স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_৭ #তানজিম_তানাজ

0
5

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৭
#তানজিম_তানাজ

সামনে থাকা ব্যাক্তি পুনরায় বললো,”আপনি ঠিক আছেন!”

সিরাত চোখমুছে মাথা দুলালো।বিষ্মিত হয়ে বললো,”কিন্তুু আপনি এখানে!”

সিরাত দরজা শুধু ভিরিয়ে রেখেছিল। দ্রুত দরজা খুলে ভিতরে আসলো নিশি।হতদন্ড হয়ে বললো,”আমি তোকে বলতে ভুলে গেছিলাম ভিতরে সাদাদ আছে!”

পাশে চোখ বুলাতেই দেখলো সাদাদ দাড়িয়ে রয়েছে।সাদাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে সিরাতের দিকে তাকাতেই চমকে উঠে নিশি।সিরাতের কাছে এগিয়ে বললো,”একি তোর চোখমুখের এমন অবস্থা কেনো!”

সাদাদ বলে উঠলো,”উনি কান্না করছিলেন।আমি কিছু বলতেই কান্না থামিয়েছেন।”

নিশি সিরাতের দিকে চেয়ে ইশারায় বললো “কী হয়েছে!”

সিরাত কিছু বললোনা।সে কিছু তেই বুঝতে পারছেনা সাদাদ এখানে কী করছে!দেখেতো মনে হচ্ছে নিশি আর সাদাদ পরিচিত।সিরাত ভ্রুকুচকে সাদাদের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাদ বুঝতে পরে স্লানহাসি দিয়ে বললো,

“আসলে আমি আর নিশি ফ্রেন্ড। বলতে গেলে বেষ্ট ফ্রেন্ড।আসলে তোমার রুমে কেউ ছিলোনা বলে এই রুমে ফ্রেস হতে বলেছিলো নিশি।”

সিরাত আস্তে করে বললো, “ওহ”

তখনই ডাক পরলো সিরাতের চাচির।তিনি বসার ঘরে যেতে বলচ্ছেন সাদাদকে নিয়ে।নিশি সাদাদকে বসার ঘরে আসতে বলে চলে গেলো।সাদাদ একপলক সিরাতের দিকে তাকিয়ে চলে আসলো।সিরাত উঠে ওয়াশরুমে গেলো।চোখমুখে পানি ছিটিয়ে বেড়িয়ে আসলো।আজমল সাহেব এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছেন।কিছুসময় পর নিশি আর তার মাও যাবে।সিরাত যাবেনা বলেদিয়েছে।সাদাদ আর নিশি সোফা বসে গল্প করছে। আর সিরাতের চাচি রুমে বসে রেস্ট নিচ্ছেন।সিরাত দুইকাপ চা এনে সাদাদ আর নিশিকে দিলো।সাদাদ সিরাতকে প্রশ্ন করলো,”আপনার জন্য আনেনি!আপনি খাবেননা!”
সিরাত কিছু বলার আগেই নিশি হেসে বললো,”সিরাত খুব একটা চা খায় না। তুমি খাও।”

সিরাত ট্রে রান্না ঘরে রেখে এসে সোফায় বসলো।সাদাদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,”বাহ্। আপনি তো দেখছি বেশ ভালো চা বানান।”

সিরাত সৌজন্যমূলক হাসলো কিছু বললোনা।বসার ঘরে টুকটাক কথা হচ্ছে। নিশি আর সাদাদই বেশি কথা বলছে আর সিরাত মাঝে মাঝে সায় মিলাচ্ছে।সাদাদ মাঝে মাঝেই সিরাতকে দুইএকটা প্রশ্ন করছে।এতেক্ষণে সিরাত এইটুকু বুঝতে পারলো সাদাদ অনেক মিশুক প্রকৃতির।তার ব্যবহারও অনেকভালো।নিশি আর সাদাদ স্কুল থেকে একসাথে।নিশি জেনারেল লাইনে মাস্টার্স করছে আর সাদাদ ইন্টার্নি করছে।সাদাদ একজন ডাক্তার।

কিছুক্ষণ হয়েছে সাদাদ চলে গিয়েছে।সিরাতের চাচিও এইমাত্র আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে। সিরাত দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসলো।মূলত সিরাতের চাঁচির বোনের বাসায় দাওয়াত ছিল।নিশির ভালো লাগচ্ছিলোনা তাই যায়নি।নিশি সাদাদকে অনেকবার বলেছিলো রাতে এখানে খেয়ে যেতে।কিন্তুু সাদাদ জরুরি কাজ আছে বলে চলে গিয়েছে।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে নিশি আর সিরাত এক বিছানায় শুয়ে আছে।দুইবোন শুয়ে শুয়ে গল্প করছে। গল্পের মধ্যেই নিশি জিজ্ঞেস করলো,”আচ্ছা সারাদিনে দুলাভাই তোকে একবারও ফোন দিলোনা!”
সিরাত থমকে গেলো।আহনাফ গত তিনদিনে এখন পর্যন্ত একবারও ফোন দেয়নি তাকে।সিরাত আমতা আমতা করে বললো,”হয়তো ব্যাস্ত আছে অনেক।”
নিশি ধমকিয়ে বললো,”তুই চুপ থাক ব্যাস্ত আছে!এতো ব্যাস্ত যে বউয়ের খোঁজ নিবেনা।”

সিরাত চুপ করে রইলো।কী বলবে তার মাথায় আসচ্ছেনা।তখনই ফোন বেজে উঠলো।সিরাত উঠে বসে ফোনের স্কিন দেখলো অপরিচিত নাম্বার।নিশি উৎসাহ নিয়ে বললো,

“কীরে দুলাভাই ফোন দিছে!”

সিরাত দুইপাশে মাথা নাড়ালো।নিশির উৎসাহ মিলিয়ে গেলো।বিষন্নতা নিয়ে নিশি আধশোয়া হয়ে উঠে বসলো।নিশি চোখের ইশারা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তাহলে!”

“জানিনা।”

এর মধ্যেই কল কেটে গিয়েছে।সাথে সাথে পুনরায় কল আসলো।নিশি চোখের ইশারায় আসস্ত করে কল রিসিভ করতে বললো।সিরাত কল রিসিভ করে সালাম দিলো কিন্তুু কোনো উত্তর আসলোনা।সিরাত এখন রীতিমতো বিরক্ত। এতো রাতে কল দিয়ে চুপ করে রয়েছে দেখে।তারপরও সিরাত শান্ত কন্ঠে বললো,
“কে বলছেন!”
সাথে সাথে পাশ থেকে নিশি বললো,”কে কল করেছে!”

সিরাত পুনরায় বললো,”কে বলছেন!”

সাথে সাথে অপর পাশের ব্যাক্তি কল কেটে দিলো।সিরাতের খুব বিরক্ত লাগলো।নিশি জিজ্ঞেস করলো,

“কে কল দিয়েছে!”

সিরাত বিরক্তির ছাপ মুখে স্পষ্ট রেখে শুয়ে নির্বিকার কন্ঠে বললো,”জানিনা।কিছুতো বললোনা।”

সিরাতকে বিরক্ত দেখে নিশি আর কিছু বললোনা।শুয়ে পড়লো।সিরাতের মনে একবার জন্য মনে হয়েছিলো হয়তো আহনাফ ফোন দিয়েছে। কিন্তুু আহনাফ দেয়নি।ভাবতেই ক্ষাণিকটা খারাপ লাগলো।পরমূর্হতেই নিজকে সামলিয়ে ভাবলো আমার কেনো খারাপ লাগচ্ছে!আমার এমন ভাবনা হওয়াটাই ভুল ছিল।উনি কেনো আমাকে ফোন দিবেন!
তারপরও কোথাও যেনে খারাপ লাগা করছে।আর কিছু ভাবলোনা সিরাত।নিজের অজান্তেই মনের কোণ থেকে এক চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।

——————-
সকাল দশটার দিকে সিরাতের চাচার বাসায় হাজির হন নাদিয়া বেগম।ততক্ষণে সিরাতের চাচা চাচি বাসায় চলে এসেছিলো।নাদিয়া বেগম কিছু সময় বসে সিরাতকে নিয়ে চলে আসেন।সিরাত নিজের রুমে এসে ল্যাগেজ থেকে একটা সুতির থ্রিপিস নিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখলো আহনাফ দাঁড়িয়ে রয়েছে।সিরাত থতমতে খেয়ে গেলো।উনি এখানে! কিন্তুু ওনার তো আরো তিনদিন পর বাসায় আসার কথা ছিলো।আহনাফ অদ্ভুতভাবে সিরাতের দিকে তাকিয়ে আছে তা দেখে সিরাত ইতস্ত করে বললো,

“কিছু বলবেন!”

আহনাফ কিছু বললোনা।রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।সিরাত আহনাফের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।বাহিরে প্রচুর গরম।ঘেমে একাকার হয়ে গেছিলো সিরাত যার জন্য টানা এক ঘন্টা গোসল করে বের হলো।সিরাত বের হয়েই দেখলো আহনাফ সোফায় বসে কোলের উপর বালিশ রেখে তারপর ল্যাপটপ রেখে কিছু একটা করছে।তখনিই আহনাফ সিরাতের দিকে তাকালো।সিরাত চমকে উঠলো।আহনাফ বিরক্তমাখা কন্ঠে বললো,

“গোসল করতে এতোসময় লাগে বুঝি!মা তোমার জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করেছে।”

সিরাত হতদন্ড হয়ে বললো,”আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই সিরাত যেতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো,”দাঁড়াও।কোথায় যাচ্ছো!মা নিচে নেই। তারা বেরিয়ে পরেছে। তোমার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীনের জন্য আর কতো সময় অপেক্ষা করবে!আমি চলে যেতে বলেছি।”

সিরাত হতাশ হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।মনে মনে নিজের উপর রাগ লাগচ্ছে।সে তো জানতো তারা এখন বের হবে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে তাও কেনো সিরাত এতো সময় নিয়ে গোসল করলো!তার আরো আগে বের হওয়া উচিত ছিল।নিজের উপর রাগ লাগচ্ছে অনেক।
আহনাফ পুনরায় নিজের কাজে ব্যাস্থ হয়ে গেলো।সিরাতে মাথায় প্যাচানো তোয়ালে খুলে বারান্দায় মেলে দিয়ে আসলো।তারপর ধোঁয়া ভিজা কাপড়চোপড়ের বালতি নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো।ছাদে কাপড়চোপড় মেলে দিয়ে একপাশে এসে দাঁড়ালো। আকাশে কালো মেঘ তবুও রোদ আছে৷ তার মধ্যে রয়েছে নির্রমল বাতাস। যা সিরাতের চুলকে বারবার স্পর্শ করে এলোমেলো করে দিচ্ছে।সিরাত ক্ষাণিকক্ষন ছাঁদে দাঁড়িয়ে রইলো।পরিবেশটা তার অনেক ভালো লাগচ্ছে।এর আগে দুইবার ছাঁদে এসেছিলো তখন প্রচন্ড রোদ ছিল।আজকে রোদের তাপ কম।কিছুসময়ের মধ্যে চোখের পলকে ঝুম করে বৃষ্টি নামলো।সিরাত দ্রুত মেলে দেওয়া কাপড়চোপড় নামিয়ে পুনুরায় বালতিতে রাখলো তারপর সিড়ীর কাছে রেখে দিয়ে আসলো। আজকে সিরাতের বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে অনেক।সাতপাঁচ আর না ভেবে ছাঁদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো। মিনিট দশেক পর নেমে আসলো। তার অনেক ঠান্ডা লাগচ্ছে নাহলে আরো অনেক সময় ভিজবার ইচ্ছা ছিলো।

সিরাত রুমে ধীর পায়ে ঢুকে চারপাশে চোখ বুলালো।আহনাফ রুমের কোথাও নেই।সিরাত স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। হাতের বালতি বারান্দায় রেখে দ্রুত লাগেজের ভিতর থেকে কামিজ বের করলো।তখনি আহনাফের কন্ঠ শুনে থমকে গেলো সিরাত।চুপ করে রইলো।আহনাফ পুনরায় বললো,

“এই অবেলায় বৃষ্টিতে কেনো ভিজেছো?”

সিরাত উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “এমনি।”

আর এক মিনিটও দাঁড়ালোনা। দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আহনাফের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেকটা লজ্জা লাগচ্ছিলো সিরাতে। পুরো ভিজে রয়েছে সে।ক্ষানিক সময় পুনরায় গোসল করে বের হলো সিরাত।সিরাত বের হতেই আহনাফ রাগান্বিত কন্ঠে বললো,

“গাধা নাকি তুমি!বৃষ্টিতে ভিজে এখন আবার এতোসময় নিয়ে গোসল করলে কেনো।একঘন্টা গোসল করেই তো বৃষ্টিতে ভিজেছো। তাহলে এখন আবার এতোসময় কেনো গোসল করলে!ঠান্ডা লাগে যদি!”

আহনাফের শেষ কথাটা শুনে থমকে গেলো সিরাত। সিরাতকে চুপ থাকতে দেখে আহনাফ দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে বললো,”কথা বলচ্ছো না কেনো!”

কথাটা ক্ষানিকটা জোরে বলছে আহনাফ।যার কারণে কেঁপে উঠলো সিরাত।পরমূর্হতেই সেদিন রাতের কথা মনে পড়তেই সিরাত রাগ দেখিয়ে বললো,
“আমার ঠান্ডা লাগলে তাতে আপনার কী!আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা।”

আহনাফ অবাক হয়ে গেলো সিরাতের কথায়।রাগের আভা তার মুখ থেকে বিলিন হয়ে গেলো।কিছু বলতে নিয়েও আর কিছু বললোনা।সিরাত বারান্দায় চলে আসলো। তার অনেক রাগ লাগচ্ছে সেদিন আহনাফ যেভাবে বিবেকহীনের মতো রাতে রাস্তায় রেখে এসেছিলো এখন তার বিবেকবোধ কোথা থেকে আসছে!এখনও বিবেকবোধ থাকার দরকার নেই।সিরাত বারান্দায় ভিজা কাপড়চোপড় মেলে দিয়ে রুমে আসলো। রুমে আসতেই চমকে উঠলো সে।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here