হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ১৭ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
1

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

“প্লিজ প্লিজ নড়াচড়া করবে না। তাহলে মই ভে**ঙে নিচে পড়ে গিয়ে আমি অকালেই অ**ক্কা যাবো।”

“নাদিয়া দিগন্তের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,’জান তুমি এখানে কিভাবে এলে?আর মই পেলে কোথায়?”

“কেনো তোমাদের বাগানেই তো অবহেলা এবং অযত্নে এতো প্রয়োজনীয় একটা জিনিস পড়েছিলো।সেখান থেকে তুলে এনে কাজে লাগিয়েছি।যে মই টি তৈরি করেছে,তাকে আমার পক্ষ থেকে স্পেশাল থ্যাংকস হাহাহা।”

“দিগন্তের হাসি মুখ দেখে নাদিয়াও হেসে দিলো।নাদিয়ার চোখের পানি আবারও টলমল করছে।শুধু নিচে গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষা।দিগন্ত সেটা বুঝতে পেরে,বাম হাত দিয়ে নাদিয়ার চোখজোড়া বন্ধ করে দিয়ে বললো,’এই পানি একদম আমার হানির চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ার সাহস দেখাবি না।তাহলে তোর ঠ্যাং ভে**ঙে গু*ড়া গু*ড়া করে দিবো হুমম।”

“দিগন্তের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো নাদিয়া।পরক্ষণেই আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো।দিগন্তের একটু কাছে এসে চুপিসারে বললো,’জান তুমি তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাও।আমার পরিবারের কেউ দেখে ফেললে, তোমাকে আর আমাকে মাটিতে জ্যান্ত পুঁ**তে ফেলবে।”

“আরে রাখো তোমার ভয়।এই ভয় কে জয় করে তোমাকে আমি এই বাড়ি নামক জেলখানা থেকে নিয়ে যাবো।তুমি রোমিও-জুলিয়েটের কাহিনী পড়োনি?জুলিয়েটের মতো একটু সাহস সঞ্চার করো।এখনও ভীতু রয়ে গেলে।রোমান্স করার সময় কি অবস্থা হবে তাই ভাবছি।”

“দিগন্তের কথা শুনে নাদিয়া কিছুটা রেগে গেলো।দিগন্তের হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে বললো,’দেখো আমার বাড়িকে তুমি একদম জেলখানা বলবে না।ছোট থেকে এই বাড়িতে খুব যত্ন করে আমার বাবা-মা আমায় লালন-পালন করে বড় করেছে,এমনকি এখনও করছে।হ্যা,আজ তোমার সাথে প্রেম করেছি বলে হয়তো বাবা-মা আমার ওপর খুব রেগে আছে।কিন্তুু একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি জুলিয়েট নই,যে এতো সাহস আমার থাকবে।আমি ভীতু আছি ভীতুই ভালো।আমাকে এভাবেই তোমার মেনে নিতে হবে।আর এখন তো সে পথও বন্ধ।ইহান ভাইয়া তো দেশে এসেই আমাকে বিয়ে করবে।”

“নাদিয়ার মুখে ইহানের নাম শুনে দিগন্ত নাদিয়ার ঠোঁট জোড়ায় আঙুল দিয়ে কর্কশ গলায় বললো,’একদম ওই ছ্যাঁচড়া ছেলেটার নাম তোমার মুখে নিবে না।ও আমার চিরশত্রু।তুমি শুধু আমার হবে।আমি নির্জন কে সবকিছু বলেছি।আশা করি নির্জন কিছু একটা করবে।এখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার শেষ ভরসা।”

“নাদিয়া এইবার আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।জানালার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয় মানুষটির গালে আলতো করে হাত রেখে বললো,’সারা রাত মনে হয় ঘুমাও না।চেহারার কি হাল হয়েছে তোমার।আমার তো ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয়।নইলে খুব মাথা ব্যথা করে।তুৃৃমি চিন্তা করো না দিগন্ত, আমি শেষবারের মতো আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।আমি তোমারই থাকব,শুধু তোমারই থাকব।”

“নাদিয়ার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে দিগন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,’যাক অবশেষে আমার অক্লান্ত পরিশ্রম সার্থক হলো।তোমাকে এক পলক দেখার জন্য এবং কথা বলার জন্য মন টা খুব ছটফট করছিলো।তাই তো হাই রিস্ক নিয়ে মই বেয়ে এখানে এসেছি।তবে তোমার রুম চিনতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছে।একবার তোমার বাবা-মায়ের রুমে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়েছি।ভাগ্যিস তারা কথা বলছিলো,তাই আমাকে দেখতে পায় নি।তারপর তোমার ফুফুর রুমে উঁকি দিয়েছি।সে তো দেখলাম সোফায় আরাম করে শুয়ে শশার দুইটা স্লাইস দুই চোখে দিয়ে রবীন্দ্র সংগীত গাইছে।তারপর অবশেষে ব্যর্থ মন নিয়ে তোমার রুমে উঁকি দিতেই, তোমাকে পেয়ে গেলাম।এইবার বোঝো তোমাকে খুঁজে পেতে এই মই টা কে আমার কতটা টানা-হেঁচড়া করতে হয়েছে।এখন আমার হাত খুব ব্যথা করছে।এখন হাতে একটা চুৃুমু দাও,তাহলে ব্যথারা একটু স্বান্তনা পাবে।”

“নাদিয়া কটমটিয়ে বললো,’ইশশ খালি চুমু খাওয়ার ধান্দা তাই না?এখন একদম এইসব চলবে না।চলনবিলের শাস্তির কথা ভুলে গেছো?আপাতত ফ্লায়িং কিস নিয়ে শান্তিতে থাকো।’বলেই নাদিয়া দিগন্ত কে ফ্লায়িং কিস দিলো।”

“নাদিয়ার উড়ন্ত চুমু পেয়ে দিগন্ত রাজ্যের খুশি হলো।একে তো জোটে না,তার ওপর এইটুকু পেয়েছে এটাই অনেক।’ভেবে দিগন্ত মুচকি হেসে নাদিয়ার হাত ধরে বললো,’এরপর থেকে একদম কাঁদবে না।খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো হানি।আমি এখন যাই,কখন আমার হবু শ্বশুর শাশুড়ি পুলিশের চোখ লাগিয়ে দেখে ফেলে,বলা তো যায় না।”

“হ্যা..হ্যা তাড়াতাড়ি যাও।আর সাবধানে নামবে।”

‘ওকে হানি লাভ ইউ সো মাচ।’বলেই দিগন্ত ধীরে ধীরে মই বেয়ে নেমে গেলো।তারপর মই টি যথাস্থানে রেখে ফুরফুরে মন নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।দীর্ঘদিন পর আজ রাতে দিগন্ত একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।”

———
“ঘড়ির কাটায় রাত ৯টা।নিধি নির্জন কে বললো,’প্রায় দেড় ঘন্টা হলো এখানে এসেছি।অবশ্য মা কে তোহার বান্ধবীর বাসায় নোটস আনার কথা বলে বের হয়েছি।কিন্তুু বেশি দেরি হলে,মা খুব বকবে।’বলেই নিধি ওর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা চিরকুট বের করে,নির্জনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,’এটা রাখুন।আপনার জন্য গতকাল মাঝরাত পর্যন্ত জেগে লিখেছি।আমি তো আপনার মতো ৩১টি চিঠি লিখতে পারবো না।তবে এটা কয়েক পৃষ্ঠার চিঠি।আপনার মতো এতটাও সুন্দর করে আমি লিখতে পারি না।শুধু চেষ্টা করেছি।তবে এটাই আমার লেখা প্রথম চিঠি।”

“নির্জন ভাবতে পারেনি,নিধিও তাকে চিঠি দিবে।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকালো নির্জন।মুচকি হেসে নিধির হাত থেকে চিঠি নেওয়ার সময়,একে-অপরের হাতের সাথে স্পর্শ হতেই নির্জনের হাতে মনে হয় অবাধ্য অনুভূতির শিহরন খেলে গেলো।এইমুহূর্তে নিধির হাত যদি নির্জনের বাহুডোরে শক্ত করে বেঁধে রাখা যেতো,তাহলে সবচেয়ে খুশি হতো সে।’ভেবে নির্জন নিধি কে বললো,’অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।আমি এটা একদমই এক্সপেক্ট করিনি।চিঠিটির প্রতিটি শব্দচয়ন আমার হৃদ-মাঝারে সযত্নে রেখে দেবো ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের হাতে স্পর্শ লাগতেই নিধি অপরদিকে ফিরে লজ্জায় মূর্ছা যাচ্ছিলো।হঠাৎ কর্নকুহরে নির্জনের ‘তুমি’ সম্বোধন করে কথাগুলো পৌঁছাতেই নিধির মন অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো।লজ্জাকে সংবরণ করার জন্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো,নিধি বলে উঠলো,’নাদিয়া এবং দিগন্ত ভাইয়ার ঘটনা তো সবই আপনাকে বলেছি।তাদের বিষয়টি একটু দেখবেন প্লিজ।বন্ধু হয়ে বন্ধুর ঘোর বিপদে আমাদের পাশে থাকা উচিত।”

“নির্জন বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে,নিধি লজ্জা লুকাতে কথা ঘুরিয়ে ফেলেছে।তাই নির্জনও আর আগ বাড়িয়ে ওকে লজ্জা দিলো না।এমনিতেই নিধির লজ্জা পাওয়াটা বরাবরই বিরক্ত লাগছে তার।যেখানে
মেয়েদের লজ্জামাখা মুখস্রি দেখে ছেলেরা খুব খুশি হয়।সেখানে ব্যতিক্রম চরিত্রের নির্জনের কাছে বিষয়টি বরাবরই অপছন্দ লাগছে।
নির্জন সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,’ওকে আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”

“তারপর নিধি নির্জনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।নির্জন বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে রুফটপের কর্ণারে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।আকাশে কালো মেঘে বারবার ঢেকে যাওয়া ৩টি তারার দিকে রুঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে,আঙ্গুল উঠিয়ে কঠোর স্বরে বললো,’নেক্সট টাইম আমার ডার্ক কুইনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা ভুলক্রমেও করবেনা;মাইন্ড ইট।’বলেই সেখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।”

———–
“মাহিরের সাথে কিছুক্ষণ ক্যাফেটেরিয়ার বাইরে ঘুরে,তোহাও বিদায় নিলো।আজ মাহির ভীষণ খুশি।অনেকদিন পর তোহা কে খুব কাছ থেকে দেখার এবং কথা বলার সুযোগ হয়েছে।তোহাকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন এবং অপেক্ষার প্রহর যেনো শেষ হচ্ছে না।সত্যি অপেক্ষার যন্ত্রণার মতো নীরব ঘা**তক হয়তো আর কিছু নেই।”

“রাস্তার পাশ দিয়ে তোহা এবং নিধি দ্রুত পদে হেঁটে যাচ্ছে।তোহা নিধি কে বললো,আপু একটু আস্তে হাঁটো।মা কে তো বলেছি,তানিয়ার থেকে নোটস আর সাজেশন নিবো।তানিয়া তো ওদের বাসায় নেই।এখন কি করবো?মিথ্যা কথা ধরা পড়ে গেলে, তুমি খাবে ঝাঁটার পিটুনি আর আমি খাবো মোটা লাঠির পিটুনি।”

“নিধি তোহার কথায় কর্ণপাত না করে,ওর হাত ধরে আরও দ্রুত পা চালালো।বাসার নিচে এসে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে,ব্যাগ থেকে অনার্স ২য় বর্ষের ২টা মোটা নোটবুক এবং সাজেশন বের করে বললো,’এই নে তোর বই।এগুলো আমার বই।বাসা থেকে বের হওয়ার আগে,আমি ভেবেছিলাম যদি তানিয়াদের বাসায় কোনো কারণে যেতে না পারি,তাহলে এই বইগুলো ব্যাকআপ হিসাবে কাজে লাগবে।মা তোর হাতে ২টা বই দেখলেই হবে।বইয়ের সালের দিকে এতটা খেয়াল করবে না।আর হ্যা, তুই তো ভীতুরানী।শোন,বাসায় ঢুকে চেহারা স্বাভাবিক রাখবি।মা যদি কোনোভাবে বুঝে যায়,যে আমরা মিথ্যা বলেছি,তাহলে তোর ফোন কমোডে পড়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না,এমনকি তোর মাহির ও না।”

“তোহা শুকনো ঢোক গিলে বললো,’না আপু ফোন টা ওই নোং**রা জায়গায় ফেলো না প্লিজ।আমি চেহারা একদম স্বাভাবিক রাখবো।তবে তোমার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারিনা।এতো বুদ্ধি নিয়ে কিভাবে ঘুমাও?”

“নিধি বুকের ওপর দুই হাত ভাজ করে বললো,’ইয়াহ.. এগুলো সবই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত হানি নাটস এর কারিশমা।”

“নিধি এবং তোহা দরজায় কলিংবেল দেওয়ার কয়েক সেকেন্ড পর, তাহমিনা বেগম হাসি মুখে দরজা খুলে দিলেন।তাহমিনা বেগমের এমন হাসি মুখ দেখে হকচকিয়ে গেলো নিধি এবং তোহা।নিধি ভাবলো,’আজ মায়ের কি হলো?এতো হাসি-খুশি কেনো?আজ কি আমাদের বা বাবা-মায়ের বার্থ ডে?নাকি বাবা-মায়ের অ্যানিভার্সারি?’ভেবে আজকের তারিখ মনে করে ভাবলো,’নাহ আজ আমাদের কারো বার্থ ডে বা বাবা-মায়ের অ্যানিভার্সারিও না।তাহলে?”

“নিধির ভাবনার মাঝেই তাহমিনা বেগম হাসি মুখে বললেন,’বাইরে শঙের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে আয়।একটা সুখবর আছে।”

“সুখবর’ কথাটি শুনে নিধির কেমন একটা খটকা লাগল।তবে মুখে কিছু বললো না।দুই বোন বাসায় প্রবেশ করলো।তাহমিনা বেগম তোহার হাতে ২টা বই দেখে বললেন,’এতক্ষণ তানিয়াদের বাসায় কি করছিলি?”

“নিধি তোহার দিকে তাকিয়ে দেখলো,তোহা তাহমিনা বেগমের চোখের দিকে না তাকিয়ে,ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।নিধি মনে মনে তোহা কে ‘ভীতুর ডিম’ বলে,তাহমিনা বেগমের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললো,’আসলে মা ওই তানিয়ার মা আমাদের জোর করে তাদের বাসায় বসিয়ে রেখেছিলো।তারপর চাওমিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম ফাস্ট ফুড আইটেম বানিয়ে আমাদের খাইয়েছে।আমি কতো করে বললাম,আমি ডায়েট কন্ট্রোল করি।কিন্তুু আন্টি আমার কথা শুনলোই না।বললো,’একদিন অয়েলি ফুড খেলে কিছু হয় না।তাই আমরা খাওয়া-দাওয়া করে এসেছি।”

“সে কি তোরা খেয়ে এসেছিস?এদিকে আমি আর তোর বাবা তোদের সঙ্গে একসাথে খাবো বলে অপেক্ষা করছি।আচ্ছা বাদ দে,এখন সুখবর টা আমি বলবো নাকি তোর বাবার মুখে শুনবি?”

“নিধি রফিক মির্জার দিকে তাকিয়ে দেখলো,তিনি কাউচে হেলান দিয়ে বসে আছেন।তার হাতে কারো ছবি দেখা যাচ্ছে।নিধির দিকে তাকিয়ে রফিক মির্জা বললেন,’সুখবর টা আমিই বলি।নিরুপমা তুমি এখানে আসো।”

“নিধি ধীর পায়ে ওর বাবার সামনে গেলো।রফিক মির্জা ছবিটি নিধির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,’ছেলেটা কে দেখো।তোমার জন্য আরেকটি বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।আমি ঘটক কে না করেছিলাম,তবুও তিনি ছেলেটির বায়োডাটা দিয়েছেন আর তোমাকে দেখাতে বললেন।ছেলেটির নাম তারিফ।প্রায় ১০বছর যাবৎ পরিবার সহ লন্ডনে সেটেল।বিয়ের পর তোমাকেও নিয়ে যাবে।বাংলাদেশে এসেছে এক মাস হলো।তুমি রাজি হলে আগামীকাল তারা সপরিবারে তোমাকে দেখতে আসবে।ছেলেটি সব দিক থেকে তোমার যোগ্য।আশা করি এইবার তুমি দ্বিমত পোষণ করবে না।”

“রফিক মির্জার কথাগুলো শুনে নিধির মাথায় মনে হয় আকাশ ভে**ঙে পড়লো।ভাবলো,’আমি যদি এখন রাজি হয়ে যাই,তাহলে আমার নির্জনের কি হবে?না না এটা অসম্ভব।আমি এখনই না করে দেবো আর নির্জনের কথা বাবা-মাকে বুঝিয়ে বলবো।বাবা তো আমাকে বলেছে,যে আমার কাউকে পছন্দ হলে তাকে জানাতে।নির্জন তো কোনো দিক থেকে আমার অযোগ্য নয়।বাবার নারাজ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ভেবে পরক্ষণে আবার ভাবলো,’কিন্তুু এখন যদি বাবা কে নির্জনের কথা বলি,তাহলে হাজার টা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।আমার পাশেই তো একটা ‘ভীতুর ছানা’ দাঁড়িয়ে আছে,ও যদি নির্জনের সাথে দেখা করার ব্যাপারটা গড়গড় করে বলে দেয়।তাহলে তো বাবা-মা উল্টাপাল্টা কিছু ভাববে।নাহ!এখন বলবো না।আগামীকাল সকালে বলবো।’
ভেবে নিধি রফিক মির্জা কে কোমল স্বরে বললো,’বাবা আমাকে আজ রাতটুকু সময় দাও।আমি আগামীকাল সকালে তোমায় বলবো।তবে এইবার আর তোমার মেয়ে তোমাদের মাথা হেট করবেনা,আই প্রমিজ।”

“নিধির কথায় আশ্বাস পেলেন রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগম।রফিক মির্জা ভাবলেন,’সত্যি হয়তো নিরুপমা পরিবর্তন হয়েছে।আশা করি এইবার সে আমাদের কথা শুনবে।আর এতটুকু সময় ওকে দেওয়াই যায়।’ভেবে নিধির দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললেন,’ঠিকাছে। আগামীকাল সকালে তোমার মুখ থেকে ভালো কিছু শোনার অপেক্ষায় রইলাম।এখন তোমরা দু’জন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও।”

“রফিক মির্জা বলতে দেরি আছে, নিধি এবং তোহা সেখান থেকে যেতে দেরি নেই।ওরা এক প্রকার চোরের মতো সেখান থেকে পালিয়ে গেলো।কথায় আছে,’চোরের মনে পুলিশ পুলিশ।’ওদের দুই বোনের অবস্থা সেরকম হয়েছে।”

“নিজেদের রুমে ঢুকে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে চেয়ারে বসে পড়লো তোহা।নিধি তোহার দিকে বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘কতগুলো কথা গুছিয়ে বললাম আমি,আর পানি খাচ্ছিস তুই..ভীতু কোথাকার।যাহ আমার জন্য এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে আয়।”

“তোহা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ফ্রীজ ডাইনিং রুমে।মা যদি একবার আমাকে লেবু নিয়ে শরবত বানাতে দেখে,তাহলে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করবে।তখন যদি আমার মুখ থেকে সত্যি কথাটা বেরিয়ে যায়,তখন কি হবে?”

“তখন আর কি হবে..তোর নতুন কেনা ফোন টা যেখানে বলেছিলাম সেখানেই যাবে।৫মিনিট সময় দিলাম।ভণিতা না করে শরবত বানিয়ে আন।নইলে কিন্তুু…

“নিধি আর কিছু বলার আগেই তোহা দ্রুত পায়ে রুম থেকে চলে গেলো।তোহা কে জব্দ করতে পেরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নিধি।পরক্ষণেই নির্জনের কথা মনে পড়তেই,নিধির চোখে মুখে লজ্জারা ধরা দিলো।টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবলো,’ইশশ.. আমার চিঠিটা পেয়ে নির্জনের হাসি মুখ টা দেখার মতো ছিলো।লোকটা কত্ত কিউট।অথচ আমি তাকে এতোদিন খেয়ালই করিনি।অবশ্য আমাদের আশেপাশে সবাই অনেক কিউট।কিন্তুু যার যার মনে যে যে স্থান পায়,সেটাকেই আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি।এই যে আমি যেমন নির্জন কে পর্যবেক্ষণ করছিলাম,আমার দেওয়া ছু**রির আ**ঘাত টি এখনও তার ডান হাতের কব্জিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ক্ষত টা একটু বেশি করে ফেলেছি।সমস্যা নেই বিয়ের পর বেশি করে রোমান্টিক মলম লাগিয়ে দিবো;তাহলেই সে খুশি হয়ে যাবে।’নিজের মনের মধ্যে দুষ্ট ভাবনা গুলো চিন্তা করে লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেললো নিধি।”

———
“ঘড়িতে রাত ১২টা বেজে ২মিনিট।নির্জন বাসায় এসে ল্যাপটপে কিছুক্ষণ কাজ করে,ল্যাপটপ বন্ধ করে,নিধির দেওয়া চিঠি নিয়ে বসেছে।নির্জন চিঠির পাতা গুনে দেখলো,১২পৃষ্ঠার চিঠি লিখেছে নিধি।নির্জন বেশ অবাক হলো এবং সেই সাথে প্রচন্ড খুশি হলো।পুরো চিঠিটি একবার ভাজ করে উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো।চিঠির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’আমরা দু’জন যেমন ইউনিক,আমাদের প্রেমের শুরুটাও তেমন ইউনিক।এই প্রযুক্তির যুগে এসে যেখানে যুবক যুবতী একে-অপরকে এন্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করে,ছবি,ভিডিও আদান-প্রদান করে;সেখানে আমি আর তুমি পুরনো যুগের মতো চিঠির আদান-প্রদান করছি।আমার মনে হয় এটাই সবচেয়ে সুন্দর পন্থা।দু’জন দু’জনের চিঠির জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করা,একে-অপরকে গভীর ভাবে অনুভব করা,প্রিয়জনের চিঠির অপেক্ষায় মাঝে মাঝে চোখের অশ্রু ঝরানো।প্রিয়জন চিঠি দিতে দেরি করলে,তার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুল আবেদন করার মতো গভীর অনুভূতি আর কিছু নেই।এই জন্যই পুরনো যুগের ভালোবাসার জুটি গুলো নিজেদের সত্যিকারের ভালোবাসার অনুভূতি প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে।”

“এই যেমন ৫দিন আমার চিঠি না পেয়ে তুমিও ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলে।অথচ আমি তোমার জন্য আরও ৭টি চিঠি লিখেছিলাম।কিন্তুু ৩১তম চিঠিতেই তোমার সাড়া পেয়ে গেলাম,আহ!কি শান্তি।’বলেই নির্জন বুকের বা পাশে হাত রাখলো।অতঃপর চিঠিটির ভাজ খুলে পড়তে শুরু করলো।নিধি ওর ছোটবেলা থেকে করা একেকটা দুষ্টু-মিষ্টি কাহিনী গুলো,ওর পছন্দ-অপছন্দগুলো চিঠিতে খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে।সেই সাথে শপিংমলে নির্জনের সাথে দেখা হওয়ার পর ওর ভয়ের অনুভূতি,প্রথম র**ক্তমাখা চিঠি পেয়ে ভয়ে আঁতকে ওঠা,চলনবিলে নির্জনের প্রতি ওর রাগ-অভিমান,নির্জনের ৩য় চিঠিতেই প্রেমে পড়ে যাওয়া,প্রতিদিন চিঠির জন্য বেলকনির দোলনায় বসে রাত সাড়ে ১১টায় অপেক্ষার প্রহর কা**টানো এবং ৫দিন যাবৎ নির্জনের চিঠি না পেয়ে আবেগ জড়িত অনুভূতি সবকিছু চিঠিতে লিখেছে।যদিও চিঠির মধ্যে ৩-৪টি বানানে ভুল হয়েছে;সেগুলোতে নির্জন মুচকি হেসে আলতো করে চুমু দিয়েছে।কারণ প্রতিটি শব্দচয়ন নির্জনকে উদ্দেশ্য করে লেখা।সেটা ভুল হলেও নির্জনের কাছে সবচেয়ে সুন্দর।
এক্ষেত্রে অফিসের অন্য কোনো কলিগ যদি বানানে ভুল করতো,সেক্ষেত্রে নির্জন রেগেমেগে রেড পেন দিয়ে ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে কয়েকটা ক্রস চিহ্ন এঁকে দিতো।”

“নিধির পুরো চিঠিতে নির্জনের সবচেয়ে ভালো লেগেছে শেষের কয়েকটি লাইন..

“চেষ্টার সূচনা টা যদি
দু’পাশ থেকেই হয়,
তাহলে সমাপ্তি টা
সুন্দর হতে বাধ্য।”

“একটা সময়ের পর আপনার সুন্দর চেহারা,সুন্দর হেয়ার স্টাইল,সুন্দর পোশাক এসব কিছুই আর আমাকে আকর্ষণ করবেনা।যেটা আকর্ষণ করবে,সেটা হলো আপনার ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্র।”

“নির্জন শেষের লাইন গুলো খুব মনযোগ দিয়ে ৬-৭বার বিড়বিড় করে পড়লো।তারপর সেখানে আলতো করে চুমু দিয়ে হাস্কি ভয়েসে বললো,’আমি তোমার চাওয়ার থেকেও বেশি ব্যক্তিত্ববান এবং চরিত্রবান হয়ে দেখাবো।আর তোমাকেও সেভাবেই তৈরি করবো,যেন নিঃসংকোচে আমার সাথে সারাটা জীবন ওতপ্রোতভাবে মিলেমিশে কা**টাতে পারো মাই ডার্ক কুইন।”

#চলবে…
(প্রিয় পাঠকমহল গল্পটি কচ্ছপের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে,কিছুদিন পর খরগোশের গতিতে এগিয়ে যাবে,তবে রেস্ট করবেনা।আমি আগেই বলেছি এটা নায়ক বিহীন গল্প।এখনও তেমন কিছু শুরু হয় নি।গল্পটা শুধু সাইকো লাভারদের জন্য লিখছি।যারা সামাজিক+বাস্তবভিত্তিক গল্প পছন্দ করেন;তাদের কাছে এই গল্প টি ‘অসহ্যকর’ ছাড়া কিছুই লাগবে না।যদিও আমি গল্পে অনেক বাস্তব কাহিনী তুলে ধরি।তবে সমালোচকগণ সেগুলো তে চোখ বুলিয়ে যাবে।আর নির্জন কি উল্টাপাল্টা কাজ করলো,সেটা নিয়ে পড়ে থাকবে।তবে সবার জীবনে একটা কালো অধ্যায় থাকে।কেউ একদিনে খারাপ হয় না।এতগুলো কথা আগেই বলে রাখছি।কারণ সামনে যা হবে তার জন্য আমি চাই না আপনাদের বাস্তববাদী পাঠিকাদের উল্টা পাল্টা কমেন্ট করে রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটুক।আর যারা অরিজিনাল সাইকো লাভার,তারা ধৈর্য ধরে গল্পটি পড়বে।কারণ তারা সাইকো ক্যাটাগরি সম্পর্কে ধারণা রাখে।তাই তারা সুখ,দুঃখ,সাইকো টাইপ কাহিনী সবকিছু দারুণ ভাবে উপভোগ করবে।এখন অনেকে বলতে পারেন,তাহলে পাবলিক প্লেসে গল্প দেন কেনো?উত্তর হলো-গল্পটি যেনো সাইকো লাভারদের কাছে পৌঁছাতে পারে,তাই।তবুও ভালো একটা বুদ্ধি দেই,এতবার যাদের গল্পটা ইগনোর করতে বলছি,তবুও যদি গল্পটা আপনার সামনে এসে পড়ে,তাহলে আমার আইডি টা সরাসরি ব্লক করে দিবেন।তাহলে আর আপনিও বিরক্ত হবেন না,আর আমিও আপনাদের কটুক্তির পাত্রী হবো না।হেটার্স+লাভার সবাইকে আমি খুব ভালোবাসি।কারণ হেটার্স না থাকলে ভালোবাসার মানুষদের মূল্য বোঝা যায়
না।জানি,অনেকেই আমার শেষের লেখাগুলো পড়বে না।তবে যারা পড়বেন, তারা বিষয়টি খেয়াল রেখে বাকি পর্বগুলো পড়বেন।সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here