#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা
৫১.
অন্তূ চুপচাপ ঘরে ফিরে এসেছিল। ডাইনিং স্পেসের কমন বাথরুমটার দরজায় জোরে জোরে শব্দ করল। যেন মনে হলো, সে বাথরুম থেকে বের হলো অনেকক্ষণ পর।
সাথে একগ্লাস পানি আর দুটো রুটি নিয়ে রুমে এলো। উদ্দেশ্য জয়কে বোঝানো, সে খাবার-পানি আনতে গেছিল। জয় চোখ বুজে শুয়ে ছিল, ঘুমন্ত কি’না বোঝা যাচ্ছিল না।
সকালটা খুব স্বাভাবিক কাটলো। অন্তূর চেহারাটা ভেঙে গেছে। চোখের নিচে কালি, ফর্সা মুখে বিভিন্ন প্রকার দুশ্চিন্তার ছাপ, কালচে ছোপ। রিমি এবং সে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রান্না করল, তবু বিশেষ কথা হলো না। সবার সব কথা বুঝি ফুরিয়ে গেছে এ বাড়ির! তরু আসছে, টুকটাক কাজকাম করছে, তুলির মেয়েটাকে দেখাশোনা করছে। হামজা বেরিয়ে গেল। অন্তূর ধারণা হামজা সামনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাগানের লোহার গেইট দিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের কুটুরিতে ঢুকেছে।
অন্তূ পুরোটা বেলা নিজের ঘরে বসে পড়ল। অনেকদিন পর বইখাতাগুলো নেড়েচেড়ে দেখল সে। একসময় পড়তে বসলে, আব্বু এসে চুপটি করে পাশে বসতো। অনেকক্ষণ চুপচাপ চেয়ে দেখতো পড়তে থাকা অন্তূকে। ঠিক যেন অন্তূ তখনও প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রী-ই। অন্তূ আমজাদ সাহেবের কাছে কোনোদিন বড় হয়েছিল না। তারপর ঝাপটা-টা এলো কবে?
অন্তূ নিজের ভুলগুলো ভাবে একমনে বসে। সে কথা বেশি বলে। খুব বেশি কথা বলে। অথচ লোকে তাকে গম্ভীর ভাবতো। তারা জানেনা সে অজায়গায় চুপচাপ সহ্য করতে পারেনা। তার অনেক ভুল। তার কারণে গোটা পরিবারটা তছনছ হয়ে গেছে। সে প্রচণ্ড স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক মেয়ে। মহানুভবতা নেই ভেতরে। অন্তূ টের পেল, আব্বু এসে পাশে বসেছে। জয় উল্টো দিক ফিরে শুয়ে ছিল। তখন সকাল নয়টা।
আব্বু জিজ্ঞেস করল, “এখন কী চাস, অন্তূ?ʼʼ
-“ভুলগুলো শুধরাতে।ʼʼ
-“কীভাবে?ʼʼ
-“সেটা বুঝতে পারছি না।ʼʼ
-“ভুলগুলো কী তা বুঝতে পারছিস?ʼʼ
‘“সবই তো ভুল, আব্বু!ʼʼ
-“সব কোনগুলো?ʼʼ
“সেই তো আমার সবই ভুল। তোমাকে হারিয়ে ফেলা…ʼʼ
“তোর ছাড়া আর কারও বাপ মরেনা?তকারও জীবনে তোর চেয়ে বেশি সংকট নেই, ভাই মরেনা? পরিবার ভাসে না? তারাও ভুল করে, তাই জীবন এমন? তাহলে তো সবই ভুলের দোষ, ভুলের ভুল। তোর দোষটা কোথায়? কারও কোথাও দোষ নেই…ʼʼ
বরাবরের মতো আব্বুর যুক্তির কাছে হারল। তবু তর্কে জড়ায়, “আমি অনেক পাপ করেছি আব্বু। তা ধরাতে দিচ্ছ না কেন?ʼʼ
‘“শুনি পাপগুলো।ʼʼ
অন্তূ উপহাস করে হাসে, “জয় আমিরের সাথে পাঙ্গা নিতে গেছিলাম। তারপর আরও কত নাটক করলাম! সব তো নিজের ন্যাকামিতে। তাই না, আব্বু? তোমার ধিক্কার জানানোর নেই আমাকে? আমি কোনো পদক্ষেপই শান্তভাবে নিতে পারিনি, পরিস্থিতি খুব ভালো ছিল। আমার জন্য সুখকর। তবু কেন যে চুপচাপ পেশাগত বুদ্ধিজীবীদের মতো ছক কষে কাজ সারতে পারলাম না? আমি পাগল হয়ে গেছি আব্বু, বদ্ধ পাগল, বে-তাল।ʼʼ
আমজাদ সাহেব গম্ভীর মুখে চেয়ে থাকেন। তারপর চট করে হাসেন, “নিজের ভেতরের সাথে খুব তর্ক হয় তোর তাই না? সে তোকে পছন্দ করেনা, সমর্থনও করেনা! তাকে জবাব দিচ্ছিস?ʼʼ
অন্তূ মুখ নামায়, স্বগোতোক্তি করে, “আমি কী কী করেছি, জানো, আব্বু?
-“না। জানি না।ʼʼ
-“শোনো, বলছি।ʼʼ তবু অনেকক্ষণ চুপ রইল অন্তূ। কথা বলল না কোনো।
-“চুপ কেন?ʼʼ
-“মেলাতে পারছি না, আমি কী কী করেছি। অনেক পাপ আর ভুল তো, আব্বু! মেলাতে বেগ পাচ্ছি বড়।ʼʼ
-“চেষ্টা কর দেখি!ʼʼ অসন্তোষ প্রকাশ পেল আমজাদ সাহেবের অভিব্যক্তিতে।
অন্তূ মুখ তুলে চায়। আমজাদ সাহেব মাথা দোলান, “কিচ্ছু করিসনি। জীবন আমাদের নিয়ে খেলে, অথচ আমাদের সাহস নেই জীবনকে দোষ দেবার। আমরা জীবনকে ভয় পাই। তবু দোষারোপ তো করতে হবে। তখন হয়ত নিজের কর্মগুলোকে দোষারোপ করে নিজেকে দোষী বানিয়ে মনোবল হারিয়ে বসি।ʼʼ
-“আমি কী করব, আব্বু? আমি পুরো ব্ল্যাঙ্ক। আমার মাথায় কিচ্ছু আসেনা। আমি দূরে কোথাও চলে যাব। আমি সব ছেড়েছুড়ে চলে যাব। কীসে জড়িয়েছি? আমার তো কিচ্ছু না। আমি নিজেই গলা সমান ডুবে আছি আগে এত ভালোমানুষি দেখাতে গিয়ে, আমি কার কী উপকার করব? কেন করব? যার যারটা সে বুঝে নিক। আমি খাবো, ঘুরব, ঘুমাবো। আর নাহয় পালাবো এই শহর ছেড়ে।ʼʼ
-“তারপর?ʼʼ
অন্তূ অল্প চুপ থেকে মলিন হেসে বলে, “কোথায় যাব? জায়গা বা ঠাঁই নেই তো, আব্বু। আমার যে আব্বু নেই। আমার একটা তুমি নেই, আব্বু। আমার কাছে আমার আম্মা নেই। আমার বাপটা বড় স্বার্থপর ছিল গো। সে আমায় বছরের পর বছর স্বপ্ন দেখিয়েছে। তারপর একদিন হুট করে রেখে পালিয়েছে। এমন এক জায়গায় রেখে, যেখানের চার দেয়াল বিষাক্ত কাঁটার বেষ্টনিতে ঘেরা। অল্প নড়লেও আঘাত অনিবার্য, অনস্বীকার্য।ʼʼ
-“তো দমে যাবি?ʼʼ
-“কী করতে বলো?ʼʼ অন্তূ চড়ে উঠল।
হেসে মাথা দোলালেন আমজাদ সাহেব, “তোকে উকিল হতে হবে, অন্তূ। আরও স্বার্থপর হতে হবে। আমার আদেশ রইল, এর পেছনে যুক্তি খুঁজতে যাবিনা। লোকে তোকে সর্বোচ্চ পাপীর কাতারে দাঁড় করাক, তুই বাকি জীবনে তোরটা আদায় করতে যা করতে হয়, সব করবি। কী বললাম? সব। সেটা অযৌক্তিক হোক অথবা অল্প পাপ অথবা হোক খাঁটি স্বার্থবাদীত্ব।ʼʼ
-“আমার কী করার আছে? আমি কেন জড়াচ্ছি নিজেকে? কোথা থেকে কী হচ্ছে আমার সাথে? চারপাশে কী চলছে? কেন? কবে থেকে? কীভাবে?ʼʼ অন্তূ বদ্ধ পাগলের মতো ছটফট করতে থাকে।
-“শান্ত হ। বল তোর ভুলগুলো কী কী? কী কী ভুলের জিম্মেদার ভাবিস নিজেকে?ʼʼ
-“আমার ভুল?ʼʼ
-“হ্যাঁ। তোর মতে তোরই তো। শুনি বল।ʼʼ
-“সে-তো অনেক! জয় আমিরকে ঘেন্না না করে সেই ভার্সিটিতে দেখা হবার প্রথম দিন মেনে নিলে আর কিচ্ছু হতো না। এরপর যা সব হয়েছে, সেসব হতো না। খালি পলাশের সাথে একবার দেখা হতো অন্তিকের বদৌলতে।ʼʼ
-“হু, আর?ʼʼ
অন্তূ খুব উৎসাহিত হয়ে ওঠে, “আব্বু ব্যাপারটা অনেকটা টাইম প্যারাডক্সের মতো। ব্যাখ্যা করব?ʼʼ
আমজাদ সাহেব চেয়ে রইলেন। অন্তূ বলল, “টাইম প্যারাডক্স হলো, ধরো—তুমি যেকোনোভাবে অতীতে গিয়ে তোমার দাদাকে তার ছোটবেলায় খুন করে এলে। এখন এখানে অনেক ‘কিন্তুʼ রয়ে যায়। তোমার দাদা যদি তার ছোট বয়সেই খুন হয়ে যায়, তাহলে সে বড় হয়নি, বিয়ে করেনি অর্থাৎ তোমার বাবার জন্ম হয়নি। আর তোমার বাবার জন্ম না হলে তুমি জন্মালে কোত্থেকে? আর যদি তুমি জন্মেই না থাকো, তাহলে তোমার দাদাকে খুনটা করল কে?ʼʼ
আমজাদ সাহেব মৃদু হাসলেন, “সমাজবিজ্ঞান ছেড়ে কীসে মন দিয়েছিস?ʼʼ
মলিন হাসে অন্তূ, “সমাজবিজ্ঞান! যে সমাজের সিস্টেম এবং বসবাসরত একেকটা মানুষের দৃষ্টিকোণকে আমি মৃত্যুর মতো ঘেন্না করি, সেই সমাজবিজ্ঞান নিয়ে ভাবার রুচি কোথায় আব্বু? সে তুমি যা-ই বলো। বিষয়টা মিলল না?ʼʼ
-“বুঝতে পারছি না।ʼʼ
“আমি বুঝতে পারছি খুব। আমি যদি সেদিন জয় আমিরকে প্রতিহত না করতাম, তাহলে পরবর্তিতে আর এতসব তামাশা হতো না। আর তামাশা যখন হয়েছে, একবার প্রতিহত করার ফলে। আর প্রতিহত যে একবার করতে পারে, সে কি আর পরের বার মেনে নেয়? আজীবনেও মেনে নেয়না। তুমি বলতে আব্বু।ʼʼ
-“এখনও বলছি।ʼʼ
‘“তাহলে তো হলোই। এ তো চিরধার্য ছিল।ʼʼ
-“তাহলে আর ভুল বলছিস কোনটাকে?ʼʼ
-“ভুল?ʼʼ অন্তূ হাসে, “সবই ভুল। জন্মানো ভুল, বেঁচে থাকা ভুল।ʼʼ
-“কী চাস?ʼʼ
-“দূরে যেতে। আমি আর নিতে পারছি না।ʼʼ
‘“তাতে কী হবে?ʼʼ
-“আমি ফুরিয়ে যাব।ʼʼ
-“এটাই চেয়েছিলি?ʼʼ
-“পারছি না আর নিজেকে টানতে। কী করতে বলো? মোকাবেলা করার শক্তি, বুদ্ধি অথবা দক্ষতা আমার নেই। আমি যা করি তা-ই ভুল হয়ে যায়। অথচ আমার ধারণা, সে-সব আমি না করলে ভুল হতো না। অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন—যা আমি করব তা ভুল। যা ভুল তা আমি করব।ʼʼ
-“আধ্যাত্মিকতা?ʼʼ
‘“হতে পারে। ওসবই মাথায় ঘুরছে আজকাল। এই ক্লান্তির শেষ দরকার বুঝলে? তাতে আমি ভিলেন হবো, অযোক্তিক আর খারাপ হবো।ʼʼ
-“হয়ে যা।ʼʼ
-“কিন্তু কী করব?ʼʼ
‘“কিচ্ছু করিসনা। সুযোগ বলবে।ʼʼ
-“আর বাচ্চাগুলো?ʼʼ
-“যেগুলোকে তুই ভুল বলিস, এই ভাবনাগুলোই সেগুলো, অন্তূ। তোকে এত প্রতিবাদী হতে হবেনা। স্বার্থপর হ, লোকের বাহবাসহ জীবনে সব পাবি।ʼʼ
-“সত্যি নাকি?ʼʼ
-“হতেও পারে, নাও হতে পারে।
-“দায়সারা কথা বলছো।ʼʼ
‘“জীবনটাও তো দায়সারাই, অন্তূ। চলছে না তবু চালাও, পারছি না তবু পেরে ওঠো, কোনোমতো কেটে গেলেই মৃত্যু। দায় সারতেই আমরা জীবনকে টানি। কোনোমতো শেষদ্বারে পৌঁছে দিয়ে দায় সারি।ʼʼ
অন্তূ এবং আমজাদ সাহেব বসে থাকেন পাশাপাশি। কেউ অনেকক্ষণ কোনো কথা বলেনা। হঠাৎ-ই আমজাদ সাহেব বলেন, “অন্তূ?ʼʼ
‘“হু, আব্বু?ʼʼ
-“তুই কোনো ভুল করিসনি। আজ অবধি তুই যা করেছিস। তা একটাও ভুল ছিল না, আর না ছিল বোকামি। তুই যে কতটা শক্তিশালী তা তুই জানিস না। গভীর দৃষ্টিকোণ ছাড়া বোঝা যাবেনা। তোর প্রতিটা কাজের বহুল ব্যাখ্যা আর যুক্তি আছে। সেসব বোঝার দৃষ্টিকোণ সবার থাকবেনা। পরিস্থিতি মাফিক সব ঠিক ছিল। সবশেষে হতে পারিস তুই ভুল অথবা ঠিক। তাতে যায় আসেনা। যা মন বলবে করবি। পিছুটান নেই কোথাও। সবাই পিছুটান রাখলে সবাই যে মায়ার গোলাম হয়ে পড়বে। মায়ার গোলামেরা অধম হয়। পরিবার-পরিজন, সুন্দর জীবনের আশায় ব্যক্তিত্ব ত্যাগ ভালো নয়। তারা একেকটা অদামী, অকর্মণ্য।ʼʼ
-“আব্বু আমি ভুল করেছি। আর তার ফলেই এসব ঘটছে।ʼʼ
-“কোনটা ভুল, অন্তূ? আর এসব থেকে বাঁচতে কী করার ছিল? তুই ওই কবিতা পড়িসনি? এক লোক রাস্তায় বের হতোনা, গাড়ি চাপা পড়ার ভয়ে। নৌকা চরতো না, ডুবে মরার ভয়ে। ফ্যান চালাতো না, ফ্যান ভেঙে পড়ার ভয়ে..ওই জীবনযাপন করলে সব ঠিক থাকতো? জীবনে টানপোড়েন আসবেই। তার শর্ত—জন্মগ্রহণ করা। আর জন্মগ্রহণেল পর আর ধারাবাহিকতা থামানো যায়না। এসব ভাববি না।ʼʼ
-“আব্বু, গতকাল তুলি আপু বলছিল, জয় আমির আমার ঢাল।ʼʼ
-“হু, ঢাল। আগুনের তৈরি জলন্ত ঢাল।ʼʼ
অন্তূ অবাক হয়ে যায়। আমজাদ সাহেব বললেন, “যেটাকে হাতে চেপে ধরে রেখে তুই সামনের শত্রুর যাবতীয় আঘাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিস।ʼʼ
অন্তূ অদ্ভুতাভাবে হাসল, “এদিকে আমার হাত যে ঝলছে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, আব্বু!ʼʼ
আমজাদ সাহেব সাঁয় দেয়া মুচকি হাসলেন, “তাতে কী?
জয় আমিরের ক্ষয়—তোর জয়। এটাই নিয়ম। চেঙ্গিস খানও আজ মাটিতে মিশে গেছে। সবার ধ্বংস হতে হয়। আর একেক ধ্বংসের মাঝে বৈপরীত্যের নতুন সৃষ্টি থাকে। এটা সূত্র। এটা চক্র।ʼʼ
-“আব্বু, তুমি বদলেছ? শতভাগ কথা তোমার নয়। তোমার কথাতে আমার সংমিশ্রণ!ʼʼ
-“আমি? আমি আজ কে?ʼʼ
অন্তূ অবাক হয়ে তাকায়। আসলেই তো! কার সাথে কথা বলছে সে! কেউ তো নেই। তবে কে?
—
জয়কে কল করেছিল পলাশ সন্ধ্যার পর। হামজা তখন কিছু ফাইল দেখছে সোফাতে বসে। জয় লম্বা একচা সালাম দিলো, “স্লা-মা-লে-কুম, পলাশ ভাই।ʼʼ
পলাশ হাসল, “সালাম, বস। ভালো?ʼʼ
-“বলেছি, এই প্রশ্ন জয়কে করবেন না। সে সদাসর্বদা ভালো। মানুষটাও ভালো, থাকেও ভালো। ভালো থাকা একটা পেশা, একটা ব্যবসা।ʼʼ
-“পুঁজি কী এই ব্যবসার?ʼʼ
-“মানুষকে খারাপ রাখা। ইটস ল অফ রিলিটিভিটি পলাশ ভাই। মানুষ খারাপ থাকলে, তার তুলনায় আমি ভালো থাকব।ʼʼ
-“তোর বউকে আমার হাতে দিবি না, সেটার জন্য ডিসকাশনে আসা যেত। এইডা কী করলি বাপ?ʼʼ চাপা হিঃস্রতা পলাশের হাসি হাসি রবে বলা কথাতেও লুকায় না
হামজা বলল, “স্পিকার লাউড কর।ʼʼ
তরু এসে দুইকাপ আদা চা দিয়ে গেল। সারাবছর জয়ের ঠাণ্ডা লেগে থাকে। তরুর ধারণা, কবে জানি এই লোকের নিউমোনিয়া বা অ্যাজমা ধরা পড়বে।
জয় মাথা নাড়ল, “বোকা সাজবেন না, পলাশ ভাই। আপনাকে বিশাল বেমানান লাগে। বউ তো আমি দেবই না। বউ হবার আগে দেইনাই। এখন কেমনে কী? কাহিনি অন্যডা। বউ রক্ষা করা কোনো বিষয় না, ভাই। ওটা আমি না চাইলেও হবে। আমার বউ যে-সে জিনিস না।ʼʼ
-“কাহিনি? কী কাহিনি?ʼʼ
-“মাজহার মাজহার। আমি আপনারে কইছিলাম, ওর সাথে মিলে কোনোদিন আমাদের পেছনে লাগবেন না। তবু আপনি বরাবর তাই করে আসতেছেন। আমি আপনারে কোনোদিন বিশ্বাস করি নাই যদিও, তবু আপনি একটা বিশ্বাসঘাতকতা টাইপের বিট্রে করছেন। যার ফকিরের সিরনি খান, সেই ফকির চেনেন না, নাআআ! হলো মিয়া? মাজহার তো বাদামের খোসা। আপনাকে ব্যাক-আপ দিই আমরা। তবু ছলচাতুরি?ʼʼ
-“আমি কিছু করিনি। মাজহার যা করতে চেয়েছিল আমি বাঁধা দিয়েছি।ʼʼ
-“বাচ্চা দুষ্টুমি করলে মা’দেরও ওরকম দু চারটে মিঠা ধমক দিতে দেখছি। ও ব্যাপার না। ওটাকে প্রশ্রয় বলে। আমার চেয়ে বেশি কেউ পায়নি ও জিনিস।ʼʼ
-“তুই ভুল বুঝে কাম ভালো করিসনি, বাপ।ʼʼ
-“এই একটা কথা বললেন? ইমেজ নষ্ট করা কথা। আমি জীবনে ভালো কাম করিনি। এটা আমার পারমানেন্ট ইমেজ। অথচ আপনি এমন টোনে কথাটা বললেন, যেন রোজ ভালো কাম করি, আজ একটা খারাপ করছি। এইটা হইলো? নাহ। আমি মরব খুব তাড়াতাড়ি। তবু শুধরাবো না, নিজেকে কন্ট্রোল করব না। ছোট্ট জীবনে অত ভাবনাচিন্তা রাখিনা। যখন যা মনে চায় করি। কল রাখেন। কল করে ফ্যারফ্যার করার চেয়ে আমার পেছনে বাঁশ না কঞ্চি দেবেন, সেটা দেবেন কীভাবে, সেইসব পরিকল্পনা করেন। ইয়া হাবিবি। আল্লাহ হাফেজ।ʼʼ
হামজা কপালে হাত চেপে হেসে ফেলল। জয় বলল, “ঘাপলা আছে ভাই। ওর মতোন মাতানষ্ট পাগল শালা এমন বাংলা সিনেমার মতো সরল ফোনালাপ করতে কল লাগাইছে। কাহিনিটা এডজাস্ট হচ্ছে না শরীরে। কিড়মিড় করতেছে।ʼʼ
হামজা শান্ত স্বরে বলল, “তোর ফোন ট্র্যাকডাউন করার জন্য হতে পারে।ʼʼ
-“এত উন্নত ডিভাইস তো কোনো এসবি ডিপার্টমেন্টেও নাই।ʼʼ
-“ওর কাছে থাকলে কী?ʼʼ
-“তা মানে বুঝছো?ʼʼ
-“দিনাজপুরে নেই ও। আই গ্যেস, ঢাকাতে কোথাও আছে। কঠিন প্লান-প্রোগ্রাম চলছে।ʼʼ
কাগজপত্র ছুঁড়ে ফেলার মতো টেবিলে ফেলল হামজা। একটাতেও মনের মতো কিছু নেই। জয়কে বলল, এগুলো স্টেটমেন্ট? এসব রাজধানীতে পাঠালে উপরমহল মাজায় লাত্থি ছাড়া কিছু দেবেনা।
কল করে কাউকে ডেকে বসে রইল দুজন চুপচাপ। আদা-চা ঠান্ডা হয়ে এসেছে। শরবতের মতো সেই চা জয় শব্দ করে বাচ্চাদের মতো চুমুক দিয়ে খেতে লাগল।
হামজার উপরমহল দেশের ক্ষমতাসীন দলের মহাকর্তারা। তারা অ-বিনিময়ে কিছু দেয়না। বিরোধী দলের ছেলেদের আঁটক করা, অত্যাচার করা, মিথ্যা অপরাধ সাজিয়ে কারাগারে ঢোকানোর মতো কাজগুলো হামজার মতো উঠতি নেতাকর্মীদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। তাদের প্রোফিট তারা কাজের স্কোর অনুযায়ী নিবার্চনের আগ আগ দিয়ে পেয়ে যাবে—নীরব চুক্তিটা এমন হয়।
যে যতটা ভালো কাজ দেখাতে পারবে, ক্ষমতা পাবার ক্যান্ডিডেটদের মাঝে তারাই অবশ্যই অগ্রগামী থাকবে। হামজা যা করছে, যা করতে চাইছে; ২০১৮ এর সংসদ নির্বাচনে একটা মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা নেহাত কম নয়।
ডাউন পার্টি মাজহার। সে মানতে পারল না বিষয়টা। প্যাঁচ লাগালো। কঠিন প্যাঁচ। যে কাজ হামজা এবং জয় মাসখানেক আগে করে ফেলতে পারতো, তা গতরাতে সম্ভব হয়েছে। মাজহারকে পুরোটা সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছে পলাশ। নয়ত পলাশের বাপ বেকার বসে আছে, দলছূট হয়ে গেছে। তারা এখন আম-জনতার চেয়ে বেশি কিছু না।
শত্রুর শত্রু নিজের বন্ধু। মাজহার নীতিটা পালন করেছে। পলাশের ব্যবসায়ীক পার্টনারশীপের জেরে হামজাদের অধিকাংশ কাজের খোঁজ পলাশের কাছে থাকে। পলাশ তা লিক করতো মাজহারের কাছে। মাজহার নিজে ক্ষমতাসীন দলের চামচামী করলেও এবার হিংসাপরায়নতা তাকে বিরোধী দলকে গোপন তথ্য দেবার কাজে নিয়োজিত করেছিল। এলার্টেশন পেয়ে পেয়ে ওরা নিজেদের গুটিয়েছে। জয়-হামজার পেরেসানী চরমে পৌঁছেছিল। দিনের পর দিন দুই ভাই ছুটেছে।
শেষ অবধি বাচ্চাগুলোর অসহায়ত্বের চিত্র, ভিডিও, বিবরণ তাদের সফল করেছে। অতগুলো বাচ্চার জীবন বাঁচাতে তাদের ধর্মের বড় ভাইয়েরি ছুটে আসবেনা, তা হয় নাকি? ধরা দিয়েছে। শর্ত ছিল, বাচ্চাদের ছেড়ে দেয়া। হামজা দেয়নি। ওরা জানের ভয় অল্পও পায়না। বাচ্চাদের ছেড়ে দিলে ওরা মৃত্যু কবুল করবে, তবু কোনো জবানবন্দি দেবেনা।
আজ বাচ্চারা পেট পুড়ে খেয়েছে। খেতে পায়নি তাদের আমিরেরা। খেয়েছে—মার। সেসব হজম করতে না পেরে লুটিয়ে পড়েছে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে।
হ্যাংলা পাতলা চেহারারার রন্টু এসে দাঁড়াল হামজার সামনে। কপালে হাত ঠেকিয়ে মাথা নুইয়ে সালাম ঠুকলো।।সে হাঁপাচ্ছে। হামজা জিজ্ঞেস করল, “কী অবস্থা?ʼʼ
-“ভাই। পাথরের মতোন মার খাইতেছে। তবু কথা কয়না। আমার কাছে আবার ওযুর পানি চাইছে, ইশার নামার পড়ব।ʼʼ
জয় উঠল। এক মগ পানি নিলো বাথরুম থেকে। হলরুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হামজা ডাকে, “কোথায় যাচ্ছিস?ʼʼ
জয় ফিরে তাকায়, “একটু সাক্ষাৎ করে আসি। আর ওযুর পানি দিয়ে আসি।ʼʼ
-“আঘাত করিস না এখন আর।ʼʼ
-“করব না।ʼʼ
রন্টু ডাকে, “ভাই?ʼʼ
আনমনে জবাব দেয় হামজা, “হু!ʼʼ
-“ভাই, একটা কথা কই?ʼʼ
-“বল।ʼʼ
-“আগে বহুত এমন কেস সাল্টাইছি। একটু মারলেই ওগোরে ধর্ম-টর্ম সব গোড়ের ভিত্রে পালায়। এইরকম শক্ত জান দেহি নাই। ভাই, আমার কাছে আবার ওযুর পানি চায়। একটু টু শব্দ করেনা, ব্যথাও লাগেনা মনেঅয়। কেডা ভাই ওইডা? আগেও বহুত শিবিরের ছাওয়ালরে খালাস করছি। উরা মরার আগে বাঁচতে চাইছে। নামাজ কালাম পড়তে চায় নাই। আজকের বাকিগলাও ওই লোকটার মতোন না। অত শক্ত ছিল না। এইটা আলাদা…ʼʼ
হামজা শান্ত চোখ তুলে তাকালে রন্টু ঢোক গিলল। ভয়ে আর কথা বলল না। চলে গেল দ্রুত হামজার সামনে থেকে।
—
নিচতলার আঙিনা পার্টির ছেলেদের আনাগোনায় গমগম করে সারাক্ষণ। নিচে যেন বহুদিনব্যাপী উৎসব চলে সারাবছর পাটোয়ারী বাড়িতে। সেটা আরও বেড়েছে হুমায়ুন পাটোয়ারীর মৃত্যূর পর। একগাদা সৈন্য মোতায়েন রেখে দুই ভাই বেরিয়ে গেল সন্ধ্যার আগে। চারদিকের ঝামেলা সামাল দিতে হচ্ছে একসাথে। অন্তূ বেশ কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখল নিচের আঙিনায় ভেতরবাড়ির পাহারাগুলো। ক্লাবঘরে আগুন লাগার পর থেকে ওখানের আড্ডাটা তুলে এনে এখানে বসানো হয়েছে যেন। রাতের রান্না চড়িয়েছে তরু।
অন্তূ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। কতরকম ভাবনা মনেমনে খেলা করে যায়। জয় আমিরের ওপর সে কৃতজ্ঞ। জয় আমির তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কৃতজ্ঞ সে। ঠিক যেমন মানুষ কৃতজ্ঞ থাকে এন্টিবায়োটিক ওষুধের ওপর। যেটা রোগ সারানোর সাথে সাথে শরীরের ইমিউন সিস্টেম দূর্বল করে, শক্তিমত্তা হনন করে, মাস খানেকের জন্য অকেজো করে মানবদেহকে এবং বৃক্কে এক প্রকার স্থায়ি ক্ষতিসাধন করে যায় চলমান-হারে। জয় আমির দাহ্য রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর মতোই ভালো। অন্তূ এসব ভেবে হাসে।
রিমি এসে কখন পেছনে দাঁড়িয়েছে, টের পায়নি। জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলবেন?ʼʼ
-“আপনার রুম বহুদূরে। কানে কিছুই আসেনা, না?ʼʼ
-“হবে হয়ত। তাতে তো ভালো। কান ভালো আছে।ʼʼ
-“আমার নেই।ʼʼ
-“ঘর পরিবর্তন করুন।ʼʼ মুখ ফিরিয়ে অনীহার সাথে বলল অন্তূ।
-“আপনার কী হয়েছে, আরমিণ? অন্যরকম লাগছে।ʼʼ
-“শুধরাতে চাই নিজেকে।ʼʼ
-“মানে?ʼʼ
-“কেন এসেছেন?ʼʼ
-“চাবি এনেছি।ʼʼ
“ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে রেখে দিন জায়গার চাবি জায়গায়।ʼʼ
-“আপনি যাবেন এখন বড়ঘরে।ʼʼ
-“প্রশ্নই ওঠেনা। আমি নিজের আর বিপদ বাড়াবো না। এই বিপদে পড়ার ফলে কার কার ওপর যে কৃতজ্ঞতা রাখতে হচ্ছে, রিমি। ভাবতে পারেন? আমি বিপদে আছি, তা থেকে প্রোটেক্ট করছে আমায়। আর আমার তার ওপর কৃতজ্ঞতা রাখতে হচ্ছে। এর চেয়ে আর কী খারাপ খেসারত গুনলাম? এটাই সবচেয়ে কঠিন। তাই আর বিপদ নয়, আর না নতুন কৃতজ্ঞতা। ʼʼ
-“এত অহংকার আপনার?ʼʼ
-“ভুলভাল শব্দ উচ্চারণ করছেন, রিমি। ওটা আত্মমর্যাদাবোধ। কোনো পাপীষ্ঠর ওপর কৃতজ্ঞতাবোধ একপ্রকার আত্মগ্লানি। এত আত্মগ্লানি বইতে পারছি না।ʼʼ
“ওদের প্রতিটা আঘাতের আত্মচিৎকার আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে। এতদিন এভাবে টর্চার করা হয়নি ওদের।ʼʼ
-“হয়নি, এখন হবে। খারাপ কী? তাতে আমারই বা কী? আমি মানুষ, সাধারণ এক অসহায় মেয়ে। আমার ক্ষমতা নেই ওদের সহায়তা করার।ʼʼ
-“এমন কেন করছেন কেন? এত শক্ত হচ্ছেন কেন? প্লিজ, আরমিণ। আপনি সাহসী। আমি পারিনা ওসব দেখতে, মোকাবেলা করতে। আপনি পারেন। আপনার সাহস আছে।ʼʼ
অন্তূ শক্ত গলায় চিবিয়ে বলল, “সাহস? কীসের সাহস? হারানোর সাহস, তাই তো? বাপ-ভাই-ক্যারিয়ার-সুন্দর জীবন—সব হারিয়ে ফেলার বোকা সাহস আছে তাই তো? অথচ আপনারা চালাক। নিজেদের গা বাঁচিয়ে যা হয় করেন। আপনাদের কোনো শত্রু নেই, ক্ষয় নেই। ড্যাম অন মি। এই কথাগুলো বুঝতে এতগুলো দিন লেগেছে আমার।ʼʼ
রিমি কেমন কাতর হয়ে উঠল, “আমি মানছি। সব মানছি। কিন্তু ওদের শরীরের ব্যথার কাতরানির আওয়াজ সহ্য হচ্ছেনা আমার। আপনি একটু দেখে আসুন। পায়ে পড়ি, আরমিণ। যান বড়ঘরে একবার। সমস্ত ভার আমার। ওরা এখনও ব্যথায় ছটফট করে চিৎকার করছে। আমার কানে সইছেনা।ʼʼ
সিঁড়ির দরজা খুলতে এইদিন অন্তূর খুব হাত কেঁপেছিল। সে জানে না ভেতরে কী দেখবে। সেই কণ্ঠস্বর, সেই বিদ্রোহী সংগীতের মালিক!
বড়ঘরে পা রাখতে পা টলছিল খুব। হাত-পা জড়িয়ে আসছিল। পশ্চিম কোণের লোহার দরজার ওপাশে ছেলেদের আওয়াজ আসছে। ওরা যদি ভেতরে ঢুকে আসে, কী করে সামাল দেবে সে? খালি হাত তার।
সে কম্পিত পায়ে বড়ঘরের ভেতরে গিয়ে দাঁড়ায়। কড়া পাওয়ারের স্পটলাইট ঝুলছে মাথার ওপরে। দুজন কাত হয়ে শুয়ে আছে। আব্দুল আহাদকে দূর থেকে চিনতে পারল অন্তূ।
তার পা উঠছিল না। তবু হেঁটে এগিয়ে গেল। ওরা সবাই মিলে আহতদের সেবা করছে। অন্তূ মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। চারজন নতুন পুরুষ। দুজন পড়ে আছে। একজন পা ছড়িয়ে বসে পায়ের ক্ষততে হাত বুলাচ্ছে। রডের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে চামড়া, ত্বক বিদীর্ণ হয়ে মাংস থেতলে যাওয়া স্থানে হাত বুলাচ্ছে।
চতুর্থজন দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখ বুজে বসে আছে। হাতে ব্যন্ডেজ। কপালে শুকনো রক্ত। মুখটা ওপাশে কাত হয়ে থাকায় দেখতে পেল না অন্তূ। পায়ে শিকলের বেড়ি আঁটকানো। তা তালাবদ্ধ লোহার বীমের সাথে। অন্তূ কয়েক কদম এগিয়ে গেল। মাথার চওড়া ওড়নার প্রান্তটা আরেকটু টেনে দিলো। সকলেই ফিরে তাকায় ওর দিকে। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।
চতুর্থজন বাহিরের মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েও মুখ ফেরানোর তাড়াবোধ করছিল না যেন। অন্তূ আব্দুল আহাদকে বলল, “খেয়েছ কিছু?ʼʼ
শুকনো মুখে মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায় আব্দুল আহাদ। অন্তূ, কাছে মিথ্যা ঠেকল। নারীকণ্ঠের আওয়াজ পেয়ে সেই পুরুষ মুখ ফেরায়। অন্তূর রক্ত সঞ্চালন থামল। কাঠের আসবাবের মতো জমে দাঁড়িয়ে থাকল।
সেই চোখ। রুমালে বাঁধা মুখোশের আড়ালে যে চোখদুটো তেজস্ক্রিয় রশ্মির মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলেছিল সেদিন। সেই চোখজোড়াকে অন্তূ ভুলবে কোনোদিন? চাপদাড়িতে প্রসস্থ মুখখানা স্লান সেই পুরুষের। পরনে খাদি কাপড়ের ফতোয়া। কালো প্যান্ট। তার কয়েক স্থানে ছেঁড়া। হাতের কালো বেল্টের ঘড়িটার কাঁচ ফেটে গেছে।
অন্তূ খেয়াল করে পায়ের যে স্থানে শিকলের বেড়ি, স্থানটায় রক্ত জমাট বেধে দগদগে ঘা তৈরি হয়েছে। পুরুষটি সোজা হয়ে বসল। নিজের দৃষ্টি সংযত করে অন্যদিকে তাকিয়ে অন্তূকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এখানে এসেছেন কেন? ফিরে যান ভেতরবাড়িতে। নিজের ঝুঁকি বাড়াবেন না।ʼʼ
সেই সুতীব্র ভরাট কণ্ঠস্বর। সেদিন রাতের বিদ্রোহী স্বর! অন্তূ চোখ নামায়। শুধু এটুকু উচ্চারণ করতে পারে, “কে আপনি?ʼʼ
-“আমি….সৈয়দ মুরসালিন মহান।ʼʼ
অন্তূ দু কদম পেছায়। চোখের পলক ফেলেনা।
চলবে..
[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। বেশি বেশি মন্তব্য চাই কিন্তু😑]