চিত্তসন্ধি পর্ব ৩৫ লেখা: #Azyah

0
2

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৩৫
লেখা: #Azyah

কক্স বাজারে একদিন বেশি থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।আজকের দিনটা সবাই উপভোগ করবে। সমুদ্রের ঘুরে বেড়াবে।ক্লিনিকে অথবা হসপিটালে এসব সুযোগ কমই আসে।তাই সবাই উৎসুক,প্রফুল্লিত।দল বেঁধে সমুদ্রদ্বারে। ভাগ্যক্রমে তেমন মানুষের সমাগম নেই।মাথার উপর সূর্য উত্তাপ ছড়াচ্ছে।সমুদ্রের ঠান্ডা পানি আবার শীতলতা দিয়ে যাচ্ছে। উষ্ণতা আর শীতলতার খেলা!উপরে নীল,নিচে নীল।দুই নীলের মধ্যিখানে দাড়িয়ে আছে আদর।মাথা এদিক ওদিক বেকিয়ে খোঁজার চেষ্টায় মেহতাবকে।লোকটা কাল রাতের পর আর ধরা দেয়নি।এত মেসেজ দিলো।কোনোটায় উত্তর ঠিক মতন দেয়নি।না পেরে কল করেছিলো আদর।ফোন ধরে বলেছিলো,

“রোজিনা আপার সাথে বিচে যাও।আমি আসছি”

এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে!নাকি লজ্জা পাচ্ছে সে? লজ্জাতো আদরের পাওয়ার কথা।লজ্জা নারীর ভূষণ।ছেলেদের লজ্জা মানায়? নির্লজ্জের মতন নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেছে তাকে।সেতো কিছুই বললো না।সবসময়ের মতন ভুলভাল বকে গেছে।তাহলে?

সামনেই রায়হান।যতক্ষন যাবৎ এসেছে সমুদ্রে লাফালাফি করে যাচ্ছে।নেহাতই বাচ্চাদের মতন।পানি গিলে কাশতে কাশতে আদরের দিকে এগিয়ে বললো,

“মিস আদর?একা দাড়িয়ে যে?”

আদর ভাবলো একা থাকবে নাতো কি করবে? দোকা পাবে কোথায়?অবশ্য তার ভাই থাকলেও চলত।কিন্তু সেটা ইহজন্মে সম্ভব না।ঠোঁট প্রসারিত করে বললো,

“হ্যা একাইতো।রোজিনা আপা ছিলো মাত্র। কোথায় গেলো বুঝলাম না।”

“মিস আদর জলপরী দেখেছেন কখনও?” আদরের কথার পুরো উল্টো প্রসঙ্গে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।

আদর হেসে বললো, “স্যার জলপরির অস্তিত্ব নেই।”

“আছে আছে।সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা প্রত্যেকটা সুন্দরী নারীই জলপরী।”

বুকে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রায়হান বলছে কথাগুলো।আদরের মাথায় কিছুই ঢুকলো না। অপরদিকে রায়হান মিশাকে কল্পনা করছে। পরিবার সমেত একবার এসেছিল এই সমুদ্র তীরে।সমুদ্রের পানিতে ঝাপাঝাপি করতে দেখে প্রেমে পড়েছিল তার।

আদরকে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে দেখে রায়হান বললো,

“কোনো এক জলদস্যুর জন্য আমি আমার জলপরীকে বিয়ে করতে পারছি না।এই দুঃখ কাকে শোনাই?আপনাকে একা এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলাম একটু বলে যাই।কিছু মনে করবেন না হ্যা?”

আদর ঠিকই বলেছিলো।রায়হান মজার মানুষ। অদ্ভুত কথায় আদরের ভীষণ রকমের হাসি পাচ্ছে।মুখে হাসি বজায় রেখে প্রশ্ন করলো,

“তা কই আপনার জলপরী?”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, “আমার জলপরীতো সাত সমূদ্র তেরো নদী পার করে ভিনদেশে গিয়ে পারি জমিয়েছে।”

“আহারে!”

“কিন্তু আমি আপনাকে জলদস্যু দেখাতে পারি?”

চোখ বড়বড় করে আদর বললো, “না স্যার! জলপরীর অস্তিত্ব না থাকলেও জলদস্যুর কিন্তু অস্তিত্ব আছে।আর তারা ভয়ানক হয়”

“ভয়ানকতো বটেই।কিন্তু এই জলদস্যু আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।সেই জলদস্যুর শত্রুতা আমার সাথে।”

“আচ্ছা?কে এই জলদস্যু?”

“নাম বললে সত্যিই চাকরি থাকবে না!কিন্তু কোথায় আছে সেটা বলতে পারবো”

“কোথায়?”

রায়হান আঙ্গুল তুলে বললো, “ঠিক আপনার পেছনে!”

আকাশী রঙের হাফ হাতার শার্টের সাথে ফোর কোয়াটার প্যান্ট।চোখে কালো রঙের সানগ্লাস।সাথে সবসময়ের মতন পায়ের দ্রুত গতি।অর্ধেক পাওয়ার ঘন কালো লোমগুলো উজ্জ্বল শ্যামলা পায়ে ফুটে রয়েছে।এই রূপ যে করো হৃদস্পন্দন কেড়ে নিবে।সেখানে দুর্বল আদরের টিকে থাকার প্রশ্নই উঠে না।যদি সে হয় ধীরেধীরে হয়ে ওঠা দুর্বলতা। জলদস্যু এমন হলে নিজে থেকেই তার কাছে ধরা দিবে।নিজের সমস্ত সম্পত্তি তার হাতে তুলে বিনিময়ে তাকে চাইবে।

রায়হান এর মুখ থেকে উচ্চারিত হলো, “নির্দয় ভয়ঙ্কর জলদস্যু”

আদরের ঘোর ভাঙলো।ফিক করে হেসে উঠলো তৎক্ষনাৎ। ততক্ষণে মেহতাব আরো এগিয়ে এসেছে।আদরকে হাসতে দেখে তির্যক দৃষ্টি ফেললো একবার। রায়হানকে প্রশ্ন করলো,

“ভেজা কাক হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

“আসলে জলদস্যু!থুক্কু… মানে ভাই আমার।আমিতো মিস আদরকে কোম্পানি দিচ্ছিলাম।”

রায়হানের কথায় আরেকদফা হেসে উঠলো আদর।মেহতাব তার দিকে তাকালে দুইহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।অন্যদিকে চেয়ে মুখ টিপে হাসছে।

“এত কোম্পানি দিতে হবে না।চেঞ্জ করে আয়”

“আরেহ আমার ভেজা শেষ হয়নি।আমি গেলাম।”

রায়হানকে বিদায় করা হলো।পাশ ঘুরে আদরকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,

“এত হাসির কারন কি হুম?”

আদর ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে উত্তর দিলো, “মন চাইলো তাই হাসলাম।হাসিতে ট্যাক্স লাগে নাকি?”

“ট্যাক্স না।অনুমতি লাগে”

“কার?”

“আমার”

“আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য না” বুকে হাত বেধে অন্যদিকে ঘুরে উত্তর দিলো আদর।

“বাধ্য!”

“উহু!আমি ভিজবো।টাটা”

“একদম না”

মেহতাব পানির দিকে এগিয়ে যাওয়া থামাতে আবার ধমকের সুরে বলল, “আদর!”

কে শোনে কার কথা।এক পা দু পা করে এগিয়ে পানিতে নেমে গেলো।সবাই একপাশে।আদর অন্যপাশে।সামনেই মেহতাব দাড়িয়ে।ফোন কানে নিয়ে রোজিনা আপাকে কল করে বলেছে রিসোর্ট থেকে বড় একটা টাওয়াল আনতে।নিজেকে ভাসমান অনুভব করলো আদর।আহা!কি শান্তি! সমুদ্রের নোনা জ্বল পুরো শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে।সারাদেহ জুড়ে হিম প্রবাহ।পা জমিনে ঠেকাতেই বালিগুলো সরেসরে যাচ্ছে।তিক্ত মুখে মেহতাব সব লক্ষ করলো।নিজে একটু এগিয়ে পা ভিজিয়েছে পানিতে।প্রায় বিশ মিনিট পানিতে ডুবে উঠে গেলো আদর।উঠার সাথেসাথে পুনরায় পানিতে শরীর ডোবালো।কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। বিশ্রী লাগছে।ভেজা চুলগুলো গলা আর ঘাড়ের সাথে লেপ্টে।আদরকে মাথা নত জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেহতাব উঠে গেলো। দৌড়ে গিয়ে রোজিনা আপা থেকে টাওয়াল এনে আদরের দিকে এগিয়ে দিলো।মুখ শক্ত করে বলছে,

“ঠিক এই কারণেই নামতে না করেছিলাম।আমার ভালো কথাতো কানে যাবে না।তোমাকে অন্য ওয়েতে বোঝাতে হবে”

“শুধু বকেন।আগে বললে কি হতো?” গাল ফুলিয়ে বললো আদর।

__

শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে আদর।পুরো কাপড় বালু বালু হয়ে ছিলো।এগুলো পরিষ্কার করতেই দুইঘন্টা ওয়াশরুমেই পাড় করে মাত্র বেরোলো।ঠিক তখনই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ। নিশ্চয়ই রোজিনা আপা এসেছেন।ওড়না গায়ে জড়িয়ে দরজা খুললো।ভুত দেখার মতন চমকে উঠেছে।মেহতাব দাড়িয়ে।হাতের ফার্স্ট এইড বক্স।

“আপনি?”

প্রশ্নের জবাব আসেনি।মেহতাব আদরকে দেখতে ব্যস্ত।আকাশী আর সাদা রঙের সেলওয়ার কামিজ পড়ে।মাথায় টাওয়াল পেঁচানো।আদর যেনো ভেবেই নিয়েছে যতদিন সমুদ্রে আছে নিজেকে নীল রঙে রাঙিয়ে রাখবে।অনেকক্ষন পানিতে থাকায় মুখটা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।নাক লাল।সবকিছুই যেনো আকর্ষণ করে।ঘামে ভেজা ক্লান্ত চেহারা থেকে শুরু করে সদ্য স্নান করা সতেজ চেহারাও।মেহতাবের দৃষ্টিতে চোখ নামিয়ে নিলো আদর।আদরকে টপকে ভেতরে ঢুকে গেলো।দরজা বন্ধ করে হাত টেনে সোফায় বসিয়েছে।

বরাবর বসে বললো,

“তুমি বেয়াদব থেকেও বেয়াদব হচ্ছো দিনদিন।দেখি কোন পায়ে লেগেছে? এন্টিসেপটিক লাগিয়ে দেই নাহয় পড়ে ইনফেকশন হয়ে যাবে”

“আপনি কি করে জানলেন আমার পা কেটে গেছে?”

“খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলে।এটা কি যথেষ্ট নয়?”

“আমাকে দিন আমি লাগিয়ে নিচ্ছি”

অগ্নী দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল আদরের দিকে।কথার পৃষ্টে কথা বলছে।এমনেতেই রেগে আছে।পায়ের তালুতে লেগেছে। মেহতাব হাঁটু ভাঁজ করে বসে পায়ে হাত রাখতেই পা সরিয়ে নিলো আদর।

“কি হলো?”

“সুড়সুড়ি লাগছে”

নিজের রাগকে দমাতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মেহতাব। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে একহাতে শক্ত করে পা চেপে ধরেছে।অন্যহাতে ঔষধ লাগিয়ে দিল।ওয়েট টিস্যুতে হাত মুছে বললো,

“বিকালে রেডি থাকবে”

“কোথাও যাবেন?”

“সেটা পরে জেনে নিও।আর হ্যা কেউ জেনো না দেখে তোমাকে বের হতে।”

“আচ্ছা”

মেহতাব চলে যাচ্ছে।দরজা পর্যন্ত এগিয়ে পা জোড়া থেমেছে। পূনরায় ফিরে এসে আদরের কপালে চুমু খেয়ে ঝড়ের গতীতে রুম ত্যাগ করেছে।কিছু সময় পর প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আদর।মুচকি হেসে বিছানায় আয়েশ করে শুয়ে পড়লো।

___

“আমি বাহিরে যাচ্ছি।কেউ যদি আমার কথা জিজ্ঞেস করে বলবি….. বলবি কি?বাহানা বানিয়ে দিস!”

পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে রায়হান।সামনেই মেহতাব দাড়িয়ে।নিজের সবকাজে মেহতাবের সাহায্য নেয়।মেহতাব কখনোই নেয়না।তাকে কোনো কাজে নাকও গলাতে দেয় না।আজ নিজে থেকেই সাহায্য চাইছে।এই সুযোগটা ভালোমতন কাজে লাগাবে রায়হান।

“তুই একা বাহিরে যাচ্ছিস।এতে কেউ কেনো কিছু জিজ্ঞেস করবে?যেতেই পারিস তাই না?”

মেহতাব অসস্তি নিয়ে বললো, “একা যাচ্ছি না”

রায়হান সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু নাচিয়ে বলল, “তাহলে কে যাচ্ছে আপনার সাথে ডক্টর মেহতাব?”

“চুপ থাক।যা বলেছি সেটা করবি।মনে থাকে যেনো”

“আমার কি লাভ তোর হেল্প করে?”

“তুই লাভ লসের হিসাব আমার সাথে করছিস?”

“হ্যা করছি তো?”

“কি চাই তোর বল”

রায়হান ভেবে চিন্তে বললো, “সময় হলে চেয়ে নিবো।তুই যা”

মেহতাব গেলো না।তাকিয়ে রইলো রায়হানের দিকে।ওর মতলব কখনোই ভালো ঠেকে না।কি না কি চেয়ে বসে।পড়ে মাসুল দিতে হয় মেহতাবের।সন্দিহান দৃষ্টি তার।ভাবসাব সুবিধাজনক না।আর সে ভরসাযোগ্যতো মোটেও না।রায়হান বারবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে ফেলছে।

না পারতে বলেই ফেললো, “আরেহ ব্যাটা যা।টেনশন নাই। ইনজয় কর তোরা”

___

কোথায় যাওয়া হচ্ছে জানা নেই। সি.এন.জিতে বসে একটার পর একটা প্রশ্ন করছে আদর।মেহতাব বরাবরের মতই নীরুত্তর।তার এই স্বভাব আদরকে খেপায়।মুখ ফুটে বলতে পারে না।মাঝেমধ্যে মাথা বেকিয়ে তাকায় অথচ কোনো শব্দ বের করছে না মুখ থেকে।এমন মানুষের সাথে ডিল করা প্রচুর বিরক্তিকর।উত্তর দেয় না,গুরুত্ব দেয়না,নিজের মন মর্জিমত কথা বলে। বিশ মিনিটের রাস্তায় বিশবারের বেশি প্রশ্ন করে ফেলেছে আদর। কোথায় যাচ্ছে জানতে চেয়ে। জনাবের কোনো হুশপাত্তাই নেই।

“আপনি যদি এবার না বলেন কোথায় যাচ্ছি।আমি এক লাফে নেমে যাবো সি.এন.জি থেকে”

“যাও”

আদরের ছোট চোখগুলো বিশাল আকৃতি ধারণ করলো।লাফ দিতে বলে দিলো?এত সহজেই?মায়া দয়া বলতে কিছুই নেই?লাফ দিলে যে দুর্ঘটনা ঘটবে।সেদিকে ইয়াত্তা আছে?

আদরও কম নয়। দুষ্টু বুদ্ধি নিয়েছে।ভয় দেখাবে ডাক্টার সাহেবকে।একটু সরে গিয়ে লাফ দেওয়ার ভঙ্গিতে মাথা বের করলেই মেহতাব কোমর টেনে ধরে।লাফিয়ে উঠেছে কিছু সেকেন্ডে।বললো,

“পাগল তুমি?”

এবার আদরও কোনো উত্তর দিবে না।সবসময় তার সাথে এমন করা হয়!কি হয় একটু কথা বললে?মুখ ঘুরিয়ে নিলো।মেহতাব হেসে আদরের তুই গাল টিপে দিয়ে বললো,

“বোকা মেয়ে!সি.এন.জিতে ওঠার সময় ড্রাইভারকে কোথায় যাবো বলেছি শুনোনি?”

“না শুনিনি।আপনি এমনিতেও আমার সাথে ঠিক মতন কথা বলেন না।”

“তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাও?”

আরচোখে তাকালো আদর। পূনরায় মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।সবকিছু তাকে মুখে বলে বোঝানো লাগবে। অবোধ বালকতো সে।

“আমিতো তোমার মতন বাচাল না। আই এম এ গুড লিসনার!তুমি বলো আমি শুনি”

“আমাকে বাচাল বললেন না?আমি আর কখনও কথা বলবো না।মুখে তালা দিয়ে রাখবো ”

আজ মেহতাব শীতল।বিনা রাগান্বিত হয়ে সামলে নিচ্ছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“না একদম মুখে তালা দেওয়া যাবে না।কথা বলতে হবে। দুজন চুপ হয়ে গেলে পৃথিবীতো শব্দহীনতায় ভুগবে।তখন?”

“আপনি এসব আজেবাজে ভাবেন?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আদর। শব্দহীনতায় ভোগা যায় নাকি?

“তোমার মুখে এত উল্টোপালটা শুনেছি আমার মাথাটাও নষ্ট হয়ে গেছে।”

সি.এন. জি এসে থেমেছে বার্মিজ মার্কেটে।ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেলো মেহতাব আদর উভয়ই।মোটামুটি ভিড়ভাট্টা ঠেলে আদরকে গিয়ে গেলো একটি দোকানে। সম্পুর্ণ দোকান জুড়ে বার্মার জিনিস পত্র।লুঙ্গি, সেলওয়ার কামিজ,শাড়ি,ফতুয়া, বার্মাদের ট্রেডিশনাল কাপড়। দোকানিকে শাড়ি দেখাতে বললো মেহতাব।এক এক করে সব ধরনের শাড়ি বের করেছে।জুম শাড়ি,তাতের শাড়ি,বার্মিজ শাড়ি আরো অনেককিছু।বেশ সুন্দর দেখতে।আদর বারবার প্রশ্ন করতেও আটকে যাচ্ছে।মেহতাব দোকানির সাথে আলাপে ব্যস্ত।কথা শেষে আদরকে বললো,
“দেখোতো কোনটা পছন্দ হয়?”

“আমি কেনো পছন্দ করবো?”

দোকানী তাদের অল্প আলাপে চোখ গেরে আছে তার দিকে।মেহতাব কথা বাড়ালো না।নিজের পছন্দ মতন জুম,তার, বার্মিজ তিনটি শাড়ি ভিন্ন ভিন্ন কালারের নিয়েছে।প্যাক করে বেরিয়ে পড়লো আদরের হাত ধরে।এবার এসে দাড়িয়েছে জুয়েলারির দোকানে।

আদর ঝট করে খোঁচা মেরে প্রশ্ন করে বসলো, “মেয়েদের জিনিস কিনছেন যে?আপনার গার্লফ্রেন্ডকে দিবেন নাকি?”

“গার্লফ্রেন্ড না বেয়াদব একটা মেয়ের জন্য কিনছি।নাও চুস করো শাড়ির সাথে কোনটা মানাবে।”

মেহতাব দাড়িয়ে থেকে আদরকে দিয়ে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে অর্নামেন্টস নিয়েছে।বারণ করতে গেলেই চোখ দেখায়।সব শেষে চোখ গেলো নাকফুলের দিকে। মেহতাব হুট করে দোকানীকে বলে উঠলো,

“ভাই এই পুরো বক্সটা প্যাক করে দিন”

আদর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুখে আঙ্গুল দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।দ্রুত কেনাকাটা শেষ করেছে।হাতে সময় কম।সন্ধার আগেই ফিরতে হবে।রাতের বাস। আদরও তার বাবা,মা,খালামনির জন্য গিফট কিনে নিল। ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড কিনেছে অনেকগুলো বন্ধুদের জন্য। এক্ষেত্রে মেহতাব এর কথা শোনেনি।নিজের টাকায় সব কিনে। সুগন্ধা বিচে বসে আছে দুজন।একা একটু সময় কাটানো প্রয়োজন এই সমুদ্রের সামনে।পাশে ছড়ানো শপিং ব্যাগ।

আদর একটি ব্যাগ থেকে একটা হ্যান্ড ব্যান্ড বের করে মেহতাবকে বললো,

“হাত দেন”

বিনাবাক্যে হাত এগিয়ে দিয়েছে।আদর ব্যান্ডটি মেহতাবের ডান হাতে।মেয়েটা আজকাল অধিকারবোধ দেখায়। নিজে থেকে একধাপ এগিয়ে আসছে মেহতাবের দিকে।কতটা ভালোবাসা কাতর দেখেই বোঝা যায়।চোখে, মুখে অসীম মায়া।এই মায়ায় পরেই বুঝি আজ মেহতাবের বেহাল দশা।হাসি মুখে মেনে নিতে ইচ্ছে করে তার সব ধরনের অবুঝ কাজকর্ম।

“আদর?”

“হুম?”

“এই সাজসজ্জার জিনিস,এই শাড়িগুলো পড়ে যেনো অন্য কোনো পুরুষের সামনে না যাওয়া হয়”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here