মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻 #কাজিন_রিলেটেড #পর্বঃ৫

0
76

#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ৫
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)

তনয় আহমেদ মাইক্রফোন নিয়ে এনাউন্সমেন্ট এর কাজ করছে, টস অনুযায়ী ছেলেদের পক্ষ থেকে গান করার কথা বললেন তনয় আহমেদ। আবিরদের দল থেকে আবির গান গাইবে সিদ্ধান্ত নিলো। স্টেজের সামনে খালি জায়গায় কার্পেট বেছানো হয়েছে। কার্পেটের উপর চেয়ারে আবির গিটার সেট করে বসে পড়লো। রাইদের হাতে ক্যামেরা। রিয়াদ ইলেকট্রনিক পিয়ানো সেট করছে।
আবির গিটারে সুর তুলে গান গাইতে শুরু করলো।

আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো

(সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে। চার পাশ নিরব হয়ে আছে)

তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও
তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও

আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে
আর কিছু নাহি চাই গো
আমার পরান যাহা চায়

আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বর্ষ মাস
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বর্ষ-মাস

যদি আর-কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আস
যদি আর-কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আস
তবে তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও
আমি যত দুখ পাই গো
আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়

(গান শেষ হতে না হতেই, সবাই হাতে তালি দিলো।)

সাখাওয়াত নাম্বার প্লেট উঠিয়ে আবিরকে ১০ দিল।
তনয় আহমেদ মাইক্রফোনে এনাউন্সমেন্ট করলো, মেয়ে পক্ষ থেকে গান গাইবে তৃনা।
তৃনা গিটার হাতে নিয়ে বসে আছে,তৃনা গান শুরু করার আগে সফিউল আর তনয় কে বলল, বাবা তুমি হারমনিয়াম বাজাও, আর কাকা তুমি তবলা। তাদের কাছে গানের নাম বলে এসে গিটার নিয়ে বসে পড়লো তৃনা।

সুর তুলেছে তৃনা, সাথে তৃনার বাবা, চাচা দুজনেই।

শোন গো দখিনো হাওয়া
প্রেম করেছি আমি।

(, তৃনা গানের দুলাইন আওরালে আবিরের দৃষ্টি তৃনার দিকে গেলো। অপলক ভাবে তৃনার পানে দৃষ্টি স্থির আবিরের)

শোন গো দখিন হাওয়া
প্রেম করেছি আমি,
লেগেছে চোখেতে নেশা
দিক ভুলেছি আমি।
শোন গো দখিনো হাওয়া
প্রেম করেছি আমি।।

(সবাই খুব মন মিশিয়ে গানটা উপভোগ করছে)

মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে তিয়াসা
জাগিল মধু লগনেতে বাড়ালো পিয়াসা,
মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে তিয়াসা
জাগিল মধু লগনেতে বাড়ালো পিয়াসা,
উতলা করেছে মোরে, আমারি ভালবাসা
অনুরাগে প্রেম সলিলে ডুব দিয়েছি আমি
শোন গো মধুর হাওয়া প্রেম করেছি আমি।।

দহনো বেলাতে আমি, প্রেমেরো তাপসী
বরষাতে প্রেম ধারা, শরতের শশী,
দহনো বেলাতে আমি, প্রেমেরো তাপসী
বরষাতে প্রেম ধারা, শরতের শশী,
রচিগো হেমন্তে মায়া, শীতেতে উদাসী
হয়েছি বসন্তে আমি বাসনা বিলাসী।

শোনগো মদির হাওয়া প্রেম করেছি আমি,
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি।


তৃনার গান শেষ হলে সবাই হাতে তালি দিলো। রেহানার কোলে গিয়ে গলা জড়িয়ে বসে পড়ল তৃনা।
সাখাওয়াত নাম্বার দিল ১০। তৃনা খুশি হয়ে আবিরের দিকে তাকালে, চোখের ইশারায় ব্যঙ্গ করল আবিরকে তৃনা।আবির ও তার পালটা ব্যঙ্গ করে দিলো তৃনাকে।

আতিক খান মাইক্রফোন এনাউন্সমেন্ট করল, এখন নাচ শুরু হবে,এবার ছেলে পক্ষ থেকে নাচতে আসবে আবির তার দল। আবির এসে গান প্লে করতে দিয়ে গেলো তনয় আহমেদ কে।

লাইটস অফ, গান শুরু হলো, গানের সুরের সাথে সাথে লাইটস অন হলো, তৃনা, আন্নি,রোদেলা হা করে আছে। তৃনা আন্নির দিকে একবার আর রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ভাই আগুন, নাচের সাথে আবির ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলছি, রোদেলা তৃনাকে বলল, তৃনা আমি কিন্তু হারতে চাই না, আমি প্লান করে ফেলছি কিন্তু টাকা দিয়ে কি কি করবো। আবির ভাইকে হারাতেই হবে। আন্নি হালকা কেশে বলল ক্রাশ খেয়ে লাভ নাই, আর প্লান করাও বন্ধ করো, এখন শুধু চিন্তা কর কেমনে জিতবা।

Mehbooba mehbooba
Mehbooba mehbooba
Tu hai mere dil ka ajooba
Ajooba ajooba

Tere ishq ki deewangi
Sar pe chadh ke bole

Tere ishq ki deewangi
Sar pe chadh ke bole
Toone kya kiya yeh kya hua
Dil ding dong ding dole

(সুর হচ্ছে, এর মধ্যে আবির আর তৃনার চোখাচোখি হয়ে যায়। আবির তৎক্ষনাত তৃনাকে চোখ মারল। তৃনা ভ্যাবাচেকা খেলো।তৃনার অবস্থা দেখে আবির মুচকি হাসি দিলো।আর তালে তালে নাচতে থাকল)

Hey dil ding dong ding dole
Tere ishq ki deewangi
Sar pe chadh ke bole

Tere ishq ki deewangi
Sar pe chadh ke bole
Toone kya kiya yeh kya hua
Dil ding dong ding dole
Hey dil ding dong ding dole

নাচ শেষে সবাই হাতে তালি দিলো। আতিক খান মাইক্রফোনে বলে উঠে, এই না হলে আমার ছেলে আজ দেখিয়ে দিবে ছেলেরাও কম যায় না। তনয় আহমেদ বলে উঠল, এতো বড়াই কর না ভাই আমার মেয়েরা ও আছে তারাও কিন্তু কম যায় না, শেষে দেখো কারা প্রাইস টা নেয়।
এরপর তনয় আহমেদ মাইক্রফোনে এনাউন্সমেন্ট করলো তৃনাদের গান প্লে করে নাচার জন্য।
তৃনা গান সেট করে, লাইটস অফ করে দিতে বলল।

তৃনা, রোদেলা, আন্নি আর তুলি নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে সেট করে নিলো। গান শুরু হওয়ার সাথে সাথে লাইটস অন হলো। এর মধ্যে আবির ফোনে কথা বলতে বলতে তৃনাদের দিকে তাকালে মুখ হা হয়ে কান থেকে মোবাইলটা মেঝেতে পড়ে গেলো, রাইদ মেঝে থেকে ফোনটা উঠিয়ে আবিরের হাতে দিলো। রিয়াদ আবিরের পিঠে চাপড় দিলে আবিরের হুস ফেরায়।

Curvy Kamariya Teri
Haaye Re Meri Jaan Le Gayi Oye
Banke Bijuriya Giri
Haaye Re Pareshan Kar Gayi Oye

Curvy Kamariya Teri
Haaye Re Meri Jaan Le Gayi Oye
Banke Bijuriya Giri
Haaye Re Pareshan Kar Gayi Oye

Oh Ri Gori Sunn Ri Sunn Ri Sunn Ri
Pink Teri Chunri Chunri Chunri
Dil Pe Jo Hai Guzri Guzri Guzri
Tujhe Likh Ke Bataun
Ya Gaake Sunaun Main

Oh Thumkeshwari
Ae Haan, Ae Haan, Ae Haan
Oh Thumkeshwari

Hai Tabaahi Gazab Tabaahi
Tu Tabaahi Oye Hoye Hoye Hoye
Tu Tabaahi Gazab Tabaahi
Oh Thumkeshwari

(রাইদ বলল আবিরকে, ভাই আজ মনে হয় জিততে পারবো না, তোর একেকটা কাজিন, এক একটা আগুন। আরে ভাই শেষ হয়ে যাইতাছি। রিয়াদ আবিরের কাধে হাত রেখে বলল, রাইদের গায়ে এক বালতি পানি ঢাল আবির, আন্নির আগুনে নাকি জ্বলসে যাচ্ছে, আবির ভ্রু কুচকিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই জানলি কেমন করে, রিয়াদ আর আবির এবার রাইদের পানে তাকালে রাইদ ফিক করে হেসে দিলো। রাইদের হাসি দেখে আবির আর রিয়াদ ও হেসে দিলো, তারপর আবার নাচ দেখায় মনোযোগ দিলো।)

Ni Main Jaana Jogi De Naal Naal
Ni Main Jaana Jogi De
Jaana Jogi De Naal Naal
Ni Main Jaana Jogi De

Babu Tu Bada Chep Hai
Kuchh Hadd Se Hi Zyada Dil Phenk Hai
Nigodi Teri Company Mein Haaye
Meri Yeh Jawani Unsafe Hai

Babu Tu Toh Babu Bada Chep Hai
Kuchh Hadd Se Hi Zyada Dil Phenk Hai
Nigodi Teri Company Mein Haaye
Meri Yeh Jawani Unsafe Hai

Arey Chep Toh Hargiz Nahi
Hum Tere Chaahne Wale Hain
Ittu Sa Bhi Khatra Nahi
Husn Ke Hum Rakhwale Hain

Aaj Ban-Than Ke Saj Ke Dhaj Ke
Maar Zara Jamke Latke Jhatke
Dil Hai Tere Sadke Sadke Sadke
Tere Har Ek Thumke Ka Bima Karaun Main

Oh Thumkeshwari
Ae Haan, Ae Haan, Ae Haan
Oh Thumkeshwari

নাচ শেষে তৃনার দল এসে বসে পড়ে তাদের জায়গায়।

আতিক, সফিউল, তনয় আহমেদ মাইক্রফোনে সাখাওয়াতকে অনুরোধ করলো বিজয়ীর নাম বলতে।
সাখাওয়াত খুবই চিন্তিত।চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে আতিক, সফিউল, তনয়ের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষনের মধ্যে সফিউল মাইক্রফোনে বলে উঠল, আজকের দুইপক্ষই খুব সুন্দর পারফর্ম করেছে।কারন কেউ কারো থেকে কম না, আমরা খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করেছি। এখন আসি আসল কথায়। এ পর্যায়ে আমরা বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছি।
(সবার মধ্যে নিরবতা চলছে)
প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছে দুই পক্ষই। তাই পুরষ্কার হিসেবে দুপক্ষকেই ৫০ হাজার, ৫০ হাজার করেই টাকা দেওয়া হবে। আতিক সাহেবের কাছ থেকে টাকাটা তোমরা বুঝে নিও।

এরপর তন্নি আর তন্ময়ের হলুদ ছোয়া শুরু হলো। সবাই একে একে তন্নি আর তন্ময়কে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে, ওদিকে ছবি তুলছে আবির।আবির ক্যামেরা হাতে নিয়ে তাক করে ছবি তুলতে নিলে, এর মধ্যেই তৃনা আবিরের সামনে থেকে যেতে নিলে, আবির অন্য হাত দিয়ে তৃনার বেনী ধরে ফেলে, যে কারনে তৃনা আবিরের দিকে ফিরে তাকায়, আর আবির সাথে সাথেই একটা ছবি তুলে ফেলে, অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ছবিটা অনেক সুন্দর ভাবে তোলা হয়ে যায়, আবির মৃদু হেসে তৃনার দিকে তাকিয়ে বলল, তা হারাতে তো পারলে না। তৃনা ভ্রু কুচকিয়ে বলল, আমাদের কেও তো পারেন নি। আবির আবার হেসে তৃনার বেনী ধরে টান দেয় যার ফলে তৃনা এসে আবিরের অনেকটা কাছে এসে ঝুকে পড়ে। তৃনা শান্ত গলায় বলল, বেনীটা ছাড়ুন আবির ভাই, আবির ছাড়লো না, বরং হাতের মধ্যে পেচাতে লাগলো,আর বলল, না ছাড়লে কি করবে পুতুল।তৃনা বলল,নদীতে নিয়ে চুবাবো আপনাকে, তারপর আপনাকে গুম করবো। আবির অট্টহাসি হাসি দিয়ে বলল, তোমার যা সাহস তাতো কালকেই দেখলাম। ওই ভাবে পালিয়ে যেতে না। (আবির তৃনার কানে ফিসফিস করে বলল) তবে তোমাকে কিন্তু ভুতনি হিসেবে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, আমি তো প্রেমেই পড়ে গেছি,তা প্রেম করবে নাকি, তৃনা হিসেবে না হোক ভুতনি হিসেবে ।তৃনা কিছুটা লজ্জা পেলো, আবিরের কথায়। তৃনা হঠাৎ আবিরকে ধাক্কা দেওয়ার কারনে আবিরের হাত থেকে বেনীটা ছুটে গেলো, তৃনা ছুটে পালিয়ে গেলো।

তৃনা পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে শ্বাস টানছে তৃনা, কালকের আবিরের কথাটা গুরুত্ব না দিলেও, আজকের এই কথাটা তৃনার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে, এ কথার মানে তৃনা কোনো মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না। সব চিন্তা এক পাশে রেখে, এক বুক সাহস নিয়ে আবার স্টেজের কাছে এসে হাজির হলো তৃনা। গান বাজনা মিলেমিশে অনুষ্ঠান হয়ে উঠলো আরও জাকজমক।
অনেক রাত অব্দি অনুষ্ঠান হওয়ার কারনে, বাড়ির বড় সদস্যরা জেগে আছে, ছোটদের বলা হয়েছে যার যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিতে। তাই সবাই রুমে এসে ফ্রেশ হচ্ছে। বিয়ের রান্না বান্নার কাজের তদারকি করার জন্য বড়রা সবাই হলরুমে রয়ে গেছে।

তৃনা শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।হালকা গোলাপি কালারের ফ্রোক পড়েছে, সাথে চুরিধার,গলায় ওড়না জড়িয়ে, চুল শুকানো মেশিন দিয়ে চুল শুকাচ্ছে।

❝শোনো গো দখিনা হাওয়া
প্রেম করেছি আমি।
লেগেছে চোখেতে নেশা
দিক ভুলেছি আমি। ❞

পুরুষালী কন্ঠে গান গাওয়ার শব্দ শুনে তৃনা দরজার পানে হতচকিত দৃষ্টি রাখতেই দেখলো আবির মাথা হেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পড়ে আছে একটা নেভি ব্লু টিশার্ট আর সোর্ট প্যান্ট। মাথায় হাত দিয়ে হালকা চুলকিয়ে মৃদু হেসে তৃনাকে বলল,আসতে পারি পুতুল।

তৃনা মাথা দুলিয়ে বলল, আসুন।
আবির এসে বিছানায় বসলো। তৃনা চুলে কাঠি দিয়ে খোপা করে বালিশ কোলে নিয়ে, আবিরের থেকে একটু দূরে গিয়ে বসে আবিরকে বলল,কিছু বলবেন আবির ভাই।

আবির জবাবে বলল, তুমি খুব সুন্দর গান করো পুতুল। তৃনা একটা হাসি দিয়ে বলল,আমার মতো সেলিব্রিটির কন্ঠে আপনি গান শুনতে পেরেছেন, এখন তো আমায় ট্রিট দেওয়া উচিত আবির ভাই।

আবির তৃনাকে বলল, আচ্ছা ট্রিট দিব, কবে নিতে চাও ট্রিট।

তৃনা বলল, এখনি।
আবির ভ্রু কুচকিয়ে তৃনার দিকে তাকিয়ে, এতো রাতে কেমন করে পুতুল।

তৃনা একটা হাসি দিয়ে বলল, আইসক্রিম খাবো। আবির এবার তৃনার হাসির সাথে হাসি মিলিয়ে বলল, আচ্ছা চলো পুতুল।
তৃনা মাথা দুলিয়ে আবিরের সাথে হাটা শুরু করলো।

~চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here