অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ৫৬.

0
1

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৫৬.

গোসল করে কোমড়ে গামছা পেঁচিয়ে বের হলো জয়। পা থেকে হাঁটু অবধি পশমে আবৃত। খোলা বুকে পশমে ঢাকা। টপটপ করে পানি পড়ছে চুল থেকে। চুল মুছতে পারেনা ঠিকমতো জয়। পানি তার শরীরে লেগে থাকা মাটি ও রক্ত ধুয়ে নিয়ে চলে গেছে, নিতে পারেনি মুখের কাঠিন্য। তার ওপর বিভৎস সেই গায়ে কাঁটা দেয়া দাগগুলো। চোখদুটো লাল, তাতে বুঝি এখনও রক্তের নেশা!

অন্তূর মনে প্রশ্ন জাগে, খুন করলে কি পুরুষদের গোসল করতে হয়? যতবার জয় মরপিট করে ফিরেছে, যত রাতই হোক গোসল করতে দেখেছে। আজ নাহয় মাটি ছিল, আগেও দেখেছে গোসল করতে।

তখনও শরীরটাও প্রায় ভেজা। কোনোমতো শুধু গামছা পেঁচিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। আচমকা এক অ-কাজ করল। অন্তূর বুক থেকে একটানে ওড়নাটা ছিনিয়ে নিয়ে গলায় পেঁচালো। গামছা ধরণের কিছু গলায় থাকলে সেটা বড় তৃপ্তিদায়ক লাগে তার। শরীর ঘামে প্রচুর। তার ওসর ছোটবেলার অভ্যাস—গলায় কিছু না রাখলে চলেনা যেন। সেই ওড়না দিয়ে ঘাঁড় এদিক-ওদিক কাত করে ভেজা শরীরটা মুছে লুঙ্গি পরলো।

হামজা রুমে ঢুকল। রিমি শুয়ে আছে। শরীরটা ভেঙে পড়েছে মেয়েটার। হামজা কপালে হাত রাখল। ঠোঁট, নাক লাল হয়ে আছে, মুখটা ফোলা ফোলা। অতিরিক্ত কান্না করেছে, ভয় পেয়েছে। জয় যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল হামজার সাথে দেখা করে, দৌড়ে হামজার কাছে গেছিল।

সোফাতে বসা হামজা তখন। রিমি দৌড়ে গিয়ে স্বামীর পায়ের কাছে লুটিয়ে বসল। হাঁটুদুটো দু’হাতের বাহুতে জড়িয়ে লাল চিকচিকে চোখ মেলে জিজ্ঞেস করেছিল, “জয় ভাইয়া কোথায় যাচ্ছে, মেয়র সাহেব? মাজহার ভাইকে মারতে?ʼʼ

কঠোর বলিষ্ট হাতের মুঠোয় হামজা রিমির থুতনিটা আলতো করে ধরে আঙুল দিয়ে আদর করে বলেছিল, “তোমার আরাম করা দরকার। রুমে যাও। আমি আসছি।ʼʼ

রিমি যায়নি। স্বামীর হাঁটুতে আস্তে করে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে আঁচল বিছিয়ে পা মেলে দিয়ে পড়ে ছিল। হামজা রিমির চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গভীর ভাবনায় মত্ত হয়েছিল। থেকে থেকে তুলির মেয়ের কান্না ভেসে আসছিল। তরু ছাড়া কোয়েলকে কেউ চুপ করাতে পারেনা। রিমি আরও হাতরে ধরল হামজাকে। যেন সে আশ্রয় চায়। কঠিন দেবদূতের মতো চেহারার ওই শক্ত-সামর্থ্য পাষাণ্ড পুরুষটির খুব কাছে রিমির ছোট্ট দেহ ও দূর্বল মনটা একটুখানি আশ্রয় চায়।

হামজা তখন উঠে রিমিকে কোলে তুলে নিলো। রিমি হু হু করে কেঁদে উঠে মুখ লুকায় স্বামীর বুকে। হামজা আর বোঝার চেষ্টা করল না, কেন কাঁদছে তার বউ। নারীকে বোঝার চেষ্টা করার অপচেষ্টা সে কখনোই করেনি। হামজার বিশ্বাস, নারীজাতকে বুঝতে চেষ্টা করলে এ জনম ফুরোবে, পুরুষ জন্মটা পুরোটা বৃথা পড়ে যাবে। নারীদের নিয়ে হামজার কোনোকালে বিশেষ জ্ঞানধারা নেই।

আস্তে করে এনে যখন রিমির কুঁকড়ে যাওয়া শরীরটাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো, রিমি তখনও গলা ছাড়েনি হামজার। হামজার ভারী পৌরুষ দেহটাকে অনেকক্ষণ ওভাবেই ফেলে রাখতে হয়েছিল রিমির শরীরটার ওপর। পরে একটু ঘুমিয়েছিল।

এখন আবারও কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে যখন সরে যাচ্ছিল, রিমি ধরল, অর্থাৎ সে জেগে উঠেছে। আস্তে আস্তে উঠে বসল হামজার বাহু আঁকড়ে ধরে। হামজাকে বসালো সামনে। হাতদুটো গুটিয়ে কোলের ওপর রেখে হামজার কাঁধে কপাল ঠেকালো। হামজা আস্তে করে ভারিক্কি গলায় জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে, বেগম?ʼʼ

রিমি ডুকরে ওঠে, কণ্ঠ কাঁপে মেয়েটার, “জয় ভাইয়া ফিরে এসেছে?ʼʼ

-“সাথে তোমার মাজহার ভাইয়ের দেহের বিভিন্ন খণ্ড এনেছে বোধহয়, দেখবে?ʼʼ

হামজার বরফশীতল কণ্ঠস্বর, তাতে রাজ্যের বর্বরতা যেন। রিমির কান্নারত দেহটা কেঁপে উঠল পুরুষটির নিঠুরতায়, তবু কেঁপে উঠে সেই পুরুষটিকেই আঁকড়ে চেপে ধরল খামছি দিয়ে। হামজা আবারও বিভ্রান্ত হয় নারীচরিত্রে। সে বোঝেনা এদের, কখনোই না, চেষ্টাও করেনা তাই। শুধু টের পেল, আজ মাজহারের ওপর পুরোনো স্মৃতির দমক আছে তার বউয়ের, তবু সাথে প্রশ্রয়ও আছে যে তারা মাজহারকে টুকরো টুকরো করে পশু দিয়ে খাওয়াতে পারে। রিমি তা কষ্ট ও সুখ দুটো মিশিয়ে অদ্ভুত অনুভূতি সহকারে দেখবে। আপন লোকের অতি-পাপ মানুষকে অন্যরকম কষ্ট দেয়, তা ব্যাখ্যাতীত। সেখানে স্নেহের টান নয় বিশ্বাস ভাঙার যন্ত্রণা থাকে।

হামজা অনেকক্ষণ জড়িয়ে-চেপে ধরে বসে রইল রিমিকে। ছোট্ট শরীরটা কাঁপছে। ছটফট করছে হামজার বুকের ভেতর পড়ে। হামজা জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে? কেমন লাগছে?ʼʼ

জড়িয়ে এলো রিমির কণ্ঠস্বর, “তরু…ʼʼ বলেই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল হামজার অর্ধঘর্মাক্ত শক্ত শরীরটা। কয়েকটা খামছিও বসে গেল সেখানে। আরও আরও চেপে ধরতে চাইছে যেন, খামছিগুলো দিয়ে ক্ষোভ ও যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করে চলল। হামজা বাঁধা দিলো না, চুপচাপ চুলের ওপর হাত রেখে চেপে ধরে রইল নিজের সাথে। ফজরের আজান শেষ হয়ে গেছে। এখন আকাশ ফর্সা হয়ে উঠবে। হামজার ইচ্ছে করল, জয়কে সঙ্গে নিয়ে নামাজটা আদায় করে আসতে। সুযোগ নেই। কাজ আছে তার। বলল,

“ঘুমানোর চেষ্টা করো। সব ঠিক আছে, কিচ্ছু হয়নি। বড় বড় ঘটনার আগে এমন সব ছোট ছোট আভাস সইতে হয়। তাতে সহনশীলতা বাড়ে, রিমি। দেখো না, এডমেশন টেষ্টগুলো কত কঠিন মনে হয়! কেন কঠিন হয় বলো তো! কারণ, এডমিশন টেস্টের পর যে লেভেলটা, সেটা আরও বহুগুণ কঠিন। সেই এডমিশনের কাঠিন্য পাড়ি দিয়ে যে ক্যান্ডিডেটগুলো এগিয়ে যেতে পারে, ধরে নেয়া হয় এরা পরের ধাপের কাঠিন্য সইতে পারবে। নয়ত তো দেখতে যাকে-তাকেই ভালো কোথাও এডমিট নেয়া হতো। তা হয়না। বড় কিছুতে যোগদান করতে সেই সহনশীলতা চাই। এটুকুতে আমাদের ভাঙলে চলেনা, রিমি। আমি শিখিইনি তা। বয়স পনেরোতে থামিনি, তখনও এমন বহুত কিছু দেখেছি, তাই আজ এখানে। এখানে না থামলে আরও ওপরে। বুঝলে না তুমি! দরকার কী? সকাল হয়ে আসছে। ঘুমাও এখন। আমার কাজ আছে। জয় ডাকবে এখনই।ʼʼ

এত আদুরে গলায় এত হিংস্র সব কথা বলা যায়? এই প্রশ্নতেই আঁটকে থেকে রিমি দেখল তার স্বামী বেরিয়ে যাচ্ছে রুম থেকে। সে গুটিসুটি মেরে পড়ে রইল বিছনার সাথে। লোকটা কি তাকে অবহেলা করছে? এই ব্যস্ততা ফুরোবে কবে? এখন কি পারতো না রিমিকে জড়িয়ে নিতে একটু ঘুমিয়ে নিতে! আচ্ছা এই ব্যস্ততা কাটলেও কি রিমির পাশে শোবার জন্য ওই পাষাণ্ড পুরুষ থাকবে? রিমি আঁৎকে ওঠে। গলা শুকিয়ে আসে ওর। দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরতে ইচ্ছে হয় লোকটাকে। কিন্তু হাত-পা আঁটকে আছে বিছানার সাথে।

জয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “ভাই? হামজা ভাই…ʼʼ


বড়ঘরে দিন-রাত নেই। ও জায়গা চিরকাল অন্ধকূপ। তৈরিটাই ওভাবে করে নিয়েছিল হামজা। তাতে কোনো জানালা নেই।

জয় হাতের চটের বস্তাটা মেঝেতে ঘঁষে ঘঁষে টেনে এনে রাখল। শরীর তখনও ভেজা। মুরসালীন বলল, “এখন গোসল করলি নাকি?ʼʼ

জয় একবার তাকিয়ে দেখে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল, “তোর ওযুর পানি চাই তো বল।ʼʼ

মুরসালীন বেশ ক্লান্ত স্বরে বলল, “তা তো চাই। শুধু আমার নয়, সবারই চাই। হাতটা খুলে দে। বাথরুমেও যেতে হবে।ʼʼ

জয় কঠিন মুখে উপহাস করে উঠল, “হ একটু ইবাদত বন্দেগী বেশি করে কর। টপকে যাবি যখন-তখন। পাপ-টাপের মাফ চেয়ে নে।ʼʼ

উপহাসের স্লান হাসি হাসল মুরসালীন মহান, “হ্যাঁ। তা তো চেয়ে নিতেই হবে। তোদের এইদিক দিয়ে খুব সুবিধা, জয়। তোদের পাপ-টাপ নেই জীবনে, সৃষ্টিকর্তার ইবাদত বা ক্ষমা চাওয়ার ঝামেলাও নেই…ʼʼ

তীব্র খোঁচা মারা কথাটা শেষ হলোনা মুরসালীনের। জয় এক খণ্ড লোহা তীব্র বেগে ছুঁড়ে মারল মুরসালীনের দিকে। তা লাগলে নির্ঘাত মাথাটা ফেটে এখনই খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারতো মুরসালীনের। কিন্তু আঘাতটা ফসকে গেল। আর সেটা জয়ের ইচ্ছেতেই বুঝি!

মুরসালীনের হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে এসে জয় ধাতু গলানোর চুল্লিতে গুঁড়ো চুনাপাথর ও কোক মেশালো। যখন চুল্লি জ্বললো, বড়ঘরের তাপমাত্রা প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। ঘেমে আরেকবার গোসল করে উঠল জয় ও হামজা।

জয় চুল্লি জ্বালিয়ে কিছু গুড়ো লৌহ মেশাতে থাকল চুল্লিতে। হামজা চটের বস্তা উপুড় করে ঢালল। ঝরে পড়ল তাজা দুটো কাটা পা ও দুটো হাত। থকথকে হয়ে আছে শিরা-উপশিরা থেকে ঝরা কষানি ও জমাট বাঁধা রক্ত।এককোপে কেটে নিয়েছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। এখনও হাতের আঙুলে মাজহারের ব্যবহৃত মেটে রঙা পাথরের আংটিটা আছে। বাচ্চারা ভয় পাচ্ছিল। মুরসালীন থামালো ওদের।

হামজার কোনো বিশেষ খেয়াল নেই আজ ওদের দিকে। সে চাপ্পর দিয়ে মাজহারের কাটা হাত-পা ছোট ছোট টুকরো করছে। হাড়গুলো ছড়ানোর সময় পাথর ব্যবহার করল। এরপর টুকরোগুলো ছুঁড়ে মারল এক এক করে জলন্ত চুল্লিতে।

এমনিতেই গলিত লোহার গন্ধ অসহনীয় হয়। জয়-হামজা দুজন খুব অভ্যস্ত। কিন্তু বাচ্চাগুলো অস্থির হয়ে যাচ্ছিল। তার ওপর কাঁচা মানুষের মাংস, হাড় ইত্যাদি ঝলসে যেতে লাগল চুল্লিতে, অসহ্য দূর্গন্ধে বড়ঘরে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। মুরসালীন দেখল, জয় কিছু ঢালছে চুল্লিতে। হয়তা পেট্রোলিয়াম-কয়লা হবে।

বড়ঘরের ডানপাশে একটা ক্রুসেবল মেটাল-মেল্টিং মেশিন আছে। ওটা বোধহয় অচল। হামজা জিজ্ঞেস করল, “মাথাটা কোথায়?ʼʼ

-“পুঁতে রেখে এসেছি।ʼʼ

-“কবরস্থানে খাদেম ছিল?

-“বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।ʼʼ

-“টাকা দিতে হয়েছে?ʼʼ

জয় কথা বলল না। তার পুরো শরীরে ঝর্না বয়ে যাচ্ছে ঘামের। মুরসালীন নামাজ শেষ করে বসে দেখল দুই ভাইয়ের বর্বরতা চুপচাপ। মাজহারের মাথাটা কবর দিয়ে রেখে এসেছে, হাত-পা চারটা এখানে গলিয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে। অর্থাৎ কোথাও শুধু কোমড় থেকে গলা অবধি দেহখণ্ডটুকু ফেলে রেখে এসেছে। তা দেখে ওটা যে কার দেহখণ্ড তা শনাক্ত করাও মুশকিল।

মুরসালীনকে আবারও স্পটলাইটের নিচে বাঁধল জয়। মুরসালীন জিজ্ঞেস করল, “কাকে খণ্ড করে এলি? কী হয়েছে? কোনো পাপের পুরস্কার পেয়েছিপ নাকি আবার?ʼʼ

জয় মুরসালীনের দিকে কোমড় ঝুকিয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসল, “কলজেটা কচমচিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলব। কথাবার্তা মেপে বলবি।ʼʼ

মুরসালীন হাসল, “দাড়িপাল্লা কোথায়? আমার কথা মাপার আগে তোদের পাপ মাপতাম। কতটা পাপ জমা হলে বা তার প্রতিদান আসতে শুরু করে! তোদেরটা শুরু হয়েছে বোধহয়। অবশ্য শুধুই আন্দাজ আমার।ʼʼ

জয় ওর ডানহাত খোলা রেখে সামনে একটা মোড়া নিয়ে চেপে বসল। একটা কাগজ ও কলম এগিয়ে দিয়ে বলল, “একটা সুন্দর স্টেটমেন্ট দে তো, বাপ। বহুত জ্বালাচ্ছিস। এমনিতেই মন-মেজাজ ভালো না। যা বলছি, সেটা লেখ।ʼʼ

-“মন মেজাজের কী হয়েছে? বলবি তো।ʼʼ

-“যা বলছি, সেটা কর, মুরসালীন। কথা বলতে আগ্রহ পাচ্ছিনা।ʼʼ

মুরসালীন অটল পর্বতের ন্যায় মাথা নাড়ল, “এতই যদি সহজ হতো, তাহলে কি এতকিছু করতে হতো তোদের? এতদিনে পারলি না, আজ এমন কী হলো যে, সহজ ভাবছিস? আর কী বলতে বলছিস তোরা, যা আমি করিইনি। করলেও তা শুধুই প্রতিক্রিয়া। ক্রিয়া তোরা দেখিয়েছিলি শুরু থেকে। হাজার হাজার প্রাণ নিয়েছিস। সেসব অবিচারের এক ফোঁটা প্রতিক্রিয়ায় এত জ্বলন ধরেছে কেন তোদের? কিছুই করিনি আমরা। শুধু আল্লাহর নামে সয়ে যাচ্ছি।ʼʼ

-“করিসনি? শালা জঙ্গির দল। দেশদ্রোহী শালা তোরা। টুপি-দাড়ি গালে মাথায় ঝুলায়ে দেশের সাথে বেইমানি করে যাচ্ছিস যুগের পর যুগ।ʼʼ

-“কীসের বেইমানি, জয়? দেশটার অধঃপতনে কত আনা দায় আমাদের দিয়ে মিছেমিছি পাপমুক্তর অভিনয় করতে চাস তোরা? তোদের বিবেচনাবোধ খুলুক, আমিন।ʼʼ

হামজা শান্ত স্বরে বলল, “বেশি ঝটপটাচ্ছ, মুরসালীন। শান্ত হও।ʼʼ

-“নইলে কী করবেন?ʼʼ শান্তস্বরে বলল মুরসালীন, এরপর জয়ের দিকে ফিরল “তোদের বোঝাপড়া আমার সাথে। ওই বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দে। ওরা কিচ্ছু করেনি। তোদের শক্তি ক্ষমতার, আমাদেরটা দিলের। ভুলে যাসনা, প্রাণ নিয়ে যারা পালায় তাদের দৌড়ের গতি বেশি হয়। একবার ছেড়ে দিয়ে দেখ না! বেঁধে কেন রাখতে হয়, কারাগারে কেন দিতে হয়, রাতে আন্ধারে মেরে কেন ফেলতে হয়? রাজপথে সামনে আসার সৎ-সাহসটুকু বুকে নেই, তা জানিস তো তোরা। মিছেমিছি বাহাদুরী দেখাস না, ভাই। বিরক্ত লাগে।ʼʼ

জয় কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থেকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে কেবল শীতল স্বরে বলল, “স্টেটমেন্ট।ʼʼ

-“তুই শুধুই ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এসব করছিস, জয়। আর যেটা শুধুই ভুল বোঝাবুঝিতে সৃষ্টি হয়েছে তোর মাঝে।ʼʼ

জয় রোবটের মতো স্থির স্বরে কেবল উচ্চারণ করল শক্তমুখে, “স্টেটমেন্ট।ʼʼ

-“কীসের স্টেটমেন্ট?ʼʼ

-“দেশের সাথে গাদ্দারি করে আসছিস তোরা সেই পূর্ব পাকিস্তানের আমল থেকে। এখন আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেষ্টা করছিস দেশের ক্ষমতাকে উপড়ে ফেলে নিজেরা ক্ষমতায় বসতে। এসব লিখবি। কাকে কাকে মেরেছিস, আর কারা জিম্মি আছে তোদের কাছে, সেসবের হিসেব দিবি, সব স্বীকারক্তিমূলক একটা স্টেটমেন্ট চাই।ʼʼ জয়ের কণ্ঠ ফুঁড়ে আগুনের হল্কা ছুটছিল। আগুনটুকু গিলতে গিলতে যেন আবারও রিপিট করল কথাগুলো।ʼʼ

মুরসালীন শান্ত, স্থির কণ্ঠে বলল, “যে কথাগুলো বললি তার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা বা প্রমাণ আছে তোর কাছে?ʼʼ

হামজা চুপচাপ বসে ছিল। এবার তাকাল চোখ তুলে। জয় বলল, “একটা স্টেটমেন্ট দে।ʼʼ

-“মিথ্যা স্বীকারক্তি দেব? কিন্তু কেন?ʼʼ

-“ওদের বাঁচাতে। তুই তো আমির ওদের, না? তোর সামনে মরবে, দেখতে ভালো লাগবে না তোর।ʼʼ

-“ওরা বাঁচবে না এতে।ʼʼ

জয় দাঁত খিঁচে উঠল, “জয় আমিরের কথার নড়চড় হয়না।ʼʼ

মূরসালীন মাছি তাড়ানোর মতো অবজ্ঞা করে বলল, “রাখ তোর জিকির। কথায় কথায় কী এত নিজের নাম জপিস মূর্খর মতো! নিজের ভেতরে কখনও ঝেঁকে দেখেছিস, কতবড় ফাঁপা ঢোল তুই? এক পর্বতসম হাহাকার নিয়ে শুধু দাপিয়ে বেড়াচ্ছিস ক্ষমতার দাপটে। আদতেও কি তোর বলতে কিছু আছে?ʼʼ

সজোরে একটা ঘুষি মারল জয় মুরসালীনের ক্ষত-বিক্ষত মুখটার ওপর। রক্ত বেরিয়ে এলো। মুরসালীন মলিন মুখে হাসল, “তুই ‘সত্যিʼ নিতে পারছিস না, জয়। তুই জানিস আমি ঠিক, তুই ভুল। তবু এই ক্ষমতার দাপট, আর অপশক্তির দ্বিধান্বিত লড়াই। পিছু হটে যা। পাপ করিস না আর। হামজা ভাইয়ের ক্ষমতার খিদে আছে। তোর তো তা নেই। শুধুই ব্যক্তিগত আক্রোশ। ছেড়ে দে এসব।ʼʼ

একটু থেমে মুরসালীন বলল, “খিদে বড় খারাপ জিনিস, জয়। জানিস তো ১৯৭২ এর আন্দেজ পর্বতে প্ল্যান ক্রাশের ঘটনায় ৭২ দিন যে যাত্রীগুলো বরফের পর্বতে আঁটকে ছিল, খিদে ওদের কী পর্যায়ে নিয়ে গেছিল? ওরা নিজেদের সহযাত্রীদের দেহের মাংস ছিঁড়ে খেয়ে বেঁচে ছিল। এ থেকে আন্দাজ করতে পারবি, খিদে কতটা ভয়াবহ রিপু। শুধু পেটের খিদেই নয়, জয়। মানুষের ষড়রিপুর মাঝে একটি এই লোভনীয়-খিদে। সেটা যেকোনো কিছুর খিদে হতে পারে। হোক ক্ষমতার। যা মানুষকে সর্বোচ্চ নিচে অবধি নিতে পারে। হামজা ভাই থামবে না। তুই কেন তার সঙ্গী ও সাক্ষী হচ্ছিস? তোর এ কী হাল হয়েছে, জয়? ….ʼʼ

-“তোর নীতির বাণী পকেটে রাখ, মুরসালীন। ভালোই মাইন্ড কন্ট্রোল করার ট্রিক্স শিখেছিস দেখছি, বাপ! রাজনীতি আর শিবির থুক্কু জঙ্গিবাদ ছেড়ে কি সাইকোলজি নিয়ে গবেষণা করছিস? বালের প্যাঁচাল ছাড়। রাজধানীতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জিম্মি আছে তোদের কাছে। তাদের খোঁজ দে। বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দেব।ʼʼ

মুরসালীন হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল, “তাহলে চল একটা সওদা করি।ʼʼ

জয় তাকিয়ে রইল। মুরসালীন বলল, “আমাদেরও অসংখ্য লোক তোদের কাছে বন্দি। যারা ধুঁকে ধুঁকে মরছে, আবার কতজন কারাবাসে যাচ্ছে, তাদের ছাড়িয়ে আন। আজ যা রাজধানীতে। তোর উপরমহলের কর্তাদের বল, ওদের ছেড়ে দিতে। দেশটাকে ক্ষমতার ক্ষুধা নিবারণের সুস্বাদু খাবার না বানিয়ে অন্তত কিছুটা ন্যায়নীতিতে বহাল রাখতে বল। দেশটা জঙ্গল, দেশের জনগণ জঙলি জানোয়ারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। ভালো লাগে এসব?ʼʼ

জয়কে সরিয়ে দিলো হামজা। ঠেলে বড়ঘর থেকে বের করে উপরে পাঠাতে চাইল, “যা। ঘরে যা। একটু ঘুমা।ʼʼ

জয় গেল না। চুপচাপ বসে রইল ইস্পাতের খণ্ডের ওপর। হামজা বসল মুরসালীনের সামনে।


তিনদিনের পর একটা কুলখানীর আয়োজন করা হলো পাটোয়ারী বাড়িতে। পুরো এরিয়ার লোকের নিমন্ত্রণ। হাজার হাজার লোক খাবে।

সকাল সকাল বাজারে গেছিল জয়। ভ্যান ভরে ভরে বাজার এলো। জয় ফিরল রিক্সাতে। তার বাইকের প্রতি কোনো মোহ ছিল না কখনও। যুবক বয়সেও কখনও বাইক নিয়ে অযথা ফুটেজ খেয়ে বেড়ানোর মতো কোনো প্রবণতা তার চরিত্রে দেখা যায়নি। একবার জয়কে এক নারী বলেছিল—’জয় আমির সাহেব, যে নদীর গভীরতা বেশি, তার বয়ে চলার আওয়াজ কম।ʼ

জয় মানে কথাটা। আর কখনও দেখা হয়নি নারীটির সঙ্গে তারপর। তবু জয় মানে, যার গভীরতা বেশি তার চলনে তর্জন-গর্জন থাকেনা। সেই নারী আরও বলেছিল—’রহস্য কোনটা জানেন? সেটা যে রহস্য, সেটাও এক প্রকার রহস্য, সেটাই রহস্য।ʼ

জয় বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ‘বালের কথা কইয়েন না। বুঝায়ে কন।ʼ

নারীটি ধারালো ঠোঁট কিঞ্চিৎ এলিয়ে হেসেছিল, ‘রহস্যকে আপনি দেখবেন, নাড়বেন, অনুভব করবেন, খুব কাছে থাকবেন। অথচ বুঝতে পারবেন না, ওটা এক রহস্যের দ্বার। সেটা হলো রহস্য। অর্থাৎ যা রহস্য, তা দেখে বোঝা যাবেনা সেটা রহস্য। রহস্যের রহস্যটাও এক প্রকার রহস্য।ʼ

এসব কেন মনে পড়ছিল আজ রিক্সায় চলাচলের সময়, জয় জানেনা। লোকের দিকে ওর খেয়াল নেই। তবু যে লোকে ঘটা করে ওকে সালাম ঠুকে যাচ্ছে, তা বুঝল। মনে মনে বকেও উঠল, তেলবাজ বাঙাল সম্প্রদায়! জয় রিক্সাওয়ালাকে বলল, “একটা শাবনূরের গান শুনবি?ʼʼ

উৎসাহে মাথা নাড়ে রিক্সাওয়ালা, হ ভাই, শুনি।

জয় গেয়ে উঠল, “যেই ডালে বান্ধি বাসা, ভাঙে সেই ডাল, আমার এমনই কপাল..ʼʼ

ফটকের সম্মুখে থেমে দেখল ছেলেরা বাজার নামিয়ে নিচ্ছে। সে রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে পেছনের ভ্যান থেকে খাঁচা নামালো। চারটে বিদেশী মাংসাশী কুকুর। সরু সরু ধারালো দাঁত সবসময় বেরিয়েই থাকে। ওরা ক্ষুধার্ত, দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ছেলেরা চমকালো, “ভাই, এইডারে কী করবেন?ʼʼ

জয় হাসল, “জবাই করে গরুর মাংসের সাথে মেশাবো। অত হালাল মাংস কেনার ট্যাকা নাই।ʼʼ

সবাই তাকিতুকি করল। জয় আদেশে বিশাল খাঁচাটাকে নিয়ে গিয়ে ওয়ার্কশপের ওপারের ঘরে রাখা হলো। নির্দেশ রইল, কুকুরগুলোকে যেন এক ফোঁটা পানিও না দেয়া হয়।

রতন এগিয়ে এলো, “ভাই, একখান জরুরী কথা আছে।ʼʼ

-“ওমা! তাই নাকি? বল বল।ʼʼ

জয়ের রসিকতায় সবাই হাসল, রতন একটু মিইয়ে গেল। জয় বলল, “কী বলবি?ʼʼ

-“গতকাইল রাত্তিরে সাবেক মেয়র ঝন্টু সাহেবরে কেডা জানি খুব খারাপভাবে খু/ন করছে, ভাই।ʼʼ

জয় চমকে উঠল, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ইশ! সকাল সকাল কী দুঃখের খবর শোনাইলি রে মফিজ! যাহোক, লোকটারে আল্লাহ বেহশতবাসী করুক। সবাই বলো, আমিন।ʼʼ

সবাই সমস্বরে স্লোগানের মতো করে বলে ওঠে, ‘আমিন।ʼ

শেষে আবার কেউ অভ্যসবশত মুখ ফসকে বলে ফেলল, “জয় বাংলা…ʼʼ

জয় ফিরে তাকালো। তারপর চট করে হেসে ফেলল। তা দেখে ছেলেদের যে কী খুশি! ওরা পরিস্থিতি বোঝেনা, ওরা খালি জানে, ওদের জয় ভাই হাসলে ওদের মুখ বেজার থাকার নয়। জয় হাত মুঠো করে বিপ্লবীদের মতো করে উচিয়ে ধরে বলল, “জয় বাংলা।ʼʼ

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পা টলছিল। জ্বর চলে এলো কেন হঠাৎ-ই, বুঝতে পারছিল না জয়। গতরাতে বাড়ি ফিরেছে রাত তিনটায়। এরপর ঘুম হয়নি ঠিকমতো। গা টলছে। জয়ের চোখের সামনে তরুর জ্বরে কুঁকড়ে যাওয়া মুখটা ভেসে ওঠে। বকে ওঠে মাথা ঝারা মেরে, “হের শালা! কীসব ধোন-বাল ভাবিস হে! রিল্যাক্স জয়। কিচ্ছু হয়নাই। অল টাইম, অল রাইট। কী বললাম বল তো?ʼʼ

জয় বিকেল অবধি পড়েছিল বিছানায় ওভাবেই। বেহুশের মতো লাগছিল দেখতে। অন্তূ কাজের ব্যস্ততার মাঝেও কয়েকবার ঘরে এলো। ওভাবে জয়কে পড়ে থাকতে দেখে বেশ লাগছিল। প্রতিবার আনমনে স্লান হাসল। নিঃশব্দে মনে মনে জয়কে ডেকে বলল, “নিজের ঘা সাড়ে ষোলো আনা, জয় আমির! পাপ সামনে এসে দাঁড়ানোতে নিজেকে খোদা দাবী করা ফেরাউনও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তেগফার করেছিল। আপনারা তো নির্বোধ-মূর্খ মানব, যারা মিথ্যা দাপটে লুটেপুটে বেড়াচ্ছেন!ʼʼ

বাচ্চাদের সকাল থেকে কিছু খেতে দেয়া হয়নি বোধহয়। অন্তূও জয়কেও বিকাল অবধি খেতে ডাকল না, সামান্য কিছু এনেও দিলো না। রিমি যখন হামজাকে খেতে দিচ্ছিল, অন্তূর ইচ্ছে হয়েছিল, খাবার প্লেটটা এক ঝটকায় কেড়ে নিয়ে সবটুকু খাবার কোনো পশুকে বিলিয়ে দিতে। পারেনি।

সে নিজেও খায়নি সকাল থেকে। খিদে মরে গেছে আজকাল। পানির পিপাসাও সারাদিনে বিশেষ একটা টের পায়না। কোনোমতো একবেলা সামান্য খেতে গেলেও গলায় খাবার আটকায় যেন।

মাগরিবের ওয়াক্তের খানিক আগে নিচে গিয়ে ছেলেদের দিয়ে দুধ আনালো। সন্ধ্যার দিকে একগ্লাস গরম দুধ নিয়ে এলো জয়ের জন্য। জয় চিৎ হয়ে শুয়ে কিউব মেলাচ্ছে আনমনেই। তা মিলছে কিনা সেদিকে খেয়াল নেই। খালি গায়ে এসির বাতাসে লোমকূপ শিউরে শিউরে উঠছে মাঝেমধ্যেই। জ্বরের তোপে চোখদুটো লাল। তা দেখল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অন্তূ।

অন্তূর আজকাল শুধু চোখের সামনে ভেসে ওঠে মুমতাহিণার ছিন্নভিন্ন ছোট্ট দেহটা। অথচ সেভাবেই যখন এ বাড়ির মেয়ে তরু অত্যাচারিত হলো, তখন দুইভাইয়ের হত্যাযজ্ঞের আয়োজন অন্তূকে অবাক করে তুলছে ক্ষণে ক্ষণে। দুজনই মেয়ে, সমান তাদের শেষ-যন্ত্রণা। অথচ দুই ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া কত ভিন্ন!

জয়ের শরীর টগবগ করে ফুটছে যেন। অন্তূ হাত ছুঁইয়ে চমকে উঠল। দুধের গ্লাস ধরল মুখের কাছে, জয় ছিটকে সরে গেল, “ধুর শালী। কী এইডা? তোরে আনতে বলছি এই জিনিস। এর চাইতে বিষ ভালো। সরা!ʼʼ

অন্তূ টগবগে গরম দুধের গ্লাসে ঝাঁকি মেরে তা জয়ের হাতে ফেলল। জয় ছিটকে ওঠে। অন্তূ বলল, “আমার সঙ্গে মুখের ভাষা সংযত রাখবেন। লোক যা-ই জানুক, আপনি তো জানেন, আমি রাস্তার মেয়ে না। এটুকু খেয়ে নিন। ভালো লাগবে।ʼʼ

জয় কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে আলতো করে প্রসন্নচিত্তে হাসল, “হ। বমিটা তোর গা ভরে করি। এরপর অবেলায় একটা গোসল দিয়ে আয়। সরা বাল, দুধ আমি খাইনা।ʼʼ

অন্তূ বলল, “পছন্দ না?ʼʼ

-“জীবনে খাই নাই। থুহ। সরাও।ʼʼ

-“অল্প একটু নিন। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।ʼʼ

জয় ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে দেখে অন্তূ বলল, “বিষ-টিস নেই। নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এভাবে মারার হলে শত রাত সুযোগ পেয়েছি।ʼʼ

জয় হেসে মাথা নাড়ল, “আমি খাইনা, দুধ। তুমি খেয়ে ফেলো।ʼʼ

অন্তূ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দুধটা ঠান্ডা করল। এরপর এগিয়ে এলো। জয়ের বাহুটা ধরে এগিয়ে আনতে গেলএ ইচ্ছাকৃত জয় এসে অন্তূর কাধের ওপর হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে পড়ে রইল। অন্তূ আপাতত কিছু বলল না।দুধের গ্লাসটা জোর করে মুখের কাছে ধরল, “খান এটুকু। জ্বরে তো গা পুড়ছে। খুব সুখ লাগছে তাতে?ʼʼ

দুধটুকু খেয়ে মিনিট পনেরো বাদে জয় ঘুমিয়ে পড়ল। হামজা বাড়িতে ছিল না।

অন্তূ চাবি নিয়ে চলে যায় বড়ঘরের দিকে। পিপাসার্ত শিশুগুলো অন্তূকে বড্ড জ্বালায়। ওদের খাওয়া না হলে তার গলা দিয়ে পানি নামেনা। জয় ঘন্টাকয়েকের আগে উঠবে না।

অন্তূর ভেতর থেকে কেউ ডেকে ওঠে, “তুই ধোঁকাবাজ হয়ে উঠেছিস! নয় কি?ʼʼ

অন্তূ প্রতিবাদ করে, ‘পাপের ত্রাসে পিষ্ট হয়ে মরা আত্মহত্যা হতো। এটা ধোঁকা নয়, হয়ত কৌশল। বেঁচে থাকার কৌশল, বাঁচিয়ে রাখার কৌশল।ʼ একটু চুপ থেকে ফের বলল, ‘হয়ত আমি খুব খারাপ হয়ে গেছি।ʼ তাচ্ছিল্য করে হাসে, ‘খারাপের রাজ্যে ভালোর প্রবেশ খারাপকে ভালো করেনি, ভালোকে খারাপ করেছে। এরই দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হলো। নয় কি?ʼ

চলবে..

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। খুবই অগোছালো আওলা-ঝাওলা একটা পর্ব।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here