শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে #লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান #পর্বঃ২

0
1

#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ২

স্নিগ্ধ বিকাল, সূর্যটা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ৷ একটা সুন্দরী যুবতী ছাদে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্যের ই সাক্ষী হচ্ছে ৷ বাতাসে ওর লম্বা চুলগুলো মৃদু মৃদু উড়ছে ৷ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে বাধা পড়ল কিছু চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ৷ আয়েশা ভ্রু কুঁচকে শব্দের উৎসের দিকে কান খাড়া করল ৷ বুঝতে বাকি নেই ড্রয়িংরুমে কিছু না কিছু নিয়ে নিশ্চয়ই বেশ ঝামেলা হচ্ছে ৷

আয়েশা চুলগুলো খোপা করে মাথায় ওড়না ভালোমতো দিয়ে নিচে চলে গেল আজকের কাহিনী সম্পর্কে জানার জন্য ৷ ড্রয়িংরুমে পদার্পণ করতেই শেহনাজ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলতে লাগল,,,

আপু আবারও আমাদের অভিনয় করার সময় চলে এসেছে ৷ এবার সবচেয়ে কার্যকরী অভিনয় টা আমিই করে দেখাব হুহ ৷

আয়েশা হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,,, তুবা আবারও ট্রমাটাইজড হয়েছে?

তানিয়া বলে উঠল,,, হ্যাঁ মা তানজিদ ভাইয়া ফোন করে বলল ৷ তবে আমাদের কালকে যেতে বলেছে ৷ আজ ভাইয়া আর রাইশা ভাবীই সামলে নিবে ৷ আমার ভাতিজি টার যে কি হবে আল্লাহ জানে!

আয়েশা ছোট মায়ের গলা জরিয়ে ধরে বলল,,, টেনশন করো না তো ছোট মা ৷ আমরা আছি তো ৷ আমরা থাকতে তুবার কিছুই হবে না ইং শা আল্লাহ ৷

তানিয়া সামান্য হাসল ৷ আয়েশা এক এক করে ড্রয়িংরুমের সবার দিকে তাকাল ৷ শেহনাজ কোমড়ে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে , নিঃসন্দেহে আবারও চিৎপাটাং হয়ে পড়ে গিয়েছিল! মাম্মা কপালে হাত দিয়ে বসে আছে ৷ আর সবশেষে নিজের জমজ ভাই সাভাশকে দেখল ও নিশ্চিত মনে একটা একটা করে বাদামের খোসা ছাড়াচ্ছে এবং উপরে ছুঁড়ে মুখের মধ্যে লুফে নিচ্ছে ৷

চোখমুখ কুঁচকে সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আয়েশা তানিয়াকে বলল,,, মাম্মার পোটলা তিনটা তো এখানেই আছে ৷ তা তোমার পোটলা মানে তুষার কোথায় ছোট মা?

তানিয়া কিছু বলার আগেই শেহনাজ বলে উঠল,, তুষার ভাই কিছু বই কিনতে গেছে ৷

অন্যদের বেলা যেমন তেমন কিন্তু তুষারের প্রসঙ্গ আসলেই সব তথ্য তোর থেকে পাওয়া যায় ৷ ব্যাপার কি শেজু?

শেহনাজ থতমত খেয়ে গেল ৷ আমতা আমতা করে বলল,, আসলে আপু উনাকে যাওয়ার সময় দেখেছিলাম ৷

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

একটা আলিসান লাইব্রেরিতে অনেক মানুষ বিশেষ করে যুবক যুবতীরা নিজেদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটানোর অভিপ্রায়ে এসেছে ৷ এমন কোনো বই মনে হয় নেই যেটা এই লাইব্রেরিতে উপস্থিত নেই ৷ একজন যুবক ঘুরে ঘুরে তার কাঙ্ক্ষিত বইয়ের উপস্থিতি খুঁজে বের করতে ব্যস্ত ৷

অবশেষে খুঁজে পেয়ে সেটা নিতে যাবে তখন উল্টো দিক থেকে একটা টান অনুভব করল ৷ যুবক টাও নিজের দিকে জোরে টান দিল ৷ অপর পাশ থেকেও টানের জোর বেড়ে গেল ৷ এভাবে টানাটানির এক পর্যায়ে যুবকটি সাফল্য পেল ৷ বইটা নিচে নামাতেই একটা মিষ্টি দেখতে মেয়ের মুখ দেখা গেল ৷ যার রাগী মুখটা সামনের যুবকটিকে দেখে মুহূর্তের মধ্যেই শীতল হয়ে এলো , মুখে হাসি ফুটে উঠল ৷

দ্রুত অপর পাশ থেকে দৌঁড়ে যুবকটির সামনে এসে বলল,,, হাই কেমন আছেন?

তুষার ফর্সা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,,, ডু আই নো ইউ?

সম্ভবত না কিন্তু আপনাকে আমি চিনি ৷ আমরা একই হাইস্কুলে পড়তাম ৷ আপনি তো টপ স্টুডেন্ট ছিলেন ৷ আপনাকে কে না চেনে?

ধন্যবাদ ৷

বলে তুষার যেতে ধরলে মেয়েটি চট জলদি বলে উঠল,,, আরে থামুন একটু ৷

হোয়াট?

উমম আপনার নাম্বার টা দেওয়া যাবে না মানে আপনার থেকে সাজেশন নিতাম কিভাবে টপ করতে হয় ৷

তুষার অত্যন্ত শীতল স্বরে বলল,,, আমার টপ করার একটাই কারন আমি কখনো কারো নাম্বার চাইনি তার থেকে সাজেশন নেওয়ার জন্য ৷

মেয়েটা থতমত খেয়ে গেল ৷ সেটা পাত্তা না দিয়ে তুষার আরো কয়েকটা বই নিজের ব্যাকপ্যাকে ভরে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ লাইব্রেরিতে বিদ্যমান সবাই এক নজর হলেও তুষারের দিকে তাকিয়েছে ৷ এমন লাবন্যময়ী ফর্সা ছেলে সচরাচর দেখা যায় না ৷

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

বেলকনির আধো আলোয় এক প্রবীণ দম্পতি চিন্তিত হয়ে বসে আছে ৷ ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছে ৷ এক পর্যায়ে নিরবতা ভেঙে রাইশা ইকবাল বলে উঠল,,,

আমাদের মেয়েটার এই পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ব্যাধী টা কবে শেষ হবে চিরকুমার স্বামী?

তানজিদ ইসলাম তপ্ত শ্বাস ফেলে বউয়ের গালে হাত রেখে বলল,,, তুমি চিন্তা করো না ৷ এবার বেস্ট একজন সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে চিকিৎসা করাব তুবার ৷ সবটা আল্লাহ ভরসা ৷ তার আগে মেয়ে যে নিজেকে আমার বাবা মানে তোমার শ্বশুড় ভাবছে সেটা মিটমাট করি ৷

দুজনে বসা থেকে উঠে রুমের বাইরে চলে গেল ৷ ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখল তুবা একটা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলতেছে,,,

আমাকে মেয়েদের পোশাক পড়িয়ে রেখেছিলে কেন বউমা? মানুষ দেখলে কি বলত শুনি? এই বয়সে এসে আমার ইজ্জত হারাতে হতো ছ্যাহ!

রাইশা আর তানজিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে একে অপরের দিকে তাকাল ৷ অতঃপর রাইশা বলে উঠল,,,

মাফ করবেন বাবা ৷ ভুল করে ভুল হয়ে গেছে ৷ এই ভুল আর কোনোদিন ভুলেও হবে না ৷ আপনিও আমাকে ভুল করে মাফ করে দিন ৷

তুবা ভ্রু কুঁচকে বলল,,, কি ভুল ভুল শুরু করেছো বউমা?

রাইশা কিছু বলার আগেই তানজিদ বলে উঠল,,, তুবা মামনি…

রাইশা ওর পায়ে আস্তে করে একটা লা*ত্থি দিতেই তানজিদ নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল,,, ম-মানে বাবা তোমার বউমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে ৷ বয়স হচ্ছে তো তাই কখন কি বলে নিজেও জানে না ৷

রাইশা কটমট দৃষ্টিতে তানজিদের দিকে তাকাল ৷ তা দেখে তানজিদ ভয়ে একটা ঢোক গিলল ৷ তুবা আই মিন যে নিজেকে তানজিদের বাবা তাহির ইসলাম ভাবছে সে হেসে উঠল ৷ কিছুক্ষণ হাসার পর হাসি থামিয়ে বলল,,,

তানজিদ বউয়ের সাথে লাগতে যেও না ৷ এর ফল খুব একটা ভালো হয় না ৷ আমিও তোমার মায়ের সাথে বুঝেশুনে কথা বলি ৷

বলে আবারও সামান্য হাসল ৷ তা দেখে তানজিদ আর রাইশা জোরপূর্বক হাসল নয়তো তুবা ওদের সন্দেহ করতে পারে ৷ তুবা হাসি থামিয়ে বলল,,,

ওহ হ্যাঁ সে কোথায় মানে তোমার শ্বাশুড়ি?

একজন আশির্ধো বৃদ্ধা মহিলা ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,, এই যে আমি ৷

তুবা উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল ৷ তারপর সবাই মিলে ডায়নিং টেবিলে চলে গেল ৷ তুবা ব্যতীত কেউ খেতে পারছে না,গলা দিয়ে খাবার নামতেই চাচ্ছে না ৷ তুবা নিজের খাওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধা মহিলা তুলি বেগমের প্লেটে এটা সেটা তুলে দিচ্ছে ৷ তুলি বেগম তুবার দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি দিয়ে ছেলে আর ছেলের বউয়ের দিকে অসহায় ভাবে তাকালেন যারাও একদৃষ্টিতে বিচলিত চিত্তে উনার দিকেই তাকিয়ে আছে ৷

খাওয়া দাওয়া শেষে তুবা নিজের দাদী মানে বউকে নিয়ে রুমে চলে গেল ৷ দুজনে বিছানায় পাশাপাশি বসে আছে ৷ তুবা কিছুক্ষণ পর তুলি বেগমের চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,

তোমার সৌন্দর্য এখনও আমাকে মুগ্ধ করে তুলি ৷ বৃদ্ধ বয়সে এসেও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি ৷

তুলি বেগম নিজের ফোকলা দাঁতগুলো বের করে জোরপূর্বক হাসলেন ৷ তুবা উনাকে টেনে নিজের বুকের উপর এনে বলল,,,

আজ আমার বুক তোমার বিছানা ৷ এখানেই নিদ্রায় তলিয়ে যাও বউ ৷ আজকে তোমাকে কাছ ছাড়া করব না আমি ৷

তুলি বেগম দারুন ফ্যাসাদে পড়ে গেলেন ৷ আহাম্মক হয়ে নিজের নাতনির বুকে মাথা দিয়ে রাখলেন যে কিনা নিজেকে উনার স্বামী বলে দাবি করছে ৷ কয়েক মূহুর্ত পর তুবা একটা কবিতা বলতে লাগল ৷ তা শুনে তুলি বেগম মনে মনে বললেন,,,,

হায় আল্লাহ এই কবিতা উনি আমাকে শোনাতেন এটা তুবা কিভাবে জানল? আল্লাহ মানছি আমি আমার স্বামীকে ছাড়া থাকতে পারি না ৷ উনার মৃ*ত্যুর পর পা*গলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু তাই বলে নাতনির মধ্যে নিজের স্বামীকে দেখতে চাইনি! একটা যুবতী মেয়েকে কিনা নিজের স্বামী হিসেবে মানতে হচ্ছে! জীবনের এই শেষকালে এসে কি মুসিবতে পড়লাম! ওগো শুনছেন দেখুন তুবা আপনার সতীন হয়েছে ৷

চলবে,,,,,

[পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার মানে একজন ব্যক্তি নিজেকে সম্পূর্ণ অন্য একজন ব্যক্তি মনে করে ৷ এখানে তুবা নিজেকে নিজের দাদু মনে করছে ৷ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here