স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_৮ #তানজিম_তানাজ

0
6

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৮
#তানজিম_তানাজ

রুমে আসতেই সিরাত চমকে উঠলো।আহনাফ সিরাতকে আসতে দেখে বললো,

“দ্রুত খেতে আসো।বেলা অনেক হয়ে গেছে। ”

কথাটা বলেই আহনাফ রুম থেকে চলে গেলো।সিরাত কতক্ষণ আহনাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে নিচে নেমে আসলো।খাবার টেবিলের সামনে আসতেই সিরাত অবাক নয়নে আহনাফের দিকে তাকালো৷ আহনাফ তা দেখে সিরাতকে বললো,

“দ্রুত খেতে বসো।”

সিরাত আহনাফের কথা অনুযায়ী চেয়ার টেনে বসে পরলো।বিষ্মিত সে।আহনাফ সিরাতের সামনে একটা প্লেট নিয়ে ভাত বাড়লো।তাতে তরকারি দিয়ে নিজে সিরাতের বিপরীতে পাশের চেয়ারে বসলো। আহনাফ সব খাবার গরম করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে।নাদিয়া বেগম আগেই সিরাতকে বলেছিলো রান্না করা আছে শুধু গরম করে নিলেই হবে।কিন্তুু সিরাত আহনাফকে দেখে বিস্মিত।আহনাফ প্লেটের দিকে তাকিয়ে খাবার খেতে খেতে বললো,”আমার দিকে আর একবারও তাকিয়ে থাকলে চোখ তুলে ফেলবো তোমার।দ্রুত খাও খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
সিরাত দ্রুত প্লেটের দিকে তাকালো।এখন তার অনেক অসস্থি লাগচ্ছে।এতো সময় আহনাফের দিকে তাকিয়ে ছিলো আহনাফ কী ভাবলো ভেবে।অসস্থিতে তুলতে পারছেনা সে।স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে। আহনাফ এভাবে সিরাতকে বসে থাকতে দেখে নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“তোমার কী খাবার পচ্ছন্দ হয়নি!”

সিরাত প্লেটের দিকে তাকিয়ে দুইপাশে মাথা নাড়ালো। আহনাফ ব্যস্ত হয়ে বললো,”তাহলে খাচ্ছো না কেনো?”

সিরাত দিকে তাকিয়ে বললো,”এমনি।”

আহনাফের কপালে সরু ভাজ পড়লো সিরাতের কথা শুনে।সিরাত খাওয়া শুরু করলো।আহনাফের কপালের ভাজ সোজা হয়ে গেলো।সেও খাওয়া শুরু করলো।খাওয়ার ভিতর তাদের দুইজনের মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি।খাওয়া আগে আহনাফের শেষ হয়। সে সবকিছু রান্না ঘরে নিয়ে গুছিয়ে রাখে।তারপর উপরে গিয়ে কিছু ফাইল নিয়ে নিচে আসে।একপলক সিরাতের দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে পড়ে।হাতের ফাইলগুলো সামনে ছোট টেবিলের উপর রেখে মনোযোগ সহকারে দেখা শুরু করে।সিরাত খাওয়া শেষে রান্না ঘরে গিয়ে দেখে আহনাফ সব এঁটো থালাবাসন ধুয়ে রেখেছে সিরাত নিজের প্লেট ধুয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে দেখে আহনাফ সোফায় বসে মনোযোগ দিয়ে ফাইল পড়চ্ছে সিরাত একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে উপরে চলে আসলো।আহনাফ রুমে থাকলে তো এই দুপুর তাকে নিচে সোফায় বসে কাটাতে হতো।
সিরাত রুমে এসে একটা কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো।গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে সে।অনেক শীত লাগচ্ছে তার।এভাবে শুয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো সিরাত।

ঘুম ভাঙ্গতেই চারপাশে তাকিয়ে দেখলো রুম অন্ধকার।হয়তো সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সিরাত অনেক কষ্টে উঠে বসলো।মাথা অনেক ভার হয়ে রয়েছে তার।অনেক কষ্টে বিছানা থেকে নামলো।গা গরম অনুভব করছে।রুমের লাইটে জ্বালিয়ে দেখলো রুমে কোথাও পানি নেই।অনেক পানি তৃষ্ণা পেয়েছে তার।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েছে।শরীরের একটুও শক্তি পাচ্ছেনা যে নিচে গিয়ে পানি খাবে। তবুও নিচে চলে আসলো
সোফার দিকে তাকিয়ে দেখলো আহনাফ নেই।ধীর পায়ে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে আসলো।কাপা কাপা হাতে জগ দিয়ে পানি ঢাললো গ্লাসে।পানি খেয়ে গ্লাস টেবিলে রেখে পিছনে ফিরতে নিলেই মাথা ঘুরিয়ে আনলো। টেবিলে হাত ঠেকিয়ে নিজেকে সামলালো।কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে যেতে উদ্ধত হয়ে পা বাড়াতেই ঘুরে পড়ে যেতে নিলো তখনি কেউ তাকে বাহুডোরের আবদ্ধ করে নিলো।সিরাত পিট পিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো আহনাফ তাকে ধরে রেখেছে।আহনাফ একহাত উঠিয়ে সিরাত কপালে রাখলো।গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।ওষ্ঠধর কাপচ্ছে তার।আহনাফ পাজাকোলে করে সিরাতকে নিয়ে উপরে রুমে চলে আসলো।সিরাতকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে দিলো।ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার নিয়ে এসে সিরাতের পাশে বসলো।জ্বর মেপে দেখলো ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট।আহনাফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা ত্রিশ বাজে।দ্রুত নিচে গিয়ে একটা বাটিতে পানি আর রুমাল নিয়ে আসলো।পানি ভর্তি বাটি বিছানার পাশে টেবিলে রাখলো।রুমাল ভাজ করে পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে সিরাতের কপালের উপর রাখলো।কিছুসময় পর রুমাল আবার পানিতে ভিজিয়ে সিরাতের কপালে রাখলো।ক্ষানিক সময় এমন করতে থাকলো আহনাফ। মনে হচ্ছে জ্বর অনেকটা কমেছে। পুনরায় থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপলো ১০১ থেকে ১০২ এর মাঝামাঝি। আহনাফ নিচে এসে সিরাতের জন্য স্যুপ রান্না করলো।দশ থেকে পনেরো মিনিট পর স্যুপের বাটি নিয়ে রুমে আসলো।সিরাত চুপচাপ শুয়ে ছিলো।আহনাফ বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,”উঠে বসো।তাড়াতাড়ি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নেও।”
সিরাত আহনাফের কথা কর্ণকুহর করলো ঠিকই কিন্তুু উঠে বসলোনা। ঠাই শুয়ে রয়েছে।আহনাফ ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,
“এই মেয়ে কী বলছি!শুনতে পাওনি!”
সিরাত চোখমুখে ভাজ ফেলে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ বিরক্তি নিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সিরাত উঠে বসার চেষ্টা করলো কিন্তুু ব্যার্থ হলো।আহনাফ স্যুপের বাটি বিছানার পাশে টেবিলের উপর রাখলো। সিরাতের দিকে ঝুঁকে হাত ধরে টেনে উঠালো।একটা বালিশ সিরাতের পিঠের পিছনে দিয়ে দিলো।সিরাত পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে।আহনাফ সিরাত সামনে বসে স্যুপের বাটি তার দিকে এগিয়ে খেতে ইশারা করলো।সিরাত হাত বাড়িয়ে বাটি নিজে নিতে নিলে আহনাফ শান্ত কন্ঠে বললো,

“তোমাকে ধরতে হবেনা।আমি বাটি ধরে রেখেছি। তুমি খাও।”

সিরাত উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে চামচ ধরলো। কিছুতেই শক্তি পাচ্ছেনা সে।আহনাফ সিরাতের হাত ধরে বললো,

“থাক!তুমি পারবেনা।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

সিরাত ড্যাব ড্যাব করে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ সিরাতের হাত সরিয়ে দিয়ে নিজে খাইয়ে দিতে লাগলো।সিরাত চুপচাপ খেতে থাকলো।তিন চামচ খেয়েই সিরাত বাঁধা দিয়ে বললো,”আর খাবোনা।”

আহনাফ চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,”সম্পূর্ণটুকু খেতে হবে।”

সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও আরো দুইবার খেলো।তারপর আবার বাঁধা দিয়ে বললো আর খেতে পারবেনা সে।আহনাফও আর কিছু বলেনি।ঔষধ আর পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো সিরাতের দিকে।সিরাত ঔষধ ও পানির গ্লাস হাতে নিলো।ঔষধ খেয়ে পানির গ্লাস পুনরায় আহনাফের দিকে এগিয়ে দিলো। আহনাফ গ্লাস হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।নির্বিকার কন্ঠে বললো,”শুয়ে ঘুমিয়ে যাও।জ্বর কমে যাবে।”

বলেই আহনাফ স্যুপের বাটি আর পানির গ্লাস নিয়ে নিচে চলে আসলো।সিরাত সোজা হয়ে বসে পিঠের নিচের বালিশ মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পরলো।শুয়ে আনমনে আহনাফের কথা ভাবতে লাগলো।আহনাফের যত্ন নেওয়া তার কাছে ভালো লাগচ্ছে।আনমনে হেঁসে উঠলো সিরাত।

আহনাফ সোফায় বসে রয়েছে।রুমে হালকা আলোয় আলোকিত সবকিছু। আহনাফ সোফায় বসে রয়েছে। রাত তিনটে বাজে এখন।এতোসময় সে কিছু কাজ করতে ছিলো।আর কিছুসময় পর পর সিরাতের কপালে দিয়ে দেখেছে জ্বর বাড়চ্ছে কীনা!আহনাফ আবার উঠে সিরাতের কাছে গেলো।
সিরাত গুটিশুটি মেরে গায়ে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে রয়েছে।জ্বরের প্রভাব অনেকটাই মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ফ্যাকাশে হয়ে রয়েছে মুখশ্রী।মুখে অসুস্থতার ছাপ স্পষ্ট।শুষ্ক ঠোঁট অনবরত কাঁপছে তার। তারপরও মুখে এক অদ্ভুত মায়া বিরাজ করছে।আহনাফ একদৃষ্টিতে কিছু সময় সিরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।সিরাতের দিকে একটু ঝুঁকে কপালে হাত রাখলো।হাত পুড়ে উঠলো তার। আবার অনেক জ্বর উঠেছে সিরাতের।এতসময় গোসল করে পরে বৃষ্টিতে ভিজার কী দরকার ছিল! ভেবেই বিরক্ত মুখে তাকালো সিরাতের দিকে।তারপর বললো,”আসলেই গাধা একটা।”

বলেই দ্রুত আবার পানি ভর্তি বাটি আর রুমাল নিয়ে এসে জলপট্টি দিতে লাগলো।ঘন্টা খানেক পর জ্বর নামলো সিরাতের।আহনাফ স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ালো।কপাল থেকে রুমাল উঠিয়ে বাটির পাশে রাখলো।নিচে বসে বিছানার উপর এক হাত রেখে তারউপর মাথা দিয়ে অাধশোয়া হয়ে রইলো অারেক হাত সিরাতের কপালের উপর দিয়ে রাখলো এভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো আহনাফ।জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়চ্ছে রুমে।এই চাঁদের আলো সাক্ষী হয়ে রইলো তাদের সুন্দর মূর্হতের।

চলবে!

( গত তিনদিন গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখীত।আমি অসুস্থ ছিলাম।আজকে রাতে বোনাস পর্ব দিলে কেমন হয়!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here