#যাতনা_আমার (পর্ব- ২৫)
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
সেদিনের ফোনকলের পর কেটেছে পাঁচ দিন। সময় চলছে নিজস্ব মতো। সেই ফোন কলের পরের সেই রাতের মুহূর্ত টাকে ইনায়া এখনো মনে ভাবতে থাকে। সেকি তবে ঠিক করেছিলো? নাকি না। ভেবেও কোনো ফুরসত পায়না ইনায়া। তবুও মনে একটা শান্তি বিরাজ করে তার জীবনে কেউ না জড়ালেই ভালো। সে একাই নিজের জন্য লড়তে পারবে। লাগবে না আর কাউ কে। খুকখুক কাশির শব্দে সামনে তাকায় ইনায়া। আর তার ভাবনারা গত হয়। নিধির দিকে তাকিয়ে ইনায়া ম্লান হাসলো। তার কষ্ট হয় মেয়েটাকে এমন দেখে। হাসি খুশি চঞ্চল মেয়েটা একেবারে মিশে গেছে কোনো শান্ত নদীর জ্বলে। কলেজ কেন্টিনে বসা দুজনেই। ইনায়া জোর করে নিধিকে নিয়ে এসেছে। কদিন যাবত ধরে যে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া নেই তা নিধির মুখ দেখলেই বোঝা যায়। ইনায়া শরবতের গ্লাস টা সড়িয়ে। স্যুপের বাটিটা নিধির দিকে এগিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-” ঠান্ডা হয়ে আসছে খেয়ে নাও। ”
নিধি মলিন হেসে মাথা নাড়ায়। যার অর্থ হলো সে খাবেনা। ইনায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
-” ভালোই তো ঠান্ডা জ্বর বাঁধিয়েছ। সামনে যে পরিক্ষা তার খবর রাখো? ”
নিধি ক্লান্ত ভঙ্গিতে চেয়ারের গায়ে গা এলিয়ে দেয়। তারপর হতাশ কন্ঠে বলে ওঠে,
-” জীবনের মূল্যবান পরিক্ষাতেই ফেল হয়ে বসে আছি। আর অন্য পরিক্ষা দিয়ে কি করবো আমি? জানো? আমি কখনো ভাবিনি ইশান ভাইয়ের মনে অন্য কেউ আছে। তাকে দেখেও কেউ ধরতে পারেনি। আর ভাইয়া আমার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করবে? তাও ধারনার বাইরে ছিলো। ”
-” তোমার ভাগ্য ভালো নয় কি? বিয়ের আগেই মুক্তি হলে। না হলে আমার মতো ঝুলে থাকতে হতো। ”
ইনায়ার কথায় আর কোনো কথা বলে না নিধি। সব বুঝেও মনকে মানাতে পারছে না সে। তার এই সব অনুভূতি তো সব বেহুদা। যার জন্য এসব ব্যক্ত করবে সেই অন্যজনের অনুভুতির জোয়ারে ভাসছে।
ইনায়া শরবতের গ্লাসটায় শেষ চুমুক দিয়ে নিধির দিকে শান্ত নজরে তাকায়। মেয়েটা উদাসীন চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইনায়া প্রসঙ্গ বদলাতে হালকা হেসে বলে ওঠে,
-” তা বাঁদর মেয়ে? ঠিকই তো ফাহাদ ভাইকে নাকানিচুবানি খাওয়ালে? তবে যাই বলো কাজটা ঠিক করোনি তুমি। বিষয়টা ওনার প্রফেশনাল দিক দিয়ে আঘাত হেনেছে। ”
চমকে উঠে নিধি। তার জীবনের যাতাকলে পরে ফাহাদের যে বারোটা বাজিয়ে ছিলো, তা ভুলেই গেছিলো। সে এবার সোজা হয়ে বসে চমকিত নয়নে ইনায়ার দিকে তাকায়।
-” তুমি কি করে জানলে? হ্যাঁ? ”
-” ফাহাদ ভাইয়ের থেকে শুনেছি। তিনি খুব চিপায় ছিলো এতোদিন। প্রেস মিটিং করে বিষয়টা হ্যান্ডেল করেছে। ”
ইনায়ার কথায় মুখ বাকায় নিধি।
-” ভালোই হয়েছে। যে লোক মাসে মাসে দুই তিনটা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ডেট করে, তাদের এই ভাবেই সবার কাছে ভাইরাল করা দরকার। ইশ্ আমার দুঃখে আমি বিষাদিনী হয়ে, ওর দুঃখ টা উপভোগ করতে পারলাম না। ”
-” কিন্তু যতোটুকু জানলাম। মেয়েটা ভাইয়ের স্কুল ফ্রেন্ড ছিলো। একটা ঝামেলার জন্য মেয়েটা ভাইয়ার সাথে মিট করেছে। ”
বলেই ইনায়া ফোন থেকে একটা ভিডিও ক্লিপ বের করে নিধির হাতে দেয়। ভিডিওটা মূলত নাভান আর তিলকের প্রেস মিটিং। তিলকের বাবা আসাদ তালুকদার ও মা দিয়া সাহা। তারা সেপারেশনে আছে। আসাদ তালুকদার হিন্দুধর্মাবলম্বী দিয়া সাহা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বারো বছরের সংসার ভেঙে দু’জনেই সেপারেশন নিয়েছিল। তিলক মূলত বাবার সাথেই ছিলো। মায়ের সাথে খুব কম সময় দেখা হতো তার। দিয়া সাহা এখন প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে হসপিটালে আছেন। তিলক বাবার কাছে চিকিৎসার টাকা চাইলে,তিনি সোজা নাকচ করেন। তাই তিলক বাধ্য হয়ে সেদিন ফাহাদকে ডেকেছিলো। তার থেকে টাকা ধার নেওয়ার জন্য। পুরো ঘটনা শুনে নিধি ‘থ’ হয়ে যায়। সেদিন তিলকের ফাহাদের সাথে আচরণ দেখে সে নিশ্চিত ছিলো। তারা রিলেশনে আছে। কিন্তু হলো তো উলটো। সে ফাহাদ কে খারাপ বানাতে গিয়ে আরো ফেমাস করে দিয়েছে। মুখটা অন্ধকার করে ইনায়া কে ফোন ফেরত দেয় নিধি। তারপর কিছুটা ভয় নিয়ে বলে,
-” এখন কি হবে বলতো ভাবি? মেয়র তো আমাকে চিনে ফেলেছে। এবার নির্ঘাত আমাকে জেলে ঢুকাবে। ”
ইনায়া হাসলো। নিধির চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে বলে ওঠে,
-” চিন্তা করোনা। ভাইয়ার সামনে পরলে একটু করে বকা ঠিক দিবেন। কিন্তু বেশি কিছু করবেনা। ”
নিধি মুখ মলিন করে মনেমনে পন করে। সে আর মেয়র ফাহাদ করিমের সামনে ভুলেও পরবে না। ইনায়া এবার তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-” আমার টিউশনে যেতে হবে। কালও যেতে পারিনি। তুমি বাড়ি চলে যাও। ”
নিধি এবার একটু ভেবে হাই তুলে বলে ওঠে,
-” আমার ফ্রেন্ড আশার বার্থডে ছিলো কাল। আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। আজ যাবার আগে ওর বাসা হয়ে যাবো। গিফট এনেছিলাম একটা। দেখি এখানে সেখানে গিয়ে মনটা শান্ত করতে পারি নাকি? বাড়িতে ফিরলেই ইশান আর তিথির বিয়ে। এইসব শুনতে আমার আর ভালো লাগেনা। ”
আশা নিধির মুটামুটি ভালো বন্ধু। তারা এক সাথে ইন্টার শেষ করেছে। ইনায়া কিছুক্ষন ভেবে বলে ওঠে,
-” আজ তো গাড়িও আনলে না? ”
-” সমস্যা নেই আমি ঠিক চলে যাবো। ”
ইনায়া আর দ্বিমত প্রকাশ করেনা। দুজনেই কলেজ থেকে বেড়িয়ে যার যার রাস্তায় হাঁটতে থাকে।
,
,
তিথি আজ বাড়িতে এসেছে তিনদিন হবে। আগামীকাল ইশানদের বাড়ি থেকে মানুষ আসবে ঘরোয়া ভাবে আংটি পড়াতে। সব কিছু ভাবতেই ভিষণ খুশি লাগছে তিথির। ক’জন ভাগ্যবতী পারে? নিজের মানুষকে আপন করতে? বাড়িতে এসে প্রথম জায়ান আর ফাহাদের সাথে তিথি সমস্ত কথা শেয়ার করে। দু’ভাই মিলে মিজানুল করিম আর মিনারা বেগম কে রাজি করায়। বিকালের দিকে তিথি ফাহাদ আর মিনারা বেগমের সাথে টিভি দেখায় ব্যস্ত ছিলো। ফাহাদ আজ বাড়ি থেকে বেরোয় নি। যেখানে, তার বা হাত জায়ান আছে। সেখানে কিসের টেনশন? তখন মিজানুল করিম তার পাশে এসে বসে। অতঃপর মিনারা বেগমের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে ওঠে,
-” আমার জন্য আদা চা আনো। মাথাটা কেমন যেনো ধরে আছে। ”
তিথি পাশের কেটলি থেকে আদা চা ঢেলে মিজানুল করিমের দিকে এগিয়ে দেয়।
-” নাও আদা চা। আজ আমি চা বানিয়েছি। হালকা ঠান্ডা লেগেছে। ”
-” বলিস কি? কাল অনুষ্ঠান, আজকেই অসুস্থ হয়ে পড়লি? তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খা। ”
মিজানুল করিম অস্থির হয়ে বললেন। তিথি বাবার কথায় পাত্তা দেয়না। সামান্য সর্দি, কেটে যাবে। মিনারা বেগম চিন্তিত মুখে মিজানুল করিমের দিকে পাকোড়ার বাটিটা এগিয়ে দেয়। ফাহাদ সেটা লক্ষ্য করে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” কি ব্যাপার মা? কাল থেকেই তুমি কি কোনো কারনে আপসেট? ”
সবার চোখ মিনারা বেগমের দিকে পরে। তিনি মলিন মুখে বলে ওঠে,
-” ভাবছি, মির্জাদের সাথে সম্পর্ক করা কি ভালো হবে? ”
মিনারার কথায় অবাক হয় সবাই। তিথি একটু ভয়ে থাকে। তার মা প্রথম থেকেই কেমন জানি বিয়ের ব্যাপারে নাখোশ। সে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ফাহাদ তাকে ইশারায় চুপ করায়।
-” তুমি কি নাভানের জন্য এমনটা ভাবছো? শোনো মা। নাভান এমনিতে ভালো ছেলে। মির্জা বাড়ির সবাই খুব ভালো। শুধু ইনায়ার বিষয়টা কে কেন্দ্র করে তাদের কে তুমি জার্জ করতে পারো না। ”
মিনারা বেগম চুপ হয়ে যান। মিজানুল করিম এবার গর্জে উঠে বলে উঠেন,
-” ইশানও খুব ভালো ছেলে। তরুন বিজনেস ম্যান। আমার মেয়ের জামাই তো এমনই হওয়া চাই। অন্তত এবার নিজের মতো কাউকে পাবো। সবাইকে বলতে পারবো আমার জামাই আমার মতো তুখোড় বিজনেস ম্যান। ছেলে গুলো তো এর যোগ্যও না। এই প্রথম বার আমার মেয়ে কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ”
নিজের উপর কথা আসায় ক্ষিপ্ত হয় ফাহাদ। তার বাবা তাদেরকে খোঁচা ছাড়া কোনো কথাই বলেনা।
তিথি এবার মিনারা বেগমের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-” ইশানের বিয়ে নিধির সাথে ঠিক করছিলো তার পরিবারের সবাই। কিন্তু আমার কথা বলাতে তারা সবাই রাজি হয়েছে মা। আর কোনো কনফিউশান না রাখাই ভালো। ”
মিনারা বেগম কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়। মিজানুল করিমও অর্ধেক চা রেখে স্ত্রীয়ের পিছনে যায়। কথাবার্তা এখনই সব খোলাসা করা দরকার। নিধির ইশানের বিয়ের কথা বলা হয়েছিলো শুনে ফাহাদ চমকে উঠে। তিথিকে বাজখাঁই গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” মাথা ঠিক আছে? নিধির আর ইশানের বিয়ে ঠিক করা হয়েছিলো? নিধি রাজি ছিলো বিয়েতে? ”
তিথি মাথা ঝাকিয়ে সায় জানায়। ফাহাদের মুখ রক্তিম হয়। আজ যদি তিথির সাথে ইশানের সম্পর্ক না থাকতো, তাহলে কি হতো? ফাহাদের ভাবনার মাঝেই জায়ান বাড়িতে ঢুকে। মুখ তার গম্ভীর। ফাহাদের পাশে বসে ঘন স্বরে বলে ওঠে,
-” এনগেজমেন্টের জন্য ছোটখাটো করে স্টেজ করবো বাইরে। হোক না দু বাড়ির লোক। মানুষ কম হলেও আয়োজনের ত্রুটি রাখা যাবেনা। ”
জায়ানের কথার সাথে মিল দেয় ফাহাদ ও। সে তিথির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-” তোর ফ্রেন্ড’দেরও ডাকিস কিন্তু। আর ইনায়াকে বল আজকেই চলে আসতে। ”
তিথি এবার দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েসয়ে বসে। তারপর মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
-” আমি ওকে আমার সাথেই আসতে বলেছিলাম। ও সাফ সাফ জানিয়েছে আসবেনা। এমনকি কালকেও না। ”
-” কেন আসবেনা? ওকে জোর করবি আসার জন্য। নাহলে খারাপ হবে। ”
বাজখাঁই গলায় জিজ্ঞেস করে ফাহাদ। তিথি কোনো উত্তর দেয় না। জায়ান হালকা বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
-” কি দরকার, অযথা ওকে তেল মারার? যে যেমন থাকতে চায় তাকে তেমনি রাখতে দেওয়া উচিত। ”
ফাহাদ আর তিথি ভুত দেখার মতো জায়ানের পানে তাকায়। অতঃপর বিস্ময় নিয়ে ফাহাদ ব’লে,
-” তুই বলছিস এই কথা? ঝগড়া করেছিস নাকি দু’জনে? ”
-” ওর সাথে আমার কি? যে ঝগড়া করবো? আমার মতো গুন্ডা বদমাশের ওর সাথে না জরানোয় অনেক ভালো। ”
কথাটা বলে জায়ান লম্বা লম্বা কদম ফেলে উপরে চলে যায়। ফাহাদ আর তিথি আশ্চর্য হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। জায়ানের এমন কথা তাদেরকে ভাবাচ্ছে প্রচুর। জায়ান রুমে এসে বাঁকা হাসে। তারপর মুচকি হেসে বিরবির করে বলে,
-” তুমি নামক ঘুড়ি টা কে উড়িয়ে দিলাম আকাশে। চিন্তা করোনা, তোমার শেকড় নামক লাটাই থাকবে আমার হাতে ততক্ষণ। যতোক্ষণ না সুতো কেটে উড়ে না যাও তুমি। ”
,
,
শুদ্ধ আর সচ্ছ কে পড়িয়ে ফেরার জন্য অটো গাড়িতে উঠে বসে ইনায়া। মোবাইল হাতে নিতেই দেখতে পায় আনোন নাম্বার থেকে দশটা কল তার ফোনে। ইনায়া অবাক হয় নাম্বার টা তার জানা নেই। সাথে সোহানা মির্জার ও কল পায় সে। ফোন সাইলেন্ট থাকা বিধায় কোনো খবর পায়নি সে। ইনায়া ভাবে হোস্টেলে ফিরে ফোন দেওয়া যাবে। তাই ইনায়া অপেক্ষা করে ফেরার। মোরে আসতেই অটোর ভাড়া মিটিয়ে দেয় ইনায়া। তারপর ধির সুস্থে হাটতে থাকে। হোস্টেলের সামনে আসতেই চমকে উঠে ইনায়া। সামনে দাঁড়ানো নাভান আর সোহানা মির্জা। ইনায়াকে দেখতেই সোহানা মির্জা দৌড়ে তার কাছে আসেন। চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,
-” কই ছিলি? ফোন ধরিসনি কেন? নিধি কোথায়? ”
ইনায়া চমকে যায়। নিধি কোথায় মানে? নাভানের মুখে তাকিয়েও তাকে প্রচন্ড বিচলিত দেখায়। ইনায়া ধীরেসুস্থে জবাব দেয়,
-” টিউশনে ছিলাম, তাই ফোন সাইলেন্ট ছিলো। নিধি কি এখনো বাড়ি যায়নি? ”
সোহানা মির্জা এবার যেন ভেঙে পড়লেন। তিনি শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-” নিধি কলেজ থেকে কখন বেড়িয়েছিলো। ”
ইনায়া নিধির সাথে সকল কথা আশার বাড়িতে যাওয়ার কথা সবই বলে। প্রায় সন্ধে ঘনিয়ে আসছে এতোক্ষণে তো নিধির বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা। ভাবছে ইনায়া। নাভান এবার ধির পায়ে তাদের সামনে আসে সোহানা মির্জার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
-” হয়তো নিধি ফ্রেন্ডের বাড়িতে আছে। তুমি বাড়ি যাও মা। আমি গিয়ে দেখছি। ”
বিচলিত মন যেন শান্ত হয় সোহানার। মেয়েটা কোনোদিন এতো দেরি করে বাড়ি ফিরেনা। তাই সে এমন চিন্তায় পড়ে ছিলো। সোহানা গাড়িতে উঠার আগে ইনায়া কে বলে আশার বাড়ির এড্রেস দিতে। ইনায়া সায় জানায়। গাড়ি চলে যেতেই নাভান ইনায়ার পানে তাকায়। ইনায়া ফোন হাতে অন্য কারো সাথে কথা বলছে। লাল চুড়িদার পরনে ইনায়া, কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো বাঁধন হারা। নাভানের মস্তিষ্ক তখন একটা কথাই বলে। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা তার বউ। ইনায়া কথা শেষ কে নাভানের দিকে ফিরে। কালো শার্ট পরহিত নাভানের ফর্সা তক উজ্জ্বল মান। সন্ধের আধারেও তা ঝলকাচ্ছে। ইনায়া ধির পায়ে এগিয়ে স্ফুট কন্ঠে বলে উঠে,
-” চলুন। ঠিকানা পেয়েছি। ”
গাড়িতে উঠে বসে দুজনেই। কেউ কোনো কথা আর বলে না। অন্য একজনের থেকে এড্রেস জোগাড় করেছে ইনায়া। সেই ডিরেকশন অনুযায়ী গাড়ি চালাচ্ছে নাভান। চোখেমুখে চিন্তার আভাস। চারদিকে আধার বাড়ছে। নিধির নাম্বার টাও বন্ধ। অজানা আশংকায় দুজনের মন আনচান করে উঠে। শুধু মনেমনে দোয়া করে নিধি যেন সুস্থ থাকে।
দীর্ঘ চল্লিশ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে আশাদের বাড়িতে এলেএ নিরাশ হয় তারা। আশা জানায় নিধি তাদের বাড়ি থেকে বিকালের পরপরই চলে গেছে। সব শুনে মাথায় বাজ যেন পরে নাভান আর ইনায়ার। দুজনে আশাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়ির কাছে আসে।
-” মনে করো ইনায়া নিধির আর কোনো ফ্রেন্ড আছে? যেখানে ও যেত পারে। ”
নাভানের কথায় ইনায়া না সূচক মাথা নাড়ায়। নাভান যেন এবার ভিতর থেকে ভেঙে পরেছে। রাতও বাড়ছে। নাভান ফোন বের করে নাহিদ মির্জা কে কল দেয়।
-” কিরে নিধির কোনো খোঁজ পেলি? ”
ফোন রিসিভ করে অপর পাশ থেকে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে নাহিদ মির্জা। নাভান তার কথার প্রেক্ষিতে শান্ত স্বরে বলে,
-” এখান থেকে নাকি আগেই বেড়িয়ে গেছে। তুমি আর চাচু পুলিশ স্টেশনে যাও। আমি আসছি। ”
নাহিদ মির্জা কে আর কিছু না বলে ফট করে ফোন কেটে দেয় নাভান। বাড়িটা আজ নিস্তব্ধ হয়ে আছে। একটু আগেও ইশানের এনগেজমেন্ট উপলক্ষে কতো শপিং করে এনেছে নিপা আর ইশান। হালকা খুশির আমেজ পরিবেশটা মুহূর্তেই অশান্ত হয়ে গেছে শক্ত চরিত্রের সোহানা আজকে ভেঙে পরেছে অনেকটা। মেয়ের চিন্তায় তার মাথা ধরে আসছে। নাহিদ মির্জার চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি পুরো ঘটনা বুঝতে পারলেন। নওয়াজ মির্জা নাহিদ মির্জা কে নিয়ে ছুটলেন পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সোহানা ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিজের রুমে চলে যায়। আয়েশা মির্জা হু হতাশ করতে করতে বলে উঠে,
-” মেয়েটা তো কোনো দিন এমন করে নাই। কি জানি কি হইলো? কোনো বিপদ আপদ যেন না হয়। ”
আয়েশা মির্জার সাথে বসে আছে ইশান আর নিপা। নিপাও শাশুড়ীর সাথে বিলাপ করতে থাকে। ইশান এসব দেখে বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
-” কি শুরু করলে তোমরা? কিচ্ছু হয়নি ওর। সব নাটক। কি করলে আমার আর তিথির অনুষ্ঠান খারাপ হবে, তার প্লানিং করছে এই মেয়ে। ”
ইশানের কথায় হতবাক দু’জনেই। এই ছেলের মাথা ঠিক আছে তো? নিপা খেঁকিয়ে উঠে ইমানের প্রতি।
-” এই ছেলে? কি সব উলটা পালটা বিক্ষোভ করছিস? ও কেনো তোদের দিন খারাপ করার জন্য এমন করবে? ”
আয়েশা মির্জা এবার ইশানের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলে,
-” ওই স্টাইলিশ মেয়ে এখনি মাথা খেয়ে নিয়েছে তাইতো? বুঝলে নিপা এই বাড়িতে আর থাকা যাবে না। কার বউ কখন জানি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। ”
ইশান শান্ত চোখে দাদির দিকে তাকায়। তারপর গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,
-” যাকে জানো না তাকে নিয়ে বাজে কথা বলো না তো গিন্নী। ”
-” তুই তো নিধিকে জানিস। তাকে নিয়ে তুই উলটা পালটা কথা বললে, আমরা তোর হানি কে নিয়ে বলতে পারবোনা কেন? ”
ইশান মুখ আগের মতোই গম্ভীর স্বরে জবাব দেয়।
-” বলার কারণ তো আছে, নাকি? যেই মেয়ে গাড়ি ড্রাইভার ছারা চলা ফেরা করে না, তার আজকে হঠাৎ একা একা বের হওয়ার কারণ কি? আর গুনে গুনে আমার অনুষ্ঠানের সময়? তুমি যাই বলো, ওর কিচ্ছু হয়নি। বাড়িতে আসলেই বুঝতে পারবে। ”
ইশানের সাথে তারা আর কেউ তর্কে জড়ায় না। শুধু মনে মনে দোয়া করে নিধি যেন ফিরে আসে।
চলবে..……………