#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-৬
“কবুল বলো সোনা! তিন সেকেন্ডের মধ্যে শুনতে পাই যেন”
এমন একটি দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায় স্পৃহার। সারা শরীর থেকে ঘেমে পানি পড়ছে। গলা শুকিয়ে যেন কাঠ। স্পৃহা উঠে এক নিঃশ্বাসে সম্পূর্ণ এক গ্লাস পানি শেষ করল।
আজ থেকে দুই বছর আগে সুন্দর এভাবেই স্পৃহাকে বিয়ে করেছিল সবাইকে সাক্ষী রেখে! কাল রাতে সুন্দর চলে যাওয়ার পরে স্পৃহার দুই বছর আগের কথাগুলো মনে পড়ে। জীবন চোখের পলকে বদলে যায় তাই না ? স্পৃহা আর কিছু ভাবতে না চেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । কিন্তু এই ভোরবেলা যে তাকে এমন একটি স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠতে হবে তা ভাবেনি।
.
.
.
সেদিন স্পৃহা স্কুল থেকে বাসায় ফিরে দেখে বাড়িতে বিরাট আয়োজন করা হয়েছে । উদ্দেশ্য তাকে দেখতে আসা । স্পৃহা রীতিমতো অবাক হয়ে যায়। সে অবাকের চরম সীমানায় চলে যায় যখন দেখে পাত্র হিসেবে আর কেউ নয় বরং রয়েছে সানজিল চৌধুরী সুন্দর ! একে তো বয়স এত কম তার উপরে এমন ছেলে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে চেচিয়ে বলে ওঠে ,
-এ বিয়ে আমি করবো না । আমার অনুমতি ছাড়া তোমরা বাড়িতে এসব লোকদের ঢুকতে দিলে কি করে। এ লোক একটা স্টাকার, অসভ্য ,ইভটিজার! এরকম একজন ক্লাসলেস লোককে আমি কখনোই বিয়ে করব না । যে লোক এমন ক্লাসলেস তার ফ্যামিলি ও নিশ্চয়ই…
স্পৃহার মুখ থেকে আর কোন শব্দ বের হওয়ার আগেই তার গালে সজরে থাপ্পড় দিলেন তার বাবা মি. আদনান ফয়সাল।
-বড়দের সাথে এভাবে বেয়াদবি করে কথা বলা শিক্ষা দিয়েছে তোমাকে? আসলেই মানুষ করতে পারিনি ! লজ্জায় আমার মাথা হেট করে দিয়েছিস তুই । আমি যেখানে চাইবো সেখানেই তোকে বিয়ে করতে হবে।
-কিন্তু বাবা আমার এখনো..
-কোন কিন্তু না যা বলে সেটাই হবে।
-আমার এখনো ১৮ বছর হয়নি । পড়াশোনা শেষ হয়নি। এই লোকটার কথার জালে আটকা পড়ে তুমি আমার সাথে এমন করো না বাবা। ওরা ভন্ড…
-স্পৃহা!!!
-থাক আঙ্কেল ওকে বকার দরকার নেই ,ছোট মানুষ বুঝতে পারছে না । আমি ওকে বলছি ,
সুন্দরের সরল উক্তি।
-তুমি বাবা কিছু মনে করো না । ওর এই ব্যবহারে আমি ভীষণ লজ্জিত ।আপনাদের কাছেও অনুরোধ করছি ওকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য।
-তোমরা যাই বলো আমি কিছুতেই বিয়ে করব না । না যখন বলেছি ,মানে না।
-তোমার পড়াশোনা নিয়ে অসুবিধা তো ? ও বলেছে তোমাকে পড়াশোনা করতে দেবে । আর কি সমস্যা বল? এমন ভালো ছেলে কোথাও পাবে না। ওর সাথে আমার অনেকদিন ধরে পরিচয় হয়, ওর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক । আমি জানি ও ছেলে কত ভালো ! আমার সোনা মা তুমি আমার কথাটা একটু বোঝো। সুন্দর তোমাকে অনেক যত্ন রাখবে। অনেক খেয়াল রাখবে ।এখন আমি তোমার মুখে কিছু শুনতে চাই না । যাও রেডি হয়ে এসো ।
-আঙ্কেল ,রেডি হওয়ার কি দরকার এ অবস্থাতেই বিয়ে করতে সমস্যা নেই।
আমি কি ওর সাথে একা কথা বলতে পারি?
-হ্যাঁ অবশ্যই বাবা,বলো ।
.
-হ্যালো সুইটহার্ট! দেখলে তো আমি যা চাই তা কিভাবে
নিয়ে নেই । হয় পেয়ে যাই না হলে ছিনিয়ে নেই! তোমার বাবা
মা না মানলে হয়তো তোমাকে ছিনিয়ে নিতে হতো ।তবু আমি তোমায় ছাড়তাম না । এখন ভদ্রমতো নিচে চলে আসো ! যদি আমার আসল রূপ কাউকে দেখাতে না চাও।
-দাঁড়ান! খুব ভালো মতে আমার পরিবারের ব্রেইন ওয়াশ করেছেন ,তা বুঝতে পেরেছি ! তাই আমি এই নিয়ে কিছু বলবো না । আমিও বিয়েটা করব কিন্তু আমার শর্ত আছে।
-বলো, তোমার জন্য আমি কি করতে পারি ?
-আমার যতদিন না ১৮ বছর হবে এবং তারপর আইন অনুযায়ী বিয়ে হবে তার আগে পর্যন্ত আপনি আমার থেকে কখনো স্বামীর অধিকার আদায় করতে যাবেন না ।রাজি থাকলে আমি বিয়েটা করব।
-কিন্তু ,কিন্তু সুইটহার্ট তোমার সাথে আমি যখন চাইবো যেভাবে চাইবো দেখা করতে পারব ।এই ব্যাপারে কোন আপত্তি করা যাবে না । আসলে হয়েছে কি বলতো তোমাকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ড থাকা সম্ভব না নয় । নাহলে কি আর এই কয়েক দিনে মধ্যে বিয়েটা করে নেই বল! চলো চলো স্পর্শ ! বেশি দেরি করো না! বুঝেই গেছো আমি কী!
.
.
না চাওয়া শর্তেও সকলের সামনে বসে যে অবস্থাতে সে বেরিয়েছিল ঠিক সে অবস্থাতেই বসে থাকে স্পৃহা। ঠিক যেন ঘরের মধ্যে আছে । হঠাৎ করে সবকিছু করে এরকম পরিবর্তন হবে তার কল্পনার বাইরে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের না হওয়া সত্বেও সেদিন সুন্দর জোর করে তাকে দিয়ে কবুল বলিয়ে ছিল!
.
.
স্পৃহা তার অতীত থেকে বেরিয়ে আসে দরজার কড়া নারার শব্দে। এতক্ষণ যার কথা মনে করছিল সে ব্যক্তিটি তার সামনে হাজির হয়েছে । ঘৃণায় মুখ গুটিয়ে নেয় স্পৃহা।
-এত তাড়াতাড়ি উঠে গিয়েছো স্পর্শ ! ভাবলাম তোমাকে এসে ঘুম থেকে জাগাবো । বউকে ঘুম থেকে উঠানোর মজা কিন্তু আলাদা। ব্যাপার না ,বল কি অবস্থা?
-দিনে ২৪ বার করে আসতে আপনার লজ্জা করে না ?
-লজ্জা কিসের বউ এর কাছে আসতে? অফিসে যাওয়ার আগে তোমার মুখটা দেখে গেলে সারাদিনে কোন ক্লান্তি কাজ করে না । ভালো করেছি না এসে? তুমি ভালো না বললেও ভালো।
স্পৃহা কোন জবাব দিল না। পুরনো কথাগুলো মনে পড়াতে তার মেজাজটা এমনিতেই খারাপ । এই সুন্দরের সাথে এখন তর্কে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না ।
সুন্দর কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলল
-তুমি জানো স্পর্শ , I’m very excited!
-কেন?
-তোমার শর্তের সময় আর কিছু দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে ।তারপর শুরু হবে আমার খেলা !
-এই দুই বছর ধরে তো আপনিই খেলা দেখাচ্ছেন ।
-এই খেলা তো সেই খেলা না!
-আপনারা এসব হেঁয়ালি কথা আমার ভালো লাগে না ।বিরক্ত লাগছে !অসহ্য লাগছে!
-বিরক্ত করা তো এখনো শুরু করলাম না ! তাতেই বিরক্ত ? কিছুদিন পরে তো প্রতি সেকেন্ডে বিরক্ত করব। Be ready my girl!
স্পৃহা সুন্দরের কোন কথাতেই পাত্তা দিলো না । সে নিজের চিন্তায় মগ্ন । তার মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন সে শুরু থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে। সুন্দর তাকে চিনলো কী করে? কেন তার পিছনে এভাবে পরে রইল!
-একটা কথা বলবেন?
-হাজারটা বলবো ।
-আপনি আমার পিছনে এভাবে পরে রইলেন কেন ? চিনলেন কী করে আমায় ?
…..
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:6
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖 সবাই একটু বেশি বেশি করে কমেন্ট করবেন😁ami inspired hoi🫣
N.B. -Don’t copy