সময়ে নজর যায় টেবিলের উপর রাখা কাপড়ের উপর। নাদিফ ভ্রু যুগল কুঁচকে টেবিলের দিকে এগিয়ে আসে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবীর উপর ছোট্ট চিরকুট। নাদিফ ভীষণ অবাক হলো। প্রেম নীড়ে পাদিফের অবর্তমানে কেউ নাদিফের ঘরে প্রবেশ করে না। আর পাঞ্জাবী রেখে যাওয়া দূরের কথা।
অনেক কৌতূহলী হয়ে চিরকুট খুলে কালো কালি দিয়ে গোটা অক্ষরের লিখা চার লাইন কথা পড়া শুরু করল,
” সায়াহ্নের শেষ সময়ে, সূর্য অস্তমিত হয়ে যাবার পর মুহূর্তে অপেক্ষা করবো আপনার জন্য ঠিক সেই চিলেকোঠার ঘরে যেখানে আপনার নজরে আমি প্রথমে এসেছিলাম। আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার। আমি চাই শুভ্র রঙে রাঙিয়ে তুলুন আপনার দেহ। যেন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারি। আপনাকে ছুঁয়ে দিতে পারি।”
নাদিফ চিঠিখানা শক্ত করে বক্ষঃস্থলে মিশিয়ে নিলো। পাঞ্জাবীর উপর হাত বুলিয়ে আলমারিতে উঠিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
——-
” আমি নৌকায় বিয়ে করবো এবং নৌকায় চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবো। কোন গাড়িতে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবো না।”
ফোনে আকাশ রাইসার কথোপকথন হচ্ছে। ঘরে বসে বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে রাইসা প্রেম করে যাচ্ছে। রুপ আয়নার সামনে বসে আছে। রাইসার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে রাইসার পানে।
অপর প্রান্তে আকাশের মাথায় হাত রাইসার অসাধ্য কথা শুনে। ইট পাটকেল দ্বারা তৈরি শহরে নৌকা পাবে কই আকাশ তা চিন্তা করছে। কয়েক মিনিট চিন্তা করার পর আকাশ চট করে বুদ্ধি বের করে বসে। রাইসার কথার প্রেক্ষিতে বলে,
” শহরে নদী পাবো কোথায়? ডোবা আছে, চলবে তো? তুমি বললে ডোবা পথে আসবো। যেখান থেকে ফুলের সুবাসের বিপরীতে ডোবার ময়লার গন্ধ বের হবে। ব্যাপারটা কেমন আনন্দময় কষ্টদায়ক বুঝতে পারছো!”
আকাশের কথায় রাইসা ওয়াক ওয়াক করতে শুরু করলো। রুপ দৌঁড়ে এসে রাইসাকে ধরে বাথরুম পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেলো। রাইসাকে ইচ্ছে মতো বকছে রুপ। কি এমন শুনেছে যার জন্য বমি করছে!
আকাশ এতক্ষণে ফোন কেঁ’টে দিয়েছে নয়তো দেখা যাবে আকাশের পিচ্ছি হবু বউ ফোনের ঐপাশ থেকে তেড়ে এসে দুরুম দারুম কিল বসাচ্ছে পিঠে।
” কি হয়েছে তোমার? বমি করলে কেন? পেটে গ্যাস হয়েছে কি? ঔষধ আনবো?”
রুপের হাজার প্রশ্নে রাইসার উওর দিতে বাধ্য হয়,
” পেট ঠিক আছে আমার। গ্রাস-ট্যাস কিছুই হয় নি। ঐ আমার একটা ত্যাড়া হবু বর আছে না! তাকে আমার মনের সুপ্ত ইচ্ছের কথা বলেছিলাম। বিনিময়ে সে আমাকে এমন উওর দিয়েছে যে আমার অবস্থা এই হয়েছে।”
” তোমার ইচ্ছে টা কি শুনি?”
রাইসা আকাককে বলা কথাগুলো রুপকে সুন্দরভাবে শুনালো। রুপ হাসছে দুইজনের কথন শুনে। রুপ রাইসাকে জড়িয়ে ধরে নেয় মাথায় আদরী স্পর্শ করে বলে,
” ছোট বেলায় তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই করতে না। তুমি জানো! ছোটবেলায় তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করার জন্য বড়োরা চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তুমি যাবে না বলে খুব কান্না করেছিলে। এতো কান্না করেছিলে যে তোমার একশত তিন ডিগ্রি জ্বর এসে গিয়েছিলো। জ্বরের ঘোরে তুমি শধু আমার নাম ধরে ডেকেছো। কেউ তোমার কাছে আসতে পারে নি। আমি সারারাত তোমার পাশে ছিলাম। এরপর থেকে কেউ আমাদের আলাদা করতে চায়নি। ছোট থেকে এই পর্যন্ত আমরা একসাথে। সেই ছোট্ট কাঁদুনে মেয়েটা এখন চুটিয়ে প্রেম করছে বরের সাথে। আমাকে ছাড়া দিব্যি চলতে শিখে গিয়েছে সে।”
রুপের কান্না মিশ্রিত কন্ঠস্বর। রাইসাও কাঁদছে। রুপের উদ্দেশ্যে বলছে,
” আমি কোথাও যাবো না রুপ! তোমার কাছেই থাকবো। ঐ ছেলে তো পটিয়ে আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে চাইছে।”
রুপ কান্নার মাঝেও হেসে উঠে রাইসার কথা শুনে। মেয়েদের জীবন যে এমনিই। মেয়েদের স্বামীর ঘরে যেতেই হবে।
————
সন্ধ্যা নেমেছে ধরণীতে কিছুক্ষণ পূর্বে। প্রেম নীড় আজ নীরব নয় বরঞ্চ মানুষে গমগম। রুপ সাধারণভাবে প্রতিদিনের ন্যায় পরিপাটি হয়ে আয়েশা আজাদকে সাহায্য করছেন কাজে। ফাহিমার বাবার বাড়ি থেকে বড়ো ভাই ভাবি এসেছেন। সোফার ঘরে ফাহিমার সাথে কথা বলছেন। এদিকে পাড়া প্রতিবেশীরাও আমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে এসেছে ফাহিমাকে দেখবে বলে। পুরো বাড়িতে খাবারের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে চারাপাশ। হাসি-মজার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে অনবরত। আয়েশা আজাদ ক্ষণে রান্না ঘরে আসছেন তো ক্ষণে সোফার ঘরে যাচ্ছেন সকলের সাথে কথা বলতে। কাজ শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। রুপ রান্না ঘর থেকে বের হয়নি একবারের জন্যও। লোকে কি বলবে তা ভেবে ঘাপটি মেরে বসে আছে। রুপের ইচ্ছে, মানুষজন কিছু সংখ্যক চলে গেলে বের হয়ে ঘরে চলে যাবে। রুপের যে অনেক কাজ বাকী।
” রুপ! অনেক কাজ করেছো। যাও তৈরি হয়ে আসো।”
আজাদ সাহেবের গম্ভীর স্বরে রুপ ভয় পেয়ে যায়। এই প্রথম আজাদ সাহেব রুপের সাথে এতো কঠিনস্বরে কথা বলছে। রুপ মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিলো আজাদ সাহেবের কথায় দাঁড়িয়ে রইলো,
” আমার ছেলেকে মানুষ বানানোর জন্য ধন্যবাদ মা! তুমি জানো না কি উপকার করেছো তুমি আজ। এভাবেই আমার ছেলের পাশে থেকো সবসময় এই দোয়া করি।”
আজাদ সাহেব চলে গেলেন। রুপ ভাবতে লাগলো এমন কি করেছে যার কারণে ধন্যবাদ জানালো। রুপ ধীরেপায়ে উপরে চলে গেলো। এখন যে তৈরি হতে হবে রুপকে নাদিফের জন্য।
—–—–
হালকা হেলানো বাতাস বইছে চারপাশে। হালকা বাতাসে চিলেকোঠা ঘরের সদ্য লাগানো সাদা পর্দা উড়ছে। রাতের আঁধারে চিলেকোঠা ঘর গাঢ় অন্ধকার হয়ে আছে। নাদিফ রুপের দেখা পায়নি আজ সারাদিন। নাদিফের কাছ থেকে এক প্রকার পালিয়ে বেড়িয়েছে। নাদিফদের আজ সারাদিন অস্থিরতায় কেটেছে। কখন সন্ধ্যা আসবে সেই অপেক্ষায় ছিলো যেন। কাঙ্খিত সময় এসে গিয়েছে। ঘর ভর্তি মানুষজন সকলের অগোচরে নাদিফ আস্তে পায়ে ছাদে চলে আসে।
চিলেকোঠা ঘর গাঢ় অন্ধকার। নাদিফ প্রবেশ করতে দখিনা বাতাস গা ছুঁয়ে দিলো। টেবিলের উপর ছোট ছোট মোমবাতি জ্বালানো। মাঝখানে চকলেট কেক যার উপর লিখা ‘ভালোবাসি’। নাদিফ চোখ বন্ধ করে হাসলো। আশেপাশে কাতর চোখ খুঁজে চলছে রুপকে। নাদিফ অপরুপ বলে একবার হাক ছাড়লো।
চারপাশ স্তব্ধ পরিবেশ। কিছু সময় পর নাদিফের কর্ণধারে নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ আসে। নাদিফ মুচকি হাসে। নাদিফ জানে রুপ তার আশেপাশেই আছে। নাদিফ রুপের উদ্দেশ্যে উঁচু আওয়াজে বলে,
” অপরুপ! ভালোবাসি বলে লুকিয়ে আছো কেন? আমি কিন্তু চাইলে তোমাকে খুঁজে বের করতে পারি। তুমি কি চাও আমি এমন কাজ করি! সত্যি বলছি এমন কিছু যদি চাও তাহলে তোমাকে যেখানে পাবো সেখানেই চুমু খাবো।”
রুপের নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ এবার স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। অন্ধকারে রুপ নাদিফের সামনে এসে দাঁড়ালো হাতে বড়ো মোমবাতি যার আলোতে স্পষ্ট রুপকে দেখা যাচ্ছে। নাদিফ অপলক দৃষ্টিতে রুপকে দেখছে। চশমাবিহীন চোখে গাঢ় কাজল এঁকেছে রুপ। ঠোঁট হালকা গোলাপি জেল যা মোমবাতির আলোতে চিকচিক করছে লতার মতো কেশব খোলা হালকা বাতাসে যা উঠছে, পরিধানে নাদিফের দেয়া লাল জামাটা। নাদিফ মাতাল দৃষ্টিতে অপরুপকে দেখছে। রুপ লজ্জায় নাদিফের পানে তাকাচ্ছে না এক ধ্যানে মোমবাতির দিকে তাকিয়ে আছে।
” এসব আয়োজন কেন?”
” আপনার জন্য।”
” আমি কি রেগে আছি! আমার রাগ ভাঙাতে এসব করেছো?”
রুপ হাসছে। রুপ জানে নাদিফ ইচ্ছে করেই এসব বকছে যেন রুপ মুখ ফসকে মনের কথা বলে ফেলে।
” কিছু বলো অপরুপ!”
নাদিফের মাতাল স্বরে রুপের শরীরে আলাদা শিহরণ বইয়ে যাচ্ছে। রুপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বরে বলল,
” চোখ বন্ধ করুন নাদিফ! আপনার চাহনি সহ্য হচ্ছে না।”
নাদিফ হাসছে শব্দ করে। রুপের কাছে এসে রুপের কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে এনে বলল,
” চোখের কি দোষ! চোখের সামনে অপরুপকে দেখলে তো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাই।”
রুপ একহাতে নাদিফের ঠোঁট চেপে ধরে বলল,
” সবসময় লাগামহীন কথাবার্তা। আপনি খুব নির্লজ্জ, নির্দয়। আমাকে সমসময় লজ্জায় ফেলতে মজা পান। চুপচাপ আমার কথা শুনুন। কথার মাঝে কোন টু শব্দ করবেন না।”
নাদিফ হাসছে রুপের অস্থিরতা দেখে। নাদিফ আজ রুপের সব কথা শুনবে। যেভাবে রুপ বলতে চাইছে সব বুঝবে। নাদিফ মাথায় সায় জানিয়ে দেয়। রুপ এবার বলতে শুরু করে,
” আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি নাদিফ! আপনার ভালোবাসার কাছে আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার পাগলামিতে সায় দিচ্ছি। আপনার বাবা-মার কাছ থেকে আদর ভাগ করে নিচ্ছি। আপনার সকল কিছুতে ভাগ বসাতে চাইছি। অনুমতি দিবেন আমায়?”
নাদিফ হাসছে। তৃপ্তির হাসি। অন্তরের গহ্বরে শীতল হাওয়া বইছে। নাদিফ রুপকে ছেড়ে দিয়ে শব্দ করে রুপের ললাটে অধর ছুঁয়ে দিলো। রুপের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। নাদিফ শক্ত করে রুপকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আজ দুজনের মুখে তৃপ্তির হাসি। নাদিফ এতো খুশি হয়েছে যে রুপের সারা মুখে অধর ছুঁয়ে দিয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,
” তুমি জানো না আজ আমাকে কতোটা আনন্দিত করেছো অপরুপ! আমি আজ পাগল হয়ে যাচ্ছি খুশিতে। তোমার এই কথা শোনার জন্য কতোটা ব্যাকুল হয়েছিলাম বুঝাতে পারব না। ভালোবাসি রুপ, অনেক বেশিই ভালোবাসি। থাকতে পারব না তুমি হীনা। আমার সকল প্রশান্তি যে তোমাতেই খুঁজি।”
রুপ হাসছে সাথে যেন সকল কিছুই হাসছে। রুপ নাদিফের বক্ষঃস্থলে মিশে মিনমিন কন্ঠস্বরে বলে,
” আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে।”
রুপ নাদিফকে ছেড়ে দেয়। নাদিফকে টেনে হাসিমুখে টেবিলের কাছে নিয়ে যায়। একসাথে দুজন কেক কেঁটে একে অপরকে খাইয়ে দেয়।
রুপ নাদিফ বর্তমানে চিলেকোঠা ঘরের দখিনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে হালকা বাতাস বইছে। রুপ নাদিফ তা অনুভব করছে।
আচমকা নাদিফ রুপের হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে নেয়। রুপ কিছু বলে না একবার হাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে আবার বাহিরে মনোনিবেশ করে। কিছুক্ষণ পর রুপ অনুভব করে নাদিফ স্ব-যত্নে রুপের হাতে কিছু পরিয়ে দিচ্ছে। রুপ আবারো হাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে। টিমটিম আলোতে স্পষ্ট লাল রেশমি চুড়ি দেখা যাচ্ছে রুপের হাতে। রুপ অবাক চোখে নাদিফকে দেখছে,
” আসলামপুরের বাজারে দেখেছিলাম এক দোকানে চুড়িগুলো। তোমাকে কাপড় দিয়েছি কিন্তু অলংকার দেইনি। আসলামপুরে থাকতেই পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সুযোগ পাইনি। আজ সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করতে পারলাম না।”
রুপ হাতের চুড়ি নেড়েচেড়ে দেখছে। চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজের তালে তালে রুপও হাসছে। রুপের হাসিতে নাদিফ আবারও ঘায়েল হচ্ছে। নাদিফ রুপের আনন্দের মাঝে আরেকটা সু সংবাদ যোগ করল,
” আমার চাকরি হয়েছে অপরুপ! এক বছর বাহিরে কাজ করে বাবার অফিস সামলাবো।”
রুপ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাদিফের পানে। রুপ ভাবছে আজাদ সাহেবের কথা। আজাদ সাহেব কি এই কারণেই রুপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলো!
” আপনি কি রেগে আছেন অমার উপরে?”
” না তো! কেন?”
” এমনি মনে হচ্ছে।”
রুপ নাদিফের প্রেমালপনের মাঝে কারোর আগমন ঘটে। আর সে হচ্ছে ফাহিমা। রুপ নাদিফকে পাশাপাশি দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে চিৎকার করে বলে উঠে,
” ও শ্বশুর গো! শাশুড়ি আম্মা গো দেখে যাও তোমার ছেলের মতিগতি! মেয়েটাকে আজ মেরেই ফেলবে মনে হচ্ছে! ও ছোট ভাইয়া, তুমি এতো খারাপ হলে কবে থেকে? মেয়েটাকে কি বিয়ে ছাড়া গর্ভবতী বানিয়ে দিবে বলে ভেবেছ?”
রুপ নাদিফ একে অপরের থেকে দূরে সরে গেলো। নাদিফের কপালে হাত। তার ভাবি যে এমন তীর মারবে কে জানতো! নাদিফ তো মনে মনে রুপকে বকে যাচ্ছে। না রুপ আজ ভালোবাসি বলতো! না এতো কিছু হতো!
আজ মনে হয় এদের বিয়ে দিয়েই ছাড়বে আজাদ সাহেব আর আয়েশা আজাদ।
কি বলেন সবাই! ফাহিমাকে কি বলবেন সবাই?
চলবে………..