#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৪৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
মেয়েটা বসে আছে হসপিটালের করিডরে।তার চোখ দিয়ে এখন নিঃশব্দে পানি গড়িয়ে পরছে।তার পাশেও একজন কান্না করছে কিন্তু তার সেই দিকে হুস নেই।থাকবেই বা কী করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে যদি মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে দেখে তাহলে কে ঠিক থাকবে।মেয়েটা বারবার ভাবছে সে আসলে কাকে দোষারোপ করবে নিজেকে,নিজের ভাগ্যকে নাকি মৃত্যুর সাথে যে লড়াই করছে তাকে।একবার মনে হচ্ছে তার জন্য।শুধু মাত্র তার জন্য আজ এই অবস্থা।সবাই কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু আবার ভাবে আমি তো এমন কিছু চাই নি।তাহলে কেনো হলো এমন?আল্লাহ কী তার কপালে সুখ লিখে রাখে নি?একটু তো সুখের ছায়া পেতে পারে মেয়েটা।হয়তো সেই সুখের সময় এসেও ছিলো কিন্তু আবার তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে।কেনো যাচ্ছে?খুব কী দরকার এভাবে ওর জীবনটা ভেঙে পরার।
মেয়েটির এসব ভাবনার মাঝেই ডাক্তার বের হলো ওটি থেকে।ডাক্তারকে বের হতে দেখে আতিক রহমান এগিয়ে গিয়ে বললেন,
আতিক রহমানঃ ডাক্তার আমার ছেলের কী অবস্থা?ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
ডাক্তারঃ……….
আতিক রহমানঃ ডাক্তার চুপ করে আছেন কেনো?বলুন না আমার ছেলের কী অবস্থা?
ডাক্তারঃ দেখুন মিঃ রহমান আপানার ছেলের এক্সিডেন্টেটা খুব মারাত্মক ভাবে হয়েছে।মাথায় অনেক বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছে আর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাচ ঢুকে গেছে,আর পা ও আাঘাত লাগার কারনে ডান পা ভেঙে গেছে।কিন্তু…………
আরু এতোক্ষন সবটা শুনছিলো।এবার ও বসা থেকে উঠে চোখের পানি মুছে ডাক্তারের সামনে এসে বললো,
আরুঃ কিন্তু কী ডাক্তার?আ..আয়ান ভালো হয়ে যাবে তো?
ডাক্তারঃ দেখুন আমি মিথ্যা আশ্বাস দিবো না আপনাদের।মিঃ রহমান আপনাকে আগেই বলা হয়েছিলো আয়ানের যাতে মানসিক ভাবে কোনো আঘাত না পায়।আর যদি পায় তাহলে সেটা খুব খারাপ দিকে যাবে।এর আগেও অতিরিক্ত চিন্তা,ডিপ্রেশন,একাকিত্বের কারণ ও বার বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে যার ফলাফল আপনারা দেখেছেন।আর তখন বলা হয়েছিলো ও যাতে মানসিক ভাবে আঘাত না পায়।এতো গুলো বছরে তা পায়নি।কিন্তু এবার বিষয়টা সিরিয়াস।
অনিমঃ সিরিয়াস মানে?কী হয়েছে ডাক্তার খুলে বলুন সবটা?
ডাক্তারঃ আয়ানের এক্সিডেন্টে মাথায় আঘাত লাগে আর আগে থেকে হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা বা কিছু নিয়ে চাপ পরেছে তার জন্য ওর মস্তিষ্ক থেকে রক্ত খরন হয়েছে।তবে তা বেশি না।তাই দুইটা মিলে ওর অবস্থা এখন……
করো মুখে কোনো কথা নেই।সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।কী থেকে কী হয়ে গেলো।আরু একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তার কান দিয়ে কথা যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলার চেষ্টা করছে না।এসব শুনে আয়ানের বাবা ধপ করে চেয়ারে বসে পরেন।আর আয়ানের মা সেই তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে।কিন্তু এবার বললেন,
আফিয়া রাহমানঃ ডাক্তার আমার ছেলেটদ সুস্থ হয়ে যাবে তো?
ডাক্তারঃ দেখুন আমরা আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি।এখন আমাদের হাতে কিছু নেই।বাকীটা আল্লহার উপর।৪৮ ঘন্টা না যাওয়া আবদি আমরা কিছু বলতে পারছি না।এই ৪৮ ঘন্টার মাঝে যদি ওর সেন্স না ফিরে তাহলে আ’ম সরি টু সে আয়ান কোমায় চলে যাবে।
আয়ানের এমন কথা শুনে নিজেকে টিক রাখতে পারলেন না।এমনিতেই প্রেশার বেড়তি ছিলো এখন এই কথা শুনে উনি সেন্স লেস হয়ে পরেন।আয়ানা মা’কে পরে যেতে দেখে ‘মা’ বলে চিৎকার করে ওনাকে ধরে ফেলে।আয়ানের বাবা তাকিয়ে দেখে এই অবস্থা তাই তিনি নার্সকে বলে আয়ানের মা’কে একটা কেবিনে সিফট করে।ডাক্তার ওনাকে দেখে বলে ‘অতিরিক্ত চাপ আর প্রেশার ফল করার কারনে এই অবস্থা।কিছুক্ষন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’ ডাক্তার আয়ানের মা’কে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে চলে গেলেন।আয়ানর বাবাও আয়ানের মা’র পাশে বসে রইলেন।ওনার চোখও পানি।কোনো বাবা মা’ই পারে না সন্তানের এই রকম অবস্থা মেনে নিতে।
এদিকে আরু ডাক্তারের এই কথা শুনার পর পুরো চুপ।পা ভেঙে ফ্লোরে বসে রইলো।ওর দাড়িয়ে থাকার মতো শক্তি হয়তো ওর নেই।ওর চোখে এখন পানি নেই।কথায় আছে “অতি শোকে মানুষ পাথর হয়ে যায়”। আরুর এখন সেই অবস্থা।ওর মাথায় শুধু ডাক্তারের বলা কথা আর কাল রাতে আয়ানকে বলা এই কথা গুলো মনে পরছে।অনিম ওকে পরে যেতে দেখে তাড়াতাড়ি বোনের কাছে এলো।এসে আরুকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললো,
অনিমঃ আরু বোন আমার নিজেকে শক্ত কর।সব ঠিক হয়ে যাবে।এভাবে ভেঙে পরলে তো আয়ান সুস্থ হবে না তাই না?
আরুঃ…………
অনিমঃ আরু তাকা আমার দিকে।দেখ কিছু হবে না।আয়ান একদম আগের মতো হয়ে যাবে।
আরু কিছু বলছে না।শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আর কি সব বিরবির করছে।অনিম আরুর এমন বিহেভ দেখে চিন্তায় পরে গেলো।ওকে সামলাবে কি করে।আয়ানের এই অবস্থা শুনেই যদি আরু এমন হয়ে যায় তাহলে আয়ানের যদি কিছু একটা…..না না ও এসব কী ভাবছে।কিছু হবে না।আয়ান সুস্থ হয়ে যাবে।
এর মাঝে আয়ানা বের হলো ওর মা’য়ের কেবিন থেকে।ও কী করবে এখন?একদিকে আদরের ভাইয়ের এই অবস্থা,আরেকদিকে মা’য়ের।সাথে বাবাও কিন্তু বাবা এখনো সবার সামনে নিজেকে স্ট্রং রাখছে।কিন্তু এভাবে কতোক্ষন? উনি তো বাবা।এখন আয়ানা কী করবে?ওর নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে।এতো কিছু মাঝে ও নিজেকে শক্ত রাখতে আপ্রান চেষ্টা করছে।সবাই যদি এভাবে ভেঙে পরে তাহলে কী করে হবে।আয়ানা বের হয়ে দেখে আরু চেয়ারে বসে আছে আর অনিম আরুর সামনে বসে ওকে কী সব বলছে কিন্তু আরু নিজের মতো কি বলে যাচ্ছে।আরুকে দেখে আয়ানা যানো আরো মনের শক্তি হারিয়ে ফেললো।তাও নিজেকে শক্ত করে আরুর সামনে গেলো।গিয়ে ওর পাশে বসে বললো,
আয়ানাঃ আরু তাকাও আমার দিকে।দেখো তুমি যদি এভাবে ভেঙে পরো তাহলে কী করে হবে।তুমিই তো আয়ানের সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।ও চোখ মেলে যদি তোমার এই অবস্থা দেখে তাহলে কী হবে ভেবে দেখেছো?
আরুঃ……..
আয়ানাঃ বোন আমার।এমন করে না।নিজেকে সামলাও।(আর বলতে পারলো না।কেদে দিলো)
অনিমের এখন নিজেকে কেমন যানো অসহায় মনে হচ্ছে।ও কী করবে?এর মাঝে ওর কাছে কল এলো।দেখে বাসা থেকে তন্নি কল করেছে।অনিম সাইডে গিয়ে কল রিসিভ করে বললো,
অনিমঃ হুম বলো?
তন্নিঃ ওইদিকের কী খবর?
অনিমঃ (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবটা বললো)
তন্নিঃ আরু কোথায় এখন?ও ঠিক আছে?আমি কী আসবো?
অনিমঃ না তোমার আসতে হবে না।তুমি থাকো।তুমি চলে এলে বাবা মা একা হয়ে যাবে।আর মায়ানকে কে দেখবে?
তন্নিঃ কিন্তু আরু ওখানে…..
অনিমঃ চিন্তা করো না আমি আছি আর মারিয়া হয়তো এসে পরবে একটু পর।তুমি বাসায় থাকো।
তন্নিঃ আচ্ছা।কিন্তু সব খবর কিন্তু আমাকে জানাবে।আর ওদিকে সবার খেয়াল রাখবে।
অনিমঃ হুম তুমিও সবার খেয়াল রেখো।
(মায়ানকে হসপিটাল এনেছিলো কিন্তু বাচ্চা মানুষ,তার উপর কারো মন ভালো নেই কি থেকে কী হয়ে যায় তাই ওকে পাঠিয়ে দিয়েছে।কিন্তু বাসায় একা থাকবে কী করে তাই আরুরদের বাসায় তন্নির কাছে রেখে আসবে।নিরাপদেও থাকবে।তাই রাফসান গিয়েছে মায়ানকে রেখে আসতে আর আয়ানের কিছু ঔষধ আনতে।আরুর বাবা মা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু এতো মানুষ হসপিটালে এসে ভিড় জমিয়ে না রেখে বসায় বসে সব খবর পাবে আর দোয়া করবে এটাই ভালো।আর মারিয়া গিয়েছিলে ওর খালামনির বাসায় কিন্তু আয়ানের খবর শুনে ও তাড়াতাড়ি রওনা দিয়েছে।এসে পরবে)
উম্মে বুশরা
অনিম কল কেটে পিছন ফিরে দেখে মারিয়া এসে পরেছ।এখন আরুকে সামলাচ্ছে আর আয়ানাকেও এটা ওটা বলছে।আরুও এখন একটু চুপ হয়েছে।হটাৎ অনিমের মাথায় একটা কথা এলো।তাই ও আয়ানার সামনে গিয়ে বললো,
অনিমঃ আয়ানা একটা কথা ছিলো।(ওরা সমবয়সী)
আয়ানাঃ হুম বলো?
অনিমঃ ডাক্তার তখন কী বললো?এর আগেও আয়ানের কী হয়েছিলো?আর সুইসাইডই বা কেনো?
আয়ানাঃ এখনই সব শুনবে?(আরুর দিকে তাকিয়ে।কিন্তু বলেছে অনিমকে)
অনিমঃ হুম এখনই শুনতে চাই।কিন্তু এখন বললে কী কোনো সমস্যা?
আয়ানাঃ না বলছি।(এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো,,
আজ থেকে ৩ বছর আগে।যখন থেকে আয়ান জানতে পেরেছে ও আরুর সাথে অন্যায় করেছে।আরুর প্রতি করা অপমান,অবহেলা গুলোর পিছনে কোনো কারন ছিলো না।শুধু মিথ্যা কিছু প্রমান আর কথার জন্য ও আরুর সাথে এমন ব্যবহার করেছে তখন থেকে।আয়ানের করা অন্যায়ের জন্য ও সেই দিন ছুটে গিয়েছিলো আরুর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য কিন্তু আরুকে পায়নি ও।শূন্য হাতে ফিরে এসেছিলো।প্রতিদিন ও আরুকে খুজতো ওদের পরিচিত প্রতিটা জায়গায় কিন্তু পায়নি একদিনও।তার আগে ও রাফসানের থেকে শুনেছিলো আরু এখানে নেই।ও অনেক দূরে।কিন্তু আয়ান তা মানে নি।ও ভাবতো আরু ওকে ফেলে কোথাও যেতে পারে না।কিন্তু ওর ধারনা ভুল প্রমান করে দিয়ে আরু সত্যি অনেক দূরে চলে গিয়েছিলো।এভাবে প্রায় ১ সপ্তাহ আরুকে না পেয়ে খোঁজ বন্ধ করে দেয়।তারপর নিজেকে ঘরবন্দী করে।বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়।অফিস যাওয়াও বন্ধ।সামনেই ছিলে অনার্স ফাইনাল কিন্তু পড়াশোনা পুরো বন্ধ।ওর এমন হটাৎ পরিবর্তন বাবা মা কেউ মেনে নিতে পারে নি।তবে যদিন থেকে আরুকে খোঁজ বন্ধ করে দেয় সেদিন থেকে প্রতিটা রাত ওর কান্না আর চিৎকার ভেসে আসতো রুম থেকে আর জিনিসপত্র ভাঙার আওয়াজ।বাবা মা ছুটে যেতো কিন্তু দরজা ভিতর থেকে লক।কী করবে বাবা মা ভেবে পাচ্ছিলো না।সকালে ওকে রাতের ব্যাপারে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ও এড়িয়ে যেতো।কাউকে কিছু বলতো না। এভাবে দিনের পর দিন যাচ্ছিলো কিন্তু কোনো উপায় কেউ বের করতে পারে নি।শেষে একদিন বাবা মা রফসানকে ডেকে পাঠায়।ও আসলে বাবা মা ওকে জিজ্ঞেস করে আয়ানের কি হয়েছে।কিন্তু প্রথমে রাফসান বলতে চায়নি।পরে বাবা মা জোর করায় ও বলে দেয় সব।সবটা শুনে বাবা মা যেমন আয়ানের উপর রেগে ছিলো তেমন আয়ানের এই অবস্থা দেখে সব রাগ পানি হয়ে গিয়েছিলো।যদিও তখন রাফসান জানতো আরু কোথায় কিন্তু ও কিছু বলেনি।আমাকে এসব জানানো হয়েছিলো।কিন্তু তখন আমি আসতে পারিনি।তারপর বাবা মা,রাফসান,ওখান থেকে আমি সবাই ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু ও বুঝতে নারাজ।পরে ওকে এটা বলা হয়েছ ও যদি ভলো পড়াশোনা না করে নিজের পায়ে না দাড়াতে পারে তাহলে আরু আর আসবে না।আর্থাৎ আরুকে ওর জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।এসব শুনে ও কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে নিজেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেছিলো।আমরাও ভেবেছিলাম ও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।এভাবেই ওর পরীক্ষা শেষ হয়।আবার আরুকে খুঁজতে নেমে পরে কিন্তু তখনও ও আরুকে পায়না।ও আবার নিজেকে ঘরবন্দী করলে।আবারো সেই রাতের কান্না আর চিৎকারের শব্দ।বাবা মা আবার ভেঙে পরে।এভাবেই ১ মাস ছিলো আয়ান ঘরবন্দী ছিলো।নিজের করা অন্যায়,আরুর প্রতি অবহেলা,অপমান,আরুর দূরে চলে যাওয়া,ওকে আর ফিরে না পাওয়ার চিন্তা,অতিরিক্ত ডিপ্রেশন,একাকিত্ব ওকে প্রতিটাদিম কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো।কাউকে ও দেখাতে পারেনি না বলতে পেরেছে।কিন্তু একদিন হটাৎ ও অনেক জোরে চিৎকার করেছিলো তারপর ওর আর সাড়াশব্দ পাওয়ার যাচ্ছিলো।বাবা মা তখন চিন্তায় পরে পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিলো।আয়ানকে অনেকবার ডাকছিল কিন্তু ওর সাড়া আসছিলো না।বাবা-মা কি করবে বুঝতে পারছিলো না।পরে বাবা দুজন সার্ভেন্ট আর ওয়াচমেন সহ আয়ানের রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে আয়ান সেন্সলেস হয়ে নিচে পড়ে আছে আর হাত দিয়ে রক্ত পরছে।মা ওকে হবে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।ছুটে গিয়েছিল ওর কাছে।অনেকবার ডাকা হল কিন্তু ও উঠলো না একবারও।বাবা কি করবে তখন মাথায় আসছিল না।পরে ওকে ধরাধরি করে গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে আনা হয়েছিল।ডাক্তার ওকে চেকআপ করে বলল অতিরিক্ত ডিপ্রেশনের কারণে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল।আর মানসিকভাবে মস্তিষ্কতে ছোটা চাপ পড়ে ছিল।কিন্তু সঠিক সময়ে এখানে আনাতে এখন আর কোন চিন্তার কারন নেই।ডাক্তার বলে দিয়েছিল ভবিষ্যতে যাতে কোনো দিন ওর মস্তিষ্কে আঘাত না পড়ে বা কোনো চাপ না পড়ে।বাবা-মা এসব শুনে তখন কিছুই বলিনি।ওকে আস্তে আস্তে সুস্থ করে।কিছুদিনে বাসায় আনা হয় কিন্তু কারো সাথে কোন কথা বলেনি একদম চুপ হয়ে থাকতো।এর মাঝেই বাবা-মা ঠিক করে তোমাদের সাথে কথা বলবে।তারপর তোমাদের কাছে গিয়েছিল এবং তোমাদেরকে সবটা বলেছে।সবটা শুনে তোমরা বলেছো,”ও যদি সত্যিই আরুকে ভালোবেসে থাকে তাহলে ওর জন্য অপেক্ষা করতে এবং আরু ফিরে এলে তোমরা ওর হাতে আর ওকে তুলে দেবে”।বাবা মা ওকে এই কথাটা এসে জানায়।আয়ান এসব শুনে কিছু না বলে রুমে চলে গিয়েছলো।তারপর দিন ও একদম চেঞ্জ হয়ে নিচে নামে।ও এসে সবাইকে জানায় ও অপেক্ষা করবে।তারপর থেকে ও অপেক্ষা করেতে থাকে এই ৩ বছর।এরপর এতোগুলো দিন ওর কিছু হয়নি।কিন্তু হটাৎ কাল রাতের এক্সিডেন্টে সবটা আবার শেষ হয়ে গেলো।
বলেই আয়ানা কান্নায় ভেঙে পরে।সবটা শুনে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছ।মারিয়া এসব শুনে কেঁদেই দিলো।অনিমও এসব শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।ওর চোখও পানিতে চিকচিক করছে।কতেটা ভালোবাসলে মানুষ এমন করতে পারে তা বা তার এমন অবস্থা হয় অনিমের জানা নেই।
মারিয়া আয়ানাকে স্বান্তনা দিচ্ছে।এতোক্ষন আরু নিচের দিকে তাকিয়ে সবটা শুনেছ।
সবাই চুপ ছিলো কিন্তু হটাৎ আরু আবার কিছু বলছে কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না কী বলছে।কিছু না বুঝে তাই মারিয়া বললো,
মারিয়া কী বলছিস?স্পষ্ট বল।
আরুঃ আমার জন্য..সব সব আমার জন্য হয়েছে।আমি আমিই দোষী।আমার জন্য আয়ানের এই অবস্থা।আমি ওকে মেরে ফেলতে চাইছি।
মারিয়াঃ কী বলছিস তুই এসব।মাথা ঠিক আছে তোর?
তোর জন্য কেনো হবে?
আরুঃ হ্যা আমি মেরেছি ওকে।আমি আমি ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি।
আয়ানাঃ তুমি কিছু করোনি।এটা ওর ভাগ্যতে ছিলো।তোমার জন্য কিছু হয়নি।নিজেকে দোষারোপ করো না।
আরুঃ না তুমি জানো না।আমি ওকে মেরেছি।হ্যা আমি মেরেছি। ও…ও তো আমার থেকে দূরে যেতে চায়নি।কিন্তু..কিন্তু আমি ওকে দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছি।(পাগলের মতো মাথা এদিক ওদিক করে)
অনিমঃ কী বলছিস।শান্ত হ।কিছু হয়নি তোর জন্য।আয়ান একদম ঠিক আছে।(আরুর দু গালে ধরে)
আরুঃ (নিজেকে ছাড়িয়ে)না তুই জানিস না ভাইয়া।আমি ওকে বলছিলাম ডি…ডি..ডির্ভোসের কথা।আ..আমা..আমাকে ছেড়ে দিতে বলেছিলাম।সেটা ও মেনে নিতে পারেনি।তাই ওর এই অবস্থা।আমি মেরেছি ওকে।(পাগলের মতো)
আরুর কথা শুনে সবাই স্তব্ধ।কী বলছে আরু?ডির্ভোস মানে?আর হটাৎ ওদের ভিতরে ডির্ভোসের কথা এসেছ কেনো?এতোক্ষনে আয়ানা বুঝলো আয়ান এই কারনে মাথায় আাপ পরেছে আর এক্সিডেন্ট হয়েছে।
ওদের এসব ভাবনার মাঝে আরু উঠে দাঁড়ালো।উঠে হাঁটতে লাগলো।কোথায় যাচ্ছে ও জানে না।অনিম হটাৎ দেখলো আরু কোন দিকে যাচ্ছে আর বলছে,”আমি ওকে মেরে ফেলেছি” এটাই বারবার বলছে।অনিম আরুর কাছে গিয়ে ওকে ধরে বললো,
অনিমঃ কোথায় যাচ্ছিস তুই?
আরুঃ আয়ানের কাছে যাবো।আমার জন্য এমন হয়েছে।আমি ওর কাছে যাবো।ছাড়ো।(অনিমের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছড়াতে বললো)
অনিমঃ কোথাও যাবি না তুই।চল
অনিমঃ না আমি আয়ানের কাছে যাবো।ছাড়ো ছাড়ো
আরুকে সামলানো যাচ্ছিলো না তাই অনিম না পেরে ওকে একটা ‘চড়’ মারলো।মারিয়া আর আয়ানা সবাই অবাক অনিমের এই কাজে।কিন্তু অনিমের আরুকে ঠান্ডা করার করার মতো আর কোনো উপায় খুজে পায় নি।
আরু দুর্ভল শরীরে এমন চড় পরাতে নিজেকে আর ঠুক রাখতে পারেনি সেন্স হারিয়ে অনিমের বুকে লুটিয়ে পরলো।
আরুকে সেন্সলেস হতে দেখে অনিম আরুর দিকে তাকিয়ে বলে,’আমায় মাফ করিস বনু।তোকে শান্ত করতে এ ছাড়া আর উপায় ছিলো না’।বলেই আরুর মাথায় চুমু খেয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।আর একটা কেবিনে নিয়ে শুইয়ে দিলো।ডাক্তার বললো,বেশি কান্না আর সারাদিন হয়তো না খাওয়ার ফলে এই অবস্থা হয়েছে।সেলাইন দিয়ে দিয়েছে।
(ফ্লাশব্যাক)
আরুর এমন কথা শুনে আয়ান অনেক কষ্ট পেয়েছিলো।ওর বুকের পাশে চিন চিন ব্যাথা করছিলো।আরু ওর সাথে থাকতে চায় না।এটা ও মানতে পারছে না।তাই আয়ান রাতে কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।আয়ান বাসা থেকে বের হওয়ায় আরু কিছু বলেনি।ওর রাগ ছিলো তাই কিছু বলেনি।ওর ঘুৃ পাচ্ছিলো তাই চুপচাপ এসে ঘুমিয়ে পরে।আয়ান এলো নাকী না এলো তা ও এখন জানতে চায় না।
সকালে
আরু ঘুম থেকে উঠে দেখে ওর মাথা বালিশে।ও অবাক হলো প্রতিদিন তো ও ঘুম থেকে উঠে দেখে ও আয়ানের বুকে কিন্তু আজকে নেই কেনো?আয়ান কী ওর আগে উঠে গেলো?
আরু আর কিছু ভাবলো না ওর মাথায় একবরো আসেনি যে আয়ান সারা রাত বাসায় ফিরেনি।আরু উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।নিচে নেমে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।তখনও আয়ানকে দেখলো না।কিন্তু কাউকে ওর কথা জিজ্ঞেস ও করলো না।
সারা দিনে ও আয়ানের কোনো দেখা মেলেনি।দুপুরের গোসল করে বের হলে হটাৎ আরুর ফোনে একটা কল আসে।আরু দেখে আননোন নাম্বার।হটাৎ ওর কাছে কে কল করলো তাই ভবছে।এবার আরু রিসিভ করলো।আর রিসিভ করে যা শুনলো তাতে ওর পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।ফোন কাটলে আরু ‘না’ বলে চিৎকার করে উঠে।আর চিৎকারে সবাই ওর রুমে আসে।রুমে এসে দেখে আরু ফ্লোরে বসে আছে।আয়ানা ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে কিন্তু আরু কিছু বলতে পারে না।তাই আয়ানা ফোন তুলে দেখে কেউ লাইনে আছে।আয়ানাঃ হ্যালো কে বলছেন?
অপরিচিতঃ আপনি আমাকে চিনবেন না।আসলে আয়ান নামের একজনের ফোনে সবার উপরে এই নাম্বারটা ছিলো তাই।
আয়ানাঃ হ্যা।কিন্তু আয়ানের ফোন আপনার কাছে কেনো?
অপরিচিতঃ আসলে আয়ান নামের এই মানুষটা একটু আগে আগে এক্সিডেন্ট হয়েছে।আমরা ওনাকে…… হসপিটালের নিয়ে এসেছি।আপনারা এসে পরুন।
আয়ানা পুরো নিস্তব্ধ।ওর মা জিজ্ঞেস কী হয়েছে?আয়ানা সবটা বলে দিলো।আয়ানের মা-ও শুমে কেঁদে দিলেন।
তারপর উনারা ছুটলেন হসপিটালের উদেশ্যে
চলবে…..