হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ৯ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
99

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“নির্জনের বিন্দু বিন্দু ঘামে ভেজা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখস্রিতে রহস্যময় হাসির রেখা ফুটে উঠলো।কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,’এতদিন যাবৎ যতগুলো ধা’ক্কার সম্মুখীন হয়েছেন,সব গুলোতেই মিশে আছে আমার হাতের উষ্ণ ছোঁয়া ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন কথা শুনে নিধি রীতিমতো বিষম খেলো।গলা শুকিয়ে গিয়ে হঠাৎ করেই ওর কাশি শুরু হলো।নিধি কে এভাবে কাশতে দেখে,পাষাণ হৃদয়ের নির্জনের এই প্রথম কোনো মানবীর জন্য নিজের অজান্তেই খুব মায়া হলো।নির্জনের ইচ্ছে করছে নিধির পিঠে মাসাজ করে দিতে।কিন্তুু নিধি যদি সিনক্রিয়েট করে,তাই নির্জন নিশ্চুপ হয়ে স্থির দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে।ফ্ল্যাশ লাইটের আবছা আলোতে নির্জনের ক্রয় করা শুভ্র রঙা সালোয়ার-কামিজ পরিহিত নারীটিকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।অনবরত কাশির কারণে চোখ-মুখে কিছুটা লাল আভা ছড়িয়ে গেছে।”

“যেখানে নির্জন নিধি কে কয়েকবার পরিপাটি অবস্থায় দেখেছে, তখন তো তার কাছে নারীটিকে এতটা স্নিগ্ধ মনে হয় নি,সেখানে এই মুহূর্তে বিষম খাওয়া মেয়েটির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্জন।তবে কি ভালো লাগার এটাই নব্য সূচনা?নাকি শুধু ক্ষণিকের ভ্রম?’আনমনে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো নির্জন।”

“কয়েক সেকেন্ড পর অপরপক্ষ থেকে উত্তর এলো,’আরেকটু সময় নিয়ে দেখো।যদি এটা ভ্রম হয়,তাহলে তোমার নিষ্ঠুরতম এই ভ**য়ং**কর রাজ্যে এই নারী প্রবেশ করার সাহসও পাবে না।আর যদি দ্বিতীয়বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাহলে বুঝে নিবে তোমার এই ছন্নছাড়া নিঃস্ব জীবনটি কানায় কানায় পূর্ণ করতে ভরা উদ্দমে এই নারীর আগমন ঘটেছে।যে থাকবে তোমার হৃদয়ের অর্ধেক টা জুড়ে,যার নূন্যতম অনুপস্থিতিতে তোমার #হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ হবে।”

“নিজের মনের সাথে কথপোকথন করে কিছুটা স্থির হলো নির্জন।আবারও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিধি কে দেখতে থাকল।ততক্ষণে নিধির কাশি থেমে গেছে।নির্জনের দিকে ক্ষিপ্ত চাহনি নিক্ষেপ করে কঠোর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,’আপনার সাহস হলো কি করে আমাকে আ**ঘাত করার?আপনি একজন পাষাণ,কাপুরুষ,নির্দয় লোক।আমি আপনাকে ঘৃণা করি।”

“আমি আপনাকে ঘৃণা করি।’নিধির চি**ৎকার করে বলা কথাটি নির্জনের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই মনে হলো,কেউ মোটা র**ড দিয়ে খুব জোরে আ**ঘাত করলো।নির্জন উচ্চশব্দ একদম সহ্য করতে পারেনা।সেখানে নিধি নির্জনের খুব কাছে থেকে চেঁচিয়ে পুরো বাক্যটি বলেছে।রাগে নির্জনের বলিষ্ঠ শরীর নিমিষেই কঠোর আকার ধারণ করলো।যেটা ফ্ল্যাশ লাইটের আবছা আলোতে আঁচ করতে পারলো না নিধি।নির্জন এর আগেও নিধির বলা শেষ বাক্যটি প্রিয়জনদের কাছ থেকে একাধিক বার শুনেছে।কিন্তুু কখনো এতটা খারাপ লাগে নি।কিন্তুু আজ নিধির বলা শেষ বাক্যটি নির্জনের হয়তো হৃদয়ে গিয়ে আ**ঘাত হানল।ক্রোধানলে জর্জরিত হয়ে নির্জন নিধির দিকে র**ক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, প্যান্টের পকেট থেকে কভার করা একটি ধা**রালো ছু**রি বের করে নিধির মুখের সামনে ধরে রুক্ষ স্বরে বললো,’এই মেয়ে আপনার সাহস হলো কি করে আমার সাথে হাই ভলিউমে কথা বলার?গলা নামিয়ে কেন কথা বললেন না?আপনি জানেন না,মেয়েদের কন্ঠস্বর সবসময় লো ভলিউমে রেখে কথা বলা উচিত?তবুও এতো জোরে কথা কেনো বললেন?আপনি জানেন, এর জন্য আপনাকে আমি কি শাস্তি দিতে পারি?”

“নির্জনের হাতে চকচকে ধা**রালো ছু**রি দেখে ভ**য়ে আ**তকে উঠলো নিধি।গভীর জঙ্গলে মুখোমুখি বসে আছে দু’জন নর-নারী।একজনের চোখে আ**তং**কের ছাপ স্পষ্ট,আরেকজনের চোখে হিংস্রতার ছাপ বহমান।”

“নিধি কে এভাবে ভ**য় পেতে দেখে, নির্জন মনে মনে খুব খুশি হলো।কিন্তুু পরক্ষণেই নির্জনের খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো।কিন্তুু এমনটা কেনো হলো,তার উত্তর খুঁজে পায় না নির্জন।হঠাৎ হাত থেকে ছু**রি টা ফেলে দিয়ে নিধির দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আপনি একটা ঘোর অন্যায় করেছেন,যার কারণে শাস্তি হিসেবে আপনার সাথে আমি এগুলো করতে বাধ্য হয়েছি।আমার শাস্তির ধরণ আবার সবার থেকে আলাদা।যাইহোক,এখন মূল কথায় আসি।আপনি কিছুদিন আগে আপনার বিয়ে ভাঙার জন্য, আপনার সাথে একটা ছেলের ছবি আপনার বান্ধবী কে এডিট করতে বলেছিলেন।আর সে আমার ছবি আপনার ছবির সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে এডিট করেছে এবং সেই ছবিটা আপনার বান্ধবী সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেছে।সেই মিথ্যা রটনা থেকে আমার বন্ধু মহল অনেক বড় ঘটনা বানিয়ে ফেলেছে।আর পিউর সিঙ্গেল হয়েও আমাকে বিভিন্ন কটুক্তির স্বীকার হতে হয়েছে।এর জন্য একমাত্র দায়ী আপনি।আপনি যদি এই জ**ঘন্য কাজ টা না করতেন,তাহলে আজ আমাকে এভাবে কটাক্ষের স্বীকার হতে হতো না।একবারও কি ভেবে দেখেছেন,এই একই কাজ যদি আপনার সাথে ঘটতো, তাহলে সমাজ এবং পরিবারের কাছে আপনার কতটা সম্মানহানি হতো?আপনি বারবার সত্যি টা বললেও, তারা বিশ্বাস করতো না।আপনাদের মতো কিছু ন্যারো মাইন্ডের ছেলে-মেয়েদের জন্য আজ যুবসমাজ হু**মকির পথে।’একাধারে কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নির্জন।”

“কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিধির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলো,’সেদিন শপিংমলে আপনি আমাকে দেখে চিনতে পেরেছেন।কিন্তুু আপনি ভেবেছেন, আমি আপনাকে চিনি না।তাই বিষয়টি নিয়ে এতটা ঘাটাঘাটি করেন নি।আর আজ যখন জানতে পারলেন, আমি আপনাকে শাস্তি দিয়েছি ওমনি ফট করে বলে ফেললেন,’আমি আপনাকে ঘৃণা করি।’হাহাহা ভালোবাসা যতটা কঠিন,ঘৃণা করা ততটাই সহজ তাই না?সত্যি আমরা মানবজাতি বড়ই অদ্ভুত প্রাণী।’কথাগুলো বলে ঠোঁটের কোণা কিঞ্চিৎ প্রসারিত করলো নির্জন।”

“এতক্ষণ যাবৎ নির্জনের একাধারে বলা কথাগুলো শুনে নিধির ভ**য়গুলো ডানা ঝাপটে উড়ে গিয়ে,হৃদয়ের গভীর স্থানে অনুশোচনা রা বাসা বাঁধলো।নিধি ওর করা ভুল গুলো খুব দৃঢ়ভাবে বুঝতে পারলো।নিজের অজান্তেই কতগুলো মানুষকে মানসিক ভাবে আ**ঘাত করেছে নিধি।নিজের মনের সুপ্ত বাসনা পূরণ করার জন্য, কতগুলো পাত্র কে মিথ্যা কথা বলে নাকচ করে দিয়েছে।অচেনা একটি ছেলের সাথে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে।নিজের মনের ইচ্ছাগুলো কে জয় করার জন্য, আজ বাবা-মায়ের মনেও কতো কষ্ট দিলো।সবকিছু ভেবে নিধির চোখজোড়া বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।”

“নিধিকে এভাবে অনুতপ্ত হতে দেখে নির্জনের কঠোর হৃদয় কিছুটা নরম হলো।এটার উত্তরও নির্জন পেলো না।আপাতত এইসবের উত্তর না খুঁজে নির্জনের ইচ্ছে হচ্ছে, নিধির চোখের পানিগুলো হাত দিয়ে সযত্নে মুছে দিতে।কিন্তুু নিজের অদ্ভুত ইচ্ছা কে খুব কষ্ট করে দমিয়ে রেখে বললো,’কান্না বন্ধ করুন প্লিজ।মেয়েদের এই নাকে-মুখে কান্না আমার সহ্য হয় না;খুব বিরক্ত লাগে।’বলে নির্জন পকেট থেকে টিস্যু বের করে নিধি কে দিলো।নিধি টিস্যু পেপার দিয়ে চোখের পানি নাকের পানি মুছে বললো,’সবকিছুর জন্য আমি খুব দুঃখিত।জানি আমার ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ নেই।তবুও বেহায়া মন তো সেটা শুনবেনা।তাই আবারও বলছি,আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।এইরকম ভুল আমি আর কখনোও করবো না।এখন আমাকে নিরাপদে আগের জায়গাটি তে নিয়ে যান প্লিজ।আমি তো এই জায়গার কিছুই চিনি না।”

“নির্জন গম্ভীর কন্ঠে বললো,’আমার জঙ্গলের প্রতিটি কোণা চেনা।বলতে পারেন, আমি ফরেস্ট ট্রাভেলার।আমার পেছনে আসুন।আর হ্যা, আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।আমার ক্ষমা করার লিস্টে আপনিই প্রথম মানবী।’বলে নির্জন শুকনো পাতার ওপর পড়ে থাকা মোবাইলটি নিয়ে আগে আগে হাঁটতে থাকল।নিধি খুব সন্তর্পণে মাটিতে পড়ে থাকা ছু**রিটি নির্জনের অগোচরে উঠিয়ে নিয়ে ওড়নার নিচে লুকিয়ে সামনের ব্যক্তিটিকে অনুসরণ করে হাঁটতে থাকল।”

“কিছুদূর যাওয়ার পর নিধি দেখতে পেলো, রাস্তা থেকে ভেসে আসা সোডিয়ামের টিমটিমে আলো জঙ্গলের গাছপালার ওপর উপচে পড়ছে।নিধি বুঝতে পারলো,ওরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে এসেছে।হঠাৎ নিধি দাঁড়িয়ে গিয়ে নির্জনকে উদ্দেশ্য করে আমতা আমতা করে বললো,’ইয়ে মানে আমরা মনে হয় নির্দিষ্ট জায়গায় চলে এসেছি।এখন আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত।নইলে দিগন্ত ভাইয়া,নাদিয়া এবং তোহা আমাদের কে একসাথে দেখে উল্টাপাল্টা কিছু মনে করতে পারে।আমি আগে যাই,আপনি পরে আসুন।এতক্ষণে ওরা হয়তো আমাকে খুঁজতে শুরু করেছে।”

“নির্জন মুচকি হেসে বললো,’যদি উল্টাপাল্টা কিছু ভাবে,তাহলে সমস্যা কোথায়?অলরেডি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে জেনে গেছে আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড।”

“নিধি কপট রাগ দেখিয়ে বললো,’ফ্লার্ট করছেন?আমি কিন্তুু এই মুডে নেই।আর আমি তো আপনার কাছ থেকে অলরেডি ক্ষমা চেয়েছি।তবুও আবার রিপিট করে আমায় লজ্জা দিচ্ছেন কেন?”

“নির্জন নিধি কে কিছু বলতে যাবে, তখনই কর্ণকুহরে নাদিয়া এবং তোহার কন্ঠস্বর ভেসে এলো।নাদিয়া এবং তোহা নিধি কে উচ্চস্বরে ডাকছে।এদিকে নাদিয়ার পিছু পিছু দিগন্ত ঘুরঘুর করছে।বারবার নাদিয়া কে খাবার খেতে বলছে।”

“নাদিয়া রুক্ষ স্বরে বললো,’এই তোমাকে না বললাম, আমি আমার বান্ধবী কে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত খাবো না।আর তুমি তখন থেকে আমার পেছনে ঘুরঘুর করছো।বললাম তো খাবো না।”

“দিগন্ত নাদিয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’হানি তুমিই তো সবসময় বলো,’সঠিক সময় খাবার না খেলে তোমার পেট খুব ব্যথা করে।তাই তো আমি…

” হয়েছে তোমার এতো দরদ দেখাতে হবে না।বিয়ের পর তো ঠিকই পাল্টি খাবে।বিয়ের পর আমি না খেয়ে থাকলেও,তুমি ভুলেও জিজ্ঞেস করবে না আমি খেয়েছি কিনা।এখন এইসব ছলাকলা বাদ দিয়ে, বিয়ের পরের জন্য সব আহ্লাদ জমিয়ে রাখো।তখন তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো।’বলেই নাদিয়া আবারও উচ্চস্বরে নিধি কে ডাকতে থাকল।”

“নাদিয়ার কন্ঠস্বর শুনে নিধি নির্জন কে অনুনয়ের সুরে বললো,’প্লিজ আপনি চলে যান।নাদিয়া আর তোহা আপনাকে আর আমাকে একসাথে দেখলে কেলে**ঙ্কারি হয়ে যাবে।আমার ছোট বোন তোহার সাথে আজ একটু মনমালিন্য হয়েছে।এখন আপনাকে আমার সাথে দেখলে ও বাসায় গিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বানিয়ে মা-বাবার কাছে বলবে।আর তারপর তাদের ঝাঁটার পি**টুনি থেকে কেউ আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।”

“নিধির মুখে ঝাঁটার পি**টুনির কথা শুনে,নির্জনের গম্ভীর মুখ ভেদ করে অট্টহাসির ঝলক দেখা গেলো।কয়েক সেকেন্ড পর হাসি থামিয়ে বললো,’ওকে.. ওকে আমি অন্য রাস্তা দিয়ে বের হচ্ছি।এখানে এর আগেও আমার কয়েকবার আসা হয়েছে।তাই সবকিছু মোটামুটি চিনি।আপনি একটু শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন।ওরা হয়তো আপনার কাছাকাছি এসে পড়েছে।’বলে নির্জন নিধির দিকে আনমনে আরেকবার ঘোলাটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। ”

“নির্জন চলে যাওয়ার পর নিধি মনে হয় হাফ ছেড়ে বাঁচলো।নিধি ভাবলো,’লোকটা কে যতটা গম্ভীর আর অহংকারী
ভেবেছিলাম, ততটা খারাপ সে নয়,তবে একটু ব**দমেজাজি।”

“এদিকে নির্জন জঙ্গলের অন্য একটি পথ দিয়ে রাস্তায় পৌঁছে গেলো।নির্জন নদীর বুকে ইটের ক্ষুদ্র টুকরো নিক্ষেপ করে একমনে ভাবতে থাকল,’আমার মধ্যে এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হচ্ছে?আমি তো কিছুক্ষণ আগেও এইরকম ছিলাম না।আমার মধ্যে তো প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব কাজ করছিলো।অথচ মেয়েটার এতোটা কাছাকাছি হতেই, আমার নিষ্ঠুর পৃথিবীর সবকিছু কেমন ওলট-পালট হয়ে গেলো!যেখানে কেউ আমাকে কষ্ট দিলে, তার কান্নায় আমি সুখ খুঁজে পাই।সেখানে মেয়েটির কান্না আমার মনে অদ্ভুত এক দুর্বলতার সৃষ্টি করছিলো।এটা কি সত্যি ভ্রম নাকি অন্য কিছু?’ ভেবে নির্জন কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বলে উঠলো, ‘বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় মনের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করতে হবে।এই নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ আমার সবকিছু কেমন গুলিয়ে দিচ্ছে।”

———–
“দিগন্ত, নাদিয়া এবং তোহা নিধি কে ডাকতে ডাকতে নিধির কাছে পৌঁছে গেলো।ওরা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে রইলো। দেখলো,নিধি ওর চুলগুলো এলোমেলো করে তাল গাছে থাকা পেত্নীর মতো মোটা একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে রসগোল্লার মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে।”

“নিধি কে এভাবে বসে থাকতে দেখে,তোহা হন্তদন্ত হয়ে নিধির কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে নিধির কাঁধে আলতো করে থা**প্পড় দিয়ে উত্তেজিত স্বরে বললো,’আপু রে আপু গো তোমাকে কি ভূতে ধরলো নাকি?তোমার আসতে দেরি হচ্ছিলো বলে, আমরা বুকে অনেক সাহস নিয়ে এই জঙ্গলটিতে তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।আর তুমি এখানে হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছো!আপু এই আপু কথা বলো প্লিজ।’কথাগুলো বলে তোহা নিধির দুই বাহু ধরে ঝাঁকাতে থাকল।হঠাৎ নিধি ধরফরিয়ে উঠে আশেপাশে একবার তাকালো,তারপর পিটপিট করে তোহার দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি এখানে এলাম কিভাবে?আর তুই এভাবে আমাকে ধরে রেখেছিস কেনো?”

“নিধির মুখে এহেন কথা শুনে দিগন্ত, নাদিয়া এবং তোহা ভ**য়ে শুকনো ঢোক গিললো।নাদিয়া এগিয়ে এসে নিধির কাঁধের নিচে হাত দিয়ে ওকে উঠতে সাহায্য করলো।তারপর ভ**য়ার্ত স্বরে নিধি কে বললো,’নিধি এখান থেকে তাড়াতাড়ি চল ইয়ার।আমার মনে হয় তোর ওপর কোনো অতৃপ্ত প্রেতাত্মা ভর করেছিলো।”

“ওদের ৩জনের মুখে আ**তং**কের ছাপ দেখে নিধির খুব হাসি পেলো,ইচ্ছে করছে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে।কিন্তুু এইমুহূর্তে হেসে দিলে ও যে অভিনয় করছে,সেটা ওরা ঠিক ধরে ফেলবে।ছোটবেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিধি ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছে।তাই এইসব অভিনয়ে ও একেবারে পটু।আর এখন যদি ওদের সামনে অভিনয় না করে,তাহলে নাদিয়া এবং তোহা হাজার টা প্রশ্ন করে ওকে শেষ করে ফেলবে।এর থেকে শর্টকাটে অভিনয় করা অনেক শ্রেয়।’ভেবে আবারও কিছু না বোঝার ভান করে বললো,’আমি তো ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়েছিলাম।তারপর মনে হলো, আমার পেছনে দানবাকৃতির কেউ দাঁড়িয়ে আছে।আমি ভ**য় পেয়ে পেছনে না তাকিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলাম, তারপর কি হলো কিছুই জানিনা।”

“নিধির মুখে এমন ভৌতিক কথা শুনে পেছন থেকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে দিগন্ত নাদিয়া কে বললো,’এইসব কথা এইরকম ভৌতিক স্থানে না বলে পরে বলবে।এখানে বললে হয়তো ভূত আন্টি যেকোনো সময় আমার ওপর আ**ক্রমণ করে বসতে পারে।বোঝোই তো হ্যান্ডসাম ছেলেদের প্রতি জ্বীন-ভূত একটু বেশি আকৃষ্ট হয়।এখান থেকে আমাদের তাড়াতাড়ি প্রস্থান করা উচিত।’বলেই দিগন্ত নাদিয়ার হাত ধরে হাঁটা ধরলো।এদিকে তাহাও নিধির হাত ধরে হেঁটে জঙ্গলের বাইরে চলে আসলো।”

“জঙ্গলের বাইরে আসতেই,’সবাই দেখলো, নির্জন নদীর পারে বসে একের পর এক ইটের টুকরো গুলো ছুঁড়ে মা**রছে।সেটা দেখে দিগন্ত এগিয়ে গিয়ে নির্জনের কাঁধে হাত রেখে বললো,’নির্জন তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি?জানিস,ওদিকে নিধির সাথে কত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে?”

“নির্জন চোখ-মুখ কুঁচকে বললো,’এই মেয়েটার নাম নেক্সট টাইম ভুলেও মুখে আনবি না।মনে থাকে যেনো।”

“দিগন্ত অবাক হয়ে নির্জন কে কিছু বলতে যাবে,ঠিক তখনই একটা পুলিশের গাড়ি এবং একটা প্রাইভেট গাড়ি এসে সেখানে থামল।দিগন্ত সেদিকে চলে গেলো।নদীর পারে দু’টো গাড়ি দেখে নিধি,নাদিয়া এবং তোহার মুখমণ্ডল খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো।”

“গাড়ি থেকে পুলিশ সহ রফিক মির্জা এবং জহির সাহেব নামতেই নাদিয়া এবং তোহা দৌড়ে গিয়ে নিজেদের বাবা কে জড়িয়ে ধরলো।নিধি ভাবলো,’এক্ষুনি এখান থেকে আমাদের চলে যেতে হবে,তারপর হয়তো এই বদমেজাজি,গম্ভীর লোকটার সাথে আমার আর দেখা বা কথা হবে না।তাই এখনই যা করার করতে হবে।’ভেবে নিধি সবার অগোচরে দৌড়ে নির্জনের কাছে গিয়ে বললো,’আমাদের গাড়ি এসে পড়েছে।এখন আমরা চলে যাবো।আপনাকে আমার কিছু দেওয়ার আছে।দয়া করে হাত টা একটু বাড়ান।”

“নির্জন খুব অবাক হয়ে কিছু না ভেবে বসা অবস্থায় নিধির দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিতেই,নিধি জঙ্গলে পড়ে যাওয়া নির্জনের সেই ধা**রালো ছু**রি ওড়নার ভেতর থেকে বের করে নির্জনের হাতে দিলো এক টান।মুহূর্তের মধ্যেই নির্জনের হাত থেকে ফিনকি দিয়ে র**ক্ত বের হলো।নিধি সেটা করেই ক্ষান্ত হলো না।নির্জন কিছু বুঝে ওঠার আগেই,তাকে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে ধা’ক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দিলো।আকস্মিক আ**ক্রমণে নদীতে পড়ে গিয়ে কা**টা যুক্ত স্থানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে নিধির দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো নির্জন।”

“নিধি নির্জনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
‘অপেক্ষার প্রতিশোধ অপেক্ষা দিয়ে
যন্ত্রণার প্রতিশোধ যন্ত্রণা দিয়ে,
মৃ**ত্যুর প্রতিশোধ মৃ**ত্যু দিয়ে,
আর ধা’ক্কার প্রতিশোধ নিতে হয় ধা’ক্কা দিয়ে।”

#চলবে..
(প্রিয় পাঠকমহল আজকের পর্ব টি কেমন হয়েছে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে জানাবেন।আর আগামীকাল আমি খুব ব্যস্ত থাকব,তাই গল্প দিতে পারব না।গল্পের জন্য কেউ অপেক্ষা করবেন না।আর (N,Next)কমেন্ট না করে ভালো কিছু মন্তব্য করুন।হ্যাপি রিডার্স।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here