চিত্তসন্ধি পর্ব ৪৬ লেখা: #Azyah

0
10

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৪৬
লেখা: #Azyah

রাতে আদরের সাথে রুবি আর শান্তাকে থাকতে বলেছে মেহতাব।একা বাড়ীতে থাকতে পারবে না।রোহিত,শাহরিয়ার,রায়হান আর মেহতাব দাড়িয়ে আছে আদরদের গেটের বাইরে।

মেহতাব শাহরিয়ারকে বললো, “কোন মুখে সরি বলবো আসলে বুঝতে পারছি না।কিন্তু আমি যা করেছি না বুঝে,না জেনে সত্যিই অনেক বড় ভুল করেছি।পারলে মাফ করবেন”

মেহতাবের বাহুতে হাত রেখে শাহরিয়ার বললো, “কিযে বলেন ভাই।আমি অনেক খুশি।আমি অন্যের ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে নিজে কোনোদিন সুখে থাকতে পারতাম না।”

এবার রোহিতের দিকে ফিরে বললো, “তোমাদেরকে ধন্যবাদ।ধন্যবাদ আসলে অনেক ছোট হয়ে যায়”

“মেনশন নট ভাইয়া।আদরের জন্য যে কোনো কিছু।”

বারান্দায় দাড়িয়ে চার পুরুষকে একসাথে কথা বলতে দেখছে আদর।তার মধ্যে একজনের মধ্যেই তার দৃষ্টি আবদ্ধ।সাদা শার্ট পরা পুরুষে।যে কিনা তার সদ্য বিবাহিত স্বামী।মনে মনে ভীষণ খুশি হলেও।কোনো না কোনো জায়গায় খাদ রয়েই যায়। এতদিনে যা হয়েছে সবকিছু ভেবে মন বারবার বিষণ্ণ অনুভব করে।

রুবি ধাক্কা দিয়ে বললো, “কিরে?বিবাহিত মহিলা!”

“যাহ! কিসব বলিস?”

শান্তা রুবির কথায় সায় দিয়ে বললো, “কি আবার? সত্যিইতো বলেছে।মিসেস নওশের মেহতাব আপনি এখন। আপনার ভাবসাবতো অন্যরকম হবে”

আদর এড়িয়ে চলে গেলো ঘরে।লজ্জা দিতে দিতে শেষ করে ফেলবে নাহয় এরা।একদম কারো মুখে কিছু বাজে না।শান্তিতে দেখতেও দিলো না মেহতাবকে।

__

রাত একটা

রুবি আর শান্তা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে আদরের পাশে।আদরের চোখে এক ফোঁটা ঘুম নেই।এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে।শান্তি পাচ্ছে না কোনো রকমে।অনেক চেষ্ঠা করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মেহতাবকে কল করবে?সেতো এখন তার স্বামী।সম্পূর্ণ অধিকার আছে জ্বালানোর।এতদিনের দূরত্ব মিটিয়ে নিলে ক্ষতি কিসের?রুবি আর শান্তাকে টপকে বারান্দায় চলে গেলো। মেহতাবকে কল করেছে।দুইয়েক বার রিং হওয়ার পর ফোন ধরলো মেহতাব।

“বলো”

মিনমিনে কণ্ঠে আদর জিজ্ঞেস করলো, “বাসায় গিয়েছেন?”

“হ্যাঁ”

“খাওয়া দাওয়া করেছেন?”

“হুম খেয়েছি।তুমি খেয়েছো?”

“হুম”

ফোনের দুপাশে ঘোর নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল।কারো মুখে কোনো কথা নেই।মিনিট পাঁচেক পর মেহতাব বললো,

“কি ব্যাপার?চুপ হয়ে আছো কেনো?”

“কথা খুঁজে পাচ্ছি না আপনাকে বলার মতন।নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে।”

“আদর।আমি একজন প্রচুর পরিমাণে ইন্ট্রোভার্ট মানুষ।আমি মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি না।এরমানে এটা নয় আমি ধোঁকাবাজ।আমি জীবনে এমনভাবে চলেছি কেউ আমার দিকে আঙুল তুলতে পারেনি।আমার বিয়ে করার কোনো প্ল্যান ছিলো না তুমি আমার জীবনে আসার আগ পর্যন্ত।কিন্তু এখন?চোখের সামনে সব পাল্টে গেলো।”

“আমিও আপনাকে হারাতে চাইনি।”

“অবিশ্বাস!এই শব্দটা ঝড় তুলে দিয়ে যায় অনেক সময় মানুষের জীবনে”

“আমি অবিশ্বাস করি না আপনাকে!”

“তাহলে কেনো চলে গিয়েছিলে?সত্যি মিথ্যে যাচাই না করে?কে তোমার কাছে ছিলো?আমি নাকি ঐ মেয়েটা! মানে ফারিহা?”

“ওই মহিলা এসব করতে পারে আমি কল্পনাতেও ভাবিনি।”

“আর তুমি এভাবে তার কথা শুনে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো এটাও আমি কল্পনাতে ভাবিনি।তুমি কি বলতে যেনো? স্বীকারোক্তি চাই তোমার।মুখ থেকে বলা কথার এত দাম!কি হলো শেষে?এক মিথ্যুক নারীর কথার প্রতারণায় পড়ে আমাকে ভুল বুঝলে।”

“আর ভুল করবো না।এবার পাক্কা প্রমিজ ”

মেহতাব সামান্য হেসে বললো, “তোমাকে আমি একদম বিশ্বাস করি না।”

করুন কণ্ঠে আদর বলে উঠে, “এভাবে বলেন কেনো?আমার কষ্ট হয়”

“তোমার একারই হয় কষ্ট?”

“আজ আপনার কান্না আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে ডাক্তার সাহেব”

“আর তোমার দূরত্ব পুরো আমাকেই নিঃশেষ করে দিয়েছে।”

আদর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মেহতাবের উপর বেশ অধিকার খাটিয়ে বললো, “এই দূরত্ব আমাদের কতটা কাছে এনে দিয়েছে আপনি একবারও ভেবেছেন?আমরা এখন আলাদা কোনো ব্যক্তিত্ব না”

“কি আমরা তাহলে?”

লজ্জায় আবারো নাক লাল হতে শুরু করেছিল। আদরতো এমনেতেই বলেছিলো কথাটি।মেহতাব সরাসরি প্রশ্ন করে বসবে কে জানতো।তাদের সম্পর্ক এখন কি এটা তারা দুজনই জানে। মেহতাবের সামনে কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারবে না।

“আমি বলবো না”

“বলো” গভীর কণ্ঠে মেহতাব তার জবাব চাইলো।

“নাহ নাহ”

“আবার জ্বালাতন করছো?”

“আমার লজ্জা করে”

আদরের কথায় হাসলো মেহতাব।এই হাসিটা অনেকদিন পর তার মুখে ফুটেছে।আদরকে পেয়েও কোথাও একটা কিছু কমতি রয়ে গেছে।সব কিছু এত দ্রুত হয়ে গেলো কি রেখে কি ভাববে বুঝতেই পারছে না।

“আমি বলেছিলাম না তুমি বাধা পড়ে গেছো?পালানোর রাস্তা নেই।সত্যিই বেধে ফেলেছি নিজের বউ রূপে”

___

আদরের বাবা মা সকাল সকাল এসেছেন।এসেই শান্তা আর রুবিকে আদরদের বাসায় দেখেন।তাছারাও মেয়ের মুখে উচ্ছাস আর হাসি।প্রাণ ফিরে পেয়েছে যেনো উদাস চেহারাটা।দরজা খুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে তাদের। বিগত একমাস ঠিকমতো কথা পর্যন্ত বলতে দেখা যায়নি তাকে।আজ হুট করে?এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।সকাল এগারোটায় আদর সবার জন্য নাস্তা রেডি করে বাবা মা আর রুবি, শান্তাকে ডেকে তুললো। টেবিলে সবাইকে নাস্তা দিয়ে নিজেও বসেছে।

আশরাফ মাহমুদ রুবি আর শান্তার উদ্দেশ্যে বললেন, “রোহিতের কি অবস্থা এখন?”

শান্তা হেসে বললো, “কি অবস্থা হবে আংকেল?ওরতো কিছুই হয়নি।”

জোহরা খাতুন আর আশরাফ মাহমুদ অবাক হলেন। রোহিত এক্সিডেন্ট করেছে এটা বলেই এত দ্রুত আদরকে আনা হলো।আর এখন কিনা বলছে তার কিছুই হয়নি।

জোহরা খাতুন বললেন, “তাহলে তোমরা বললে যে রোহিত অ্যাকসিডেন্ট করেছে?”

রুবি উত্তর দিল, “সব মিথ্যে ছিলো আন্টি।আদরকে ঢাকা ব্যাক আনার জন্য।আপনার মেয়ে এত জিদ্দি আগে জানতাম না।সামান্য একটা ভুল বোঝাবঝির জন্য সন্ন্যাস নিতে চলেছিলো।কত বড় সাহস!”

“কিসের ভুল বোঝাবোঝি?”

“সেটা আন্টি আদর আমাদের থেকে ভালো বলতে পারবে।”

শান্তা বলে উঠে, “এখন সব ঠিক আছে আন্টি।আপনার এই বোকা মেয়ে কোথাও যাচ্ছে না। ঢাকাই থাকবে।আপনাদের আমাদের সবার সাথে।সব প্রবলেম সলভড!”

আদর চোখ নামিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।যেনো তার আশেপাশে কেউ নেই।কেউ কথা বলছে না।কেউ যেনো কোনো প্রশ্ন করতে না পারে তাই খাবারের দিকে প্রখর মনোযোগ দিয়ে আছে। জোহরা খাতুন স্বস্তির হাসি দিলেন।এটাই চেয়েছিলো সে।সব ভুল বুঝাবুঝি যেনো শেষ হয়ে যায়।মেয়েটা সুখে থাকে।

রুবি, শান্তা চলে গেছে নাস্তা সেরেই।বিয়ের কথাটা এখনও জানানো হয়নি আদরের মা বাবাকে। মেহতাবই তাদের বলতে না করেছে।এতখন হাতের আংটিটিকে অবহেলা করা হলেও এখন বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সেটা আদরের। মেহতাবের পড়িয়ে দেওয়া আংটি।হাসতেও লজ্জাবোধ করতে শুরু করলো এখন।যদি কেউ দেখে ফেলে। সারারাত,সারাদিন শুধু এটাই ভেবে যাচ্ছে।মেহতাব আর তার বিয়ে হয়ে গেছে।তারা এখন বিবাহিত। ভাবলেই কেমন যেনো লোমকূপ দাড়িয়ে যাচ্ছে। শিউরে উঠছে সারা দেহ।

“কিরে?”

মায়ের ডাকে নড়েচড়ে উঠলো।জোহরা খাতুন মেয়ের বরাবর এসে বসেছেন।হাতের আংটিটি তার দৃষ্টিগোচর হয়নি।তারপরও প্রশ্ন করেননি কোনো এই ব্যাপারে।জিজ্ঞেস করলেন,

“কি হয়েছিল এবার সত্যি সত্যি বল”

“আমি অনেক বড় বোকা আম্মু।আমি ওনাকে ভুল বুঝেছি।অন্য একটা মানুষের কথায় বিশ্বাস করে।”

“মানে?”

আদর মায়ের কোলে মাথা রাখলো।বারবার এই অপরাধবোধ তাকে ঢুকে ঢুকে শেষ করতে চলে আসছে।অন্যায় সেও করেছে।তার মেহতাবের সাথে সবটা আলোচনা করা উচিত ছিলো।মা বাবার সাথে আদরের সম্পর্ক বেশ মজবুত।জীবনে কোনো কথা তাদের কাছে লুকায়িত নয়।বেশ সহজভাবেই মার কাছে সবকিছুর খোলাসা করলো।জোহরা খাতুন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“ক্ষমা চেয়েছিস মেহতাব এর কাছে?”

“চেয়েছি মা।কিন্তু আমি জানি উনি আমার উপর একটু হলেও রাগ!”

“সেটা হওয়া কি স্বাভাবিক না আদর?”

“আমি কি করবো মা?”

“সময় দে ওকে”

___

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মেহতাবকে কম হলেও পাঁচবার কল করা হয়েছে।মেসেজ করা হয়েছে।কোনোকিছুর রিপ্লাই দিচ্ছে না সে।কল ব্যাকও করেনি।আদর চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। কোথায় গেলো? আজতো ডিউটি নেই।আবার রেগে গেলো নাতো?ফোন নিয়ে পুরো রুমে পায়চারি করছে।হটাৎ মাথায় আসলো রায়হান এর কথা।তাকে একটা কল করে দেখা যাক?

যেমন চিন্তা তেমন কাজ।এক মিনিট সময় নেয়নি রায়হানকে কল লাগিয়েছে।একবার রিং হয়ে কেটে গেলো।আদরের মনে একটাই প্রশ্ন দুইভাই মিলে কোথায় হারিয়ে গেলো। ভাবতে ভাবতে আবার দিন মিলিয়েছে।এবার ফোন ধরেছে রায়হান।

ঘুম জড়িত কণ্ঠে বলল,

“হ্যালো মিস আদর?থুক্কু ভাবি।কেমন আছেন?”

রায়হানের মুখে ভাবি শুনে যা বলতে ফোন করেছিলো সেটাও ভুলে যাচ্ছে।চুপ রইলো।কিন্তু এতক্ষন রায়হানকে কলে অপেক্ষা করানো ঠিক হবে?তাই মুখ ফুটে বললো,

“আমি ভালো আছি।আপনি?আর উনি কোথাও?”

“আমিতো ভালোই আছি।আর উনিটা কে?”

আমতা আমতা করে আদর বললো, “আপনার ভাই”

“ওহ মানে আপনার সদ্য হওয়া জামাই?আছে পাশেই আছে।ঘুমোচ্ছে”

“এই অবেলায়?”

“সারারাত ঘুমায়নি বেচারা।আপনার কথাইতো ভাবছিলো।”

“উঠলে একটু বলে দিবেন আমাকে কল করতে?”

“সেটার দরকার হবে না।”

“কেনো?”

“সেটা পরে জানবেন।এখন রাখছি।আমিও আমার ঘুমটা কমপ্লিট করি?”

“জ্বি আচ্ছা।বাই”

রাত আটটা,

না জানিয়ে মেহতাব আর রায়হান এসে হাজির।দরজার কাছে মেহতাবকে দেখে ভুত দেখার মতোন চমকে উঠলো।জোহরা খাতুনের মুখে বিরাট হাসির ঝলক।তাদের ভেতরে আসতে বলছে।আদর এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে।যা দেখছে সত্যিইতো?মেহতাব তাদের বাড়িতে?সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে আজ।দেখতে শুভ্র লাগছে। মেহতাবের সৌন্দর্য্য দেখবে নাকি এখানে হুট করে চলে আসায় আশ্চর্য্য হবে দোটানায় পড়ে গেছে আদর।চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেললো আদর। আশরাফ মাহমুদ এসেছেন। বিনয়ের সাথে তাদের। দুজনকে বসতে বললেন।

জোহরা খাতুন বলে উঠেন, “আপনারা কথা বলুন।আমি চা নিয়ে আসি”

রায়হান বললো, “আন্টি সেসবের দরকার নেই।আপনি বসুন।”

“আরেহ নাহ।বললেই হলো দরকার নেই। বসো তোমরা আমি আসছি”

জোহরা খাতুন চা নাস্তা নিয়ে এসেছেন। কাল রাতেই আশরাফ মাহমুদকে সবটা জানিয়েছেন তিনি।সেও এখন স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন তাদের সাথে।তবে আকস্মিক বাড়ি চলে আসায় তারাও অনেকটা অবাক। মেহতাব মাথা নিচু করে বসে আছে।রায়হান টুকটাক কথা বলছে আশরাফ মাহমুদ আর জোহরা খাতুনের সাথে।আড়াল থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করছে আদর।

নীরবতা ভেঙে মেহতাব বলে উঠে, “আমি কিছু কথা বলতে চাই আপনাদের সাথে”

আশরাফ মাহমুদ বললো, “হ্যা অবশ্যই।বলো”

“আমি পেশায় একজন ডাক্তার।আমার পরিবার বলতে এখন শুধু আমার বাবা আর বোন আছে।আর রায়হান এবং আমার চাচী।আমার মা আগেই চলে গেছেন।আজ থেকে হয়তো পনেরো বছর আগে। আমার বোন পড়াশোনার জন্য উইকে থাকে।আমার বাবাও তার সাথেই থাকে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমার আশপাশের মানুষ থেকে জানতে পারবেন।এসব বলার কারণ হচ্ছে আমি আদরকে বিয়ে করতে চাই।একজন বাবা মা অবশ্যই মেয়ে দেওয়ার আগে এসব প্রশ্ন করবে।তাই আমি আগেই আমার ব্যাপারে বলে দিলাম।”

স্পষ্ট কথা মেহতাবের।কোনো ধরনের ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেনি।নিজের বিয়ের প্রস্তাব নিজে এসে দিচ্ছে।এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ফেললো।আদরের মাথা ঘুরছে।দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।কি সাহস তার?মেয়ের বাবার সাথে এত স্বাভাবিকভাবে বলে ফেললো কথাটি।রায়হান এই সম্পর্কে অবগত থাকলেও এতটা ক্লিয়ার কাটভাবে বলে দিবে মেহতাব কল্পনাও করতে পারেনি।

আশরাফ মাহমুদ মেহতাবের কথার প্রেক্ষিতে বললেন, “তোমার বাবার সাথে কথা বললে ভালো হতো না?”

“জ্বি অবশ্যই।আমি ওনাকে কথা বলিয়ে দিবো আপনার সাথে।”

“ঠিক আছে।”

মেহতাব কিছু সময়ের বিরতি নিয়ে বললো, “আমি ঘোরোয়াভাবে খুব দ্রুত বিয়েটা করতে চাচ্ছি যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে”

আশরাফ মাহমুদ আর জোহরা খাতুন একে অপরের দিকে তাকালেন। মেহতাবের তাড়াহুড়ো জায়েজ।একবার যে কান্ড ঘটিয়েছে তার মেয়ে!

আশরাফ মাহমুদ বললেন, “তুমি যথেষ্ট বুঝদার একটি ছেলে।এটা তোমাকে দেখলেই বুঝা যায়।কিন্তু এখানে বড়দের কথা বলার একটা বিষয় থাকে।আমি আদরের মার থেকে তোমার ব্যাপারে যতটুক শুনেছি তোমাকে আমার কোনদিকেই খারাপ মনে হয়নি।আমি তোমাকে অপছন্দও করি না।আমার মেয়ে যেখানে সুখী আমিও সেখানেই সুখী।আমি চাই তোমার বাবার সাথে কথা বলতে।”

“জ্বি।কিন্তু ফোনে কথা বলতে হবে।”

“সেটা বুঝেছি।ওনারা বিদেশ থাকেন। তা বিয়ে যে করতে চাচ্ছো বাবা আর বোনকে ছাড়া করবে নাকি?”

“ওনাদের আর্জেন্ট ছুটিতে আনানো যাবে।আর আমিতো ঘটা করে বিয়েটা করবো না।শুধু ঘরের মানুষ।”

আশরাফ মাহমুদ মৃদু হাসলেন।বললেন, “ঠিক আছে।আমি রাজি এই বিয়েতে। তবে শর্ত আছে?”

“কি শর্ত?”

“আমার মেয়েকে আমাদের অবর্তমানে কষ্ট দেওয়া যাবে না।অনেক অনেক সুখে রাখতে হবে।টাকা পয়সার সুখের চেয়ে বেশি মানসিক সুখ।”

আশরাফ মাহমুদ আওয়াজ তুলে আদরকে ডাকলেন। গুটিসুটি পায়ে আদর এসে দাড়ালো সামনে।মেয়ের উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, “তুমি মেহতাবকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক?”

আদর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে মেহতাব চেয়ে আছে তার দিকে।সাথে আশরাফ মাহমুদও।

“কি হলো উত্তর দাও মা।তুমি এই বিয়েটা করতে রাজি?”

“হ্যাঁ আব্বু”

মেহতাব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।আদরকে চুপ থাকতে দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল।অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে এসেছে এখানে। হৃদপিণ্ড এখনো লাফাচ্ছে।কিভাবে বলে ফেললো এতগুলো কথা?নিজের উপরই ভরসা করতে পারছে না।

“তাহলেতো হলোই।আমি মেহতাবের বাবার সাথে শীগ্রই কথা বলতে চাই।”

এরই মধ্যে রায়হান প্রশ্ন করে বসলো, “বিয়েটা কি হচ্ছে আংকেল?”

“তোমার কি মনে হয়?” হেসে হেসেই উত্তর দিলেন আশরাফ মাহমুদ।

“হচ্ছে”

“হ্যাঁ! আর আমার মেয়ে সম্পর্কে সবইতো জানো।তাছাড়া আমি তোমার বাবাকে বলবো আদরের ব্যাপারে।আর হ্যা রাতে এখানে খেয়ে যাবে”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here