হোয়াট ননসেন্স আপনি কি চোখে দেখেন না? আপনার সামনে দিয়ে একজন মানুষ যাচ্ছে আপনি কিনা তার মুখে কালকের পুরনো পানি ঢেলে দিলেন?
ক*র্কশ কন্ঠে কথাটা বলে একজন যুবক সামনে পানির বোতল হাতে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বোরকা পড়া মেয়েটির দিকে তাকাল ৷ তুবা নিজের কাজে আহাম্মক হয়ে গেছে ৷ পরমুহূর্তে গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,
পুরনো পানি জন্য রা*গ করেছেন? আপনি চাইলে আমি আজকের টাটকা ঠান্ডা পানি এনে আপনার মুখে ঢেলে দিতে পারি ৷
স্বাধীনের মুখটা কাঠিন্যতায় ছেঁয়ে গেল ৷ চোখের চশমাটা ঠিক করে কাটকাট গলায় বলল,,, স্টুপিড মেয়ে!
তুবা ভ্রু কুঁচকে বলল,,, এই কি বললেন?
চোখের সাথে সাথে কি কানেও সমস্যা নাকি আপনার?
তুবা তেতে উঠে বলল,,, বাড়াবাড়ি করবেন না ৷ মানছি আমার ভুল হয়েছে তাই বলে অ*পমান তো করতে পারেন না ৷
শুরুতে সরি বললে এভাবে অ*পমান করতাম না ৷
স্বাধীনের তৎক্ষণাৎ জবাবে বিপরীতে উত্তর গোছাতে তুবার বেগ পেতে হলো ৷ প্রতি উত্তরে বলার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে তুবা অস্ফুট স্বরে বলল,,,
এর জবাব আমি পরকালে গিয়ে নিব হুহহ!
স্বাধীনের ভ্রু কুঁচকে গেল ৷ এমন কথা জীবনে শুনেছে কিনা সন্দেহ! তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই একটা মালবাহী ট্রাক খুব জোরে হর্ণ বাজিয়ে ওদের পাশ দিয়ে চলে গেল ৷ ওরা বর্তমানে রাস্তার এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে ৷ স্বাধীন ট্রাকের থেকে চোখ সরিয়ে তুবার দিকে তাকাতেই থমকে গেল ৷ তুবা দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মৃদু আ*র্তনাদ করতেছে ৷
স্বাধীন বিচলিত কন্ঠে বলল,, আর ইউ ওকে?
তুবার ফর্সা মুখটা র*ক্তিম হয়ে গেছে, চোখ দিয়ে এক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল ৷ ও যে বেশ অ*সুস্থ বোধ করছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই স্বাধীনের ৷ তুবা এক পর্যায়ে রাস্তায় হাটু মুড়ে বসে পড়ল ৷ ও এখনও মাথা চেপে ধরে আছে ৷
তা দেখে স্বাধীন চিন্তিত স্বরে বলল,, হেই আপনাকে ঠিক লাগছে না ৷ হাসপাতালে নিয়ে যাব আপনাকে?
তুবার অবস্থা অপরিবর্তিত দেখে স্বাধীন আশেপাশে তাকাল কারো সাহায্য নেওয়ার জন্য ৷ এমন সময় তুবা আচমকা রাস্তা থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াল ৷ একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল ৷ এমন ঘটনায় স্বাধীন প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল ৷ একটু আগেই যে মেয়ে মৃ*তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল সে এখন এতোটা স্বাভাবিক কিভাবে হয়ে গেল?
স্বাধীন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,, ঠিক আছেন আপনি?
তুবা হাসিহাসি মুখে স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে বলল,,, আমার আবার কি হবে বাবা? আমি একদম ফিটফাট আছি ৷
স্বাধীনের চোয়াল ঝুলে গেল, অস্ফুট স্বরে বলল,,, বাবা!
তুবা স্বাধীনের কাঁধ চাপড়ে মুচকি হেসে বলল,,, আরে ইয়াংম্যান তোমাদের মতো ছেলেকে আমার মতো বয়স্ক বুড়ো তো বাবা বলেই ডাকবে ৷ তোমার বয়সে আমিও বেশ খুশি হতাম কেউ আমাকে বাবা বলে ডাকলে ৷
স্বাধীন হতভম্ভ হয়ে গেল, ওর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে ৷ ও মনে মনে বলল,,,
গলায় ভার্সিটির আইডি কার্ড ঝুলানো আর এ কিনা বলে সে নাকি বয়স্ক বুড়ো! বয়স্ক বুড়ি বললেও না হয় একটু মানা যেত ৷
তুবা স্বাধীনের গাল টেনে দিয়ে বলল,,, তা বাবা তুমি কোথায় পড়াশোনা করছো?
স্বাধীন গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তুবার দিকে তাকাল ৷ ও নিজের চোখ আর কানকে একদম বিশ্বাস করতে পারছে না ৷ এসব কি হচ্ছে ওর সাথে? কোনো প্রাঙ্ক?
স্বাধীনের থেকে জবাব না পেয়ে তুবা ওর কাঁধে হালকা থা*প্পড় মে*রে বলল,,, কি হলো উত্তর দাও ৷
স্বাধীন হতভম্ভ দৃষ্টিতে তুবার দিকে এখনও তাকিয়ে আছে ৷ ও যেন এখন অন্য জগতে চলে গেছে তবুও নিজেকে সামলে কোনোমতে বলল,,,
জব করছি ৷
তুবা মুচকি হেসে বলল,,, ভালো করে নিজের দায়িত্ব পালন করো বাবা আর জীবনে অনেক উন্নতি করো ৷
বলে তুবা ধীর পায়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলো ৷ আর পিছনে রেখে গেল এক আশ্চর্যানিত আহাম্মক ছেলেকে যে নিজের আলগা হয়ে যাওয়া চশমাটা ঠিক করে ওর গমনপথের দিকেই তাকিয়ে আছে ৷
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
হাসান ভিলার কিচেনে চল্লিশর্ধো দুই রমনী বিকেলের নাস্তা বানাতে ব্যস্ত ৷ ওড়না দিয়ে মুখের ঘামটুকু মুছে নিয়ে তানিয়া ইসলাম বলল,,,
বুঝলি সিনু আজ এতোটুকুই থাক ৷ সাজিদ ভাইয়া আর উনি তো বাসায় নেই ৷ শুধু বাচ্চারা আছে ৷ ওরা আর কতোই বা খাবে?
পুডিং টা নামিয়ে রেখে সানিয়া সিনু টিটকারি দিয়ে বলল,,, বাচ্চাদের যদি পুরো একটা রুমভর্তি খাবার দেই তবুও ওরা সব খাবার সাবার করে দিবে ৷ ওদের মতো পেটুক এই দুনিয়ায় নেই!
সানিয়া সিনুর কথা শুনে তানিয়া হেসে উঠল ৷ হঠাৎ ড্রয়িংরুম থেকে কোনো অল্প বয়সী মেয়ের আ*র্তনাদ ভেসে আসতেই সিনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
আমার ভ্যাবলি মেয়েটা মনে হয় আবারও উল্টে পড়েছে ৷ ধুপধাপ করে শুকনো মেঝেতে পড়ে যাওয়ার অভ্যাস যে কবে শেষ হবে আল্লাহ মালুম!
বাদ দে তো ৷ আগে গিয়ে দেখি শেহনাজের কি হয়েছে ৷ নয়তো এর হিসাব….
সিনু কপাল চাপড়ে বলল,,, চুপ কর তানি ৷ পরের লাইন আমার জানা ৷
তানিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে সিনুকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেল ৷ ঠিক যা ভেবেছিল তাই ৷ শেহনাজ মেঝেতে উল্টো হয়ে পড়ে ব্যা’থায় কা*তরাচ্ছে ৷ ওরা দুজনে গিয়ে দ্রুত ওকে তুলে সোফায় গিয়ে বসিয়ে দিল ৷ শেহনাজ মৃদু গলায় বলতে লাগল,,,
মাম্মা, ছোট মা কোমড়ে ব্যা*থা পেয়েছি ৷
সিনু বলে উঠল,, এ আর নতুন কি মা? দাঁড়াও মলম নিয়ে আসছি ৷
বলে সিনু মলম নিতে চলে গেল ৷ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মেয়ের কোমড়ে মলম দিয়ে দিল ৷ অতঃপর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
তোমার ভাই কি করছে?
ভাইয়া ওর রুমে ৷
সিনু কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,, তার মানে ও এখনও ঘুমাচ্ছে? এই ছেলেকে নিয়ে কি করি? সারাদিন ঘুমের উপরেই থাকে ৷
তানিয়া বিরোধিতা করে বলল,, মোটেই না ৷ ছুটির দিনগুলোতেই শুধু যা ঘুমায় নয়তো বাকি দিনগুলো বেশ পরিশ্রম করে, পড়াশোনা করে…
নিজের ছোট মায়ের কথা টেনে নিয়ে শেহনাজ বলল,,, আর আমার গাল দুটো সবসময় টেনে টেনে লাল করে দেয়!
ওর কথা শুনে সিনু আর তানিয়া একযোগে বলে উঠল,,, ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই এমন করে ৷
শেহনাজ মুখ ভেংচি কাটল ৷ সিনু কিছু একটা ভেবে দোতলার দিকে পা বাড়াল ৷ ওর গন্তব্য নিজের একমাত্র আদরের ছেলের ঘর ৷ দরজা খোলা আছে দেখে সিনু নির্দ্বিধায় ভিতরে প্রবেশ করল ৷ দেখল উদম গায়ে ছেলে তার বেঘোরে ঘুমোচ্ছে ৷ সিনু বড় একটা শ্বাস নিয়ে বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,
সাভাশ উঠে পড়ো ৷ আর কতো ঘুমাবে? আজকের জন্য ঘুমানোর মেয়াদ শেষ ৷
সাভাশ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,,, মাম্মা আর পাঁচ মিনিট ৷
সিনু ছেলেকে টানতে টানতে বলল,,, না সাভাশ অনেক হয়েছে ৷ উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও ৷
মায়ের কাছে হার মেনে সাভাশ আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে বাথরুমের দিকে চলে গেল ৷ সিনু সেদিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বিছানা গোছাতে লাগল ৷ এমন সময় তানিয়া হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল,,,
তুবার আবারও অ্যাটাক হয়েছে ৷ ভাইয়া এখনি ফোন করে বলল ৷
সাভাশ বাথরুমের ভিতর থেকে বলে উঠল,,, তার মানে আবারও আমাদের অভিনয় করতে হবে শিট!
চলবে,,,,
#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ১
[চারটা আধপাগল জুটি নিয়ে নির্মিত এই গল্প ৷ ডাক্তার, টিচার, ভার্সিটি, কাজিন সবধরণের ফিল পাবে এই গল্পে ৷ ইনজয় করো ওখে?]