রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ৪৩

0
18

রিদ_মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

৪৩
একটা পরন্ত বিকেল। সময় ৫ঃ৪০ ঘরে। মাত্র কোচিং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছে জুই, মায়া, রাফা। ইতিমধ্যে শ্রেয়া,নাদিয়া অটো নিয়ে উল্টো পথে চলেও গেল। কোচিং থেকে রাফার বাড়ি কাছেই সেজন্য সে আপাতত এই অল্প রাস্তাটা মায়াদের সঙ্গেই হেঁটে যাবে। সারাদিন ক্লাস শেষ করে দেড়টা কি দুইটার দিকে বাসায় ফিরে এক ঘন্টা মতো রেস্ট নিয়েই আবার ফিরতে হয় কোচিং ক্লাসে। রোজকার মতোই আজও সবাই কোচিং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরছিল। স্বাভাবিক নেয় তিনজনের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তাও হচ্ছিল। এর মাঝে হঠাৎ রাফা মায়াকে প্রশ্ন করে বলল…

‘ জানু, জিজু আসেনি এখনো?

মায়া স্বাভাবিক নেয় মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিয়ে বলল…
‘ না।
মায়ার কথা শেষ হতে হতে এরমাঝে কথা বাড়াল জুই, রাফাকে খোঁচা মেরে জুই বলল…

‘ তুই না কাল বললি রিদ ভাই আজকে ফিরবেন? কই ভাইয়া তো আসল না। শুধু চাপা মারলি!

জুইয়ের খোঁচা মারা কথাটা রাফা হাওয়ায় উড়িয়ে দিল যেন। রাফা কাল মায়াকে আশ্বস্ত করেছিল রিদ আজকে চট্টগ্রামে ফিরবে কিন্তু রিদকে ফিরতে না দেখে যদিও রাফার চিন্তিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার কিছুই দেখা গেল না রাফার মাঝে। বরং রাফা কালকের নেয় আজও বেশ কনফিডেন্সের সাথে মায়াকে আশ্বস্ত করে বলল…

‘ জানু রিলাক্স! জিজু মনে হয় আমার মেসেজটা দেখতে পাইনি। দেখতে পেলে এতক্ষণে তোমার টান খেয়ে অবশ্যই চট্টগ্রামে উপস্থিত থাকতো।

রাফার কথায় মায়া তেমন কিছুই বলল না। এতক্ষণ মায়ার মুড ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ রিদের প্রসঙ্গ আসতেই মায়া মন খারাপে ছেয়ে গেল অন্ধকারে। রাফা, জুই দুজন সেটা বুঝতে পেরে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলো না রিদকে নিয়ে কিন্তু জুই ঠিকই রাফাকে প্রশ্ন করে বলল…

‘আচ্ছা রাফা তুই ভাইয়াকে কাল কি এমন মেসেজ করেছিলি? যেটার টান খেয়ে ভাই চলে আসবে মায়ার কাছে? কি ছিল মেসেজে?

জুইয়ের কথায় রাফা পাত্তা না দিয়ে বলল…

‘ ছিল কিছু একটা।

জুই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাফার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বলল…
‘ কি ছিল?
‘ তোকে কেন বলবো?
‘ আমি শুনব তাই।

হুট করেই রাফা দুষ্টু হেঁসে বলল…
‘ যাহ দুষ্টু! খালি ন’টি চিন্তা ভাবনা তোর!

রাফার ভাব ভঙ্গিমা দেখে হতবুদ্ধি হয়ে গেল মায়া আর জুই। এইখানে ন’টি চিন্তা ভাবনার কি আছে সেটা বুঝতে না পেরে জুই হতবাক গলায় বলল…

‘ কি এমন বললাম যে ন’টি চিন্তা ভাবনা হয়ে গেল? তুই মেসেজ লিখতে পারবি আর আমি সেটা জানতে পারব না? সত্যি করে বলতো কি পাঠিয়েছিস মেসেজে?

রাফা আগের নেয় দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল…

‘ টপ সিক্রেট দোস্ত! বলা যাবে না! এর জন্য বিবাহিত মহিলা প্রয়োজন! তুই তো সিঙ্গেল! সিঙ্গেল পাবলিক শুনা নিষেধ।

রাফা কথায় জুই ১০০% শিওর হলো রাফা নিশ্চিত উল্টাপাল্টা কিছু একটা ঝামেলা করেছে রিদের সঙ্গে। সন্দেহের বশিতা হয়ে মায়াও কিছু বলতে চাইল রাফাকে কিন্তু তাঁর আগেই জুই সন্দিহা গলায় আবারও বলল….

‘ আমি সিঙ্গেল হলে তুই কি? তুইও তো সিঙ্গেল, অবিবাহিত মহিলা। তাহলে তুই যেভাবে মেসেজ লিখলি সেভাবে না-হয় আমাকেও বল শনি!

জুইয়ের কথায় রাফা বেশ হেয়ালি করে বলল…

‘ মেসেজটা আমি করেছি সেটা তুই জানিস! জানু জানে! রিদ জিজুতো আর জানে না। বরং তিনি জানেন, উনার বিবাহিত বউ উনাকে বার্তা পাঠিয়েছেন কিছু লিখে। তাহলে আমি এখানে দোষী হলাম কি করে? সবথেকে নিষ্পাপ মানুষ তো আমিই, তাই না বল?

এতক্ষণ চুপ করে রাফা কথা শুনলেও অবশেষে মায়াও খানিকটা রেগে গিয়ে বলল…

‘ তুই কি বলবি না রাফা?

রাফার আগের নেয় হেয়ালি করেই বলল…

‘ আরে জানু তুমি কষ্ট করছো কেন? ভাইতো এমনিতেই তোমাকে মেসেজের ব্যাখা দিবে। একটু অপেক্ষা করো জানু! প্রাক্টিক্যালি বুঝে যাবা।

রাফার কথায় হতাশ হলো মায়া। বুঝতে পারলো সহজে রাফাকে দিয়ে বলানো যাবে না কোনো কিছু। সেজন্য হতাশ মায়া খানিকটা নরম সুরেই রাফাকে ইমোশনাল করতে চেয়ে আকুতি স্বরে বলল….

‘ রাফা বল না দোস্ত। এমন করিস কেন? তোকে আমি ভালোবাসি না বল?

মায়ার কথায় গলল না রাফা। বরং পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত পালাতে চেয়ে বলল…

‘ ওকে, আই লাভ ইউ টু জানু। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তবে এখন টাটা বাই বাই জানু। আমার বাড়িতে যেতে হবে দ্রুত। কাল দেখা হবে জানু। আজ আসি, বাইইই।

বলতে বলতে রাফা দৌড়ে রাস্তা অপর পাশে যেতে লাগল। রাস্তার মাঝে রাফার দৌড়ে দেখে ভয়ে জুই মায়া দুজনই চিৎকার করে উঠলো রাফাকে সাবধানে যেতে বলে। চঞ্চল রাফা দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে আবারও চেঁচিয়ে বিদায় নিল মায়া আর জুই থেকে। মায়া রাফাকে সহিসালামত চলে যেতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তারপর আর কেউ রাফার পাঠানো মেসেজটা নিয়ে আলোচনা করলো না। যেখানে রিদ আসেনি সেখানে রাফা কি মেসেজ পাঠিয়েছে সেটা জেনেও বা কি হবে। কাল রিদের বাবা মায়াকে দাওয়াত করে যাওয়ার পরপরই রাফার জোড়াজুড়িতে মায়া বেশ কিছু কেনাকাটা করে শশুর বাড়ির অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আজ সকালে দিকে জুইকে দিয়ে আরিফ জানায় মায়া আর জুইকে খান বাড়িতে রেখে আসবে আগামীকাল। এর মানে মায়াকে কাল ওর শশুর বাড়িতে যেতে হবে। আর ভাগ্যক্রমে যদি কাল রিদ খান বাড়িতে আসে তাহলে যেভাবেই হোক মায়া রিদের সঙ্গে কথা বলবে। মায়ার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা ভাবনার মাঝেই জুই রিক্সার ডাকল। দুবোন পাশাপাশি বসতেই রিক্সার চলল জুইয়ের বলা এড্রেসে। অন্যমনস্ক মায়ার কোলের উপর ব্যাগটা রেখে দু’হাতে ব্যাগটা চেপে রাখল। দৃষ্টি ব্যস্ত নগরীর অসমাপ্ত রাস্তার দিকে। কিছু পথ আসতেই চোখে পড়লো পরিচিত মানুষদের দলবেঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে। মানুষ গুলোকে মায়া চিনে। ছেলেগুলো সবাই রিদের লোক। মায়াকে তাঁরা সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। সেজন্য এদের কাউকে না কাউকে মায়ার আশেপাশেই সবসময় দেখা যায়, এজন্য মায়া চিনে এদের। তাছাড়া রিদ যখনই চট্টগ্রামে আসে তখন তাদের বেশি দেখা যায় এই রাস্তা ঘাটে। বিশেষ করে রিদের আশেপাশে দেখা যায় বেশি। কিন্তু আজকে এই অসময়ে সবাইকে রাস্তায় একজোট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মায়া মনে করলো হয়তো ওর শশুরের নির্বাচনের কোনো কাজে তাঁরা একত্রে দাঁড়িয়েছে। অন্যমনস্ক মায়া চোখ ঘুরিয়ে একটু সামনে তাকাতেই চমকে উঠার মতোন লাফিয়ে উঠলো রিদের সেই বিল্ডিংয়ের নিচে আসিফকে দাঁড়িয়ে কারও সাথে কথা বলতে দেখে। খুশিতে আত্মহারা মায়া তৎক্ষনাৎ জুইয়ের হাত চেপে খানিকটা উত্তেজিত গলায় বলল…

‘ জুই! জুই! এটা আসিফ ভাই না?

মায়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে জুই সামনে থাকাতেই দেখল আসিফ মধ্যে বয়স্ক একটা লোকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে রিদের ছেলেপেলে গুলো। কিন্তু আশেপাশে কোথাও রিদকে দেখা গেল না। আসিফ দেখে জুইও খানিকটা চমকিত গলায় বলল…

‘ হ্যাঁ এটাতো আসিফ ভাই-ই।

জুইয়ের কথা শেষ হতে দেরি কিন্তু মায়ার পুনরায় উত্তেজনায় চেঁচাতে দেরি হলো না রিক্সাওয়ালার উদ্দেশ্য। অস্থির ভঙ্গিতে মায়া রিক্সার থামাতে চেয়ে বলল…

‘ চাচা রিক্সার থামান প্লিজ! রিক্সার থামান!

বলতে বলতে রিক্সার গতি কমে আসলো ধীরেই। কিন্তু অধৈয্যের মায়ার সইলো না। রিক্সার গতি তখনো পুরোপুরি থামেনি এরমাঝেই অধৈর্য্যের মায়া চলন্ত রিক্সা থেকে লাফিয়ে পরলো ফুটপাতে। শরীরের ব্যালেন্স রাখতে না পারাই ব্যথা পেল হাতের কুইনে। কিন্তু তারপরও অস্থির মায়ার দৌড় কমলো না৷ বরং মূহুর্তের মাঝে আবারও ফুটপাত থেকে ব্যাগ উঠিয়ে দৌড়াল সেদিকে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে মায়ার কান্ডে দেখে আতঙ্কিত হলো জুই। রিক্সায় বসে থেকেই মায়াকে সাবধান করে অস্থির গলায় চেঁচিয়ে বলল…

‘ মায়া আস্তে যাহ!

কে শুনে কার কথা, চোখের পলকে মায়াকে আসিফদের উদ্দেশ্য দৌড়াতে দেখে জুই তাড়াহুড়োয় রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মেটাল দ্রুত। মায়ার পিছন পিছন সেও ছুটল। আসিফ তখন নিহাল খানের সহকারী মুজাহিদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলছিল নির্বাচনের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। রিদকে নিয়ে আসিফ রাতেই চট্টগ্রামে ফিরেছিল। হঠাৎ করে রিদের চট্টগ্রামে আসার কারণটা আসিফ জানে না। সাহস করে রিদ থেকে জানতেও চাইনি। আসিফের প্রথমে মনে হয়েছিল হয়তো রিদ সব মনমালিন্যতা ভুলে বাবার নির্বাচনের কাজে হাত লাগাতে চট্টগ্রামে এসেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম আসার পরও নিজের বাবার বাড়িতে না গিয়ে বরং মুরাদপুদ থেকে যাওয়ার কারণে বুঝতে পারলো রিদ খান আসলে বউয়ের টানে চট্টগ্রামে মাঝরাতে উপস্থিত হয়েছে। যদিও বউয়ের সাথে তার এখনো দেখা হয়নি। তবে যেকোনো সময় দেখা করতে পারে সেটাও বুঝতে পারছে আসিফ। তবে এই মূহুর্তে সবাইকে নিয়ে খান বাড়িতে যেতে বলেছে রিদ। কালকের ফাংশনের জন্য সবার সেখানে উপস্থিত থাকা জরুরি। এজন্য রিদের ছেলেপেলে গুলো সবাই উপস্থিত হয়েছে রিদকে খান বাড়িতে নিতে এসে। অবশ্য রিদের ছেলেপেলে গুলো সবাই বিগত একসপ্তাহ ধরে খান বাড়িতেই আছে নিহাল খানের সঙ্গে দিয়ে। রিদ পূর্ব আদেশ ছিল সবাইকে তাঁর বাবার সঙ্গে দিয়ে খান বাড়িতে থাকতে। আজ হঠাৎ রিদকে এতোদিন পর চট্টগ্রামে ফিরতে দেখে সবাই উপস্থিত হয়েছে তাদের ভাইকে নিতে। ইতিমধ্যে তাঁরা সবাই বেড়িয়েও পরতো কিন্তু হঠাৎ রিদের ফোন আসায় রিদ বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি নিচে গিয়ে দাঁড়াল। প্রয়োজনীয় ফোনালাপ শেষ করছিল বলে আসিফসহ বাকিরা রিদের অপেক্ষায় বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। এরমাঝে হঠাৎ মায়াকে খুবই কাছাকাছি দৌড়ে আসতে দেখে চমকাল আসিফ। ঘাড় ঘুরিয়ে রিদকে ডাকল মায়ার খবর দিতে….

‘ ভাই ভাবি এসে…

আসিফের কথা কানে যেতেই রিদ ফোন কানে নিয়েই ঘুরতে চাইল কিন্তু তার আগেই মায়া আসিফকে ক্রস করে গিয়ে পা ফেরে লাফিয়ে উঠলো রিদের কোলে। ভালোবাসায় উচ্চাসনে বলল…

‘ আপনি এসেছেন! আই মিস ইউ।

অপ্রস্তুত রিদ ঠিক করে মায়াকে দেখার সুযোগটা পযন্ত পেলনা তার আগেই হাত থেকে ফোন পরে শরীরে খৈ হারাল। মায়াকে নিয়ে পিছুপা হয়ে ধপাস করে বসল সিঁড়িতে। বামহাতে সিঁড়ি রেলিং চেপে দুজনের শরীর তাল ধরে রাখতেই রিদের ডানহাতটা চলে গেল মায়ার পিঠে। মায়া দুহাতে রিদের গলা জড়িয়ে মুখ উঠিয়ে পরপর চুমু খেল রিদের এগাল থেকে, ঐগাল। আবারও গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখতে রাখতে বলল…

‘ আই লাভ ইউ! এত্তো গুলা মিস করেছি আপনাকে।

মায়ার কথায় রিদ শক্ত হয়ে বসে রইল। মূহুর্তের মাঝে কি থেকে কি হলো বুঝতে যেন কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল। কিন্তু বুঝতে পেরেই যেন বুকের ভিতরটা ধপাস ধপাস করে লাফাতে লাগল।
মনে হচ্ছে বুক ছিঁড়ে হৃদপিণ্ডটা বেড়িয়ে আসবে বউয়ের টানে। শরীর তাজা রক্ত যেন টগবগ করছে এতোদিন পর বউয়ের সানিধ্য পেয়ে। রিদ ঐ অবস্থায় তাকাল সামনে, দেখল আসিফ হতবুদ্ধি হয়ে বড় বড় চোখ করে এই দিকটায় তাকিয়ে। রিদের দৃষ্টি সঙ্গে মিলে যেতেই আসিফ চোরের মতোন পালাল জায়গায় ছেড়ে। সঙ্গে বয়স্ক লোকটাকে নিয়ে গেল। রাস্তা পাশাপাশি বিল্ডিং হলেই সামনের গেইটের জন্য রাস্তা বা আশেপাশের মানুষজন দেখা গেল না। আসিফ বয়স্ক লোকটাকে নিয়ে চলে যেতে যেতে আস্তে করে গেইটটাকে টেনে গেল। রিদের অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও মায়া শক্ত করে রিদকে জড়িয়ে বসে থেকে আবারও বলল….

‘ আমি অনেক গুলা সরি। আর জীবনেও আপনার কথার অবাধ্য হবো না। প্রমিস! তারপরও আমাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না। আমার অনেক কষ্ট হয়।

বলতে বলতে মায়া চোখের পানি গড়াল রিদের কাঁধে। এতোদিন পর রিদের সানিধ্য পেয়ে কিভাবে রিদকে বুঝাবে সেই দিশেহারা অশ্রু জড়াল গাল বেয়ে। দিশেহারা মায়া রিদকে জড়িয়ে পুনরায় চুমু খেল রিদের গালে। দীর্ঘদিনের মান অভিমানে মায়া কান্নায় ফুপিয়ে রিদের গালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলে রিদ খানিকটা নরম হয়ে আসল। রেলিং ছেড়ে বামহাতটা ক্রমশ নেমে আসে মায়ার কোমরে। চোখের পলকে যেন রিদের দু’হাতের অবস্থান হয়ে গেল মায়ার জামা বেধ করে উম্মত কোমরে। শক্তপোক্ত উষ্ণহাতে ছুঁয়া পেতেই মায়া সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো শিহরণে। রিদের গাল থেকে কপাল উঠিয়ে বসতে চাইলে রিদের হেঁচকা টান পরল মায়ার কোমরে। মূহুর্তে মিশে গেল দুজন। মায়ার ঠোঁট ভাজল রিদের গালে। তখনই শুনা গেল রিদের মোহাচ্ছন্ন কন্ঠ। মায়াকে আদেশ স্বরুপ বলল…

‘ ওয়ান্স মোর!

মায়া কেঁপে উঠলো। শিহরিত হলো রন্ধ্রে রন্ধ্রে। রিদের কথায় মায়ার লজ্জা পাওয়ার কথা ছিল অথচ তেমন কিছুই হলো না। বরং দুজনের মান অভিমান ইতি ঘটাতে চেয়ে রিদের কথায় তাল মেলাল। রিদের গলা জড়িয়ে পুনরায় শব্দ করে চুমু খেল রিদের এগাল ঐগাল, দুগালে। মায়া থেমে যেতে চাইলে রিদ পুনরায় একই ভাবে বলল…

‘ এগেইন।

রিদের কথায় অনুযায়ী মায়ার একই কাজ পুনরায় করলো। আবারও থেমে যেতে চাইলে একই ভাবে রিদ আবারও আদেশ করলো…

‘ এগেইন।

বারবার রিদকে এগিইন, এন্ড এগিইন বলতে দেখে এবার আর মায়া থামল না বরং নিজের ইচ্ছেতে রিদের পুরো মুখে ঠোঁট বুলাল পরপর। মায়ার সানিধ্য পেয়ে রিদ নিজেও খৈ হারাল। মায়া কোমর টেনে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে মস্তিষ্ক তড়াক করে জ্বলে উঠলো আশেপাশে অবস্থান দেখে। এই মূহুর্তে দুজন সিঁড়িতে বসে। যেকোনো সময় উপর হতে কেউ নিচে নামতে পারে আবার বাহির থেকেও কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। এমন না দুজন অবৈধ বা লোকসমাজে ভয় রিদের আছে। কারও ভয় রিদের নেই। কিন্তু বউ তাঁর টু পারসোনাল অংশ। আর রিদ তাঁর পারসোনাল কোনো কিছু পাবলিক করতে চাই না। তাঁর ঘনিষ্ঠ মোমেন্ট গুলোও তাঁর বেডরুমে বাহিরে যাবে না কখনো। রিদ আশপাশটা লক্ষ করেই মায়াকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। মায়াকে কোল থেকে নামাতে নামাতে বলল…

‘ নরমাল মানুষের মতো জড়িয়ে ধরা মনে হয় তোমার ডিকশনারিতে নাই না? যখন তখন বানরের মতোন লাফিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে মন চাই শুধু।

মায়া গায়ের জামাটা টেনে ঠিক রিদের দিকে তাকাল। রিদের কথায় কিছু বলল না। রিদকে কিভাবে বুঝাবে মায়া এই মূহুর্তে কতোটা খুশি তাকে দেখে। এমন লাফিয়ে ঝাপিয়ে না পড়লে কি শান্তি লাগে? রিদ ঝুঁকে ফ্লোর থেকে তাঁর ফোন আর মায়ার ব্যাগ উঠিয়ে মায়ার দিকে এগিয়ে দিতেই মায়া সেটা হাতে নিতে নিতে মিনমিন গলায় বলল…

‘ আমি আপনাকে অনেক মিস করছিলাম।

মায়ার কথায় রিদ মায়ার আদলে মুখশ্রীর দিকে তাকাল। এক দৃষ্টিতে মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প সময় নিয়ে বলল…

‘ বাসায় যাও!

রিদের কথায় মায়া অস্থির ভঙ্গিতে নাহুচ করে তৎক্ষনাৎ বলল…

‘ না আমি কোথায় যাব না। আপনার সাথে থাকবো।

মায়ার কথায় রিদ ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল…

‘ আপনার সাথে থাকার জন্যই তো আসলাম।
তবে এখন বাসায় যান। রেডি হোন! সন্ধ্যায় আমি গাড়ি পাঠাবো আপনার শশুর বাড়িতে চলে আসবেন।

রিদের কথায় মায়া খানিকটা সন্তুষ্ট হলো। তবে রিদের মনোভাব বুঝতে না পেরে বলল….

‘ আপনি আমার উপর রাগ করে নেই তো?

‘ সেটা রাতেই বুঝবেন।

‘ আমি থাকি না আপনার সাথে। আমাকে সঙ্গে নিলে কি হয়?

রিদ গম্ভীর মুখে বলল…

‘ বাসায় যান। রাহাত দিয়ে আসবে আপনাকে।

মায়া রিদের সঙ্গে থাকতে চেয়ে মিনমিন করে পুনরায় বলতে চাইল…

‘ আমি থাকি …

মায়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে রিদ গম্ভীর গলায় বলল….

‘ আউট!

#চলিত…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here