#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৪
সকালের স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় ধুলো উড়িয়ে একটা কালো রঙের কার ছুটে চলেছে ৷ তুষার শান্ত ভঙিতে গাড়ি চালানোয় মনোনিবেশ করেছে ৷ শেহনাজ আড়চোখে বারবার ওর দিকেই তাকাচ্ছে ৷ পিছনের সিটে সাভাশ আর আয়েশা ভদ্রভাবে বসে আছে ৷ অবশ্য এর একটা কারন আছে সেটা হচ্ছে তানিয়া ওদের দুজনের মাঝখানে বসে আছে না হলে ওরা দুজন শান্ত থাকার মানুষ না ৷
সামনের দিকে দৃষ্টি অব্যাহত রেখেই তুষার শীতল গলায় আস্তে করে বলল,,, তুই কি খাস না? ধুপধাপ পড়ে যাওয়ার অভ্যাস কবে শেষ হবে তোর? ভ্যাবলি একটু খাওয়া দাওয়া কর ৷
শেহনাজ দাঁত কেলিয়ে বলল,,, খাবার না স্বামীর অভাবে আমার এই অবস্থা তুষার ভাই ৷
তুষার ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,,, তোর বলা এই কথাটা পিছনের তিনজনকে বলে দিই?
শেহনাজ চোখ বড় বড় করে তুষারের পেটে চিমটি কেটে বলল,,, খবরদার না ৷
তুষার ব্যা*থা পেয়ে হালকা আ*র্তনাদ করে উঠল ৷ ওর আ*র্তনাদে তানিয়া ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠল,,,
কি হয়েছে বাবা?
তুষার নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,, কিছু না মাম্মা ৷ আসলে একটা বড় সাইজের মশা কা*মড় দিয়েছিল ৷
তানিয়া আর কিছু বলল না ৷ কিন্তু সাভাশ হাই তুলে বলে উঠল,,, তোকে মশা কা*মড়ানোর চক্করে আবার আমাদের এ*ক্সিডেন্ট করিয়ে দিস না ৷ কাল তো দেখলাম ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ ছবির শেষের এ*ক্সিডেন্ট হওয়ার ক্লিপটা দেখছিস ৷ তোকে আমার একটু একটু সন্দেহ হচ্ছে তুষার ৷ এমনিতেই আমাদের ফ্যামিলিতে রোগের অভাব নেই তার উপর তুই আমাদের পটল তুলতে সাহায্য করিস না!
তুষার মুচকি হেসে বলল,,, রিল্যাক্স ভাই ৷ আমি থাকতে তোদের কোনো ক্ষ*তি হবে না ৷
আয়েশা তানিয়াকে ছাড়িয়ে সাভাশের মাথায় জোরে একটা থা*প্পড় দিয়ে বলল,, তোর মুখে কি বি*ষ ঢেলে দিয়েছিল বাবা মাম্মা? একটুও কি ভালো কথা বের হয় না?
সাভাশ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে কটমট দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,, মাফ করে দিলাম যাহ ৷
তোর মাফ কে চেয়েছে?
তানিয়া গলা উচিয়ে বলল,,, আবারও শুরু করলে তোমরা? সিনুকে ফোন দিব? নাকি পরকালে গিয়ে তোমাদের হিসাব নিব? কোনটা?
সাভাশ আর আয়েশা সমস্বরে বলল,, একটা অপশনও পছন্দ হয়নি ছোট মা ৷
ওদের অবস্থা দেখে শেহনাজ হাসতে লাগল ৷ তুষার এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,, হাসি বাদ দিয়ে তুবার সাথে কিভাবে আচরণ করবি সেটা ভাব ভ্যাবলি ৷
শেহনাজ হাসি থামিয়ে প্রচন্ড ভাব নিয়ে বলল,,, আমি ফুললি প্রিপায়ার্ড ৷ এবার আমার অভিনয় দেখে বাহবা না দিয়ে পারবেন না তুষার ভাই মাইন্ড ইট ৷
দেখা যাক কি করিস!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
ওরা এখনও আসছে না কেন? বুড়ো হয়েছি জন্য কি আমার কথার কোনো মূল্য নেই? তোমরা আমাকে একটুও ভালোবাসো না ৷
তুবার আ*ক্ষেপ নিয়ে বলা কথাটা শুনে মাঝবয়সী দম্পতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে একে অপরের দিকে তাকাল ৷ সকাল থেকে কম জ্বা*লাতন স*হ্য করতে হয়নি ওদের! একটার পর একটা বিষয় সামলাতে সামলাতে ওরা নাজেহাল ৷ এখন আবার নিজের মেয়ে মানে ফুফু, তানিয়াকে দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ৷
তুবা আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিংবেল বেজে উঠল ৷ রাইশা হাসি মুখে ছুটে দরজা খুলতে চলে গেল ৷ দরজা খুলে পরিচিত আপন মুখগুলো দেখে রাইশা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে বলল,,,
এবার তোমরা সামলাও ৷ আমরা আর পারছি না ৷
তানিয়া এগিয়ে এসে রাইশাকে জরিয়ে ধরে বলল,, টেনশন করিস না ৷ আমরা থাকতে তুবার কিছু হতে দিব না ৷
ওদের সকলকে পিছনে ঠেলে শেহনাজ তুবার মুখোমুখি গিয়ে বুকে হাত রেখে নাটকীয়ভাবে বলতে লাগল,,,
ওও নানু, আমার নানু তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমার কি যে অ*সহ্য লাগছিল নানু ইউ কান্ট ইমাজিন ৷ তোমাকে এক পলক দেখার জন্য তাই তো ছুটে এসেছি সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে ৷
সবাই হতভম্ভ হয়ে শেহনাজের দিকে তাকাল ৷ তুষার বিরবির করে বলল,,, সত্যিই বাহবা পাওয়ার দাবিদার! অভার এক্টিংয়ের দোকান!
নিজের ডায়ালগ শেষ করে শেহনাজ দুহাত মেলে ছুটে তুবার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ৷ কিন্তু সবাইকে দ্বিতীয় দফায় অবাক করে দিয়ে তুবার সম্মুখে গিয়ে মুখ থুবড়ে চিৎপাটাং হয়ে পড়ে গেল শেহনাজ ৷ নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে ও লজ্জিত ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকাল যারা শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ওকে মনে মনে ধি*ক্কার জানাচ্ছে ৷
তুবা নিজের আসন থেকে উঠে শেহনাজকে গিয়ে তোলার আগেই আয়েশা আর সাভাশ দৌঁড়ে এসে বোনকে আগলে নিল ৷ ওরা একে অপরের সাথে ঝ*গড়া করলেও নিজেদের ছোট বোনকে অসম্ভব ভালোবাসে ৷ সাভাশ শেহনাজের গালে হাত দিয়ে চিন্তিত স্বরে বলল,,
ঠিক আছিস বোনু? ব্যা’থা পেয়েছিস? একটু আগেই পড়ে ব্যা*থা পেলি আবারও পড়লি? একটু সাবধানে চলতে পারিস না?
ভাইয়ের জবাব দেওয়ার আগেই আয়েশা দ্বিগুন উদ্বিগ্ন হয়ে ওর হাত পা মুখ দেখতে দেখতে বলল,,, দেখি কোথায় ব্যা*থা পেয়েছিস বোনু?
শেহনাজ সামান্য হেসে বলল,,, আমি ঠিক আছি ভাইয়া, আপু ৷ কিছু হয়নি ৷ এই সামান্য মেঝে আমাকে ব্যা*থা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না ৷ আমাকে ব্যা*থা দেওয়ার জন্য এভারেস্ট পাহাড় দরকার ৷
সাভাশ শেহনাজের গাল টেনে দিয়ে বলল,, পাগলি!
তারপর দুজনে মিলে শেহনাজকে মেঝে থেকে ওঠাল ৷ শেহনাজ বোরকা টা ঠিক করে তুবার পাশে গিয়ে বসে পড়ল ৷ বাকিরাও হাঁফ ছেড়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে বসে পড়ল ৷ তুষার শেহনাজের কাছাকাছি গিয়ে টিটকারি দিয়ে ফিসফিস করে বলল,,,
তুই ব্যা*থা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না ৷ আমার তো মনে হচ্ছে তোর ষাঁড়ের মতো চেহারার চাপে পড়ে মেঝেটা আধম*রা হয়ে গেছে ৷
শেহনাজ চোখ পাকিয়ে বলল,,, তুষার ভাই!
তুষার ওর কথায় কর্ণপাত না করে তুলি বেগমের দিকে এগিয়ে গেল কথা বলার জন্য ৷ ওদিকে এতোক্ষণ শেহনাজের সাথে ভালো আচরণ করলেও আয়েশা আর সাভাশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটল ৷
তুবা হাসি হাসি মুখে সবার দিকে তাকাচ্ছে ৷ সবাইকে একসাথে দেখে ও যে বেশ খুশি হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ৷ ক্ষণকাল বাদে ও তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,,,
সিনু মা আসেনি কেন? আর জামাইকে নিয়ে আসিস নি কেন? সাজিদ বাবাকেও দেখছি না ৷
তানিয়া বলে উঠল,, তুবা মামনি…
সবাই চোখ বড় বড় করে তাকাতেই তানিয়া গলা খাকারি দিয়ে নিজের ভুল শুধরে নিয়ে বলল,,,
আসলে বাবা উনি আর সাজিদ ভাইয়া ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ নিয়ে একটু ঝামেলায় আছেন ৷ ঝামেলা মেটানোর জন্য একটু শহরের বাইরে গিয়েছে ৷ আর সিনু বাড়িতে আছে , পুরো বাড়ি ফাঁকা রেখে আসা ঠিক হতো না তাই ৷
তুবা হতাশ কন্ঠে বলল,, আজ তোর শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি বেঁচে থাকলে বাড়ি আর ফাঁকা থাকত না ৷
সবার মন খারাপ হয়ে গেল ৷ তানিয়ার চোখে তো পানি চলে আসল ৷ একে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মা*রা গেছে তার উপর নিজের বাবাও বেঁচে নেই আর ৷ তুষার মায়ের পাশে গিয়ে চোখের পানি মুছে দিল ৷ তানিয়া চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকাল ৷ তুষার চোখের ইশারায় নিজের মাম্মাকে সান্ত্বনা দিল ৷
গুমোট পরিবেশ মুহূর্তেই অস্থির হয়ে উঠল তুবার করা প্রশ্নে ,, আচ্ছা তুবাকে কোথাও দেখছি না কেন?
সবাই চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল ৷ সবার হয়ে সাভাশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,,,
বিয়ে দিয়ে দিয়েছি ওকে সুদূর পাহাড়ী এলাকায় ৷ ওকে ছাড়া ওর স্বামী এক মুহূর্তও থাকতে পারে না তাই ও শ্বশুড়বাড়িতেই থাকে ৷ সারাদিন স্বামীর সাথে পাহাড়ে চা বাগানে চা চাষ করে আর মাসে মাসে আমাদের কিছু পাঠিয়ে দেয় ৷ তোমার নাত জামাই ভালোই উদার নানু ৷
চলবে,,,,,