চিত্তসন্ধি পর্ব ৪২ লেখা: #Azyah

0
11

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৪২
লেখা: #Azyah

আদর রাগ করতে পারে না।পাগল মেয়ে।একটু অভিমান করে শুধু।ঠিক ফিরে আসবে।সকল বিশ্বাসকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে দুইদিন পার হয়ে গেছে আদরের কোনো খবর নেই।বেশি জ্বালিয়ে ফেললো মেয়েটাকে?দুইদিন হয়ে গেলো একটা মেসেজ দিল না। কান্নাও করলো না। এমনেতেতো কথা বলার সুযোগ খোজে।তাহলে হটাৎ?নাহ!এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।একটা মেসেজ দেওয়া উচিত।ফোন হাতে নিয়ে টুকটুক করে লিখে ফেললো একটি মেসেজ।সকাল থেকেই ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

অনলাইনে মেসেজ দেওয়ার পরিবর্তে নাম্বারে মেসেজ করছে,

“আপনি কি নাক লাল করে বসে আছেন মিস আদর?কাজে আসবেন না?”

পরপর আরো একটি মেসেজ দিল,

“এইযে কাজ মিস দিয়েছেন।বেতন কাটা হবে।সাথে শাস্তিও আছে”

মেসেজ করে হাসলো মেহতাব।মেয়েটি সম্পূর্ণরূপে কাবু করে ফেলছে তাকে।বারবার হারিয়ে দিচ্ছে নিজের কাছে।এত রাগ তার? মেহতাবকে বাধ্য করলো তার কাছে নত হতে।নিজ থেকে তারসাথে কথা বলতে?এই হেরে যাওয়াটা এত সুখের হবে কখনো ভাবেনি।উঠে দাড়ালো।আদরের ডেস্কের সামনে গিয়ে আনমনে ভাবলো,

“এই ডেস্কটা আর এখানে থাকবে না। খুব শীগ্রই স্থান পরিবর্তন হতে যাচ্ছে”

__

বিশাল সবুজ রাঙা পুকুর। শেওলা জমে আছে চারিপাশে।বাচ্চারা ঝাপাঝাপি করছে পানিতে।একেকজন পারদর্শী সাঁতারে।সবুজে ঘেরা চারপাশ। মধ্যবয়স্ক একজন লোক বাঁশি বাজাচ্ছেন আনমনে।গ্রামীণ পরিবেশে।চারপাশে উজ্জ্বলতা,কথার শব্দ,বাচ্চাদের খিলখিল করে হাসার ধ্বনি।অথচ বিষণ্ণ মনে বসে আছে আদর।পুকুরের সিড়িতে অর্ধেক পা ডুবিয়ে রেখেছে।একজন বলেছিলো পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে ক্লান্তি দুর হয়।মনের কান্তি দূর করার ব্যর্থ চেষ্টায় আদর। নির্বিকার চিত্তে স্থির হয়ে আছে এখানে।গত রাতেই বাবা মাসহ এসেছে খালার বাড়িতে।একপ্রকার জোর করে তাদের এনেছে।আশরাফ মাহমুদ অনেকবার মেয়েকে বোঝনোর প্রয়াস করলেও কোনো কাজ হয়নি।এতটা জেদী তার মেয়ে ছিলো না।তার পরিবর্তন সবার চোখে লাগছে।অনেকটা চিন্তিত তারা এই বিষয়ে।

“উঠে আসুন। এতক্ষন পানিতে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে”

শাহরিয়ারের আওয়াজটা চিন্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে।জোরে নিঃশ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করলো আদর।পা তুলে হাটা শুরু করেছে।

শাহরিয়ার বললো, “অদ্ভুত বিষয় না?আপনার আর আমার গ্রাম একটাই?”

আদর পা জোড়া থামিয়ে বললো, “এটা আমার গ্রাম না।আমার খালার শশুরবাড়ি।”

অপ্রস্তুত শাহরিয়ার স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠে, “ওহ হ্যা!”

শাহরিয়ারকে ফেলে রেখে দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলো। বোকার মতন চেয়ে রইলো শাহরিয়ার।তার খালার বাড়িটাও সম্পূর্ণ কাঠ আর টিনের তৈরি।নিজে শখ করে এত সুন্দর বাড়ি তৈরি করেছেন।আশেপাশে যেখানে দালান কোঠা তৈরি হয়ে গেছে।সেখানে ফাহমিদা গ্রামীণ সৌন্দর্য্য ধরে রেখেছেন।মত আটটি ঘর তার বাড়িতে।ঘরে বাহিরে সব পরিপাটি।নিজের রুমে ঢুকতেই মাকে দেখতে পায় আদর।

আদরকে দেখে জোহরা খাতুন বলে উঠলেন,

“আদর দেখতো আমার ফোন দিয়ে কল যাচ্ছে না কেনো?কল করছি বিজি দেখাচ্ছে শুধু।”

“নেটওয়ার্ক নেই হয়তো।”

“আরেহ নাহ।একটু দেখ এই নাম্বারটায় কল যাচ্ছে না”

ফোন তুলে আদরের সামনে ধরলো।আদর খুব ভালোমতন নাম্বারটি দেখেছে।মার দিকে তাকিয়ে আবার নাম্বারে চোখ বুলাচ্ছে।পরিচিত নাম্বার।একদম অক্ষরে অক্ষরে মুখস্ত আদরের। কাল পর্যন্ত নাম্বারটি ডক্টর মেহতাব নামে সেভ ছিলো।আজ আদরের হাতে দেওয়ার আগে আননোন নাম্বার দিয়ে সেভ করা।তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আদর।কেননা কাল নিজ হাতে এই নাম্বার ব্লক করেছে।এমনকি বাবা আর খালার নাম্বার থেকেও।তার মাকে আদর হারেহারে চেনে।আদরের অদ্ভুত ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে মেহতাবকে কল দিবে জোহরা খাতুন সেটা খুব ভালো করেই জানত আদর। আন্দাজ করেছিলো।

মেহতাব এর নাম্বার ডিলেট করে আদর বললো,

“আম্মু এখানে নেটওয়ার্ক প্রবলেম।তাই কল যাচ্ছে না।”

বলে এড়িয়ে যেতে চাইলে জোহরা খাতুন হাত টেনে ধরলেন।ব্যাকুল কণ্ঠে বললেন,

“মেহতাবের সাথে কিছু হয়েছে মা?আমি কিন্তু সব বুঝতে পারছি আদর।দেখ ভুল সিদ্ধান্ত নিস না।কি হয়েছে আমাকে বল। আমিতো তোর মা।তুই অনেক চিন্তিত।অনেক কষ্টে আছিস।আমি তোর চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি মা। বল না কি হয়েছে?”

“আমি বোকা আম্মু।আমি বোকামি করেছি।বেশি স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলাম।স্বপ্ন ভেংগে গেছে।বাস্তবে চলে এসেছি।বাস্তবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।একদম ঠিক সেটা।সব ভুলের মাশুল আমার এই সিদ্ধান্ত”

__

“ডক্টর নওশের মেহতাব!আশা করি আজকের পর থেকে আমাকে কোনো প্রকার ফোন,মেসেজ করবেন না।আমি আপনার জবটা আর করছি না।আর এটা আমার ফাইনাল ডিসিশন।অনেক হয়েছে!অনেক সহ্য করেছি।আপনার এই অভিনয় নিতে পারছি না আমি।কি সাবলীল অভিনয় করেন আপনি? গম্ভির চেহারার আড়ালে একজন পাক্কা খেলোয়াড় আপনি। অনুভূতি নিয়ে খেলেছেন আমার।আর আপনি জয়ী এই খেলায়।জিতে গেছেন।আমি হেরেছি।শেষ করেন এবার মিথ্যে ঢং করা আমার সাথে।আপনার আমার পথ আলাদা।আপনি বলেছিলেন না বিয়ে করে নিতে?সেটাই হচ্ছে।ভালো থাকবেন।”

বুকটা কেপে উঠলো।এতখন অপেক্ষা করিয়ে মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছে।তাও এতটা ভয়ানক।সামনে পেশেন্ট বসিয়ে হাতজোড়া থরথর করে কাপছে।ঝুঁকে বসলো অজানা এক ভয়।আদরের প্রত্যেকটা অক্ষরে কঠোরতা।সামনে বসা পেশেন্ট তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহতাব সেটা লক্ষ্য করলে দ্রুত ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস নেয় আড়ালে। বিশ্রী মনন মন ও মস্তিষ্কে ভর করছে।তারপরও কর্মরত। মনেমনে প্রবল ইচ্ছে আজ যেনো পেশেন্টদের দ্রুত চেকআপ করে বিদায় করা যায়।

সব পেশেন্ট দেখা শেষ।অস্থির চিত্তে ফোন হাতে নিয়েছে। ফেসবুকে ঢুকতেই দেখলো আদরের আইডি ওফ।বাকি ব্লক করেছে? অস্থিরতার মাত্রা বেড়ে গেলো।একহাত টেবিলে ঠেকিয়ে কল করেছে আদরের নাম্বারে।ফোন ধরেছে আদর।

“আদর! পাগল হয়ে গেছো?কিসব মেসেজ করেছো আমাকে? হ্যা!”

“আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই ডক্টর মেহতাব।আর আপনিও হয়তো হবেন না ইচ্ছুক।এরচেয়ে ভালো কল কেটে নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দিন।আমাকে নিয়ে গেম খেলেছেন।ঠিক আছে।আমি বোকা ছিলাম।আর কারো সাথে এমন করবেন না।কেউ হয়তো সত্যিই আপনাকে মন থেকে ভালোবাসে।আপনার পদবী,নামডাক,লেভেলের কাছে আমার সমস্ত অনুভূতি হেরে গেছে।আমি কোনোদিন ফিরবো না।কথাটি মাথায় রাখবেন”

“আদর! কি হয়েছে তোমার আমাকে বলো আগে।এমন করে কথা বলছো কেনো?আর ফিরে আসবে না মানে?পাগল হয়ে গেছো?”

“বললামতো আপনাকে আমি কিছুই বলতে ইচ্ছুক নই।রাখছি।ভালো থাকবেন”

“আদর!ওয়েট..আমার কথাটা শুনো প্লিজ”

কোনো কথায়ই কাজ হলো না।মেহতাব এতটা হাইপার হয়ে গেছে কি থেকে কি বলবে কোনো কিছু বুঝতে পারছে না।কেনো এমন করছে আদর? কোনোকিছুই তো জানে না সে।হটাৎ এমন করার অর্থ কি হতে পারে?আদরের এই হুট করে পরিবর্তিত রূপ ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে।সবকিছু প্যাচ লেগে যাচ্ছে মাথায়।দুষ্টুমির ছলে নিয়ে করতে বলায় এত অভিমান?এত রাগ।ছেড়েই চলে গেলো।আবার বলছে বিয়ে করে নিবে!শরীরে কোনো প্রকার শক্তিও পাচ্ছে না।ধুপ করে বসে পড়লো চেয়ারে।আবারো ফোন করলো আদরের নাম্বারে।ফোন বন্ধ।বারবার কল করে বন্ধ বলছে!

মুঠোফোন শক্ত করে চেপে ধরলো পূনরায়।বন্ধ নাম্বারেই মেসেজ করেছে।অবশ্যই মোবাইল অন করলে দেখবে।সেই আশায়।লিখলো,
“প্লিজ ফোনটা ধরো আদর।কি হয়েছে আমি জানতে চাই।কেনো এতবড় সিদ্ধান্ত নিলে?আমাকে বলো।যদি সঠিক কারণ হয় আমি তোমাকে বাঁধা দিবো না।”

আধ ঘণ্টায়ও কোনো জবাব আসেনি মেসেজের।নিজেই বিড়বিড় করতে লাগলো।

“আমি কিভাবে বাঁচবো?কিভাবে বাঁচবো?”

__

“অনেক বড় একটা ফাজলামো করে ফেললি না আদর?”

“আমি কোনো ফাজলামো করিনি।বরং এতদিন নিজের জীবন নিয়ে এতদিন যেই ফাজলামোর মধ্যে বেচে ছিলাম সেটাকে শুধরে নিয়েছি”

রোহিত, শান্তা আর রুবি।আদর কল করেছে তাদের। মেহতাবকে ব্লক করে তাদের কল দিয়েছে।আদর বিয়ে করছে।সবাইকে না জানিয়ে হুট করে।এমনকি তার বন্ধুদের পর্যন্ত জানায়নি।গ্রামে এসে জানিয়েছে। হতভম্ব সকলে। রাগও হচ্ছে আদরের প্রতি।

রোহিত চেচিয়ে বললো, “তোরে বিয়ে করতে দিবো না।আমরা সবাই জানি তুই ডক্টর মেহতাবকে ভালোবাসিস।আর যদি বিয়ে করিস আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ত্ব শেষ।”

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, “ভালোবাসা?এই জেনারেশনে ভালোবাসা একটা অভিনয় মাত্র।আমি কাউকে ভালোবাসি না।আর কোনোদিন বাসবোও না।”

রুবি বলল, “এভাবে বলিস না প্লিজ।কি হয়েছে আমাদের এট লিস্ট খুলে বল।নিজের মধ্যে চেপে রেখে সমাধান পাবি?”

“কোনো সমাধান নেই।আর আমি সমাধান চাইও না”

শান্তা এখানে চুপচাপ আছে।রোহিত বলে উঠলো, “শান্তা আদরকে কিছু বল।কি সব বলছে?”

শান্তা আদরের দিকে চেয়ে বলল, “ও আমাদের বন্ধু ভাবে না।নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিয়ে নিলো।আমাদের বলার প্রয়োজন বোধ করেনি।কোন অধিকারে ওকে প্রশ্ন করবো আমরা?”

___

গাড়ি চলছে।গতি অনেক বেশি।মাথা ঠিকঠাক কাজ করছে না।সব কাজ ফেলে দ্রুত বের হয়েছে মেহতাব।উদ্দেশ্য আদরদের বাড়ি।গাড়ি উল্টোপাল্টা পার্ক করে নেমে দৌড়ে গেছে গেটের কাছে।গেট খুলে ঢুকতে চাইলে বাঁধা হলো দারোয়ান।

“কই যান?”

হয়রান মেহতাব জোরে জোরে শ্বাস টেনে বললো, “আদর। আদরদের বাসায়।”

“ওনারাতো বাড়িতে নাই।”

আরেকদফা চমকে উঠলো মেহতাব। উৎকন্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“বাড়িতে নেই মানে? কোথায় গিয়েছে?”

“আপনি কে?”

“আমি ওনাদের পরিচিত।একটু বলবেন কোথায় গিয়েছে ওনারা প্লিজ?আমার জানা দরকার।”

“ওনারা গ্রামে গেছে।দুইদিন আগে”

“গ্রামে?কোন গ্রাম?নাম জানেন?”

“নাহ নামতো জানি না।”

“কবে আসবে?”

“এটাও জানি না ভাই।যাওয়ার আগে স্যার বইলা গেছেন বাড়ি দেইখা রাখতে।ফিরবে কবে ঠিক নাই।আদর আপার বিয়ের জন্য গ্রামে গেছে।”

আদরের বিয়ে।কথাটি কর্ণহুরোরে প্রবেশ করতেই চোখ বুজে নিলো মেহতাব।কি করবে?সব পথ বন্ধ করে রেখেছে আদর।কি ভুল করেছে মেহতাব?একটু জ্বালাতন করতো।এই রাগিয়ে দেওয়ার আড়ালে ভালবাসাটা বুঝলো না?কিসের অভিনয়ের কথা বললো সে?কে অভিনয় করেছে?সামান্য এক স্বীকারোক্তির ছুতোয় চলে গেলো ছেড়ে?হটাৎ মনে পড়লো আদরের মার কথা।দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে কল করেছে তাকে।এখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি।ব্যস্ত বলছে ফোন।এক মুহূর্তে দশবারের উপর কল করেছে।বারবার ব্যস্ত।অর্থাৎ নাম্বার ব্লক।কি থেকে কি করবে কিছুই বুঝতে পড়লো না মেহতাব।পুরো মাথাটা হ্যাং হয়ে আছে।আদর নাহয় বোকা।কিন্তু ওর মা?সেদিন কল করে যে কথা বললো মেহতাবের সাথে?

সেদিন রাতে আদরের মা কল করেছিলেন মেহতাবকে।আদর আর তার ব্যাপারে কথা বলতে।মেহতাব কল ধরতেই বলেন,

“আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?”

“আমিও ভালো আছি।”

“স্যার ঠিক আছেন?ওনার শরীর কেমন?”

“সবাই ঠিক আছে।আদর ব্যতীত।”

আদর ব্যতীত।অর্থাৎ আদর ঠিক নেই।শুনে সামান্য ঘাবড়ে উঠে মেহতাব।একটু আগেইতো ডিউটি শেষ করে বাড়ি গেলো।অল্প সময়ে আবার কি হলো মেয়েটার? বিচলিত কণ্ঠে বললো,

“কি হয়েছে আদরের? ও ঠিক আছে?আমি আসবো?”

“শান্ত হোন।আমি সেটা বোঝাইনি।আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই”

“জ্বি অবশ্যই”

“আপনি কিছু মনে করবেন নাতো?আমি একজন মা হয়ে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো।”

“আপনি বলুন।আমি কিছুই মনে করবো না”

জোহরা খাতুন বলতে গিয়েই থেমে গেলেন।অনেকটা অসস্তি বোধ করছেন।কিভাবে বলবেন?সঠিক শব্দ চয়ন করতে পারছেন না।এভাবে মেয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে? মেহতাব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আশ্বাস দিয়ে বললো,

“আন্টি নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন।বিশ্বাস রাখুন আমি আপনার কোনো কথার ভুল অর্থ বের করবো না।”

জোহরা খাতুন প্রথম মেহতাবের মুখে আন্টি ডাকটা শুনলো। এমনেতে যতবার দেখা হয়েছে ম্যাম বলে ডেকেছে।জোহরা খাতুন বললেন,

“আপনি কি আমার মেয়ে আদরকে পছন্দ করেন। মানে বিয়ে করতে ?”

“চাই!”

একশব্দে উত্তর দিয়ে দিলো মেহতাব। জোহরা খাতুন যেমনটা আশা করেছিলেন তেমনটাই উত্তর পেয়েছেন।ঠিক তার মন মত। মেহতাবকে প্রথম থেকেই তার ভীষণ পছন্দ।তার চেয়ে ভালো ছেলে হয়তো মেয়ের জন্য পাবেন না।মেয়ের সুখের জন্য অনেকটা লজ্জা ত্যাগ করেই মেহতাবকে কল করেছেন।

“কিন্তু আমার কিছুদিন সময় লাগবে।মাত্র বোনের এনগেজমেন্ট করিয়েছি।একটু এলোমেলো সব।বেশি না অল্প কয়দিন।একটি গুছাই সব?”

“বাবা তোমার সময় লাগলে নাও।আমার কোনো সমস্যা নেই। আমিতো শুধু আমার মেয়ের ভালো চাই। ও ছাড়া আছেই কে আমাদের এই দুনিয়াতে।ওকে একটা শক্ত হাতে তুলে দিয়ে শান্তি পাবো।আর আমার কেনো যেনো মনে হয় ওই শক্ত হাতটা তোমারই।”

“ভরসা রাখতে পারেন আমার উপর।নিরাশ করবো না”

অতীতের ভাবনা থেকে ফিরে এলো মেহতাব।কপালের নীল রগ ফুটে উঠেছে কপালে।চোখ জ্বলজ্বল করছে। ফোনটা শক্ত হাতে চেপে ছুঁড়ে ফেললো জমিনে। টুকরো টুকরো হয়ে গেছে সম্পূর্ণ যন্ত্রটি।পেছনে দারোয়ান তাকে দেখছে দাড়িয়ে।ভাবছে প্রশ্ন করবে কি করবে না।ভেবে চিন্তে এগিয়ে গেলো। মেহতাবের রাগে রক্তচক্ষু।ভয়ে আর সামনে গেলো না সে।ফিরে এলো নিজ জায়গায়।ঝলসে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে সবকিছু।ফোনের পড়ে থাকা অংসাবশেষ দেখে হুশ ফিরল মেহতাবের। দৌড়ে গিয়ে কুড়িয়ে নিচ্ছে এদিক ওদিক পড়ে থাকা টুকরো গুলো।ফোন ভেঙে চুরমার।যদি আদর কল করে?মেসেজ দেয়?কিভাবে দেখবে ফোন ছাড়া।কিভাবে যোগাযোগ করবে তার সাথে?ফোন তুলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।অশান্ত বুক নিয়ে দৌড়ে গেলো মার্কেটে।ফোন কিনেছে।কিনেও কোনো লাভ হলো না।আদরকে হাজার বার কল করার পরও ফোন বন্ধ বলছে।

শেষ একটা চেষ্ঠা করলো মেহতাব। মেসেজে লিখলো,

“একটাবার ফিরে আসো।আমি সব ঠিক করে দিবো। আই প্রমিজ।তুমি যা চাও তাই হবে।যা শুনতে চাও।তাই বলবো।একদম বিরক্ত করবো না তোমাকে। জ্বালাবো না”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here