হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ১৯ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
1

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত]

“তারপর..তারপর তোমাকে সারা জীবনের জন্য আমার শক্ত বাহুডোরে ভালোবাসার শিকল পড়িয়ে আটকে রাখবো ডার্ক কুইন।”

“অপরপাশ থেকে নিধি বলে উঠলো,’কি হলো কথা বলছেন না যে?”

“নির্জন মিউট খুলে মুচকি হেসে বললো,’ভাবছিলাম কিভাবে আমার হবু শ্বশুরের মন জয় করে তোমাকে আমার ভালোবাসার রাজ্যে নিয়ে আসবো।”

“নির্জনের রসিকতায় মুচকি হাসলো নিধি।তারপর আরও কয়েক মিনিট কথা বলে ফোন রেখে দিলো।”

“কে**টে গেলো ৩ দিন।এই ৩দিনে ঘটে গেছে অনেক কিছু।নির্জন রফিক মির্জার সাথে ফোনে সৌজন্যমূলক কথা বলে এবং সাথে কিছু ইমোশনাল কথা যুক্ত করে,যেন তার মন টা আরও নরম হয়।রফিক মির্জা নির্জনের আচরণে মুগ্ধ হয়ে তাকে বাসায় নিমন্ত্রণ করেন।”

“আজ বিকালে নির্জন ফরমাল ড্রেস পড়ে এবং একটি নতুন রিমলেস চশমা পড়ে,নিধিদের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে কফি খাচ্ছে আর রফিক মির্জার সাথে কুশলাদি বিনিময় করছে।রফিক মির্জা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা জুড়ে দিয়েছেন।নির্জন আগে থেকে জানতো,তিনি একজন জার্নালিস্ট।তাই সে আগে থেকেই তৈরি হয়ে এসেছে।নির্জন অতীত ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমানে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর তথ্য গুলো নিয়ে আরও গুরুত্বের সাথে আলোচনা করছে।কেউ দেখলে অকপটে বলে দিবে,এখানে কোনো রাজনৈতিক মিটিং চলছে।তাহমিনা বেগম সোফার এক কোণে বসে নির্জন কে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন আর মনে মনে ভাবছেন,’ছেলেটা কে দেখলেই মনে হয় ভদ্রতার একটা প্যাকেজ।সত্যি নিধির পছন্দের তারিফ করতে হয়।”

“এদিকে রফিক মির্জা এবং নির্জনের অতীত ইতিহাসের আলোচনা পর্দার আড়াল থেকে মুখস্থ করছে তোহা।ফাইনাল পরীক্ষায় এই সাধারণ জ্ঞানগুলো খুব কাজে লাগবে।আর সেই সাথে নির্জন কে এতো বকবক করতে দেখে তোহা খুব অবাকও হয়েছে। কারণ ও যতবার নির্জন কে দেখেছে,ততবারই মনে হয়েছে লোকটা গুনে গুনে কথা বলে।শুধু নিধির সাথে প্রেম করার জন্য যেটুকু না বললেই নয়।গোমড়ামুখো মানুষও তো প্রেম করে।’ভেবে তোহা এক দৌড়ে রুমে গিয়ে দেখলো,নিধি হালকা লাল রঙের জর্জেট সালোয়ার-কামিজ পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।নিধি কে দেখলে মনে হবে,সে কিছুক্ষণ পর ফ্যাশন শো তে রেড কার্পেটে নজরকারা হাসি দিয়ে কোমর দুলিয়ে হাঁটবে,আর দর্শকদের উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিবে।’ভেবে ঠোঁট টিপে হাসলো তোহা।”

“পা টিপে রুমে ঢুকে নিধির পেছনে গিয়ে ভাউউউ..করে শব্দ করলো।কিন্তুু অদ্ভুত বিষয় হলো,তোহা এতো জোরে চি**ৎকার করার পরেও নিধি ভয় না পেয়ে,উল্টো তোহার কান ধরে বিছানায় বসালো।তারপর কোমরের দুই পাশে দুই হাত রেখে বললো,’দেখতো,আমাকে কেমন লাগছে?নির্জন আমাকে দেখে পা**গল হবে তো?”

“তোহা অবাক হয়ে বললো,’আপু আমি এতো জোরে ‘ভাউউউ..’করার পরেও তুমি ভয় পেলে না কেনো?”

“তোহার কথায় এইবার বিরক্ত হলো নিধি।তোহার ডান গালে আলতো করে থা**প্পড় দিয়ে বললো,’হাদা কোথাকার,তুই যে আমার পেছনে ছিলি,সেটা আমি আয়নায় দেখেছি।তারপর তুই যে পা টিপে টিপে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এসেছিস; সেটাও দেখেছি।”

“কিন্তুু আপু তুমি তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফ্যাশন করতে ব্যস্ত ছিলে;তাহলে?”

“নিধি এইবার হো হো করে হেসে তোহার দুই গাল আলতো করে টিপে দিয়ে বললো,’তোর আপু জাতে মাতাল,তালে একদম ঠিক।কেউ আমাকে কাবু করতে পারবে না বুঝলি?”

“কিন্তুু একজন কাবু করতে পারবে আপু।”

‘কে?’

“আমার সুইট, কিউট এন্ড ইনোসেন্ট নির্জন দুলাভাই।অলরেডি তার কথার সম্মোহনে বাবা-মাকে কাবু করে ফেলেছে।”

“অ্যা কি বললি?আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।বাবা সত্যি এতো তাড়াতাড়ি পটে গেলো?”

“হ্যা আপু;আমি সত্যি বলছি।’বলেই তোহা ড্রয়িং রুমের সব কাহিনী নিধি কে বললো।তোহার মুখে সবকিছু শুনে নিধি তো বেশ অবাক হলো।কারণ নিধি যতটুকু জানে,নির্জন ইন্ট্রোভার্ট টাইপ।খুব কম কথা বলে।গুরুত্বপূর্ণ কথা ছাড়া বেশি কথা বলে না।যদিও সেদিন রেস্টুরেন্টে রুফটপের কর্ণারে দাঁড়িয়ে নিজের এবং তার পরিবার সম্পর্কে অনেক কথা বলেছিলো।তবে সেগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ টপিক ছিলো।”

“নিধির ভাবনার মাঝেই তাহমিনা বেগম রুমে প্রবেশ করে,নিধি কে ড্রয়িং রুমে যেতে বললেন।ড্রয়িং রুমে যাওয়ার কথা শুনে নিধি তো লজ্জায় কুপোকাত।সেদিন রেস্টুরেন্টে নির্জনের সাথে দেখা করলেও,আজ তার সামনে যেতে লজ্জায় যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে।কেনো এমন হচ্ছে,সেটা নিজেও জানেনা নিধি।”

“তোহা যেনো এতদিন এই সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো।মাহির যেদিন তোহা কে দেখতে এসেছিলো,সেদিন নিধি ওকে কম জ্বালায় নি।আজ সেটা শোধবোধ করার সময় এসেছে।’ভেবে তোহা নিধির কাঁধে ধা**ক্কা দিয়ে বললো,’আপু গো তুমি তো দেখছি এখনই লজ্জায় ফালুদা হয়ে যাচ্ছো,ফুলসজ্জার রাত তো এখনও বাকি আছে।সেই সময়ের জন্য লজ্জাটা একটু জমিয়ে রাখো।’বলেই তোহা ঢং করে গেয়ে উঠলো,

🎶ইশারায় শিস দিয়ে
আমাকে ডেকোনা,
কামনার চোখ দিয়ে
আমাকে ডেকো না
লাজে..মরি মরি গো..🎶

“তোহার কন্ঠে এই গান শুনে, নিধি তোহার মাথায় গাট্টা মে**রে কটমটিয়ে বললো,’একবার তোর বিয়েটা হোক,দেখিস সেদিন রাতে আমি কি করি।সকাল বেলা লজ্জায় মুখ দেখাতেও পারবি না হুহহহ…’বলেই দুষ্টু হাসি দিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো।”

“ড্রয়িংরুমে গিয়ে নির্জনের দিকে তাকাতেই দু’জনে চোখাচোখি হয়ে গেলো।লজ্জায় চোখ নামিয়ে মুচকি হাসলো নিধি।এই মুহূর্তে নিধির মনে হচ্ছে,এই প্রথমবার কোনো পাত্র ওকে দেখতে এসেছে।নির্জন এক পলক নিধির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো; অতঃপর চোখ ঘুরিয়ে রফিক মির্জার দিকে তাকালো।রফিক মির্জা নির্জনের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বললেন।তারপর হাসি মুখে বললেন,’যেহেতু তোমরা দু’জন দু’জন কে আগে থেকেই চেনো,আশা করি তোমাদের মধ্যে মোটামুটি কথপোকথন হয়ে গেছে।তবুও যেহেতু আনুষ্ঠানিক ভাবে আমার মেয়েকে দেখতে এসেছো,তাই বলছিলাম তোমরা নিজেদের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য আলাদা কথা বলো।”

“নির্জন যেনো ঠিক এই সুযোগটার অপেক্ষায় ছিলো।রফিক মির্জার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে ভাবলো,’স্মার্ট জামাইয়ের স্মার্ট শ্বশুর।”

“তোহা নিধি কে নির্জনের সাথে ছাদের দখিনা বাতাসে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছে।কারণ তোহা এখন মাহিরের সাথে প্রেমালাপ করবে।নিধি খুব খুশি হলো।খোলামেলা পরিবেশে নির্জনের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগবে।সেই সাথে নিধির প্রিয় গাছগুলোর সাথেও নির্জন কে পরিচয় করিয়ে দিবে।”

“ছাদের কর্ণারে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।দৃষ্টি তার নিধি তে আবদ্ধ।নির্জনের তীক্ষ্ণ চাহনি দিয়ে যেন ভ**স্ম করে দিচ্ছে নিধি কে।নির্জন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,নিধি লজ্জায় যেন মূর্ছা যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে নির্জনের নজর থেকে পালিয়ে যেতে।কিন্তুু সে পথ এখন পুরোপুরি বন্ধ।”

“নিধি নির্জনের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো,সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না।কিন্তুু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওড়নার পিন খুলে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গেছে।নিধি তড়িঘড়ি করে ওড়নার পিন ঠিকঠাক ভাবে লাগিয়ে ভাবলো,’লোকটা কি এইজন্যই এভাবে তাকিয়েছিলো?ছিঃ ছিঃ কিসব ভাবছি আমি?”

“নিধির ভাবুক চেহারা দেখে নির্জন মুচকি হেসে, নিধির দিকে আবারও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।ও চোখের পাতা যেনো আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে, আজ তার প্রিয়তমার ওপর থেকে কিছুতেই পলক ফেলবে না।মন এটা চাইলেও চোখজোড়া যেন এইবার সত্যি হাঁপিয়ে গেছে।নির্জন একবার চোখের পলক ফেলে,আবারও তাকিয়ে রইলো।সেটা দেখে নিধি গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে?”

“নির্জন প্রতিত্তোর দিলো না।তার দৃষ্টি অনড়।নিধি শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আসুন আপনাকে আমার প্রিয় গাছগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”

“নিধির কথা শুনে বাঁকা হাসলো নির্জন।ভাবলো,’নির্জন খান করবে গাছের সাথে পরিচয়?হাউ ফানি!বাই দ্যা ওয়ে ডার্ক কুইন গাছগুলোকে ‘প্রিয়’ সম্বোধন করলো কেনো?নো নো নো.. আমি ব্যতীত আর কিছুই ওর প্রিয় হতে পারবে না।’কথাগুলো ভাবতেই চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেলো।”

“নির্জনের স্বাভাবিক মুখস্রির পরিবর্তন দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো নিধি।আনমনে ভাবলো,’আমি কি কিছু ভুল বললাম?”

“আকস্মিক নির্জন মুচকি হেসে নিধির দিকে একটু এগিয়ে এসে হাস্কি ভয়েসে বললো,’তোমাকে কখনোও নিখুঁত ভাবে দেখা হয় নি।তাই আজ একটু প্রগাঢ় দৃষ্টি দিয়ে দেখে নিলাম।ভ**য়ংকর সুন্দর তুমি ডার্ক কুইন।”

“নির্জনের এহেন কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো নিধি। ‘ডার্ক কুইন’ নামটি কর্ণপাত হতেই নিধির মনে যেনো অদ্ভুত এক শিহরণের সৃষ্টি হলো।কিন্তুু এই মুহূর্তে নির্জন কে ওর দুর্বলতা কিছুতেই বুঝতে দিবে না।তাই আড়চোখে তাকিয়ে বললো, ‘সবসময় শুনেছি ‘খুব সুন্দর,অনেক সুন্দর,সবচেয়ে সুন্দর।কিন্তুু এই প্রথম শুনলাম ‘ভ**য়ংকর সুন্দর।’ এমন কথা কখনোও শুনিনি।”

“নিধির কথা শুনে নির্জন এইবার নিধির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো।নির্জন কে এভাবে কাছে আসতে দেখে অজানা ভয় ঘিরে ধরলো নিধি কে।নির্জন যতো এগিয়ে যাচ্ছে,নিধি তত পিছিয়ে যাচ্ছে।এক পর্যায়ে নিধি ছাদের রেলিঙের সাথে ঠেকে গেলো,তখনই নির্জন নিধির হাত শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নিলো।এই মুহূর্তে নিধি এবং নির্জনের মাঝে ১ ইঞ্চি দূরত্ব হবে।প্রেমে পড়ার পর এই প্রথম নির্জন নিধির এতটা কাছে এলো।নিধির বুকের ধুকপুকানি দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো।অতিরিক্ত ভয়ে ঈষৎ কেঁপে উঠলো নিধি।এদিকে নির্জন আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিধিকে দেখছে।সেটা বুঝতে পেরে প্রবল অনুভূতি এবং অস্বস্তির শেষ পর্যায়ে পৌঁছালো নিধি।ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে নির্জনকে অতিক্রম করে চলে যেতে চাইলো;কিন্তুু পারলো না।কারণ ওর হাত এখনোও নির্জনের শক্ত হাতের মুঠোয় বন্দী হয়ে আছে।”

“নির্জনের জায়গায় এই হাত অন্য কেউ ধরলে হয়তো এতক্ষণে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় খেতো।কিন্তুু এই মুহূর্তে নির্জন কে চেয়েও বাঁধা দিতে পারছে না।এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে নিধির অচেতন হতে বেশি সময় লাগবে না।কোনোক্রমে নিজেকে সামলে নিয়ে,শুকনো ঢোক গিলে বললো,’আমার হাত টা ছাড়ুন প্লিজ।কেউ দেখে ফেললে কেলে**ঙ্কারি হয়ে যাবে।এখানে আমাদের শুধু কথা বলতে পাঠিয়েছে,অন্যকিছু…

“নিধি আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই ওর ঠোঁট জোড়ায় শক্ত দু’টি আঙ্গুলের স্পর্শ হলো।নির্জন নিধির দিকে একটু ঝুঁকে এসে নেশালো স্বরে বললো,’Can I kiss your lips deeply?”

“নির্জনের মুখে এহেন কথা শুনে নিধির চোখজোড়া রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেলো।ওর মনে পড়ে গেলো,ভোরের সেই দুঃস্বপ্নের কথা।অপরদিকে নির্জন এতোটা কাছে থাকায়,সর্বাঙ্গে মনে হয় শীতল স্রোত ধারা বয়ে গেলো।ইচ্ছে করছে নির্জনের নেশালো ডাকে সাড়া দিতে।কিন্তুু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে নিধির নেত্রকোণায় পানি চলে এলো।”

“নিধির ছলছল আঁখিদ্বয় দেখে নির্জনের মন টা যেন দুমড়ে-মুচড়ে গেলো।তৎক্ষণাৎ নিধির হাত ছেড়ে দিয়ে,দূরত্বে সরে গিয়ে বললো,’আ’ম সরি।”

“নিধি চোখজোড়া বন্ধ করে আবার খুললো।অতঃপর নিজের চোখের পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে করুণ স্বরে বললো,’আ’ম এক্সট্রিমলি সরি নির্জন।আমি ওই টিপিকাল প্রেমিকাদের মতো নয়,যে আপনি চাইলেই আমি নিজেকে আপনার কাছে বিলিয়ে দেবো।বিয়ের আগে এটা অসম্ভব।তাছাড়া বাবা-মা যেহেতু আপনাকে পছন্দ করেছে,সেহেতু কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে হবে।তখন তো আমি পুরোপুরি আপনারই হবো।তখন না হয়…
লজ্জায় আর কিছু বলতে পারলো না নিধি।তাই মাথা নত করে ঘনঘন শ্বাস ছাড়লো।”

“নিধি কে অবাক করে দিয়ে উচ্চশব্দে হো হো করে হেসে উঠলো নির্জন।মিনি সেকেন্ড পর গম্ভীর স্বরে বললো,’তুমি পরীক্ষায় পাশ করেছো ডার্ক কুইন,কংগ্রাচুলেশন মাই ড্রিম গার্ল।”

“পরীক্ষায় পাশ করেছি মানে?”

“নিধির উত্তেজিত স্বরে প্রশ্ন শুনে নির্জন মৃদু হেসে বললো,’প্রথমত তোমাকে আমি কখনোই টিপিকাল,গায়ে পড়া মেয়েদের নজরে দেখিনি।তুমি আমার কাছে সবচেয়ে স্পেশাল নারী।যে কিনা আমার ছন্নছাড়া, অগোছালো জীবনটা কে কানায় কানায় পূর্ণ করতে পদার্পণ করেছে।তুমি কি ভেবেছিলে,আমি সত্যি তোমায় লিপ কিস করবো?হাহাহা…সম্পূর্ণ ভুল ভেবেছো।আমি তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম,যে সত্যি তুমি আমার কথায় রাজি হও কিনা।নারাজ হওয়ার জন্য অনেক থ্যাংকস।তবে যদি রাজি হতে তাহলে…

“তাহলে?তাহলে আপনি কি করতেন?”

“আনমনে হাসলো নির্জন।কঠোর স্বরে বলে উঠলো,’তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেবদাস জীবনে পদার্পণ করতাম নিরুপমা।ভেবে নিতাম তুমিও সেই নারীদের মতো,যারা নিজেদের সম্মানের চিন্তা না করে সো কলড বয়ফ্রেন্ডের কাছে কামুকতা মেটানোর জন্য নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়।আজ যদি সত্যি তুমি রাজি হয়ে যেতে,তাহলে তোমার থেকে দূরে গিয়ে তোমাকে ভালোবাসতাম,কিন্তুু কখনো ছুঁয়ে দেখতাম না।কিন্তুু তুমি নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছো ডার্ক কুইন।সত্যি তুমি সবার থেকে অন্যরকম,অসাধারণ।”

“নির্জনের কথাগুলো শুনে নিধি অবাক হয়ে বিজয়ের হাসি দিলো।মনে মনে বললো,’ভাগ্যিস নির্জনের কথায় আমি রাজি হইনি।নইলে আজকের পর থেকে নির্জন বিহীন প্রতিটা দিন আমার ভীষণ কষ্টে কা**টতো।’ভেবে নিধি বললো,’কিছুদিন আগেও ভাবতাম,আমি হয়তো কোনো খারাপ কাজ করেছি,তাই আমার মনের মানুষটি আমার কাছে ধরা দিচ্ছে না।কিন্তুু এখন বুঝতে পারছি, আমি হয়তো নিজের অজান্তেই কোনো ভালো কাজ করেছিলাম।তাই তো আপনার মতো একজন সচ্চরিত্রবান মানুষ কে পেয়েছি।আপনি একদম আমার মনের মতো নির্জন।”

“নিধির কথা শুনে নির্জন আবারও নিধির হাত রেলিঙের সাথে চেপে ধরে বললো,’যদি এখনই একটু আগের চাওয়া কাজ টা করে ফেলি,তখন কি করবে?”

“নিধি মুচকি হেসে দৃঢ়তার সাথে বললো,
‘উহুমম আমি জানি,আমার নির্জন এইরকম কাজ কখনোই করবে না; ১০০%গ্যারান্টি।”

“আমার নির্জন’ নিধির কন্ঠস্বর নিঃসৃত হতেই,নির্জনের ঠোঁটের কোণা কিঞ্চিৎ প্রসারিত হলো।মনে মনে নিজেকেই নিজে বিজয়ের অভ্যর্থনা জানালো।ভেতর থেকে ‘মন’ বাহবার সুরে বললো,’ডার্ক কুইনের মনে নিজেকে দৃঢ় ভাবে গেঁথে নিতে সক্ষম হয়েছো তুমি।ইউ আর আ রিয়েল মাইন্ডগেমার নির্জন।চালিয়ে যাও।”

“নিধির সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে,রফিক মির্জা এবং তাহমিনা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিলো নির্জন।”

“এদিকে তোহা এখনও মাহিরের সাথে কথা বলায় মগ্ন।মাহির সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধারে রোগী দেখে, বিকালের দিকে তোহা কে এক ঘন্টা সময় দেওয়ার জন্য ফ্রী হয়।আর ওই এক ঘন্টা তোহার সাথে মন খুলে কথা বলে।একজন ব্যস্ত চিকিৎসকের কাছ থেকে এক ঘন্টা সময় যেনো তোহার কাছে লক্ষ কোটি গুণ দামি।তোহার ধারনা ছিলো,ডক্টর রা সাধারণত প্রচুর ব্যস্ত থাকার কারণে পরিবার,স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে পারে না।কিন্তুু মাহিরের সাথে কথা বলার পর সেই ধারনা যেন নিমিষেই বদলে গেছে;সব ডক্টর এক নয়।”

———–
“কে**টে গেলো আরও ৪ দিন।রাত ৯টায় এয়ারপোর্টে ইহানের বাবা তার জন্য অপেক্ষা করছে।আর এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে নির্জন এবং দিগন্ত।নাদিয়া দিগন্ত কে ইহানের বিডি তে ল্যান্ড করার সময় বলে দিয়েছে।দিগন্ত নির্জন কে ফোন করে বললে,নির্জন তৎক্ষণাৎ দিগন্তের বাসার সামনে এসে দিগন্ত কে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।”

“ইহান আসতেই,ইহানের বাবা তাকে জড়িয়ে ধরে।নিজের বাবা কে এতদিন পর দেখতে পেয়ে ইহান ও খুব খুশি হয়।দু’জনে কুশলাদি বিনিময় করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়।নাদিয়া আগে থেকেই দিগন্তের হোয়াটসঅ্যাপে ইহানের ছবি পাঠিয়েছিলো।তাই এতো মানুষের ভীরেও দিগন্ত ইহান কে চিনে ফেলে।দিগন্ত ইশারা করে নির্জন কে দেখায়।নির্জন বাঁকা হেসে ইশারা করতেই,দিগন্ত এক দৌড়ে ইহানের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’বন্ধু সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।তুই তো বলেছিলি সন্ধ্যায় প্লেন ল্যান্ড করবে।অথচ এতো দেরি হলো কেনো?”

“দিগন্তের এহেন কান্ডে ইহান হতবাক হয়ে,নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’বন্ধু?কে বন্ধু?কার বন্ধু?আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি প্রায় ১৫বছর পর বাংলাদেশে এসেছি।এখানে আমার কোনো বন্ধু নেই।”

“ইহানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে,ইহানের বাবা বললেন,’ঠিকই তো!আমার জানা মতে,বাংলাদেশে ইহানের কোনো বন্ধু নেই।তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।”

“দিগন্ত মুচকি হেসে আবারও ইহান কে জড়িয়ে ধরলো।অতঃপর কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বললো,’আপনার সাথে নাদিয়ার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো।তাই একটু সাইডে আসুন।আমি নাদিয়ার হাসবেন্ড।”

“দিগন্তের মুখনিঃসৃত শেষোক্ত বাণী শুনে,ইহানের কানে মনে হয় কেউ ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,’হোয়াট?”

“দিগন্ত বাঁকা হেসে বললো,’সাইডে আসুন,তারপর বলছি।”

“বাংলাদেশের মাটিতে তে পা রাখতেই এমন একটি ঝাঁঝালো নিউজ শুনবে,সেটা কল্পনাও করতে পারেনি ইহান।দিগন্ত ইহান কে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ফেইসবুকে ৩দিন আগেও তোর সাথে আমার কথা হলো।অথচ তুই এখন আমার সাথে জোকস করছিস?”

“ইহান মলিন স্বরে জোর করে হেসে বললো,’সরি সরি ইয়ার…জাস্ট কিডিং,ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ।আসলে বাবা ওর সাথে আমার ফেইসবুকে পরিচয় হয়েছে।ওকে আমি বিডিতে আসার দিন এবং সময় বলেছিলাম।তাই ও আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।আমরা একটু কথা বলে আসছি।জাস্ট ৫ মিনিট।”

“ইহানের বাবা হাসি মুখে বললেন,’তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।যাইহোক তোমরা যাও।আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।’বলে তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।”

“নির্জন এয়ারপোর্টের বাইরে রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে,নিধির সাথে চ্যাটিং করছে।নিধি আজ সারাদিন কি কি করলো সবকিছু নির্জন কে বলছে।নির্জন নিধির সাথে আগামীকাল দেখা করার কথা বলছে।নিধি নির্জনের সাথে দেখা করতে রাজি হলো।নিধির সম্মতি পেয়ে নির্জনের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।”

“এদিকে ইহান হাতে একটি কাগজ নিয়ে, চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব নিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সেটা দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছে দিগন্ত।নিজেকে সামলে, ইহানের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’আমাদের বিয়ের প্রমাণপত্র তো স্বচক্ষে দেখলেন।আর তার চেয়েও বড় একটি নিউজ হলো,নাদিয়া ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।আপনি চাইলে সেই রিপোর্টও আপনাকে দেখাতে পারবো।”

“দিগন্তের প্রতিটি কথা যেনো ইহানের হৃদয়ে হাতুড়ির মতো আ**ঘাত হানল।ভাবলো,’তাহলে ২বছর যাবৎ নাদিয়া কে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্ন গুলো কি সব মিথ্যা ছিলো?এতদিন আমি কি শুধু মরিচীকার পেছনে ঘুরেছি?”

#চলবে…
(ইদানীং আমার কিছু পাঠিকাদের দেখছি একজন আরেকজনের কমেন্ট কপি করে আমার গল্পে কমেন্ট করে।এটা কিন্তুু মোটেও ঠিক নয়।একজন গল্প পড়ে তার মনের সব অনুভূতি মিশিয়ে একটা কমেন্ট করে,আর আপনি সেটা দেখে হুবুহু কপি করে পেস্ট করে দিলেন।এতে কিন্তুু আপনার মনের ভাষা টা প্রকাশ করা হলো না।আমি যেহেতু সবার কমেন্ট মনযোগ দিয়ে পড়ি+রিপ্লাই করি,তাই সেটা আমার ব্রেইনে সেভ হয়ে যায়।তাই পরবর্তী কেউ একই কমেন্ট করলে আমি বুঝে যাই।প্লিজ এটা করবেন না।আমি যেমন মনের সব অনুভূতি উজার করে,আপনাদের জন্য কষ্ট করে ঘন্টার পর ঘন্টা হাত ব্যথা করে গল্প লিখি।আপনারাও তেমন নিজের ভাষায় কমেন্ট করুন,দেখবেন আত্মতৃপ্তি পাবেন।আর হ্যা অনেকে বলতে পারেন,যে দু’জন পাঠিকার অনুভূতি এক হতে পারে;তাই কমেন্টে মিলে যায়,এটা কে কপি বলা ঠিক নয়।’উত্তর হলো,আমি কিন্তুু সেটা বলিনি।দু’জনের মনের অনুভূতি মিলে গেলেও হুবহু কাটছাঁট করে সেইম টু সেইম লেখা হতে পারেনা।আর সাইলেন্ট রিডার দের নতুন করে কিছুই বলার নাই।কখনো মন চাইলে কমেন্ট করবেন।আমার ভালোবাসার পাঠকমহলের জন্য ভালোবাসা অবিরাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here