হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ #পর্বঃ২৭ #লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

0
1

#হৃদয়ে_রক্তক্ষরণ
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃমেহের_আফরোজ

[কঠোর থেকে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য।]

“শরীরের প্রতিটি কনফিগারেশন,চোখের মায়া এবং হৃদয়ের বেদনা, সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো।এই মুহূর্তে অনাবৃত দু’টি দেহের প্রেম যেন আরও গভীর থেকে গভীর হতে থাকল।”

“দীর্ঘ একটি রাত পেরিয়ে জানালার শুভ্র রঙা পর্দা ভেদ করে,সূর্যের তীর্যক রশ্মি ছড়িয়ে পড়লো নাদিয়ার
চোখের পাতায়।ঘুম ভে**ঙে গেলো নাদিয়ার।সকালে ঘুমের মধ্যে এই রশ্মি মনে হয় জ্বালাতন করে নাদিয়াকে।তাই তো সে নিজের রুমে মোটা খয়েরি রঙের পর্দা টানিয়েছিলো।সূর্যের সোনালী আভা খয়েরি রঙা পর্দা ভেদ করে রুমটা আরও গাঢ় খয়েরি করে তুলতো।
বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে, চোখজোড়া খুলে দিগন্তের দিকে তাকাতেই দেখলো,নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সে।”

“দিগন্তের এভাবে নাক ডাকা দেখে নাদিয়া হাসবে না কাঁদবে, না রাগ করবে, বুঝে উঠতে পারলো না।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ভাবলো,
‘গতকাল রাতে একটুও ঘুমাতে দাও নি আমায়।রোমান্টিক টর্চার করে শরীরের নাজেহাল অবস্থা করেছো।বেহায়া,নি”র্লজ্জ পুরুষ।আর এখন আরামে নাক ডেকে ঘুমানো হচ্ছে তাই না?দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।রাতে আমাকে জ্বালিয়েছো,এখন আমি তোমায় জ্বালাবো।’
বলেই নাদিয়া আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো, রুমের কর্ণারে টেবিলের সাইডে একটি আয়রন।নাদিয়া কুটিল হেসে সেখানে গিয়ে আয়রনের ক্যাবল সুইচের মধ্যে ঢুকিয়ে,সেটাকে হালকা গরম করলো।তারপর মুখে দুষ্টু হাসি লেপ্টে আয়রন টি দিগন্তের অর্ধ-নগ্ন পিঠে হালকা ছোঁয়াতেই, ধরফরিয়ে উঠে বসলো দিগন্ত।আয়রনের তাপে পিঠের চামড়া মনে হয় পু**ড়ে গেলো।”

” দিগন্ত ভ্রুকুটি করে চি**ৎকার করে উঠলো,
‘ও মাগো ও বাবা গো..আগুন লেগেছে আগুন লেগেছে।”

“নাদিয়া তৎক্ষণাৎ দিগন্তের মুখ চেপে ধরে বললো,
‘ওই আগুন লাগে নি।এটা আয়রনের তাপ।আমি দিয়েছি।’

” মানে?তুমি আমায় এভাবে ছ্যাঁকা দিলে কেনো হানি?কি ক্ষতি করেছি তোমার?”

“নাদিয়া কটমটিয়ে তাকিয়ে, দিগন্তের মুখের সামনে আয়রন ধরে বললো,
‘ওলে লে..কিছু বোঝেনা।ল্যাদা বাবু..একদম সাধু সাজার চেষ্টা করবেনা বলে দিলাম।সারারাত আমার শরীর ব্যথা বানিয়ে এখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছো,তাই না?এইজন্যই তোমায় শাস্তি দিলাম।”

“হকচকিয়ে গেলো দিগন্ত।আমতা আমতা করে বললো,
‘হায় হায় রে..এতো দেখছি গুন্ডি মেয়ে বিয়ে করে এনেছি।ও আল্লাহ! বাঁচাও আমায়।”

“আবারও মুখ চেপে ধরলো নাদিয়া।তীব্র স্বরে বললো,
‘আরেকটা কথা বললে, মুখের ওপর এটা লাগিয়ে দিবো কিন্তুু।আমার শরীর এখনও বিষের মতো ব্যথা করছে।’
বলেই মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।”

“দিগন্ত কিছুটা ভীতু সন্ত্রস্ত হয়ে বললো,
‘আমার কোনো দোষ নেই হানি।নির্জন আমাকে বলেছিলো,ভালোবাসার মানুষের রাগ ভা**ঙাতে হলে ডার্ক রোমান্স করতে হয়;তাই করেছি।কিন্তুু এখন থেকে ভদ্র ভাবে সবকিছু হবে হানি।তুমি চাইলে এখনই তার নমুনা দেখাতে পারি।শুরু করি?আমার কিন্তুু মুড অলরেডি চলে এসেছে।এলোমেলো নাইটি টাতে তোমাকে যা লাগছে না।’বলে ঠোঁট টিপে হাসলো দিগন্ত।”

“ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো নাদিয়া।ভাবলো,
‘কি তিঁতা বেহায়া পুরুষ!আয়রনের ছ্যাঁকা খেয়েও মুখ দিয়ে লাগামহীন কথা বের হচ্ছে।’
নাদিয়ার ভাবনার মাঝেই, ওর কপালে,গালে,ঘাড়ে কয়েকটা টুপটাপ চুমু দিলো দিগন্ত।বাঁকা হেসে বললো,
‘হানি,আমার কিন্তুু সত্যি মুড এসে গেছে।তুমি চাইলে প্রমাণ দেখাতে পারি।”

“দিগন্তের কথা শুনে ঝগড়ুটে সুরে যখনই নাদিয়া কিছু বলতে যাবে,তখনই দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।সেদিকে তাকিয়ে দিগন্ত বিরক্তির সুরে বললো,
‘যাহ!এখন আবার কে এলো?এখনই প্রমাণ দেখাতে যাচ্ছিলাম,আর মাঝখানে শত্রুপক্ষ কাবাব মে হাড্ডি হলো।ধুর..ভাল্লাগে না।’
বলেই নাদিয়ার হাতে আবারও কয়েকটা চুমু দিলো।তারপর নাদিয়ার বাহু ধরে কাছে টেনে গালে,গলায়,ঘাড়ে আরও গভীরভাবে চুম্বন করলো।”
মুচকি হেসে বললো,
‘একটু পর আবার জমিয়ে বাসর করবো,ওকে হানি।আপাতত রেস্ট করো।”

“নাদিয়া হতভম্ব হয়ে কিছু বলতে যাবে,তখনই দিগন্ত গা জ্বালানো হাসি দিয়ে ঝটপট বিছানা থেকে নেমে, দরজা খুলে দিলো।”

“দরজা খুলতেই দেখলো,দিগন্তের বাবা থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো দিগন্ত।ভ্রুকুটি করে বললো,
‘বাবা তুমি এখানে?”

“দিগন্ত তোমার দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই রিমন কে গতকাল রাতে কমিউনিটি সেন্টারের থার্ড ফ্লোরে, ওয়েটারদের চেঞ্জিং রুমে কেউ ভয়ং**কর ভাবে মা**র্ডার করেছে।'(হতাশা মিশ্রিত মুখ মন্ডল নিয়ে ভারিক্কি সুরে কথাগুলো বললেন সজিব চৌধুরী।)

” আ**তংকের ছাপ ফুটে উঠলো দিগন্তের মুখমন্ডলে।বিস্ময়ের স্বরে শুধালো,
‘কিভাবে,কি হয়েছে বাবা?তোমার কথা শুনে মাথা টা হ্যাং হয়ে গেলো।”

“সজিব চৌধুরী অতি সংক্ষেপে সেই নৃ**শংস খু**নের বর্ণনা দিয়ে, মুখমন্ডল বিবর্ণ করে ফেললেন।তার চোখে-মুখে ভেসে উঠছে চিন্তার ছাপ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘এই নৃ**শংস খু**নের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজফিডে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে।সেই সাথে রিমনের কু”কর্ম গুলোও ভিডিও আকারে ফাঁস হয়ে গেছে।তুমি চেক করলেই দেখতে পাবে।”

“দরজার অপরপাশ থেকে বাবা-ছেলের কথাগুলো শুনে, ভয়ে গায়ে কা**টা দিয়ে উঠলো নাদিয়ার।কি লোমহ**র্ষক ঘটনা!নাদিয়া বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে ডাটা অন করে, ফেইসবুকের ভিডিও অপশনে ঢুকতেই তরতাজা নিউজটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো।ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিমনের কা**টা লা**শের ছবি সহ,অপকর্ম গুলো পুরো ভাইরাল হয়ে গেছে।কমেন্ট বক্সে এসে কেউ বলছে,
‘এই চরিত্রহীন পুরুষ কে এত নৃশং**সভাবে হ**ত্যা করার জন্য কিলার কে ধন্যবাদ।’
‘সেই কমেন্টে কিছু আবেগী মানুষ এসে ‘অ্যাঙ্গরি’ রিয়্যাক্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।কেউ কেউ আবার সহমত প্রকাশ করছে।”

“রিমনের এই ভ**য়াবহ মৃ**ত্যুতে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে নেমে এসেছে একরাশ ভয় এবং আতং**কের ছাপ।এমতাবস্থায় কেউ বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য আগ্রহী নয়।ছেলেটি খারাপ হলেও,তাদেরই তো আত্মীয়।’গম্ভীর স্বরে কথাগুলো বলে
সেখান থেকে প্রস্থান করলেন সজিব চৌধুরী।”

“দিগন্ত চিন্তিত মুখ নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই,নাদিয়া রিমনের কু”কর্মের ভিডিও থেকে শুরু করে সবকিছু দেখালো।পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সবকিছু দেখে দিগন্তর মাথা ঘুরে উঠলো।আর দেখতে পারলো না সে।তার মনে বারবার একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,এত ভ**য়াবহ ভাবেও কেউ কাউকে খু**ন করতে পারে?’
ভেবে ফোন হাতে নিয়ে নির্জন কে কল করলো।”

“নির্জন অফিসের ডেস্কে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।তার মন আজ বেশ ফুরফুরে।দিগন্তের কল পেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত হাসি দিয়ে রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই,
দিগন্ত গড়গড় করে সবকিছু নির্জন কে বললো।
সবকিছু শুনে নির্জন তার কন্ঠস্বর আকাশের চূড়ায় নিয়ে বললো,
‘হাআআ…কি বলিস?তাহলে পুলিশ তো খু**নের ইনভেস্টিগেশন শুরু করে দিয়েছে তাই না?”

“হুমম, পুলিশ তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তুু এখন পর্যন্ত তারা কোনো সাক্ষী ও প্রমাণ পায় নি।অপরাধী ভীষণ চতুর।মনে হয় সিরিয়াল কিলার।তুই দেখলে,তোর শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাবে।কতটা ভয়ং**কর ভাবে হ**ত্যা করেছে রিমন কে।কিন্তুু ওর শরীরে কোনো হাতের ছাপ পাওয়া যায় নি।শুধু একটা চিঠিতে কবিতা লিখে লা**শের পাশে রেখে গেছে।সেটাতেও হাতের কোনো ছাপ নেই।ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে ফলাফল শূন্য এসেছে।সবার মনে এখন আতং**ক বিরাজ করছে।আমার মনে হয় না,পুলিশ এতো সহজে এই ভয়ং**কর খু**নি কে ধরতে পারবে।আর আজ আমাদের রিসিপশনের আয়োজন ক্যান্সেল।”

“নির্জন কপালে চার আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো,
‘হুম আমারও তাই মনে হয়।কিলার কে ধরতে পুলিশের অনেক বেগ পেতে হবে।ওকে আমি ভিডিও গুলো দেখছি।তোর লোমহ**র্ষক বিবরণ শুনেই তো আমার গায়ে কেমন কা**টা দিয়ে উঠছে।তাছাড়া এই অবস্থায় তোদের অনুষ্ঠান ক্যান্সেল করে ভালোই করেছিস।ওকে রাখছি,পরে কথা হবে।”

“এই..এই শোন,তুই একটু সাবধানে থাকিস।এইসব সিরিয়াল কিলার রা পথে ঘাটে রাত-বিরাতে ঘুরে বেড়ায়।তুই রাতে বাইরে বের হবি না।অফিস করে সোজা বাসায় চলে যাবি।”

“কুটিল হেসে নির্জন বললো,
‘এমন ভাবে বলছিস,যেনো তুই আমার বড় ভাই।ওকে চিন্তা করিস না।আমি নিজের খেয়াল রাখবো,রাখছি।’বলেই কট করে ফোন টা কে**টে দিলো।”

———–
“চেয়ারে বসে,পা জোড়া দুলিয়ে ফেইসবুকের নিউজ ফিডে আজকের তরতাজা ভাইরাল ভিডিও টি দেখছে আর পৈ**শাচিক ভঙ্গিমায় হেসে উঠছে নির্জন।এই মুহূর্তে খুব তৃপ্তি পাচ্ছে সে।বিড়বিড় করে বলছে,
‘তবুও মা**র্ডার টা মনের মতো হয়নি।আরও কু**চিকু**চি করে কা**টতে পারলে বেটার হতো।’
ভেবে বিভিন্ন ভিডিও গুলোতে চোখ বুলিয়ে
যেখানে সবাই ‘স্যাড’ রিয়্যাক্ট দিয়েছে অথবা ‘অ্যাঙ্গরি’ রিয়্যাক্ট দিয়েছে,সেখানে নির্জনও বৃদ্ধাঙ্গুল প্রেস করে, মুখে ডেভিল হাসি ঝুলিয়ে তাই দিলো।”

“রিমন খু**নের উদঘাটন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সাংবাদিক সহ সকল পুলিশ সদস্য।সোশ্যাল মিডিয়া প্রবল আতং**কে উত্তাপ প্রায়।এটাই স্বাভাবিক।যখন যেই ট্রেন্ড চালু হয়,সেটা নিয়েই তপ্ত হয় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রাঙ্গন।”

“নির্জন একটা ভিডিও তে ক্লিক করে দেখলো,সাংবাদিক রা ঘিরে ধরেছে ওসি রিয়াদ হোসেন কে।নানা রকম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে তার সম্মুখে।ওসি তার হাতের ইশারা করে সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,
‘অপরাধী যতই চতুর হোক না কেনো,একদিন না একদিন আমাদের খাঁচায় আটক হবেই।আমরা আমাদের গোয়েন্দা ফোর্স এবং পুলিশ ফোর্স নিয়ে সর্বোচ্চ দিয়ে উদঘাটন করার চেষ্টা করবো।মনে রাখবেন,আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়।অপরাধী নিখুঁত ভাবে মা**র্ডার করলেও,আমাদের হাত থেকে বেশিদিন পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।আমরা তার যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবো।’
বলেই তিনি হনহন করে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।”

“সবকিছু ঠান্ডা মাথায় করার আগে, পাবলিক ফিগার ঠান্ডা করা অতীব জরুরি।সেটাই বুদ্ধিমত্তার সাথে করে দেখালেন ওসি রিয়াদ হোসেন।
সাক্ষী, প্রমাণ না থাকায় বিষয়টি আর জটিল রূপ ধারণ করেছে;সেটাই অনবরত প্রচার করছে সাংবাদিকগণ।”

“সেগুলো দেখে পৈ**শাচিক হাসি দিলো নির্জন।যেন সে খুব মজা পেয়েছে।নিউজফিড অফ করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

“যতই তুমি খোঁজো আমায়,ধরা দেবো না পাখি,
অন্ধকার রাজ্যে বসতি আমার,দেবো তোমায় ফাঁকি।”

~মেহের~

“ফুরফুরে মন নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করে,যখনই ল্যাপটপে চোখ বুলাবে,তখনই ডেস্কের অপরপাশ থেকে মিষ্টি নারী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।”

“হ্যালো মি.নির্জন,কেমন আছেন?আজ এতো খুশি খুশি লাগছে যে?”

“বিরক্তিকর চেনা কন্ঠস্বর পেয়ে ভ্রুকুটি করে তাকালো নির্জন।কপাল উঁচিয়ে বললো,
‘আপনি এখানে কেনো বর্ষা?কোনো কাজে এসেছেন?”

“উফফ নির্জন..আমাকে বর্ষা বলবেন না প্লিজ।ডায়না বলে ডাকবেন।আমার প্রিয় মানুষজন আমাকে ডায়না বলে ডাকে।”

“বাঁকা হাসলো নির্জন।মৃদুস্বরে বললো,
‘তা মিস,ডাইনী..উপস সরি,মিস ডায়না আমার এখানে কি কাজ আপনার?”

“ইশশ!ন্যাকা।এমন ভাব করছেন,যেন কিছুই বোঝেন না।আয়নার ওপাশ থেকে আপনার হাসি মুখ দেখে, খবর নিতে এলাম।১বছর যাবৎ আমায় ঘুরিয়ে যাচ্ছেন।এর মধ্যে কত বয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছি, একজন কেও আপনার মতো লাগেনি।”

“নির্জন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মানবীর দিকে।উজ্জ্বল শ্যামরঙা শরীরে ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়েছে এই নারী।শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো যেনো আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে।দেখে মনে হচ্ছে,যে কোনো পুরুষ কে এক দর্শনে আকর্ষণ করার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে এই রমনী।কিন্তুু এই বেহায়া চরিত্রের নারীটির ওপর এই মুহূর্তে ঘৃণা ছাড়া কিছুই আসছে না মনে।”

“নির্জনের অফিসের কলিগ বর্ষা।অফিসের এমডি থেকে শুরু করে সিনিয়র, জুনিয়র পুরুষদের ক্রাশ গার্ল সে।ইতোমধ্যে একজনের সাথে লিভ-ইন রিলেশনশিপে আছে সে।”

“বোকা প্রেমিক টি বিজনেসের কাজে দেশের বাহিরে গেলেই,শুরু হয় তার উত্তেজনাপূর্ণ রঙ্গলীলা।পঁচা পানিতে মাছির মতো ভনভন করা অধিকাংশ পুরুষ জাতির স্বভাব।বর্ষার এহেন কান্ডে মজা পায় সবাই।সুযোগের সৎ ব্যবহার করে লুটে নেয় তার স্বর্বস্ব।সেই নারীটিও যেন তার খায়েশ মিটিয়ে পরম তৃপ্তি পায়।”

“নির্জনের গম্ভীর অ্যাটিটিউড আর স্ট্রং পারসোনালিটির মোহে পড়েছে এই নারী।কিন্তুু সে জানে না,এই মোহে যে একবার পড়বে, তার জীবনে শুরু হবে ভ**য়াবহ তান্ডবলীলা।তার জন্য ধ্বং**স অনিবার্য।গত এক বছরেও ঘুরঘুর করে পাত্তা পায় নি নির্জনের কাছে।সেকেন্ড হ্যান্ড দ্রব্য বরাবরই ঘৃণা করে নির্জন।সেখানে এই রমনী তো কতশত নোং**রা পানিতে গা ভাসিয়েছে।একজনের সাথে স্থায়ী ভাবে রুমডেট করেও, খায়েশ যেন তার ক্রমাগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।পৃথিবীতে পুরুষদের একা দায়ী করলে হবে না।তাদের পরকীয়ার পেছনে সমান ভাবে নারীরাও দায়ী।কারণ তারা আশকারা না দিলে,পুরুষরা তো আর গাছের সাথে প্রেম করবে না।’
ভেবে ভেতর থেকে ‘ছিহ’ শব্দ বেরিয়ে এলো নির্জনের।”

“কিছু বললেন নির্জন?”(ভ্রু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলো বর্ষা)

” নির্জন গম্ভীর স্বরে বললো,
‘আমি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রেডি করবো মিস বর্ষা।আগামীকাল প্রেজেন্টেশন আছে।সো প্লিজ লিভ নাউ।”

“নির্জনের অবহেলা মানতে পারলো না বর্ষা।মনের মধ্যে জেদ চেপে বসলো।অনেক সহ্য করেছে সে।উজ্জ্বল শ্যাম রঙা এই পুরুষের এতো অ্যাটিটিউড কিসের?অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি আমি।ব্যাস,আর নয়।এই মানব কে আমার করেই ছাড়বো।’একমনে পণ করে বাঁকা হাসলো বর্ষা।”

“নির্জনের কিছুটা কাছে এসে,টেবিলের মাউসে থাকা নির্জনের ডান হাতের ওপর তার ঝিকিমিকি রঙের নেইলপালিশ পড়া কোমল হাত রেখে,ঠোঁট কা**মড়ে মোহনীয় স্বরে বললো,
‘নির্জন একবার কি আমার বিষয়টা ভেবে দেখা যায় না?আমি তো নিজেই আপনাকে সুযোগ করে দিচ্ছি।যেখানে আমার রূপে মুগ্ধ সবাই,সেখানে আমি আপনার পেছনে ঘুরছি।এটা তো আপনার সৌভাগ্য।আমি জানি,আমার এই হট ফিগারের প্রেমে আপনিও ঘায়েল।প্লিজ এখন এটা বলবেন না, যে আপনি আমায় পছন্দ করেন না।এই ডায়নাকে একবার বলে দেখুন,নির্দ্বিধায় নিজেকে সপে দিবে আপনার কাছে।আর কাউকে লাগবে না আমার।যে লিভ-ইন রিলেশনশিপে আছি,সেটা ব্রেকআপ করে আপনার কাছে চলে আসবো প্রমিজ।”

“বর্ষা নির্জনের হাতের ওপর এভাবে হাত রাখায় নির্জনের মাথার উগ্র বিধ্বংসী পোকা গুলো অলরেডি কিলবিল করে উঠেছে।কত বড় সাহস!যেখানে ছেলেদের থেকেও নিজের শরীর কে দূরে রাখে নির্জন;,সেখানে এই নোং**রা নারীর নোং**রা হাতের স্পর্শ পেলো?নাহ!অনেক সুযোগ দিয়েছে এই নারীকে।তার বয়ফ্রেন্ড মাথা মোটা হলেও,নির্জন অতি বিচক্ষণ।
বিশ্বাসঘাতক নারীর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিতে হবে বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে।তবে এইবারের খেলাটা একটু ইউনিক হতে হবে।মজা করে নিঁখুত ভাবে খেলার জন্য, শুনশান জায়গা বেছে নিতে হবে।’
ভাবতেই নির্জনের ‘মন’ আর ‘হৃদয়’ একসাথে বলে উঠলো,
‘এই নি**কৃষ্ট রমনী তোমার হাতে হাত রেখেছে।যেখানে শুধু তোমার প্রেয়সীর স্পর্শ থাকবে।কিন্তুু এই রমনী তোমাকে স্পর্শ করে ভয়ং**কর অপরাধ করেছে।তাকে তুমি নদীর ধারে শাস্তি দিবে।হ্যা,নদীর তীরে,খোলামেলা পরিবেশে এই রমনীর ভয়ং**কর শাস্তি হবে।তোমাকে প্ল্যানগুলো বলে দিচ্ছি।’
বলেই মন এবং হৃদয় তাদের পৈ**শাচিক প্ল্যান সম্পর্কে বললো।প্ল্যানটি নির্জনের ভীষণ মনে ধরলো।অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,,’ওকে,ডান।’

” নির্জনের মুখনিঃসৃত ‘ডান’ কথাটি শুনে, খুশি হয়ে গেলো বর্ষা।লাজুক হেসে বললো,
‘ কোথায়,কখন আসতে হবে?”

“ইশশ!কত উত্তেজিত তুৃমি?সত্যি আমি খুব ভাগ্যবান,যে তোমার মতো সুন্দরী রমনী আমায় ভালোবেসেছে।এতদিন বুঝতে পারিনি,তাই এক্সট্রিমলি সরি ডায়না।”

“নির্জনের মুখে একইসাথে ‘তুমি’ এবং ‘ডায়না’ শুনে ভীষণ খুশি হলো বর্ষা।নির্জনের হাত আরেকটু জোরে চেপে ধরে,ঠোঁট কা**মড়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মেকি স্বরে বললো,
‘আমার আর তর সইছে না নির্জন।দীর্ঘ এক বছরের প্রতীক্ষা আমার।তাহলে আজকেই হয়ে যাক।”

“ছিহ!কি বেহায়া,নি**কৃষ্ট চরিত্রের নারী।সমাজের আনাচে-কানাচে এমন অসংখ্য নারী লুকিয়ে আছে।কেউ চাক্ষুষে ঘুরে বেড়ায় অথবা কেউ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে।”

‘ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নির্জন।বাম হাত দিয়ে বর্ষার হাত সন্তর্পণে সরিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘আমারও আর তর সইছে না ডায়না।এতদিন নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছি।কিন্তুু আজ আমি ব্যর্থ।
হার মানলাম তোমার কাছে।তোমার ভরা যৌবনের অতল গহ্বরে আমি হারিয়ে যেতে চাই ডায়না।আজ রাতে নদীর তীরে আমাদের নিষিদ্ধ মধুচন্দ্রিমা করতে চাই।তুমি কি রাজি?”

“ভীষণ খুশি হলো বর্ষা।নির্জনের একেকটি কথায় যেন কা**টার মতো শিহরণ বয়ে গেলো বর্ষার সর্বাঙ্গে।হাসি মুখে বললো,
‘ওকে নির্জন।’

“নির্জন মুচকি হেসে কখন,কোথায় আসতে হবে সবকিছু বুঝিয়ে বললো।তারপর বললো,
‘ফোন টা বাসায় রেখে আসবে।ভুলেও কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস আনবে না।বলাতো যায় না,দেয়ালেরও কান আছে।”

“ওকে নির্জন।তোমার এই ভয়ং**কর সুন্দর পারসোনালিটির প্রেমেই তো আমি পড়েছি।’
তারপর নির্জনের সাথে আরও কয়েক মিনিট কথা বলে, চলে গেলো বর্ষা।সেদিকে তাকিয়ে শ**য়তানি হাসি দিলো নির্জন।”

———–
“এদিকে কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠে, রিমনের লোমহ**র্ষক হ**ত্যাকান্ড দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছে নিধি এবং তোহা।ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে বাবা-মায়ের সাথে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করছে।খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন করে, টিভিতে নিউজ দেখছেন রফিক মির্জা।আজ সাংবাদিক জীবন থেকে অবসর না নিলে হয়তো,তিনিও কয়েকটি যুক্তিযুক্ত লাইন লিখতেন খবরের পাতায়।”

“তোহা রুমে গিয়ে মাহিরের সাথে সবকিছু শেয়ার করলো।সকালের নিউজ টি মাহিরও দেখেছে।তাই সেও তোহার সাথে একই আলোচনায় মগ্ন হলো।আজ দু’জনের মধ্যে নেই কোনো রোমান্টিক কথপোকথন।দু’জনে দীর্ঘসময় একই ঘটনা বারবার রিপিট করলো।এর অন্যতম কারণ হলো,ছেলেটি দিগন্তের দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই।নাদিয়া নিধি কে ফোন করে সবকিছু জানিয়েছে।”

” নিধি রিমনের কা**টাছেঁড়া বি**ভৎস শরীর দেখে,অর্ধ কোমায় চলে গেছে।নির্জন কে অনবরত কল করে যাচ্ছে।কিন্তুু এখনও নির্জনের ফোন বন্ধ।”

“বর্ষা চলে যাওয়ার পর নির্জন ফোন অফ করে দিয়েছে।কারণ, তার মাথায় চলছে ভয়ং**কর খু**নের পরিকল্পনা।”

“বিরক্ত এবং কিছুটা চিন্তিত হলো নিধি।ভাবলো,

‘বাসার ঠিকানা টাও জানিনা।নইলে ঠিক তার বাসায় গিয়ে হাজির হতাম;উফফ!আমাকে চিন্তায় রেখে কি সে খুব সুখে আছে?’ভাবতেই হতাশা ফুটে উঠলো নিধির মায়াবী মুখস্রিতে।”

————-
“রাত সাড়ে ১০টা।নদীর তীর থেকে কিছুটা দূরে, কুচকুচে কালো রঙের গাড়ির মধ্যে বসে আছে দুই যুবক-যুবতী।নীরবতা ভে**ঙে নির্জন বললো,
‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ডায়না।বেগুনি রঙের সিল্কের শাড়িতে বেশ মানিয়েছে তোমায়।”

“তোমাকেও খুব হ্যান্ডসাম লাগছে নির্জন।ব্ল্যাক টি-শার্ট, হোয়াইট জিন্স,রিমলেস চশমায় তোমায় অলটাইম হট লাগে।আচ্ছা, প্রায় ১০মিনিট হতে চললো আমরা এখানে আছি।এখনও কি ড্রাইভিং সিটে বসে থাকবো?ব্যাকসিটে যাবে না?”

“বাঁকা হাসলো নির্জন।রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
‘হুম।অনেকদিন পর গাড়িটি আমি বের করেছি, শুধু তোমার জন্য ডায়না।সাধারণত আমি বাইক নিয়ে ঘুরতে বেশি কম্ফোর্টেবল ফিল করি।বাট তুমি যেহেতু আছো,তাই গাড়ির ব্যাক সিট অতীব জরুরি।কিন্তুু তার আগে আমরা একটা মজার গেইম খেলবো।বলো রাজি?”

“বর্ষা এক্সাইটেড হয়ে বললো,
‘হুমম অবশ্যই রাজি।”

“ওকে।আমি তোমাকে ৩টা ধাঁধা জিজ্ঞেস করবো।যদি ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারো,তাহলে বিভিন্ন ডার্ক স্টাইলে আজ রোমান্স হবে।আর যদি বলতে না পারো, তাহলে নরমাল রোমান্স হবে।”

“হাহাহা.. ওহ নটি বয়।তুমি তো ভীষণ দুষ্টু।চেহারা দেখলে একদমই বোঝা যায় না।ওকে বলো সোনা।”

“১.ধাঁধা
“আমি আগুনের মতো গরম, আবার বরফের মতো শীতল।
আমাকে পান করলে আমি তোমার জীবন নিই,
কিন্তুু, সবাই আমাকে নিয়ে জীবন বাঁচায়। আমি কে?”

২.ধাঁধা
আমার কোনো শরীর নেই, কিন্তুু আমি তোমার জীবন ছুঁয়ে দেখতে পারি।
আমি নীরব, কিন্তুু যখন আসি, তখন সবাই ভয় পায়। আমি কে?”

৩.ধাঁধা
“আমি অন্ধকারের সন্তান, আলোয় দেখা যায় না।
যখন আমি তোমার কাছে আসি, তুমি আর অন্য কিছু দেখতে পাও না। আমি কে?”

“উত্তর গুলো ঝটপট বলো সোনা।”

“নির্জনের এহেন ধাঁধায় বোকা বনে গেলো বর্ষা।সে তো ভেবেছিলো, নির্জন কোনো সহজ রোমান্টিক ধাঁধা বলবে।কিন্তুু এগুলো তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।আমতা আমতা করে বললো,
“আবার বলো সোনা।এতো কঠিন ধাঁধা আমার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।”

“নির্জন মুচকি হেসে আবারও বললো।কিন্তুু উত্তর দিতে পারলো না বর্ষা।”

“নির্জন জানতো,এতটা সূক্ষ্ম বুদ্ধি এই রমনীর নেই।’ভেবে কুটিল হেসে বললো,
‘ওকে ফাইন,এইসব বাদ দাও.. এখন আমরা চোর-পুলিশ খেলবো।’
বলেই পকেট থেকে ৪টা ভাজ করা ছোট কুপন বের করলো।বর্ষার সামনে হাত রেখে বললো,
‘এখানে চারটি কুপনে চোর, পুলিশ লেখা আছে।যে পুলিশ পাবে,সে যেকোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে।আর যে চোর পাবে,সে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে।”

“বর্ষা মুচকি হেসে বললো,
‘তুমি কতো রোমান্টিক নির্জন।কতকিছুর আয়োজন করেছো আমার জন্য।থ্যাংক ইউ সো মাচ এন্ড লাভ ইউ সো মাচ।’
বলেই একটা কুপন ধরে ভাজ খুলতেই,ভীতু দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘নির্জন.. আমি চোর পেয়েছি।’

‘নির্জন অভিজ্ঞ সম্পন্ন হাসি দিয়ে বললো,
‘আমি পুলিশ পেয়েছি।’
So the game is start now..3,2,1..start…

#চলবে…
(কেউ ধাঁধার উত্তর গুলো জানলে বলবেন।আমার আবার নির্জনের মতো এতো বুদ্ধি নেই।গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।আগামীকাল ধামাকা+ইউনিক পার্ট আসবে।সবার জন্য ভালোবাসা অবিরাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here