#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ৩
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
গ্রাজুয়েশন এর পর আবির উত্তরার বাসায় সময় কাটিয়েছে তার মা বাবার সাথে। তখন রেহানা খানের সাথে আবিরের বেশি সময় কাটতো। হঠাৎই একদিন রেহানা এসে বললেন, আবির তোর কোনো পছন্দ আছে?
আবির মনে মনে অবাক হলেও হেসে উত্তর দিলো, কেন?
বিয়ে করাবে নাকি মা ?
রেহানা খান বলে উঠল আগে বল, পছন্দ আছে নাকি নেই?
আবির হাতের মাইক্রোস্কোপটা পাশে রেখে হাসিমুখেই বলল ❝নেই।❞
রেহানা খান কিছুক্ষণ হাসি হাসি মুখ নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে থেকে খুব সহজ সরল ভাষায় বলতে লাগলো, পুত্রবধূ হিসেবে মিষ্টি পুতুল দেখতে একটা মেয়ে পছন্দ করেছি তোর জন্য। যাকে বিয়ে না করলে তোর জীবনটা ব্যর্থ হলেও হতে পারে।
আবির তার মায়ের দিয়ে চোখ তাক করে চাইলো,মা আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না।
রেহানা খান ভীষণ উৎসাহ নিয়ে বললেন, ‘তোকে আমি একবারও বলেছি যে বিয়ে কর? আমি শুধু মেয়ের কথা বলছি। বিয়ের কথা নয়। তোর কাজ হলো প্রেম করা। তারপর যখন ইচ্ছে হবে তখন বিয়ে করবি, ব্যস।’
আবির হতভম্ব চোখে রেহানা খানের দিকে তাকিয়ে রইল। আবির ভ্রু কুচকিয়ে বলল , মেয়েটা কে?
রেহানা খান এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে মেয়ের অতীত,বর্তমান, ভবিষ্যৎ, হাঁটা-চলা, ঘুম সবকিছু কলকল করে বলতে লাগলেন।
আবির চোখ কপালে তুলে বলল❝ অসম্ভব। ❞
তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ মা। আল্লাহ! কি বলছ? প্লিজ আম্মু, এসব পাগলামো বন্ধ করো।’
রেহানা খান পাগলামো আরো বাড়িয়ে দিলো।
রেহানা খানের ভাষ্যমতে এই মেয়েটির সাথেই আবিরের দেখা সাক্ষাৎ নেই প্রায় অনেক বছর।মেয়েটা আর কেউ নয় একমাত্র মামুর দ্বিতীয় কন্যা তৃনা। তবে প্রবল আগ্রহ হলো। যে মেয়ের জন্য আবিরের মায়ের এতো পাগলামো তাকে জানার আগ্রহ হওয়াটা স্বাভাবিক।
তার ভাইয়ের বাসায় রেহানা খানের যাতায়াত ছিল সব সময়, বেড়াতে এসেছে বার বার তৃনাদের বাসায় । তৃনাকে তার মনে ধরেছে। তাই আবির সিদ্ধান্ত নিলো এবার মেয়েটার মুখোমুখি হবে।
____
আবিরের কোনো খেয়ালই নেই তৃনা তার পাশ কাটিয়ে চলে গেছে কখন, যে মেয়ের জন্য তার মা পাগলামো শুরু করে দিয়েছে, সেই রোগটা এবার আবিরকে আক্রমণ করলো বোধহয়।
কাক ভেজা অবয়বে তৃনার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে বারবার আবিরের চোখে। এখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাদের গেটে আবির। সে এখনও ভেবে উঠতে পারছে না ১৫বছরের ব্যবধানে এতোটা পরিবর্তন। তৃনাকে আবির শেষ দেখে ছিল তৃনার ৪বছর থাকা কালীন।তখন আবিরের তখন ১২বছর। সারাদিন তৃনা আবিরের গলায় ঝুলে থাকত, সারাদিন তৃনা জ্বালাতন করত,আবির ভাই বলতে ব্যাকুল ছিল। সেই সব কথা আবার ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে দিলো।
আবির এবার পিছন ফিরে রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করল।
রুমে এসে আবির ফ্রেশ হয়ে বের হয়, এর মধ্যেই রেহানা এসে আবিরকে বলল রাইদ, রিয়াদ কে নিয়ে খেতে আয়, সবাই টেবিলে অপেক্ষা করছে। আবির বলল ঠিক আছে আসছি তুমি যাও আম্মু।
তৃনা ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।পেটে ক্ষুধা পেয়েছে তৃনার অনেক। তাই চুলে থেকে টাওয়াল ছাড়িয়ে নিয়ে কোনো রকম পানিটা ছাড়িয়ে খাবার টেবিলে যায়। বড় সদস্যরা আগে খেয়ে নিয়েছে তার মধ্যে তন্ময়, তন্নি খেয়ে নিয়েছে। বিশাল খাবার টেবিলে একপাশে রোদেলা, আন্নি আর তৃনা বসা। আচমকা আবির এসে তৃনার পাশে বসে পড়লো। তৃনা আবিরকে দেখে এমন ভাব করলো যেন, ওর পাশে কেউ নেই।
আবির তৃনাকে বলে উঠল কেমন আছো পুতুল। (ছোট বেলায় আবির তৃনাকে পুতুল বলে ডাকত) তৃনা আবিরের দিকে না তাকিয়ে বলল ভালো আছি আবির ভাইয়া। আপনি ভালো আছেন। তৃনার এমন শান্ত গলায় কথা শুনে সাহেলা খানম মেহরিমা কিছুটা চমকে উঠে। কারন তৃনা কখনও এমন শান্ত গলায় কথা বলে না, সে নতুন মেহমান হোক বা পুরাতন, তবে আজ এই মেয়ের কি হলো তার ছক করতে লাগলো সাহেলা আর মেহরিমা।
রিয়াদ আর রোদেলার হঠাৎ চোখাচোখি হওয়ায় রোদেলা একটু মুচকি হাসি দিল যার ফলস্বরূপ রিয়াদের নাকে ঝাঁঝ ডুকে যাওয়ায় কাশি দিতে লাগলো, রোদেলা একগ্লাস পানি রিয়াদের সামনে ধরে থাকলে রোদেলার হাত থেকে নেওয়ার সময় রিয়াদের আঙুলের সাথে স্পর্শ লেগে যায়, তাতে আবারও দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। রাইদ রিয়াদের পিঠে বার কয়েক হাত দিয়ে চাপড় দিয়ে বলল, কিরে হঠাৎ কি হয়েছে, রিয়াদ বলল কিছু হয় নি।
সবাই খাওয়ার পর্ব শেষ হলে যে যার রুমে গেল।
বাড়ি মাথায় তুলে হাক ডাক ছেড়ে রেহানা খান কাপিয়ে তুলেছে। সাহেলা খানম আর মেহরিমা তৃনাকে খুজছে, তৃনাকে নাকি পাচ্ছে না। রেহানা খান মিজানকে,আবির আর তন্ময়কে বাইরে পাঠিয়েছে তৃনাকে খুজতে।
রেহানা খান দুপুরের পর হালকা বিশ্রাম নিয়ে, তৃনার রুমে গিয়েছিল। অতঃপর তৃনাকে না পেয়ে সারাবাড়ি খোজাখুজি করার পরে, সবাইকে খুজতে বলেছে। সফিউল আহামেদ আর তনয় আহমেদ মুখ ভার করে বসে আছে, কারন তৃনা এখানের তেমন কিছু চেনে না। এখন কই গেলো সেই ভেবেই বুকটা কেপে উঠে তাদের।
মিজান কাকা,আবির আর তন্ময় কিছুদূর গেলে, আবির সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠল, আমরা যদি আলাদাভাবে খোজ করি খুব দ্রুত আমরা তৃনাকে খুজে পাবো। তন্ময় ভাই আপনি এই দিকে যান,মিজান কাকা আপনি সোজা যান, আমি এই দিকে খুজি। সবাই আবিরের কথায় সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো।
পড়ন্ত বিকেল। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। দক্ষিনা বাতাস বইছে। সুদূর ধান ক্ষেতের পাশে দৃশ্যমান বটগাছে ঝুলানো এক দোলনায় তৃনা দোল খাচ্ছে। বাতাসে বেগ তৃনাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, দোলনার তালে তালে হাসছে আর গুন গুন করে গান গাইছে।এ যেনো পরম শান্তি।
আবির দূরে দোলনায় দোল খাওয়া তৃনাকে দেখে একটু হাসি দিয়ে ফোন বের করে সবাইকে জানিয়ে দেয় তৃনাকে পাওয়া গেছে, তন্ময় আর মিজান কাকাকেও ফোন করে বাসায় যেতে বলে আবির।
আবির এগিয়ে তৃনার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে, তৃনা প্রথম একটু আশ্চর্য হলেও মাথায় হাত দিয়ে মুখে জিব্হা কেটে বলে উঠল আবির ভাই বাসায় কি সবাই আমায় খুজছে।
আবির জবাব দিলো,না বলে কেনো বের হও, সবাই তোমায় আজ শিক্ষা দিবে বুঝলে পুতুল।
তৃনা এবার দোলনা থেকে নেমে আবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই বলতে পারি নি। ভালো লাগছিল না তাই চলে এসেছি। ঢাকা থেকে আসার সময় এই জায়গাটা চোখে পড়েছিল তাই, চিন্তা করে রেখেছিলাম এখানে আসবো। ওই সব কথা বাদ আমি দোলনায় উঠছি, আপনি ধাক্কা দিন।
আবির দোলনায় ধাক্কা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো তৃনাকে, পুতুল তা এবার কিসে পড়া হচ্ছে।
তৃনা জবাবে বলে অনার্স ২য় বর্ষে আছি জাহাঙ্গীরনগরে। আবির আবার জিজ্ঞাসা করলো, তোমায় তো দেখে মনে হয় তুমি অনেক পিচ্চি,তা বয়স কত?
তৃনা জবাবে বলে, আমি মোটেও পিচ্চি না,একমাস আগে ২০ এ পা রেখেছি।
আবির এবার বিরবির করে বলে উঠল ❝পারফেক্ট❞
কথা বলতে বলতে অনেক সময় কেটে গেলো তাদের মাঝে। এবারে বেশ কিছুক্ষন দোলনায় ধাক্কা দেওয়ার পর আবির পাশে এসে দাঁড়ায়, আর মনে মনে ভাবে, এই মেয়ের খুনসুটি,তার মাকে ঘায়েল করেছে, আর এখন আবির নিজেও ঘায়েল হচ্ছে। এলোমেলো মুখশ্রী দেখলেই মনের মধ্যে একটা ভালোলাগা কাজ করছে, ঠোঁটের নিচে বাদামি সুক্ষ্ম তিলটা জ্বল জ্বল করছে, এ যেনো এক অন্যন্যা সৌন্দর্য। মনে হয় নুরের জ্বলসানিতে আলোর বিকিরণ।
সন্ধ্যা নামার আগেই তৃনাকে নিয়ে ফেরে আবির। সায়েলা খানম কটমট চোখে তাকিয়ে আছে তৃনার পানে, ভয়ে রেহানা খানের আচলের তলায় লুকায় তৃনা, এমন দৃশ্য দেখে আবির একটা সুক্ষ্ম হাসি টানলো ঠোঁটের কোনে। রেহানা খান নানা কথা শুনিয়ে তৃনাকে বাচাচ্ছে সায়েলা খানমের কাছ থেকে। রেহানা খান তৃনাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো বহু তালবাহানা করে।
~চলবে।