চিত্তসন্ধি পর্ব ৩৩ লেখা: #Azyah

0
2

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৩৩
লেখা: #Azyah

সফরের শেষ কক্সবাজার রামুতে।পুরো একদিনের ধকল কাটিয়ে ভোরে এসে পৌঁছেছে।রায়হান বুদ্ধি করে আগেই মারমেইড বিচ রিসোর্ট বুক করেছিলো।তার মতে যেহেতু এসেছে কাজের পাশাপাশি ঘুরাটা,থাকা সবটাই যেনো আরাম দায়ক হয়। ভোরে এসেও রেস্ট নেওয়ার সময় নেই। মাঝপথে বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।সকাল নয়টা থেকে রোগী আসা শুরু করবে।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে সবাই যারযার কাজে লেগে পড়লো।আদরের ঠাই হয়েছে রোজিনা আপার সাথে।মধ্যবয়স্ক একজন নারী তিনি।সে নিজে থেকেই তার সাথে রুম শেয়ার করলো। মোটামুটি চিনে তাকে আদর।অপরিচিত কারো থাকার চেয়ে তার সাথে থাকা ভালো।

রামু বাইবাসে রয়েছে অনেক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।এরমধ্যে সবাই নিম্নআয়ের মানুষ।মোটামুটি চিকিৎসা পায়। মূলত তাদেরকে সম্পূর্ণ ফ্রি চিকৎসার দেওয়ার জন্য এখানে আসা। মেহতাব,রায়হান, ডক্টর খলিলের উদ্দেশ্য বছরে অন্তত একবার এসব মানুষকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া। প্রত্যেকমাসে একটি করে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প।তাদের সামর্থ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন কোনা কাভার করা।এই বছর ঢাকা থেকে দূরে কক্সবাজার তাদের প্রথম ক্যাম্প।
দেলাওয়ার চাচা রুমে নক করছেন।মাত্র রুমে ঢুকে হাত মুখ ধুতেও পারেনি আদর।

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বললেন,

“আপনারা রেডি থাইকেন।একটু পর নাস্তা করে বের হওয়া লাগবে।”

“মাত্রইতো এলাম চাচা”

“কিছু করার নাই।অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

বিরস মুখে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লো।ক্লিনিকের মানুষের পিছু পিছু গিয়েছে নাস্তা করতে।এখানে তাদের টিমের মানুষ ছাড়াও আরো অনেক মানুষ।যে যার মতন বসে।আদরের চোখ খুঁজছে মেহতাবকে।চোখের মণি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে চোখ গেলো কর্নার টেবিলে। ডক্টর খলিল,রায়হান,মেহতাব আর ফারিহা শেইখ বসে আছে।দেখা মাত্রই ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তাদের দিকে।টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ঠোঁট চেপে দাড়িয়ে আছে।কি করবে?এখানে বসবে?এখানেতো সব ডাক্টাররা।সবাই সিনিয়র। অসস্তি লাগছে দাড়িয়ে থাকতেও।

ডক্টর খলিল আদরকে দেখে বললেন,

“আপনি মেহতাবের এসিস্ট্যান্ট না?”

“জ্বি স্যার?”

“নাস্তা করেছেন?”

আদর মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো,

“জ্বি না স্যার”

তিনি সামান্য হেসে বললেন, “আমাদের সাথে বসুন। হ্যাজিটেট ফিল করার কিছু নেই”

এরমধ্যেই ফারিহা শেইখ মুখের উপর বলে উঠলেন,”কিন্তু স্যার ওতো অ্যাসিস্ট্যা….”

বাকি কথা পূর্ণ হতে দিলেন না ডক্টর খলিল। ডক্টর ফারিহা শেইখ এর কথার অর্থ এখানে বসে থাকা সবাই বুঝতে পারছে। আদরও।কথার অর্থ ভীষণ অপমানজনক।একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কখনো ডাক্তারদের সাথে বসতে পারে না।একসাথে বসার যোগ্য না।এটাই বোঝাতে চাচ্ছেন হয়তো।

ডক্টর খলিল কপাল কুঁচকে বললেন,

“তোহ কি হয়েছে?বাচ্চা একটা মেয়ে।আমাদের কোনো সমস্যা নেই এখানে”

রায়হান পক্ষ নিয়ে বললো, “ঠিক তাই।আর মিস আদর কিন্তু মেহতাবের পেশেন্টও”

“তাই নাকি?কি সমস্যা ওনার?” মেহতাব প্রশ্ন করলেন ডক্টর খলিল।

মেহতাব এর দৃষ্টি আদরের নুয়ে থাকা চোখের দিকে। ফারিহা শেইখ এর কথাটা তার খারাপ লেগেছে সেটা স্পস্ট।

ধ্যান ঘুরিয়ে খলিল স্যারের প্রশ্নের জবাবে বললো, “সমস্যা অনেক আছে স্যার।হরমোনাল ইমব্যালেন্স, আন্ডার ওয়েট,লো প্রেশার, ইউকনেস।আপাদত ডায়েট চার্ট ফলো করে কিছুটা উন্নতি আসছে।”

ডক্টর খলিল বললেন, “তাহলে ওনার মেহতাবের সামনে বসেই খাওয়া উচিত।একদিকে ভালোই হলো অ্যাসিস্ট্যান্ট আর পেশেন্ট।মেহতাব তুমি মিস আদরের হেলথ এর দিকে আরো বেশি নজরদারি করতে পারবে”

“জ্বি স্যার”

এখানে অন্যকেউ হলে আদর মুখের উপর না করে দিতো।সে হয়তো ডাক্তার না।কিন্তু মূর্খও না।এতটা নিচুতে তার অবস্থান নয়।সেটা বাকি সবাই বুঝলেও হয়তো ডক্টর ফারিহা শেইখ বুঝেননি।
নতজানু হয়ে একটা ব্রেডের অর্ধেকাংশ খেয়ে বললো,

“আমি উঠি স্যার”

মেহতাব রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠলো, “খাবার সবটুকু খেয়ে উঠবেন।সকালের মেডিসিন আছে”

ফারিহা শেইখ কফিতে চুমুক দিচ্ছে।হটাৎ তাচ্ছিল্য করে বললেন,

“আজ কিন্তু সাবধানে কাজ করবেন মিস আদর।আবার মেডিসিন আনানোর সূযোগ নেই এখানে”

অপমানে জর্জরিতবোধ করছে আদর।একবার ভুল করে ফেলেছে। মেহতাবও তাকে বকে দিয়েছিল।তিনি আবার সেই কথা মনে করাচ্ছে আদরকে।দ্রুত খাবার শেষ করে অনুমতি দিয়ে উঠে পড়লো।যাওয়ার পথে দেলাওয়ার হোসেনকে অনুরোধ করে গেলো সবাই যাওয়ার সময় যেনো তাকে ডেকে দেওয়া হয়।হাটতে হাটতে এগিয়ে গেলো একটি সামনে। এখান থেকে বিচ দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের মোহনীয় আওয়াজ ভেসে আসছে কানে।সোনালী রোদের মধ্যেও শীতল ঠান্ডা বাতাস।এখানে একা সময় কাটানো সবচেয়ে বেস্ট। কাঠের তৈরি রেলিংয়ে হাত ঠেকিয়ে হারিয়ে গেলো সামনের থাকা সমুদ্র তীরে। ঢেউয়ের শব্দে নিজেকে হারিয়ে ফেলার উপক্রম।সমুদ্রের আলাদা ঘ্রাণ থাকে। ঘ্রানেন্দ্রিয়তে পৌঁছলেই মস্তিষ্কে গিয়ে বাড়ি খায়।মনকে অসীম করতে ইচ্ছে করে এই অর্ণবে।

এর নামই বোধহয় “সমুদ্রবিলাস”।

অনুক্ষণের চিন্তায় মগ্ন হয়ে অনুভব করলো পাশে কারো উপস্থিতি। শব্দহীন অস্তিত্ব।শুধু নিঃশ্বাসের নিশ্বন।ফিরে তাকালো না আদর তার বাম পাশে।এই শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ তার পূর্বপরিচিত।দুইহাত রেলিংয়ে রেখে ঝুঁকে থাকা মানুষটাও।আদরকে খুঁজতে খুঁজতে এই অবস্থা তার। হাপিয়ে গিয়েছে।তাই এত লম্বা শ্বাস ছাড়ছে বারেবারে।

“চায়ের মায়া ত্যাগ করে এখানে এসে দাড়িয়ে পড়লেন যে?”

“ইচ্ছে করছে না”

হতভম্ব মেহতাব। তৎক্ষনাৎ বললো, “চা খেতে ইচ্ছে করছে না!”

“নাহ”

“এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই”

কোনসব বিষয়ের কথা বলছে মেহতাব আদর ঠিকঠাক বুঝেছে।কিন্তু বললো,

“আমি কোনো বিষয় নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছি না”

“মিথ্যে!”

“আরেহ!ঘুম হয়নি।এজন্যে একটু মুড খারাপ”

“সারারাত আমাকে অসস্তিতে ফেলে আরাম করে ঘুমিয়েছেন।তারপরও বলেন ঘুম হয়নি?”

মন খারাপেরা উড়ে গিয়ে লজ্জা আকড়ে ধরলো নিমিষেই। ভোরে ঘুম ভেংগে নিজেকে মেহতাবের বুকে আবিষ্কার করেছিলো।নিজেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ছিলো।

সকালের কথা মনে পড়তেই এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে উঠলো,

“বেশি সময় বাকি নেই নয়টা বাজতে।চলুন”

___

এত এত মানুষ।পা ফালানোর ঠায় নেই।সবাই নিম্নআয়ের সুবিধা বঞ্চিত।আজ খুব সাবধানতার সহিত কাজ করছে আদর।এসব মানুষকে দেখে খারাপও লাগছে বটে।তাছাড়া এটা ভেবে ভালো লাগছে হোক সাহায্যকারী হিসেবে।কিন্তু এসব মানুষের জন্য ভালো কাজে সেও আংশিক নিয়োজিত। মেহতাব আদরের কাজের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে বেশ তৃপ্ত।কোনো নারসভনেস নেই আজ তার মধ্যে।

ঘড়িতে বলছে ছয়টা বেজে তিপ্পান্ন মিনিট।সকাল নয়টা থেকে রোগীর চাপ শেষ হতে লম্বা সময় নিয়েছে।আজকের জন্য এখানেই সমাপ্ত।সবাইকে ক্লান্তি বেশকরেই ভর করেছে।আদরের পিঠ সমান চুল এলোমেলো।

আদরকে টেবিলে মাথা রেখে বসে থাকতে দেখে মেহতাব বললো,

“অ্যাম্বুল্যান্স লাগবে নাকি তুলে নিয়ে গেলেই হবে?”

থতমত খেয়ে উঠলো আদর।সে কি তার সাথে ফাজলামো করলো নাকি সেই বিষয়ে বিশেষ ভাবনায় পড়ে গেছে। মুখে তার লুকানো হাসি।এর মানে তাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে তাকে নিয়ে মজাই করা হচ্ছে।বেমানান!বড্ড বেমানান তার কাছ থেকে এই ধরনের দুষ্টুমিমার্কা কথাবার্তা।

“কোনো কিছুই লাগবে না।এইযে আমার দুটো পা আছে। যথেষ্ট!”

“দ্রুত আপনার পা-গুলো নিয়ে উঠে পড়ুন”

মেহতাব এর ব্যাগ হাতে নিয়ে পিছু নিলো তার।মনে হচ্ছে আদরের কোনপ্রকার ক্লান্তিই নেই।সব ক্লান্তি মেহতাবের।তাইতো নিজের ভারী ব্যাগটা নিজে না নিয়ে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো।মায়া দয়া বলতে কিছু নেই।ফালতু লোক!

মেহতাব হেঁটে অনেক পথ এগিয়ে গেছে।আদরের পাদ্বয় থেমে গেলো সামনের ফুলগাছগুলো দেখে।মুখে জয়ী হাসি নিয়ে গোলগোল চোখে চেয়ে আছে কিছুটা দূরে ফুলের দিকে।কোনদিকে না চেয়ে চলে গেলো ফুল কুড়াতে।ব্যাগ মাটিতে রেখে পরিকল্পনা করছে কিভাবে এই উচু থেকে ভুল ছিঁড়বে।হাত উচু করে লাফিয়ে ফুল ধরার চেষ্টায়।

“সাহায্য করবো নাকি?”

অপরিচিত আওয়াজে লাফালাফি থেমে গেছে।পেছন ফিরে তাকালো।হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে। সিগারেট হাতে আদরের দিকে চেয়ে আছে।মুখে তার বিদঘুটে হাসি।

আদর মাথা নামিয়ে বললো, “জ্বি না”

ছেলেটি আদরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো, “আরেহ আসেন সাহায্য করি।আপনার মতন মেয়েদের সাহায্য করতেইতো আমরা আছি”

কুদৃষ্টি আদর বুঝে গেছে। কথাবার্তার ধরন মাতালদের মতন।একপা দু পা করে এসে আদরের একদম বরাবর এসে দাড়িয়েছে।আদর এড়িয়ে চলে যেতে নিলে আচমকা হাত টেনে ধরে।

বাজে ইঙ্গিত করে বলতে লাগে, “চলেন আপনাকে পুরা একটা ফুলের বাগান দিমু”

হাতে তার স্পর্শে ঘৃনা লাগছে।হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েও পারলো না।ছেলেটির শক্তির সাথে পেড়ে ওঠা আদরের পক্ষে।ভীত হয়ে উঠলো।ঢোক গিলে চারপাশে দেখলো কেউ নেই। মেহতাবও না।ভয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকলো।জোরে চিৎকার করতে চাইলে সঙ্গেসঙ্গে ছেলেটি ছুরি বের করে আদরের মুখের সামনে ধরে বলে,

“চুপ একদম চুপ।চিৎকার করলে একদম মেরে ফেলবো!”

“ভাই আমাকে যেতে দিন প্লিজ!”

“ভাই” শব্দটি শুনে ছেলেটি উচ্চস্বরে হাসছে।ভাই বলে বেচে যাওয়ার পায়তারা।বিদঘুটে হাসির আওয়াজ।বাজে গন্ধ আসছে মুখ থেকে। চোখদুটো দেখে বোঝা যাচ্ছে আস্ত একটা নেশাখোর।

অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর পেছনে ফিরে দেখলো আদর নেই।সাথেই না ব্যাগ দিয়ে হাঁটছিলো।দুর দূরান্ত পর্যন্ত কথাও নেই। মেহতাবের মুখে চিন্তার ভাজ দেখা দিলো।পিছনে ফিরে একই রাস্তায় হাটা দিয়েছে।দ্রুত পায়ে হেঁটে দূরে দেখতে পেলো দুজনকে।একটা মেয়ের হাত ধরে টানছে।অনেক দূর থেকে দেখেও একবিন্দু ভুল করেনি চিনতে।বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠেছে।পায়ের গতি বাড়িয়ে দৌড়ানো শুরু করেছে।অন্যদিকে পকেটে থাকা ফোনটাও বেজেই চলছে সেখানে মেহতাবের নজর নেই।দ্রুত আদরের কাছে না পৌঁছালে বিপদ।

আদরের কেদে কেটে নাজেহাল অবস্থা।ছেলেটি তাকে আজেবাজেভাবে স্পর্শ করার চেষ্টায়।পেছন থেকে ঘাড়ে চাপ পড়লে ছুরিটি হাত থেকে পড়ে যায়।চাপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ব্যথায় কুঁকড়ে ছেলেটি পেছনে ঘুরার চেষ্টা করলে জোরে ধাক্কা দিয়ে সামনে ফেলে দেওয়া হয়। ইটের সাথে বারি খেয়ে রক্ত পড়ছে ঝরঝর করে।আদর দ্রুত মেহতাবের দিকে এগিয়ে তার হাত ধরে ফেললো।সাথেসাথে হাত ছাড়িয়ে ছেলেটিকে ধরে আবার তুলে এলোপাথাড়ি মারা শুরু করেছে মেহতাব।ঘুষি মেরে নাক মুখ থেকে রক্ত বের করে ফেলতেও সময় নিলো না।আদর আরো ঘাবড়ে যাচ্ছে।সে জানতো মেহতাব রাগী,গম্ভীর।এতটা ভয়ঙ্কররূপ কখনো দেখে নি।সামনে গিয়ে আটকানোর সাহসটা পর্যন্ত পাচ্ছে না। মাটিতে পড়ে থাকা ফোন বেজে উঠলো।রায়হানের ফোন।

আদর ফোন তুলে বললো,

“রায়হান স্যার একটু প্লিজ দ্রুত আসুন।সমস্যা হয়েছে…
ওনাকে সামলান।”

“কোথায়?”

“স্যার আমরা যে রাস্তা দিয়ে আসছিলাম সেখানে।আমি জায়গায় নামটা ঠিক জানি না”

“আসছি!”

মেহতাবের রক্তচক্ষু।ছেলেটিকে মেরে তার হাত থেকেও রক্ত পড়ছে।ছেলেটির থুতনি চেপে ধরে হুংকার ছেড়ে প্রশ্ন করলো,

“কি করছিলি! হ্যা!”

চুলের মুঠি ধরে আবার চিৎকার করে বলতে লাগলো, “জান বের করে ফেলবো তোর।”

আদর পেছন বলে উঠলো, “ছেড়ে দেন একে।মরে যাবে”

“মরুক!”

আরেকদফা চিৎকারে আদর কেপে উঠলো।কোনো কথা বলার সাহস নেই আর।রায়হান ছুটে এসেছে।
মেহতাবের কাছ থেকে ছেলেটিকে ছাড়িয়ে বললো,

“পাগল হয়ে গেছিস?কেন মারছিস একে!”

নিজের মাথার চুল খামচে ধরে জোরেজোরে শ্বাস নিয়ে মেহতাব বললো,

“জিজ্ঞেস কর ও কি করেছে!আদরের গলায় ছুরি ধরে ছিলো।ওকে স্পর্শ করেছে!সাহস কি করে হলো?ওকে জানে মেরে ফেললেও ওর জন্য কম হয়ে যাবে”

ডক্টর খলিল বয়স্ক লোক।ঘটনার আভাস পেয়ে তিনিও রায়হানের পিছু এসেছেন।অনেকটা সময় নিয়ে এসেছেন তিনি।এসে সম্পূর্ণ ঘটনা জানার পর রায়হানকে বললেন,

“ওকে পুলিশের কাছে দিয়ে এসো।সামনে কয়েকজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে”

মেহতাবকে উদ্দেশ্য করে বললো, “শান্ত হও।আর এভাবে মারামারি করার মানে কি মেহতাব?নিজের রেপুটেশনে দাগ লাগাতে চাচ্ছো?ভুলে যেও না তুমি একজন ডাক্তার। আঘাত দেওয়া তোমার কাজ না।তুমি ওর জন্য লিগ্যাল একশন নিতে পারতে।”

একটু উচু গলায় বলে উঠলো মেহতাব, “ক্ষমা করবেন স্যার।ভুল কিছু করিনি। ডাক্টার বলে আমাদের সবসময় সভ্যতার মুখোশ পড়ে কেনো ঘুরতে হবে?মেজাজ খারাপ হয় না আমাদের?রাগ উঠে না?আমাদের নিজেদের বলেও কিছু একটা আছে।ভুল করলে শাস্তি দিতে হয় আমি দিয়েছি।দরকার হলে তার আঘাতে মলমও লাগিয়ে দিবো।তারপরও আমি যা করেছি আমার মতে আমি একদম ঠিক করেছি।ওকে মেরে ফেললেও আমার মধ্যে অনুশোচনা আসতো না!”

ডক্টর খলিল মেহতাবকে ভালো করে চিনেন।তিনিও তাকে এতোটা রেগে যেতে দেখেননি কোনোদিন।আজ রেগেছে তার পেছনে যৌক্তিক কারন আছে।কিন্তু ক্লিনিকের কাজে এসে এটা একটা বাজে পরিস্থিতি হয়ে দাড়াবে।

মেহতাবের বাহুতে হাত রেখে বললেন,

“এটা যেনো কেউ না জানে”

খলিল স্যার চলে গেছেন। মেহতাবের নজর পরলো আদরের দিকে। মেহতাবের রক্তিম চোখ দেখে আরো বেশি ভয় করছে।পুরো মুখজুরে ক্রোধ টলমল করছে।বারবার তার দ্বারা ভুলগুলো কেনো হয়?নিজের উপরই নিজের ভীষণ রাগ লাগে এখন।কেনো যে ফুলের জন্য এখানটায় এই ভরা সন্ধায় দাড়াতে গেলো!মেহতাব এগিয়ে আদরের পেছনের গাছে হাত ঠেকালো।ঝুঁকে কিছু বলতে যাবে।

তখনই আদর বললো,

“সরি।”

“হাত থেকে রক্ত পড়ছে আমার!…..সাথে এসে ব্যান্ডেজ না করে দিলে রক্ত বন্ধ হবে না।এভাবেই পড়তেই থাকবে।”

আদর সরে গিয়ে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে মেহতাবকে এগিয়ে দিল।বললো,

“আপাদত এটা দিয়ে চেপে রাখেন।আমি ব্যান্ডেজ করে দিবো চলেন।”

বিছানার উপর ড্রেসিং এর যাবতীয় জিনিস রেখে হাতে ব্যান্ডেজ করার জন্য উদ্যত হলো আদর।এটা মেহতাবের রুম।মুখ গম্ভীর করে বসে আছে সে। পা ঝুলিয়ে।বিদ্ধস্ত অবস্থা।ইন করা শার্টটা একপাশে ঝুলে আছে। তুলো আর এন্টিসেপটিক হাতে নিয়েছে।মেহতাব নিজ থেকেই হাত এগিয়ে দিলো। আলতো হাতে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে ফেলে আদর।

সব গুছিয়ে উঠে যেতে চাইলে মেহতাব মুখ খুললো,

“শিক্ষা হয়েছে?”

“আর হবে না এমন”

“বারবার একই কথা বলো।আর ভুল করেই যাও।তোমার জন্য আজ মাস্তান উপাধিও পেয়ে যেতাম।”

“আপনি না মারলেই পারতেন।”

“হ্যা!ঠিক বলেছো।তোমাকে ওই কুলাঙ্গারের হাতে তুলে দিলে ভালো হতো।”

“দিলেও আপনার কি!কিছু আসে যায় নাকি?”

বলে এক সেকেন্ডও দাড়ায়নি।খোঁচা মেরে রাগিয়ে দিয়ে পালিয়েছে।একটু অনুভব করানোর প্রচেষ্টা।মুখ ফুটে যেনো একটু কিছু বলে সেই আশায়।মনে মনে এক গভীর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।মেহতাব থম মেরে বসে আছে।আদর আর ওই ছেলের একটু আগের ঘটনা মনে করতেই মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে।কিভাবে সাহস হলো আদরকে স্পর্শ করার!হাত কেটে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলে হয়তো এই প্রদাহ্!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here