অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ৩৩.

0
2

[পর্বটিতে অপ্রীতিকর ভাষা রয়েছে। এমনকি পুরো গল্পেই এমন অসংখ্য স্ল্যাং এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রয়েছে, পড়ার আগে নিজেদের তৈরি করে নেবেন সবকিছু মেনে নিতে পারার মতো করে। নয়ত না পড়ার অনুরোধ রইল। ]

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৩৩.

গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কবীরকে জিজ্ঞেস করল, “জামাই জামাই লাগতেছে আমায়?ʼʼ

কবীর মুচকি হাসল। রাবেয়া দরজা খুলতেই সালাম দেয় জয়, “ভালো আছেন, আন্টি?ʼʼ জুতো পরেই ঢুকে পড়ল ভেতরে।

রাবেয়া কথা বললেন না। তার মুখে কালবৈশাখীর মেঘ জমেছে। জয় ঢুকল। হাতের মিষ্টিগুলো হাতে না দিয়ে নিজেই ভেতরে এগিয়ে টেবিলের ওপর রাখল। কমপক্ষে পাঁচ-সাত কিলো মিষ্টি। পেছন ফিরে ঠোঁট কামড়ে হাসল, “সবাই স্বার্থপর, দেখেছেন? স্বার্থের কাছে সম্পর্ক, স্নেহ, আদর, আচরণসহ সব বদলে যায়, জীবনও। এর আগেরবার এসেছিলাম, আপনি আপনাকে ‘আম্মাʼ ডাকতে বলেছিলেন। কারণ আমি এতিম, খুব মায়া হয়েছিল আপনার। এর মাঝে আপনার কিছু ক্ষতি করেছি, আজ জবাবই দিচ্ছেন না। সুযোগ হলে জুতো তুলতেন আমার মুখে। অথচ আজও কিন্তু আমি সেই এতিমই আছি, নাকি বাপ মা বেঁচে উঠেছে আমার? এমন কেউ নেই দুনিয়ায় যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসে। এইজন্য আমার মানুষকে ভালো লাগে, তারা সচেতন খুব, বোকা না। আপনাকেও ভালো লাগছে।ʼʼ

বিকৃত মস্তিষ্কের জয়। তার যুক্তি ও ধারণা মানুষ সমাজে তুলে ধরার উপযোগী নয়। যার কাছে পাপকে পাপ মনে হয়না, সে পাপ এবং পাপীর ঊর্ধ্বে। আশপাশ দেখে জিজ্ঞেস করল, “অন্তিক আছে?ʼʼ

রাবেয়া কথা বললেন না। উনাক দেখে যতটা নিরুপায় লাগছিল, তার চেয়ে বেশি দৃশ্যমান চোখের তারায় জয়ের জন্য ঘৃণা।

জয় ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাতদুটো মাথার ওপরে তুলে শরীর বাঁকালো, “আচ্ছা, আপনিই ওকে জানিয়ে দেবেন। আমাকে আবার খুব ঘেন্না-টেন্না করে নিশ্চয়ই! আমি আবার আমার হেটার্সদের সামনে বেশি ঘুরঘুর করি। তখন মানুষ কটমটায়, কিন্তু সাহসে জোটে না কিছু বলার। তখন নিজের শক্তিকে অনুভব করি। তখন আবার একবার বুঝি, আমি শক্তিশালী। ভালো না ব্যাপারটা?ʼʼ

অসভ্যর মতো অল্প হেসে সিরিয়াস হলো, ”কাহিনি হচ্ছে, আমাদের বাড়ির বউয়েরা বাপের বাড়ি পড়ে থাকেনা। শুক্রবার আরমিণকে তুলে নিতে আসব। এখানে তেমন কিছু করতে হবেনা। খুব বেশি লোক আসবে না বরযাত্রী হয়ে। যাদের না বললেই না, টুকটাক ভাই-ব্রাদার আসবে কয়েকজন। বিশ-পঁচিশ জনের মতো। আপনাদের কোনো ঝামেলা করতে হবেনা। বৃহস্পতিবার বাজার পাঠিয়ে দেব। সকালে বাবুর্চি চলে আসবে। টুকটাক সহযোগীতা করলে ওরাই সব করে ফেলবে।ʼʼ

রাবেয়ার চোখে-মুখের বিরূপতা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেল ভেতরের দিকে। ভেতরে ঢুকতেই থমকে দাঁড়াল। পলাশের কাছ থেকে ফিরে একগাদা কাপড়-চোপড় ভাঁজ করতে লেগেছে অন্তূ। পেছন ফিরে ছিল। জয় ঠোঁটদুটো ফাঁক করে একটা ঢোক গিলল। নিয়ন্ত্রণহীন চোখদুটো মাথা থেকে পা অবধি স্ক্যান করে অন্তূকে। ঠোঁট কাঁমড়ে সামান্য হেসে ডাকল, “ঘরওয়ালি!ʼʼ

অন্তূ পিছনে তাকায়। নির্বিকার, নির্লিপ্ত চাহনি। পুনরায় নিজের কাছে মনোযোগ দেয়। জয় হেলেদুলে হেঁটে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। ডাকটা শনতে এমন লাগে, “আরমেইণ!ʼʼ
অন্তূ জবাব দেয়না। গলা উঁচিয়ে বলে জয়, “সেদিন ঢোকার সময় তেমন একটা খেয়াল করিনাই। এইসব পড়ে থাকা জমি তোমার বাপের নাকি? হলে অন্ততপক্ষে দত্তরটা ভালো পাবো। তোমাকে বিয়ে করার কিছু তো বেনিফিট হবে!ʼʼ

ফোন ভাইব্রেট হচ্ছিল, নাক-মুখ কুঁচকে রিসিভ করল, “ক সম্বন্ধির পোলা! তোর বউ মরার সংবাদ দিলে একটা ললিপপ খাওয়াবো।ʼʼ

রাহাত মিনমিন করে বলল, “ভাই, আমার তো বউ নাই। কিন্তু আপনার বউ মানে ভাবীজানরে নিয়া কিছু বলার জন্য কল দিছি।ʼʼ

জয় জবাব না দিয়ে শিষ বাজালো দু’বার।

-“আপনি কি গেছেন শ্বশুরবাড়ি? ভাবী বাসায় পৌছাইছে?ʼʼ

জয় চুপচাপ কলটা কেটে দিলো। রুমে এসে অন্তূর বিছানার ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল জুতো পরা অবস্থায়। পাশেই বসে অন্তূ মনোযোগ দিয়ে কাপড় ভাঁজ করছে। চোখদুটো বুজে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় গেছিলে?ʼʼ

-“ভাবীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম।ʼʼ

-“আর কোথাও যাওনি কেন?ʼʼ

-“পলাশের সাথে কফিশপে গেছিলাম।ʼʼ

জয় চোখ বুজেই হাসল নিঃশব্দে। হাসিমুখে বলল, “কেন? সেদিন তোমায় মারা খাওয়া থেকে আমি বাঁচিয়েছি বলে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না? দড়ি ছিঁড়ে মারা খেতে গেছিলে? নাকি পলাশ যা করতে গিয়েও ছেড়ে দিয়েছিল সেদিন, তার বাকিটুকু উপভোগ করতে গেছিলে?ʼʼ

এমন একটা অশিষ্ট, নোংরা কথায়ও বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হলো না অন্তূর মাঝে। যেন সে অতি-স্বাভাবিক কিছুই শুনছে মাত্র। অল্প হাসল, “সবার চরিত্র তো আর আপনার মতো ময়লা, দুর্গন্ধে জড়ানো না। আপনার আর আমার কোনো তুলনা হয়? আপনি হলেন নর্দমায় জন্মানো পতঙ্গ, আমি মনেহয় অত খারাপ না। ঠিক না?ʼʼ

জয় সম্মতি জানালো, “ঠিক। তবে একদিনেই আমার সব পড়ে ফেলবে? নিজেকে লিখতে বহুবছর লাগিয়েছি আমি। একদিনে গড়িনি নিজেকে, অথচ তুমি আয়ত্ত্ব খুব দ্রুত করে ফেলছো আমায়। নট ফেয়ার, ঘরওয়ালি!ʼʼ

অন্তূর মন বিদ্রোহ করে ওঠে, ‘আপনার মতো নিচু মানের উপন্যাস পড়ার আমার রুচি কোথায়, জয় আমির?ʼ কথাগুলো চেপে জিজ্ঞেস করল, “মহাভারত পড়েছেন?ʼʼ

-“পুরোটা পড়িনি।ʼʼ

-“শকুনি মামা নিশ্চয়ই আপনার খুব প্রিয়?ʼʼ

-“দুর্যোধনকেও ভালো লেগেছিল।ʼʼ

-“স্বাভাবিক।ʼʼ

-“হু, আসল কথা বলো।ʼʼ

-“শকুনি মামা বলেছিলেন, ‘সুগন্ধ, দুর্গন্ধ এবং মানুষের স্বভাব কখনও লুকায়িত থাকেনা।ʼ অর্থাৎ এগুলো আবিষ্কার করার জন্য বেশি খাটুনি করার প্রয়োজন নেই। যার কাছে যা নেই, সে তার মর্যাদা বা কুফল কিছুই বোঝেনা। একজন সম্মানী ব্যক্তি আরেকজনের সম্মানকে খেলার বস্তু মনে করবে কোন দুঃখে? যার চরিত্র ভালো, সে অন্যকারও চরিত্রকে বাজারে তুলতে পারে?ʼʼ

জয় মাথা নাড়ল, “পারেনা। কথা ঠিক, আমার সম্মান নেই, আমি তোর সম্মানের মর্যাদা বুঝিনা, ভবিষ্যতে বোঝার কোনো সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু এখন তোর ভণ্ডামি তোর কাছে রাখ। পলাশ, মুস্তাকিনের সাথে নির্জনে সাক্ষাৎ করে আমার সামনে তোর সন্ন্যাসী সাজার চেষ্টা খুবই ভালো লাগছে আমার। তবুও এই ধরণের বালের প্যাচাল এখানেই থামা, নয়ত বালিশ চাপা দিয়ে খু-ন করে রেখে যাব। তোর লেকচার আমার কোনোকালেই ভালো লাগেনা। বউ মারা ভালো কাজ, কিন্তু ভালো কাজ আমি করিনা। মারার হলে ঠুকঠাক মেরে ফেলে রাখা কোনো কাজের কথা না। মারলে কোনোদিন জানটা একটানে বের করে নেব। যা বলতে এসেছি, শোন্।ʼʼ

অন্তূ ভাঁজ করা কাপড় র‌্যাকে সাজিয়ে রাখার জন্য উঠে দাঁড়ায়। জয় আবার টান হয়ে শুয়ে বলল, “শুক্রবার দিন লোক আসবে ও বাড়ি থেকে। মার্কেট করতে হবে। ভাবী বলল, আজকাল নাকি মার্কেট মেয়েরা নিজেরা করে, তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে মার্কেটে। তাছাড়া মা-গী মাইনষের বাজার জীবনে করিনাই, ওসব বালছাল আমি কিনতে পারব না। কাল সকালে তৈরি থেকো।ʼʼ

-“আপনাদের পছন্দ মতো কিনলেই চলবে। ফ্যাশন নিয়ে আমার কোনো সেন্সিটিভিটি নেই।ʼʼ

জয় খুঁটিয়ে দেখে অন্তূকে। নারীদেহের প্রতিটা ভাঁজে জয়ের পৌরুষ নজর পরিভ্রমন করে শেষ অবধি থামে অন্তূর কাধ থেকে বুক অবধি। নিঃশ্বাস ভারী হয়। জোরে করে শ্বাস ফেলে ঘাঁড় ঘুরায় অন্যদিকে। তখনই অন্তূ বলে ওঠে, “কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।ʼʼ

জয় বালিশটা খাটের বক্সের সাথে হেলান দিয়ে তাতে পিঠ এলিয়ে দিয়ে বলল, “এমন ভাব করছো, যেন আমি সব শর্ত মঞ্জুর করতে চেয়ে তোমায় ও বাড়ি নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিয়েছি? বিয়ে হয়েছে, তুমি দায়বদ্ধ। কী শর্ত দেবে? সিনেমার হিরোদের মতো আলাদা শোয়াবে?ʼʼ

অন্তূ কথা বলল না। জয় খ্যাকখ্যাক করে উঠল, “নাটক কোরো না, কী চাও বলো।ʼʼ আস্তে করে উঠে পা ঝুলিয়ে মাথা নত করে বসে, দু’হাতের তালু বিছানায় ঠেকালো।

-“কুড়িগ্রামে আব্বুর কিছু পৈত্রিক জমি আছে। মেজো চাচা সেটা দখল করে আছে, সেখানে নিজের খামার দিয়েছে। পলাশের পাওনা ছাড়াও আব্বুর বেশ কিছু ঋণ আছে। প্রতিদিন বাড়ি বয়ে লোক আসছে। আব্বু যাওয়ার পর ওরা ভয় পাচ্ছে, আমরা হয়ত টাকা আর দেব না। তাগাদা বেড়েছে। আপনি জমিটা কাকার কাছ থেকে দখল নিয়ে সেটা বিক্রি করে টাকা এনে দেবেন। খামার পরিস্কার না হলে ক্রেতা রেজিস্ট্রিতে যাবেনা।ʼʼ

জয় কিছুটা সময় নিয়ে মাথা তুলল, চোখা স্বরে বলল “আমাকে তোমার দখলদার মনেহয়?ʼʼ

অন্তূ অবাক হবার ভান করে সামান্য হাসল, “আপনার মনে হয় না? শুধু আমার কেন, সবারই মনেহয়। রাজনীতিবিদদের কাজ কী? দখল করা। সেটা হোক ক্ষমতা, সম্পত্তি, মানুষের অধিকার অথবা জনসাধারণের জীবনের সুখ। আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব— দখলদারী। তবুও লোকে আপনাকে পছন্দ করে? হতাশ আমি।ʼʼ

জয় বাঁকা হেসে ঘাঁড় ঘুরালো, “কারও পছন্দের হতে আসিনি দুনিয়ায়। বেঁচে থাকার জন্য এসেছি, নিজের মতো করে বাঁচবো।ʼʼ বেশ শান্ত দেখালো জয়কে।

-“কাল মঙ্গলবার। সকালের গাড়িতে কুড়িগ্রাম পৌঁছাতে বেলা সাড়ে এগারোটার মতো বাজবে। কাল রেজিস্ট্রি না হলে আগামীপরশু—বুধবার হবে। টাকাটা এনে হিসেব করে নিজহাতে পলাশকে দিয়ে আসবেন। পলাশের পাওনা–সুদসহ বারোলক্ষ দাবী করেছে ও। ওখানে জমি আব্বুর চার কাঠার বেশি। কমবেশি লাখ বিশেক টাকা আসতে পারে। বুধবারের মাঝে এই কাজগুলো শেষ করে ফেলুন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানের কাজের জন্য রইল।ʼʼ

-“আদেশ করছো?ʼʼ

-“আপনার মনে হচ্ছে?ʼʼ

-“না।ʼʼ

অন্তূ হাসল, “তাহলে করছি না।ʼʼ

-“তুমি যাবেনা কেন সাথে?ʼʼ

-“আপনি যাচ্ছেন তো। চলবে।ʼʼ

-“ভরসা করছো?ʼʼ

-“আপনার মনে হচ্ছে?ʼʼ

-“না।ʼʼ

-“তাহলে করছি না।ʼʼ

জয় মৃদু ধমকে উঠল, “আমি একা গিয়ে কার বাল ছিঁড়বো ওখানে? কাউকে চিনি আমি?ʼʼ

-“কল করব আমি। বলে দেব সব। আর এটুকু যদি সামলে নিতে না পারেন, তাহলে আর মাস্তান হওয়ার ফায়দা কী?ʼʼ

অন্তূর সূক্ষ্ণ অপমানে জয় ধৈর্য্যহারা হয়ে উঠল। এক চোটে বসা থেকে উঠে অন্তূর পেছনের চুলগুলো মুঠো করে ধরে হিঁচড়ে পিছনে ঠেলে নিয়ে গেল। তাতে সবে গুছিয়ে রাখা কাপড়ের র‌্যাকটা উল্টে পড়ে যায়। অন্তূ পিঠটা সজোরে ধাক্কা খায় দেয়ালে। পিঠে আঘাত পেতেই অন্তূ থাবা দিয়ে খাঁমচে ধরে জয়ের কলার। বুকের ওপর আঁচড় লেগে চামড়া উঠে যায় জয়ের বুকের। অন্তূ ছাড়েনা। মাংসাশীর মতো খাবলে ধরে চিবিয়ে বলে, “মাস্তান নন আপনি, আপনি কুকুর। ভুলটা শুধরে নিয়েছি। এবার ছাড়ুন। মানুষের ভুল হয়ে যেতেই পারে। মাস্তান তো ভালোই, আপনি কি আর তেমন? রাস্তায় রাস্তায় কিছু কালো কুকরেরা ঘুরে বেড়ায় না? মানুষ দেখলেই হামলে পড়ে। আপনি তাই।ʼʼ

জয় এক অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেখালো। ও বোধহয় শুনতে পেল না অন্তূর ভৎসনাগুলো। পাছড়াপাছড়িতে অন্তূর ওড়না পড়ে যায় একপাশ থেকে। এর আগেও দেখা হয়েছে এভাবে অন্তূকে। তখন যে চাহিদা জাগেনি, তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করেনি, এমন নয়। পরিস্থিতির প্রতিবন্ধকতায় চাপা পড়েছে সেসব। আজ হলো না, ক্রমশ তীব্র পৌরুষ দেহটা পাগলামী শুরু করল জয়ের। বুকের আঁচড়ে যখন জ্বলন উঠেছে, জয়ের শরীরটা আচমকাই অন্য চাহিদায় মনোযোগ পেল। অন্তূ সুন্দরী, এত কাছ থেকে আরও বেশি লাবণ্যময়ী লাগছিল। ক্ষুধার্ত জয়ের এত কাছে, হাতের থাবায় মেয়েটাকে পেয়ে, এত কাছ থেকে ছুঁয়ে থেকে জয়ের ক্ষুধাটা জেগে উঠল। সাতাশ বছরের যুবক ছেলেটার সামনে অন্তূর ক্ষিপ্ত নিঃশ্বাসে উঠানামা করা বুকটা নেশাদ্রব্যের ন্যায় লাগল। জয়ের নিঃশ্বাস ভারী হলো, পশমে ঢাকা বুকের ভেতরটায় আলোড়ন উঠল। অন্তূর চুলে থাকা হাতটা শিথিল করে অপর হাত দিয়ে অন্তূর একপাশে ঝুলে থাকা ওড়নাটা একটু একটু করে টেনে নিয়ে হাতের মুঠোয় গোছাতে শুরু করল।

অন্তূ থমকে যায়। জয় অন্যমনস্কভাবে অদ্ভুত স্বরে বেহায়ার মতো আবদার করে, “একটা চুমু খাই তোমার ঠোঁটে?ʼʼ

অন্তূকে প্রতিরোধ করার সময়টুকু দেয়না জয়। বিরবির করে ওঠে, “মেয়ে মানুষ জীবনে স্বীকার করবে না।ʼʼ

দাড়িগোফের মুখটা অন্তূর ঠোঁটে লাগায়। শক্ত একটা চুমু। অন্তূর ওড়নাটা তখনও জয়ের হাতে পিষে যাচ্ছে। যতটা জোর জয় সুতোর ওড়নাতে দিচ্ছিল, ঠিক ততটা হিংস্র হয়ে ওঠে তার ঠোঁট, এবং অপর হাতটা। অন্তূ জয়কে বাঁধা দিতে হাত তুলতেই ওড়নাসহ হাতটা চেপে ধরে অন্তূর চোয়ালে অপর হাত গেড়ে দেয়। অন্তূর হাতের কব্জির নিচের র-ক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে চায়। জয়ের হাতের রিস্টলেটের আঁচড়ে নরম হাতের চামড়া বিদীর্ণ হয়।

এভাবে কেটে যায় মিনিটখানেক। জয় সরে দাঁড়ায়। হাঁপিয়ে উঠার মতো জোরে জোরে বিক্ষিপ্ত শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে, “এবার কী বলবে? ধ-র্ষ-ক? চলবে, তাই বলো।ʼʼ

আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। অন্তূর ওড়নাটা হাতের মুঠোয় পেঁচিয়ে বেরিয়ে যায় ঘরের বাইরে। অন্তূ শান্তভাবে জয়ের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে থুহ করে দু’বার থুতু ফেলে মেঝেতে। হাত দিয়ে ঠোঁট ঘঁষে। আবার থুতু ফেলে। ওপরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসে, “আমার স্বামী এই কুকুরটা। এভাবেই সহ্য করতে হবে প্রতিবার যখন কাছে আসবে? কী বিধান আপনার? মানা করলে নাকি আপনার ফেরেশতারা অভিশাপ দেয়! আপনি মহান, মালিক আমার!ʼʼ


অন্তিক আবার একটা ছোট্ট দোকানের খোঁজ করেছে। মানুষের ব্যক্তিত্ব নষ্ট হতে বাধ্যতামূলক একবার ব্যক্তিত্বহীনের মতো কাজ করাই যথেষ্ট। অন্তিকের জন্য তার পরিবারের সাথে যা হয়েছে, তা সে ভুলতে পারেনা। সব ভুলে নিজেকে সংসারে সক্রিয় করার মনোবলটুকু নিঃশেষ হয়ে গেছে কোথাও। রাতে মার্জিয়া বলল, জয় আমির এসেছিল। সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। যেভাবেই হোক বিয়ে হয়ে গেছে, আব্বু নিজে বিয়ে দিয়ে গেছে। আর বলার কী থাকে?

অন্তিকের কাছে জয় আমির, নর্দমার পঁচা নাপাক ময়লা। যা ঘৃণ্য, বর্জনীয়। তার কারণে অন্তূর সাথে যা হয়েছে তা ছিল অপরিকল্পিত। অন্তূর জন্য কলিজা ফাটে, অথচ সান্ত্বণা দেবার ভাষা নেই। আবার মনেহয়, ওর বোন এমন দূর্বল নয়। অন্তূর কাছে যুক্তি, ধৈর্য্য, কথার বাণ, প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের সাহস সব আছে।

অন্তূ বারান্দায় এককাপ কড়া চা আব্বুর বসার চেয়ারখানাতে রেখে আব্বুকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি চা-তে চিনি খাও না কেন, বলো? পানসে লাগে না? আমি তো জীবনে তোমার চা মুখেও দিতে পারিনা।ʼʼ

আমজাদ সাহেব বেতের তৈরি রকিং চেয়ারে বসা। চেয়ারটা তিনি যেদিন শখ করে বানিয়ে আনলেন, কী যে খুশি লেগে ছিল মুখে-চোখে। গাম্ভীর্য্যের পেছনে এক সৌখিন মানুষ ছিলেন। অন্তূ চেয়ারে হেলান দিয়ে আব্বুর দিকে চেয়ে থাকে। আজ কোনো কথা বলছে না, জবাব দিচ্ছে না। অন্তূ ছটফট করে উঠল, “কী হয়েছে তোমার, আব্বু? কথা বলছো না কেন? তোমার অভিমান সহ্য করার সাধ্যি আমার নেই। তোমরা আর কত কী সহ্য করাবে আমাকে?ʼʼ

অনেকক্ষণ পর বললেন আমজাদ সাহেব, “তুই চলে যাচ্ছিস, অন্তূ? ওই বাড়ি কিন্তু যাব না, আমি। তুই আসিস রোজ, আমি এখানেই থাকব।ʼʼ

অন্তূ চমকে উঠল। একথা কেন মাথায় আসছে? অন্তিক এসে বসে আব্বুর চেয়ারটায়। আব্বুর অবয়বটা মিলিয়ে যায়। অন্তূ চারদিকে তাকায় আকুল হয়ে। অন্তিক জিজ্ঞেস করল, “চা-টা আমি খাবো? একটু চিনি এনে দিবি?ʼʼ

দুই ভাইবোন অনেকক্ষণ যাবৎ চেয়ে থাকে একে অপরের চোখের দিকে, ঘোর নীরবতায় কাটে ততক্ষণ। অন্তূ পরে উঠে দাঁড়ায়। ছোট চিনির কৌটা এনে দুই চামচ চিনি দেয় অন্তিকের কাপে। অন্তিক যেন লজ্জিত বোধকে পাত্তা না দিয়ে বলে, “চা আব্বুর জন্য বানিয়েছিলি, তাই তো? বড় ভাই বাপের মতো হয়। চা-টা খাওয়া খুব বেশি অসঙ্গতি হবেনা। আমি তোর তেমন ভাই নই অবশ্যি! ঠিক বলেছি?ʼʼ

-“এমন ভং ধরিস কথাবার্তায়, যেন খুব শিক্ষিত আর বিজ্ঞ তুই। অনার্স পাশ না-ই করতে বরের মালা গলায় তুলেছিস। আমার সামনে বুজর্গী কথাবার্তা বলতে আসবি না। বিরক্ত লাগে।ʼʼ

অন্তূর ঠ্যাস মারা কথাতেও অন্তিক হেসে ফেলল, “পাপ আর বিদ্যুৎ প্রথমে এদের নিজেদের বাপকে মারে, শুনেছি। আমার পাপও ছাড়েনি আমায়।ʼʼ

অনেকক্ষণ মাথা ঝুঁকিয়ে চুপচাপ বসে থেকে বলে অন্তিক, “পলাশ কী করেছিল তোর সাথে?ʼʼ

-“পলাশের ব্যাপারে কিছু জানিস? এমন কিছু যা জানা উচিত আমার?ʼʼ প্রসঙ্গ এড়িয়ে নিজে প্রশ্ন করল অন্তূ।

সকাল এগারোটার দিকে অন্তিককে সাথে নিয়ে অন্তূ রওনা হয় মুস্তাকিনের ফ্লাটের উদ্দেশ্যে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো হাতে খোঁপা করার মুহুর্তে রাবেয়া রুষ্ট কণ্ঠে বললেন, “বোরকা ছাড়ছিস? এমনে চলাফেরা করে মেয়েমানুষ? জাহান্নামী হয়ে গেছিস, তুই? আল্লাহরে ভয় লাগেনা? বেপর্দা, বেহায়াদের মতোন চলাফেরা করতে শিখছিস?ʼʼ

অন্তূ খোঁপাতে ছোট্ট ক্লিপ লাগাতে লাগাতে বলে, “কীসের পর্দার কথা বলছো, আম্মা? বেশ্যার শরীরে বোরকার পর্দা? যে মেয়ে পুরুষ ঘরে ঢোকায়, তার পর্দা?ʼʼ মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়ে অন্তূ, “মূর্খ তুমি। মনের সান্ত্বণায় পর্দা করে রাস্তায় বের হয়ে মানুষের যে নোংরা ভাষাগুলো শুনব, তাতে পাপ বাড়বে, আম্মা। কী বলো তো, মানুষের আসল পোশাক সম্মান। তা আছে আমার? কাপড়ের পোশাকে শরীর ঢাকলেই কী আর না ঢাকলেই বা কী? নেহাত সভ্যতার খাতিরে পোশাক পরা। যখন সম্মানের ভূষন দেহ থেকে খুলে পড়ে গেছে! কীসের পোশাক গায়ে চড়াবো? লোক দেখানো হয়ে যাবেনা? আর ওটাকে ‘রিয়াʼ বলে। যা হারাম। ওষুধ খেয়ে নিও, বের হচ্ছি।ʼʼ

মুস্তাকিন থাকে দিনাজপুর বাঁশেরহাটের ঢাকাদক্ষিন রোডের মিসরা উদ্দীন সরণীতে। ফ্লাট বলতে ছয় তলা বাড়ির এক ইউনিট। মুস্তাকিনের ঠোঁটের কোণে সেই মুচকি হাসি ঝিকমিক করছিল। নিজের হাতে নাশতা বানিয়ে আনলো। সোফায় বসে বলল, “কী ব্যাপার? রাস্তা ভুল করে?ʼʼ

-“প্রয়োজনে।ʼʼ

মুস্তাকিন হাসল, “প্রয়োজন ছাড়া মানুষ নিঃশ্বাসও ফেলতো না। নেহাত বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মিনিটে কমবেশি বিশবার শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলে। কী প্রয়োজনে এসেছেন?ʼʼ

চুপচাপ তাকিয়ে রইল অন্তূ। মুস্তাকিনকে ওর কোনোদিন সাধারণ কেউ মনে হয়নি। কিছু একটা আছে লোকটার মাঝে, কিছু একটা! সেই কিছু একটা যে কী, তা আন্দাজ করা দুঃসাধ্য যেন। লোকটা যেকোনো পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক রকমের শান্ত থাকার বিশেষ গুণসম্পন্ন।
মুস্তাকিন হাসল, “উকিল হবার আগেই যদি এভাবে স্ক্যান করেন, এনার্জি লস, ম্যাডাম! এই জহুরী দৃষ্টিকোণকে বাঁচিয়ে রাখুন, আপনার ভবিষ্যত পেশায় অতি প্রয়োজনীয়। এখনই খরচা করবেন না অপ্রয়োজনে।ʼʼ লোকটা হাসে বেশি।

-“তো আপনি বলছেন, আপনাকে নিরীক্ষণ করার প্রয়োজন নেই? নিজেকে খাঁটি বলছেন?ʼʼ

ফের হেসে ফেলল মুস্তাকিন, “খাঁটি? সে তো স্বর্ণও হয়না। চব্বিশ ক্যারেটকে লোকে খাঁটি স্বর্ণ বলে জানে। অথচ এটা জানেনা, স্বর্ণে খাদ না মেশালে গহনা তৈরী করা যায়না। স্বর্ণ নরম ধাতু, ওতে খাদ না মেলালে তা দিয়ে অলংকার গড়া যায়না, গড়লেও তা মজবুত হয়না। আর খাঁদ মেশানো স্বর্ণ কখনও চব্বিশ ক্যারেট হয়না।ʼʼ

অন্তূ চোখে হাসল, “অর্থাৎ, খাঁটি মানুষেরা দূর্বল, তাই না? আমিও বুঝি আজকাল।ʼʼ

-“আমি একটু ব্যাকডেটেড মানুষ, কফিতে তৃপ্তি কম পাই। চা ভালো বানাতে পারি, টেস্ট করে দেখুন, নয়ত পরিশ্রম বৃথা যাবে।ʼʼ

-“কথা শেষ করে নেব। ঠান্ডা হোক। আপনি আমায় পলাশের ব্যাপারে বলুন। কিছুই লুকোবেন না। এবং এটা জিজ্ঞেস করবেন না, কেন জানতে চাইছি।ʼʼ

-“আপনার উকিল হওয়াও ঠিক আছে, শুনানী পেশ করায় খুব দক্ষ হবেন। তবে রাজনীতিতে গেলে ভালো হতো। কথার ভাষনেই পার্টি আপনার। ভালো কথা জানেন, খুব সাজানো।ʼʼ

অন্তূ চুপ রইল। অন্তিক দর্শকের মতো বসে আছে, দৃষ্টি অন্তূর মুখের দিকে। যেন মনেই নেই, এমন ভঙ্গিতে মুস্তাকিন জিজ্ঞেস করল, “এটা কত সাল চলছে যেন?ʼʼ

অন্তূ জবাব দিলো, “২০১৪ চলছে।ʼʼ

-“রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে পরস্পরের সম্পর্কগুলো যেমন উপরি হয়, ঠিক তেমনইভাবে রাজনীতিতে থাকতে গেলে বিভিন্ন ধান্দার বিভিন্ন ধরণের লোকের সাথে লেওয়াজ করে চলতে হয়। সেভাবেই একটা লেওয়াজ ছিল হামজা ও জয়ের পলাশের সাথে। হামজা পলাশের সমসাময়িক জুনিয়র। পলাশ হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাশ করে বেরিয়েছে প্রায় আট বছর আগে। ভার্সিটিতে থাকাকালীন সে ছিল ওখানকার ছাত্রদলের এক সাধারণ সম্পাদক। অথচ ভার্সিটির পাঠ চুকিয়ে বের হতেই সে ছাত্রদল থেকে একদম অব্যাহতি নিয়ে নিলো। ব্যবসা শুরু করল নিজের। ধীরে ধীরে চাচা অর্থাৎ রাজন আজগরের সাথে মিলে হয়ে উঠল বিশিষ্ট এক সন্ত্রাস সাথে মহাজন ব্যবসায়ী। সে সামলায় এখানকার কারবার, ঢাকাতে আছে রাজন আজগর।

পলাশ রাজনীতি ছেড়েছিল এর অবশ্য একটা কারণ আছে। ওর অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার আগে একটা ছাত্র সংগঠন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার আগেই এক নোংরা কুকর্ম করে ফেলেছিল সে। এক গরীবের বউকে ক্লাবে তুলে এনে ধ-র্ষ-ণ ও শারিরীক নিপীড়ন করে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই মহিলার পরেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রী হোস্টেলের কোনো ছাত্রীকে এমন কিছু করার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর ছাত্রসংসদ থেকে বের হয়ে আসতে হলো তাকে। এই ক্ষোভে রাজনীতি ছেড়ে সন্ত্রাসনীতিতে যুক্ত হয়ে যায় সে। মানুষকে টাকা ধার দিয়ে তা শোধের ব্যবস্থা রাখে না, পরে বাড়ির মেয়েরা তার শিকার হয়। যা অন্তূর সাথে হয়েছিল। জয় জানে সবই। কিন্তু সে জানতো না, অন্তূদের মতো রক্ষণশীল পরিবারের কেউ পলাশের কাছে ভিড়বে। পলাশ ছাত্র-রাজনীতি থেকে বেরিয়েছিলই কেবল নিজের অমানুষিক মস্তিষ্কের চাহিদাগুলো চরিতার্থ করবার জন্য।

দিনদিন এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল সে, তার শক্তির নিচে অল্প জায়গা পেলেও তা যে কারও জন্য বিশাল ব্যাপার। তবে ওকে দেখলে ওর শক্তি সহজে আন্দাজ করার জো নেই। খুব ঠান্ডা এবং সাধারণ চলন ওর। চালচলনে খুব সাধারণ এবং আকর্ষিক গুপ্ততা আছে। ওর যে মাথায় দোষ আছে, এটাও ওর শিকার ছাড়া কেউ ধরতে পারবেনা। তবে চার-পাঁচ বছর আগে পলাশের জন্য চারিপাশটা এতটাও অনুকূল ছিল না। প্রশাসন পুরোটা মরেনি তখনও। সাল–২০১০ এর শেষের দিক। রাজনৈতিক বিপর্যয় পুরো দেশ জুড়ে। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার রায় কার্যকর হলো, আরেক দফা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো, বিএনপি নেত্রীর নিবাস পরিবর্তন। তখন দেশের অবস্থা খুব উত্তেজিত।

সেই সময় হামজা কেবলই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল রাজনীতিতে। তার সাথে ভাবটা পলাশ গড়ে তুলেছিল নিজের সুবিধার্থে। এরপর থেকে দুই পক্ষ পরস্পরের জন্য ব্যাক-আপ সাইড হয়ে গেল। কিন্তু মাজহার তখন জয়ের বিপরীতে ভার্সিটির ছাত্র সংসদ থেকে ছিটকে পড়ার শোকে হতবিহ্বল। অথচ হামজার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তার বিপক্ষে সরাসরি লড়ার হাত কোনোদিনই শক্ত হয়ে ওঠেনি মাজহারের। বাপ মেয়র থাকা সত্ত্বেও তরুণ রাজনৈতিক নেতা, হামজার দাপট চলছিল চারদিকে। চাচাতো বোনকে বিয়ে দেয়ার পেছনে মাজহারের একটা দারুণ পরিকল্পনা থাকলেও তা কোনোদিন সফল হয়নি। হামজা ঠিক যতটা চতুর, তেমনই ভয়ানক। সে নিজের অর্জনের ভাগ দেয়না কাউকে। পলাশের সাথে নিয়মিত উঠাবসা শুরু করল। এরপর সমস্যাটা তৈরি হয়েছিল হামজা ও জয়ের বেপরোয়া চলন নিয়ে। মাজহার পলাশকে খুব মান্য করে চললেও জয় আর হামজার কাছে পলাশ তেমন একটা অধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি কোনোদিন।

আরও বহুত ব্যাপার আছে, যেগুলো শুধু ওরা জানে, ওরা। আপনার না জানা ভালো।ʼʼ

মুস্তাকিন কথা শেষ করল। অন্তূ উঠে দাঁড়ায়, “জয় আমিরের ব্যাপারে কী জানেন?ʼʼ

-“জয় আমির? এক যুদ্ধাপরাধীর ছেলে।ʼʼ খুব সংক্ষেপে জবাব দেবার চেষ্টা করছিল মুস্তাকিন।

অন্তূ বেরিয়ে আসে মুস্তাকিনের ফ্ল্যাট থেকে। রাস্তা পার হবার জন্য দাঁড়াতেই নজরে আসে, ছোট্ট একটা মেয়ে, বাবার সাথে রাস্তা পার হচ্ছে। অন্তূর বুকটা ধরাস করে ওঠে। তখনই ডান হাতটা চেপে ধরে অন্তিক। তাড়া দেয়, “রাস্তা ফাঁকা, চল পার হই।ʼʼ

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here