তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love) 💕 #writer_Sumaia_Islam_Mim #part_3

0
9

#তবু_আছি_কাছাকাছি (Doctors love) 💕
#writer_Sumaia_Islam_Mim
#part_3
💕
.
.
আজ সকাল সকালই সাদি হসপিটালে এসে গেছে, একটা সার্জারী আছে। তার সাথে যে সহডক্টর থাকবে তাদের নিয়ে একটা মিটিং করলো প্রথমে। মিটিং শেষে অপারেশন থিয়েটার রেডি করতে বলে সাদি নিজের কেবিনে এলো।
.
সুমু মায়ের পাশেই ছিল তখনই তার মায়ের আবার বুকে ব্যাথা ওঠে। সুমু উঠে গিয়ে ডক্টরকে ডাকতে যায় কিন্তু সুমুর মা যেই ডক্টরের আন্ডারে আছে সে অলরেডি একটা সার্জারী করার জন্য ওটিতে চলে গেছে৷ এখন তার সাথে যোগাযোগ সম্ভব নয়। তাই সুমু রাকিবকে ফোন দেয়!

—ভাইয়া! আম্মুর তো আবার ব্যাথা শুরু হইছে। আর এদিকে ডক্টর ও সার্জারীতে ব্যস্ত! আমি কি করবো? আর তোর আসতেও অনেক দেড়ি হবে!

রাকিবঃ তুই এক কাজ কর! ড. সাইমান সাদি এর কাছে গিয়ে বল! ও আমার এক জুনিয়র ভাই। আর ও নিজেও একজন হার্ট সার্জন। দেড়ি করিস না তাড়াতাড়ি যা।

—আচ্ছা!
.
ফোনটা কেটেই রিসেপশনের দিকে দোড় দিল সুমু। রিসেপশনিস্ট এর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে সাদির কেবিনের উদ্দেশ্যে ছুটে যায়।
.
সাদির কেবিনে নক করতেই সাদি ল্যাপটপে চোখ রেখেই আগন্তুককে ভিতরে আসতে বলে।
.
সুমু পারমিশন পেয়েই হুট করে ঢুকে পরে কেবিনে। আর কেবিনে ঢুকতেই পাশে রাখা এক টেবিলের সাথে খেল ধাক্কা! যার দরুন পায়ের একটা নখ উল্টে অনেক রক্ত বের হচ্ছে, কিন্তু তাতে সুমুর কোন ভাবাবেগ নেই। সে সাদির টেবিলের কাছে এসে বেশ হাঁপিয়ে বলতে লাগল,

—আপনি ড. সাইমান সাদি? রাইট?

সাদিঃ ইয়েস! আই এম।

—আসলে ড. রাকিবুল ইসলাম আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছে। আমি ওনার ছোট বোন!

সাদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কি ভেবে তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

সাদিঃ(একটু মুড নিয়ে) বলুন কি সাহায্য করতে পারি?

—আসলে আমার আম্মু আবার অসুস্থ হয়ে পরেছে তাই যদি একটু এসে দেখতেন! ড. হাসিব কোন এক সার্জারীতে আটকে গেছেন।(চিন্তিত স্বরে)
.
সাদি কাউকে ফোন করে কিছু একটা বলল যা সুমুর বোধগম্য হলো না। তারপর সাদি বলল,

সাদিঃ চলুন।

সুমু সাদিকে নিয়ে তার মায়ের কেবিনে গেলো আর সাদি সুমুর মাকে কিছু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিল। সুমুর মা ঘুমিয়ে আছে। এটা দেখে সুমু একটু নিশ্চিন্ত হলো। সে সাদির দিকে ফিরে একটা ধন্যবাদ দিল।

—আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ৷ আসলে হঠাৎ আম্মু এমন অসুস্থ হয়ে পরায় মাথা কাজ করছিল না। ভাইয়াকে ফোন দেওয়ায় সে বলল আপনার কথা! তাই কিছু না ভেবেই আপনার কাছে গিয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ!

সাদিঃ না! না! ঠিক আছে। এটা আমার কর্তব্য ছিল। আমি ড. হাসিবকে মেসেজ করে দিয়েছি। উনি ওটি থেকে ফিরে এখানেই প্রথমে আসবে। টেনশন করবেন না। (মুচকি হেসে)

—(মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে) জ্বি।

সাদি অবাক হয়ে সুমুর দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের প্রতি ওভার পজেসিভনেসটাই মুগ্ধ করেছে সাদিকে। সাদি নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,

সাদিঃ প্লিজ ওনার পায়ে একটু ড্রেসিং করিয়ে দিন। অনেকটা রক্ত পরে গেছে।

সুমুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে সার্জারীর উদ্দেশ্যে। সুমু অবাক হয়ে সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
সারাদিনই সাদির মন খুব ভালো ছিল। প্রথমত সে তার স্বপ্নকন্যার দেখা পেয়েছে৷ আর তার সার্জারী ও সাকসেসফুলি কম্পলিট হয়েছে।
.
.
রাতে হসপিটাল থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবে, গাড়ির কাছে পৌছতেই দেখে একটা মেয়ে টংয়ের ফাঁকা বেঞ্চে বসে চা খাচ্ছে। মেয়েটাকে চিনতে তার বিন্দুমাত্র কষ্ট হলো না। এ যে তার স্বপ্নকন্যা। একা মেয়ে হওয়ায় পাশে একটা লোক বাজে কথা বলছে, কিন্তু মেয়েটাকে দেখে মনেই হচ্ছে না কোন কথা তার কানে ঢুকছে। সে এক মনে চা খাচ্ছে। তৎক্ষনাত মেয়েটি আরেককাপ ফুটন্ত গরম চা অর্ডার করলো। তা দেখে পাশের লোকটা যেন পেয়ে বসলো। ভাবছে মেয়েটাকে আরেকটু সময় বিরক্ত করা যাবে যেহেতু আরেককাপ চা অর্ডার করেছে!
.
লোকটার বাজে কথা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা শুনে সাদির মাথায় যেন ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো। এর মধ্যে একটা ছোকড়া টাইপের ছেলে এসে অতিরিক্ত গরম চা টা মেয়েটাকে ধরিয়ে দিল। মেয়েটা চায়ে একটা চুমুক দিতেই লোকটা ফাঁকা বেঞ্চটায় মেয়েটার পাশে বসে পরে।
.
সাদি একটু এগিয়ে যায় লোকটাকে ধোলাই করার জন্য! কিন্তু তার আগেই লোকটা মাগো বলে এক চিৎকার দেয়। আর পাশের মেয়েটা চিৎকার শুনে বাঁকা হাসি দেয়। আশেপাশে সবাই মোটামুটি হাসাহাসি শুরু করেছে। টংয়ে বসা মহিলাটি বলে উঠল,

মহিলাঃ আর করবি ছ্যাঁচড়ামি? দিলো তো আফায় তোর পাছাডা পুইড়া!

বলেই আবার হাসা শুরু করলো। সাদি অবাক হয়ে গেছে সুমুর কাহিনী দেখে। একটা মেয়ে এতো ফাস্ট কি করে হয়?
.
আসলে তখন লোকটা বসার ঠিক এক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ের মধ্যেই সুমু ওই অতিরিক্ত গরম চা টা বেঞ্চের অপরপাশে ঢেলে দেয় যার দরুন সবটুকু চা ই লোকটার পিছনে লেগেছে। বেঞ্চটা লোহার হওয়ায় তাড়াতাড়ি গরম হয়েগেছিল আর লোকটার পিছন না পুরলেও মারাত্মক ছ্যাঁকা লেগেছে। দুই তিনদিন উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে হবে।
.
সাদি এখনো হা করে আছে। সুমু দোকানিকে টাকা পরিশোধ করে একটু মুচকি হেসে এগিয়ে এলো সাদির কাছে। এগিয়ে এসে সাদিকে বলল,

—সবক্ষেত্রে মাথাগরম করতে হয় না ডাক্তারসাহেব! বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হয়।

সাদিঃ(অবাক হয়ে) আপনি আমাকে কিভাবে নোটিশ করলেন?

—আসলে সবাই বলে মেয়েদের সিক্সথ সেন্স ভালো। আর আমার ভাইয়া বলে আমার সিক্সথ সেন্স একটু বেশিই শার্প। আসি!

বলেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে সুমু হসপিটালের ভিতরে চলে গেলো। আর সাদি মুখটা হা করে দাঁড়িয়ে আছে। এই পিচ্চি একটা মেয়ের এতো এটিটিউড! সাদি নিজেও হেসে দিল। তারপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
.
.
ছেলেকে এরকম হাসতে হাসতে গেট থেকে ঢুকতে দেখে সোফায় বসে চা পানরত সাদির মা বেশ অবাক হলেন। তার পরক্ষণেই সে নিজেও একটু হেসে দিলেন৷ এবার সে নিজেও শিওর যে তার একমাত্র পুত্র প্রেমে পড়ে তার অনুভূতির সাথে পরিচিত হচ্ছে। তবুও ফোঁড়ন কেটে বলে উঠলো,

মামুনিঃ আজ আমার ছেলের ঠোঁট থেকে তো দেখছি হাসি সরছেই না। ব্যাপার কি?(ভ্রু নাচিয়ে)

সাদি মায়ের কথা শুনে হেসে দিল। সোফায় বসে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
সাদির মা ও তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়।

সাদিঃ মা আজ ওই মেয়েটার সাথে সকাল সকাল দেখা হয়েছে। আর বাসায় ফেরার আগেও মেয়েটাকে দেখেছি।

মামুনিঃ তাই নাকি!

সাদিঃ হুম!
.
তারপর সাদি একে একে তার মাকে সব বলল। কিভাবে সুমু তার বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের আত্মরক্ষা করেছে। সাদির মা ও বেশ খুশি হয়েছে সুমুর আচরণের কথা শুনে। হঠাৎ এক কর্কশ আওয়াজে সাদি তৎক্ষনাত মায়ের কোল থেকে উঠে একটা ঢোক গিলল।

,,
,,
,,
,,
(চলবে)……..

(সবাই সুমু চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলে যান! কেমন লাগে সুমু-সাদির জুটি?)

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here