#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৩৭
#আ_মি_না
ধারালো, লম্বা চকচকে রাম দা টা হাতে নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে মাঞ্জারের পেছন দিকের উদ্দেশ্যে এগোচ্ছে অ্যানা। ওর মাথার ওপর দিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে ডেকে সামনে উড়ে চলেছে ফ্যালকন। একটা কালো রঙা ট্রাউজার আর অফ হোয়াইটের একটা অফশোল্ডার বেলিলেস টপ পরিহিতা অ্যানার স্ফিত বক্ষ তার হাটার গতির কারণে কেঁপে কেঁপে উঠছে। কুচকুচে কালো রঙা চুলগুলো একটা হৃষ্টপুষ্ট বেনীতে রুপান্তরিত হয়ে পিঠের ওপর দোদুল্যমান। ওর প্রতিট পদক্ষেপে কেঁপে উঠছে সেখানের মাটি। চোয়ালদ্বয় শক্ত হয়ে জানান দিচ্ছে ওর তীব্র রাগের; চোখ জোড়াতে ভয়ঙ্কর তেজ, যেন সামনে যাকে পাবে তাকেই ওই শাণিত চোখের দৃষ্টি তে ভস্ম করে দেবে।
আর একটু এগোতেই শার্লটের চাপা চিৎকার এবার অ্যানার কানে স্পষ্টভাবে এসে পৌছালো, অ্যানা রামদা টা হাত থেকে বাতাসে ছুড়ে মেরে ঘুরিয়ে এনে দক্ষ হাতে ধরলো আবারও, তারপর এগিয়ে গেলো সে মানুষরূপী জানোয়ার গুলোর দিকে।
.
মাঝারি সাইজের একটি গাছের সাথে হাত জোড়া পিঠ মোড়া করে বেধে রাখা হয়েছে ব্রায়ান কে। তীব্র গতিতে নিজেকে সেখান থেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ও৷ কাপড় দিয়ে মুখ বাধা ওর শক্ত করে, তা সত্বেও সাহায্য পাওয়ার ক্ষীণ আশায় চিৎকার দিয়ে চলেছে ও। কিন্তু চাপা শব্দ ছাড়া আর কোনো কিছুই শোনা যাচ্ছে না! ওর দুপাশে নতুন ওয়ার্কার্স হয়ে আসা ছেলে গুলোর দুজন দাঁড়িয়ে আছে, থেকে থেকেই নিজেদের হাতের বজ্রমুষ্ঠি তে ছটফট করতে থাকা ব্রায়ান কে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে ওরা।
শার্লট কে পিঠ মোড়া করে বেধে শুইয়ে রাখা হয়েছে ব্রায়ানের সামনে, পোশাক ওর এলোমেলো। মুখ টা কাপড় দিয়ে বাধা। মেরুণ রঙা গাউন টা হাটুর ওপরে উরুতে উঠিয়ে রেখেছে ওরা। ছেলে গুলোর হাতের অশ্লীল ছোয়া বার বার ঘুরে বেড়াচ্ছে শার্লটের পুরো শরীর জুড়ে। মুখ বাধা অবস্থাতেই নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে প্রাণপণে চিৎকার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শার্লট।
এক পাশে কিছুটা আগুন করে চারপাশ টা সামান্য আলোকিত করে ছেলে গুলো শার্লট কে ঘিরে বসে বসে মদের বোতলে চুমুক দিচ্ছে থেকে থেকে। ওদের ভেতরের লিডার গোছের একজন শার্লটের অফশোল্ডার পোশাক টির বুকের দিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে, অশ্লীল হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলো ব্রায়ানের দিকে।
ছেলেটিকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে গাছের সাথে বাধা ব্রায়ান যেন মরিয়া হয়ে গেলো নিজেকে ছাড়িয়ে এখনি এই ছেলেটার গলার ওপর পা দিতে। ব্রায়ানের চোখে সেই তেজ স্পষ্ট দেখতে পেলো ছেলেটি। খ্যাকখ্যাক করে হেসে উঠলো সে। তারপর ব্রায়ানের মুখের নিকট মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দরাজ গলায় বলে উঠলো,
— তোর বোন টা একটা খাসা মাল! আজ রাত টা জমবে ভালো। ওদিকে ফুল সাউন্ডে গান বাজছে, সব্বাই নাচা গাওয়া করছে, আমরাও তোর বোনের সাথে এখানে এনজয় করবো! হেব্বি মজা হবে আজ। সকাল বেলা সবাই উঠে দেখবে তুই আর তোর বোন এইখানে মরে পড়ে আছিস! কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি করতে পারবে না। কেউ জানবেও না কে করেছে এই কাজ। এমন ভাবে তোদের কে আজ মারবো যে মানুষ ভাববে রেড জোন থেকে কোনো বাঘ ভাল্লুক এসে তোদের কে মেরে রেখে গেছে!
খ্যাকখ্যাক করে আবারও হাসলো ছেলেটা। তারপর হঠাৎই শক্তহাতে ব্রায়ানের চোয়াল চেপে ধরে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
— কি ভেবেছিলি? তুই! তোর মতো একটা ব্রায়ান আমাদের কে সাদ্দিন না খাইয়ে রাখবে, আর আমরা ছেড়ে দেবো? কখনোই না, ওই সাদ্দিনের খাওয়া আজ তোর বোন কে খেয়ে উসুল করবো, আর তুই এইখানে বসে বসে দেখবি, কিচ্ছু করতে পারবিনা! তোর কোনো বাপ আজ তোকে বাচাতে আসবে না!
কথা গুলো শেষ করে ব্রায়ানের কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়েই ব্রায়ানের চোয়াল বরাবর লাগালো একটা ঘুষি, ব্রায়ানের মাথাটা যেন ছিটকে অন্যদিকে সরে গেলো সে ঘুষির দাপটে। ঠোঁটের বাম কোণা কেটে গিয়ে সেখান থেকে দরদর করে রক্ত বেয়ে পড়তে শুরু করলো। ব্রায়ান রাগে দুঃখে কেঁদে ফেললো এবার। নিজের চোখের সামনে নিজের আদরের বোনের এমন সর্বনাশ হতে ও কিভাবে দেখবে! চোখ দিয়েই যেন সে ছেলে গুলোর কাছে ও আকুতি জানালো ওর বোন টিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য! কিন্তু ওর সে আকুতি শুনলো না কেউ!
লিডার ছেলেটি মাটিতে শোয়ানো ভীতসন্ত্রস্ত শার্লটের দিকে এগিয়ে গেলো। শার্লটের চোখ ভরা মিনতি! যেন ওর এমন সর্বনাশ টা না করা হয়। কিন্তু জানোয়ার গুলোর কি আর মানুষের ভোখের ভাষা বোঝার মতো ক্ষমতা আছে? লিডার টি এগিয়ে গেলো শার্লটের নিকট, মুখ বাধা অবস্থাতেই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো শার্লট। লিডার টি ঝুকে শার্লটের পোশাকের তলা দিয়ে হাত দিয়ে ওর পেট থেকে হাত ঘষতে ঘষতে নিয়ে গেলো ওর বুকের নিকট, আর এরপর মাংস পিন্ড টা গায়ের সর্বোচ্চ জোরে চাপ দিয়ে ধরে খ্যাকখ্যাক করে বিশ্রি হেসে উঠলো, ব্রায়ান লজ্জায় সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার নিকট সাহায্য চাইতে লাগলো প্রাণপণে!
লিডার ছেলেটি শার্লট কে ছেড়ে দিয়ে শার্লটের নিকট থেকে সরে এসে পাশে থাকা একটি ছেলেকে নির্দেশ করে বলল,
— নে, তোরা শুরু কর। তাড়াহুড়ো করবি না, এক এক করে শেষ করবি।
লিডারের আদেশ পেয়ে ছেলেটির চোখ জোড়া চকচক করে উঠলো। অশ্লীল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছেলেটি এগিয়ে গেলো শার্লটের দিকে। শার্লট তীব্র বেগে মাথা নাড়িয়ে ছেলেটির নিকট অনুনয় করলো তাকে কিছু না করার জন্য, কিন্তু শুনলো না ছেলেটি। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে ঝুকে এগিয়ে গেলো মাটিতে পড়ে থাকা শার্লটের দিকে। আর এরপর শার্লটের উন্মুক্ত মাংসল উরুতে হাত রাখা মাত্রই কোথা থেকে ধারালো কিছু একটা ক্ষীপ্র গতিতে উড়ে এসে লাগলো ছেলেটির গলা বরাবর, আর লাগা মাত্রই ছেলেটির ধড় থেকে মাথা টা আলাদা হয়ে ছিটকে পড়লো কোনো একদিকে। ব্যাপার টা এতটাই দ্রুত গতিতে ঘটলো যে কি হলো সেটা বুঝতেও ছেলে গুলোর সময় লেগে গেলো কিছুটা। আর এরপর শার্লটের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছেলেটার মাথার দিকে চোখ পড়তেই আঁতকে উঠলো সকলে, শুরু হয়ে গেলো চিৎকার চেচামেচি। ভয় পেয়ে ওরা এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুর করলো উত্তেজনায়। লিডার টি তাড়াতাড়ি ওদের সবাই কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
— এই, তোরা থাম, চিল্লাপাল্লা করিস না। সজাগ থাক, কেউ একজন জানে যে এদের কে নিয়ে আমরা এখানে এসেছি। চারদিকে নজর রাখ। যে-ই আসবে তাকেই ভোগে পাঠিয়ে দিবি। এত বড় কলিজা! অলিভারের ছেলেদের গায়ে হাত দিতে আসে! কে সে, তাকে আমিও দেখে নেবো।
এরপর চারপাশের অন্ধকার জঙ্গলের দিকে একবার দৃকপাত করে অলিভার উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলো,
— এই কে তুই, বেরিয়া আয়! তোর কত খানি কলিজা হয়েছে দেখি আমি! বেরিয়ে আয় এখনি বাপের বেটা হস তো!
অলিভারের কথা শেষ হতে না হতেই ওদের পেছন দিকে, মাটিতে পড়ে থাকা ধারালো রাম দা টা কোনো এক অদৃশ্য শক্তিবলে শব্দ করে মাটিতে ঘষতে ঘষতে ওদের কে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলল, আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই সেটা মাটি থেকে শূণ্যে উঠে ক্ষীপ্র গতিতে অন্ধকারের ভেতর তার সেই অদৃশ্য মালিকের হাতে গিয়ে ঠেকলো।
এমন ভোজবাজি দেখা মাত্রই অলিভার সহ তার সাথের ছেলে গুলো এবার যেন ভয় পেলো একটু। শিরো মিদোরি সম্পর্কে ওরা অনেক কথাই শুনেছে যে এখানে অনেক অতিপ্রাকৃতিক জিনিসপত্র ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সেগুলো তো রেড জোনে থাকে, সেইফ জোনে তো ঢোকার কথা না! তবে এটা কি হতে পারে?
ওদের এসব ভাবনার মাঝেই অন্ধকার থেকে কে যেন এক পা এক পা করে বেরিয়ে আসতে লাগলো ওদের দিকে। সাউন্ড বক্সের উচ্চশব্দ কে টেক্কা দিয়ে তার পা ফেলার ভারিক্কি শব্দ ছেলেগুলোর বুকে যেন ভয়ের সঞ্চার করে দিতে লাগলো একটু একটু করে। তখনি ওদের মাথার ওপরে থাকা গাছ টার মগডালে শব্দ হলো কোনো কিছুর, পাতা গুলো কেঁপে উঠলো সেখানের, যেন ভারী কিছু উড়ে এসে সেখানে আয়েস করে বসেছে। ছেলে গুলো সাথে সাথেই মাথা তুলে তাকালো সেদিকে। বোঝার চেষ্টা করলো ঠিক কি এসে বসলো ওদের মাথার ওপর, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই ওদের চোখে বাধলো না৷ এমন গা ছমছমে পরিবেশে স্তিমিত হয়ে এলো ছেলেগুলোর এতক্ষণের উল্লাস! কেমন যেন মিইয়ে গেলো ওরা। ঠিক তখনি অন্ধকারের ভেতর থেকে একপ্রকার চকচক করতে করতে বেরিয়ে এলো অ্যানা। হাতে ওর ধারালো রাম দা, চোখে হিংস্রতা।
অলিভার অ্যানা কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। ওর চোখ আটকে গেলো অ্যানার ওই শুভ্র, অসম্ভব রকম সুন্দর মুখশ্রীর ওপর। কিছুক্ষণের জন্য ও যেন কোনো ঘোরের ভেতর চলে গেলো। ব্রায়ান অ্যানাকে দেখা মাত্রই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন, অন্তত কেউ তো একজন এসেছে ওদের কে বাঁচাতে! শার্লটের চোখে মুখে ফুটে উঠলো কৃতজ্ঞতা। মাটিতে শোয়া অবস্থাতেই চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো ওর৷
অ্যানা এগিয়ে এসে দাড়ালো ছেলেগুলোর সামনে। ছেলেগুলোর নজর এখনো ওর মুখের দিকে। অ্যানা ওর ডান হাতে থাকা রামদা টা উঁচু করে বা হাতের তালুতে রেখে রামদা টার ধার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে উঠলো,
— কে শার্লট কে কিভাবে স্পর্শ করেছিস, এক এক করে বল, তার সেই অংশ টা আমি কেটে ফেলবো, এছাড়া কাউকে কিছুই করবো না। ছেড়ে দেবো সবাইকে। তোদের সময় জন প্রতি পাঁচ সেকেন্ড। এর ভেতরে না বললেই সে মায়ের ভোগে। দ্রুত, দ্রুত; আমাকে আমার বিউটি স্লিপ মেইনটেইন করতে যেতে হবে৷ ক্যুইক।
অ্যানার কথায় ছেলে গুলো যেন সম্বিত ফিরে পেলো। অলিভার ভড়কে গেলো প্রচন্ড। এটা যে ওয়ার্কার্স দের ভেতরের সবচেয়ে লম্বা সেই অদ্ভুত চাহনির মেয়েটা সেটা বুঝতে ওর আর বাকি নেই। এই মেয়েটাকে প্রথম দিন থেকেই কোনো এক অজানা কারণে ভয় পেয়ে এসেছে ও। যতবারই ওই তীক্ষ্ণ চোখ জোড়ায় ওর দৃষ্টি পড়েছে ততবারই আনুগত্যে মাথা নামিয়ে নিয়েছে ও, কেন নিয়েছে সেটা ও নিজেও জানে না। ওই দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যেন খুবই কষ্টকর!
অলিভারের চোখে মুখে ভীতি স্পষ্ট হওয়া সত্বেও সে মুখে সেটা প্রকাশ করলো না। অ্যানা কে ভড়কে দেয়ার জন্য ও মুখ টাকে যথাসম্ভব কেয়ারলেস করে নিয়ে বলে উঠলো,
— আরে, পরমাসুন্দরী যে! তুমি আবার রাম দা চালানো কবে শিখলে? এসব কি তোমার হাতে মানায়? এসব তো আমাদের কাজ! তবে এসেছো ভালোই করেছো, একটাতে আমাদের এমনিতেও হতো নাহ। আমার এক ছেলের মাথা নামিয়ে দিয়েছো তাতেও আমি কিছুই মনে করবো না। শুধু লক্ষী মেয়েটির মতো তুমি থেকে যাও এখানে। তবেই আমাদের ভুরিভোজ টা জমবে ভালো। এই তোদের কে ওই মেয়েটা দিয়ে দিলাম!
শার্লট কে নির্দেশ করে পেছনে থাকা ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল অলিভার। তারপর অ্যানার দিকে আবার চোখ ফিরিয়ে অশ্লীল ভঙ্গিতে জিহবা দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল,
— আর এই আগুনের গোল্লা টার পুরোটাই আমার।
অ্যানা ওর কথার বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা না করে অলিভারের ঠিক পেছনে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে নির্দেশ করে শক্ত গলায় বলে উঠলো,
— এই যে, তুই। এদিকে আয়।
অলিভারের পেছনে থাকা ছেলেটা এক পলক অলিভারের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এলো অ্যানার দিকে। তারপর অশ্লীল ভঙ্গিতে অ্যানার সামনে গিয়ে দাড়ালো৷ অ্যানা ওর দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
— ওকে কিভাবে, কোথায় ছুয়েছিস বল।
— এই তো, এই হাত টা দিয়ে ওর উরু টা ছুয়েছিলাম। এত্ত সুন্দর, আর এত্ত নরম!
ছেলেটা অশ্লীল ভঙ্গিতে হেসে নিজের ডান হাত টা উচু করে অ্যানা কে দেখালো। অ্যানা ছেলেটির দিকে তাকানো অবস্থাতেই চোখের পলকে রামদা টা দিয়ে ছেলেটির ডান হাতের কনুই আর উরু বরাবর সাঁই করে কোপ বসিয়ে দিলো । সাথে সাথেই ছেলেটির দেহ থেকে তার হাত আর পা টা খসে পড়ে গেলো গাছের শুকনো পাতার মতো। ছেলেটা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো, আর পরমুহূর্তেই একটা বিকট চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালো। কিন্তু ছেলেটা মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটার গলা বরাবর রামদা টা চালিয়ে দিয়ে এই ধরণী থেকে তার নিঃশ্বাস চিরতরে মুছে ফেললো অ্যানা৷
এরপর নির্বিকার মুখে তাকিয়ে রইলো অলিভারের পেছনে থাকা ছেলেগুলোর সারির প্রথম জনের দিকে। তারপর বা হাতের তর্জনির ইশারায় তাকে কাছে ডাকলো অ্যানা৷ কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলেগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। যে মেয়ে এমন নির্বিকার মুখে কারো হাত পা গলা নিমিষেই নামিয়ে দিতে পারে সে চাইলে আর কি কি করতে পারে সেটা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইলো না। কোনো কিছু না ভেবেই অলিভার আর ওর সাথের অন্য একটি ছেলে ব্যাতিত বাকি সকলেই নিজেদের পেছন দিকে যে যেভাবে পারলো ছুটে পালাতে শুরু করলো। কিন্তু ওদের সে ছুটে পালানো দীর্ঘস্থায়ী হলো না। পা চালিয়ে ওরা অন্ধকারের ভেতর তলিয়ে যেতেই অ্যানা ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে গেলো ওদের পেছনে। আর এরপর ব্রায়ান, শার্লট, অলিভার আর ওর সাথে থাকা অন্য ছেলেটির কানে শুধু একটাই শব্দ ভেসে আসতে থাকলো বারংবার৷ আর সেটি হলো ধারালো রামদার সাঁই সাঁই করে ধড় থেকে মাথা আলাদা করার শব্দ।
কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকারের ভেতর সবকিছু নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো। শোনা গেলো না আর কারো পদশব্দ, শোনা গেলো না আর কোনো ধস্তাধস্তি, শোনা গেলো না আর কোনো ধারালো অস্ত্রের শব্দ। অলিভার সেই নিকষ কালো অন্ধকারের ভেতরে নিজের চোখ জোড়া লাগিয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো সেখানে ঠিক কি হচ্ছে, কিন্তু ব্যর্থ হলো পুরোপুরি। পরমুহূর্তেই অন্ধকারের ভেতর থেকে এগিয়ে আসতে লাগলো সেই ভারী পদধ্বনিটির শব্দ।
আর তার কিছু মুহুর্ত পরেই অলিভারের সম্মুখে জ্বলন্ত আগুনের আলোতে দৃশ্যমান হলো রক্তে পর্যবসিত একটি শুভ্র, সুডৌল দেহ। রাম দা টা কাধের ওপর ঠেকিয়ে, বাকা হিংস্র হাসিতে, পাতলা কোমরে ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে অ্যানা।
অলিভারের শরীরে কম্পন ধরে গেলো। অ্যানার ওই হিংস্র হাসি এসে যেন বাড়ি খেতে লাগলো ওর হৃৎপিণ্ডে, যেন ওই হাসি দিয়েই ওর বুকের হৃৎপিণ্ড টা এই ভয়ঙ্কর সুন্দরী মেয়েটি বুক চিরে বের করে আনতে চাইছে। অলিভারের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার হাতে তখনো একটা মদের বোতল। এতসব কাহিনীর ভেতর মদের বোতল টা হাত থেকে নামাতেই এ ভুলে গেছে। হা হয়ে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে সে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে এগিয়ে আসা অ্যনার সুশ্রী মুখ খানার দিকে।
অ্যানা এগিয়ে আসলো সোজা সেই ছেলেটির দিকেই। তারপর ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে হিসহিসে কন্ঠে বলে উঠলো,
— মদ খাওয়ার খুব শখ তোর তাই না? আজ তোকে এ জনমের মতো মদ খাওয়াবো।
বলেই ছেলেটির হাত থেকে এক ঝটকায় মদের বোতল টা কেড়ে নিয়ে ছেলেটির চোয়াল বরাবর একটা বিশাল থাপ্পড় দিয়ে ছেলেটাকে মাটিতে ফেলে দিলো অ্যানা৷ ছেলেটা মাটিতে পড়ে যেতেই ছেলেটার বুকের ওপর উঠে বসে মদের বোতলের মুখ টা ছেলেটার মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে বোতলের পেছনে সজোরে একটা ঘুষি মেরে বোতল টা ছেলেটার গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিলো। ছেলেটার ঠোঁটের দুই কোণা চিরে ফেড়ে গেলো দুদিকে৷ তারপরও শেষ চেষ্টা হিসেবে মদ শ্বাস নালিতে না যাওয়ার জন্য সে প্রাণপণে গলা বন্ধ করে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করলো। কিন্তু অ্যানা সেটা বুঝতে পারে মাত্রই ছেলেটার নাক চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— খা মদ, যত পারিস খা, জনমের মতো খা৷
নাক আটকে ধরায় নিঃশ্বাস নিতে না পেরে গলা ছেড়ে দিতেই শ্বাস নালিতে মদ ঢুকে গিয়ে বিষম খেয়ে ছেলেটা দম আটকে সেখানেই ছটফটিয়ে মারা গেলো।
মৃত ছেলেটাকে ছেড়ে অ্যানা এবার রাম দা টা হাতে উঠে দাঁড়িয়ে অলিভারের সামনে এলো। তারপর শক্ত মুখে অলিভার কে উদ্দ্যেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
— কোন হাত দিয়ে ছুয়েছিস ওকে?
অলিভার ভয়ে কুকড়ে উঠে, পাংশু বর্ণ হয়ে গিয়ে নিজের ডান হাত খানা কাঁপতে কাঁপতে সামনের দিকে এগিয়ে ধরলো। আর ধরা মাত্রই অ্যানা সজোরে রাম দা খানার এক কোপে নামিয়ে দিলো অলিভারের কনুই থেকে হাতের নিচের অংশ। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠে মাটিতে বসে পড়লো অলিভার। এরপর অ্যানার পায়ের কাছে উপুড় হয়ে পড়ে নিজের বাম হাত খানা দিয়ে অ্যানার পা ধরে মিনতি পূর্ণ কন্ঠে চিৎকার করে কেঁদে বলে উঠলো,
— আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি আর কখনো এমন করবো না। আমাকে যেতে দিন, আমাকে মারবেন না প্লিজ! দয়া করুন আমার ওপর!
অ্যানা শার্লটের দিকে তাকালো এক পলক। শার্লট ততক্ষণে উঠে বসেছে ব্রায়ানের কোলের কাছে। শার্লটের দিকে তাকিয়ে অ্যানা জিজ্ঞেস করলো,
— তুই কি চাস আমি ওকে ক্ষমা করে দিই?
শার্লট অশ্রুসিক্ত চোখে ঘৃণার দৃষ্টিতে অলিভারের দিকে এক পলক তাকিয়ে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। অ্যানা শার্লটের থেকে উত্তর পেয়ে অলিভারের দিকে চোখ ফেরালো তারপর আফসোসের সুরে বলল,
— কিচ্ছু করার নাই ব্রো, ও তোকে ক্ষমা করতে চায় না! সুতরাং তোকে এখন ভোগে যেতে হবে।
এরপর ব্রায়ান আর অ্যানার নিকট গিয়ে ওদের দুজনের বাধন খুলে দিয়ে অ্যানা বলল এখান থেকে সোজা নিজেদের মাঞ্জারে চলে যেতে। আর এই বিষয়ে কাউকে কিছু না জানাতে। ব্রায়ান কলের পুতুলের মতো অ্যানার কথা মান্য করে শার্লট কে নিয়ে সেখান থেকে কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই নিজেদের মাঞ্জারের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়লো আর অ্যানা মাটিতে মাথা গুজে পড়ে থাকা অলিভারের শার্টের কলার ধরে টেনে, মাটিতে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে ক্ষীপ্র গতিতে এগোতে লাগলো রেড জোনের দিকে। অলিভারের মোটাতাজা শরীরের ভার অ্যানার কাছে কিছুই মনে হলো না। ছোট বাচ্চারা সুতার সাথে প্লাস্টিকের খেলনা বল বেধে নিয়ে যেভাবে নির্বিকার চিত্তে মাটিতে টেনে নিয়ে যায়, ঠিক সেভাবেই অলিভার কে মাটিতে টেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলল অ্যানা। আর এগোতে এগোতে রেড জোনে ঢুকে পড়া মাত্রই অলিভারের শরীর হীম হয়ে আসতে লাগলো। সেইফ জোন কেন সেইফ জোন সেটা যেন ও এইবার টের পেলো।
জঙ্গলে ঢোকা মাত্রই কোনো এক অদ্ভুত বাতাস এসে বাড়ি খেতে লাগলো ওর সারা শরীরে৷ অদ্ভুত অদ্ভুত প্রাণীর হাড়হীম করা কণ্ঠধ্বনি ভেসে আসতে লাগলো ওর কানে। চারপাশ টা কেমন যেন গা ছমছমে ঠেকলো ওর কাছে। ওর শরীরের স্পর্শে মাটি থেকে যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো কোনো অশরীরীর শতশত হাত, ওকে যেন জাপটে ধরে নিজেদের দলের একজন করে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করলো ওরা৷ অলিভার ভয়ে কেঁদে ফেললো। তাকে নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে এগিয়ে চলা অ্যানাকে উদ্দ্যেশ্য করে কান্না মিশ্রিত গলায় ও বলে উঠলো,
— আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ! আমাকে দয়া করে সেইফ জোনে দিয়ে আসুন, আমাকে এখানে ফেলে যাবেন না! দয়া করুন!
কিন্তু অলিভার হাজার অনুনয় করা সত্বেও তার আকুতির সামান্য অংশও কানে নিলো না অ্যানা। নিজের গন্তব্যের দিকে ক্ষীপ্র গতিতে পা চালাতে লাগলো ও৷ ওর চলার সাথে সাথে সেখানে গাছপালা গুলো ফাঁকা হয়ে দুদিকে সরে যেতে লাগলো যেন। আর অ্যানা নির্বিকার চিত্তে এগোলো সেদিকে।
কিছুদূর যাওয়ার পরই চলা থামালো অ্যানা। অলিভারের আকুতি এবার আরও বেড়ে গেলো। অ্যানা নামক এই ভয়ঙ্কর মেয়েটি যে ওকে এখানেই রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সেটা ও হাড়ে হাড়ে টের পেলো। শেষ বারের মতো আবারও অ্যানার পায়ের কাছে পড়ে কাকুতি মিনতি শুরু করলো সে। কিন্তু অ্যানা ওর দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে অজানার দিকে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লো,
— কোকো!
অ্যানার হাঁক ছাড়ার কয়েক মুহুর্ত পরেই অলিভার কে ভয়ের চুড়ান্ত সীমায় নিয়ে গিয়ে জঙ্গলের বিপরীত দিক থেকে ভারী শব্দ তুলে ক্ষীপ্র গতিতে জঙ্গলের গাছপালা গুলোকে মাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করলো কোকো, তার ক্রোকোডাইল ফর্মে।
অলিভার কোনো বিশালাকার জন্তুকে নিজেদের দিকে আসতে অনুভব করে অ্যানার হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে শুরু করলো। কিন্তু অ্যানার বজ্রমুষ্ঠি থেকে নিজেকে এক অণু পরিমাণও মুক্ত করতে পারলো না ও৷ আর তার কিছুক্ষণ পরেই কোকো এসে হাজির হলো সেখানে৷ কোকো কে দেখে অলিভার ভয়ে চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করলো। কোকো অ্যানার সামনে এসে নিজের হিউম্যান ফর্মে ফিরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো,
— আদেশ করুন আম্মা!
অলিভার হকচকিয়ে গেলো। চোখের সামনে ভোজবাজির মতো একটা জন্তুকে মানুষের রূপে ফিরে আসতে দেখে ও যতটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো সেই জন্তুটার অ্যানাকে আম্মা ডাকায়৷ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে মাটিতে পড়ে কোকোর মুখপানে তাকিয়ে রইলো ও৷
অ্যানা এক পলক অলিভারের দিকে তাকিয়ে আবার কোকোর দিকে ফিরে বলল,
— এইটা তোর আজ রাতের ডিনার৷ এইটার শেষ মাংসপিন্ড টুকু খতম না হওয়া পর্যন্ত যেন এর প্রাণ না যায় সেই বিষয়টা নিশ্চিত করবি। তোর প্রতিটা বাইট যেন ও অনুভব করে! নিয়ে যা ওকে তোর সাথে।
অ্যানার কথায় অলিভারের দিকে তাকিয়ে নিজের ধারালো দাঁত গুলো মেলে নিঃশব্দে হিংস্র হাসি দিয়ে কোকো বলে উঠলো,
— আপনার আদেশ শিরোধার্য আম্মা!
আর এরপর অ্যানার হাত থেকে অলিভারের দেহ টা এক টানে ছিনিয়ে নিয়ে জঙ্গলের গভীরতায় মিশে গেলো কোকো। অলিভার সামান্যতম অনুনয় করার সুযোগ টাও আর পেলো না। আর তার কিছুক্ষণ পরেই অলিভারের গগণবিদারী চিৎকারে ভারি হয়ে উঠতে থাকলো শিরো মিদোরির জঙ্গল। কিন্তু সে আর্তনাদ জঙ্গলের পশুপাখি আর অ্যানা ছাড়া কেউ শুনলো না৷
নিজের ধারালো রাম দা খানাকে কাধে নিয়ে, শুভ্র, মেদহীন পাতলা কোমরে ঢেউ তুলে অ্যানা এগিয়ে চলল নিজের মাঞ্জারের দিকে৷ ওর জিনিসে হাত দিলে তার পরিণতি যে প্রচন্ড ভয়াবহ! প্রাসাদের দাসী গুলো তো এ বিষয় সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জ্ঞাত!
চলবে……