চিত্তসন্ধি পর্ব ৫২ লেখা: #Azyah

0
4

#চিত্তসন্ধি
পর্ব ৫২
লেখা: #Azyah

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের প্রহর শুরু।আকাশে গোলাকৃতির চাঁদ আলো ছড়িয়ে তার সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে।পাশে জ্বলজ্বল করছে অসংখ্য তারা।আকাশ সম্পূর্ণ অন্ধকার নয়।ভেসে চলছে নভষ্চর।সাদা বাড়ির অন্ধকার কামরায় আত্মম্ভরি হয়ে মুখ গুজে আছে বালিশে আদর।এই অমর্ষ কমবার নয়।ঠিক পিছনে অর্ধ শুয়ে মেহতাব। মসৃণ কেশমালায় হাত বুলিয়ে প্রিয়তমাকে মানানোর চেষ্টায়।আজ বেশি দুরূহ হয়ে উঠলো না কোমল মেয়েটি?অনেক কথার মাধ্যমেও তাকে বোঝানো দায় হয়ে পড়ছে।বারবার পরাজিত!অন্য হাতিয়ার ব্যবহার করতে হবে এবার।

মেহতাব বললো, “আমাকে বকলে বকতে পারো।তারপরও চুপ থেকো না”

আদর নিরব।বেশ অনেকক্ষণ যাবতই নিশ্চুপ।ভালো খারাপ কোনো কথাকেই গ্রাহ্য করছে না।বারান্দা থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়েছিলো। খাটের দেয়ালের পাশে কম্বল মুড়ি দিয়ে মেহতাবকে এড়িয়ে যাওয়ার অনশন করছে।

“আদর!”

কম্বলের নিচ থেকে তেজী গলায় উত্তর আসলো, “কোনো কথা বলবো না আমি।আপনি এখন সাধু সাজছেন।সুন্দর করে কথা বলছেন।কালকে আবার আগের মতন শয়তান হয়ে যাবেন।আমি জানি।আপনার ফাঁদে একদম পা দিবো না”

কথা বলবে না বলেও কথা বলছে।এমন বোকামি দেখে হাসি ফুটলো মেহতাব এর অধর জুড়ে। এতক্ষন শক্তি প্রয়োগের কমতি ছিলো।সেটাও পূরণ করে কম্বল টেনে সরিয়েছে। আদরকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। মাথার উপর মাথা রেখে আদুরে কণ্ঠে বলল,

“বিগত দেড় ঘণ্টা যাবৎ তোমাকে মানানোর চেষ্ঠা করেছি।আমি আমার এই জীবনে কারো সামনে এত আকুতি মিনতি করি নি”

মেহতাব কাছাকাছি আসলে চোখ আপনাআপনি বুজে যায়। এখনো তাই।এরমধ্যেই কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে নিলো আর বলে উঠে,

“কে বলেছে মানাতে।আপনি ল্যাপটপে বসে আপনার কাজ করেন।সময় কেটে যাবে”

“সব কাজ ক্লিনিকে শেষ করে এসেছি।এমনেতেই ক্লান্ত ছিলাম।তোমার পেছনে খেটে এখন আমার আরো ক্লান্ত লাগছে।”

“হ্যাঁ সবকিছুতেই সব দোষ আমার।এখন কি করতে পারি আমি?আমার কিছু করার আছে!” বাজখাই গলায় বলে উঠলো আদর।

আজ সাহস,রাগ দুটোই সীমারেখা অতিক্রম করেছে।মেহতাব মৌনতা ধারণ করলো।ভাবনা চিন্তা করলো কয়েক সেকেন্ড।মেয়েটাকে ছাড়া তারও কোনো উপায় নেই।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আদরকে বল প্রয়োগে ঘুরিয়েছে নিজের দিকে।বারবার এমন টানাটানিতে আদরের মেজাজ আরো বিগড়ে যাচ্ছে।ঠোঁট চেপে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহতাবের দিকে।

মেহতাব ঝুঁকে বললো,

“এত রাগ করে না!”

“এভাবে টানাটানি, ঘেঁষাঘেঁষি করবেন না বলে দিলাম!”

“অবশ্যই করবো।তুমি কি যেনো বলেছিলে?আমার ক্যারেকটারে সমস্যা।যাদের ক্যারেকটারে সমস্যা হয় তারা এসব করেই।নাথিং মেজর!”

নাক ফুঁসতে থাকা আদর বললো, “দূরে সরেন!”

আরো দূরত্ব কমিয়ে দেয় মেহতাব।চোখের আকৃতিও পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। নিঃশ্বাসের গতি বলে দিচ্ছে তার হৃদয়ের হাল।

আদরের গালে আঙ্গুল বুলিয়ে বললো,

“দূরে নাহ!আমার আজ কাছে আসার প্ল্যান।তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ইচ্ছা জেগেছে।সেটা মুখে নয়। অনুভব করানোর বিশেষ বাসনা জেগেছে।তোমার প্রতি আমার একরাশ ব্যাকুলতার বহিঃপ্রকাশ করতে ইচ্ছে হচ্ছে আদর।আমি তোমাকে ছাড়া কতটুক অস্তিত্বহীন সেটা জানানোর একরাশ স্পৃহা!”

গোলগোল চোখে মেহতাবের প্রত্যেকটা কথা শুনছে আদর।ভুলতে বসেছে মেহতাবের সাথে তার এতটা দূরত্বহীনতা।বুকটা কেপে উঠলো।আজ হুট করে এত পরিবর্তন? বাক্যগুলোর গভীরতা পরিমাপ করতে পারছে হারেহারে।জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।মিনমিনে কণ্ঠে আবার একই বাণী আওরালো,

“ছাড়েন”

“নাহ!”

কথায় কাজ হবে না।তাই ছটফট করতে শুরু করলো।তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। হবেও না। মেহতাবের সুঠাম শক্ত দেহের কাছে আদরের কোনো সামর্থশক্তি নেই।এটা জানা সত্ত্বেও নিজের নড়চড় থামায়নি। বেচেঁ যাওয়ার এক ব্যর্থ ইচ্ছা।আকষ্মিক গলার গভীরে ঠোঁটের গভীর স্পর্শে ছটফট থেমে যায়।সমস্ত শক্তি হারায় দেহ।আবেশে নিস্তেজ প্রায় অবস্থা আদরের। মেহতাবের গরম নিঃশ্বাস কম্পন ধরিয়ে দিচ্ছে।পরপর অধরে অধর ছুয়েছে।

অত্যন্ত ভারী কণ্ঠে মেহতাব বললো,

“কি লাভ এত লাফালাফি করে?আমার কাছে তুমি কত দুর্বল তা জানো?তোমাকে কাবু করার পদ্ধতিটা আমি খুব ভালো করে জানি!”

মাথায় তলওয়ার লটকে থাকার মতন অবস্থা।বারবার ঢোক গিলে যাচ্ছে আদর। এতক্ষন যাবৎ গলায় যে তেজ ছিলো তা নিস্তেজ হতে হতে একবারে শূন্য।বক্ষস্থলে তুফান আছড়ে পড়ছে।কোনো উপায় না পেয়ে চোখ বুজে নিলো আদর।যেনো এভাবেই পালানো যাবে।

“আমি আজকে প্রমিস করছি একদম কষ্ট দিবো না তোমায়। যথাসম্ভব তোমার কথা শুনার চেষ্ঠা করবো।মাঝেমধ্যে একটু নড়বড়ে হয়ে উঠতে পারে এই প্রতিশ্রুতি।তুমি একটু শুধরে নিও।আমার উপর তোমার অধিকার আছে আদর। খাটাও না কেনো?”

কাপা কণ্ঠে উত্তর আসলো, “ভয়..করে আমার।আপনি রেগে”

কথা সম্পূর্ণ হতে না দিয়ে মেহতাব বললো, “আমার জানামতে আমি তোমার সাথে দুইবার রাগ করেছি।তারপর যে দূরে যাওয়ার শাস্তি দিয়েছো।আমি কানে ধরেছি বাবা!”

শেষ কথায় হেসে ফেলে আদর।তবে সঙ্গেসঙ্গে হাসি বিলীন করে ফেললো।এমন একটা পরিস্থিতিতে হাসিটা একদম মানানসই না।

মেহতাব বলে উঠে,

“চলো তোমাকে এক ভিন্ন অনুভূতির সমুদ্র গভীর থেকে ঘুরিয়ে আনি।সেই গভীর তলদেশে আছে এক সুখের স্বর্গরাজ্য।যেখানে কোনো কষ্ট,রাগ, মান-অভিমান নেই।তুমি আমি ছাড়া কারো অস্তিত্ব নেই।সমস্ত তুমিতে আমার বিচরণ।আমি দূরত্ব ঘোচাতে চাই আদর।নিজে থেকে তোমার কাছে এসে নত হচ্ছি।ভালোবাসি বলার চেয়ে অনুভব করানো সবচেয়ে বেশি জরুরি।এতদিন ধৈর্য্য ধরে ছিলাম।যেনো তোমার সামনেই একদিন নিয়ন্ত্রণের বাঁধ ভেঙে ফেলতে পারি। লাগামহীন হয়ে তোমার মধ্যে মিশে যেতে পারি।তোমার সমস্ত অভিমানকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারি।আমার প্রত্যেকটা গভীর স্পর্শ যেনো তোমার হৃদয় অব্দি দাগ কেটে যায়।দুটো চিত্তের সন্ধি হয়।”

সত্যিই হয়তো কাবু করতে জানে সে।নিকটে এসে মুখের শব্দ কেড়ে নেয়। অচেতন হয়ে পড়ে সমস্ত আবেগ। মৌন রয়ে গেলো আদর।মেহতাব কাছ তার মুখশ্রীর দিকে চেয়ে চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।এত মায়া কেনো এই চেহারায়?আবছা অন্ধকারে সাদা পাথরের নোসপিনটা জ্বলজ্বল করছে। ঠোঁট ছোঁয়ালো সেখানে।ধীরেধীরে সারা চেহারায়। ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাসের মেলা।মেহতাবের উষ্ণ নিঃশ্বাস তার স্বস্তির জানান দিচ্ছে।এই স্বস্তি শুধু আদরের নিকটেই অনুভব করে। রাত্রি প্রহর প্রবাহমান।আশপাশ সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ।সময়ের সাথে সম্পুর্ণ নিজের আয়ত্তে এনে ফেলেছে আদরকে। উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিয়েছে।সকল বাঁধ ভেঙে নিঃশব্দে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছে আদরের মাঝে।যেনো সে উদ্মাদ।মেহতাবের ভিন্ন নিয়ন্ত্রণহীন রূপ। শব্দহীন হয়ে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দিয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।

আদরের শিশিরভেজা চোখের আচ পেতে ভারী কাতর কন্ঠে মেহতাব বললো,

“তোমার কি কষ্ট হচ্ছে আদর?কাদছো কেনো?আম সরি!”

মেহতাবের অস্থিরতা দেখে দুহাতের সাহায্যে মেহতাবের গাল চেপে ধরলো।চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বললো,

“আপনার রাগ,ভালোবাসা,স্পর্শ,অভিমান,গম্ভিরতা কোনোকিছুই আমার খারাপ লাগে না ডাক্তার সাহেব।আপনার সবকিছু যেনো শুধু আমার জন্যই থাকে”

ভারী নিঃশ্বাস টেনে মেহতাব বললো, “আমার প্রিয় নারী তুমি।আমার সবকিছু তোমাতেই ন্যস্ত।এখানে অন্য কারো জায়গা নেই। কক্ষনো না!”

“আর আপনি আমার ঘাড়ত্যাড়া প্রিয় পুরুষ!”

নিস্তব্দ ঘর জুড়ে মৃদু হাসির গুঞ্জন। অনুভূতিরা পূর্ণতা পাচ্ছে।মানুষের মুখ থেকে উচ্চারিত কথার চেয়ে নিঃশব্দে প্রকাশিত অনুভূতির কোনো মূল্য হয় না। স্বীকারোক্তি দিয়ে দিলেই যেনো ঢিল ছুটে যায়।চোখের ভাষা পড়তে সময় লাগে।ওই সময়টায় একে অপরের প্রতি অনুভূতিগুলো আরো বেগ পেতে থাকে।

__

শীতের প্রথম প্রহরে ঠান্ডা বাতাস বইছে।বাতাস শরীরে এসে আছড়ে পড়লে হিমশীতল হয়ে পড়ছে দেহ আর রুহ। খোলা বারান্দায় আদরকে জড়িয়ে তার ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টায় মেহতাব।চাদরে পেঁচিয়ে থাকার পরও মেয়েটি কেপে উঠছে বারবার। নিঃশক্তি হয়ে পড়ে আছে মেহতাবের খোলা বাহুতে।তাকে দেখে যেনো শীত আরো বেড়ে যায়।মানুষ নাকি রোবট?ঠান্ডা কি অনুভব হয় না তার?দিব্যি খালি গায়ে বসে আছে।

অনেকটা সময় নিশ্চুপ অতিবাহিত করার পর মেহতাব বললো,

“আমাকে সেদিন গাড়িতে আমার ঘাড়ে দাগ দেখে চরিত্রহীন উপাধি দিয়েছিলে মনে আছে?”

আসাঢ় দেহ আর মন নিয়ে সামান্য চেঁচিয়ে বললো, “উফ!আপনি এখনও ওই কথাটা নিয়ে পড়ে আছেন!”

“ডাক্টার ছাড়া জীবনে কেউ প্রথম কোনো উপাধি দিয়েছে তাও আবার এতবড় একটা উপাধি।আমি প্রাউড ফিল করছি।আর ওই উপাধির যথাযথ মূল্যায়ন করার চেষ্ঠা করছি।”

মাথা তুলে তাকালো আদর।ঠোঁট উল্টে প্রশ্ন করলো, “কার সাথে চরিত্রহীন হওয়ার চেষ্ঠা করছেন আপনি?”

“কেনো তোমার সাথে”

পুনরায় মেহতাবের বুকে মুখ গুজে আদর বললো, “তাহলে ঠিক আছে”

মেহতাব শব্দহীন হাসলো।বললো, “আজ থেকে তুমিও চরিত্রহীন”

“কিভাবে?”

“কারণ এখন তোমার ঘাড়ে,গলায় আমার চেয়ে বেশি দাগ। অ্যান্ড ইউ নো হোয়াট?এগুলা কোনো রঙের দাগ না। এই দাগগুলো তোমার প্রতি আমার দুর্বলতা, অনুভুতির প্রমাণ।”

তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো আদর।গলায় হাত বুলাতে শুরু করেছে।বারান্দার আশপাশে কোনো আয়না নেই যে দেখবে। অগ্যতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেহতাবের দিকে তাকালো।বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারেনি।কেননা তার চোখে এখনো একরাশ মাদকতা। দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সঙ্গেসঙ্গে।

“তুমি বসো।আমি কফি করে আনি।ঠান্ডা কম লাগবে।”

আদরকে সোফায় বসিয়ে দিলো।চাদর দিয়ে ভালোভাবে ঢেকেও নিয়েছে।মেয়েটি নিজ থেকে একফোঁটা নড়চড় করছে না।সম্পূর্ণ মেহতাবের উপর নির্ভরশীল।মেহতাব চলে যেতে চাইলে আবারো করুন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার দিকে।হয়তো কিছু বলতে চায়।মুখ ফুটে বলার প্রতি অনীহা করছে।

মাথা নামিয়ে দুষ্টু কণ্ঠে মেহতাব বললো, “আমার মনে হচ্ছে এতশত আদর যত্নে তোমার পেট ভরেনি।ক্ষিদে পেয়েছে?”

আদর চোখ নামিয়ে মাথা উপর নিচ করলো। সত্যিই খিদে পেয়েছে তার।মেহতাব আবার বললো,

“বসো।আনছি খাবার”

টি শার্ট গায়ে দিয়ে কিচেনে গিয়েছে মেহতাব।রাতের খাবার তৈরি করা ছিলো।একেকটা ঢাকনা তুলে দেখে খেতে ইচ্ছে করলো না। আদরও খাবে না এই ব্যাপারে সে মোটামুটি শিওর। তৎক্ষনাৎ এক চুলোয় নুডুলস আর আরেক চুলোয় কফি বসিয়ে দিয়েছে। ডাক্তারির পাশাপাশি রান্নায় তার দক্ষ হাত।খুলনায় থাকাকালিন সব নিজেই করেছে।সেই সুবাদে এখনো ঘরের রান্নায় মাঝেমধ্যে হাত লাগায়।পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে রান্না শেষ করে ফিরে এলো।যেমনটা চিন্তা করেছিলো!আদর ঘুমিয়ে পড়েছে।চাদর মুড়ি দিয়ে সোফায় পা তুলে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে। চাঁদের আলো বরাবর পড়ছে তার মুখে।মেহতাব খানিকটা থমকালো।ভালোভাবে দেখে নিলো আদরকে। মায়াবিনী দেখাচ্ছে।একপাশের চুলগুলো ঝুঁকে আছে চেহারায়।ঘুমের ঘোরেও ঠোঁট কামড়ে আছে। প্রকৃতি আর প্রিয়তমার মুগ্ধতা।মধ্যে মেহতাব।নিজেকে সৌভাগ্যের চোরাবালিতে অনুভব করছে।হাতে থাকা ট্রে পাশে রেখে ঝুঁকে বসেছে। চুলগুলো খুব সাবধানে সরিয়ে গালে চুমু খেল।

“তোমাকে এতটা কাছ থেকে অনুভব করার পরও আমার তৃষ্ণা কেনো মেটে না?বরং দ্বিগুণ হয়ে যায়!”

অত্যন্ত কাচা ঘুমে থাকায় সামান্য ফিসফিসানিতে ঘুমটা ভেঙে যায়।চোখ পিটপিট করে খুলছে। মেহতাব আদরকে দেখে হাসির রেখা এটে নিলো নিজ ওষ্ঠদ্বয়ে। গালে হাত বুলিয়ে বললো,

“খাবার এনেছি।সাথে কফিও।উঠে পরো নাহয় ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

ঘুমের জোরে ক্ষুদাকে ভুলতে বসেছিল।মেহতাব মনে করিয়ে দিল।দেহের প্রচণ্ড রকমের ব্যথা নিয়ে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে। মেহতাব সাহায্য করে তাকে উঠতে। নুডুলস এর বাটি নিয়ে উদ্যত হলো খাওয়ানোর জন্য।

আদর বলে উঠে,

“আপনি খাবেন না?”

“খাবোতো ”

“কখন?”

“একটু পর।তোমার খাওয়া শেষে”

“নাহ এখনই খান।”

মেহতাব হেসে বললো, “জানো ঘরের বাচ্চাদের আগে খাওয়া দরকার? বাচ্চাদের খাওয়া শেষে বড়রা খায়”

এক সেকেন্ড দেরি না করে আদর উত্তর দিলো, “আমার বয়স বাইশ বছর।আপনি আমাকে কোন হিসেবে বাচ্চা বলেন?”

মেহতাব আরেক চামচ নুডুলস মুখে পুরে দিয়ে বললো, “আগে বাচ্চা বলতাম তোমার আচার আচরণ,আর চলাফেরার কারণে।এখন বাচ্চা বলবো?…বলবো কেনো বলবো?”

খেতে খেতে অস্ফুট স্বরে আদর বলে, “হুম”

“বিকজ ইউ কান্ট হ্যান্ডেল মি।অবস্থা দেখেছো নিজের?এখন দেখছি তোমার কাছেও আসা যাবে না।”

মেহতাবের কথার অর্থ বুঝতে সময় নিলেও ঠিকই বুঝেছে আদর।দাতে দাত চেপে বড় বড় চোখে চেয়ে রইলো সামনের দিকে। মেহতাবের মুখে দুষ্টু হাসি।আজ নিজের স্বভাবের বাইরে অনেক কাজ করে ফেলছে। কথাবার্তায় দারুন পরিবর্তন।

“এরকম মুখ বোচা করে বসে থেকে লাভ নেই। খাও।দুর্বল হওয়া চলবে না।আগে এজ এ ডক্টর খাবার নিয়ে টর্চার করতাম।কিন্তু এখন?আরো বেশি করবো।”

খাওয়ার রুচিটুকু চলে গেলো।একগাল নুডুলস পুড়ে মাথায় হাত রেখেছে আদর।ভাবছে জীবনে শান্তি নেই কেনো?ছোট্ট একটা জীবন।

মেহতাব গলা পরিষ্কার করে আবার বললো,

“হ্যা সেটা কি ধরনের টর্চার পরিস্থিতি সাপেক্ষে দেখা যাবে।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here