বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৩৫_প্রথমাংশ #আ_মি_না

0
80

#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৩৫_প্রথমাংশ
#আ_মি_না

৪৯. ছুটি কাটিয়ে ঠিক সাত দিনের মাথায়, মাঝরাতের দিকে লিন্ডা কে সাথে নিয়ে কিমালেব থেকে শিরো মিদোরি তে ফিরে এলো অ্যানা আর ফ্যালকন।

সেইফ জোনে ঢুকে, ওয়ার্কিং জোন পার হয়ে ও যখন পানিশমেন্ট এরিয়াতে এলো তখন সেখানে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পেলো নতুন আসা সেই ছেলে গুলোকে৷ এদের শাস্তি এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু সাত দিন তো শেষ, হয়তো কালই শেষ হয়ে যাবে। শরীর গুলো হাড্ডিসার হয়ে গেছে সবার, পাজরের হাড় বেরিয়ে গেছে অনেকের।

অ্যানার পায়ের শব্দ পেয়ে ওদের ভেতরের দু তিন জন দুর্বল ভাবে মাথা তুলে তাকালো সামনে। চোখ গুলো কোটরে চলে গেছে না খাওয়ার দরুন, কিন্তু হিংস্রতা এক ফোটাও কমেনি কারো চোখ থেকে। এখনও সমানে নোংরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে ওরা।

অ্যানা এক পলক ওদের দিকে তাকিয়ে ব্যাগ পত্র গুলো হাতে নিয়ে লিন্ডা কে সহ এগিয়ে গেলো মিটিং জোনের দিকে, তারপর মিটিং জোন পার হয়ে হাটতে হাটতে চলে এলো ওর মাঞ্জারে৷
সবাই এখন ঘুমে, আশে পাশে কোনো টু শব্দ টিও নেই। অ্যানা নিজেও ক্লান্ত। ফ্যালকন ওকে সেইফ জোন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেছে ঘুমাতে। অ্যানারও ঘুম আসছে প্রচন্ড। লিন্ডা তো শিরো মিদোরি তে ঢোকার আগেই ঘুমে কাঁদা।

ঘুমন্ত লিন্ডাকে বিছানার এক কোণায় আলতো করে শুইয়ে দিয়ে, ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে বাইরের পোশাক বদলে একটা ঢিলেঢালা ট্রাউজার আর একটা পাতলা টি শার্ট পরে নিলো অ্যানা৷ তারপর সাদা রঙা, নিতম্ব ছাড়ানো লম্বা চুল গুলো বেনী করে, পিঠের ওপর ছেড়ে দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে বিছানায় ঝাপিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো অ্যানা। ওর এমন ঝাপাঝাপিতে বিছানার এক কোণায় চিৎপাত হয়ে ঘুমিয়ে থাকা লিন্ডা হুড়মুড় করে জেগে উঠলো। তারপর অ্যানাকে পাশেই উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে ও গিয়ে উঠে বসলো অ্যানার পিঠের ওপর, এরপর আবার আয়েশ করে ঘুরে ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু ওর সে আয়েশ বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলো না। তার আগেই অ্যানা পাশ ফিরে সোজা হয়ে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। আর লিন্ডা সরে পড়ে গেলো অন্য পাশে। অ্যানা এমন করায় লিন্ডা একটু বেজার হলো যেন! মুখ ভার করে লেজ গুটিয়ে বিছানার অন্য কোণায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো ও আবার। অ্যানা সেদিকে এক পলক তাকিয়ে মৃদু হেসে আবার নিজের কাজে মন দিলো।

বিছানার সাইড টেবিলের ওপর খুলে রাখা হাতের রিস্ট ওয়াচ টা নিয়ে মেসেজ অপশনে গেলো ও৷ তারপর চিরচেনা আইডি টির ভেতরে গিয়ে টাইপ করলো,

— ইয়্যু ক্যান টেইক মা’ পাওয়ারস ব্যাক অ্যাগেইন, য়্যিফ ইয়্যু ওয়ান্ট।

তারপর কিছুক্ষণ দোনোমনা করে সেন্ড বাটনে ট্যাপ করে মেসেজ টি সেন্ড করে দিলো। আর মেসেজ টি সেন্ড করার পরমুহূর্তেই ফিরতি উত্তর এলো,

— ইয়্যু ক্যান ক্যিপ ‘এম

ব্যাডা কি সবসময় ফোন টা হাতে নিয়ে বসে থাকে নাকি! জীবনে যতগুলো দিন টেক্সট দিয়েছি একেবারে সাথে সাথে রিপ্লাই!’
রিস্ট ওয়াচ টার দিকে তাকিয়ে ভাবলো অ্যানা। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিস্ট ওয়াচ টা টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে আবার পাশ ফিরে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।

ওর মন বলছিলো হয়তো পাওয়ারস গুলোকে ব্যাক নেয়ার জন্য হলেও মীর একবার আসবে এখানে, ওর সাথে একটি বারের জন্য হলেও দেখা হবে! কতগুলো দিন মীর কে এক নজর দেখা হয়নি! কিন্তু সে আশা বাতিল।

বালিশের ওপর ঠোঁট জোড়া দিয়ে চেপে ধরে, সামনের দেয়ালের দিকে অপলকে তাকিয়ে থেকে বুজের ভেতরে দামামা বাজিয়ে বেড়ানো প্রবল ইচ্ছা টাকে বুকে চাপা দিয়েই এবার চোখ জোড়া বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো অ্যানা৷

ঠিক তখনই ওর কামরার দরজাটা শব্দ করে খুলে গেলো। চমকে উঠলো অ্যানা। চিরপরিচিত ঘ্রাণ টা পেয়ে বুকের ভেতর রক্ত ছলকে উঠলো ওর। কিন্তু একটুও নড়লো না ও৷ বালিশে মুখ গুজেই ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো বিছানায়। এক অদ্ভুত, অপ্রতিরোধ্য আনন্দের প্রবল আক্রমণে ওর ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত হয়ে উঠলো। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই এই আগন্তুকের নিকট প্রকাশ করতে চাইলো না ও৷

এরপর এক জোড়া পায়ের ভারী শব্দ দরজার নিকট থেকে ক্রমে কাছাকাছি এলো অ্যানার। তারপর অ্যানার বিছানার পাশে এসেই থেমে গেলো। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অ্যানা নিজের মুখ টা দরজার উল্টোদিকে ফিরিয়ে রেখেই প্রশ্ন ছুড়ল,

— কেন এসেছো তুমি এখানে?

কথা টা অভিমান ভরে উচ্চারণ করতে চাইলেও সেটার সাথে অভিমানের ছিটে ফোটাও পাওয়া গেলো না। বরং এক রাশ আকুলতা নিয়ে সেটা গিয়ে বাড়ি খেলো মীরের কর্ণকুহরে। মীর ধীর গতিতে বিছানায় বসতে বসতে শান্ত গলায় উত্তর দিলো,

— এদিক থেকে কে জানি আমাকে স্মরণ করছিলো, তাই চলে এলাম!

মীর কে দেখে লিন্ডা বিছানার কোণা থেকে লাফাতে লাফাতে ছুটে এলো। ভাবটা এমন যে ‘দেখো তোমার বউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না! তুমি এখন আমাকে একটু কোলে ন্যাও!’
মীর ওর নিকটে ছুটে আসা লিন্ডাকে দুহাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। অ্যানা মুখ টা না ফিরিয়েই আগের মতো করে আবার বলল,

— কে স্মরণ করেছে তোমাকে? আমি তো করিনি! লিন্ডা করেছে হয়তো।

নিজের দোষ টা সম্পুর্ন লিন্ডার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ায় লিন্ডা ভ্যাবাচেকা খেয়ে একবার অ্যানার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে আবার মীরের দিকে তাকিয়ে দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বোঝালো যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা, সে তো হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলো! এসবের সাথে তার কোনো সম্পর্কই নেই!

মীর লিন্ডার ভ্যাবাচেকা খাওয়া মুখ খানার দিকে তাকিয়ে মৃদু শব্দ করে হেসে উঠলো। তারপর লিন্ডার উদ্দেশ্যে বলল,

— লিন্ডা মামনি! তোমার পাপা আর মাম্মাম এখন একটু একান্তে সময় কাটাবে, তুমি ওদিকে গিয়ে ঘুমাও।

লিন্ডার ভ্যাবাচেকা খাওয়া মুখ খানা পরিবর্তিত হয়ে মুহুর্তেই অন্ধকার হয়ে এলো। মন খারাপ করে মীরের কোল থেকে এক লাফে নেমে কিচেনের দিকে চলে গেলো ও। আর ও কিচেনে ঢুকে যেতেই মীর কিচেনের দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিলো। লিন্ডাকে কিচেনে আটকে রাখায় তড়িঘড়ি করে এদিকে মুখ ফিরিয়ে বিছানায় উঠে বসলো অ্যানা। তারপর ভ্রু জোড়া কুচকে তেজি কন্ঠে বলে উঠলো,

— ওকে ওখানে পাঠিয়ে দিলে কেন? ও তো ভয় পাবে একা একা! সবসময় তুমি এরকম করো! কোকো টাকেও এভাবে তুমি রোজ লেজ ধরে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতে! ভবিষ্যতে নিজের বাচ্চাকাচ্চা গুল…….

এতটুকু বলেই থেমে গেলো অ্যানা। ও কি বলে ফেলেছে সেটা বুঝে আসতেই মুখের তেজি ভাবটা মুহুর্তেই উধাও হয়ে গিয়ে সেখানে এসে ভর করলো নিদারুণ যন্ত্রণা। বুকের ভেতর টা জুড়ে এক অদ্ভুত ব্যাথা ঘূর্নিঝড়ের ন্যায় পাকিয়ে উঠতে শুরু করলো যেন! চোখের কোণা গুলো মুহুর্তেই লোনা পানিতে ভরে উঠলো। এই কথা টা ও কিভাবে মুখ ফসকে বলে ফেললো ওর মাথায় আসছে না!

আর অ্যানার এমন চেহারা দেখে মীর আর একমুহূর্ত দেরি না করে প্রায় হাওয়ার গতিতে উঠে পড়লো বিছানায়, এরপর ক্ষিপ্র গতিতে বিছানায় শুয়ে থাকা অ্যানাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে এক ঝটকায় নিচে থাকা অ্যানাকে নিজের ওপরে নিয়ে মীর নিজে চলে গেলো অ্যানার নিচে। তারপর অ্যানার ছোট্ট, শুভ্র মুখ খানাকে নিজের কালো কুচকুচে হাত জোড়ার বিশাল থাবার ভেতরে নিয়ে অ্যানার চোখের কোণা ভিজিয়ে দেওয়া অশ্রুবিন্দু গুলোকে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের ছোয়ায় শুষে নিতে নিতে আকুল কন্ঠে বলে উঠলো,

— শিনজো! শিনু, মা’ বিয়্যুটিফ্যুল অর্কিড! মন খারাপ কোরো না, প্লিজ! আমি তোমাকে জেনে বুঝে কখনো কষ্ট দিতে চায়নি, কখনোই না! তোমার জন্মের পর একদিন আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তোমার চোখ থেকে এক ফোটা পানিও কখনো এই পৃথিবীর বুকে পতিত হতে দিবো না, কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি! আমাকে ক্ষমা করে দিও তুমি! আ’ম স্যো সর‍্যি মা’ বেইবি!

মীরের কথায় অভিমানে অ্যানার নিচের ঠোঁট টা ফুলে উঠলো। আর এরপর মীরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে মীর কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ও! মীর নিজেও ওকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে নিজের বুকের সাথে এক প্রকার পিষে নিয়ে আবার বলে উঠলো,

— বিশ্বাস করো শিনু, তুমি ছাড়া আর অন্য কারো প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই! একটা অনু পরিমাণ ও নয়! আমার যদি একটা সন্তানের প্রয়োজন না হতো তবে আমি কখনো কোনো দাসীকে ছোয়া তো দূর, কারো দিকে তাকিয়েও দেখতাম না, বিশ্বাস করো! আমি না চাইতেও তোমাকে এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলবো জানলে কখনোই তোমাকে আমি নিজের সাথে জড়িয়ে নিতাম না! লাইফ ট্রির কথাও আমি শুনতাম না! আমি অনেক চেষ্টা করেছি সব কিছু স্বাভাবিক করতে, কিন্তু আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও শিনু, ক্ষমা করে দিও আমাকে!

শেষের কথা গুলো বলতে গিয়ে গলাটা যেন ধরে এলো মীরের। অ্যানার কান্নার বেগ বাড়লো। মিরের শরীরে থাকা পোশাকের বুকের কাছ টা ভিজে উঠতে শুরু করলো। মীর বাধা দিলো না ওকে, কান্না করতে দিলো; যদি এতে অ্যানার যন্ত্রণা দ্বারা পূর্ণ মন টা একটু হলেও হালকা হয়!

রাতের শেষ প্রহরের দিকে কান্নার বেগ কমলে ফোপাঁতে ফোপাঁতে এক সময় মীরের বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো অ্যানা! আর মীর বাকি রাত টা অ্যানার স্নিগ্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়েই পার করে দিলো! বুকের ভেতর থেকে ওর অ্যানার উদ্দ্যেশ্যে একটি বাক্যই বার বার গলা পাকিয়ে উঠে আসতে চাইলো,

— মা’ বিয়্যুটিফ্যুল অর্কিড, প্লিজ ফ’গিভ ম্যি!

চলবে……

( আজ গল্প দিতে চাইছিলাম না, তবুও তোমাদের কথা ভেবে এতটুকু লিখেছি। তোমরা আমাকে ধন্যবাদ দিও 😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here