স্নিগ্ধ পরশ #পর্ব_১৩ #তানজিম_তানাজ

0
3

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১৩
#তানজিম_তানাজ

বাস চলছে তার নিজ গন্তব্যে।ঢাকায় পৌঁছাতে আর কিছু সময় বাকি।যেখান থেকে তারা বাসে উঠছিলো সেইখানেই বাস থামবে তারপর যে যার মতো বাড়ি চলে যাবে।আহনাফ আর সিরাত পাশাপাশি বসে রয়েছে। সিরাত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে।তার মূর্হত যেন থমকে রয়েছে।সবকিছু অসহ্য লাগচ্ছে তার।সকালের ঘটনার পর থেকে ভিতরটা কেমন উত্তাল হয়ে রয়েছে।এক মূর্হতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।তার সকল সুপ্ত অনুভূতি গুলো থমকে গেছে।সিরাতের মনে কালো মেঘের বাসা বেধেছে।সকালের কথা যতবার মনে হয় ততবারই কোথায় যেন ব্যাথা অনুভূত হয়।সময়টা যেন থমকে যায় তার কাছে।বার বার মনে হয় এটা একটা স্বপ্ন ঘুম ভাঙ্গলেই দেখবে এমন কিছু ঘটেনি।তার বার বার আফসোস হচ্ছে এটা কেনো একটা স্বপ্ন নয়!কেনো তার চোখের ভ্রম নয়!সকাল থেকে আর সিরাত আহনাফের সাথে কথা বলেনি।তখন আহনাফ কিছু বলতে নিলেই সিরাত আহনাফের কথা না শুনে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।তারপর আরো দুইবার আহনাফ সিরাতের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তুু সিরাত আহনাফকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।সিরাতদের সীটের বিপরীত সীটে সাদাদ বসে রয়েছে।একবার সিরাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সামনে তাকালো।
বাস নিজ গন্তব্যে আসতেই সবাই এক এক করে বাস থেকে নেমে পড়লো।সুমনা যাওয়ার আগে সিরাতের সাথে কথা কিছু সময় কথা বলে চলে গেলো।

রাত আটটা।গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে।সামনের সীটে ফারিহা বসেছে।আর পিছনের সীটে আহনাফ আর সিরাত।গাড়ি বাড়িতে এসে পৌঁছাতেই সিরাত আগে আগে নেমে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।

——————

সিরাত সোফায় বসে ফোনের চালাচ্ছে।হঠাৎ একটা মেসেজে দেখলো তার মোবাইল সেদিন রাতে রির্চাজ করা হয়েছে যেদিন তারা সাজেক গিয়েছিলো।তার মানে সেদিন এতো রাতে আহনাফ তার ফোন রির্চাজ করতে বের হয়েছিলো!সিরাত আহনাফকে বুঝতেই পারচ্ছেনা।কালকে রাতে যখন জিঙ্গেস করলো সে ফারিহাকে ভালোবাসে কীনা!সরাসরি কিছু বললোনা।আবার আজকে সকালে ওই ঘটনা।সিরাত সিরাত মনে মনে ভাবলো,”তাহলে কী উনি সত্যিই ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করে!”একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়লো।

আহনাফ কিছুসময় পর রুমে আসতেই দেখলো সিরাত ঘুমিয়ে রয়েছে।তার হাতে একটা কাগজ ছিলো।কাগজটার দিকে একপলক তাকিয়ে তা গুছিয়ে রেখে দিলো।আহনাফও বিছানায় শুয়ে পড়লো।

সকালে নাস্তার পর নাদিয়া বেগম আর সিরাত সোফায় বসে গল্প করছে এমন সময় কলিং বেল বাজতেই সিরাত উঠে দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজা খুলে নিশিকে দেখতে অবাক হয়ে গেলো।নিশি হাসিমুখে ভিতরে ঢুকলো।নাদিয়া বেগম আগে নিশিকে দেখেনি তাই তিনি প্রশ্ন করলেন,

“তুমি কে মা! তোমাকে তো চিনলাম না।”

তখনই আহনাফ সিড়ি থেকে নেমে নাদিয়া বেগমের কাছে এসে বললো,

“ও নিশি। সিরাতের চাচাতো বোন।আমি একটা কাজে আসতে বলেছি!”

নাদিয়া বেগম হাসিমুখে বললেন,”কেমন আছো মা!”

নিশি স্লান হাসি দিয়ে বললো,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি!”

নাদিয়া বেগম মাথা নেড়ে বললেন ভালো আছেন। আহনাফ নিশিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“কাগজগুলো এনেছো?”

নিশি মাথা নেড়ে একটা ফাইল আহনাফের দিকে এগিয়ে দিলো।আহনাফ ফাইলটা হাতে নিয়ে কাগজগুলো দেখতে লাগলো।সিরাত কিছুই বুঝতে পারচ্ছেনা।নিশিকে প্রশ্ন করলো,

“এগুলো কীসের কাগজ আপু!”

নিশি কিছু বলার আগে আহনাফ বললো,”এগুলো তোমার সার্টিফিকেট।আজকে তোমাকে একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দিয়ে আসবো।দ্রুত রেডি হয়ে নেও।আমরা এখনি বের হবো।”

সিরাত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নাদিয়া বেগম আগ্রহ নিয়ে সিরাতকে দ্রুত রেডি হতে যেতে বললো।সিরাত রুমে রেডি হতে চলে গেলো।তিনি আজকে ছেলে কাজে অনেক খুশি হয়েছে এই ভেবে আহনাফ তাহলে সিরাতকে মেনে নিয়েছে।নিশি যেতে নিলে নাদিয়া বেগম বাঁধা দিলেন।কিন্তুু নিশির যেতেই হবে তাই নাদিয়া বেগমকে কথা দিলো আরেক দিন এসে অনেক সময় থাকবে বলেই চলে গেলো।আজকে সে আবার হোস্টেলে ফিরে যাবে।বাসায় যেয়ে দ্রুত রেডি হয়ে তাকে আবার বের হতে হবে।তাই দ্রুত চলে গেলো সে।

————
আহনাফ আর সিরাত গাড়িতে পাশাপাশি বসে রয়েছে।আহনাফ মনোযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করচ্ছে। সিরাত আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আপনার আমার উপর এতো করুণা করার দরকার নেই।”

আহনাফ ভ্রুকুচকে সিরাতের দিকে তাকালো।পুনরায় সামনে ফিরলো।সিরাত একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,

“আর এমনও না যে আমি নিজে আমার পড়ার খরচ চালতে পারবো।তাহলে অনেক আগে আমি নিজেই ভর্তি হতাম৷ আপনার আমাকে একবার জিঙ্গেস করা উচিত ছিলো। আপনি বাড়ি চলুন।”

আহনাফ এক সাইডে গাড়ি থামালো। সিরাত ভাবলো পুনরায় হয়তো আবার তাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হবে।আহনাফ কিছু বলতে নিলে সিরাত তাকে থামিয়ে বললো,

“আপনার কিছু বলতে হবেনা।আমি বুঝে গিয়েছি এখন আমাকে গাড়ি থেকে নেমে একা বাড়ি ফিরতে হবে।”

সিরাত নামতে উদ্যত হতেই আহনাফ সিরাতের হাত ধরে চেচিয়ে বললো,

“তোমাকে আমি একবারও বলছি নামতে!”

সিরাত আমতা আমতা করে বললো,

“না মানে না আসলে…….”

আহনাফ ধমক দিয়ে বললো,”চুপ।”

সিরাত কেঁপে উঠলো।হাতে প্রুচর ব্যাথা পাচ্ছে সে।আহনাফ অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছে হাত।সিরাত হাতের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো।আহনাফ বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দিলো।একবার জোড়ে শ্বাস নিয়ে ত্যাগ করে চোখ বন্ধ করলো।চোখ খুলে শান্ত কন্ঠে বললো,

“আমি তোমাকে করুণা করার জন্য এসব করছিনা।তোমার উপর দায়িত্ব বোধ থেকে করতে আছি।তুমি এখন আমার দায়িত্ব। আর তোমার টাকা থাকার প্রয়োজন নেই।তোমার পড়াশুনার সব খরচ আমি চালাবো।তবে তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আমার সব টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হবে।এমনি এমনি আমি কিছু করতে আছিনা।”

সিরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আহনাফ আর কিছু বললোনা। গাড়ি চালানো শুরু করলো।কলেজে ভর্তি করার সময় আহনাফ সিরাতকে নিজের স্ত্রী’র পরিচয়ে ভর্তি করছে।যেখানে তাদের ক্লাস হবে সেইটা দেখিয়ে নিয়ে আসলো।আহনাফ সিরাতকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো,

“তুমি ভিতরে যাও।আমার একটা কাজ আছে।”

কথাটা বলে আহনাফ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।গাড়িটি যতক্ষণ দেখা যায় ততসময় সিরাত দাঁড়িয়ে রইলো।গেটের ভিতর ঢুকতেই তার ফারিহার সাথে দেখা। ফারিহা সিরাতকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।সিরাত পাশকাটিয়ে যেতে নিলেই ফারিহা বললো,

“সিরাত দাঁড়াও। আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”

সিরাত দাঁড়িয়ে গেলো।পিছনে ফিরে স্লান হাসি দিয়ে ফারিহাকে বললো,

“জ্বি আপু। বলো।”

অনিচ্ছা শর্তেও ফারিহার কথা শুনার জন্য দাঁড়িয়ে গেলো। শুধুমাত্র ভদ্রতার জন্য ফারিহার কথা শুনের জন্য তাদের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলো।ফারিহা হঠাৎ সিরাতের হাত ধরে বললো,

“তুমি আহনাফকে প্লিজ ছেড়ে দেও সিরাত।”

সিরাত থমকে গেলো।অবাক হয়ে বললো,

“এসব কী বলছো আপু!তোমার মাথা ঠিক আছে!”

ফারিহা করুণ চোখে বললো,

“আমি ঠিকই বলছি। তুমি আহনাফকে ছেড়ে দেও।আমি আহনাফকে অনেক ভালোবাসি আর আহনাফও আমাকে অনেক ভালোবাসে।সেদিন দেখলেনা আমি জড়িয়ে ধরে ছিলাম!আমি আহনাফকে কতবার বললাম ও যেন তোমাকে আমাদের ব্যাপারে বলে। কিন্তুু মামনি কষ্ট পাবে তাই তোমাকে কিছু বলছেনা। প্লিজ তুমি ছেড়ে দেও আহনাফকে তাহলে মামনি কষ্ট কম পাবে।আহনাফ তোমাকে ছেড়ে দিলে উনি বেশি কষ্ট পাবেন।”

সিরাতের গা হাতপা অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাথা কাজ করছেনা কী বলবে সে!চোখ দিয়ে একবিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।বুকের গহীনে ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো।গলায় ব্যাথা করছে।কন্ঠ দলাপাকিয়ে আসছে।ফারিহা সিরাতকে বললো,

“আমি যে তোমাকে এই কথা বলেছি।তুমি কাউকে বলিও না।বিশেষ করে আহনাফকে বলিওনা।আমি আহনাফকে ছাড়া বাঁচবো না।তুমি আহনাফকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।”

সিরাত ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ফারিহার দিকে।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here