#সুন্দর_স্পৃহা
#সামিয়া_সারা
#psychobasedstory
পর্ব-৩০
একে তো এত রাতে জোর করে কাজীকে প্রায় টেনে আনা
হয়েছে ।তার ওপর এখন আবার এভাবে সময় নষ্ট করছে।
বেশ বিরক্ত হয়েই তিনি বললেন,
– বিয়ে কোন ছেলে খেলা নয় ! আমাকে এভাবে এনে বসিয়ে রাখার কোন মানে নেই।
কাজীর মুখে এমন কথা শুনে সুন্দর অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় । কী করে কোন মানুষের এত সাহস হলো যে তার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলে !
স্পৃহাও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সুন্দরের দিকে তাকিয়ে বলে ,
-ঠিকই বলেছেন উনি। আপনি ছেলে খেলা ই করছেন। বিয়ে করতে চান না খোলাখুলি বললেই তো হয় । সবাইকে এভাবে বসিয়ে না রাখলেও পারতেন। আমি উঠছি !
এই বলে স্পৃহা উঠতে গেলেই সুন্দর হেঁচকা টান দিয়ে তাকে তার কোলে বসিয়ে শাড়ির আঁচল ভেদ করে উষ্ণ পেটে নিজের শীতল হাত রাখে। স্পৃহার শরীরের উষ্ণতা সুন্দরকে গরম করে তুলছে। অন্যদিকে সুন্দরের হাতের শীতল অনুভূতিতে স্পৃহা তিরতির করে কাঁপছে।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ছাড়ুন । এখন অন্তত এই অসভ্যের মত আচরণ করবেন না।
স্পৃহার এমন ফিসফিসানি অনুরোধ সুন্দর রাখল না । বরং পূর্বের তুলনায় বেশি জোরে তাকে চেপে ধরে বসে রইল।
এরপর সকলের দিকে সোজা দৃষ্টি রেখে বলল ,
-বিয়ের কাজ তাহলে শুরু হোক।
অবশেষে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিয়ের সর্বশেষ কাজের প্রস্তুতি চলছে। সুন্দর স্পৃহার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল ,
-কবুল বলতে যেন এক সেকেন্ডও দেরি না হয়! দরকার হলে এখনই বলতে শুরু করো মনে মনে । আমি এক মুহূর্ত অপেক্ষা করব না। আর দেরি হলে তার ফল কি হতে পারে তা কল্পনা করে নাও।
সুন্দরের এমন হুমকি শুনে স্পৃহা শুকনো ঢোঁক গিলল।
অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত মূহুর্তে সুন্দর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না
করে কবুল বলে দিল । এবার পালা স্পৃহার। তবে তার ধ্যান জ্ঞান যেন কিছুই নেই। প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরে সবাই বলেই
যাচ্ছে কবুল বলতে কিন্তু সে কোন কথা-ই বলছে না। হঠাৎ করেই তার মুখ দিয়ে আহ্ সূচক শব্দ বেরিয়ে আসে।
সুন্দরের মা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ,
-কী হয়েছে ? কোন সমস্যা ?
সুন্দর শীতল চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝায় এখান থেকে চলে যেতে। সুন্দরের মা ও চুপচাপ সরে যায়।
কাজী আরেকবার জিজ্ঞেস করে ,
-আপনি কি সানজিল চৌধুরী সুন্দরকে নিজের স্বামী হিসেবে কবুল করছেন ?
স্পৃহা এবার চটপট করে বলে ,
কবুল….
তারপর সকলে একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠে।
.
.
.
সুন্দর বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পৃহাকে কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে গেল । এদিকে বাড়ির সকলে হা করে
তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে । স্পৃহা নিজেও হতবাক। সুন্দর এর বেপরোয়া স্বভাবের কথা সকলেই জানে। তাই কেউ কিছু বললেও কোন কিছু যাবে আসবে না তার। এ কারণে বাড়ির সবাই আবার যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
এদিকে স্পৃহা কে রুমে এনেই দরজা লাগিয়ে দেয় সুন্দর । তারপর ডিভানে তাকে শুয়িয়ে নিজে ফ্রেশ হতে চলে যায়। এভাবে শুয়ে থাকতে স্পৃহার ভীষণ অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল।
অন্যদিকে সুন্দর এই রাতেও শাওয়ার নেয়। তার স্পর্শের উষ্ণতায় যেন তার শরীর থেকে ভাব বের হচ্ছে। একটা সাদা টাওয়েল কোমরে পেচিয়ে বেরিয়ে এলো সুন্দর। তার পুরো
শরীরে পানির বিন্দুগুলো মুক্তোর মত চকচক করছে। কপালের ওপর পড়ে থাকা চুল দিয়ে পানি পড়ছে তার কপাল বেয়ে। সুন্দরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পৃহা । তার চোখ
গিয়ে আটকে আছে সুন্দরের কণ্ঠমণির উপর। ঢোঁক গিলে গলা ভেজালো সে। কি ভয়ানক নেশার মত লাগছে সুন্দরকে।
-স্পর্শ!
-হু..
এক ধ্যানে তাকিয়ে জবাব দেয় স্পৃহা। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিল বুঝতে যে সুন্দর তাকে ডেকেছে।
বুঝতে পেরেই মাথা ঝাঁকিয়ে নেড়েচেড়ে বসলো সে। স্পৃহার এমন অবস্থা দেখে সুন্দর মুচকি হাসে। তারপর তার দিকে এগিয়ে শাড়ির আঁচল সরিয়ে বা কাঁধে জরো করে রাখে। সুন্দরের এমন কাণ্ডে হতবাক হয়ে স্পৃহা তার দিকে চোখ বড় করে তাকায় ।
স্পৃহার অবাক হওয়া দেখে সুন্দর বলে,
– ব্যথা করছে না?
ঘোর লাগানো কণ্ঠ নিয়ে স্পৃহা জবাব দেয় ,
-কোথায়?
সুন্দর এবার তার চোখের সামনে দুবার তুরি মেরে বলে,
– নিজের পেটের দিকে তাকিয়ে একবার দেখেছো?
স্পৃহার যেন হুঁশ ফিরে আসে আবার পেটের দিকে তাকাতে ।
আরো একবার অবাক হয়ে সুন্দরের দিকে তাকায় । তারপর বাঁ হাত দিয়ে পেটে হাত দিয়ে বলে ,
-র….ক্ত..!
ঔষধ আর তুলা এনে সুন্দর তার পেটে লাগিয়ে দিতে দিতে বলে ,
-জ্বী ম্যাডাম ! একটু হুঁশে ফেরার চেষ্টা করুন । এত দুর্বল নাকি আপনি?
-র*ক্ত কিভাবে এল আমার পেটে?
-আপনার পেটে আমার বেবি ছিল । বের করতে গিয়ে র*ক্ত বেরিয়ে গিয়েছে । আর কিছু?
সুন্দরের এমন জবাবে টমেটোর মত লাল স্পৃহা। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে নিজের পায়ের নখ দিয়ে খোঁচাতে থাকলো অনবরত।
সুন্দরের চুল থেকে ফোঁটা ফোটা পানি স্পৃহার উপর পড়ছে। আর স্পৃহার চোখ বারবার আটকে যাচ্ছে সুন্দরের খোলা উদরের দিকে।
এই লোকটা এত সুন্দর করে ফিটনেস ধরে রেখেছে!
নিজের নজর বারবার সরাতে চাইলেও পারছে না সে। তাই এমন করুন অবস্থা বুঝতে পেরে বাধ্য হয়ে হুট করে উঠে দাঁড়ায় সে।
কাঁপা কন্ঠে বলে,
– আমি ফ্রেশ হব! সরে দাঁড়ান।
সুন্দর চুপচাপ সরে যায় ।
স্পৃহা ওয়াশরুমে চলে গিয়েছে ফ্রেস হতে । এদিকে সুন্দর বেশ ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে স্পৃহা কতটা ঘায়েল হয়েছে!
সেও মনে মনে আওড়াতে থাকে ,
-এইটুকুতেই এই অবস্থা মিসেস চৌধুরী?? Abhi to pictures bakii Hain meri jaan!
.
.
.
অনেকক্ষণ হয়ে গেল স্পৃহা ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না ।নিজেই নিজের কপাল চাপড়াচ্ছে । হঠাৎ করে তার হলো কি!
সে তো এত দুর্বল না। এই সুন্দর কে দেখে তার পেটের মধ্যে বাটারফ্লাই গুলো এমন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে কেন!
স্পৃহা এবার নিজেই নিজের পেটে হাত রেখে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে করতে বলে,
-Butterflies butterflies!!! Where are you going?
তখনই সুন্দর বাইরে থেকে ডেকে উঠলো,
-butterfly!…
সুন্দরের ডাক শুনে জিহ্বাতে কামড় দিয়ে এক হাত মাথায় নিয়ে বলে উঠলো ,
-এই রে! শুনে ফেললো নাকি ?
ঝড়ের বেগে দরজা খুলে উঁকি মেরে বলল ,
-কি বললেন আপনি আমাকে ?
সুন্দর একটা সাদা টি-শার্ট ও কালো টাউজার পরে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্পৃহার প্রশ্নের উত্তরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
– কই কিছু নাতো!
স্পৃহা দরজাটা লাগাতেই যাবে সুন্দর তখন আবার ডেকে উঠল ,
-স্পর্শ !
আজকে কি ওয়াশরুমেই রাত কাটাবে ? বের হবে না?
-বেরিয়ে আপনার সাথে থাকার থেকে এখানে থাকাই ভালো।
– আমি এখন বারান্দায় যাব । তুমি রুমে এসে ঘুমিয়ে
পড়ো ।বেশিক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে । এই বলে সুন্দর বারান্দায় চলে যায়।
স্পৃহাও খেয়াল করল তার পেটে বাটারফ্লাইস উরাউরি করা বন্ধ করে দিয়েছে। সুন্দর যে জামা কাপড় পড়ে নিয়েছে এই জন্য কি সব ঠিক হয়ে গেল ? সে যাই হোক । নিশ্চিন্ত মনে স্পৃহা এবার বেরিয়ে এলো। এক সেকেন্ডও জেগে থাকবে না সে এখন । ঘুমাতে হবে । তা না হলে উল্টাপাল্টা কিছু হবে!
.
.
.
.
.
আরিয়ানের কোন খোঁজ নেই । ফিহা পাগল প্রায় । অন্যদিকে লিহান জীবন্ত লাশ হয়ে রয়েছে। ফিহার এদিকে এ অবস্থা অন্য দিকে কারো বাসর রাত হচ্ছে! এসব ভেবে নিজেকে কয়েকবার শেষ করার প্রস্তুতি ও নিয়েছে সে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
-স্পৃহার জন্য আমার আজ এই অবস্থা। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা কে স্পৃহা কেড়ে নিয়েছে। এত সহজে কি ছেড়ে দিব? এবার ওর থেকে ওর ভালোবাসা কেড়ে নেই!!!
এসব কথা নিজেই বলতে বলতে পাগলের মত হাসতে লাগলো ফিহা। তার মনের মধ্যে কি চলছে একমাত্র সে ব্যতীত কেউই জানে না!
মিসেস চৌধুরী লিহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কী অপরাধ তার! বাইরের একটা মেয়ের জন্যে! এই স্পৃহার জন্য এই অবস্থা।
.
.
.
.
সুন্দর বারান্দায় গিটার নিয়ে বসেছে। তার কণ্ঠ মনে হচ্ছে অ্যালকোহল খেয়েছে,সে নয়। স্পৃহা ঘুমানোর চেষ্টা করেও থাকতে পারছে না। পেটে হাত দিয়ে এপাশ ওপাশ করছে। আর সুন্দর ওদিকে গান গেয়ে চলেছে,
Tu hi ye mujhko bata de
Chahun main ya naa
Apne tu dil ka pata de
Chahun main ya naa
Itna bata doon tujhko
Chaahat pe apni mujhko
Yun tto nahi ikhtiyaar
Phir bhi yeh socha dil ne
Ab jo laga hoon milne
Poochhu tujhe ek baar
Tu hi ye mujhko bata de
Chahun main ya naa
Apne tu dil ka pata de
Chahun main ya naa
হঠাৎ এই গান থেমে গেল তার। গানের আর কোনো আওয়াজ না পেয়ে স্পৃহা দেখতেই যাবে , তখনই তাকিয়ে দেখে সুন্দর ঠিক তার মুখের থেকে এক হাত উপরে।
সে চমকে উঠে বলে ,
-আপনি এখানে?
-বারবার এপাশ ওপাশ করছো কেন? কোন সমস্যা হচ্ছে ? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
এই বলে সুন্দর স্পৃহার কপালে হাত দিতে যাবে তখনই স্পৃহা সরে গিয়ে বলে উঠলো,
– খবরদার ছোঁবেন না আমায়!
সুন্দরের অগ্নিরূপ ধারণ করানোর জন্য এইটুক কথায় যথেষ্ট ছিল। স্পৃহার গাল চেপে বলল ,
-তখন কবুল বলতে দেরি করেছিলে বলে কি করেছিলাম মনে আছে?
(চলবে…)
#Running
Story Name: #Shundor_Spriha
Written by Samia Sara©️
Episode:30
আমার প্রিয় মানুষেরা এই পর্বটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? আগের পর্বগুলোতে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে ।আশা করি সব সময় পাশে থাকবেন💖
Jototuk parsi lekhar try korsi,mon khule support koren🥺🙏🏻
Onek onek onek din pore golpo ta dilam,khub khub sick ami + onek pressure er moddhe achi. Kintu onek miss korechi apnader,jotota Apnarao amake miss korechen. Etodin poreo ke ke episode ta porlen? Obossoi kintu comment kore janaben.
Sobaike onek onek valobasha . Amar upor e raaag koree thakben na keu please 🥺. Ekdom ssobbbbbbbbaaaaaarrrr comment lagbe kintu amar . Good night 🥺😘🫶🏻