মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻 #কাজিন_রিলেটেড #পর্বঃ২০

0
59

#মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ২০
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
#স্পেশাল_পর্ব

🎶মন রাখো পাজরে সীমাহীন আদরে
চোখ রাখো গভীরে ভালোবাসা নজরে ।
যতনে রাখিবো জড়িয়ে থাকিবো সারা জনম দরে
যতনে রাখিবো জড়িয়ে থাকিবো
মনের একলা ঘরে ।🎶

-~কে গান গায়?
কেয়ার টেকার অবাক হয়ে চাইলেন, আবিরের পানে।
~আরে মিয়া নিজের বউয়ের গলাও চিনো না।
এটা তো তৃনা মামনি গাইতাছে।
তৃনার গলায় বিষন্নতার ছোয়া লেগেছে।

🎶চোখেরই জোছনা দিয়ে সরাও যত আধার
ভাসিয়ে দূরের মেঘে নিয়ে যাও ইচ্ছে তোমার ।(২)
যতনে রাখিবো জড়িয়ে থাকিবো
সারাজনম ধরে
যতনে রাখিবো জড়িয়ে থাকিবো
মনের একলা ঘরে ।🎶

~কেয়ার টেকারের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না আবির। রাতের বন্যচ্ছটা দেখতে ভয়ংকর সুন্দর। শীতের আমেজের সাথে সাথে পরিবেশটা অসম্ভব রোমাঞ্চকর লাগছে। চারপাশটা দেখলে মনে হয়,একটা ক্ষুদ্র গ্রাম। রিসোর্টের বাসা গুলো এক একটা এক এক রকম।তৃনার কক্ষের কাছাকাছি যত তারা আগাচ্ছে, তোতো তৃনার গান শোনা যাচ্ছে পরিষ্কার ভাবে।কেয়ার টেকার দেখিয়ে দিলো তৃনার বরাদ্দকৃত কাঠের ঘরটা। আবির প্রশান্তি র হাসি দিলো। বিদায় জানালো কেয়ার টেকার কে। কেয়ার টেকার চলে গেলো , আবির কাঠের ঘরটার বারান্দায় বসে তৃনার গানের সাথে নিজেও গাইতে শুরু করলো।

🎶বুকেরই ছাউনি দিয়ে রাখবো মনের ভেতর
যেও না দূরে চলে কাদিয়ে আমায় অঝর ।🎶

~পুরুষালি কন্ঠে পেয়ে তৃনা থেমে গেলো। কিন্তু থামল না আবির। গলা ছেড়ে গাইতে লাগল।

🎶যতনে রাখিবো জড়িয়ে থাকিবো
সারাজনম ধরে
যতনে রাখিবো জড়িয়ে থাকিবো
মনের একলা ঘরে । 🎶

তৃনার বুঝতে বাকি রইলোনা, এটা যে আবিরের গলা। গিটারটা পাশে রেখে মেঝে থেকে উঠল তৃনা। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দাড়ালো দরজার নিকট। দরজার ছিটকানি খুলে তাকিয়ে দেখল আবির দাঁড়িয়ে আছে। তৃনা নিশ্চুপ তার বিজ্ঞানী মশাইকে দেখে। আবির তার পুতুলকে দেখছে নির্পল দৃষ্টিতে। এমন পাষন্ড মেয়ের প্রেমে সে মত্ত। একবার চিন্তা করল না, তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের কি হাল হবে। তৃনা অবোলোকন করে দেখলো তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের হাতে বেন্ডেজ করা। তৃনার বুঝতে বাকি রইলো না,তার বিজ্ঞানী মশাই নিজেই নিজেকে কষ্ট দিয়েছে।।

আবিরের কল আসার শব্দে ধ্যান ভাঙলো দুজনের। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে রিসিভ করল আবির। কলের অপর প্রান্তে রেহানা খান জিজ্ঞেস করছে, আবির এখন কোথায় আছে?
আবির লাজুক দৃষ্টি বর্ষন করলো তার পুতুলের পানে, মায়ের কথার উপর জবাব দিলো, এইত তোমার বাস্তির সাথে হানিমুনে আছি। তোমাদের আদরের পুতুল যে আমার কষ্ট কমিয়ে দিলো। চিন্তা করো না। বন্যচ্ছটায় আছি। চলে আসবো। আমরা ঠিক আছি।

রেহানা খান নিজেকে এখন শান্ত করতে পেরেছে। কল কাটলো, রেহানা খান।

আবির এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে তার পুতুলের নিকট। তবুও তৃনা এক বিন্দুও নড়ছে না। তৃনার কাছাকাছি আসা মাত্রই তৃনা তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের বক্ষে হাত দ্বারা ঠেকিয়ে দিলো, ভ্রু কুচকিয়ে বলল, এখানে কেনো এসেছেন। আবির এবার মুচকি হাসল তৃনার হাতটা বুক থেকে খাবলে ধরে, পেচিয়ে তৃনার পৃষ্ঠদেশে চেপে ধরলো, টান দিয়ে টেনে নিলো আবিরের বক্ষদেশে, তৃনা এখনও তার বিজ্ঞানী মশাইয়ের চোখের পানে তাকিয়ে আছে ।আবির তার পুতুলের কপোলে চুমু খেয়ে বলতে লাগলো, ❝লজ্জা-শরম বিসর্জন দিতে এসেছি, আমিও চাইছি ১ডজন বাচ্চার বাবা হতে। তাই এমন সুযোগ কেউ কি হাত ছাড়া করে, তাই তো লুফে নিতে আসলাম।❞
~কার কাছ থেকে জানলেন আমি এখানে আছি?
~তোমার বাবার কাছ থেকে কৌশলে জেনে নিয়েছি। তাই তো চলে আসলাম, আমায় এই দুদিন যে হয়রানী করিয়েছ,তার সুদে আসলে মিটাতে এসেছি।
কথা শেষ করতে না করতেই আবির অধর ছুয়ে দিলো তার পুতুলের অধরে। অভিমান ভেঙে চুর চুর হয়ে গেলো তৃনার। আকড়ে ধরলো তার বিজ্ঞানী মশাইকে। কম্পন শুরু হলো তনুময় জুড়ে। এখনও তৃনা চোখ বন্ধ করে আছে। আবির মুচকি হাসলো, কানের কাছে মুখ গুজে আবির তার পুতুলকে বলল, কতই না বলেছিলে, লজ্জা-সরম আমায় বিসর্জন দিতে, এখন দেখছি তুমি নিজেই লজ্জা পেয়ে বসে আছ,
না না এমন হলে চলবে না।
তৃনা চোখ মেলে তাকালো, লজ্জা পেয়ে দূরে গিয়ে দাড়ালো, চেচিয়ে বলে উঠল, নির্লজ্জ বিজ্ঞানী মশাই।
আবির ঠোট কামড়ে মুচকি হাসি দিলো।

আবির এগিয়ে আসলো তার পুতুলের নিকট। মাথায় চুলে গোজা কাঠিটা টান দিয়ে খুলে ফেলল, প্রেয়সী পানে নিজেকে ব্যক্ত করার উম্মদনায় মেতে উঠল, আবির। দুই মানব -মানবি ছোয়ায় কেপে উঠল, দুটি দেহ। পুরুষালি ছোয়ায় তৃনা টালমাটাল। রোমাঞ্চকর এ রাত রুপ নিলো মধুচন্দ্রিমায়।
___
সিগারেটের ধোয়া উঠছে, ১১টা শেষ করে ১২ নম্বার সিগারেটে আগুন জ্বালালো সানোয়ার। গলায় ঝুলে থাকা হাতখানা কে বার বার দেখছে। টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মদের মিনি গ্লাস। কিছুসময় বাদেই মোবাইলে কল বেজে উঠল, তড়িৎ মোবাইলটাকে খাবলে ধরে রিসিভ করলো সানওয়ার। গম্ভির স্বর সানওয়ারের।
~বল জিসান।
~বস তৃনার বিয়ে হইয়া গেছে।এখন আর এখানে থাকে না, শুনছি কাল বিকালে পদত্যাগের জন্য মিটিং ডেকেছে।
বস তাইলে কি কাইল ই ওরে বুলেট দিয়া উড়াইয়া দিমু।
~জিসান শেষ খেলাটা আমিই খেলতে চাই। বিকালে রেডি থাকিস।
কল কেটে দিল সানওয়ার। হাসির শব্দে কেপে উঠল কক্ষ। একটা প্রবাদ আছে জানিস তো মাশরিফ ❝অতি বাড় বেড় না ঝরে পরে যাবে ❞এবার তৃনার ও ঝরে পরার সময় হয়েছে।
মাশরিফ হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তাহলে কি হয়ে চলেছে তৃনার সাথে।
___
জানালার ফাকা অংশ থেকে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়েছে কক্ষ। নিস্তব্ধতা বিরাজমান। আবিরের বুকে আকিবুকি করছে তৃনা। তড়িৎ তৃনার উঠে বসে পড়ার কারন বুঝতে পারলো না আবির, সেও তার পুতুলের সাথে সাথে উঠে বসল।তৃনা নিজের ব্যাগটার মধ্যে থেকে মিনি ফাস্ট এইড বক্সটা বের করে আবিরের কাছে এসে বসল, হাতটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে ধীরে ধীরে বেন্ডেজের বাধন খুলতে লাগলো। ভায়ডিন দ্বারা পরিষ্কার করলো ক্ষতস্থান। তারপর আবারও বেন্ডেজ করে দিলো।
এর মাঝেই কেয়ার টেকার এসে জানান দিয়ে গেলো, রাতের খাবার এসে গেছে, যেনো ডিনার করে আসা হয়।
ডিনার শেষে আবিরের বুকে মাথা গুজে শান্তির ঘুম দিলো তৃনা।
____

দিদার সব দিকে খেয়াল রাখবে। আমি তোমার ভাইকে নিয়ে মিটিং এ যাবো। তুমি আমায় যত খবর দিয়েছ, আমার মনে হয় না, সানওয়ার বসে থাকবে, লোক রেডি রাখো।অ্যাটাক হওয়ার সাথে সাথে সব গুলোকে গোডাউনে বেধে রাখবে, তারপর যা করার আমি করবো। সিসি ক্যামেরা গুলো মোবাইলে কানেক্ট করে নেও। একটা যায়গা থেকেও যেনো আমি কোনো ভুল না ধরতে পারি।
তৃনার কথায় ঘামতে শুরু করেছে দিদার ইতোমধ্যে, তার মেডাম কোন ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠল, সে এখনও বুঝতে পারছে না, ফের তৃনার কথার সাথে তাল মিলিয়ে উত্তর দিলো, সব রেডি থাকবে ম্যাম৷।
____
আসসালামু ওয়ালাইকুম ।
আমি সবার কাছ দোয়াপ্রার্থী।
এতোদিন আপনাদের সাথে কাজ করে এসেছি, বয়সে ছোট ছিলাম, যদি কখনও আপনাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকি ক্ষমা করবেন। পারিবারিক কারনে আর এগতে পারবো না৷ তাই এই পদ ত্যাগ করছি। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে একটাই আবদার রেখে যেতে চাই। যারাই এই কমরেড পদে আসবে, তারা নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের স্বার্থে,দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাবে। মানুষের মনের মাঝে ঢোকার চেষ্টা করবে। তাতেই পরম শান্তি ভোগ করতে পারবে। আমি মানুষ ছোট, তাই আমার বক্তব্য আমি ছোট করছি, সবাই আমায় মাফ করবেন, এই বলেই আমার পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম। আল্লাহ হাফেজ।
তৃনার বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হলো মিটিং। ইমতিয়াজ ভাইকে বিদায় জানালো তৃনা আবির।
হঠাৎ গুলির আঘাতে ঢোলে পড়লো আবির। আকস্মিক ঘটনায় তৃনা বাক হারা হয়ে গেলো।
অত:পর~
~চলবে

(সুন্দর সুন্দর মন্তব্য আশা করছি। আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here