#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৪৫.
জয় ড্রয়ার থেকে কিউব বের করে নিয়ে মেলাতে মেলাতে বলল, “ড্রাগ দিয়ে কী করে মানুষ?ʼʼ
-“আপনাকে কখনও নিতে দেখিনি।ʼʼ
-“তুমি আমায় চোদন খাইতেও দেখো নাই, ঘরওয়ালি। তোমারে ঘরে আনার পর প্যাদানি দিয়ে ফেলে রাখলে দেখতে পেতে।ʼʼ কিউব মেলাতে খুব মনোযোগী সে, “মেরে যখন ছাল ছড়িয়ে ছেড়ে দিতো আমায়, তখন কী করতে বলো? হাসপাতালে পড়ে থাকব, কোন আমলে সেই ব্যথা কমবে, সেই আশায় বসে থাকব? অত ধৈর্য্য কোনোকালেই নাই আমার। অভার-ডোজ ড্রাগ পুশ করে বসে থাকি। দেহের সেন্সিটিভিটির ওপর সাডেটিভ কাজ করা শুরু করলে ব্যথা অনুভূত হয় না ঠিকঠাক। অনুভূতি নাশ হয়ে, রিফ্লেক্শনলেস হয়ে যায় শরীর। এরপর আল্লাহর ওয়াস্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘুম বা সাবকনসেশন। জেগে থাকলেও দুনিয়ার খেয়াল নাই। ড্রেসিং করাও আমার পক্ষে সম্ভব না সেন্সিটিভ অবস্থায়। বিরক্ত লাগে শরীরে ব্যথা লাগলে। রাগ হয়। একে তো থকথকে কষানি ঝরা ঘা, তার ওপর যদি কাঁচি, ছুরি, ওষুধ, তুলো মেরে খোঁচায়…তখন কড়া ড্রাগ ছাড়া উপায় নাই।ʼʼ
অন্তূ কপাল চেপে ধরে আস্তে করে বলে, “টাল লোক।ʼʼ স্পষ্ট জিজ্ঞেস করে, “আপনি এডিক্টেড হয়ে যাননি?ʼʼ
-“তখন কিছুদিন করে রিহ্যাবে থাকি।ʼʼ আনমনে বলল। সে খুবই মনোযোগ সহকারে কিউব মেলাচ্ছে।
অন্তূ চোখ বুজে আঙুল দিয়ে কপাল চেপে ধরল, “কতবার মার খেয়েছেন জীবনে?ʼʼ
জয় এবার তাকাল চোখ তুলে, চোখে-মুখে রসিক ভাব ফুটিয়ে তুলে বলে, “মেলা-বার।ʼʼ
-“কেন?ʼʼ
-“অকাম করছি, চোদন খাইছি। সোজা হিসাব। তুমিই তো বললে, অকারণে কেউ কাউকে মারেনা।ʼʼ
-“ভুল বলিনি। আপনি অকাম করেছেন কেন?ʼʼ
-“আমার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য কী, জানো? আমার কোনো যুক্তি নেই। তুমি যদি আমার এক কাজের সাথে আরেক কাজ রিলেট করতে যাও, প্যাচ ওখানেই লাগবে। আমার যখন যা-আআ মন চায়, তা-ই করি। সেই ক্ষমতাটুকু হাতে রাখি। মন আর মেজাজ মুহুর্তে মুহুর্তে ব্যতিক্রম কিছু করতে চায়, আমি তা-ই করি। তো আমার কাজে যুক্তি খোঁজা আর টাকলার কাছে চিরুনী খোঁজা এক হলো না?ʼʼ
অন্তূ চুপ রইল। সে আজকাল নিজেকেই বোঝেনা, জয়কে বোঝার প্রশ্নও ওঠেনা। নিজের মানসিকতার এমন কঠোর পরিবর্তন ওকে প্রতিক্ষণে অবাক করে। জয় কিউব এলোমেলো করে ফের মেলাতে মেলাতে বলল, “মেরে ফেলোনি কেন আমায়?ʼʼ
অন্তূ বেশ কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত থেকে অল্প হাসল, “মৃত্যু যদি শাস্তি হিসেবে দিতে চাওয়া যায়, তাহলে শর্ত কী বলুন? সামনের জনের চোখে মৃত্যুর ভয় থাকতে হবে, ঠিক বলিনি?ʼʼ
জয় চোখ তুলে তাকায়। অন্তূ বলল, “সেটা আপনার নেই। আমি নিজেকে দিয়ে বুঝি—আমাকে মৃত্যু দেয়া এক প্রকার মূল্যবান উপহারের সমান আজ। সেটা কেউ দিলে সেটা কি আমার জন্য শাস্তি হবে? আপনার চোখে মৃত্যুর ভয় নেই, শরীরে আপনার ব্যথা নেই, জয় আমির।ʼʼ
জয় শব্দ করে হেসে ফেলল, “তো…ছেড়ে দেবে আমায়?ʼʼ
অন্তূ মুচকি হেসে মাথা নামায়, ঠোঁটের কোনের হাসি চওড়া হয়। অল্প চোখ তুলে ফিসফিস করে বলে, “আঘাত ভুলতে আছে, তবু আঘাতকারীকে নয়। শরীর ও মন ক্ষত রাখেনা, ভরাট করে নেয় কোষের বিভাজনে। তাই বলে দাগ মিলিয়ে যায়না। বোকামি হোক অথবা অন্যায় সহ্য করতে না পারার ব্যর্থতায়; হারানো তো আর কম হারাইনি। তার একটা দায় আছে তো আপনাদের, নাকি?ʼʼ
-“ভুলবে না আমায়, তাই বলছো তো?ʼʼ
-“আসামীকে ভোলা উচিত নয়, জয় আমির।ʼʼ
জয় গা দুলিয়ে আলতো হাসে, একদৃষ্টে চেয়ে থেকে বলে, “স্বামী নই, না?ʼʼ
-“আসামী হিসেবে খারাপ তো নন। এই ঢের।ʼʼ
জয় আবার শুয়ে পড়ল অন্তূর কোলে। আরাম করে মাথা রাখে। কোমড়টা আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে পেটের দিকে মুখ লুকোনোর মতো করে মুখ গুঁজে জায়গা খোঁজে। অন্তূ মাড়ির দাঁত আঁটকে চোখ বুজে শ্বাস ফেলে।
খানিকক্ষণের জন্য যখন বোতল নিয়ে বাইরে গেছিল, ছাদে যায়নি। সেই স্টোররুমের ওপারের দরজার ওপার গেছিল। অন্তূ টের পায়। আজকাল খুব যেতে দেখা যায় সেখানে। দিনে কয়েকবার, বারবার। বাড়িতেও থাকছে না ঠিকমতো। বিক্ষিপ্ত ঘুড়ির মতো বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ফনফন করে ঘুরছে। উদ্দেশ্য অজানা। কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে যেন। কিছু করছে। হুমায়ুন পাটোয়ারী মরার পর থেকে দুই ভাইয়ের গতিবিধি অস্বাভাবিক। রাতে বাড়ি ফেরে ক্লান্ত হয়ে। চোখে-মুখে এক প্রকার তাড়া, খুঁজে ফেরার ব্যর্থতা।
—
একবার সকাল সকাল পুলিশ এলো পাটোয়ারী বাড়িতে। হামজা ওয়ার্কশপে ছিল, পুলিশদেল সাথে নিয়ে দোতলায় এলো। জয় সকালে উঠে কোথায় বেরিয়েছিল। সে এলো খানিক পর। সদর দরজায় ঢুকেই পুলিশ দেখে চওড়া হাসল। ইন্সপেক্টর রশিদের দিকে চেয়ে কপালে হাত তুলে সালাম ঠুকে বলল, “কী অবস্থা, স্যার! ঠিকঠাক?ʼʼ
-“তোমার খবর ভালো?ʼʼ
মাথার ওপর হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙল, “আমি অলওয়েজ বিন্দাস থাকি।ʼʼ
-“এখন কেমন আছো?ʼʼ
-“বরাবরের মতো ফার্স্ট ক্লাস।ʼʼ
-“থানার আলমারিগুলোর তাক যদি সব তোমার ফাইলেই ভরা থাকে, চলবে তাতে?ʼʼ
-“চলতেছে তো। সাবানের ফেনার ওপর পা পিছলে যেমন ছোঁৎ করে চলে যায় না? ওইরকম চলে যাচ্ছে।ʼʼ
-“তারপর যে ধপাস করে পড়ে যেতে হয়, সেটা ভুলে যাচ্ছ।ʼʼ
-“বি পজিটিভ, স্যার। নিজেকে সামলে নেবার দক্ষতা থাকলে পড়তে পড়তে না পড়ে সোজা খাঁড়া হওয়াটা বিশেষ কোনো আশ্চর্য ব্যাপার না।ʼʼ
পুলিশ মাথা নাড়ল, “আর পারবে না। পিছলাতে পিছলাতে দেয়ালের দিকে যাচ্ছ। পিঠ ঠেকে যাবে এবার।ʼʼ
-“দেয়ালটা কোন ব্র্যান্ডের সিমেন্টে তৈরি, স্যার? মজবুত খুব? না মানে, দুই নম্বর সিমেন্টের তৈরি হলে, বেশি জোরে যদি ধাক্কা খাই, দেখা গেল দেয়াল ধসে পড়ল। আমার পিঠ-টিঠ দুই-চার খণ্ড হয়ে যাবে, সেটা পরের হিসাব। তবে দেয়াল পেরিয়ে যেতে পার।ʼʼ
জয়ের রসিকতা অবিরাম চলতে থাকল। জয় ফ্যানের রেগুলেটর ঘুরিয়ে স্পিড হাই করে এসে গা এলিয়ে সোফায় বসল। পুলিশ বলল, “কী কী করে বেড়াচ্ছ আজকাল?ʼʼ
-“গলায় একটা খাঁকারি মারেন। কিছু আঁটকে আছে। জোরে কোরে কাশি দেন একটা।ʼʼ
-“সব অভিযোগ বাদ দিয়ে যেটা মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে—তোমার স্ত্রীকে তুমি জোরপূর্বক তুলে এনেছ
মানহানিসহ বিভিন্ন নির্যাতন এবং মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছ, পরিবারকে জিম্মি করে।ʼʼ
-“যাহ শালা! সাংঘাতিক কেইসে ফেঁসেছি তো এবার। তবুও কিছু নারীবাদী বিটিশ্শালী গলা ফাঁটাবে— আমাদের অধিকার দাও। আমরা নারী, আমরা বাল ছিঁড়তে পারি।ʼʼ মুখ চেপে ধরল নিজের, “ক্ষমা, স্যার, ক্ষমা। কীসব ভালো কথা যে খারাপ সময়ে বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে!ʼʼ
-“অভিযোগ কি সত্যি?ʼʼ
জয় বুকে হাত দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ভঙ্গিতে বলল, “অভিযোগ করেছেন আমার স্বর্গীয় শালা সরি সম্বন্ধিবাবু। যেহেতু সে স্বর্গীয়, তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার চান্স নেই, কবর থেকে কেউ ইন্টারভিউ দেয়নি কোনোদিন। তার বোনকে ডাকুন। আমি কী বলব? আমি বললে নিজেকে ডিফেন্সই তো করব, নাকি নিজের সম্মানের হরির লুট বিলাবো?ʼʼ
জয় গলা হাঁকালো। অন্তূ এসে দাঁড়াল কিছু সময় পর। জয় বলল, “বেয়াই বাড়ির লোকজন এসেছে, কিছু প্রশ্ন করবে তোমায়। সসম্মানে জবাব দাও, গিন্নি!ʼʼ
অন্তূ বসল না, দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ। জয় তরুকে ডাকে। তরু এসে দাঁড়ায় আস্তে করে। জয় আদেশ করল, “আমার জন্য ফুল এক প্লেট ভাত আন তো। মাছ-টাছ দিস না, কেমন? মাছ আমার অত্যাধিক পছন্দের। এজন্য খাইনা। ফ্রিজে রান্না করা মাংস থাকলে তা গরম করে আন।ʼʼ
পুলিশদের দিকে তাকিয়ে বলল, “খেয়ে নিই, কেমন! আপনারা কথা বলেন। জেলের পঁচা রুটি খেলে ডায়রিয়া হয় আমার। বাড়ির ভাত ভালো করে গিলে যাই, তাও দু একদিন পেট ঠান্ডা থাকবে অন্তত। তারপরের দিনগুলো বরফ লাগাবো।ʼʼ
সেন্টার টেবিলের ওপর পুরো ভুরিভোজ নিয়ে বসে প্রোগ্রাসে গিলতে থাকল জয়। আশপাশের পুলিশের দল ঘিরে আছে। অন্তূকে প্রশ্ন-টশ্ন করছে। জয় দুনিয়া-দারী ভুলে খেয়ে যায়। বিশাল হাতের তালুতে একেকটা লোকমা বড় বড় করে মুখে দেয়া তার স্বভাব। ছোট লোকমায় খাবার খেতে পারেনা। খাওয়া ছাড়া এই মুহুর্তে আর কিছু তার বোধে নেই যেন। সে খাচ্ছে, পানি নিচ্ছে মুখে, তরুকে ডেকে সালাদ আনাচ্ছে, লবন কম হয়েছে বলে ঝারি মারছে। খাওয়ার হিড়িক বাঁধল তার।
বাড়ির লোক এবং পুরাতন অফিসারেরা অবাক হলো না ওর এমন আচরণে। কিন্তু নতুন যারা এসেছিল, তারা হতবাক চোখে দেখে গেল জয়ের অদ্ভুত নির্লিপ্ততা। যার চোখে পুলিশের ডর নেই, জেলে যাবার উদ্বেগ নেই। বরং সে পুলিশ বসিয়ে রেখে খাচ্ছে।
অন্তূকে জিজ্ঞেস করা হলো, “আপনাকে রোজ টিজ করতো, জয় আমির। কথাটা সত্যি?ʼʼ
জয় খুব আশাবাদী, অন্তূর তেজদীপ্ত কণ্ঠে ‘হ্যাঁʼ শোনার জন্য। এরপর তাকে দু একদিন হাজতেও কাটাতে হবে, ভেবে কষ্ট লাগছিল। হাজতে গেলে তার কবুতর কে দেখবে, মদ পাওয়া যাবেনা ওখানে, অন্তূর সাথে ঝামেলা করা হবেনা, সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগছিল, যে বউকে সে খাওয়া-পড়া দিয়ে পুষছে, সে তার সাথে বেইমানি করবে, তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে। কষ্টে পেট ফেটে হাসি আসছিল, হাসল না। পুলিশরা পাছে পুরাটাই পাগল ভাববে। অল্প-সল্প ভাবলে চলে, পুরোটা পাগল প্রমাণিত হওয়া ঠিক না।
কিন্তু খাওয়া রেখে তড়াক করে চোখ তুলে তাকাল, যখন অন্তূ বলল, “না।ʼʼ
একে একে সকল অভিযোগ নাকচ করল অন্তূ। জয় এঁটো হাত প্লেটে ডুবিয়ে হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে অন্তূর দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী মুখের দিকে। তার মনে হলো, সে হ্যালুসিনেট করছে। অথচ সত্যিই অন্তূ সবগুলো অভিযোগ অস্বীকার করল। জয় গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু, চুপচাপ…।
পুলিশেরা অবাক হয়ে, কর্কশ স্বরে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে আপনার ভাই এমন একটা অভিযোগ ডায়েরি করলেন কেন?ʼʼ
অন্তূ পেশাগত মিথ্যাবাদীর মতো স্পষ্ট স্বরে জানায়, “বাড়ির কেউ সম্মত ছিল না বিয়েতে। ওদের পছন্দ ছিল না, জয় আমিরকে। ওরা এই বিয়ে মেনে নেয়নি। আমাকে অনেকবার ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে, আমি যাইনি। এক্ষেত্রে তাদের ধারণা হলো, জয় আমির হয়ত প্রেসার ক্রিয়েট করে আমায় ধরে রেখেছে। তেমন কিছুই নয়। আমি সদিচ্ছায় এবং সজ্ঞানে সংসার করছি। ওটা শুধুই মাত্র আমার বাড়ির লোকের আক্রোশ ছিল।ʼʼ
সন্দিগ্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন করল রশিদ, “আপনি কি কাউকে ভয়য় পাচ্ছেন? সত্যি লুকোচ্ছেন?ʼʼ
-“আপনার তাই মনে হচ্ছে?ʼʼ
রশিদ উপহাসের হাসি হেসে মনে করিয়ে দিলো, “এ ঘটনার দিন দুয়েক পর আপনার ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি আমরা।ʼʼ
-“সড়ক দূর্ঘটনার ঘটনা এই প্রথম শুনেছেন?ʼʼ
-“সড়ক দুর্ঘটনা?ʼʼ
-“খু-ন মনে হচ্ছে?ʼʼ
-“আমি কিছু বলিনি, আপনিই বলছেন, ম্যাডাম।ʼʼ
-“আপনি যা ঈঙ্গিত করছেন, আমি সেটাই কেবল স্পষ্ট করে দিলাম, অফিসার।ʼʼ
আর কিছু বলার থাকেনা। অগত্যা আপাতত চলে গেল তারা। জয়, হামজা তখনও হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। তরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। রিমি রান্নাঘরে কাজবাজ করছে। জয় অবশিষ্ট খাবারে পানি ঢেলে হাত ধুয়ে উঠে পড়ে। তার অস্থির লাগছে। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে অকারণেই অথবা অজ্ঞাত কারণে। অন্তূর দিকে বারবার তাকায়। অস্থির-চঞ্চল চোখে তাকায়। মেয়েটার দৃষ্টি জানালার বাইরে।
—
কোত্থেকে যেন একটা লাল রঙা শাড়ি কিনে আনল জয়। লাল তার প্রিয় রঙ। আর কোনো রঙ প্রিয়র তালিকায় নেই। র-ক্তের রঙ লাল, জীবনে প্রথমবার র-ক্তের রঙ দেখার পরেই রঙটাকে জয়ের ভালো লেগেছিল, অতিরিক্ত ভালো। এরপর কোনো রঙকে ভালো লাগেনি আর।
অন্তূকে বলল, “ঘরওয়ালি, এটা পরবেন আজ গোসল করে। শালার বিয়েই তো করলাম আমি। বাসরে বউ ফেলে গেলাম হাসপাতালে। তেলতেলে কপাল। শাড়ি পরা অবস্থায় দেখিই নাই তোমায়। ওই বাড়ি থেকে বের হবার সময় একবারই দেখেছিলাম, তাও ভালোমতো না। আজ পরো, একটা ছবি তুলবোনে দুজন। ঠিক আছে?ʼʼ
-“নেই।ʼʼ
-“ঠিক নেই?ʼʼ
-“না।ʼʼ
-“পরবে না?ʼʼ
-“উহু!ʼʼ
-“কেন?ʼʼ
-“ইচ্ছে করছে না।ʼʼ
-“পরবেই না?ʼʼ
-“পরবোই না।ʼʼ
হাসে জয়। খানিকক্ষণ কেমন করে যেন চুপচাপ তাকিয়ে থাকে অন্তূর উদাস মুখখানির দিকে। অন্তূ জয়ের দিকে না তাকিয়েই বলে, “এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। অস্থির লাগে।ʼʼ
জয় আস্তে করে বলে, “আমারও।ʼʼ
বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। বসন্তের রোদে ছাদে কবুতরের ঘরের সামনে বসে শাড়িতে খানিক মদ ঢেলে দিয়াশলাই জ্বালায়। কাপড়ের লাল রঙটা পুড়ে যখন ছাই হয়ে কালো হয়ে আসছিল, রাগ লাগে জয়ের। পছন্দের রঙটা বদলে অন্ধকারে ছেঁয়ে যাচ্ছে। র-ক্ত আর অন্ধকার তো প্রায় একই। দুটোই বিনাশী। তবুও আজ দুটোকে এক করতে পারে না জয়। অন্ধকারকে তার অপছন্দ না। তবু আজ আগুনের ওপর রাগ হচ্ছিল খুব। অথচ নেভালো না। আগুন আর পাপের মধ্যে তফাত নেই। এক প্রান্তে ধরে গেলে পুরোটাকেই পোড়া অথবা গোটা মানুষটাকেই পাপী সম্বোধন করা হয়। ফেরার পথ?
জ্বলতে দেয় শাড়িটা। ভাবে, আচ্ছা! ছাই হয়ে যাওয়া ওই কালো রঙকে কি আর লালে ফেরানোর উপায় নেই? উত্তর আসে, না। সময়ের মতোই তো ছাই আর পাপ। খড়ি পুড়ে ছাই হয়, তার স্তূপ থেকে পুনরায় খড়ির জন্ম হয়না। পাপের স্তূপ থেকে পূণ্যের জন্ম হয়না। রঙহীনতা থেকে রঙের জন্ম হয়না। চলে যাওয়া কিছুই ফেরে না। যা ফেরে, তা গেছিল না।
গা ঘামলে সহ্য করতে পারেনা জয়। আজ শার্টটা ভিজে উঠল। তবু জলন্ত আগুনের খুব কাছে তপ্ত সূর্যকিরণের নিচে বসে রইল। কবুতরগুলো গা ঘেঁষছে, আজ তাদের মালিক আদর করছে না, কথাও বলছে না। তারাও হতাশ হয়ে ফিরে ফিরে যাচ্ছিল।
—
ডাইনিং টেবিলের ওপর আঙুল বাজাতে বাজাতে গান ধরে জয়,
প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে,
জীবনের পাতার কত যে খবর রয়ে যায় অগোচরে
কেউ তো জানেনা প্রাণের আকুতি বারেবারে সে কী চায়
স্বার্থের টানে প্রিয়জন কেন দূরে ঠেলে সরে যায়…
ধরণীর বুকে পাশাপাশি কভু কেউ বুঝি কারও নয়..
মাথা দুলিয়ে গলা ছেড়ে গান গাইছিল। হামজা আসবে, এই সন্ধ্যা মাথায় নিয়ে চারটে গপাগপ খাবে দুজন, এরপর বেরোবে। হামজা এসে জিজ্ঞেস করে, “তোকে আবার স্বার্থের টানে দূরে কে ঠেলল?ʼʼ
-“হ্যার বাল। সবসময় জরুরী না গানের সাথে জীবনের কাহিনি মিলবে। মন চাইতেছে গাইলাম। গানটা প্রিয় আমার। তুমি চান করতে যাবা?ʼʼ
-“তুই করবি না?ʼʼ
-“তোমার মতোন খাইস্ট্রা তো না আমি। সবসময় পরিষ্কার থাকি। ডেটল সাবান মাখি। নিরানব্বই ভাগ জীবাণুমুক্ত থাকি।ʼʼ
হামজা গোসলে যায়, জীবনে তোয়ালে নেয় না। সেটা রিমিকে দিয়ে আসতে হয়। রিমি একটা নতুন পাঞ্জাবী ও পাজামা ইস্ত্রি করে বিছানায় রাখল। চিরুনি, পারফিউম, মুজিব কোট ইত্যাদি রেখে বেরিয়ে যাচ্ছিল। হামজা ধরল, “আমাকে এড়িয়ে চলতে ভালো লাগে?ʼʼ
-“কিছু লাগবে, আপনার?ʼʼ
গম্ভীর হামজা কড়া স্বরে জোরালো করে বলল, “তোমাকে লাগবে।ʼʼ
-“আছি তো।ʼʼ
রিমিকে ঘুরিয়ে নেয় হামজা নিজের দিকে। মুখটা উঁচু করে ধরে। রিমির চেহারায় বদল এসেছে, সেই চাঞ্চল্য আর নেই, পুরোদস্তুর পুরোনো গিন্নির মতো রূপ। যেখানে শুধু কর্তব্য পালনের তাগিদ, মনের চাহিদার অভাব।
হামজা বলল, “আমার দিকে তাকাও। আরমিণের রোগ লেগেছে, হ্যাঁ? তোমার, তরুর… ওর মতো বিদ্রোহী হয়ে গেছ সকলে? খুব তাড়াতাড়িই কাবু করে ফেলেছে সে তোমাদের?ʼʼ
-“খারাপ তো কিছু করেনি। একসময় আমিও বিমুখ ছিলাম ওর থেকে। চট করে একদিন বুঝলাম, গোটা বাড়ি ভয় পায় ওকে, ওর তেজ এবং নির্ভীক চোখকে। আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম যখন টের পেলাম, আপনি চিন্তিত ওকে নিয়ে। কিছু তো আছে। নেই? সত্যকে বলে দেবার এবং অন্যায়কে অন্যায় বলার জন্য মাত্রার চেয়ে বেশি দুঃসাহস আছে ওর। হারাতে ভয় নেই। কিছু তো ক্রেডিট পাওয়া উচিত। হারালে লোকে দমে যায়। ও প্রতিবার দ্বিগুন জেদে ঝলসে ওঠে।ʼʼ
-“তাতে ক্ষতিটা কার?ʼʼ নিঃশব্দে হাসে হামজা। চোখদুটো জড়িয়ে যায়, নাকের দুপাশে ভাঁজ পড়ে, কাধটা দুলে ওঠে।
রিমি চোখ ফেরায়, “অথচ আপনারা শঙ্কিত ওকে নিয়ে।আমি তো রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়ে। তবুও আপনার কাছে কাবু হয়ে পড়ে আছি দিনের পর দিন। পতিসেবা করে চলেছি। একটা সাধারণ মেয়ে বাড়িতে ঢুকতেই গোটা নকশা বদলে ফেলেছে, আপনার-জয়ের ভিত নড়িয়ে রেখে দিয়েছে।ʼʼ
-“ভুল মানুষের আঁছড় লাগিও না, গায়ে। ওর কাছে কিছুই নেই, নিঃস্ব ও। শুধু শুধু আমাদের কাজে বাগড়া দিতে আসছে। আচ্ছা রিমি, তোমার কি নিজেকে আমার বাধ্য মনে হয়?ʼʼ
রিমি বিভ্রান্ত হয়ে তাকায়। হামজা বলে, “আজ থেকে আমার কোনো কাজ করতে হবেনা তোমাকে। রাগ করে বলছি না কথাটা। তবে আজ তুমি আমার কোথাও একটা আঘাত করে বসলে। ভাবতাম, শুধু একটু অভিমানে জড়িয়েছ। নয়ত তুমিও খুব একটা পবিত্র পরিবারের নও। তোমার সব স্বাভাবিক লাগার কথা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, গোটা রঙ বদলে গেছে তোমার। তোমার ধারণা তোমার সই, রিমি।ʼʼ
রিমি অপ্রস্তুত হয়ে যায়। হামজা শান্ত মানুষ, ফায়সা কথা বলেনা। যা বলে তার একটাও অহেতুক না। হামজা বলল, “নন দ্য লেস, লেট মি রিমিইন্ড ইউ ওয়ান থিং—ওর সাথে যা হয়েছে, তার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই। ও তুমি নও। আর না আমি জয়। ওদের সম্পর্কটাই একটা যুদ্ধ-বিগ্রহের ওপর স্থাপিত। আমার-তোমার তা ছিল না। কিন্তু তুমি ছোট্ট একটা বিষয় থেকে অনেগুলো দিন দূরত্ব বাড়িয়েছ। এত চাপা হতে নেই। ছোট মানুষ তুমি।ʼʼ
রিমি তাকিয়ে থাকে। হামজার মুখটা অতিরিক্ত গম্ভীর হয়ে উঠেছে। রিমি মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবু তীব্র অভিযোগ আর অভিমান তাকে কথা বলতে দেয়না। হামজা জিজ্ঞেস করে, “কিছু বলবে?ʼʼ
-“কী বলার আছে? কী বলব আমি?ʼʼ কেঁপে ওঠে কণ্ঠটা। এইসব সময় রিমির কখনোই বিশ্বাস হয়না, এই লোকটা তাকে ভালোবাসেনা। কোনোদিন মারেনি, কড়া কথা বলেনি। চোখে সবসময় গভীর এক অনুভূতি। রিমি বোকা বনে যায় এই লোকের সামনে বরাবর। সেই ছোট্ট রিমিকে কত ভালোবেসে ওর বাবার কাছ থেকে চেয়ে এনেছিল। বাপ-ভাইয়ের স্বার্থ ছিল হামজার সাথে বিয়ে দেওয়ায়, হামজা ছিল নিঃস্বার্থ।
হামজা চট করে আলতো হাসে। কাছে আসে রিমির। দুই চোয়ালে হাত রেখে দাড়ি-গোফের মুখটা এগিয়ে নিয়ে শব্দ করে রিমির ঠোঁটের কিনারায় চুমু খায় একটা। রিমির চোখ বুজতেই এক ফোটা তপ্ত জল গাল বেয়ে যায়। ভেজা ঢোক গেলে একটা। আচমকা হামজা ফিসফিস করে বলে, “তুমি জানো, আমি কোনো পাটোয়ারী বাড়ির ছেলে-টেলে কেউ নই?ʼʼ
রিমি বিদ্যুতে শক খাওয়ার মতো ছ্যাৎ করে দু পা সরে যায়। হামজা হাসে, শব্দ হয়না। পাজামা-পাঞ্জাবী পরে, চুল ঠিক করে, পারফিউম লাগায়। কোট গায়ে চড়াতে রিমির দিকে তাকালে রিমি আস্তে কোরে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কে আপনি?ʼʼ
-“ঢাকা মোহাম্মদপুর বস্তির কোনো এক কুটুরিতে অত্যান্ত অবহেলায় জন্ম নেয়া একটা ছোটলোক, নোংরা, নিঃস্ব প্রাণ, আমি।ʼʼ ভ্রু নাচায়, “কী? এবার একেবারে তালাক? হা হা হা!ʼʼ এত জোরে শব্দ করে কখনও হাসেনি হামজা। গা’টা ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে রিমির। কথা বেরোয় না।
হামজা বলে, “আমার মা বলে যাকে জানো, শাহানা পাটোয়ারী। সে সন্তান জন্মদানে জন্মগত অক্ষম নারী। নারীত্ব ছিল না তার মাঝে। ছোটবেলা থেকে হুমায়ুন পাটোয়ারীকে এ থালায়-ও থালায় মুখ দিতে দেখেছি। তাকে বাঁধা দিইনি, কারণ সে আমার বাপ না বরং আমিই তার বাপ হয়ে উঠেছিলাম। কৃতজ্ঞতা অথবা বাপের ধর্ম যা-ই বলো, খানিক প্রশ্রয় দিতে হয়, দিয়েছি তাকে, বাপ হিসেবে ছেলেকে যা দিতে হয়, আমি তাকে সব দিয়েছি। আমাকে শাহানা মা নিয়ে এসেছিল এখানে, আমি তখন দুই বছরের বাচ্চা। রাজধানীর রাস্তার ধারে ময়লায় গড়াগড়ি খেতাম। পাটোয়ারী বাড়ির সবাই বড়লোক হলেও হুমায়ুন পাটোয়ারী চিরকালের চরিত্রহীন আর কামলা। কোনোদিন কাজ-কাম করেনি। এখানে এসেও সেই অভাবেই মানুষ আমি, যতদিন না অন্যায়ের পথে গেছি। আমাকে স্কুলে পড়িয়েছিল জয়ের মা। হুমায়িরা ফুপু। কতদিন? শ্বশুরবাড়ি থেকে কতদিন চালাবে আমাদের সংসার, আমাকে? আমার যখন বয়স চৌদ্দ, সে-সময় তারও…ʼʼ
রিমি স্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকে। হামজা হাসে, “আমার তখন ক্লাস নাইনের রেজিস্ট্রেশন। ফুপু নেই আর… বাড়িতে চাউল কেনার টাকা নেই, আমার স্কুলের ফি দেবে কোত্থেকে? পাটোয়ারী বংশের কেউ কাউকে দেখেনা। নিজেদের অর্জন নিজেদের করে নিতে হয়। আমিও একসময় ক্ষমতা অর্জন করে সবগুলোকে উপড়ে ফেলেছি। এখন দেখবে যেদিকে তাকাবে, সব আমার নামে। গোটা পাটোয়ারী নামটা আমার, হামজার। আমার আসল নাম জানিনা আমি। দরকার নেই। শুধউ আরও ক্ষমতা চাই, আরও… তা ছাড়া আমি আজ আমি হতাম না, আমি হতাম না, রিমি।
তখন দেশে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান চলছে। স্বৈচারার বিরোধী আন্দোলনে দেশ তোলপাড়। আমাকে বলা হলো, পড়ালেখা ছেড়ে দিতে। তা সম্ভব ছিল না। আমি ছোটলোকের ছেলে হলেও আমি ছোটলোক হয়ে জন্মাইনি। আমার জন্ম হয়েছে ক্ষমতা কামাতে, এই সমাজে নিজের বিশিষ্ট নামের ঝংকার তুলতে। ছোটলোক হয়ে মরার কথা তো ভাবতেও পারিনি কোনোদিন। আমি চলে গেলাম পার্টিতে। মেট্টিক পরীক্ষার প্রবেশপত্রের টাকাটা নিজের ভালোমানুষি বিক্রি করে পাপের টাকায় যোগাড় করা ছেলেটা এত বড় ব্যবসা, এত বড় বাড়ি আর এত নাম কী করে কামিয়েছে, সেসব তোমাদের না জানলেও চলবে। কল্পনা করে নিও। শুধু জেনে রাখো, তুমি, তোমার পরিবার আমায় বাল দিয়েও নাড়তো না, যদি না সেইসব পেরিয়ে, সব ডিঙিয়ে আমি নিজেকে এই অবস্থানে দাঁড় করাতাম।ʼʼ
হামজা থামে। খানিক দম নেয়, এরপর বলে, “বহুত কিছু পাড়ি দিয়েছি আমি আর জয়। তোমার মতো লাখখানেক রিমি, আর আরমিণের মতো হাজারখানেক আরমিণ জয়-হামজার পথ রুখতে পারেনা, আর না ভাঙন ধরাতে। এ পথ একদিনের না। যখন তোমাদের জন্ম হয়নি, অথবা খালি গায়ে পুতুল খেলতে তোমরা, তখনকার ধরা হাত। না ছাড়বে, হয় মরবে।ʼʼ
কেমন অপ্রকৃতস্থর মতো হাসে হামজা গা দুলিয়ে, “অনেক ক্ষমতা কামানোর আছে। অনেক অনেক অনেক…..যার অন্ত নেই, থাকবে কোনো সীমা। এই অবধি পৌঁছাতে যে পথ পাড়ি দিয়েছি, সামনের পথে আরও র-ক্ত, আরও চিৎকার আরও হাহাকার আছে। সে-সবে থামলে আজ আমি মানুষের প্রতিনিধি হতাম না। আজ কত মানুষ আমার কাছে এসে ধর্না ধরে একটু সাহায্যের আশায়। আমার গর্ভধারিণী হয়ত এই লোকগুলোর মতো হাত পাতাওয়ালার কাতারেও ছিল না। অথচ আজ আমি তাদের হাতে সাহায্য তুলে দেয়া মানুষটা। আমি সেদিন অন্যায় দেখে থেমে গেলে হতো? আর না আজ থামলে হবে। তুমি বিরোধীতা করো, আরমিণ করুক। জয় আর আমার পথ একটা, সেখানে গিয়ে অর্জন দুটো দুজনের। দুজনেই অতৃপ্ত হয়ত চিরকাল, তবু তৃপ্ততা। আমার থামার নয়, আমার ক্ষমতা লাগবে, আরও উঠতে হবে। সিড়ি পড়ে আছে, অনেক সিড়ি। উপরে ওঠার সিড়ি। ক্লান্তিতে জড়িয়ে আসা পা-দুটো ঝাড়া মেরে উঠে যেতে হবে। বুঝতে পারছো তুমি, বুঝতে পারছো….ʼʼ
হামজা জয়কে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে যায়, “ও জয়! শুয়োর, বেরোবি নাকি আসব আমি? দেরি হচ্ছে, জলদি আয়।ʼʼ
চলবে…
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।]