#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৬
#তানজিম_তানাজ
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো!”
ভ্রুকুচকে আহনাফ বললো।সিরাত এখনো বিষ্ময় নিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আহনাফ বিরক্তভাব মুখে ফুটিয়ে সিরাতের হাত থেকে বক্সটা নিলো।বক্সের ভিতর থেকে ফোন বের করে চালু করে সিরাতের দিকে এগিয়ে দিলো।সিরাত বিষ্ময় নয়নে হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলো।আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“ফোনের ভিতর সিম আছে।আর আমি সবার নাম্বার এতে সেইভ করে দিয়েছি।আর আমার নাম্বারও রয়েছে আমার নামে খোজ করো পেয়ে যাবে।”
সিরাত আহনাফের দিকে তাকিয়ে মাথা দুলালো।আহনাফ আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। গলায় টাই বাঁধছে সে।সিরাত গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কোনো প্রয়োজন ছিলোনা ফোন দেওয়ার। এমনিতেও আমাকে বিয়ে করে আমাকে করুণা করেছেন এটাই অনেক।আমার জন্য আপনাকে আর কিছু করতে হবেনা।”
আহনাফ আয়না দিয়েই সিরাতের প্রতিবিম্বের দিকে সরল চোখে চেয়ে রইলো।হয়তো সিরাতের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে।সিরাত ফোনটা সোফার উপর রেখে ফ্রেস হতে চলে গেলো।আহনাফ কিছুসময় একভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
———–
সিরাত ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখলো আহনাফ রুমে নেই। সিরাত একপলক ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়িতে ৭ টা বেজে ৫ মিনিট।এত সকালে উনি কোথায় গেলেন!সিরাত গিয়ে সোফায় বসলো।আহনাফ সব গুছিয়ে রেখে গেছে।বিছানা পরিপাটি করে গোছানো সোফায় থাকা বালিশ আর কাঁথা গুছিয়ে রেখে গেছো।এই দিনে সিরাত এইটুকু বুঝে গিয়েছে আহনাফ অনেক পরিপাটি। সিরাত হাতে ফোনটা নিয়ে কিছু সময় নেড়েচেড়ে দেখলো।দেখে মনে হচ্ছে অনেক দামী।আমাকে এতো দামী ফোন কিনে দেওয়ার কোনো মানেই হয়না।করুণা করে একটা নরমাল কম দামী কিনে দিলেও হতো।তাতেই আমি অনেক খুশি। কথা গুলো মনে মনে বলে সিরাত নিচে চলে গেলো।
সিরাত নিচে নেমে রান্না ঘরে চলে আসলো।নাদিয়া বেগম রুটি বেলতে ছিলেন।সিরাতকে দেখে বললেন,
“আহনাফ চলে গেলো আর তুমি এতো পরে নিচে নামলে যে!ছেলেটা যাওয়ার সময় একবার নিচে আসতে।ছেলেটা সাতদিনের জন্য মেডিকেল থেকে ক্যাম্পিংয়ে গেলো।”
সিরাত অবাক হলো কিছুটা।সে তো কিছুই জানেনা অবশ্য জানার কথাও না।সেই অধিকার তার নেই।নাদিয়া বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“অবশ্য আহনাফ যেরকম ব্যবহার করে তোমার সাথে তাতে তোমার দূরে থাকারই কথা।কিন্তুু আহনাফ তোমাকে মন থেকে না মানলেও তুমিই আহনাফের স্ত্রী।নিজের অধিকার ছেড়ে দিওনা।নিজের অধিকার বানিয়ে নিতে শিখো।”
সিরাত কী বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
—————–
সিরাত তার চাচার বাসায় এসেছে কিছুসময় হলো।নাদিয়া বেগমের পারমিশন নিয়ে চলে এসেছে সকাল সকালই।কিছুতেই তার মন টিকতে ছিলোনা ওই বাসায়। সিরাত এককাপ চা বানিয়ে এনে তার চাচার সামনে রাখলো।আজমল সাহেবকে আজকে সকাল সকালই রিলিজ করা হয়েছে। তিনি বিছানায় গা হেলিয়ে বসে ছিলেন।সিরাতের হাত থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ইশারায় সিরাতকে বসতে বললেন।সিরাত তার পায়ের কাছে বিছানায় অপরপ্রান্তে বসলো।আজমল সাহেব কাপে এক চুমুক দিয়ে বললেন,
“তুই ও বাড়িতে ভালো আচ্ছিস মা!”
সিরাত হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে বললো, “হ্যাঁ চাচা।আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভালো আছি।”
আজমল সাহেব সিরাতের কথায় স্বস্থি পেলেন।বুক থেকে যেন পাথরের ভার নেমে গেলো।শান্তি লাগছে এখন। সিরাতের জন্য তিনি অনেক চিন্তিত ছিলেন।স্বস্থির কন্ঠে বললেন,
“তোর শাশুড়ী মা অনেক ভালো।আর আহনাফ বাবাও অনেক ভালো।কত ভালো ব্যবহার তার।তুই অনেক ভালো থাকবি মা। ”
সিরাতের কাছে তাচ্ছিল্য লাগলো কথাগুলো।তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে মাথা দুলালো।আজমল সাহেব পুনরায় চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,
“তবুও যদি কখনো কোনো সমস্যা হয় আমাকে সাথে সাথে জানাবি মা।তোকে আমার নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসি।তুই আমার আরেক মেয়ে।তোর বাবা বেঁচে না থাকলে কী হয়েছে যতোদিন আমি বেঁচে আছি ততোদিন তোর বাবার ছায়া হয়েই বেঁচে থাকবো।”
সিরাতের চোখ ছলছল করে উঠলো। এই একটা মানুষ যে সিরাতের আপন অনেক কাছের মানুষ।সিরাতও তার চাচাকে বাবার চোখে দেখে।এই মানুষটাই বাবা মা হারানোর পর নিজের মেয়ে করে তাকে কাছে টেনে নিয়েছে।ভাগ্য সবসময় খারাপ করেনা আমাদের সাথে ভালো কিছুও করে।যেমন বাবার মতো এক নতুন বাবা পেয়েছে সে।সিরাত আরো কিছু সময় তার চাচার সাথে কথা বলে খালি চায়ের কাপ নিয়ে রান্না ঘরের দিকে এলো।রান্না ঘরের আসতেই সিরাতের চাচি ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,”এই যে নবাবজাদি!বড় ঘরে আপনার বিয়ে হয়েছে দেখে পা বুঝি মাটিতে পরছেনা!ঘরের বাকি কাজগুলো কে করবে শুনি। এতো সময় বসে যে আপনি গল্প করলেন!”
সিরাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”এখুনি করছি চাঁচি। ”
বলেই সিরাত পানির ট্যাপ ছেড়ে চায়ের কাপ ধুতে লাগলো।তার চাঁচির এমন ব্যবহারে এখন সে অবস্ত।আগে খারাপ লাগলেও এখন আর লাগেনা।সিরাত কাপের সাথে সাথে রান্না ঘরে রাখা বাকি আধোয়া জিনিস ধুয়ে রাখলো।তারপর সবরুম গুছিয়ে বালতিতে পানি নিয়ে ঘর মোছা শুরু করলো।
————
তিন দিন হয়ে গেছে সিরাত তার চাচার বাসায় রয়েছে। দিনরাত খেটে মরছে তবুও চাচার বাসায় রয়েছে।চাচাকে স্বস্তি লাগে তার। ওই বাসায় থাকলে চাচার জন্য চিন্তিত থাকতো।সিরাতের চাচা এখন পুরোপুরি সুস্থ।বিকেলে সিরাতের বান্ধবী মিতু এসে সিরাতকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়।মিতু সিরাতের অনেক কাছের বান্ধবী। সিরাতের সুখ দুঃখের সাথী।সিরাত ছোটবেলা থেকেই শুধু মিতুর সাথেই মিশে আসছে।মিতু সিরাতকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরলো।মিতু যখনই জানতে পরেছে তখনি সাথে সাথে গিয়ে সিরাতকে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছে।সিরাতও বিছানায় বসলো। সঙ্গে সঙ্গে মিতু রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
“এখন তো আমাকে ভুলই গেচ্ছিস দেখছি।তুই যে এসেচ্ছিস একবারও আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলিনা!
সিরাত মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,” আরে আরে এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো!আমিই তো তোকে ফোন দিয়ে জানালাম দেরীতে হলেও।”
মিতু ভেংচি কেটে বললো,”প্রথম দিন বলচ্ছিস!তিনদিন পর জানিয়ে এখন বলছো তুমিই জানিয়েছো আমাকে!”
সিরাত এগিয়ে গিয়ে মিতুর কাছে বসে বললো,”এখন বল তুই কেমন আচ্ছিস!আর তোর শাশুড়ী কই!”
মিতুু হাসিমুখে বললো,”আমি ভালো আছি। আর আমার শাশুড়ী আমার ননদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে।আমার কথা বাদ দে।তুই কেমন আচ্ছিস তোর শশুর বাড়ীর সবাই কেমন!দুলাভাইকে বিয়ের দিন দেখেতো অনেক ভালোই মনে হয়েছে।”
সিরাত মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,”হুম সবাই অনেক ভালো।”
মিতু ভ্রুকুচকে সিরাতকে বোঝার চেষ্টা করছে। মিতুর থেকে কথা লুকানো সিরাতের জন্য অনেকটা অসম্ভব ব্যাপার। তাই সিরাত দ্রুত কথা এড়াতে বললো,
“তা এখন কী করবি!ভর্তি হয়েচ্ছিস কোথাও!”
মিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুটা অাক্ষেপের কন্ঠে বললো,”না রে।শাশুড়ী মা বলে দিয়েছেন আর পড়াশোনা করতে দিবেননা তিনি।সংসার আর পড়াশোনা নাকি একসাথে ঠিকমতো করা যায়না।
কথাটা শুনে সিরাতের অনেক খারাপ লাগলো।এটা কেমন কথা!আগে তিনি বলে দিলেন সংসার আর পড়াশোনা একসাথে ঠিকমতো দুটো করা যায়না!আগে দেখতো।সবাই যে পারেনা এমন তো নয়।সবাই তো সংসার আর পড়াশুনা দুটোই সুন্দর ভাবে করছে।তবুও অনেকে এমন মনমানসিকতা নিয়ে থাকে যে সংসার আর পড়াশোনা দুটো একসাথে ঠিকমতো করা যায়না।এদের জন্যই অনেক বিয়ের পর ইচ্ছা থাকা শর্তেও পড়াশোনা করতে পারেনা।হঠাৎ কলিংবেল বাজতেই মিতু দরজা খুলতে চলে গেলো।সিরাতও মিতুর পিছু পিছু আসলো।মিতু দরজা খুলতেই মিতুর ছোট ননদ ভিতরে আসলো।বয়সে মিতুর বড়ই তিনি।সিরাতকে দেখে তিনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“সিরাত তুমি এখানে!”
সিরাত কিছু বলার আগেই মিতু বলে উঠলো,
“আমি নিয়ে এসেছি।সিরাত ওর চাচার বাসায় এসেছে।সেখান থেকে আমার এখানে নিয়ে আসলাম।”
তিনি সিরাতের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বললেন,
“তা শশুড়বাড়ি থেকে বের করে দিছে! নাকি এবারের স্বামীও মারা গিয়েছে!”
মিতুর ননদের কথা শুনে সিরাতের চোখ ছলছল করে উঠলো।মিতু তার ননদের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে বললো,
“এসব কী বলছেন আপনি আপু!সিরাতের চাচা অসুস্থ তাই সিরাত ওর চাচার বাসায় এসেছে।”
তিনি পুনরায় বিরক্তি নিয়ে বললেন,”তাহলে ভালো।প্রথম স্বামীটা তো বিয়ের পরদিনে মারা গিয়েছে তাই ভাবলাম…..”
কথাটা শেষ করতে না দিয়ে মিতু রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
“এতে সিরাতের কোনো দোষছিলোনা।মৃত্যু কারো হাতের উপর নির্ভর করেনা।আপনি শুধু কেনো সিরাতকে দোষারোপ করছেন!”
সিরাত আর একমূর্হত দাঁড়ালো না দৌড়ে চলে আসলো।মিতু অনেকবার পিছন থেকে ডেকেছে কিন্তুু সিরাত দাঁড়ায়নি।অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে সিরাত।বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই সিরাতের চাচাতো বোন এসে দরজা খুললো।আজকে সকালে এসেছে সে। ঢাকার ভিতরেই এক কলেজে পড়ে সে। কিন্তুু বাসা থেকে অনেক দূর হওয়ায় হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করে সে।দরজা খুলতেই সিরাত দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।রুমের দরজা আটকিয়ে বিছানায় শুয়ে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে লাগলো।সবাই সিরাতকেই দোষারোপ করে তার প্রথম স্বামীর মৃত্যুর জন্য। কিন্তুু এতে তার কী দোষ!
দুইমিনিট পর কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো সিরাত।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো সে। সামনের ব্যাক্তিকে দেখে থমকে গেলো সে।অবাক হয়ে বললো,
“আপনি!”
চলবে!
( কালকে নিজের বাসায় ফিরেছি।কালকে আবার জ্বর আসছিলো যার কারণে গল্প লিখতে পারিনি।অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।)