বাদশাহ_নামা #পর্বসংখ্যা_৪৪ #রানী_আমিনা

0
5

#বাদশাহ_নামা
#পর্বসংখ্যা_৪৪
#রানী_আমিনা

মীরের এমন হঠাৎ উপস্থিতিতে ইলহান যেন ভড়কালো কিছুটা। হাতের নাইফ টা আলগা হয়ে এলো ওর নিজের অজান্তেই৷ অ্যানা সে সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে এক ঝটকায় ইলহানের হাত থেকে নাইফ টা ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে দিলো দূরে, তারপর তড়িৎ গতিতে ইলহানের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে এক ছুটে মীরের বুকে গিয়ে আছড়ে পড়লো। মীর এক হাতে অ্যানা কে জড়িয়ে নিয়ে হিংস্র দৃষ্টিতে ইলহানের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই অ্যানার খোলা চুলের ওপর দিয়ে শব্দ করে একটা চুমু খেলো অ্যানার মাথায়।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মীর ইলহান কে পর্যবেক্ষণ করলো কিছুক্ষণ। ইলহান নিজেও মেঝে থেকে উঠে মীরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মীরের চাহনির পালটা জবাব দিতে শুরু করলো। ইলহানের পরণে ফর্মাল পোশাক; একটা সাদা রঙা শার্ট, নেভি ব্লু রঙা প্যান্ট, আর শার্টের ওপর বুক খোলা নেভি ব্লু রঙা ওভার কোট।

মীর ঘাড় কাত করে একবার দেখলো ওকে। তারপর অ্যানাকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে নিজের পেছনে দিয়ে দিলো। আর তার পরমুহূর্তেই নিজের হাত জোড়া সামনে উঁচু করে ধরে একটা ঝটকা দিলো। সাথে সাথেই মেটালিক সাউন্ড তুলে ওর শরীরের আর্মর টা অদৃশ্য হয়ে লুকিয়ে পড়লো কোথাও। আর্মর টা অদৃশ্য হতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা পাতলা ফিনফিনা শার্ট পরিহিত মীরের পেশিবহুল বলিষ্ঠ শরীর টা৷
বুকের নিকট থেকে কয়েকটি বোতাম খোলা, বুকের মাঝখানের পুরুষালি খাজ টা স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান হয়ে রইলো। আর সেই সাথে ওর চোখের স্বর্ণালি দ্যুতি ছড়ানো লেন্স জোড়া সহ চোখের সাদা অংশ টাও পুরোপুরি কুচকুচে কালো বর্ণ ধারণ করলো। ওর কালো রঙা শরীরের সাথে চোখ জোড়া যেন একেবারে মিশে গেলো, মনে হতে লাগলো এক জোড়া ফাকা অক্ষিকোটর নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।

অ্যানা একপলক তাকালো মীরের দিকে। তাকিয়েই গলা শুকিয়ে গেলো ওর, চরম বিপদসংকেত! অ্যানা দ্রুত গতিতে মীরের পেছন থেকে সরে ছুটে গেলো কোকোর কাছে, কোকো ততক্ষণে নিজেকে খানিকটা স্বাভাবিক করে নিয়েছে৷ অ্যানা দ্রুত গতিতে কোকো কে মেঝে থেকে উঠাতে উঠাতে আতঙ্কিত গলায় বলল,

— কোকো, এখনি আমাদের এজায়গা থেকে সরতে হবে!

কোকো অ্যানার কথাটা শুনে ভয়ঙ্কর কিছুর আঁচ পেয়ে নিজেও তাকালো মীরের দিকে। মীরের চোখ জোড়া দেখা মাত্রই কোকো উত্তেজিত হয়ে পড়লো৷ অ্যানার সাহায্যে এতক্ষণ উঠলেও এবার অ্যানার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

— আম্মা, আলফাদের এখনো জ্ঞান ফেরেনি, আপনি ওকে দেখুন, আমি নিজে নিজে যেতে পারবো৷

কোকোর কথায় আস্বস্ত হয়ে অ্যানা হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো আলফাদের নিকট। তারপর মেঝেতে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা আলফাদ কে একটানে উঠিয়ে নিজের কাধের ওপর নিলো। এরপর কোকো কে ইশারায় নিজের পেছন পেছন আসতে বলে বেরিয়ে গেলো আগে আগে৷ কোকো আবারও একপলক মীরের দিকে তাকিয়ে এগোলো অ্যানার পেছন পেছন। শেষ বার বাদশাহর এমন চোখ দেখেছিলো যেবার অ্যানা ভার্সিটি থেকে কিডন্যাপ হয়েছিলো, সেদিনের কথা মনে পড়লেও কোকোর আত্মা কেঁপে উঠে৷ আজ এই ইলহানের কপালে কি আচ্ছে সেটা শুধু সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারেন৷ যদিও ইলহান যথেষ্ট শক্তিশালি, তবুও কি হয় বলা যায় না! কোকো এসব ভাভতে ভাবতে এক প্রকার ছুটে বেরিয়ে এলো সেখান থেকে।

ইলহান মীরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মীরের চোখ জোড়া দেখতে লেগে পড়লো। মীরের এমন চোখ ও এর আগে কখনো দেখেনি! আর স্বর্ণালি দ্যুতি ছড়ানো চোখ জোড়া হঠাৎ এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারের ন্যায় কালো বর্ণ কেন ধারণ করেছে সেটাও মাথায় এলো না ওর৷

মীর ইলহানের দিকে শকুনি দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই ওর ঝকঝকা ধারালো দাঁত গুলো বের করে ভয়ঙ্কর ভাবে হাসলো তারপর শক্ত কন্ঠে হাসি মিশিয়ে বলে উঠলো,

— লং টাইম নো স্যি, বিগ ব্রাদার!

ইলহান কোনো প্রতিউত্তর করলো না মীরের কথার। মীরের দিকে শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একবার আপাদমস্তক দেখে নিলো। এই ছেলেটা ওর থেকে প্রচুর শক্তিশালি! কিশোর বয়সে একবার দাদাজানের সাথে ফাইটিং প্রাকটিস করতে গিয়ে মীর অসাবধানতা বসত দাদাজানের চোয়ালে পাঞ্চ মেরে বসেছিলো, সেটা ছোটখাটো পাঞ্চ ছিলো ঠিকই কিন্তু ওই এক পাঞ্চে দাদাজানের দাঁত নড়ে গেছিলো দুটো। কিশোর বয়স পার করে মীর এখন তার যৌবনের মধ্যপথে। এখন নিশ্চয় সে আরও শক্তিশালি হয়েছে!
ইলহান নিজে কখনো মীরের সাথে সম্মুখযুদ্ধে না গেলেও লোকমুখে শুনেছে অনেক অনেক কথা, তাদের মতে মীর ‘ভয়ঙ্কর’। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনো ওকে চটিয়ে ওর সাথে সম্মুখযুদ্ধে যেতে চাইবে না।
ইলহান নিজেও এতগুলো বছরে নিজেকে রাত দিন এক করে প্রস্তুত করেছে, তবুও কোথাও না কোথাও একটা ভয় থেকেই যায়! আর এখন মিরের যে চেহারা আর দেহ ইলহান দেখছে তাতে ওর বুকের ভেতর জুড়ে একটা শীতল ঝড় বয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। কিন্তু এটা মীর কে সেটা বুঝতে দিলেই কাজ শেষ!

ইলহান নিজের মুখের এক্সপ্রেশন টা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে এক পা এক পা করে এগিয়ে এলো মীরের নিকট। তারপর মীরের থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরত্বে দাঁড়িয়ে দু হাত পেছনে বেধে ও বলে উঠলো,

— কংগ্রাচুলেশনস, আমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। কিন্তু একটু ল্যেইট করে ফেললি। আমি তো ভেবেছিলাম এমন যোগ্য, শক্তিশালী, বুদ্ধিমান বাদশাহর আমাকে ধরতে দু সেকেন্ডও লাগবে না। কিন্তু আমার ধারণা দেখি ভুল! আমাকে ধরতে পঞ্চদ্বীপের একমাত্র যোগ্য বাদশাহর দু বছর লেগে গেলো! কাইন্ডা ইনসাল্টিং!

শেষোক্ত কথাটা ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁট উলটে বলল ইলহান। ইলহানের কথা শুনে মীর আবার ঠিক আগের মতো করেই একটা ভয়ঙ্কর হাসি দিলো, তারপর হুট করেই হাসি থামিয়ে বলে উঠলো,

— আমার যোগ্যতা বিচার করার মতো যোগ্যতা যার নেই তার কথা আমি গোনায় ধরিনা। ফাঁকা মাঠ পেয়ে নেড়িকুত্তা যতই লাফাক না কেন, জঙ্গলের সিংহ কে সামনে দেখলে তার লাফানো মুহুর্তেই ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়, পালানোর জন্য সে তখন গর্ত খুজে। এখন, এই মুহুর্তে তোর অবস্থা টা তেমনই হয়েছে!
এতগুলো বছর ধরে এত প্রস্তুতি নিয়ে, এত লাফালাফি করে লাভ কি হলো? সেই তো আমার সামনে এসে ক্যাও ক্যাও করা লাগছে! আচ্ছা, যাকগে ওসব কথা। এখন বল, কি চাই তোর? কিসের জন্য এমন লাফালাফি করছিস? আমার সাম্রাজ্য?

— তোর সবকিছু। লাভ, ফেইম, প্যালেস, পাওয়ার এভরিথিং!

মীরের দিকে মুখ টা উঁচিয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল ইলহান। ইলহানের কথা শুনে মীর এবার কারখানাটা কাঁপিয়ে হোহো করে হেসে উঠলো। ওর সে হাসিতে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত হলো ইলহান। কিন্তু নিজের বিভ্রান্তি টা সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে মুখ খানা আগের মতোই স্থির করে রাখলো। কিছুক্ষণ পর মীর হাসি থামিয়ে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত রেখেই বলে উঠলো,

— মানে…… মানুষের কত রকমের স্বপ্ন!
আচ্ছা! ঠিক আছে, ল্যেটস ফাইট। তুই যদি আমাকে হারিয়ে জিততে পারিস তবে আমার এই সাম্রাজ্য, ফেইম, প্যালেস, পাওয়ার সব তোর৷

— অ্যান্ড হোয়াট অ্যাবাউট আনাবিয়া?

মীরের দিকে আবারও দুকদম এগিয়ে এসে প্রশ্ন ছুড়লো ইলহান। ইলহানের এই প্রশ্নে মীর হঠাৎ করেই ওর চোয়াল জোড়া শক্ত করে নিলো। তারপর ঘাড় টা ডান দিকে সামান্য কাত করে বলে উঠলো,

— শ্যি ইজ মা’ ওয়াইফ, নট অ্যা প্রোডাক্ট যে তাকে নিয়ে তোর সাথে আমি সওদা করবো। আর হ্যাঁ, দ্বিতীয়বার কখনো আমার স্ত্রীর নাম টা মুখে উচ্চারণও করবিনা। যদি করিস তবে আমি ভুলে যাবো যে তুই আমার মায়ের পেটের আপন ভাই!

কথাটা বলে মীর নিজের পিঠের পেছনে ঘাড়ের ওপর দিয়ে দু হাত বাড়িয়ে ওর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া আর্মরের ভেতর থেকে ধাতব শব্দ সহকারে এক ঝটকায় দুহাতে দুইটা বিশালাকার নান চাকু বের করে নিয়ে এলো৷ তারপর দুটোর একটাকে ছুড়ে দিলো ইলহানের দিকে। ইলহান সেটাকে হাত উঁচু করে বিদ্যুৎ গতিতে ধরে ফেলে নিজের সামনে সোজা করে ধরে নান চাকুটার ওপর দিয়ে তাকিয়ে মীরের চোখে চাইলো। আর মীর এক হাতে নান চাকু টা ঘোরাতে ঘোরাতে ইলহানের দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের হাসি আবারও প্রসারিত করে বলে উঠলো,

— ওখ্যেই দ্যেইন, ল্যেটস বিগ্যিন!

মীরের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইলহান হুট করেই ছুটে এসে নান চাকু টা ঘুরিয়ে তড়িৎ গতিতে আঘাত করে বসলো মীর কে, কিন্তু নান চাকুটা মীরের শরীরে আঘাত করার ঠিক আগ মুহুর্তেই ক্ষীপ্র গতিতে, চোখের পলকে সে জায়গা থেকে সরে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো মীর। ব্যাপার টা এতটাই দ্রুত ঘটলো যে ইলহানের ব্যাপারটা বুঝে উঠতে সময় লেগে গেলো কয়েক সেকেন্ড।
ওর থেকে কিছুটা দূরে কাঁধের ওপর নান চাকুটা রেখে ঘাড় কাত করে দাঁড়িয়ে থাকা মীর বাকা হেসে বলে উঠলো,

— ওপ্‌স, মিস হয়ে গেলো!

ইলহান থমকালো এক মুহুর্তের জন্য, মীর কে সে যতটা স্কিল্ড ভেবেছিলো মীর তার থেকেও বেশি স্কিল্ড। একে এক মিলি সেকেন্ড এর জন্যও হালকা ভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিলেই বিপদে পড়তে হবে ওকে।
ইলহান এবার মীরের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মীরের প্রতিটা পদক্ষেপ অত্যান্ত মনোযোগের সাথে দেখতে দেখতে আবারও আক্রমণ চালালো। নান চাকু টা দু হাতে ধরে কয়েকবার দক্ষতার সাথে ঘুরিয়ে মীরের দিকে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গিয়ে মীর কে লক্ষ্য করে একের পর এক আঘাত হানতে শুরু করলো ও। কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হলো।
মীর প্রতিটা আঘাত থেকে নিজেকে অত্যান্ত দক্ষতার সাথে বাঁচিয়ে নিলো প্রতিবার, সেই সাথে মুখে লাগিয়ে রাখলো ওর বাকা হাসি টা, যেটা প্রতি মুহুর্তে ইলহান কে মনে করিয়ে দিতে লাগলো তার ব্যার্থতার কথা!

মীরের এমন গা জ্বলানো হাসি দেখে ইলহান যেন এবার মীর কে আঘাত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো, দাঁতে দাঁত চেপে ও মীরের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করলো আবারও, কিন্তু মীর প্রতিবারের মতো ইলহানের প্রতিটা আঘাত থেকে নিজের শরীর কে ক্ষীপ্র গতিতে সরিয়ে নিয়ে, নিজে কোনো পালটা আঘাত করা ছাড়াই নির্বিকার মুখে তাকিয়ে রইলো ইলহানের ওই রাগে জ্বলে যাওয়া মুখ খানার দিকে।

ইলহান এবার ধৈর্যহারা হলো। হাতের নান চাকু টা ফেলে দিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা নাইফ দুটোকে কুড়িয়ে হাতে নিলো ও। মীর সে নাইফ দুটোর দিকে তাকালো একবার, ইলহানের ডান হাতের নকশা করা নাইফ টা অ্যানার। মীর নিজের হাতে যত্নসহকারে তৈরি করে তার প্রেয়সীকে উপহার দিয়েছিলো। ওই নকশা গুলো কতটা মনোযোগ দিয়েই না ও খোদাই করেছিলো!

মীর নাইফের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে ইলহানের চোখের দিকে তাকালো। ইলহানের চোখ জোড়ায় যেন আগুন জ্বলছে। মীর ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করলো আবারও। তারপর হাতের ইশারায় ইলহান কে ফাইটে আমন্ত্রণ জানালো দ্বিতীয় বার৷

ইলহান এবার শক্ত হাতে নাইফ দুটোকে ধরে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেলো মীরের দিকে, তারপর নাইফ জোড়া দিয়ে মীরের বুক বরাবর মুহুর্মুহু আক্রমণ চালাতে শুরু করলো ও৷ মীর নিজের নান চাকু টা দিয়ে প্রতিবারই দক্ষতার সাথে ঠেকিয়ে দিলো ইলহানের সে আক্রমণ৷ কিন্তু নিজে পালটা আক্রমণ করলো না।
কিন্তু ইলহানের হাতের ধারালো নাইফ এবার কিছুটা ভারী পড়তে শুরু করলো মীরের ওপর। সেটা দেখে ইলহানের ঠোঁটে এবার বাকা হাসি ফুটে উঠলো।

ইলহান এবার শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। মীরের থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে নাইফ দুটোকে শূণ্যে ছুড়ে দিয়ে ঘুরিয়ে এনে দক্ষতার সাথে ধরলো আবারও। তারপর ঝড়ের গতিতে তেড়ে গেলো মীরের দিকে। দুহাতের নাইফ দুটো একটা মীরের বুকের বা দিক আর অন্য টা মীরের পেটের ডান দিক টা লক্ষ্য করে সর্ব শক্তি দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে গেলো, কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে মীর নিজের নান চাকুতে থাকা ধাতব চেইনের সাহায্যে বিদ্যুৎ গতিয়ে আটকে দিলো ওর হাত জোড়া৷ এরপর ওকে আক্রমণরত ইলহানের বুক বরাবর নিজের শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লাথি কষে দিলো একটা। নান চাকুর চেইনের সাথে ঘষে হাত জোড়া ছিলে গিয়ে ইলহান ছিটকে গিয়ে বাড়ি খেলো কামরার দেয়ালে, তারপর মুখ থুবড়ে পড়লো মেঝেতে। হাত থেকে নাইফ জোড়া কোথায় যেন ছিটকে পড়লো!

ইলহান কে অস্ত্রহীন হতে দেখে মীর মেঝেতে পড়ে থাকা অন্য নান চাকুটা তুলে নিয়ে দুটোই আবার রেখে দিলো নিজের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া আর্মরের ভেতরে। তারপর ইলহানের দিকে এগোতে এগোতে নিজের হাত জোড়া এক জায়গাতে নিয়ে শব্দ করে আঙুল ফোটাতে শুরু করলো। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা ইলহানের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে মাথাটা সামান্য ঝুকিয়ে বলে উঠলো,

— ফিল্যিং টায়্যার্ড?

মীরের কথায় ইলহান সাথে সাথেই উঠে দাড়ালো আবার। মীর কে আঙুল ফোটাতে দেখলো ইলহান।
ফ্যিস্ট ফাইট? এটাতে তো সে মাহির! মীর এতক্ষণ তাকে আক্রমণ করেনি ঠিকই, কিন্তু এখন করলেও কোনো সমস্যা নেই। ফ্যিস্ট ফাইটে মীর তাকে কোনোভাবেই হারাতে পারবে না।’
ভেবে নিয়ে নিজের নিজের হাত জোড়া একসাথে করে আঙুল ফোটাতে ফোটাতে মীরের দিকে এগোলো ইলহান। মীর ওকে এগিয়ে আসতে দেখে বাকা হাসলো আবারও। তারপর নিজের ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দ্বারা ইশারায় ইলহানকেই আবার প্রথম আক্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানালো৷

ইলহাম এবার আর ভুল করলো না৷ মীরের দিকে ভালোভাবে নজর রাখলো। এই জানোয়ার টা যা কিছু করে ফেলতে পারে, একে নিয়ে কোনো ভরসা নেই৷’
ইলহান নিজের হাতের মুঠি টা শক্ত করে নিলো। তারপর দাঁতে দাঁত পিষে সজোরে আঘাত করতে নিলো মীরের চোয়াল বরাবর। কিন্তু আঘাত করার আগেই তড়িৎ গতিতে ওর মুঠি করে রাখা হাত টা সামনে থেকে ধরে ফেললো মীর।
ইলহানের মনে হলো যেন কোনো প্রস্তরখন্ডের সাথে বেধে গেছে ওর হাত টা! মীরের দিকে অবাক চোখে তাকালো ও। মীরের মুখ খানাতে এখন আর হাসির ছিটে ফোটাও নেই, চোয়াল জোড়া হয়ে আছে ভয়ঙ্কর রকমের শক্ত।
আর ইলহান কে অবাকতার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে দিয়ে মীর এবার সত্যিকার অর্থেই আঘাত করলো ওকে।

এক হাতে ইলহানের ওকে আঘাত করতে যাওয়া হাত টা ধরে অন্য হাত টা মুঠি করে নিয়ে ওর ইস্পাত-দৃঢ় হাত টা দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে একটা বিশাল আঘাত হানলো ও ইলহানের মুখে, সাথে সাথেই ইলহানের ঘাড় টা যেন ঘুরে গেলো কিছুটা অন্যদিকে। সেই সাথে ছিটকে পড়লো ও মেঝেতে। মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে ছিটকে চলে গেলো এদিক ওদিক।
আঘাতের দাপটে দম আটকে যেতে লাগলো ইলহানের! ঘাড় টাতে হ্যাচকা টান পড়ায় সেটা সোজা করতে পারছে না ও আর, প্রচন্ড ব্যাথাতে চোখ মুখ কুচকে গেলো ওর!

তারপরও মেঝেতে হাত ঠেকিয়ে আবার উঠে দাড়ালো ও। ইলহান উঠে দাড়াতেই মীর ঝড়ের গতিতে এগিয়ে এলো ওর কাছে, তারপর ওর ঘাড় টা ধরে হ্যাচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো,

— কার যোগ্যতা বেশি সেটাই প্রমাণ করতে চাস তো? দ্যেইন হোয়াই নট উই গ্যো ইন ফ্রন্ট অব পিপলস!

আর কথাটা বলেই ইলহানের ঘাড় টা হাতের ভেতরে শক্ত করে ধরেই ঝড়ের গতিতে হেটে, কারখানার লৌহ নির্মিত দরজা গুলোকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে দিতে ও এগোতে শুরু করলো কারখানার এক্সিটের দিকে৷

.

অ্যানা বসে আছে কারখানার বাইরে, কারখানার বিপরীতে, রাস্তার ওপারে থাকা একটি পরিত্যাক্ত ভাঙা চোরা বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলার বর্ডার বিহীন ব্যালকনিতে। কারখানাটির দিকে মুখ করে বসে আছে ও। ফ্যালকন নিজের বার্ড ফর্মে এসে অ্যানার কাধের ওপর বসে আছে। কোকোর শরীর এখন মোটামুটি সুস্থ, মাথা টা মাঝে মাঝে ঘুরে উঠছে যদিও। আলফাদ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে৷ লিও, হাইনা আর জোভি, তিনজনে মিলে বসে আছে অ্যানাদের বিল্ডিংয়ের নিচের মাটিতে।
অ্যানার মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ইলহান মীরের সাথে কখনোই পেরে দিবে না জানা সত্বেও বুকের ভেতর টা ওর অজানা আতঙ্কে বার বার কেঁপে উঠছে৷ হাটুতে থুতনি ঠেকিয়ে দুহাতে পা জোড়া জড়িয়ে ধরে মীরের বর্তমান অবস্থা ভেবে চলেছে ও।

কারখানার চারপাশ টা ঘেরাও করে অস্ত্রহাতে দাঁড়িয়ে আছে শয়ে শয়ে আর্মি। কারখানার ভেতর টা রেইড চালিয়ে সেখান থেকে সমস্ত অপরাধীদের কে ধরে ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেছে এক দল। আর ওরা নিরাপত্তার স্বার্থে এখনো এখানেই অবস্থান করছে৷

এমন সময় কারখানার ভেতর থেকে হঠাৎ করেই বিকট দুম দাম শব্দ হতে শুরু করলো। অ্যানা নিজের ভাবনা থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলো সে শব্দের কারণে। বাইরে থাকা আর্মি গুলো নিজেদের অস্ত্রসস্ত্র গুলো শক্ত হাতে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। বাদশাহর ওপর কোনো আক্রমণ ভারী পড়লেই অ্যাকশনে নেমে যাবে ওরা, কাকে কি করছে দেখবে না৷

কারখানার ভেতর থেকে ভেসে আসা শব্দটা ধীরে ধীরে আরও জোরালো হতে শুরু করলো। আর তারপর শেষ মুহুর্তে এসে কারখানার প্রবেশ পথের দরজাটা ভেতর থেকে আসা কোনো দুর্বার আঘাতে কাঠামো থেকে খুলে উড়ে এসে আছড়ে পড়লো রাস্তার ওপর। আর তার পরমুহূর্তেই এক হাতে ইলহানকে ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসতে দেখা গেলো মীর কে!

ইতোমধ্যেই কুরো আহমারে জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে যে কুরো আহমারের অ্যাবানডন্ড এরিয়াতে কোনো কিছু ঘটছে। ঝাকে ঝাকে আর্মিদেরকে সেদিকে যেতে দেখে উৎসুক জনতার কিছু অংশ সেদিকে আগাতে নিলে আর্মিরা তাদের কে কড়া ভাবে নিষেধ করে যায় সেদিকে এক পাও না এগোতে। কিন্তু আর্মির কথা শুনে তারা না এগোলেও শহরেও এক ঝাক দুষ্টু পোলাপান নিজেদের ড্রোন আকাশে উড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো যে সেখানে আসলে কি হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই কারখানার ধাতব দরজাটা ভেঙে এমন পেশিবহুল, বলিষ্ঠ শরীরের কাউকে বের হতে দেখে তারা চমকালো ভীষণ ভাবে। এবং তাকে দেখে আর্মিদের একটা নির্দিষ্ট দুরত্বে পিছিয়ে যেতে দেখে তারা আরও অবাক হলো।
আর এরপর নিজেদের ড্রোনে ক্যাপচার করতে থাকা ভিডিওটা তারা কুরো আহমারের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং টায় থাকা লাইভ বিলবোর্ডের সাথে কানেক্ট করে দিলো। আর এতক্ষণ ধরে পরিত্যক্ত এরিয়াটায় ঠিক কি চলছে সেটা জানার জন্য উৎসুক হয়ে থাকা জনতা ভিড় জমালো বিল্ডিং টির চারপাশ জুড়ে। ভিড়ের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো উনি স্বয়ং বাদশাহ নামীর আসওয়াদ দেমিয়ান। আর এই কথা টা শোনা মাত্রই হইচই পড়ে গেলো সমস্ত শহর টা জুড়ে। পুরো শহর টা যেন থমকে গেলো একেবারে, সকলে তাকিয়ে রইলো বিলবোর্ডে ফুটে থাকা কুচকুচে কালো রঙা ইস্পাত-দৃঢ় শরীরের পুরুষটির হিংস্র মুখ খানার দিকে।

মীর ইলহান কে ঘাড় ধরে বাইরে নিয়ে এসেই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো নিচে। অ্যানা ব্যালকনির ওপরে ত্রস্ত ভঙ্গিতে নড়ে চড়ে বসলো। আর্মি ফোর্স টা সচকিত হয়ে অস্ত্র গুলো হাত থেকে সম্মান প্রদর্শনমূলক ভঙ্গিতে হাত থেকে নামিয়ে নিজেদের পায়ের সাথে ঠেকিয়ে রেখে দিলো নিচে৷ বাচ্চা রা সকলে মীর কে দেখা মাত্রই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।

মীর ধীর পায়ে এগিয়ে এলো মাটিতে পড়ে থাকা ইলহানের দিকে। ঘাড়ের শিরায় টান পড়ায় ইলহানের জন্য খুব অসুবিধা হয়ে যাচ্ছে। তবুও ও শক্ত হাতে মাটিতে ভর দিয়ে উঠে দাড়ালো। তারপর নিজেও এগিয়ে গেলো মীরের দিকে। মীর ইলিহানের একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে নিজের মাথা খানা সামান্য ঝুকিয়ে ইলহানের উদ্দ্যেশ্যে কঠিন গলায় বলে উঠলো,

— তোকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি, আস্ক ফ’ মা’ ফরগিভনেস। তোকে জীবিত ছেড়ে দেবো। সোজা ডার্ক প্যালেসে চলে যাবি, আর এই জীবনে কখনো ডার্ক প্যালেস থেকে ভুলেও বের হবি না।

— কখনোই না, আমার সাম্রাজ্যের অধিকার আমি আদায় করে ছাড়বো!

নিজের থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা মীরের মুখের দিকে মাথা টা উঁচিয়ে হিসহিসে কন্ঠে উত্তর করলো ইলহান।
মীর ইলহানের দিকে কিছুক্ষণ আফসোস সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো সামান্য, তারপর বলল,

— ঠিক আছে, যেচে মরণ চাইলে আমার তো কিছুই করার নেই!

ঠিক সেই মুহুর্তে মীর কে কিছু বুঝতে না দিয়ে ইলহান হঠাৎ করেই ওর পোশাকের পেছন থেকে এক টানে বের করলো এতক্ষণ ধরে লুকিয়ে রাখা একটি ধারালো নাইফ।
মীর সেটা টের পেয়ে ইলহানের নিকট থেকে সরে যাওয়ার আগেই ইলহান সেটাকে তড়িৎ গতিতে ঢুকিয়ে দিলো মীরের বুকের ডান পাশের রিব কেজের ঠিক নিচে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলো সকলে!

ব্যালকনির ওপর থাকা অ্যানা এ দৃশ্য দেখে যেন তাল হারিয়ে ফেললো, চিৎকার করে উঠে মীরের কাছে যেতে নিলো ও, কিন্তু দূর থেকে মীর অ্যানার দিকে না তাকিয়েই নিজের ডান হাত টা ওর দিকে উঁচু করে ওকে ওখানেই থাকতে নির্দেশ করে পেটের ভেতর ঢুকে যাওয়া নাইফ টা এক টানে বের করে নিয়ে আসলো, গলগল করে গাঢ় মেরুণ রঙা রক্ত বেরিয়ে আসলো ক্ষতস্থান টা থেকে৷ তীব্র ব্যাথায় মুখ কুচকে একটা অস্ফুট শব্দ বের হয়ে আসলো ওর মুখ থেকে। পুরো টা সময় ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও ইলহানের চোখ জোড়ার দিকেই নিবদ্ধ করে রাখলো!

মীরের নিজের শরীর থেকে এতটা নির্বিকার ভঙ্গিতে নাইফ টেনে বের করার দৃশ্য দেখে ইলহান ভড়কালো৷ দুকদম পেছনে সরে গেলো ও সাথে সাথেই৷ কিন্তু সেটা ওর কোনো উপকারে আসলো না৷ মীর নিজের ক্ষতস্থান টাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে ইলহানের দিকে ক্ষীপ্র গতিতে এগিয়ে ঝড়ের বেগে সজোরে একটা ফিস্ট ব্লো বসিয়ে দিলো ইলহানের মুখের ওপর। মীরের আঘাতে নিজের জায়গা থেকে ছিটকে কয়েক মিটার দূরে গিয়ে মাটিতে শব্দ করে আছড়ে পড়লো ইলহান।

কিন্তু মীর এবার আর থামলো না। তড়িৎ গতিতে ছুটে গেলো মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়া ইলহানের নিকট, তারপর ওকে মাটি থেকে হ্যাচকা টানে সোজা করে মাটিতে শুইয়েই ওর বুকের ওপর উঠে বসে ওর মুখের ওপর দু হাতে সজোরে একের পর এক ফিস্ট ব্লো দিতে শুরু করলো ও ঝড়ের গতিতে! বেসামাল হয়ে পড়লো ইলহান, দম নেওয়ার জন্য হাসফাস করতে শুরু করলো ও, কিন্তু দম নেওয়ার ও সুযোগ দিচ্ছে না মীর ওকে৷ একের পর একে সজোর আঘাতে ওর ত্রাহিত্রাহি অবস্থা হয়ে গেলো যেন। ওর মুখের মাংস গুলো থেতলে ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। আর মীরের প্রতিটা আঘাতে সে রক্তগুলো ছিটকে পড়তে লাগলো চারদিকটায়!

ইলহান কয়েকবার হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলো মীর কে, কিন্তু মীর ওর হাত জোড়া দুহাতে ধরে সজোরে ঘুরিয়ে মুচড়ে দিয়ে নিজের হাটুর নিচে দিয়ে মাটিতে চেপে রেখে আবারও করতে শুরু করল একের পর এক আঘাত। মীরের আঘাতের চোটে কয়েকটা দাঁত খুলে ছিটকে বেরিয়ে এলো দম নেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকা ইলহানের মুখ থেকে।

ইলহান এবার মীরের আঘাতের মাঝখানেই প্রবল চেষ্টার পর অতি কষ্টে হাসফাস করতে করতে মুখ থেকে বের করলো কয়েকটি অস্ফুট শব্দ,

— আমাকে ছেড়ে দাও, আমি ক্ষমা চাচ্ছি! আর কখনো ডার্ক প্যালেস থেকে বের হবো না!

মুখনিঃসৃত শব্দ গুলোর সাথে সাথে ওর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো রক্ত মিশ্রিত লালা। মীর হাত উঁচিয়ে আরও আঘাত করতে নিচ্ছিলো, কিন্তু ইলহানের কথাটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্রই ওর আঘাত করার জন্য উঁচু করে রাখা হাত টা স্থীর হয়ে গেলো। ইলহান আঘাত থেকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি পেয়ে সজোরে দম নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করলো! কিন্তু সমস্ত নাক মুখ রক্তে ভর্তি থাকায় ক্ষণে ক্ষণে কাশি দিতে শুরু করলো ও, কাশির সাথে রক্ত বেরিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো বারে বারে।

মীর এতক্ষণ ইলহানের মুখের দিকে ঝুকে ছিলো৷ কিন্তু ইলহানের ক্ষমা চাওয়া শুনে সোজা হয়ে বসলো ও, তারপর পাশের বিল্ডিংয়ের ব্যালকনিতে বসে থাকা অ্যানার দিকে ধীর গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে চোখ দিয়ে প্রশ্ন করলো আসলেই সে তার ভাই কে ক্ষমা করে দিবে কিনা! অ্যানা মীরের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। মীরের ইশারা প্রশ্নে ও আস্তে করে মাথাটা দুবার উপর নিচ করে সম্মতি জানালো৷

অ্যানার থেকে উত্তর পেয়ে মীর ফিরে তাকালো ইলহানের দিকে। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ক্ষতবিক্ষত মুখ খানা হা করে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে৷ মীর এবার উঠে দাড়ালো ইলহানের বুকের ওপর থেকে, তারপর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি আর্মি অফিসার কে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে ইলহান কে নিয়ে ডার্ক প্যালেসে পৌছে দিতে বলল। আর্মি অফিসার টি অন্য আর্মিদের সহায়তায় মাটিতে পড়ে থাকা ইলহান কে টেনে তুললো গাড়িতে। তারপর রওনা দিলো শিরো মিদোরির উদ্দ্যেশ্যে।
আর্মি অফিসার আর তার সাথের আর্মি পার্সোন দের সাথে হাইনা, জোভি আর লিও কে পাঠিয়ে দিলো মীর, যেন রেড জোনে গিয়ে ওদের ওপর কোনো আক্রমণ না হয়।

সকলে সেখান থেকে চলে গেলে অ্যানা ব্যালকনি থেকে নেমে এলো নিচে। তারপর নিজের পেটের ওপর হওয়া ক্ষতস্থান টাকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মীরের নিকট এসে মীর কে নিজের বুকের ভেতর আগলে নিলো। অ্যানার হাতের আদুরে ছোয়া পাওয়া মাত্রই মীর স্বেচ্ছায় নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিলো অ্যানার ওপর, অ্যানা মীর কে ধরে ধীরে ধীরে নিচে নামালো, তারপর রাস্তার ওপর বসে মীরের মাথাটা তুলে নিলো নিজের কোলে। মীর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো পিচ ঢালা রাস্তা টার ওপর৷ আর শোয়া মাত্রই আকাশের দিকে তাকিয়ে ও দেখতে পেলো একটা ড্রোন। তীক্ষ্ণ চোখে ড্রোনের ক্যামেরা দিকে তাকালো ও।

এতক্ষণ বাদশাহর ফাইটিং দেখার পর হা হয়ে যাওয়া জনগণ বাদশাহর পাশে এমন পরমাসুন্দরী একটা মেয়েকে দেখে আরও অবাক হয়ে গেলো। মেয়েটির কোলে বাদশাহর মাথা রাখার এমন রোম্যান্টিক মোমেন্ট দেখে হইচই পড়ে গেলো সমস্ত শহর জুড়ে।
মীরকে উপরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অ্যানা নিজেও যখন মীরের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো তখন ড্রোনের ক্যামেরায় স্পষ্ট ভেসে উঠলো অ্যানার শ্বেতশুভ্র, মাখন কোমল মুখে খানা, আর সেই সাথে দৃষ্টিগোচর হলো ওর হীরকখণ্ডের ন্যায় উজ্জ্বল চোখ জোড়া। আর সেটা দেখা মাত্রই শহরে বিলবোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকা পাবলিক বুঝে গেলো এটা তাদের একমাত্র শেহজাদী, বাদশাহর বিবাহিতা স্ত্রী, শেহজাদী আনাবিয়া ফারহা দেমিয়ান। সমস্ত এরিয়া টা জুড়ে ক্রেজ বয়ে গেলো যেন, চিৎকার চেচামেচি করে উদ্ধার করে ফেললো সকলে, দূর থেকে সে চিৎকার কানে এলো মীর আর অ্যানার।

মীর ড্রোন টার দিকে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে পাশ থেকে এক টুকরো প্রস্তরখণ্ড নিয়ে ছুড়ে মারলো সুউচ্চে অবস্থান করা ড্রোনটির ক্যামেরার দিকে, প্রস্তর খন্ড টা গিয়ে ক্যামেরার লেন্সে বাড়ি খেতেই শহরের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং এর বিলবোর্ডটা থেকে হারিয়ে গেলো বাদশাহ আর তার প্রেয়সী। এতক্ষণ ধরে চিৎকার চেচামেচি করতে থাকা উচ্ছাসে পরিপূর্ণ উৎসুক জনতা মুহুর্তেই হতাশ হয়ে গেলো। এত সুন্দর মুহুর্ত টা ওদের কে দেখতে দিলো না! এটা কি মানা যায়?

চলবে……

(মোটামুটি বড় একটা পর্ব দিয়েছি, কিছুটা এলোমেলো হয়েছে হয়তো। ভুল গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা সবাইকে 💙)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here