মেইড_ফর_ইচ_আদার🌻
#কাজিন_রিলেটেড
#পর্বঃ২৭
#অনামিকা_রহমান (লিখনিতে)
,❝বাসন্তী সাজে আমার বাসন্তী প্রেয়সী, অপরুপ লাগছে তোমায় ওগো প্রেয়সী।হৃদয়ের গহিনে তোমায় আকি সারাবেলা।এই মাতাল প্রেমিককে তুমি কেনো কর দিশেহারা।❞
মেসেজটা দেখা মাত্রই তুলি চারপাশ অবলোকন করলো, চোখের সামনে দেখতে পেলো কাক্ষিত মানুষটাকে।
একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে মেসেজ রিপ্লাই দিলো, আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। মেসেজ সিন করা মাত্রই তুলি চাইলো সানির পানে।
মেসেজটা পড়ে সানি একটা হাসি দিল।মাথায় চুল চুলকিয়ে, ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
এর মধ্যেই আবির এসে হাজির সানির কাছে।
সানি মোবাইলটা পকেটে রাখলো। জিজ্ঞাসা করলো,দুলাভাই কিছু লাগবে?
আবিরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে উত্তরা থেকে মাত্রই এসেছে। শান্ত গলায় আবির জবাব দিলো তৃনাকে দেখেছ?
সানি ইশারায় দেখিয়ে দিলো তৃনাকে।
মেয়েরা সকলে স্টেজের কাছে।
আবির হাসলো, সানির পিঠে চাটি মেরে বলল,তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
চল কিছুক্ষন পড়েই অনুষ্ঠান শুরু হবে।
একে একে সকলে হলুদ ছুয়ে দিচ্ছে আন্নি আর রোদেলাকে। পাড়া-পড়শীরা হৈ হুল্লোড় করছে। মিউজিক বক্সে একের পর এক গান বেজেই চলেছে।
এই তো কিছুক্ষন আগেই বন্ধুমহলের সকলে নাচলো। আবির আর তৃনাও সকলকে একটা নাচ উপহার দিলো। কেউ কেউ তো এদের বন্ডিং দেখে বলছে, এরা মেইড ফর ইচ আদার।
একটা উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বসন্ত কুঠিরে আজ সত্যি বসন্ত বইছে।
তৃনা মাইক্রফোনটা হাতে নিলো, হাসি মাখা কন্ঠে এনাউন্সমেন্ট করল,এখন আমাদের মাঝে গান গাইতে আসবে,আমাদের বাংলার ওমর সানি।
সানি ইশারায় পাউঞ্চের ইঙ্গিত দিলো। মোবাইলটা বের করে মেসেজ টাইপ করলো তুলি কে, তোমায় ডেডিকেট করে গাইবো আজ গানটা।
তুলি মেসেজটা দেখে হাসি মুখে চাইলো সানির পানে।
সানি অনলাইন থেকে মিলন হবে কত দিনে গানের কারাওকেটা প্লে করলো। হাতে মাইক্রফোনটা নিয়ে গাইতে শুরু করলো,
🎶মিলন হবে কত দিনে
ও মিলন হবে কত দিনে
আমার মনের মানুষের সনে।[২]🎶
(সানি তুলির পানে চাইলো। তার হৃদয়ের কথা আজ ব্যক্ত করছে। তুলিও চেয়ে আছে তার প্রেমিকের নেশামাখা চোখে)
🎶চাতক প্রায় অহর্নিশি
চেয়ে আছে কালো শশী।
হব বলে চরণদাসী
তা হয় না কপাল গুণে।[২]🎶
(গুরুজনেরা গানটা খুব অনুভূতি নিয়ে শুনছে। এই গান যে প্রত্যেক মানুষের মনে প্রানে মিশে আছে।)
🎶মেঘের বিদ্যুৎ মেঘে যেমন
লুকালে না পায় অন্বেষণ।
কালারে হারায়ে তেমন
ঐ রূপ হেরি এ দর্পণে।।
ঐ রূপ যখন স্মরণ হয়
থাকে না লোকলজ্জার ভয়।
লালন ফকির ভেবে বলে সদাই
ও প্রেম যে করে সেই জানে।।🎶
গান শেষ হওয়া মাত্রই, মাইক্রফোনে, সানি তৃনাকে উদ্দেশ্যে বলল, লাস্ট ওয়ারনিং তিনু, আমায় ছেকাখোড়,ওমর সানি বলবি না।
সানি মাইক্রোফোন টা রাখলো, সবাই সানির এমন কথা শুনে খিল খিল করে হেসে উঠল।
খাওয়ার পর্ব শেষ করে শেষ হলো হলুদের পর্ব।
____
বাড়িতে মেহমানে ভড়পুর।
বহু ধুমধামে বিয়ে হচ্ছে তনয় আহমেদের ২মেয়ের। কিছুক্ষন আগেই বিয়ে হয়েছে।
এই কিছুক্ষন আগেও আনন্দ উৎসবে ভরপুর ছিল বসন্ত কুঠির , ইতোমধ্যে আষাঢ়ের বৃষ্টি নেমেছে বসন্ত কুঠিরে। অঝোর ধারায় বইছে চোখের জল।মেহরিমা কেদেই চলেছে। তার মেয়েরা বাসা থেকে চলে গেলে বাসা টা যে খা খা করবে। মেয়েদের জীবন বোধহয় এমনই হয়।
বিদায়ের পর্ব চলছে। তনয় আহমেদ চোখ মুছলেন। রাইদ ও রিয়াদকে মেয়েদের হাতে তুলে দিয়ে বলে উঠল, আমার, আমার টেপি পুতুলদের দিকে খেয়াল রেখো তোমরা।
রাইদ ও রিয়াদের মন ভার হলো, রাইদ বলে উঠল, বাবা।
একদম চিন্তা করবেন না। সে আমার অর্ধাঙ্গিনী। তার ভালো জুড়েই আমার সবটা ভালো হবে। তাই আমি তাকে সব সময় ভালো রাখার চেষ্টা করবো। রাইদের কথা শেষ হতে না হতেই রিয়াদ বলল,যে আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে তাকে কষ্ট দিয়ে তো আমি কখনও সুখি হতে পারবো না। তাই আপনি একদম চিন্তা করবেন না , আপনার মেয়েকে আমি পুতুলের মতোই সাজিয়ে রাখবো।
তনয় আহমেদ মেয়েদের বিদায় দিলেন। সন্ধ্যার সাথে সাথে বসন্ত কুঠির যেনো নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
একে একে সকলে বিদায় নিয়েছে। আহমেদ ভিলার সদস্যরা বের হলো বাসার উদ্দেশ্যে। সারাদিনের ব্যস্ততায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে, সকলের অবয়বে।
তাই আবিরেরা, আজ বাসায় না গিয়ে আহমেদ ভিলার থেকে যাবে।
_____
পালকি করে না নিয়ে গেলে যাবো না শশুরবাড়ি। এইটাই শেষ কথা।
আবির ভ্রু কুচকালো, সে এখন এই পালকি কোথা থেকে পাবে। তার পুতুলের মাথায় যত উদ্ভট বায়না কোথা থেকে যে উদয় হয়, আবির কিছুই বুঝতে পারে না।
এর মাঝেই রেহানা আর আতিক রুমের দরজায় টোকা দিলো। তারা বেশ বুঝতে পারছে, আবির আর তৃনার কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
দরজার কড়া নড়ার শব্দে, ধুপধাপ পা ফেলে দরজাটা খুলে দিলো তৃনা। আতিক খান তৃনার এমন মুখ ফুলিয়ে থাকার কারন জানতে চাইলো, তৃনার গাল টানা দিয়ে।
তৃনা আহ্লাদী হলো, আতিক খানকে বলে উঠল, ফুফা আব্বু, আমি বউ সেজে পালকি করে শশুর বাড়ি যেতে চাই। আমার ছোট বেলা থেকে শখ। রেহানা খান তৃনার কথা শুনে হাসলো, বুকে জড়িয়ে বলল, আচ্ছা আমরা এখান থেকে উত্তরা অবধি গাড়িতে যাবো তারপর আমাদের বাসার গলি থেকে তোমায় পালকিতে উঠিয়ে দিবো। আবির তোমার পাশে পাশে হাটবে কেমন।
তৃনা হাসলো আর বলল, তোমরা সেটা ভিডিও করবে। আমি সেই ভিডিও আমার নাতি-নাতনীদের দেখিয়ে বলবো,দেখেছিস তোর দাদা আমায় পালকি করে নিয়ে এসেছে। কত মজা হবে বল ফুফু আম্মু।
আবির হাসবে না কাদবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আতিক খান ছেলের এমন অবস্থা দেখে হেসে উঠল।
রেহানা খান আবিরকে জানান দিলো কাল সকালে তারা যাবে। হাতে সময় খুব কম। অনেক কেনাকাটা করতে হবে। আবির সব শেষে বলে উঠল, তা যে বললে, পালকি করে নিবে। এই পালকি কোথা থেকে আসবে শুনি।
আতিক খান বলল, আমি ম্যানেজ করবো।
কথা শেষে রেহানা, আতিক দুজনেই কক্ষ ত্যাগ করলো।
____
বিজ্ঞানী মশাই আপনার এই বুকে মাথা রাখলে নিজেকে খুব নিশ্চিন্ত লাগে। আপনার চোখে তাকিয়ে আমি আপনার মনের ভাষা বুঝতে পারি। আপনার ছোয়া পেলে মনে রঙ লাগে। ভালোবাসার পরশে জুড়িয়ে যায় দেহ মন। আপনি আমাকে কেমন করে গ্রহণ করেছেন, তা আমার জানা নেই। ভালোবাসা সবসময় পারফেক্ট হয় না। সে যেমন হোক, তুমি যদি তাকে ভালোবাসতে পারো, সেখানেই ভালোবাসার আসল স্বার্থকতা।
আবির তার পুতুলকে জড়িয়ে ধরে আরও কাছে টানলো, অবয়বে কয়েকখানা চুমু দিয়ে
অধর ছুয়ে দিলো।
লজ্জায় জড়জড়িত তার পুতুলকে আরও বেসামাল করে তুলল আবির। পুতুলের সান্নিধ্যে পেয়ে ভার ছেড়ে দিলো আবির। মধুময় রাত রুপ নিলো এক নতুন মধুচন্দ্রিমায়।
___
৫দিন পর।
আহমেদ ভিলা যেনো মেহমানের মজলিস বসেছে। কাজিন মহলের সকলে উপস্থিত।
বিয়ের তড়জড় চলছে আহমেদ ভিলায়। ঝারবাতির লাগানো হচ্ছে পুরো বাড়ি জুড়ে। মেহদী ও গায়ে হলুদ হবে ছাদে। তাই ছাদের সকল কিছু সাজানো হচ্ছে। আন্নি ও রোদেলাও উপস্থিত। মেহের, সেহতাজ, সানি এর মধ্যে চলে এসেছে। সেহতাজ, মেহের মিলে তৃনার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। রোদেলা আর আন্নি তার পাশে বসে জোট মিলে আড্ডা দিচ্ছে। সানি ডেকোরেশনের লোকদের কাজের তদারকি করছে। মনে হচ্ছে যেনো বাড়ির ছেলে। সফিউল আহমেদের বড্ড পছন্দের এই ছেলেটি।
সন্ধ্যা নাগাত তৃনার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে। সব ইতোমধ্যে রেডি হয়ে গেছে। সফিউল আহমেদ এক জলক দেখে গেলো তার মেয়েকে। এই পুতুল যে তার বড্ড আদরের ছিলো। সেও এখন তাকে ছেড়ে চলে যাবে। আল্লাহ তাকে ৩টা জান্নাত দিয়েছে। সেই জান্নাত এখন এক এক করে শশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে।
কিভাবে থাকবে সে, এই বিশাল বাড়িতে,সেই চিন্তা করেই সফিউল আহমেদের চোখে পানি চলে আসলো।
~চলবে৷
(আজকের পর্ব কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।সুন্দর মন্তব্য আশা করছি)