স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_৯ #তানজিম_তানাজ

0
7

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৯
#তানজিম_তানাজ

সকালের স্নিগ্ধ হওয়া পুরো রুম জুড়ে বিরাজমান।জানালা দিয়ে ক্রমাগত আসা হাওয়াতে জানালার পর্দাগুলো উড়চ্ছে
পুরো রুম জুড়ে এক ঠান্ডা আবহওয়া বিরাজ করচ্ছে।পুরো রুম বাহিরের সূর্যের আলোতে আলোকিত।যা জানান দিচ্ছে সকাল হয়েছে অনেক আগেই।সিরাত ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো।ডান হাত উষ্ণ ছোঁয়ায় কারো হাতের মধ্যে আবদ্ধ অনুভব করাতে সেইদিকে তাকালো।তাকাতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো সিরাতের।থমকে গেলো সে।আহনাফ তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে আবদ্ধ করে রেখেছে সিরাতের হাত।তার পাশেই বিছানার উপর নিজের মাথা দিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।সিরাত ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আহনাফের দিকে।দেখে মনে হচ্ছে অনেক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।কপালের উপর এলোমেলো চুল গুলো বিরাজমান।আহনাফের এলোমেলো চুল দেখে সিরাতের মনে এক ভয়ানক ইচ্ছা পোষন হলো।তার অনেক ইচ্ছে হচ্ছে আহনাফের এলোমেলো চুলগুলোয় হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে।মনের অজান্তেই হাত বাড়িয়ে দিলো সে। পরমূর্হতেই হাত গুটিয়ে নিলো।না,না এটা অন্যায়।এই অধিকার তো উনি আমাকে দেননি।আচ্ছা উনি কী সারারাত এভাবেই ছিলেন!আমার এতো যত্ন নিচ্ছেন!কিন্তুু কেনো! শুধুমাত্র আমার জ্বর বলে!
সিরাত কিছুসময় আহনাফের দিকে তাকিয়ে থেকে আনমনে হেসে উঠলো।কালকে তার জন্য আহনাফের মুখে চিন্তার ছাপ দেখেছে সিরাত।ব্যাপারটা তার অনেক ভালো লাগচ্ছে।ভাবতেই মনে গৃহীনে এক সুপ্ত অনুভূতি দোলা দিচ্ছে।কিন্তুু এই অনুভূতির নাম তার জানা নেই।এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তার মনে।পরমূর্হেতই সিরাত আনমনে ভাবলো, এটা তো অন্যায়।উনি তো আমাকে হয়তো কোনোদিন স্ত্রীর মর্যাদা দিবেননা।কথাটা ভেবেই এক চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাস বের হয়ে আসলো ভিতর থেকে।বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো মন।
বিছানা থেকে নামার জন্য আহনাফের হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত ছাড়াতে নিতেই জেগে গেলো আহনাফ।ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো সে।সিরাতের হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে এখনো বন্ধি করে রেখেছে।ঘুম ঘুম চোখে বিরক্তি নিয়ে বললো,”কী সমস্যা তোমার?”

সিরাত আমতা আমতা করে নিজের হাতের দিকে ইশারা করে বললো,”আআমার হাত।”

আহনাফ সিরাতের ইশারা অনুযায়ী তাকালো।সে এতোক্ষণ খেয়াল করেনি যে সে সিরাতের হাত ধরে রেখেছে। সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিলো।ঘুমের ভাব গায়েব হয়ে গেলো তার। উঠে খানিকটা সিরাতের দিকে ঝুকে কপালে হাত দিতে নিলেই সিরাত পিছিয়ে গিয়ে মুখে হাসির আভা এনে বলে,”আমি ঠিক আছি।”
আহনাফ হাত বাড়িয়ে সিরাতের কপালে রাখলো।এখন জ্বর নেই।আহনাফ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
সিরাত বিছানা থেকে বিছানা গুছিয়ে রাখলো।লাগেজ থেকে একটা থ্রীপিস বের করে নিয়ে বসে রইলো।আহনাফ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই সিরাত উঠে দাঁড়ালো। গোসলের জন্য ওয়াশরুমে যেতে উদ্ধত হতেই আহনাফ বলে উঠলো,

“পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল করে বের হবে।”

সিরাত অবাক হয়ে বললো,”মানে!”

“পাঁচমিনিটের এক মিনিট বেশি থাকলে আমি দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।যদি মানসন্মান রাখতে চাও তাহলে পাঁচমিনিটের ভিতর গোসল করে বের হবে।”

কথাটা বলেই আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সিরাত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফের কথাগুলো পুনরায় মস্তিষ্কে আওড়াতেই দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো।

———

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে সিরাত স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।নিজে নিজে বললো,

“যাক বাবা!পাঁচ মিনিটের ভিতর বেরিয়েছি।”

সিরাতের স্বস্তির ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে আহনাফ বললো,
“জ্বী না।আপনি পুরো বারো মিনিট পর বেরিয়েছেন।”

সিরাত হতভম্ব হয়ে পাশ ফিরে তাকালো।তার কাছে তো পাঁচ মিনিটই মনে হলো বারো মিনিট কখন হলো!বুঝতেই পারলোনা।তখনই আহনাফ বললো,

“তোমার মতো গাধা বুঝবেও না কীভাবে বারো মিনিট হলো!”

সিরাত চমকে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো। উনি কীভাবে বুঝলো আমি মনে মনে এইটা ভাবতে ছিলাম!কথাটা ভাবার মধ্যেই আহনাফের তাকে গাধা বলার ব্যাপার খেয়াল হতেই প্রচুর বিরক্ত নিয়ে বললো,

“কী গাধা গাধা বলেন!আমার অনেক সুন্দর একটা নামে আছে।সিরাত।বুঝলেন আমার নাম সিরাত।”

শেষের লাইনটা একটু জোড়ে চেঁচিয়ে বলছে।আহনাফ ভ্রুকুচকে আয়না থেকে সিরাতের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বললো,

“সাধে কী তোমাকে গাধা বলি!গাধার যেমন বোধবুদ্ধি নাই তোমারও ঠিক একই অবস্থা।আমি তো বেশি দূরে নাই।শুধু শুধু নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে চেঁচিয়ে না বললেও হতো।”

সিরাত অগ্নিচোখে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ ঘড়ি পড়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে বললো,
“আজকে বৃষ্টি হলে আবার ভিজতে যেওনা।আজকে কারো জ্বর উঠলে আমি যত্ন নিতে পারবোনা।”

কথাটা সিরাতের কেনো জানি গায়ে লাগলো।সে তো আর কালকে বলেনি তার যত্ন নিতে!যা করছে সব নিজের ইচ্ছায় করেছে!তাহলে তাকে কেনো কথা শুনাচ্ছে!সিরাত কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

“দেখুন আপনি যা করছেন নিজ ইচ্ছায় করেছেন।আমি আপনাকে একবারও বলিনি আমার যত্ন নিতে!এমনিতেই বিয়ে করে অনেক বড় করুণা করেছেন।আপনার আর কোনো করুণার আমার দরকার নেই।”

আহনাফকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সিরাত বারান্দায় চলে গেলো।আহনাফ বিরবির করে কিছু একটা বলে নিচে চলে গেলো।
—————-
অনেকসময় পর সিরাত রুমে আসলো।পুরো চোখ বুলিয়ে দেখলো আহনাফ রুমের কোথাও নেই।সিরাত ভাবলো,”উনাকে দেখেতো মনে হলে হসপিটালে গেছেন।না খেয়েই বেরিয়ে গেলেন নাকি!”

পরমূর্হতেই তখন আহনাফের বলা কথাগুলো মনে পরতেই মনে রাগ হতে লাগলো।রাগে বললো,”যা ইচ্ছে তাই করুক।না খেয়ে গেলে তাতে আমার কী!”

কথাটা বলেই সিরাত নিচে আসলো।রান্না ঘরে ঢুকে এক অপরিচিত মহিলাকে দেখে সন্দেহের কন্ঠে বললো,

“আপনি কে!আর ভিতরে কীভাবে আসলেন!আর রান্না ঘরে কী করচ্ছে!”

মহিলাটি সিরাতকে দেখে হাসি মুখে একটু সামনে এগিয়ে বললেন,

“আমি রাবেয়া। এই বাসার কাজের লোক।এতোদিন গ্রামের বাড়ি ছিলাম বলে আসা হয়নি।তুমি নিশ্চয়ই আহনাফ বাবার বউ!”

সিরাত সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে উপর নিচে মাথা নাড়ালো। রাবেয়া বললো,

“তা আম্মাজান তুমি বলে অসুস্থ। আহনাফ বাবা যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে তুমি নিচে আসা মাত্রই তোমাকে খেতে দিতে। তুমি আসো। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।”

সিরাত গিয়ে টেবিলে বসলো।তার প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে।রাবেয়া আসতেই সিরাত প্রশ্ন করলো,

“আচ্ছা খালা।উনি কী খেয়ে বের হয়েছেন!”

রাবেয়া বুঝতে না পেরে বললেন,

“আহনাফ বাবা!”

সিরাত মাথা নাড়ালো।রাবেয়া হতাশা কন্ঠে বললেন,

“না আম্মাজান। আহনাফ বাবাকে কতবার বললাম খেয়ে যেতে। কিন্তুু আহনাফ বাবার নাকি জরুরি কাজ আছে তাই পরে ক্যান্টিনে খেয়ে নিবে বলেছে।”

সিরাত আস্তে করে বললো, “ওহ”

সিরাত খাওয়া দাওয়া সেরে রান্না ঘরে গিয়েছিলো দুপুরের রান্না করতে। কিন্তুু রাবেয়া জোড় করে সিরাতকে পাঠিয়ে দিলো সেই নাকি রান্না করবে।

সিরাত সোফায় বসে একটা খবরের কাগজ পড়তে নিয়েছিলো মনোযোগ দিয়ে এমন সময় কলিংবেল বাজতেই সিরাত বিরক্ত হলো। উঠে দরজা খুলে দেখলো তার চাচাতে বোন নিশি এসেছে।সে কিছু কেনাকাটা করতে যাবে তাই সিরাতকেও সাথে নিতে এসেছে।সিরাত এমনিতেও বাসায় একা একা ভালো লাগতে ছিলোনা তাই দ্রুত রেডি হয়ে রাবেয়াকে বলে নিশির সাথে চলে গেলো।

সিরাত বাড়ির বাহিরে বের হয়ে দেখলো সাদাদ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।নিশি বললো সাদাদও নাকি তাদের সাথে যাবে।সিরাতের ক্ষানিকটা অসস্থি লাগলো কারণ সাদাদের সাথে সে বেশি একটা পরিচিত না।সিরাত খুব পরিচিত ছাড়া অন্য কারো সাথে বেশি একটা মিশে না।সাদাদের গাড়িতে করেই তারা একটা শপিং মলে গিয়েছে।গাড়িতে সাদাদ তেমন একটা কথা বলেনি।সিরাতের দিকে বার করুণ ভাবে তাকিয়ে ছিলো।যা সিরাতের নজরে পরছে।সাদাদ তাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। নিশি অনেকবার থাকতে বলেছিলো।কিন্তুু তার জরুরি কাজ আছে বলে চলে যায়।

———–
সিরাতের বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।নিশি আর ভিতরে আসেনি। সিরাতকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে।নিশি তার এক বান্ধবীর জন্মদিনে গিয়েছিলো পরে সাথে সিরাতকেও নিয়ে গিয়েছে।যেহেতু সিরাত বাসায় একা তাই ভেবে।দরজা খুলে দেওয়া রাবেয়ার থম থমে মুখ দেখে সিরাত কারণ জানতে চাইলে রাবেয়া কিছু বললোনা।সিরাতকে “এতো সময় বাহিরে ফ্রেস হয়ে নেও আম্মাজান ” কথাটা বলে রান্না ঘরের দিকে চলে গিয়েছে।সিরাত কিছু বুঝতে পারলোনা।সকালে তাকে হাসিখুশি দেখেছে এখন এমন থমথমে!সিরাত আর কিছুনা ভেবে উপরে চলে আসলো।রুমে এসে দেখলো রুম অন্ধকার। লাইট জ্বালিয়ে পিছনে ফিরতেই থমকে গেলো সে।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

“আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো!”

চলবে!

(কালকে শেষ মূর্হতে গল্প ডিলিট হয়ে যায় যার কারণে বোনাস পর্ব দেওয়া হয়নি।আজকে রাতে দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here