#চিত্তসন্ধি
পর্ব ২৬
লেখা: #Azyah
“আর আপনি?”
আদরের প্রশ্ন হৃদয়ে তীরের মতন বিধেছে। ব্যভাচ্যাকা খেয়ে গেলো।উঠে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছে না আর।আদর হুট করে এমন প্রশ্ন করতে পারে?ভিন্ন তার প্রশ্নের ধরন।আর আপনি এর অর্থ কি?সে থাকবে কিনা এটা জানতে চাচ্ছে?মেহতাব এর জ্ঞানী মস্তিষ্ক সেটা ধরে ফেলতে পারলেও মানতে নারাজ।আদর এভাবে কথা বলে না।হয়তো চুপ বনে যায় নয়তো বাচ্চামো কথাবার্তা বলে।এই মুহূর্তে তার কন্ঠস্বর বলে দিচ্ছে তার প্রশ্নের গভীরতা।চোখ বন্ধ করে স্বাভাবিক হলো মেহতাব।উঠে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলো আদরের মুখশ্রী।চোখে চোখ রাখা থেকে বিরত থাকছে। হাটা ধরেছে।ভেবে নিলো আদরও তার পেছন পেছন আসবে।ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে কালো রঙের ব্যাগটিকে দুইহাতের সাহায্যে বুকে চেপে ঠায় দাড়িয়ে। নেত্রযুগল পিটপিট করছে।মেহতাব পেছনে তাকালে দেখতে পায় আদর এক কদমও আগ বাড়েনি।সে অনেকটা দূরে চলে এসেছে।
ফিরে এসে প্রশ্ন করলো,
“কি?”
দৃষ্টি নামিয়ে আদর অস্পষ্ট স্বরে আবার একই সুর তুলেছে,
“বললেন না?”
“কোনো উত্তর নেই আমার কাছে।”
আদরের হাত থেকে ব্যাগ ছাড়িয়ে নিজের হাতে পেঁচিয়ে নেয়।অন্যহাতে আদরের হাত টেনে নিয়ে হাটা শুরু করেছে।আদর নির্বিকার।ভার ভার লাগছে দেহ।চোখ মেহতাবের হাতের দিকে।আজও আঙ্গুলের ভাজেভাজে তার আঙ্গুল। শক্তর চেয়েও শক্ত করে রেখেছে বাধন।মেহতাবের বিশাল হাতে আদরের হাত অত্যন্ত ছোট। অনায়াসে পুরো হাতের তালু আড়াল করে ফেলতে পারবে।তবে উত্তর দিল না।এড়িয়ে গেলো।বেশ করে জানতে ইচ্ছে করছিলো সে কি থাকবে?নাকি দমকা হাওয়ার মতন চেহারা আর দেহে শীতল পরশ দিয়ে চলে যাবে?কেনো অধিকার খাটাচ্ছে।কিসের সম্পর্ক তাদের?তার চোখ হাজারটা উপন্যাস বলে।মুখ বলে অন্য কথা।কেনো তার সবকিছুর ওপর জোর?উত্তরটা আদরের চাই।
“হাত ছাড়েন।আমি যাবো না”
গাড়ি থেকে কিছুটা দুরত্বে থেকেই হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলে আদর।উত্তরের আশায় সে।কোনো স্পস্ট জবাব না পেয়ে রেগে গেছে।
মেহতাব পেছনে ফিরে বলে, “কেনো যাবেন না?”
“কেনো যাবো আপনার সাথে?একা যাবো আমি!”
“রাগ দেখাচ্ছেন আমার সাথে?”
“যা ভাবার ভাবেন।আমি যাবো না”
“আসেন”
“একদম না ঠান্ডা হুমকি আর মানবো না আমি!”
“আচ্ছা?”
আজ সাহস সীমানা ছাড়িয়ে।মন বলছে দুটো কথা শুনিয়ে দেক এই লোককে।নিজের যা ইচ্ছে করে যাবে।আদরের মানতে হবে?ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
“জ্বি! আপনি চলে যান।একা একা চলাফেরা করতে পারি আমি এখন”
মেহতাব ঠোঁট কামড়ে হাসলো।এখন আর আড়ালে না আদরের সামনেই হেসেছে।গোলগোল চোখে তার হাসিকে ধারণ করছে আদর।হাসির মোহে ডুবে যেতে নিলেই নিজেকে থামায়।কোনোভাবে তার হাসির জালে ফাসা যাবে না।সব ছলনা!
“আর ইউ শিওর?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট!”
“আশপাশে তাকান।বেশিরভাগ মানুষ ভেতরে।এখানে তেমন কেউ নেই।যা মানুষ আছে সবাই নিজের মধ্যে ব্যস্ত ”
“হ্যা তো?”
চোখের পলকে শূন্যে ভাসছে আদর।পায়ের নিচে জমিন নেই।সরে গেছে।নাহ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।মৃদু,অস্পষ্ট স্বরে চেচিয়ে উঠলো।।আদরকে বরাবরের মতোন স্তব্ধ আর বিমূঢ় করে দিলো মেহতাব।তিনি কান্ড হুটহাটই বাজিয়ে ফেলেন।এই মুহূর্তে আদরকে পাজাকোলে তুলে হাটা দিয়েছে।এক মুহুর্তও সময় দেওয়া হয়নি আদরকে।প্রতিক্রিয়া দেওয়ার।আদর খানিকটা হচকচিয়ে। সমস্ত ঘটনা পরিষ্কার হতেই ছটফট শুরু করলো। মেহতাবের শার্ট শক্ত করে চেপে আছে।তার নড়চড়কে কোনো গ্রাহ্যই করা হলো না।নিজের মতন বড় বড় কদম আর ঘোর লাগানো চাহনি দিয়ে ঠিক গাড়ীর ভেতরে নিয়ে ছুরে ফেলছে।খুবই সাবধানতা অবলম্বন করলো গাড়ীর দরজা খুলতে।আদরকে গাড়িতে লক করে পেছনে পড়ে থাকা ব্যাগ তুলে ফিরে এলো।নিজেও উঠে বসেছে।
সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বললো,
“এর চেয়ে বেশি ডোজ আজ আর সহ্য করতে পারবেন না।আমার কথার বিরোধিতা আর তর্ক করার আগে যেনো একশোবার ভাবা হয়।কারণ শেষমেশ তাই হবে যা আমি চাবো”
বুকে হাত গুজে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে আদর।নাক ফোলাচ্ছে। ফোঁস ফোঁস শ্বাস ছেড়ে বোঝাতে চাচ্ছে তার রাগের পরিমাণ।সেখানে মেহতাবের কোনো আগ্রহ নেই।সব অনুভব করতে পারলেও এক পলক দেখছেও না। ইচ্ছেকৃত ইগনোর করা হচ্ছে আদরকে।যা আদরের ক্ষোভকে বাড়িয়ে অগ্নিকুন্ডে পরিণত করে দিচ্ছে একেবারে।তার মা তাকে ফুলন দেবী বলে ডাকে।ছোটখাটো বিষয়ে মুখ ফুলিয়ে বালিশে মুখ গুজে রাখা তার ছোটবেলার অভ্যাস।আজও তাই গাড়ীর উইন্ডো মিররে নিজেকে একবার দেখে নিলো।সাথেসাথে নাক মুখ কুচকে নিয়েছে।এত বাজে লাগে তাকে রাগলে?কসাই সাহেবকে হুতুম পেঁচা বলতে বলতে আজ নিজেকেই আস্ত একটা হুতুম পেঁচা লাগছে।
___
ভরা ক্যাম্পাসে রোহিত আর রুবিকে হাত ধরে হাটতে দেখে চেনা পরিচিত অনেকেই হা হয়ে আছে।অনেকেই তাকিয়ে তাদের দিকে।কেননা রুবির হাতে সারাক্ষণ মার খেতেই দেখা যেতো।আজ কিনা লাজুক এসে একে ওপরের হাত ধরে হাঁটছে?তার চেয়ে বেশি বিষম খেয়ে আছে আদর আর শান্তা।
আদর এগিয়ে গিয়ে বললো,
“তুই না বলেছিলি রোহিতকে দুই বছর পেছনে ঘুরাবি?পাত্তা দিবি না?”
রুবি মাথা চুলকে বললো,
“ইয়ে দোস্ত! মানে হয়েছে কি?তখন রাগে বলে ফেলেছিলাম।পড়ে মাথা ঠান্ডা করে ভাবলাম।আবার এই বেয়াদবটা কান্নাকাটি করছিলো তাই আর কি মন গলে গেলো”
রোহিত গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, “আমি মোটেও কান্নাকাটি করিনি। বুঝিয়েছি শুধু!”
শান্তা তাদের থামিয়ে দিয়ে বললো, “আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি।যা হয়েছে ঠিক আছে।তোরা খুশি হলেই হলো।কিন্তু কথা হচ্ছে আমাদের সামনে দুইজন বন্ধুর মতন থাকবি।বিশেষ করে ক্যাম্পাসে।তোদের এভাবে দেখে ছেলেপেলে অনেক কথা বলছে।”
তাদের তিনজনের কথার মধ্যে আদর এগিয়ে গেলো মাঠের কোনায়।একটা বড় করে ব্যানার টানানো।সেখানে লিখা মেডিকেল ক্যাম্প বসবে আজ। স্টুডেন্টদের রেগুলার একটা চেকআপ করা হবে।অনেক হসপিটাল,ক্লিনিকের ডাক্তাররা আসবেন।মত ৬টা হসপিটাল আর ক্লিনিকের নাম লেখা।তার নিচেই ছোটো ছোটো অক্ষরে বিভিন্ন বিষয়ক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নাম।লিস্ট থেকে তিন নাম্বারে তাকালে চোখে ভেসে আসে “নিউ লাইফ ক্লিনিক”।এই নামটা দেখে চট জলদি ডাক্তারদের নামের লিস্ট চেক করা শুরু করলো সামান্য ঝুঁকে।প্রথমেই “ডক্টর নওশের মেহতাব”।নাম দেখেই ঢোক গিললো।এমনেই সারাদিন রাতে নিজের দখলদারিত্ব চালাচ্ছে।এবার কি ভার্সিটিতেও শান্তি দিবে না।এখানে এসে টপকাবে?
ভেবে নিঃশ্বাসটুকু নিতে পারলো না।পাশ কেটে রোভার স্কাউটের ছেলে মেয়েরা আর কিছু টিচাররা এগিয়ে যাচ্ছে গেটের দিকে।মাইকে একজন এ্যানাউন্সমেন্ট দিচ্ছে স্টুডেন্টদের একে একে মাঠে জড়ো হতে।সিরিয়াল অনুযায়ী। রুলসগুলো জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আদর সেসব না শুনেই গেটের দিকে চোখ গেড়ে বসেছে।অবশ্যই তিনি এখান দিয়েই আসবেন। এখানে দাড়িয়ে স্পষ্ট দেখতে না পেয়ে এগিয়ে গেলো।সেখানে রুবি, রোহিত আর শান্তা দাড়িয়ে।একে একে সবাই প্রবেশ করছেন।টিচাররা তাদের সাথে কথা বলছেন।আদর অপেক্ষায়। বন্ধুরা পাশে দাড়িয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।আদর কোনো উত্তরই দেয়নি। সে বিশেষ মনোযোগী মেহতাবকে দেখার জন্য।আদরকে এক দৃষ্টিতে গেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোহিত তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“কিরে তুই কোথায় হারিয়ে গেলি?ডাকছি শুনছিস না?”
“ডিস্টার্ব করিস না রোহিত!”
অল্পস্বল্প ঝাড়ি খেয়ে রোহিত থেমে গেছে।আদরকে অনুসরণ করে তারাও চেয়ে রইলো।খানিক সময় বাদে রায়হানের সাথে কথা বলতে বলতে আসছে মেহতাব। নীল রঙের চেক শার্টের উপর সাদা এপ্রোনটা যেনো অদ্ভুত রকমের সুন্দর দেখাচ্ছে। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে আসছে আদরের দিকেই।আদর তাকে লক্ষ্য করলেও মেহতাব দেখতে পায়নি।সে রায়হানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ব্যস্ত।আদরের নির্বিকার চাহনি।আকাশ আজ আসমানী রঙের বদলে গাঢ় নীল রং ধারণ করেছে।আকাশের রংটা তার কাপড়ের সাথে মিলেমিশে একাকার।আকাশের সাথে মিল রেখেই বুঝি আজ নিজেকে নীল রঙে সাজিয়েছে?
কানের সামনে এসে করে ফু দিতে কেপে উঠে আদর। শান্তা কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো,
“এজন্যই বুঝি গেটের দিকে তাকিয়ে ছিলি?”
“উফ! যা তো এখান থেকে”
মেহতাব এগিয়ে আসলো।অনেকটা কাছাকাছি এসে আদরকে দেখতে পেলো।এতটা ভিড়ের মধ্যেও নজর কাড়ে কেনো এই মেয়ে?সম্পূর্ণ লাল রঙের সে কামিজ পড়ে বন্ধু আর স্টুডেন্টদের ভিড়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে।একটা জলজ্যান্ত রক্তজবা।লাল রং মেহতাবের অপছন্দনীয়।কারণ রক্তের রং হয় লাল।মানুষের লাল রক্ত দেখতে দেখতে বিষাদ জন্মেছে এই রঙের প্রতি।তবে আদরকে এই লাল রঙেই তার হৃদয়কে ঘায়েল করছে এই মুহূর্তে!
রায়হান আদরকে দেখতে পেলেই হুড়মুড়িয়ে তার দিকে পা বাড়ায়।মেহতাব সঙ্গেসঙ্গে তাকে পেছন থেকে হাত টেনে ধরে বললো,
“এটা একটা ক্যাম্পাস।কাজে এসেছি আমরা।আর মিস আদর এখন অ্যাসিস্টেন্ট না এই প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট।একদম ফাতরামি করবি না।”
____
মাঠে দাড়িয়ে রোভাররা সব স্টুডেন্টদের সারি বন্ধ করছে।ছেলেদের একপাশে আরেকপাশে মেয়েদের।একজন টিচার মাইক হাতে নিয়ে বললেন,
“তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ডাক্তারদের হেল্প করতে চাও ডান পাশে এসে দাঁড়াও।”
একে একে অনেকে স্টুডেন্ট বিভিন্ন ডাক্তারের পাশে গিয়ে তাদের হেল্প শুরু করেছে।বাকি রইলো শেষের সারির রায়হান,মেহতাব আর ফারিহা শেইখ। শান্তা আদরকে বললো,
“যাস না!”
“আমি যাবো না”
“তুই থাক আমি ওই মহিলা ডাক্তারের কাছে যাই”
আদরকে ধাক্কে পেছন থেকে নাতাশা নামের এক মেয়ে মেহতাবের দিকে এগিয়ে গেলো।তাদের ডিপার্টমেন্টের ভীষণ সুন্দরী আর বেয়াদব রকমের মেয়ে। ভার্সিটির ছেলেরা নাতাশা বলতে পাগল।বাবার আদুরে আহ্লাদী মেয়ে।
নাতাশা বললো, “স্যার আপনার হেল্প করি?”
মেহতাব উত্তর দিলো না।চোখ গেছে সামনে দাড়িয়ে থাকা আদরের দিকে।কপাল কুচকে তাদের দিকে চেয়ে আছে।চোখে চোখ পড়তেই মাথা ঘুরিয়ে নিলো।
মেহতাব স্মিথ হেসে নাতাশার উদ্দেশে বললো, “শিওর”
নাতাশার কাজে হাজারটা ভুল।কেননা কাজের চেয়ে বেশি সে মেহতাবকে দেখায় মনোযোগী।বারবার গা ঘেঁষে বসার চেষ্টায়।মেহতাব এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে।কোনো দিন ক্রিয়েট করা চলবে না এখানে।আদর এক মুহূর্তের জন্য দৃষ্টি সরাতে নারাজ।দেখছে আর লুচির মতন ফুঁলছে।অনেকক্ষন যাবৎ দৃষ্টি মেহতাব আর নাতাশার দিকে নিবদ্ধ।শেষমেশ নাতাশার বাড়াবাড়ি দেখে নিজেকে আটকাতে পারলো না। নোংরামির সীমা ছাড়িয়ে আলগোছে মেহতাবের হাত ছুঁয়েছে।মেহতাব মুখ শক্ত করে বসে।হন হন করে তাদের সামনে গিয়ে কাগজ টেনে নিয়ে বলল,
“আমি করে দিচ্ছি”
“এই মেয়ে তুমি এখানে এসে কাগজ নিয়ে নিলে কেনো?আমি কাজ করছি দেখছো না?” নাতাশা রাগী সুরে আদরকে বলে উঠলো।
“আমি এসব কাজ পারি,জানি।তোমার থাকতে ইচ্ছে হলে আমার পাশে বসে দেখো!”
“তুমি আমাকে বলতে চাচ্ছো আমি কাজ পারি না?”
“আমি এমন কিছুই বলিনি।”
রায়হান মাথা তুলে বলে উঠলো, “এক্সকিউজ মি মিস আপনি যেই হন না কেনো যার কাজ তাকে করতে দিন।আপনি কাজ করতে ইচ্ছুক হলে আমার ডেস্ক এ আসুন।আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি আপনাকে।”
নাতাশা রায়হানের কথার পৃষ্টে উত্তর দিলো, “আমিওতো কাজ পারি স্যার”
“আপনি পারেন সেটা না হয় মেনে নিলাম।উনি হচ্ছে এই স্যারের অ্যাসিস্ট্যান্ট।সেই ক্ষেত্রে আপনার চেয়ে তার অভিজ্ঞতা বেশি।আপনি কাজ করতে চাচ্ছেন আমি সাধুবাদ জানাই।আমার এখানে অনেক কাজ জমে আছে।আপনি চাইলে হেল্প করতে পারেন”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নাতাশা চলে গেলো মেহতাব এর ডেস্কে।আদর মেহতাব এর দিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি করা লাগবে?”
“আপাদত আমার পাশের চেয়ারে বসলেই হবে”
“আমি বসবো না।কি কাজ আছে বলেন!”
“বসেন।সিন ক্রিয়েট করেন না”
মুখ ফুলিয়ে মেহতাব এর পাশে বসে আছে আদর।কোনো কাজই দিচ্ছে না আজ তাকে।নিজে নিজেই সামলে নিচ্ছে। মিনিট দশেক পর মেহতাব বললো,
“আপনি বেশি কথা বলা আর বেয়াদব ছাড়াও অনেক হিংসুটে”
বিস্ফোরিত চোখে আদর বললো, “আমি হিংসুটে?ওহ! বুঝেছি নাতাশার কাজটা আমি করবো বলেছি বলে আমাকে এভাবে বলছেন।ঠিক আছে আমি উঠি নাতাশাকে পাঠিয়ে দেই।”
মেহতাব একহাত নামিয়ে আদরের হাত চেপে ধরলো। শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে তার দিকে।হুট করে এভাবে হাত ধরায় ভরকে উঠলো আদর।আশপাশ তাকিয়ে দেখছে।কেউ দেখে ফেললো নাতো?টেবিলের জন্য এই দৃশ্যটা কারো নজরেই পড়ছে না।কিন্তু আদর হাসফাস করছে।যদি কোনোভাবে কারো নজরে খুবই বাজে দেখাবে।
আদর অস্ফুট কন্ঠে বলল, “হাত ছাড়েন!”
মেহতাবকে দেখে মনে হচ্ছে না সে হাত ছেড়ে দিবে। ছাড়লোও না উল্টো আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রেখে আরো আঁকড়ে ধরেছে।কেউ দেখলো কি দেখলো না সেখানে তার কোনো হেলদোল নেই।
“হাতটা ছাড়েন প্লিজ।সবখানে আপনার জোর খাটানো লাগবে কেনো?”
তারপরও কথা শুনানো যায়নি মেহতাবকে।কোনো কথারই গুরুত্ব দিচ্ছে না।ভরা মজলিশে হাত ধরে কি প্রমাণ করতে চায়?চশমাটা খুলে টেবিলে রাখে মেহতাব।হাতে ঘর্ষণ অনুভব করতেই অসস্তিবোধ হলো।হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল চালাচ্ছে আদরের হাতে।ঘোর লাগানো তার চাহনি। চশমাবিহীন চোখে মাদকতার ছড়াছড়ি।আদরের বুকে বিশাল ঢেউ তুলতে সক্ষম। অগ্যতা মাথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরে রইলো আদর।
মেহতাব কয়েক মিনিট পর হাত ছেড়ে বললো,
“হিংসে করা ভালো না।জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে”
চলবে..