মেহেরজান #লেখা_সোহা #পর্ব_১৯

0
74

#মেহেরজান
#লেখা_সোহা
#পর্ব_১৯

বিকেলের দিকে বৃষ্টিটা থেমে আকাশে আবার রোদও উঠেছে।নুসফার বাপের বাড়িতে এসেছে নিলয়ের সাথে।মিলিকেও নিয়ে এসেছে শাহ বাড়িতে। সকাল দশটার দিকে এসেছিলো।মিলি সারাটাদিন নুজাইশের জন্যই অপেক্ষা করেছে।আজ ভার্সিটি যাওয়া হয় নি। সারাদিন তার জন্য ঠিক করা রুমে বসে বারান্দা থেকে গেইটের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তার রুমটা নুজাইশের রুমের বিপরীত পাশে।এখন বিকেল চারটা বাজলো।তাও কেন আসছে না এই নিয়ে চিন্তা করছে।তখনই গাড়ির আওয়াজ শুনলো।বারান্দায় গিয়ে দেখলো নুজাইশের কালো গাড়িটা।মিলি তো মহাখুশি।তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে নিজেকে আয়নায় ঠিকঠাক আছে কিনা একবার দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।সিড়ির কাছে গিয়ে নিচে উঁকি দেয়।নুজাইশ শার্টের টপ দুইটা বোতাম খুলে উপরেই উঠে আসছে।মিলিও একটা বড় শ্বাস ফেলে নিচে নামার প্রস্তুতি নেয়। নুজাইশ একমনেই উপরে উঠে আসছিলো সামনে থেকে কাউকে নামতে দেখে তাকালো।আর মিলিকে দেখেই অবাক হলো আর জিজ্ঞাসা করলো,
“তুমি এখানে?”

মিলি হতচকালো,
“ভাইয়া আর ভাবীর সাথে এসেছি।”

নুজাইশ ভ্রু কুঁচকে বললো,
“ভার্সিটি যাও নি কেন আজ?তোমরা এতো ক্লাস মিস দাও কেন?”
“আসলে আগামীকাল থেকে যাব।”

নুজাইশ আর কিছু বললো না উপরে উঠে চলে গেলো।পেছনে মিলি নুজাইশের যাওয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। নুসফার রুম থেকে বেরিয়ে এসে মিলিকে সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো,
“মিলি তুমি এখানে কি করছো?”

মিলি হেসে বললো,
“কিছু না ভাবী।নিচে যাচ্ছিলাম।তোমাদের বাড়ির বাগানটা দেখার জন্য।”
“ঠিক আছে চলো আমি তোমায় নিয়ে যায়।”

মিলিও রাজী হলো।নিচে আসতেই নুসফারের মা আবিদা বেগম তাদের দুজনকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,
“কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”

নুসফার জবাবে বললো,
“মিলিকে আমাদের বাড়ির বাগানটা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি।”

আবিদা বেগম মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“একা বোর হচ্ছো বুঝি?একা লাগলে আমার সাথে গল্প করতে চলে এসো মা।”

মিলি মিষ্টি হেসে মাথা নাড়লো।নুসফার আর মিলি চলে গেলো।মিলিকে খুবই পছন্দ করেছেন আবিদা বেগম।কি অমায়িক আর ভদ্র মেয়েটা।মনে মনে ভাবলেন ছেলের বউ হলে খুব একটা খারাপ হবে না।কথাটা মাথায় আসতেই স্বামীর কাছে গেলেন। নওয়াজ শাহ স্টাডি রুমে ইজি চেয়ারে বসে বই পড়ছিলেন।রাজনীতিবিদ হয়েও বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসেন তিনি।আজ শরীর খারাপ থাকায় পার্টি অফিসে যান নি।আবিদা বেগম যেতেই নওয়াজ শাহ স্ত্রীর দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও বই পড়ায় মনোযোগ দিলেন।আবিদা বেগম স্বামীর পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। গলা ঝেড়ে কেঁশে বললেন,
“শোনো আমি একটা কথা ভাবছি।”

নওয়াজ শাহ বই পড়তে পড়তেই বললেন,
“বলে ফেলো আবার কি জগাখিচুড়ি ভাবনা ভাবছো?”

আবিদা বেগম মুখ ফুলালেন,
“যাও তোমাকে আমি বলবোই না।আমি গেলাম।”

নওয়াজ শাহ বইটা টেবিলের ওপর রেখে দিলেন।চশমাটা খুলে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। নওয়াজ শাহ খুবই মজার মানুষ।স্ত্রীর সাথে মাঝেসাঝে মজা করতে ভালোবাসেন। আবিদা বেগম মুখ ভেংচে চলে যেতে নিলেই নওয়াজ শাহ বললেন,
“বাপের বাড়ি চলে গেলে আমাদের জন্য রান্নাবান্নাটাও করে দিয়ে যেও।”

বলেই হাসলেন।আবিদা বেগম ফুঁসে উঠলেন।রাগী চোখে তাকালেন স্বামীর পানে।স্বামীর ঠোঁটে হাসি দেখে আরও বেশি রেগে গেলেন।মুখ ঝামটা মেরে বের হতেই যাবেন তখনই নওয়াজ শাহ বললেন,
“এই শোনো গিন্নি, যাওয়া আগে কথাটা বলে যাও।”

আবিদা বেগম থেমে স্বামীর দিকে তাকিয়ে দাত কিড়মিড় করে উত্তর দিলেন,
“তোমায় আর কোনো কথায় বলবো না।আজই বাপের বাড়ির চলে যাব আমি।”

নওয়াজ শাহ হেসে বললেন,
“বউ তোমার জন্য একটা ডায়মন্ডের রিং অর্ডার করে রেখেছি।সামনে তো তোমার জন্মদিন তাই না?যেহেতু তুমি চলেই যাচ্ছো তাহলে অর্ডার ক্যান্সেল করে দেবো।”

থেমে গেলেন আবিদা বেগম।পেছন ফিরে স্বামীর দিকে তাকালেন।কাছে গিয়ে বললেন,
“আমি কোথাও যাচ্ছি না।যেসব কথা বলার জন্য এসেছি তা শোনো।”
অরএচহি
মনে মনে হাসলেন নওয়াজ শাহ।স্ত্রীকে তিনি ভীষণ রকম ভালোবাসেন।আবিদা বেগম রসিয়ে বলা শুরু করলেন,
“পাত্রী ঠিক করে রেখেছি।”

চমকে গেলেন নওয়াজ শাহ।এসব কেমন কথাবার্তা।চোখ বড় বড় করে বললেন,
“পাগল হয়ে গেছো তুমি?এই বয়সে আমি আবার বিয়ে করবো?অবশ্য তুমি যদি রাজী থাকো করাও যায়।”
“বাজে বকা বন্ধ করো।শখ কতো বুড়ো বয়সে।তোমার ছেলের জন্য পাত্রী ঠিক করেছি।”
“ওহ আচ্ছা নুজাইশের জন্য?তা কাকে পছন্দ করলে?তোমার ছেলে যে পরিমাণ ঘাড়ত্যাড়া, সে কি রাজী হবে?”
“ও রাজী হবে না ওর বাপ রাজী হবে।”
“হ্যা আমি তো রাজীই।”
“আবারও বাজে বকছো?শোনো নিলয় বাবার চাচাতো বোনটা আছে না?ওইযে কি নাম মিলি! মেয়েটার ব্যবহার কি সুন্দর, চেহারাও তো মাশাআল্লাহ।মেয়েটাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।আমি চাইছি দুজনের বিয়ে দিতে।একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হোক দুজনে।কত মানাবে দুজনকে।”

নওয়াজ শাহ বললেন,
“মিলি মেয়েটাকে তো আমারও ভালো লাগে।ভীষণ ভালো একটা মেয়ে।তবে মেয়ে কি তোমার ওই ভেড়ার মতো ছেলেকে পছন্দ করবে?তোমার ছেলে তো বিদেশী ব্রয়লার মুরগি।”

ছেলের বিপক্ষে কথা বলায় রেগে গেলেন আবিদা বেগম,
“আমার ছেলে কম কিসে?আমার ছেলের জন্য কতো মেয়ে পাগল।একদম আমার ছেলের ব্যাপারে উল্টাপাল্টা কথা বলবে না।”
“হ্যা তাইতো।দেখো কি হয়?কথা বলে দেখো।তোমার ওই বিদেশী গৃহপালিত গরুটাকে বিয়ের জন্য মিলি রাজী হয় কিনা?”

আবিদা বেগম চোখ রাঙিয়ে চলে গেলেন।

.

ঝলমলে রোদ দেখে মনে হচ্ছে না আজ বৃষ্টি পড়েছে।তবে বাইরের গাছপালা আর ভেজামাটি দেখে বোঝা যাচ্ছে বৃষ্টি হয়েছে। খান বাড়ির প্রতিটি সদস্য এখন রেডি হতে ব্যস্ত।একটু পর সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।কিছুদিন থেকে তারপর এসে পড়বে। তবে বাড়ির কর্তারা দুদিন কিংবা একদিন পরই চলে আসবে অফিসের কাজে।মেহরানেরও ফিরে আসার সম্ভাবনাই বেশি।

তাজবির দৌঁড়ে নিচে নেমে আসলো।একদম ফিটফাট রেডি সে।রাউশি তো সবার আগেই রেডি হয়ে সোফায় বসে বসে কফি খাচ্ছে। বাড়ির কর্ত্রীদের রেডি হতে সময় লাগবে। সিলেট তো নয় যেনো বিয়েবাড়িতে যাবে এই সাজ দিতেই তো ঘণ্টাদেড়েক সময় লাগবে। এর মধ্যে এক মগ গরম কফি না শুধু দুই মগও খাওয়া শেষ হবে।রাউশি ধোঁয়া উড়তে থাকা গরম কফির মগে চুমুক দিয়েই দেখে মেহরান সিড়ি বেয়ে নামছে।কফির মগটা ঠোঁটের কাছটাই ধরে রেখেই তাকিয়ে দেখে বাদামী রঙের একটি শার্ট আর কালো রঙের একটি জিন্স পরিহিত মেহরানকে।চুলগুলো আগের মতোই গুছিয়ে রাখা তবে কপালে কিছু কিছু চুল পড়ে আছে।চোখে আবার কালো চশমাও দিয়েছে।শার্টের টপ দুইটা বোতাম খোলা থাকায় হালকা লোমশ বুক দেখা যাচ্ছে।শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নামছে।চশমার জন্য বোঝা গেলো না দৃষ্টি কোনদিকে।তবে রাউশির দৃষ্টি তারই দিকে।ঢোক গিললো রাউশি।নির্লজ্জ চোখগুলো গিয়ে বারবার বুকের কাছটাই দেখতে ব্যস্ত যেন।নিজের চোখ খুব কষ্টে সংযত রেখে পাশে বসে টিভি দেখতে থাকা তাজবিরের দিকে তাকালো।বড় একটা শ্বাস ফেলে ঠিক করলো আজ আর একটুও এই লোকের দিকে তাকাবেনা।আড়চোখে একবার তাকালে সিড়ির দিকে কিন্তু মেহরানকে আর দেখতে পেলো না।মনে মনে ভাবলো লোকটা গেলো কোথায়?তখনই মেহরান রাউশির পাশে এসে বসলো আর রাউশির চুমুক দেওয়া কফি মগে নিজেও এক চুমুক দিলো।রাউশি শুধু চোখ বড় বড় করেই তাকিয়ে রইলো।তাজবিরও দেখলো সেটা।আর বললো,
“এই ভাইয়া তুমি রাউশিপুর এঁটো কফি খেলে?”

মেহরান গম্ভীর গলায় সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো,
“নিজের মানুষের খাওয়াটা খেয়েছি সমস্যা কোথায়?”

তাজবির বুঝলো না কিছু বরং টিভি দেখায় মন দিলো।আশেপাশে আর কেউ নেই।তাজবিরও টিভি দেখায় ব্যস্ত।রাউশি ভুলেও মেহরানের দিকে তাকাচ্ছে না।সেও একনজরে টিভির দিকেই তাকিয়ে আছে।টিভিতে ডোরেমন চলছে।মেহরান রাউশির গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,
“বিয়ের পর সারাদিন সারারাত তাকিয়ে থাকিস।আপাতত আমি একটা ব্যাচেলর হ্যান্ডসাম পুরুষ চোখ দিয়ে নজর লাগানো বন্ধ কর।আমার হবু স্ত্রী মৌরিন খান রাউশির জিনিস তো আর সবাইকে দেখাতে পারি না।”

কথাটুকু বলেই চলে গেলো মেহরান।রাউশি হতবাক,নির্বাক ভূমিকা পালন করলো।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে গালে হাত দিয়েই বসে রইলো।আর মনে মনে বললো ‘ব্যাটা তুইও তো তাকিয়ে ছিলি।’তানিয়া খোশমেজাজে উপর থেকে নেমে এলো।মেয়েটা চোখে চশমা পড়েছে।রাউশির পাশে বসতেই রাউশি তানিয়ার কালো চশমাটা কেড়ে নিয়ে নিজে পড়লো।তানিয়া বললো,
“এই আপু, আমার চশমাটা নিলে যে?”
“এটা সিলেট পৌঁছানো অবধি আমার।”

তানিয়া মুখ ফুলালো আবারও উপরে উঠে গেলো আরেকটা আমার জন্য।এটা তার প্রিয় চশমা ছিলো।তানজিম রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এলো।রাউশি আর তাজবির টিভি দেখছিলো মনোযোগ দিয়ে। তানজিমকে দেখে তাদের দুজনের টিভি দেখার হুশ উড়ে গেলো।চোখ দুটো বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে খুব জোরে জোরে হেসে ফেললো দুজনে।হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে এমন অবস্থা।তানজিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।মাহতাব খান রুম থেকে বেরিয়ে বসার রুমে আসতেই সিড়ির কাছে ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘুরে আবারও নিজের রুমে চলে গেলেন। তানজিম শুধু সবার দিকে চোখ ছোট ছোট করেই তাকিয়ে আছে।মাইশা লিপস্টিক হাতে নেমে এলো নিচে।ঠোঁটে তার বিজয়ের হাসি।মাইশা তানজিমের সাথে বাজি ধরেছিলো কোনো একটা বিষয়ে।তবে তানজিম হেরে গিয়েছে তাই তো মাইশা তাকে মেয়েদের ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়েছে মুখে ধবধবে সাদা পাউডার আর বাহারি রঙের একটি হাফ হাতা শার্ট নিচে লুঙ্গি পড়িয়েছে।হেরে যাওয়ার জন্য তাকে পুরো রাস্তা এভাবে যেতে হবে।তার এমন সাজসজ্জায় সবাই হাসতে লাগলো।উজান এসে তানজিমের এমন অবস্থা সিড়ির কাছেই হাসতে হাসতে তানজিমের উপরেই পড়ে যাচ্ছে।তানজিম বিরক্ত হয়ে সড়ে যাচ্ছে।তানিয়া বড় ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়লো। মাহতাব সাহেব আবারও আসলেন সেখানে আর ছেলের কাছে গিয়ে বললেন,
“কি সেজেছিস এসব?কোন জায়গায় সার্কাস দেখাতে যাবি বাবা?যত টাকা পাবি তার অর্ধেক ভাগ আমাকেও দিয়ে দিস।”

বলেই চেঁচিয়ে স্ত্রীকে ডাকতে লাগলেন,
“রোকসানা, তোমার গুণধর ছেলেকে দেখে যাও, জোকার সেজে এসেছে।কোথায় যেন আজ সার্কাস দেখাতে যাবে।”

বাড়ির সবাই সেখানে উপস্থিত হয়ে তানজিমের এই রূপ দেখে হা হুতাশ করে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে।তানজিম মাইশার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে জবাবে বললো,
“কিছু হয় নি।ইচ্ছে হয়েছে তাই এভাবে যাব সিলেট।গাড়িতে করে যাব কেউ তো আর দেখবে না।”

মাহতাব খান ছেলেকে বললেন,
“হ্যা তাইতো।আগে ভাবতাম ছেলেটা আধপাগল এখন তো দেখি পুরোটাই পাগল এই ছেলে।এই ছেলেকে পাবনায় পাঠানোর ব্যবস্থা যতদ্রুত সম্ভব করতে হবে।”

হেসে উঠলো ছেলেমেয়েগুলো।মেহরান সদর দরজায় হেলান দিয়ে পকেটে দুহাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে আর রাউশির হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।উজান তার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
“মনে লাড্ডু ফুটছে?”

বলেই ভো দৌঁড় দিলো।মেহরান চক্ষু হাসলো রাউশির দিকে তাকিয়ে।

চলবে……

(আমি কয়েকদিন ধরে ব্যস্ত আছি।সময় পেলেই গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

পর্ব— ২০ মিস না করতে নীল লেখায় চাপ দিয়ে আইডিতে ফলো করুন👉 It’s shemul

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here