হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ৮ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
2

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নির্জন মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’ডার্ক রোমান্স করে।”

“দিগন্ত ক্যাবলা কান্তের ন্যায় নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,’দোস্ত কিভাবে কি করবো?একটু ডিটেইলসে যদি বলতি খুব ভালো হতো।”

“নির্জন দিগন্তের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,’কচি খোকা তুই?আমার থেকে এখন ডার্ক রোমান্সের বিবরণ শুনবি?ভালো করে ভেবে দেখ,আমি একবার বলা শুরু করলে কিন্তুু আর থামব না।”

“দিগন্ত শুকনো ঢোক গিলে বললো,’সরি দোস্ত আমি সব বুঝে গেছি।এমনি তোর সাথে মজা করছিলাম হিহিহি।”

“এদিকে নাদিয়ার বাবা-মা নাদিয়া এবং নিধির ফোনে সন্ধ্যা থেকে অনবরত কল করে যাচ্ছে। কিন্তুু নাদিয়া এবং নিধির ফোন সুইচ অফ।তারপর তারা নিধির বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করলে, তারাও একই উত্তর দেন।বর্তমানে দুই পরিবার নিধিদের বাসায় ড্রয়িং রুমে সোফায় চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে।যেখানে সন্তান সামান্য ব্যথা পেলেও বাবা-মা নিজেদের আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না,সেখানে সন্তানদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবর শুনে কোনো বাবা-মা ঠিক থাকতে পারে না।কিছুক্ষণ আগেই নিধির বাবা রফিক মির্জা এবং নাদিয়ার বাবা জহির সাহেব থানায় গিয়ে নিজের ২মেয়ে এবং নাদিয়ার মিসিং কমপ্লেইন করেছেন।বর্তমানে সেই বিষয়টি নিয়ে ২পরিবার আলাপ-আলোচনা করছে।”

“পুলিশ ওদের ৩জনের ফোনে কল দিয়ে সুইচ অফ পেয়ে IMEI ব্যবহার করে মোবাইলের লোকেশন চেক করে দেখলো, সিরাজগঞ্জের চলনবিলে বারবার সিগন্যাল দিচ্ছে।তারা নিধির এবং নাদিয়ার পরিবার কে ইনফরমেশন দিতেই,তারা একমুহূর্ত দেরি না করে সপরিবারে চলনবিলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।তাদের পেছনে চলছে পুলিশের গাড়ি।রফিক মির্জা সাংবাদিকতায় এসে পুলিশদের কে মাঝে মাঝে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন দিয়ে সাহায্য করতেন।যার দরুণ পুলিশের কাছে যেতেই,পুলিশ অফিসার খুব গুরুত্বের সাথে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।তাছাড়া ৩জন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের এমন একটা বিপজ্জনক জায়গায় যেতে দেওয়ার জন্য, পুলিশ অফিসারের কাছ থেকেও রফিক মির্জা এবং জহির সাহেব কে কম কথা শুনতে হয় নি।মেয়েদের শোকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে দু’টি পরিবার।নিধি এবং নাদিয়ার মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ক্লান্ত প্রায়।তারা তাদের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছেন।বাবা-মায়েরা সন্তানদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে,মাঝে মাঝে তাদের কে অতিরিক্ত স্বাধীনতা দিয়ে ফেলে,পরবর্তীতে যার ফলাফল হয় অতি ভ**য়ং**কর।সবকিছুরই একটা লিমিট থাকা উচিত।লিমিটক্রস করলে বিপদের আ**শং**কা ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না।”

————-
“রাত ৯টা ৩০মিনিট।নদীর তীরে জঙ্গল থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।সেই সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে নদীর ঢেউয়ের গতিবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিগন্ত নাদিয়াকে বললো ,’যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো।নাদিয়া বললো,’আমি যাবো না।আমরা ড্রেস চেঞ্জ করবো আর তুমি লুকিয়ে গিয়ে দেখবে তাই না?আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব।পুরুষ মানুষ কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা মানেই মহা ভুল করা।’বলেই নিধি এবং তোহার দিকে তাকিয়ে বললো,’তোরা গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।আমি এখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দেই।”

” নিধি আড়চোখে একবার নির্জনের দিকে তাকিয়ে দেখলো,নির্জন মোবাইলে কিছু একটা করছে।নিধি ভাবলো,’এই লোকটা কি সবসময় মোবাইলের মধ্যেই ডুবে থাকে?এইজন্যই তো তার এমন চার চক্ষু।’কথাগুলো ভাবতেই হঠাৎ নিধির বাড়ির কথা মনে পড়লো।ভাবলো,’বাবা-মা আমাদের জন্য কত টেনশন করছে কে জানে!বাবা-মা তো আমাদের বিকালের মধ্যে ফিরতে বলেছিলো।অথচ আজ তাদের কথা না শোনার কারণে কতটা বিপদের সম্মুখীন হতে হলো।বাবা কে বিষয়টি ফোন করে জানানো উচিত।আমাদের ভাড়া করা গাড়িটাও তো পাঠিয়ে দিলাম।এই রাতে কিভাবে এখান থেকে বাসায় পৌঁছাবো?এই ২জন পুরুষের সাথে থাকাটাও অনিরাপদ।এর থেকে বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দেই,তারা শুনলে এখানে গাড়ি পাঠিয়ে দিবে।তারপর বকাবকি করলে করুক।এগুলো শোনার অভ্যাস আমার আছে।কিন্তুু আমাদের ৩জনের কাছে তো মোবাইলও নেই।দিগন্ত ভাইয়ার মোবাইল টাও তো নদীমাতা নিয়ে গেলো।এখন কি হবে?”

“একমনে কথাগুলো ভেবে নিধির নির্জনের হাতে থাকা মুঠোফোনের দিকে নজর যেতেই ভাবলো,’এই অহংকারী, গম্ভীর লোকটা কে বলে দেখি,তার ফোন থেকেই বাবা কে কল দিবো।’ভেবে নিধি নির্জন কে বললো,’এই যে শুনছেন..আপনার ফোন টা কি একটু দেওয়া যাবে?আসলে আমাদের ৪জনের ফোন তো নদীতে পড়ে গেছে।এখন শুধু আপনার ফোন অক্ষত আছে।এতো রাত হয়ে গেছে,এখনও বাসায় ফিরে যাই নি, তাই বাবা-মা হয়তো টেনশন করছে।তাই আপনার ফোন থেকে বাবা-মা কে কল করে সবকিছু জানাবো।এতো রাতে এই গ্রাম্য এলাকায় গাড়ি পাওয়াও তো দুষ্কর।”

“নিধির মুখে চিন্তার ছাপ দেখে নির্জন বেশ মজা পেলো।বাঁকা হেসে বললো,’আমার ফোন কেনো লাগবে?তখন তো আপনি বললেন,আপনার নাকি সাহায্য করার মতো মানুষের অভাব নেই।তাহলে আমার হেল্প কেনো লাগবে?”

“নির্জনের এহেন ত্যাড়া টাইপ কথায় নিধি বুঝে গেছে,’ব্যাটা চরম লেভেলের ঘাড় ত্যাড়া।কিন্তুু এই মুহূর্তে নদীর শীতল পানির মতো আমার মাথাও ঠান্ডা রাখতে হবে।এখন রুড বিহেভ করলে হিতে-বিপরীত হয়ে যাবে।দেখা যাবে,বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে না পারলে সারা রাত এই নদীর পাশের জঙ্গলে কাঁটাতে হবে।আর এই ভুতূড়ে এলাকায় রাত্রিযাপন?এটা তো অসম্ভব!পরে সুযোগ বুঝে এই লোকের ১২টা বাজাবো।’ভেবে নিধি ঠোঁটের কোণা কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে নমনীয় স্বরে বললো,’আ’ম এক্সট্রিমলি সরি।আসলে তখন পড়ে গিয়ে খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।শরীরের সাথে মন টাও খুব খারাপ ছিলো;তাই আপনার সাথে ওইরকম ব্যবহার করে ফেলেছি।পরে আমি নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি।আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি।”

“নিধি এতোবার সরি বলার পরেও, নির্জনের মুখের ভাব-ভঙ্গির কিঞ্চিৎ পরিমাণ পরিবর্তন হলো না।সেটা দেখে নিধি বললো,’ফোন টা কি দেবেন না?”

“নির্জন সোডিয়ামের আলো নদীতে পড়ায় নদীর পানিগুলো চিকচিক করছে,সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে,নিধির দিকে এন্ড্রয়েড ফোন টা এগিয়ে দিলো।তারপর পকেট থেকে নিজের বাটন ফোন নিয়ে সুডোকো গেমস খেলায় মত্ত হলো।নির্জনের একটা সুন্দর স্বভাব হলো,’নির্জন যখন যেই কাজ টা করে, সেটা খুব গুরুত্বের সহিত গভীর মনযোগ দিয়ে করে;সেই কাজ টা ছোট হোক বা বড় হোক।”

“নিধি হাতে ফোন পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে নাদিয়া আর তোহা কে বললো,’আমি এখানে আছি।তোরা গাছের আড়ালে গিয়ে চেঞ্জ করে আয়।আমি বাবার সাথে কথা বলে আসছি।’নিধি বলতেই নাদিয়া এবং তোহা চেঞ্জ করতে চলে গেলো।”

“নিধি নির্জনের মোবাইল থেকে ওর বাবা কে ফোন করতেই,প্রথম রিং হওয়ার পর তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন টা রিসিভ করলেন।নিধি ‘হ্যালো’ বলতেই, রফিক মির্জার হৃদয় টা মনে হয় আনন্দে ভরে গেলো।সেই সাথে অচেনা নাম্বার টি দেখে বিস্ময়ের স্বরে বললেন,’নিরুপমা এটা কার নাম্বার থেকে ফোন করেছো?আর তোমরা কোথায়?জানো, আমরা দুই পরিবার তোমাদের কে ফোনে না পেয়ে, তোমাদের জন্য কতো চিন্তা করছিলাম?আমরা থানায় গিয়ে মিসিং কমপ্লেইন করে এসেছি।তোমরা এখন কোথায় আছো মামনি?তোমাদের কোনো বিপদ হয় নি তো?আর তোমাদের ফোনগুলো বন্ধ কেনো?আমরা তোমাদের লোকেশন পেয়েছি,তোমরা চলনবিলে আছো তাই না?পুলিশ টিম সহ আমি এবং নাদিয়ার বাবা সেখানেই আসছি।’একাধারে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রফিক মির্জা।তার পাশ থেকে লাউডস্পিকার দেওয়াতে জহির সাহেব সবকিছু শুনেছেন।তার চোখ জোড়া দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে।নাদিয়া তাদের একমাত্র সন্তান।সন্তান ৫টা হোক বা ১০টা হোক, সব সন্তানই বাবা-মায়ের কাছে সমান।তবে সন্তান এবং বাবা-মায়ের কিছু বাহ্যিক আচার-আচরণের কারণে মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে যোজন-যোজন দূরত্বের সৃষ্টি হয়।জহির সাহেব কাতর কন্ঠে রফিক মির্জা কে বললেন,’নিধি কে জিজ্ঞেস করুন,আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?”

“রফিক মির্জার পাশ থেকে নিধি নাদিয়ার বাবার কন্ঠস্বর স্পষ্ট শুনতে পেলো।ও বুঝতে পারছে, ওর ভুলের কারণে আজ দু’টো পরিবারের এই অবস্থা হয়েছে।এদিকে ওরও তো কম ভোগান্তি হয় নি।’ভেবে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’বাবা আঙ্কেল কে বলো,আমরা ৩জন একদম সুস্থ স্বাভাবিক আছি।তোমরা শুধু আমাদের কে নিরাপদ ভাবে নিয়ে যেতে পারলেই হবে।সবকিছু তোমাদের বাসায় এসে বলবো।আপাতত চিন্তা করার কিছু নেই।আর হ্যা,এগুলোর মধ্যে পুলিশ কে জড়িও না প্লিজ।”

“রফিক মির্জা ধমকের সুরে বললেন,’অবশ্যই পুলিশ কে জড়াবো।তোমাদের ফোন বন্ধ পেয়ে তোমাদের লোকেশন ট্র্যাক করতে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।তোমরা এখন কোথায় আছো সেটা বলো।আমরা ২ঘন্টার মধ্যেই চলনবিলে পৌঁছে যাবো।”

“নিধি মিহি স্বরে ওর বাবা কে ঠিকানা বললো।তারপর ফোন কে**টে দিয়ে চাপা আর্তনাদ করে উঠলো।নীরব স্থান টি তে নদীর ঢেউয়ের সাথে নিধির চাপা আর্তনাদ নির্জন এবং দিগন্তের কর্ণকুহরে রিনরিনিয়ে বেজে উঠলো।”

“দিগন্ত নিধি কে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তাই সে নীরবতা পালন করছে।তাছাড়া নাদিয়া তাকে কোনো নারীর সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে।তাই এইমুহূর্তে নিধির সাথে কথা বলে আবার ঝামেলার সম্মুখীন হতে চায় না সে।এমনিতেই নাদিয়ার রাগ ভাঙানোর জন্য তাকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে।”

“নিধি নির্জনের দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো,’উপকার করার জন্য ধন্যবাদ।’নির্জন ফোনটা নিয়ে আবারও গেম খেলায় মত্ত হলো।”

“নাদিয়া এবং তোহা ড্রেস চেঞ্জ করে আসলো।নিধিকে তোহা বললো,’আপু সোডিয়ামের টিমটিমে আলো ওই জঙ্গলে কিছুটা প্রবেশ করেছে।তবুও ড্রেস চেঞ্জ করতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে।এইবার তুমি যাও।”

“নিধি তোহার দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,’আমি বাবা কে সবকিছু বলেছি।বাবা গাড়ি নিয়ে আসছে।২ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে।আমাদের আর চিন্তা করতে হবে না বোন।”

“নিধির কথাগুলো শুনে নাদিয়া এবং তোহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সেই সাথে হরেক রকম চিন্তারাও উঁকি দিলো।সব ঘটনা জানার পর বাবা-মায়ের রি-অ্যাকশন কি হবে!’তোহার ভাবনার মাঝেই নিধি বললো,’তোরা এখানে থাক; আমি গেলাম।’বলে নিধি ড্রেস চেঞ্জ করতে চলে গেলো।”

“নিধি চলে যাওয়ার পর তোহা এবং নাদিয়া নির্জন এবং দিগন্তের থেকে কিছুটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন করছে।নির্জন সেদিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে দিগন্ত কে বললো,’ওদের তো মনে হয় খুব ক্ষুধা লেগেছে।আমারও খুব ক্ষুধা লেগেছে।সেই যে দুপুরে একবার খেয়েছি।তারপর শুধু একটা হাওয়াই মিঠাই খেয়েছি।দোকানে গিয়ে তো শুধু ড্রেস নিয়ে চলে এলাম,খাবার আনতে ভুলে গেছি।আমার পা খুব ব্যথা করছে।আমি এখানে বসে থাকি,তুই গিয়ে খাবার নিয়ে আয়।”

“দিগন্ত চিবুকে দুই আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললো,’ঠিকই বলেছিস আমারও খুব ক্ষুধা লেগেছে।আমি খাবার নিয়ে আসছি।আমার নাদিয়া আবার ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারে না।আমি এই যাবো আর এই আসবো।’বলে সেখান থেকে দিগন্ত দ্রুত প্রস্থান করলো।নির্জন সেদিকে তাকিয়ে চোখের চশমা টা খুলে ডেভিল হাসি দিয়ে, আবারও চশমা টা ঠিকঠাক করে পড়ে কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।”

—————-
“নিধির ড্রেস চেঞ্জ করা শেষ।জঙ্গলের মধ্যে থাকা দানবাকৃতির গাছগুলোর মধ্যে একা একা ড্রেস চেঞ্জ করার সময় গা ছমছম করছিলো নিধির।আশেপাশে থেকে কিছু নাম না জানা জীবজন্তুুর ডাক ভেসে আসছিলো। ভেজা ড্রেসগুলো নিয়ে নিধি যখনই জঙ্গল থেকে বের হতে যাবে,ঠিক তখনই পেছন থেকে কর্ণকুহরে শুকনো পাতার খড়খড়ে আওয়াজ ভেসে এলো।নিধি বেশ ভ**য় পেয়ে গেলো।চারিদিকে যেই হারে সাপের উপদ্রব বেড়েছে,না জানি নিধির পেছনেও কোনো বি**ষাক্ত সাপ ফণা তুলে ওকে কামড় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’ভেবেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো নিধি।”

“নিধির হঠাৎ করে মনে হলো, এটা কোনো সাপ নয়।কোনো বিশালাকার প্রানী ওর ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।ঘুটঘুটে অন্ধকারে পেছনে দানবাকৃতির ভ**য়ং**কর প্রাণীর অস্তিত্ব আন্দাজ করে, প্রচন্ড ভ**য়ে নিধির শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেছে।এই মুহূর্তে নিধি চি**ৎকার করতেও ভুলে গেছে।”

“নিধি ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে ভাবলো,’জন্তুুটি কোনো আওয়াজ করছে না কেন?নিশ্চয়ই পেছনে ওঁৎ পেতে দাঁড়িয়ে আছে।আমি পেছনে ফিরলেই,খপ করে আমাকে ধরে খেয়ে ফেলবে।নাহ!আমি পেছনে তাকাবো না।চলনিবিলের ঐ ইতিহাস টা হয়তো সত্যি।নিশ্চয়ই এখানে কোনো অশরীরী আছে।না না এখনই আমাকে পালাতে হবে।’ভেবেই নিধি এদিক-সেদিক ভালো করে না তাকিয়ে, ভেজা কাপড় ফেলে দিয়ে,এলোমেলো পা ফেলে ঝড়ের গতিতে দৌঁড়াতে শুরু করলো।”

“নিধি যতো দৌঁড়াচ্ছে ওর মনে হচ্ছে ওর গতিবেগের সাথে তাল মিলিয়ে অশরীরী ভ**য়ং**কর আত্মা টাও দৌঁড়াচ্ছে।মনে হচ্ছে গভীর জঙ্গলের মধ্যে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে।দৌড়ানোর সময় নিধির কয়েকটা স্যাঁতস্যাঁতে মোটা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে হাতে ব্যথা পেয়েছে।তবুও থেমে থাকে নি নিধি।পেছনে না তাকিয়ে জোর কদমে দৌঁড়াতে থাকলো।দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় নিধি হাঁপিয়ে গেলো।তারপর ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়ে দৌঁড়াতে থাকল।ততক্ষণে সেই আগন্তুুক নিধির খুব কাছে চলে এসেছে।নিধি দৌঁড়ানোর সময় খেয়াল না করায়, একটা হেলে পড়া কাঁটা গাছটি যখনই নিধির পেট ভেদ করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হবে,তখনই পেছন থেকে এক জোড়া শক্ত-পোক্ত হাত নিধির মেদহীন পেট জাপটে ধরে হুরমুর করে জঙ্গলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শুকনো পাতার ওপর পড়লো।”

“আকস্মিক ঘটনায় ভড়কে গেলো নিধি।নিধির মনে হচ্ছে কোনো শক্ত পাথরের ওপর ওর মাথা মিশে আছে।ভূমিতে পড়ে থাকা এক জোড়া যুবক-যুবতীর থেকে কিছুটা দূরত্বে মোবাইলে আগে থেকে জ্বালানো ফ্ল্যাশ লাইটের আলোর দিকে একবার তাকিয়ে,ঘামে জুবুথুবু হয়ে ভিজে থাকা নিধি পাথর মানবের বুক থেকে মাথা তুলতেই,ওর চোখ জোড়া ছানাবড়া হয়ে গেলো।মন মহুয়ায় ছড়িয়ে গেলো পুরুষালি শরীর এবং শক্ত হাতের স্পর্শের অদ্ভুত এক শিহরণ।নিধিকে সেই হেলানো ঘা**তক গাছটি থেকে বাঁচাতে গিয়ে,ওকে নিয়ে নিচে পড়ে যাওয়ায়,নির্জনের নতুন রিমলেস চশমাটি ছিটকে গিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে পড়লো।”

“শুকনো পাতায় অর্ধেক ঢাকা মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আবছা আলোয় নির্জন চশমাটির দিকে একবার তাকিয়ে,নিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রুক্ষ স্বরে বললো,’আপনার কি ম**রার খুব শখ হয়েছিলো?আরেকটু হলেই তো হেলানো গাছটি আপনার পেট ভেদ করে বেরিয়ে যেতো।জঙ্গলের মধ্যে অকালেই এক মানবীর ভ**য়া**বহ মৃ**ত্যু হতো।”

“নির্জনের কথা শুনে নিধি শুকনো ঢোক গিলে, তড়িঘড়ি করে নির্জনের বুক থেকে উঠে গেলো।গায়ের ওড়নাটি ঠিকঠাক করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি এখানে এলেন কিভাবে?”

“নির্জনের পুরুষালি বলিষ্ঠ শরীরে যখন নিধির কোমল শরীর আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছিলো,তখনই নির্জনের পুরো শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো।এমতাবস্থায় নির্জন নিজের এই অদৃশ্য অনুভূতির কথা ভেবে বেশ চমকে গেলো।নিজের মনেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,’এটা কি একজন নারীর প্রতি পুরুষের সেই অদৃশ্য অনুভূতি?নাকি দু’টো চুম্বকের মধ্যে অদৃশ্য আকর্ষণ?যার একটু অবহেলার কারণে কতশত পুরুষ আজ মানসিক রোগী হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে!’
নিধি নির্জনের শক্ত বুক থেকে উঠে যেতেই,নির্জনের ধ্যান ভাঙলো।”

“নির্জন শোয়া থেকে উঠে আসন করে নিধির মুখোমুখি বসে গম্ভীর কন্ঠে বললো,’যদি বলি আপনি যার সাথে এতক্ষণ দৌড় প্রতিযোগিতা করছিলেন,আপনার সেই প্রতিদ্বন্দ্বী আমি,বিশ্বাস করবেন?”

“নির্জনের মুখে এহেন কথা শুনে নিধি যেনো বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছালো।উত্তেজিত স্বরে শুধালো,’মানে?”

“নির্জনের বিন্দু বিন্দু ঘামে ভেজা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখস্রিতে রহস্যময় হাসির রেখা ফুটে উঠলো।কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,’এতদিন যাবৎ যতগুলো ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছেন,সব গুলোতেই মিশে আছে আমার হাতের উষ্ণ ছোঁয়া ডার্ক কুইন।”

#চলবে…
(প্রিয় পাঠকমহল প্রতিদিন গল্প দেই,তাই লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে যায়।পর্বটি ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।গঠনমূলক মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করবেন প্লিজ।হ্যাপি রিডার্স।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here