#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলিটেড
#পর্বঃ৯
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
তোকে যে খবর টা আনতে বলেছিলাম, তোর সেই খবরের হুশ মিলেছে। যেকোনো মূল্যে আমার তৃনার দূর্বলতা জানতেই হবে।
সানওয়ার ভাই টেনশন নিয়েন না বিকেলের মধ্যে আপনার খবর এসে হাজির হবে।
সানওয়ার রাশভারি গলায় বলল,এই মেয়েটাকে ভাগে আনা যাচ্ছে না,বাগিনীর মতো সব কন্ট্রোল করে।
মাশরিফ সানওয়ারের কাধে মাসাজ করতে করতে বলল, ভাই মাইয়াডারে তুইলা আইনা বাসায় আটকাইয়া রাখলে হয়না।
সানওয়ার সিগারেটে টান দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলতে লাগলো, তোর স্মৃতিশক্তি যে লোপ পেয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো নারে মাশরিফ। গতবারের কথা কি মনে নাই ,যেগুলারে পাঠাইছিলাম তৃনারে তুইলা আনতে, সেই গুলার হাল কি হইছে। সেইদিনের কথা মনে পড়া মাত্রই মাশরিফের হাত পা শিউরে উঠলো।
~যেদিন প্লান করে তৃনাকে আনতে গিয়ে সবাইকে মেরে তৃনা বেড রেষ্টে পাঠিয়ে ছিল।
_____
ভাই খাশ খবর আছে,
সানওয়ার সিগারেটের শেষ টান টা দিয়ে ফেলে দিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল বলতে, সে কি খবর নিয়ে এসেছে।
ভাই তৃনা বাইরে যতই বাঘিনীর মতো থাকুক না কেনো, বাড়িতে বেজা বিড়ালের মত থাকে।
ওর পরিবারের কেউ জানে না, ও যে কমরেড পদে কাজ করতাছে। ভাই এহন খালি ওর বাপের ধারে জানাইলেই খেল খতম।
সানওয়ার শয়তানি হাসি দিলো। কেপে উঠল কক্ষ তার কন্ঠের ধ্বনিতে।
~তোরে বার বার বলছিলাম তৃনা, ইমতিয়াজ ভাইয়ের সাথে কাজ করিস না, তুই আমার দলে আয়। তুই মানলি না, এবার দেখ তোর কি করুন অবস্থা করি। সানওয়ার আবার অট্টহাসিতে মেতে উঠল।
______
তৃনা তার বিজ্ঞানী মশাই কে তার গবেষণাগারের সামনে ড্রব করে আশুলিয়ার রাস্তায় স্কুটার নিয়ে ছুটলো। রেডিও কলোনির রাস্তা এসে ভেতরের রাস্তা ধরে জামসিং এর রাস্তায় ডুকলো। স্কুটার গিয়ে থামলো সূদুর আহমেদ ভিলার সামনে।
টিপে টিপে পা ফেলছে তৃনা, সাহেলা খানমের থেকে লুকিয়ে কক্ষে ঢোকার চেষ্টা।
কিরে কখন ফিরলি।
তৃনা থমকালো, চেয়ে দেখলো, তার পানে সাহেলা খানম তাকিয়ে।
তৃনা আমতা আমতা করে শুধালো, এই তো মাত্র।
সাহেলা খানমের বললেন যা ফ্রেশ হয়ে নে খেতে দিচ্ছি।তৃনা মাথা নাড়ালো। চলে গেলো কক্ষে। খাওয়া শেষে সফিউল আহমেদের কাছে গিয়ে তৃনা বসে বসে গল্প করে, কক্ষে ফিরলো।
টেবিলে গিয়ে বসে পড়া শেষ করে পারি দিলো ঘুমের দেশে তৃনা।
_____
মুক্ত মঞ্চে বসে আছে, সেহতাজ,মেহের, আন্নি, সানি।সবাই তৃনার অপেক্ষায়। তৃনা আসা মাত্রই সানি চেচিয়ে উঠলো, বিয়া খামু ভাই বিয়া, এই বিয়াডা যদি না খাইতে পারি, জীবনডা আমার বৃথা যাইবো।
তৃনা মেহেরের পানে চাইলো, প্রশ্ন শুধালো,
কিরে তোরা এভাবে বসে আছিস কেন, কিছু কি হইছে।
মেহেরের হাতে মোবাইল থেকে একটা ছবি বের করে তৃনাকে দেখিয়ে বলতে লাগলো, কেমন লাগে বল তো।
তৃনা ছবিটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে বলল, ভালো, সুন্দর।
মেহের তৃনার হাত থেকে মোবাইল টা নিতে নিতে বললো,এই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। এক্সামের পর বিয়ে । আমি চাইছি তোদের নিয়ে যেতে বরিশাল, বিয়েতে।
কিন্তু তোর এমন প্লান করতে হবে যে আমরা যেনো একসাথে যেতে পারি। আন্নি আমতা আমতা করতাছে,বলতাছে পারমিশন নাও দিতে পারে।
তৃনা মিনিট ২ চুপ করে বলে উঠল, হয়ে যাবে ব্যবস্থা। শুধু বিজ্ঞানী মশাই কে ফাসাতে হবে, ওনার কথা শুনলে আর না করবে না আব্বু ,চাচাও আন্নির পারমিশন দিয়ে দিবে।
সানি চেচিয়ে উঠে বলল, স্যালুট বান্ধবি, স্যালুট।
শেষ অব্দি বিয়েটা খাইতে পারমু। সানির এমন চেচানো দেখে সবাই হেসে উঠল অট্টহাসিতে।
_____
বিজ্ঞানী মশাই আজ একটু বাসায় আসবেন, একটা জরুরি বিষয় আব্বুর কাছে আলোচনা করবো। আপনাকে একটু হেল্প করতে হবে।
আবির বুঝলো না তাকে যে জোর ফাসানো হবে। আবির সায় দিয়ে জানান দিলো, বিকালে চলে আসবে।
_____
আরে আব্বু কে বলল, আমি একা যাচ্ছি, মেহের তো তুলিকেও আর আন্নিকেও নিয়ে যেতে বলছে, আবির ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো, সেও তো বিয়ের দাওয়াত পেয়েছে। আবির ভাই তো বলল আমাদের সবাইকে সে নিয়ে যাবে বরিশালে।
তৃনার কথা শুনে আবির হতভম্ব হয়ে চাইলো, মনে মনে বলতে লাগলো নিয়ে যাওয়া তো দূর আবির তো বিয়ের দাওয়াতই পেলো না।এ আবার কেমন বিয়ের দাওয়াত।
আবির একবার তৃনার দিকে চেয়ে ফের সফিউল আহমেদের দিকে চাইলো, আবির আমতা আমতা করে বলতে লাগলো । আসলে মামু মেহের আমায় ও দাওয়াত দিয়েছে। তুমি যদি অনুমতি দেও তাহলে আমি যেতাম ওদের নিয়ে। তনয় মামাকেও একটু বলে দেখো না।
সফিউল আহমেদের কপালের চিন্তার রেখা পড়লো, কয়েক মিনিট পার হওয়ার সাথে সাথেই টি-টেবিল থেকে নিজের ফোন হাতে নিলেন। তনয় আহমেদের নাম্বারে কল দিয়ে আন্নির পারমিশন চাইলেন সফিউল। তনয় আহমেদ আবিরের যাওয়ার কথা শুনে রাজি হয়ে গেলেন।
দেখো, আবির বাবা। একমাত্র তোমার ভরসায় আমি কিন্তু আমার মেয়েদের তোমার সাথে দিচ্ছি। খেয়ালে যাতে ত্রুটি না হয়।
সফিউল আহমেদের কথায় তৃনার চোখ চিকচিক করর উঠলো খুশিতে। সফিউল আহমেদের গলা জড়িয়ে আহ্লাদী সুরে বলতে লাগলো। আব্বু তুমি অনেক ভালো। থ্যাংক ইউ সো মাচ আব্বু।
সফিউল আহমেদ হাত ভুলায় তৃনার মাথায়। হয়েছে হয়েছে। সামনে পরীক্ষা ভালো করে পড়।
_____
সবুজ গাছগাছালীতে ঘেরা আহমেদ ভিলা। বাসার সামনের রাস্তা ধরে কিছুক্ষন হাটলেই দেখা মেলে ধলেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য।নদির এই সুন্দর দৃশ্য দেখাতেই তৃনা এসেছে তার বিজ্ঞানী মশাইকে নিয়ে। নদীর অপারে রুপনগর। গরমে দেখা যায় এর অপার সৌন্দর্য, শীতে দেখা যায় এর ভয়ংকর দৃশ্য।শীতের আমেজের সাথে সাথে কৃষকেরা সরিষার ক্ষেত বুনতে থাকে, যার সৌন্দর্য অপরুপ।
বিজ্ঞানী মশাই আরেক দিন বেশি সময় নিয়ে আসবেন, বুঝলেন। এই রুপনগর তো আপনাকে ঘুড়তেই হবে। আজ আপনাকে নৌকায় চড়াবো, বুঝলেন, আপনার তো গর্ব করা উচিত, যে আমার মতো গার্ল ফ্রেন্ড আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আবির তৃনার কথায় হাসে।
তৃনা ইশারায় তার বিজ্ঞানী মশাইকে ডাকে। চেচিয়ে উঠে বলে, সারাদিন গবেষণা নিয়ে পড়ে থাকলেই কি হবে, ভবিষ্যৎ বউকে সময় দিতে শিখুন বিজ্ঞানী মশাই।
তৃনা হাত ধরে আবিরকে নৌকার গুলইতে নিয়ে বসায়। মাঝিকে বলে চলুন মামা, বেশি না ১০ মিনিট। মাঝি হ্যা সূচক মাথা দুলায়। বৈঠার টানে টানে এগিয়ে চলে নৌকা। তৃনা নৌকার টানার বেগের তালে গান আওরাতে লাগলো,
আজ এক নাম না জানা কোনো পাখি
ডাক দিলো ঠোঁটে নিয়ে খড়কুটো,
আজ এলো কোন অজানা বিকেল
গান দিলো গোধূলী একমুঠো। (২)
তৃনার সাথে সাথে আবির ও গাইতে শুরু করলো।
তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি ?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ,
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ ..
ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই। (২)
দীপ্তিময় বিকেল যেনো হৃদয়ে ঝংকার তুলল। সুপ্ত প্রেমের বিকিরণ ছড়িয়ে পড়লো, সদ্য প্রেমিক,প্রেমিকার হৃদয় জুড়ে।
নৌকার এসে ভিড়ে পাড়ে। তৃনা তার বিজ্ঞানী মশাইকে নিয়ে নেমে পড়ে নৌকা থেকে। হাটে বাড়ির দিকে। সন্ধ্যার নাস্তা সেরে আবির ফেরে বাসার দিকে।
_____
মাশরিফ এখন একটা পাকা পোক্ত প্রমান লাগবে বুঝলি। আচ্ছা ইমতিয়াজ আবার মিটিং কবে ডাকছে জানিস।
মাশরিফ সানওয়ারের পেছন দিক থেকে সামনে এসে দাঁড়ায়।মাশরিফ সানওয়ারকে বলে, ভাই তৃনা আপাতত মিটিং এ থাকবে না৷ যতদূর শুনেছি এক্সামের পর মিটিং এ বসবে।
সানওয়ার হাতের তালুর সাথে হাত ঘোষে, মাশরিফের দিকে চেয়ে বলে, জানিস তো কি করতে হবে। প্লান মাফিক যেনো কাজটা হয়ে যায়।
মাশরিফ সিগারেট ধরায় লাইটার দিয়ে। খালি পরিক্ষাডা হইয়া যাইতে দেন ভাই, কাম টাইম টু টাইম হইয়া যাবে।
~চলবে।