#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৩৬
লেখা: #Azyah
মায়া নগরী ঢাকা।ফিরে এসেছে সুদূর কক্স বাজার ছেড়ে।লম্বা পথ অতিক্রম করতে হয়েছে।মোট বারো ঘণ্টার।রাত দশটা থেকে সকাল দশটার জার্নিতে সবার বেহাল দশা।দুইদিন খেয়ে না খেয়ে কাজ করতে হয়েছে।সেই ক্লান্তিও একসাথে ভর করেছে।যেখানে সারা রাস্তা বাকিরা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে সেখানে মেহতাব ছিলো নির্ঘুম।যাত্রায় আদরের ঘুমন্ত চেহারাকে চোখে ধারণ করেছে।মায়ায় আটকে রেখেছিল নিজেকে সেচ্ছায়।এলোমেলো চুলগুলো যখন আদরকে বিরক্ত করছিলো সেই সরিয়েছে।ঘুমে যেনো কোনো রকমের সমস্যা না হয় সেখানেও বিশেষ খেয়াল রেখেছে।সারারাত পাহারা দিয়েছে তাকে।নিষ্পলক। সারাক্ষণ মনে পড়েছে আদরের সেদিন রাতের বলা কথাগুলো।সে মেহতাবকে অনুভব করতে শুরু করেছে? নিজেতো জড়তা কাটিয়ে বলে ফেললো। মেহতাবের কি হবে এরপর এটা কি ভেবেছে?
আদর বাড়িতে ঢুকেই মা বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।মাত্র কয়টা দিন দূরে ছিলো।এতেই মনে হচ্ছে অনেকটা সময় পর তাদের দেখা।বাবা মাও মেয়েকে দেখে প্রচণ্ড খুশি।আজ ডায়েট ফুডের পরিবর্তে তার পছন্দের খাবার রান্না করেছে।মাঝেমধ্যে একটু ছাড় দেওয়াই যায়।আদর ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিয়েছে।খেতে খেতে কক্স বাজারে কি করলো না করলো সবটা বাবা মাকে জানালো। এমনেতে সে ভীষণ অলস।আজ প্রচুর এক্সাইটেড।খাবার শেষেই লাগেজ খুলে বসেছে।বাবার জন্য ফতুয়া,মার জন্য শাড়ি আর খালার জন্য থ্রী পিস বের করে তাদেরকে দিয়েছে।নিজের শাড়ি আর অরামেন্টগুলো বের করেনি আর।বাবা মা প্রশ্ন করলে কি জবাব দিবে?কে দিয়েছে?যেমনটা ভেবেছিল তেমনি হয়েছে।মা লাগেজ থেকে আদরের কাপড় বের করতে গিয়ে শাড়িগুলো পায়।
জোহরা খাতুন প্রশ্ন করলেন, “কিরে আদর?শাড়ি কিনেছিস? জুয়েলারিও দেখছি সাথে।এতকিছু কেনার টাকা পেলি কোথায়?”
কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারল না।থতমত খেয়ে গেছে।মার সাথে মিথ্যে বলে পার পায়নি কখনো।তবে আজ বলতেই হবে।আমতা আমতা স্বরে উত্তর দিলো,
“আম্মু গতমাসের বেতনের টাকা বাকি ছিল।আর শাড়িগুলো এত সুন্দর লেগেছে! লোভ সামলাতে পারিনি”
জোহরা খাতুন হেসে উত্তর দিলেন,”ওহ! আচ্ছা আমরা তোর খালার বাড়ি যাবো।এই শাড়িটা পড়িস”
মার কথা শুনে মেহতাবের বলা কথা মনে পড়লো।এই শাড়ি পরে যেনো অন্য কারো সামনে না যাওয়া হয়।শাড়ি কে দিয়েছে সেই বিষয়ে এড়িয়ে গেলেও এখন কি বলবে?কিছুক্ষন চুপ থেকে আদর উত্তর দিলো,
“খালার বাড়িতে শাড়ি পরে গেলে আমি ইনজয় করতে পারবো না।পুকুরে শাড়ি পরে নামবো?উল্টো নষ্ট হবে শাড়িগুলো।অন্য কোনোদিন পড়বো আম্মু”
মেয়ের এই কথাও মেনে নিলেন জোহরা খাতুন।ভুল কিছু বলে নি।খালার বাড়ি লম্বা পথ।গ্রাম্য এলাকা।শাড়ি সামলাতে পারবে না সেখানকার রাস্তায়।তারপরও মেয়ের চেহারায় অন্যরকম আভা।কিছুতো একটা লুকচ্ছে।মা সে।মুখ দেখে সন্তানের মনের অবস্থা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারেন।ভাবলেন একদিন সময় করে মেয়েকে জিজ্ঞেস করবেন।একান্তে।
____
সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে নিজ অভিলাষে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার বলছে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়।আর বাংলা ক্যালেন্ডার বলছে আশ্বিন।ছয় ঋতুর দেশে এখন শরৎকালের আধিপত্য। নীল গগনে সাদা শুভ্র ধারাধর।তুলোর ন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছে। নিসর্গে শ্যামলতার ছড়াছড়ি।প্রভাতে দূর্বাঘাসে দেখা মিলে স্নিগ্ধ শিশিরকণার।কার্পাসের মতন ফুটে উঠছে দ্বরেদ্বরে কাশফুল।ঝিরিঝিরি হাওয়া চলছে।আকাশে পাখিদের বেপরোয়া দাপাদাপি।মিষ্টি কলাতন।ইট পাথরের শহরে কি প্রকৃতি উপভোগ করা যায়?আসল সৌন্দর্যতো গ্রামের আকা বাঁকা মেঠো পথে।নদী, ঝিলের দ্বারে শাপলা দেখতে,মাটির চুলোয় তৈরি পিঠা, পায়েসে। তারপরও এই শহরের মায়ায় আটকে।এই উচুঁ দালানের শহর কিছু কেড়ে নিলে কিছু দিয়েছে।হারানো আর পাওয়ার সংগ্রামে যোদ্ধা এই মানবকুল।
ওজন মাপছে আদর।ঠোঁট জুড়ে হাসি।আজ তার কাজের চতুর্থতম মাস। কক্স বাজার থেকে ফিরে আরো দুটো মাস কেটে গেছে।আজ লক্ষ্য উদ্ধারে সফল সে।তার সাথে মেহতাবও।গোলগাল চেহারাটা আরো নাদুস নুদুস হয়ে উঠেছে।হলদে রংটা এখন আরো ফুটে উঠেছে সারা দেহে। স্বাস্থ্য বেড়েছে।এখন দেখতে আরো মায়াবী লাগে।এজন্য ডাক্টার সাহেবকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যায়।কিন্তু দেবে না।একদম দেবে না।আদরের মন,দেহ, মস্তিষ্কে পরিবর্তন আসলেও পরিবর্তন আসেনি মেহতাবের স্বভাবে।এখন পর্যন্ত মুখ থেকে ফুটে ওঠেনি মনের কথা।এতটা একঘেয়ে লোক হয়?আদরও আর কিছু বলে না।তার মৌনতাকেই স্বীকারোক্তি ভেবে নিয়েছে।
“এখন আয়নায় নিজেকে দেখো।আগের আদরের সাথে এখনকার আদরকে মিলিয়ে নাও”
আদর মনে মনে ভীষণ খুশি।মুখের হাসি সেটা প্রকাশও করছে। ডাক্টার সাহেবের ঠেলা ধাক্কা খেয়ে এতদূর।নিজেকে এখন ভীষণ একটিভ মনে হয়।
“আমি কিন্তু আর স্বাস্থ্যবান হতে চাই না। যতটুক আছে এনাফ!”
“এবার শুধু কন্ট্রোল করো এই ফিটনেসটাকে। ডায়েট চেঞ্জ করবো”
“আচ্ছা।আর কিছু?”
“আর কিছু আছে?” মেহতাব ভ্রূ উচিয়ে প্রশ্ন করলো।
আশাহত চোখে মেহতাবের দিকে চেয়ে আছে।চোখে তার হাজার চাওয়া।ইচ্ছা,বাসনা, আকাঙ্ক্ষা।তার এই প্রশ্নের জবাবে মেহতাব ছোট্ট একটা হাসি দেয়।এই হাসির অর্থ কি?
মেহতাব উঠে দাড়ালো।আদরের সামনে দাড়িয়ে তার কপালের চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে গুজে দিয়েছে।একপলক দেখে বললো,
“রেস্ট নাও আমি রাউন্ডে যাই।রায়হান আসবে ওকে টেবিলে রাখা ফাইলগুলো দিয়ে দিও।”
_____
“তোদের ভিডিও কলে ডাকার অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা কারণ রয়েছে।আমি বিগত দুইমাস যাবৎ তোদের একটা কথা বলবো বলে বলতে পারছি না।আজ মনে হচ্ছে লুকিয়ে ভুল করছি।তোদের আমার জীবনের কি ঘটছে জানার অধিকার আছে।আর না বলার যথেষ্ট কারণও আছে।শুনে ভুল বুঝিস না”
শান্তা,রুবি, রোহিত কলে। ক্যাবিনে বসে কল দিয়েছে। মাত্রই সিদ্ধান্ত নিলো মেহতাবের কথা তাদের জানাবে। জানাবে জানাবে করে অনেকদিন পার করে ফেলছে আদর।পাঁচ মিনিট আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ কোনো অজুহাত নয়।নিজের মধ্যে চেপে রেখে বেশ অস্থিরতা অনুভব করছিল।
শান্তা বলল, “বলেছিলাম কিছু লুকাচ্ছে! দেখলিতো তোরা?”
“শান্তা থাম।আদর কি বলবি বল!” রোহিত বললো।
জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল আদর।জোরে শ্বাস ছেড়ে বললো,
“আমার ডাক্টার সাহেবকে একটা কথা বলেছি”
“কি?”
“আমি..”
“আমাদের সাথে হেজিটেড ফিল করা শুরু করেছিস কবে থেকে?”
রুবি বলল এবার।
“আমি ওনাকে বলেছি যে হয়তো আমি তাকে অনুভব করতে শুরু করেছি।আর এই অনুভবটা একদিনে হয়নি।সে প্রতিনিয়ত আমাকে তার ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য করেছে।তার কিছু কাজ,কিছু স্বভাব আমাকে তার দিকে টেনেছে।কেমন যেনো এই লোকটা।কিছুই বলে না।কোনো ভাব প্রকাশ করে না। আমার সাথে তার ব্যবহার আগে থেকে অনেক বেটার। আমিই তাকে বলে দিয়েছি।এরপর আরেকটা প্রশ্নও করিস না তোরা।আমি গুছিয়ে বলতে পারছি না।”
একবারে সব বলে দম ফেললো আদর।তার কথা অগোছালো।প্যানিকের কারণে কিছুই বলতে পারছে না ঠিক মতন। স্পষ্টতা নেই।তবে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা সবার বুঝতে একফোঁটা অসুবিধে হয়নি।আদর ডাক্তার সাহেবের প্রেমে পরে গেছে। এটায় কোনো সন্দেহ নেই।
চতুর রুবি বলল, “সেও কি তোকে অনুভব করে?”
“জানি না।আমি কিছু জানি না।হয়তো করে হয়তো করে না।বুঝি না আমি তাকে।কখনো মনে হয় তার মুখের কথা বিশ্বাস করি।কখনো মনে হয় না মুখে যা বলে সেটা সত্যি না।কিন্তু সেতো কথাই বলে না।এক গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে।এমন কেনো মানুষটা।”
বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই দিবে আদর। বন্ধুগণ তাকে থামানোর জন্য কিছু বলতে গেলে দরজায় টোকা পড়ে।আদর দ্রুত ফোন কেটে দেয়।অবশ্যই রায়হান এসেছে।উঠে দরজা খুলে দিলো।রায়হান দাড়িয়ে।মুখে সবসময়ের মতন হাসি।
“মিস আদর ফাইলগুলো দেন”
“দিচ্ছি স্যার”
“এক মিনিট?”
আদর চোখের পানি আড়াল করে বললো, “জ্বি স্যার?”
“আপনি কাদছেন মিস আদর?”
আদর গলা পরিষ্কার করে বললো, “নাতো স্যার!”
“মেহতাব কিছু বলেছে?”
“উনিতো কিছুই বলে না”
রায়হান হাসলো।বললো, “আপনার অনুমতি থাকলে বসি আমি?”
“অবশ্যই। অনুমতি নেওয়ার কি আছে?”
“না মেহতাব আমাকে আপনার সাথে দেখলে আবার কাচ্চা চাবিয়ে না খেয়ে ফেলে”
এহেন রসিকতায় আদর হেসে ফেলেছে। রায়হান একটা চেয়ার টেনে দূরত্ব রেখেই বসলো আদরের সামনে।
“আপনার সাথে মেহতাবের সম্পর্ক কেমন?”
আদর কিছুটা হাসফাস করে উত্তর দিলো, “সম্পর্ক মানে?কিসের সম্পর্ক স্যার?”
রায়হান বুকে হাত বেধে চেয়ারে হেলান দিয়েছে।মাথা দুই দিকে দুলিয়ে রহস্যময় হাসি হেসে বললো,
“আপনি কি ভাবেন আমি কিছু জানি না?বুঝি না?আমি মেহতাবকে আপনার আগে থেকে চিনি।রক্তের সম্পর্ক আমাদের।আপনার চোখে সহ্য ঘোলাটে হলেও আমার চোখে সব পরিষ্কার। নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন”
মিনমিনে স্বরে আদর থেকে উত্তর আসলো, “উনি রাগ করবেন!”
“আমার আর মেহতাবের সম্পর্ক কেমন মনে হয় আপনার?”
“সাপে নেউলে!”
হো হো করে হেসে উঠলো রায়হান।হেসেই যাচ্ছে।আদর অবুঝের মতন তার দিকে তাকিয়ে।অবশ্যই তাদের সম্পর্ক বোঝাতে শব্দদুটো ব্যবহার করেছে।
“আমি যদি বলি মেহতাব আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমাকে অনেক ভালোবাসে।তাহলে কি বিশ্বাস করবেন?”
“দেখে তো মনে হয় না”
“হবেও না।কারণ মেহতাব এটা হতে দেয়নি।মেহতাব ছোট বেলা থেকে শান্ত,একঘেয়ে আর কম কথা বলা ছেলে। ও শুনে সবার কথা শুনে।তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয় না।এটাও বলতে পারেন প্রতিক্রিয়া দিতে জানে না।নিজের মধ্যে কথা গুলিয়ে ফেলে। শব্দগুলো মুখ পর্যন্ত এনে টুপ করে আবার গিলে ফেলে।সে একজনের সাথেই সব শেয়ার করতো।সেটা চাচীআম্মু। মানে মেহতাবের মা।কিন্তু সে এখন নেই। চাচীআম্মু চলে যাওয়ার পরতো আরো গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে।কি ভাবে,কি করে নিজেই জানে না।যখন হাসবে না কাদবে কিছুই বোঝে না তখন রেগে যায়। অদ্ভুত ধরনের মানুষ মেহতাব।সময় দেন ওকে।ওর না বলা কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।নিজেকে সিন্দুক হিসেবে গড়ে তোলেন।যেখানে মেহতাব নিজের সমস্ত আবেগ, অনুভূতি,কথা সযত্নে রাখতে পারে”
রায়হানের কথা না বোঝার মতন নির্বোধ নয় আদর।বুঝলেও কি লাভ?উপায়টা বের করতে হবে।এখন মনে হচ্ছে রায়হান পারবে উপায় দিতে।একরাশ আশা নিয়ে রায়হানকে প্রশ্ন করে উঠলো,
“কিভাবে করবো স্যার?আমাকে শিখিয়ে দিন না।আমিও চাই সে কথা বলুক।নিজেকে মুক্ত করুক।”
“কখনো মেহতাবের মুখের কথা বিশ্বাস করার আগে তার মুখ আর চোখের রিয়েকশন দেখে নিবেন।কিন্ত একটা কথা বলে রাখি ডক্টর নওশের মেহতাবকে বোঝা অনেক কঠিন।অনেক!”
রায়হান উঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।টেবিল থেকে ফাইলগুলো নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলো।আদর ভাবছে তার বলা কথাগুলো নিয়ে।দরজার দিকে পা বাড়ালে পিছু ডাকে আদর।
“স্যার আরেকটা উপায় বলে দিয়ে যান।আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না”
রায়হান রহস্যজনকভাবে বললো, “কয়লা পোড়ান মিস আদর।পেলে পেতেও পারেন সোনার খনি”
___
ছোট ছোট গোয়েন্দা চোখে মেহতাবের দিকে চেয়ে আছে আদর।অনুসন্ধানে বসেছে।মেহতাবও তার দিকে তাকিয়ে।আদর মেহতাবকে বোঝার চেষ্টায় আর মেহতাব আদরের মাথায় আজ আবার কোন নতুন বীজ বপন হয়েছে সেটা ধরতে চাচ্ছে।
আদরের মনোযোগ ক্ষুণ্ণ করতে মেহতাব বললো, “আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলার ইচ্ছা আছে?”
এমন কথায় হচকচিয়ে উঠলো আদর।ভ্রু কুঁচকে নিলো।বললো,
“আজেবাজে বকবেন না।আপনার বয়সের সাথে যায় না!”
“আমাকে ধমকাচ্ছ তুমি?”
“সেই সাহস আমার আছে?আমি একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করছি।”
“সেটা কি?”
“আপনি আসলেই সেটা আপনি যেটা দেখান?নাকি আপনি সেটা যেটা আপনি দেখান না?”
“আমাকে নিয়ে তোমার কিউরিসিটি বাড়ছে দিনদিন আদর!”
লজ্জায় পরে গেলো আদর। আসলেইতো বেয়াপনা শুরু করেছে সে।একজন ডাক্তারের পেছনে পরে আছে নির্লজ্জের মতন।কিন্তু তার মধ্যেওতো আদরের জন্য একটা কিছু আছে।তার আচরণেই সেটা বোঝা যায়।তবে একটা শক্তপোক্ত শিওরিটি দরকার।নাহলে যে আদরের ব্যাকুল মন শান্ত হচ্ছে না।
মাথা নুয়েই আদর বললো, “আপনি কেমন আমি বুঝি না।আপনি কি চান আমি তাও বুঝি না।”
মেহতাব উঠে এলো।আদরের সামনে দাড়িয়েছে। একহাত টেনে নিল।থুবড়ে পড়েছে মেহতাবের বুকে।দুইহাতের বাধন শক্ত করে মেহতাব ধীর কণ্ঠে বলল,
“আমি কিছু এলোমেলো,অগোছালো সময় চাই।সেখানে সবকিছু নিস্তব্ধ থাকবে।চোখ বুজে,বিনা শব্দে এই প্রবাহমান সময়কে উপভোগ করবো।”
“সেখানে আমি থাকবো?”
মেহতাব দুষ্টুমির স্বরে বলল, “নাহ!কেনো রাখবো তোমায় হুম?তুমি কে?”
রাগে ফোস করে উঠলো আদর। মিথ্যে কিছু বলেনি ডাক্টার সাহেব।সে কে?কি অধিকার তার?সে কি কখনো বলেছে সে আদরের জন্য কিছু অনুভব করে।বলেনি। রায়হানের সব কথাও ভুল।সব ভুল।আদর মেহতাব এর খাচায় বন্দী পাখি।ইচ্ছে করেও যাকে ফেলে দেওয়া যাবে না।দিনদিন রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে।নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
“আমারতো বয়েই গেছে আপনার সাথে থাকতে।থাকবো না।অনেক দূর চলে যাবো।আর কখনো ফিরবো না”
চোখের পলকে রং বদলেছে মেহতাবের মুখে।নিমিষেই রাগের পারদ তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে।এই ধরনের কথাবার্তা মোটেও সহ্য করতে পারেনা সে।রাগে রক্তচক্ষু।নিজের হাতের সাহায্যে আদরের গাল চেপে বললো,
“আবার যদি এসব কথা শুনি।থাপ্পড় দিতে এক সেকেন্ড সময় নিবো না বলে দিলাম!”
_____
“আগামী মাসে আসছি ডাক্তার সাহেব!”
“তুমি মনের যন্ত্রণা আরো বাড়িয়ে দিলে রূপসী!এই দিনগুলো যে আমার কাছে বছর সমান লাগবে।”
মিশা ভেকেশনে দেশে ফিরছে। রায়হান যত খুশি হচ্ছে শুনে ততই তার ধৈর্য্য ভেঙে যাচ্ছে।তার আসার আগাম বার্তা তাকে পাওয়ার ইচ্ছেকে দ্বিগুন থেকেও দ্বিগুণ করে দিচ্ছে।কিভাবে কাটাবে এই মাসটা?
“আর কয়টা দিনইতো মাত্র!”
“আমি তোমাকে নিজের করে বেধে নিবো এবার।”
“ভাইয়া রাজি হবে?”
“তুমি চাচ্চুর সাথে আমার ব্যাপারে কথা বলেছো?”
“বলবো?”
“অবশ্যই।”
“সুযোগ বুঝে বলে দিবো। আর শুনো ভাইয়াকে কিছু জানাবে না আমি আসছি।এসে সারপ্রাইজ দিবো।”
“ঠিক আছে রূপসী।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আমি তোমার অপেক্ষায় রইলাম”
চলবে…