ডাহুক নদীর তীরে (পর্ব-৫) হালিমা রহমান।

0
33

ডাহুক নদীর তীরে (পর্ব-৫)
হালিমা রহমান।

একগাদা জিনিসপত্র নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়ে গেল তথা।কাঁচা হলুদ,অ্যালোভেরা জেল,ব্যাগ, মধু,ডালপুরি,ঝালমুড়ি —জিনিসপত্র কম নয়।তার উপর পা’ টা ব্যাথা।গোড়ালিতে ভালোই ব্যথা পেয়েছে তথা, কিন্তু মাহাদীকে বলেনি।ছোট মানুষ অকারণেই ব্যস্ত হয়ে পড়বে।তথা পা টেনে টেনে আস্তে আস্তে হাঁটছে।কেনাকাটা করতে মাত্র বিশ মিনিট সময় লেগেছে।মাহাদী এখনো ভোজনে ব্যস্ত।ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না।বিসমিল্লাহ হোটেল খুব বেশি দূরে নয়।এই গলিটা পেরোলেই স্বনামধন্য হোটেলটা চোখে পড়ে।এই হোটেলের বিরিয়ানির ভক্ত অনেকেই।হোটেলের সামনে যাওয়া যায় না। খাবারের গন্ধে উড়ে যেতে ইচ্ছে করে।
—” তথা,তথা…”
পিছনে কারো কন্ঠের আভাস পেয়ে থমকে দাঁড়ায় তথা।গলার স্বর অপরিচিত নয়।একটু আগেই এই কন্ঠের মানুষটাকে দেখেছে সে।এখন আবার কি?একটু আগেই না প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল?
বেশ খানিকটা অবাক হয়েই পিছু ফিরে তথা।ইরফানকে চোখে পড়ে।তার চাইতে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে।ইরফানের দিকে দু-পা এগিয়ে যায় তথা।ইতস্তত গলায় প্রশ্ন করেঃ ” আপনি কি আমায় ডেকেছেন, ভাইয়া?”
ভাইয়া ডাক শুনে মুহূর্তেই মেজাজ খারাপ হয় ইরফানের।মাথার তালু পর্যন্ত রাগে ঝিমঝিম করে উঠে।কোন কালের ভাইয়া সে?ছেলেটা আবার অল্প সময়ের মধ্যেই রাগ গিলে ফেলতে পারে।রাগটুকু হজম করে নেয় ইরফান।অনেক সাহস করে কথা বলতে এসেছে আজ।হাঁটু মৃদুভাবে কাঁপছে।গলা শুকিয়ে আসছে।নিজের মনেই নিজেকে ধিক্কার জানায় ইরফান?এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?তথা বাঘ নাকি ভাল্লুক?ইরফানকে খেয়ে ফেলবে নাকি? খেয়ে ফেললে খেয়ে ফেলুক।প্রেয়সীর হাতে মৃত্যুবরণ করাও ভাগ্যের বিষয়।
—” আপনি কিছু বলবেন, ভাইয়া?”
ঘন ঘন উপর-নিচে মাথা দোলায় ইরফান।
—” কি বলবেন?”
—” তুমি ভালো আছো?”
—” জ্বি”— তথা অবাক না হয়ে পারে না।মাঝ রাস্তায় ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করার জন্য দাঁড় করিয়েছে!
—” তুমি নাকি পঞ্চগড় যাবে?”
—” জ্বি।এই মাসের শেষেই যাব।”
—” বিষয়টা কি ঠিক হচ্ছে,তথা?না মানে এই পেশাটাকে তো সবাই ভালো চোখে দেখে না,তাই বলছিলাম আরকি। ”
—” সবাই কি চোখে দেখে সেটা দেখে তো আমার লাভ নেই, ভাইয়া।আমার চোখে এটা অনেককিছু।আমি নিশ্চয়ই আমার পছন্দ অপছন্দ রেখে আরেক জনের রুচির দিকে নজর দেব না”
—” হ্যাঁ, তোমার কথাও ঠিক।তবে, এতোদূর যাওয়া কি ঠিক? যাদের সাথে যাচ্ছ তারা কি বিশ্বাসযোগ্য? ”
—” শতদল মাল্টিমিডিয়া, নামটা শুনেছেন? খুব পরিচিত না,তবে দু- একটা নাটক বেরিয়েছে।ডিরেক্টরকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ দেখিনি।শুধু আমি না, বিশাল একটা টিম যাচ্ছে পঞ্চগড়ে।”
—” কি জানি,নাম শুনিনি।সব বাদ দেও।তোমার অকাট্য যুক্তি-তর্ক সব।একটা কথা বলব,তথা?”—
ইরফানের গলায় খুব অনুনয়ের সুর।
—” কি বলবেন,ইরফান ভাই?”
—” এতোদূরে যেয়ো না, প্লিজ।পঞ্চগড় এখানের রাস্তা না।ঢাকা থেকে অনেক দূর।তাছাড়া, একটা মাস কম সময় না।প্লিজ,না যাও।এখানেই কাজের অফার আসলে করো।”
—” আপনি এগুলো কার কাছে শুনেছেন?মাহাদীর কাছে?”
—” হুম।”
—” আমি এতোদূরে গেলে আপনার কি?আমি কি আপনার কাছের কেউ?”
—” ভালোবাসি,তথা।অনেক বছর আগ থেকে অনেকটা ভালোবাসি।”
তথার মুখে কোনো বিস্ময় বা অস্বাভাবিক অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় না।সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।যেন এই উত্তরের অপেক্ষাতেই ছিল।ইরফানের কথা তো সে আগেই জানতো।এসব প্রণয় বাক্যে আজকাল উত্তেজিত হয় না তথা।এগুলো তার জন্য ডাল-ভাত।সৃষ্টিকর্তা অসামান্য রূপ দিয়েছেন।মানুষ তো মুগ্ধ হবেই।
—” কিছু বলবে না,তথা?”
—” ইরফান ভাই, আমি সেই ক্লাস ফাইভ থেকে প্রপোজাল পাই।কাজিন,প্রতিবেশী ,ক্লাসমেট,শিক্ষক—কেউ বাদ যায়নি।এতো জনের চোখে পড়ার কারণ কি বলতে পারেন? কারণ হলো এই সৌন্দর্য । আমার সৌন্দর্য না থাকলে এতো মানুষ মুগ্ধ হতো কি না সন্দেহ।এখন এতো মানুষের মাঝে আমি কাকে বিশ্বাস করব বলুন তো?আপনি যেভাবে অনুভূতির কথা বললেন,এভাবে এর আগেও আমাকে অনেকেই বলেছে।আমি এখন আর এসবে উত্তেজিত হই না।ভালোও লাগে না এসব।কত আর শুনতে ইচ্ছে করে বলুন?আপনার অনুভূতিও আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।সবার মতো আপনিও রূপ দেখেই মুগ্ধ।তাই আপনার কথার বিপরীতে ইতিবাচক উত্তর নেই আমার কাছে।”
ইরফান হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে।তার চোখ দুটোতে দেখা যায় তীব্র অবসাদ।মেয়েটা ভীষণ কাঠখোট্টা। মুখের উপর কি সুন্দর প্রত্যাখ্যান করে দিল! সে শুধু সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছে —কথাটা ইরফানের নিজের কাছেই খুব বিশ্রি শোনায়। তবে,এটা ঠিক তথার সৌন্দর্যের কারণেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল ইরফান।তারপর আস্তে আস্তে মেয়েটার সম্পর্কে খবর নিলো,মেয়েটার আচরণ দেখলো,চরিত্র দেখলো,তারপর প্রেমে পড়লো।অনেকগুলো পর্যায়।অথচ,তথা মুখের উপর বলে দিল সবাই তার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে।সে কি জানে, ইরফানের ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য নয়?দেশে তো আরো সুন্দরী মেয়ে আছে।এমনকি ইরফানের ক্লাসমেট আছে কতগুলো।একটার চেয়ে একটা সুন্দরী।কই কেউ তো কখনো নজর কাড়তে পারেনি।একটা কিশোরী ফুলে আটকে গিয়েছিল ইরফান।মুগ্ধ হয়েছিল,হাঁটু ভেঙে প্রেমে পড়েছিল।ফুলটা এখন পরিনত।অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, তবুও মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইরফান।তথাতেই পড়ে আছে। ইরফান শুধু তথার সৌন্দর্য নয়,গোটা তথাকেই ভালোবাসে।তথা কেবল সাময়িক উত্তেজনা বা মোহ নয়,তথা একগুচ্ছ শীতল অনুভূতির নাম।ইরফানের কল্পরাজ্যের সবটুকু তথার নামেই লেখা।সেখানে একচ্ছত্র আধিপত্য কেবল এই হৃদয়হীনা মানবীর।
—” আপনি আর কিছু বলবেন, ভাইয়া?”
—” তুমি ইচ্ছে করে কথায় কথায় ভাইয়া ডাকছো, তাই না?”
—” জ্বি।বর্তমান ছেলেদের দুর্বল দিক হলো এই ভাইয়া ডাক।এই অস্ত্রে তাদেরকে সহজেই কাবু করা যায়।ভাইয়া ডাক শুনলে মেয়েদের প্রতি তাদের বোন বোন অনুভূতি আসে।”
—” কয়টা ছেলেকে বিশ্লেষণ করেছো? প্রথমে তোমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আমারো রাগ হয়েছিল।কিন্তু এখন আর হচ্ছে না।ধার করা ভাই থেকে জামাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বুঝেছ?তাই তুমি যতই ভাইয়া ডাকো না কেন,আমার দৃষ্টিভঙ্গি এই জীবনে আর বদলাবে না।”
নাক-মুখ কুঁচকে ফেলে তথা।এই ছেলে তো ভালোই ত্যাদড়।কি থেকে কি বানিয়ে ফেললো! তথা হোটেলের পথে পা বাড়ায়।দু-পা এগিয়ে যেয়েও কিছু একটা ভেবে আবারো পিছু ফিরে তথা।ইরফান একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।হাতদুটো বুকের উপর ভাঁজ করা।তথা বেশ খানিকটা দূরেই দাঁড়ায়।বেশ শক্ত গলায় বলেঃ” শুনুন,আপনার বাড়াবাড়িগুলো আমার সহ্য হয় না।আমি রাস্তায় বেরোলেই আপনার ছেলেপেলে আমাকে ভাবি বলে ডাকে।বাড়ির নিচের দোকানগুলো থেকে কিছু কিনার পর দোকানদাররা টাকা নেয় না।বাড়ির সামনে রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে।এসব যে আপনার কাজ তা আমি খুব ভালো করেই জানি।প্লিজ, এসব বন্ধ করুন। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।আমাকে নিয়ে আপনার এসব বাড়াবাড়ি খুব বিরক্ত করে আমায়।আপনি আমাকে ভালোবাসেন,ভালো কথা।আপনার অনুভূতিগুলো ঢাক- ঢোল পিটিয়ে সবার কাছে জাহির করার দরকার কি? আমি এসবে বিন্দুমাত্র আকৃষ্ট হই না।একতরফা অনুভূতিগুলো গোপনেই সুন্দর।আপনি বোধহয় বুঝতে পারছেন,আমি কি বলছি।আশা করি আমার কথায় গুরুত্ব দিবেন।”
তথা আর পিছু ফিরে তাকায় না।পা টেনে টেনে হোটেলের কাছে যায়। এতোক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকা উচিত হয়নি।পা’টা ব্যাথা করছে খুব।বাসায় যেয়ে ভালোভাবে তেল মালিশ করতে হবে।নাহয়,ভুগতে হবে খুব।
মাহাদীর খাওয়া শেষ হয়েছে একটু আগে।হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে বোনের জন্য অপেক্ষা করছে সে।মাহাদী তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।এলাকার এমন কোনো মানুষ নেই যে এই হোটেলের বিরিয়ানী খায়নি।কিভাবে যেন খাবার বানায় এরা। মুখে দিলেই মন ভালো হয়ে যায়।
—” মাহাদী,ধর। বিল দিয়ে আয়।”—মাহাদীর দিকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দেয় তথা।
—” এতোক্ষণ সময় লাগলো তোমার! আমার খাওয়া শেষ, বিল দেওয়াও শেষ।”
—” কিভাবে দিলি?”
—” ইরফান ভাই দিয়ে দিয়েছে।”
প্রচন্ড বিরক্ত হয় তথা।এরকম শুরু করেছে কেন সে?তথা গলায় বিরক্তি ফুটিয়ে বলেঃ” তুই নিষেধ করলি না কেন?উনি দিতে চাইলো আর তুইও দিতে দিলি! তুই কি পাগল মাহাদী?”
—” আমি বারবার নিষেধ করেছি কিন্তু শুনলোই না।আমি কি আর তার সাথে মারামারি করব?”
চোখ বন্ধ করে বিরক্তি আর রাগটুকু গিলে নেয় তথা।বাড়ি যেতে হবে।রাত বাড়ছে।
—” মাহাদী,রিকশা ডাক…
আদেশ করতে দেরি তথার সামনে রিকশা হাজির হতে দেরি নেই।রিকশাওয়ালা ছেলেটা বিনয়ের হাসি হাসে।মুখে হাসি ধরে বলেঃ” আপা,উঠেন।সুবর্ণ মঞ্জিলে যাইবেন না?আমিও ওইদিকে যামু।উঠেন।”
তথা অবাক হলো না।রিকশাওয়ালাকে ঠিকানা বলে কে পাঠিয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে।লোকটা পুরো আঠার মতো লেগে আছে। আর কোনো রিকশা চোখে পড়লো না তথার।অগত্যা এটাতেই বসতে হলো। মিনিট কয়েক পরে, তথার ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয়।কারো কাছ থেকে হয়তো মেসেজ এসেছে।ফোনটা হাতেই ছিল তার।তাই ক্ষুদে বার্তা দেখতে সময় লাগে না।মোবাইলের লক খুলতেই চোখে সামনে ভেসে উঠে প্রচন্ড অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত এক বার্তা।তথা হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে।
” অনেক লেকচার দিয়েছ আজ।কথার ছলে উপদেশ দিয়েছ,তাচ্ছিল্য করেছ সেগুলোও কানে এসেছে।তবে তোমার কথাগুলো মাথায় ঢুকেনি, মনেও রাখিনি।তুমি বোধহয় ভুলে গেছ আমার পরিচয়। আমি এক লৌহমানবীর অনুগত,ব্যক্তিগত প্রেমিক পুরুষ।প্রেমিকরা প্রেমের কথা ছাড়া অন্যকিছুতে কান দেয় না।তাদেরকে বুঝানো আর বালু মাটিতে পানি ঢালা একই কথা।দুটোতেই কোনো ফল পাওয়া যায় না।আমার আচরণ তোমার কাছে বাড়াবাড়ি তবে আমার কাছে তা কর্তব্য।তোমার আগে -পিছে আমি থাকবই।হাজার নিষেধ করলেও থাকব।যেখানেই যাও না কেন,তোমার পিছু আমি নেবই।”
খানিক রাস্তা অতিক্রম করার পরেই ইরফানকে চোখে পড়ে।বাইকের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখদুটো তথার উপরে নিবদ্ধ।ঘর্মাক্ত শ্যামবর্ণ মুখের উপর দীর্ঘ বিষাদের ছাপ।ইরফানের মুখটা কালো হয়ে আছে।সেখানে ঘোর অমাবস্যা চলছে যেন।একটা সুন্দর মুখ-মন্ডলের উপর খানিকটা কালি লেপে দেওয়া হয়েছে যেন।আর পর্যবেক্ষণ করতে পারে না তথা।ইরফানকে ছাড়িয়ে রিকশা চলে যায় সামনে।তথাও মনোযোগ সরিয়ে নেয়। ভাবলেশহীনভাবে চেয়ে থাকে অন্ধকার রাতের পথে।
***
—” তথা মা,ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবা। বেশি কাজের চাপ নিবা না।শরীরের যত্ন নিবা। কাজ কঠিন মনে হইলে করার দরকার নাই।চইলা আসবা বাসায়।মন খারাপ লাগলে বাসায় ফোন কইরা কথা কইবা।ঠিক আছে?”
তথা মাথা দুলায়।ইকবাল মিয়া পরম যত্নে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।ভাইয়ের অংশকে সবসময় নিজের অংশই ভেবেছেন।কাছ ছাড়া করেননি কখনোই।এই প্রথম।ইকবাল মিয়ার চোখের কোনে পানি জমে।কে বলেছে তথা তার মেয়ে না?তথা তারই মেয়ে।জন্ম দিলেই খালি বাবা-মা হওয়া যায়?রক্তের সম্পর্কের বাইরেও একটা সম্পর্ক থাকে। একে আত্মার সম্পর্ক বলে।এর জোর অনেক।
—” কাকা,আমি ঠিকমতোই থাকব।তোমরাও ভালো থেকো।কাকিকে কান্নাকাটি করতে নিষেধ করবে।আমি সময় পেলেই ফোন করব।মাহাদী-রুবি ওদেরকে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে বলবে।আলমারির এককোনে একটা ব্যাগ আছে।ওখানে ওদের হাতখরচের টাকা রাখা আছে।আর…. ”
ইকবাল মিয়ার ফোনে কল আসায় কথা থামিয়ে দেয় তথা।ইকবাল মিয়া ইশারা করে পাঁচ মিনিটের সময় চায় তথার কাছে। কলটা গুরুত্বপূর্ণ। নাহয় তিনি এখন ফোন ধরতেন না।ইকবাল মিয়া খানিকটা দূরে সরে যান কথা বলার জন্য।তথা চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে।দেখতে দেখতে মাস শেষ হয়ে গেছে।আজকেই পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে তারা।তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বাসটা।এতে চেপেই তারা পঞ্চগড় যাবে।মোট পঁচিশ জনের একটা টিম যাচ্ছে পঞ্চগড়। বিশ মিনিট পরে বাস ছাড়বে।তথা আগেই চলে এসেছে।অন্যান্যদের মধ্যে দু-একটা মেয়ে এসেছে শুধু।ওদেরকে চিনে না তথা।তারা বাসে বসে আছে।হঠাৎ করেই তথার সামনে একটা বাইক থামে।ধুলো উড়িয়ে বাইকের চাকা থামতেই দু-পা পিছিয়ে যায় তথা।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায় তথা।বাইকের উপর ইরফানকে দেখে বেশ খানিকটা বিরক্ত হয় সে।কপাল কুঁচকে বিরবির করে বলে—” ছোট্ট খাটো জানোয়ার একটা।”
—” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে,তথা।মাখন রঙের জামায় একদম মাখনের মতো দেখাচ্ছে।”
না চাইতেও জোর করে ভদ্রতার হাসি হাসে তথা।দিনদিন ইরফানের সাহস বাড়ছে।আগে তো কথা বলতো না।এখন বলে।মাঝে মাঝে ফোনে মেসেজও পাঠায়।
—” তুমি একাই এসেছো?”
—” জ্বি,না।কাকা এসেছে সাথে।”
—” কোথায় যেন যাবে তোমরা?”
—” ডাহুক নদীর তীরে একটা জমিদার বাড়ি আছে,সেখানে।”
—” ভালো থেকো,তথা।আবার কতদিন পর দেখা হবে আল্লাহ মালুম।”
—” আপনিও ভালো থাকবেন।”
ইরফান হাসে।তার হাসি ফেটেও যেন দুঃখ ঝরে।বাইক থেকে নেমে তথার দিকে দু-পা এগিয়ে যায় সে।ফিসফিসিয়ে বলেঃ”ভয়াবহ দুঃসাহস দেখাতে ইচ্ছে করছে।আমাদের মাঝে বৈধতা থাকলে এই মুহূর্তে তোমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতাম।কিন্তু যেখানে বৈধতা নেই,সেখানে এসব কল্পনা করাও পাপ।তাই নিজেকে সামলে নিচ্ছি।।আমার স্বস্তিটুকু নিয়ে এক আকাশ দুশ্চিন্তা দিয়ে যাচ্ছ।আবার নিজেই বলছো, আমি যেন ভালো থাকি!আমার ভালো থাকার দিন ফুরিয়ে গেছে।তুমি কি বুঝতে পারছো, তথা?”
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here