অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
৮০.
রুদ্র কাউচে হেলান দিয়ে বসে আছে। নিজের শয়নকক্ষে। তাকিয়ে আছে দেয়ালে টানানো রুদ্র-প্রিয়তার ছবিটার দিকে। যেখানে পরম যত্নে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে তার প্রিয়কে। প্রিয়তা ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। অপূর্ব ঐ চোখদুটোতে রুদ্রর প্রতি একসমুদ্রর প্রেম, মুগ্ধতা, ভালোবাসা।
রুদ্রর দৃষ্টি স্থির। কিন্তু মন-মস্তিস্ক অস্থির। হাজারটা ভাবনার তার একত্রে জট পাকিয়ে আছে মস্তিষ্কে। আজকাল রুদ্রর সঙ্গে দেখা, সাক্ষাৎ হয়না প্রিয়তার। সে পথ প্রিয়তাই বন্ধ করে দিয়েছে। কোন এক অজ্ঞাত কারণে নিজেদের মধ্য তুলে দিয়েছে এক মিথ্যা অভিযােগ, অভিমানের দেয়াল। রুদ্র সেইযে একবার দেখা করতে গিয়েছিল। সেদিন প্রিয়তা বলেছিল, ‘এভাবে হুটহাট আমার সঙ্গে দেখা আর দেখা করতে আসবেন না। আমি চাইনা সেটা।”
উত্তরে দুহাতে প্রিয়তাকে আটকে ধরে রুদ্র। বলেছিল, ‘সবকিছু তামার চাওয়া অনুযায়ী হবে? আমার স্ত্রী তুমি। আমি তােমার কাছে আসব। কেবল আমিই আসব।’
‘না, আসবেন না।’
‘পারলে ঠেকিয়ে দেখাও।’
‘ আপনি এরকম উগ্র আচরণ করলে আমি কিন্তু এবার শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো।’
রুদ্রকে আঘাত করে কথাটা। চকিত দৃষ্টি ফেলে প্রিয়তার দিকে। বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয়। ব্যথিত হয়ে বলে, ‘তোমাকে দেখার অধিকারটাও কেড়ে নিচ্ছো প্রিয়?’
প্রিয়তা করুণ চোখে তাকায়। চোখ ছলছল করে ওঠে। কিন্তু তবুও যথাসম্ভব শক্ত কণ্ঠে বলে, ‘ হ্যাঁ নিচ্ছি। সেই অধিকার আপনি সেদিনই ফিরে পাবেন, যেদিন আমাকে দেওয়া কথা রাখতে পারবেন।’
সেদিনের পর থেকে রুদ্র আসেনি। প্রিয়তার কথায় কোথাও একটা চাপা অভিমান প্রভাব ফেলছ ওর মনে। রুদ্র নিজেও চায় প্রিয়তা দূরে থাকুক কিছুদিন। বিদেশী যেসব উগ্র দলগুলো টাকা পাবে। তাদের টাকা সময়মতো ফেরত দিতে পারবে কি-না এখনো জানেনা ও। আর যদি না পারে বাংলাদেশে এসে খুঁজে খুঁজে মে-রে রেখে যাবে ওদের দলের লোকেদের। ওদেরও ছেড়ে দেবেনা। প্রতিরক্ষার জন্যে হলেও আমের ভিলা ছাড়তে হবে তখন। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ওদের সঙ্গে লড়তে হবে। কী ভয়ংকর সময় যাবে তখন রুদ্র জানে।
শুধুমাত্র রুদ্রর স্ত্রী হওয়ায় কারণে, আমের ভিলার সঙ্গে জড়িয়েছে বলে এমনিতেই জীবন প্রায় অভিশপ্ত হয়ে গেছে মেয়টার। কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি। এখনো পাচ্ছে। এসব ঝামেলার ছোঁয়াটুকুও আর প্রিয়তার গায়ে পড়তে দিতে চায়না রুদ্র। তবে খবর রাখে। জয়ের মাধ্যমে প্রিয়তার সারাদিনের খবর নেয়। তা থেকে জানতে পারে স্কুলে যাওয়া-আসা আর বাজার করা ছাড়াও ফ্ল্যাট থেকে বের হয়না প্রিয়তা। যা শুনে নিশ্চিন্ত হয় রুদ্র। জয়কে আরও ভালােভাবে নজর রাখার আদেশ দেয়। কিছুতেই কোন বিপদ যেন স্পর্শ করতে না পারে তার প্রিয়তমাকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। প্রিয়তাকে এখানে নিয়ে আসাই উচিত ছিল। ঐ মেয়েটা কাছে থাকলে অদ্ভুত মানসিক শান্তি পায় রুদ্র। আর এই অবস্থায় মানসিক শান্তিটা ভীষণ প্রয়োজন ওর। কিন্তু মেয়েটা যেভাবে বেঁকে বসেছে। গায়ের জোর ছাড়া অন্য কী উপায়ে নিয়ে আসবে সেটাও একটা প্রশ্ন। কথাগুলা ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে রুদ্র। কিন্তু রুদ্র জানতে পারেনা কী ভয়ংকর প্রতারণা আর বিশ্বাসঘাতকতার বি-ষ ছড়িয়ে আছে তার চারপাশে। তার পাথুরে হৃদয়ে জন্মানো অনুভূতি নিয়ে নিরন্তর খেলে চলেছে এক ধূর্ত মস্তিষ্ক।
এদিকে রুদ্রর দরজার সামনে প্রায় দশ মিনিট হলো অপেক্ষা করছে নীরব। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেনা। অথচ ডেকেছে রুদ্র নিজেই। তবুও কেন সাহস পাচ্ছেনা জানেনা। রুদ্রকে অকারণেই প্রচন্ড ভয় পায় ও। ঐ সুঠাম দেহী, কঠোর ব্যক্তিত্বের মানুষটার সামনে দাঁড়ালেই তার হাঁটু কাপে, গলা শুকিয়ে আসে। ইচ্ছে করে এক্ষুনি ছুটে পালাই। তারওপর কিছুদিন হল কুহুর সঙ্গে কথা বলছেনা। মেয়েটা যখন-তখনহযা-তা বল দেয়। সে বলুক। কুহুর মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে সব মেনে নিতে পারে নীরবে। কিন্তু বারবার ওর ভালােবাসাকে, অনুভূতিকে ছোট করার মানে কী? সে অধিকার কে দিয়েছে মেয়েটাকে? তাই এবার অভিমান হয়েছে নীরবের। ভীষণ অভিমান হয়েছে।
সেদিনতো কেবল নিজের হাতে খাবারটাই খাওয়াতে যাচ্ছিল
কুহুকে। কিন্ত মেয়েটা কী করল? ধাক্কা দিয়ে খাবারটাই
ফেলে দিল। অস্থির হাতে ইশারা করে বলল, ‘চলে যান এবাড়ি ছেড়ে। আমিতা বলেছি আমি চাইনা আপনাকে বিয়ে করতে। নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে চলে এসেছেন! কেমন সন্তান আপনি? নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে এভাবে পরে আছেন বেহায়ার মতো। লজ্জাবােধ নেই আপনার?’
মনে সেদিন ভীষণ কষ্ট পায় নীরব। কিন্তু তবুও নিজেকে সংযত রেখে বলে, ‘না নেই। খাবারের ওপর রাগ দেখালে কেন? খাবারের ওপর রাগ দেখাতে আছে? আবার আনছি।
খেয়ে-দেয়ে তারপর রাগ ঝাড়ো। রাগ করতেও শক্তির প্রয়োজন হয়তো।’
‘কেমন করছেন এসব?’ এবার ফোন বের করে সরাসরি মেসেজ করে নীরবকে।
নীরব অকপটে বলে, ‘ভালোবাসি বলে।’
‘ভালােবাসেন? নাকি দু বছরে যেটা পাননি সেটা পাওয়ার আশায় এখানে পড়ে আছেন? কিন্তু আপনাকে দেওয়ার মতো নতুন কিছুতো আমার কাছে নেই। আমিতাে একজন_’
আরকিছু লিখতে পারেনা কুহু। হাত কেঁপে ওঠে। ঐটুকুই পাঠায়। মেসেজটা দেখে এবার রেগে যায় নীরব। ধমকে ওঠে,
‘কুহু’ বলে।
কুহু চমকে উঠে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে। কিন্তু থামেনা। কাঁদতে কাঁদতেই লেখে, ‘চলে যান আপনি। ফিরে যান নিজের পরিবারের কাছে।’
সেদিন কিছু না বলে কহুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে নীরব। তারপর থেকে কোন কথা বলেনা আজকাল কুহুর সঙ্গে। এইতো বিকেলের কথা। ডক্টর বলেছেন বাইরের খোলা হাওয়া প্রয়ােজন ওর। তাই প্রতিদিন বিকেলেই ওকে নিয়ে ছাদে যায় নীরব। আজও গিয়েছিল। কিন্তু বরাবরের মতোই কোন কথা বলছিল না নীরব। শুধু কুহুর প্রয়োজনীয় কাজ গুলো করে যাচ্ছিল চুপচাপ। তবে আজ কুহু নিজেই যেন চাইছিল নীরব কথা বলুক। বারবার এটা-ওটা করে দিতে বলছিল। নীরবের নীরবতা দেখে অসহায় হয়ে উঠছিল চােখজোড়া। নীরব সবটা বুঝতে পেরেও কিছু বলেনি। সেদিন খুবতো শুনিয়েছিল। এখন কষ্ট পাচ্ছে কেন?
কিন্তু একারণেই না আবার রুদ্র ভাই রেগে গেছে। সেসব জানলে গর্দান নিতেও হয়তো দ্বিধা করবেনা রুদ্র। সে কথা জানা নীরবের। তাইতাে ভয় পাচ্ছে। ঘরে উচ্ছ্বাস থাকলেও কাজে দিতো। একটু ভরসা পেতাে। সিংহের গুহায় একা ঢুকতে হবে! কিন্তু ডেকেছে যখন যেতেতাে হবেই। ইতিমধ্যে অনেক্ষণ হয়ে গেছে ডেকেছে রুদ্র। আর দেরী করা ঠিক হবেনা। জিভ দিয়ে শুকনাে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল নীরব। লং লেন্থে কাটা চুলগুলা হাত দিয়ে ঠিকঠাক করল। মৃদু কেশে গলা পরিষ্কার করে তৈরী করল নিজেকে। দরজাটা মৃদু ফাঁক করে উঁকি দিল। রুদ্রকে দেখতে পেল সরাসরি। কাউচে গা এলিয়ে বসে আছে।
নীরব মৃদু গলায় বলল, ‘ভাই, আসব?’
‘এসাে।’ গম্ভীর স্বরে বলল রুদ্র।
নীরব ভেতরে এলো। এক পা, এক পা করে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল রুদ্রের পাশে। বলল, ‘ডেকেছিলেন?’
‘বসাে।’
নীরবের দূষ্টি একবার সারা ঘরময় ঘুরে এলো। ইতস্তত করে এগিয়ে এসে বসল বিছানায়। রুদ্র সোজা হয়ে বসল। সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে টেবিলে রেখে বলল, ‘কী ভেবেছো?’
বােকা বনে গেল নীরব। বুঝতে না পেরে বলল, ‘জি?’
‘তােমার আর কুহুর কথা বলছি আমি। সারাজীবন নিশ্চয়ই এভাবেই থাকবে না।’
মনে মনে ধাক্কা খেল নীরব। রুদ্র কথার তাংপর্য সঙ্গেসঙ্গেই বুঝতে পারল। তৎক্ষণাৎ কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না। ইতস্তত করে অস্থির চোখে চাইল এদিক ওদিক। রুদ্র প্রায় ধমক দিয়েই বলল, ‘কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি।’
চমকে উঠল নীরব। শুকনো ঢোক গিলে কোনমতে তুতুলে বলল, ‘ন-না আসলে রুদ্র ভাই। কী বলব বুঝতে পারছিলাম না তাই_’
রুদ্রর হাসি পেল নীরবের অবস্থা দেখে। কিন্তু হাসি চেপে চেহারা গম্ভীর রেখে বলল, ‘আমার সামনে সবসময় এমন তােতলাও কেন তুমি? তােতলানোর রোগ আছে?’
কিছু বলতে গিয়েও বলল না নীরব। কথা বললেই এখন
তােতলাবে। আর তোতলালেই রুদ্রর ধমক খেতে হবে। তাই বােকার মতো করে মাথা নাড়ল কেবল। রুদ্র গাম্ভীর্য বজায় রেখেই বলল, ‘ধরো যদি তােমার বাবা-মা কোনদিনও তােমাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয় তবে?’
হঠাৎই সব ভয়-ডর চলে গেল নীরবের। প্রবল এক আত্মবিশ্বাস ভর করল কাঁধে। বলল, ‘ওনারা মেনে নেবেন ভাই। আমি চিনি ওনাদের। হয়তোে একটু দেরী হবে। কিন্তু ওনারা ঠিক বুঝতে পারবেন। আপনাকে কথা দিতে পারি
আমি।’
‘ওনাদের অনুপস্থিতিত কুহুকে বিয়ে করতে পারবে?’
‘আজ ওনারা একটা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু আমি জানি একদিন ওনারাই এই বিয়েতে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন। আমি যেকোন মুহুর্তে কুহুকে বিয়ে করতে তৈরী আছি।’
‘সবসময় এভাবেই আগলে রাখতে পারবে?’
‘ মৃ-ত্যুর আগ অবধি।’
‘অতিবিশ্বাস হয়ে যাচ্ছেনা।’
‘অতিবিশ্বাস কি-না জানিনা। তবে এইটুকু বিশ্বাস আছে, প্রাণ থাকতে ওর হাত কখনও ছাড়বনা।’
‘আর যদি কথা রাখতে না পারো?’
‘যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নেব।’
নীরবের অগোচরেই মূৃদু হাসি ফুটল রুদ্রর ঠোঁটে। সেকেন্ডের জন্যে। পুনরায় গম্ভীর মুখ করে বলল, ‘চাকরী খুঁজেছাে?’
আবার ইতস্তত করতে শুরু করল নীরব। গলা শুকিয়ে এলাে। মিনমিনে গলায় বলল, ‘খুঁজব ভাই। কিন্তু এখন কুহুকে দেখাশোনা করতে হয় তাই_’
‘সামনের শুক্রবার তােমার আর কুহুর বিয়ে। তেরী থেকো।’
চোখ বড়বড় করে তাকাল নীরব। বিস্ময়ে কথা বলতে ভূুলে গেল। নিজের কানের ওপর যথেষ্ট সন্দহ হল ওর। কিন্তু রুদ্রর সামনে সেই সন্দেহটুকু প্রকাশ করার সাহসটাও হলােনা। নীরবকে ওরকম হতভম্ব, বোকার মতাে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরও একবার হাসি চাপল রুদ্র। থমথমে গলায় বলল, ‘কোন আপত্তি আাছে?’
হকচকিয়ে গেল নীরব। ঝোঁকের বসে প্রথমে ‘হ্যা’ বলল। সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে সংশোেধন করে নিয়ে ‘না’ বলল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে একটু ভেবে বলল, ‘কিন্তু কুহু?’
‘ওকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। সেটা আমি দেখে নেব। তবে বিয়েটা ঘরোয়াভাবে সামান্য আয়োজনে হবে। এখন কোনরকম জাকজমক কিছু করার মতাে অবস্থা.আমাদের নেই। সেটা তোমার জানা। ভবিষ্যতে সুযােগ এলে দেখা যাবে।’
‘আমার তাতে কোন সমস্যা নেই, রুদ্র ভাই।’
‘আর বিয়ের পরপরই চাকরি খোঁজা শুরু করো। আমের পরিবারের জামাই ঘর জামাই হয়ে থাকবে সেটা আমি মানব না বুঝতে পেরেছো?’
নীরব একটু চুপ থাকল। মাথা নিচু রেখেই বলল, ‘জি ভাই।’
‘এইজন্যই ডেকেছিলাম। এখন আসতে পারো।’
নীরব কথা বাড়াল না। সিংহের গুহায় বেশিক্ষণ থাকার ইচ্ছে ওর নেই। তাই মাথা নিচু করেই ধীরপায়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রুদ্র। সেই ভয়ংকর দুঃসময় আসার আগে নীরব আর কুহুর বিয়েটা দিয়ে ফেলত চায় ও। পরে হয়তো সে সুযােগটা ও পাবেনা ও।
রুদ্রর ভাবনার সুতো ছিড়ে রুদ্রর ঘরে ঢুকল উচ্ছ্বাস আর জাফর। জাফর একটা চেয়ার টেনে বসল। উচ্ছুাস বিছানায় বসতে বসত বলল, ‘নীরবকে বের হতে দেখলাম। ডেকেছিলি ওকে?’
রুদ্র মৃদু হেসে বলল, ‘একটু আগে এলে ভালো করতি। বেচারা মনেমনে ভীষণভাবে চাইছিল তোকে এখানে।’
উচ্ছাস হেসে ফেলল। জাফর বলল, ‘ঐ বেচারার কী দোষ? এমনিতেই ভয় পায় তোকে ছেলেটা। তারওপর অমন গম্ভীর হয়ে কথা বলিস।’
রুদ্র প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বলল, ‘ভাবছি সামনের শুক্রবার ওদের বিয়ে দিয়ে দেব।’
জাফর আর উচ্ছ্বাস দুজনেই চমকে উঠল। জাফর ভ্রুকুটি করে বলল, ‘কুহু আর নীরবের?’
মাথা ঝাঁকাল রুদ্র। উচ্ছ্বাস সন্দিহান কন্ঠে বলল, ‘কিন্তু_’
রুদ্র ঠোঁটের মাঝে সিগারেটটা চেপে ধরে বলল, ‘সামনে কেমন পরিস্থিতি আসতে চলেছে সেটা তাের অজানা নয়। তার আগেই বিয়েটা হয়ে যাওয়া ভালো।’
উচ্ছ্বাস আর জাফর দুজনেই পরস্পরের দিকে তাকাল। রুদ্র ভুল বলেনি। সামনের দিনগুলো সত্যিই ভীষণ কঠিন হবে। জাফর বলল, ‘ঘরোয়াভাবেই সাড়তে চাইছিস সব?’
আবার মাথা ঝাকাল রুদ্র। সিগারেটটা এখনো ঠোঁটের মাঝে চেপে রাখা। উচ্ছ্বাস বলল, ‘সেটাই ভালো। কুহুর সঙ্গে কথা বলেছিস?’
‘জ্যোতিকে জানিয়েছি। ও জানাবে কুহুকে। আমিও বলব।’
কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা চলল ঘরটাতে। রুদ্রর দেখাদেখি জাফর আর উচ্ছ্বাসও সিগারেট বের করল। পারিবারিক আলোেচনা শেষে এবার পেশাদার আলোচনা শুরু করল। জাফর বলল, ‘কয়েকটা কম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েকজন অ-স্ত্র দিতে রাজিও হয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটাই। ওরা অ্যাডভান্স চায়।’
জাফরের কথার সঙ্গে উচ্ছ্বাস যােগ করল, ‘ভেবেছিলাম চাঁদা তুলে কাজটা করব। কিন্তু সমস্যা হল ব্যবসায়ীরা প্রায় সবাই জানে আমাদের বর্তমান অবস্থা। চাঁদার জন্যে চাপ দিলে অন্যান্য দলের সাহায্য চেয়ে বসবে। কিন্তু টাকা দেবেনা। এক পারি, খু-নটুন করে মনে ভয় সৃষ্টি করে দিতে। তাতে আমাদেরও পিশাচ হয়ে উঠতে হবে।’
‘কিন্তু রাশেদ বাবা থাকতে যেটা আমাদের কোনদিন করতে দেননি। উনি না থাকার সুযােগ নিয়ে সেটা কীকরে করি?’
জাফর বলল, ‘আর এসবের সব প্রসেসিং করতে করতে অনেকটা সময় চলে যাবে। এতাটা সময় ওরা আমাদের দেবে বলে মনে হচ্ছেনা। হঠাংই যেভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু এভাবে ক্ষেপে উঠল কেন বুঝলাম না। সময়তাে দিতে চেয়েছিল।’
উচ্ছ্বাস বলল, ‘খুব সম্ভবত ডার্ক নাইট আর ব্লাক হােল ওসব কম্পানির কাছে অ-স্ত্রের ডিমান্ড বাড়িয়োছে। তাই এখন প্রচুর টাকা দরকার ওদের। যেখানে যেখানে টাকা পাবে সব জায়গা থেকেই শুষে নেবে এটাই স্বাভাবিক।’
‘এমন জঘন্য শয়তানী বুদ্ধিটা ওদের মাথায় কীকরে এলাে খােদা জানেন।’
তিক্ত কষ্ঠে বললেন জাফর। রুদ্র কিছু বলল না। ঠোঁটে চেপে রাখা সিগারেটেটা এতক্ষণে লাইটার দিয়ে জ্বালানো। ঠোঁট থেকে নামিয়ে ধােঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকাল উচ্ছ্বাস আর জাফরের দিকে। সোলার সিস্টেমের মধ্যে থেকেই নিরন্তর বি-ষ ছড়িয়ে যাওয়া সেই লোক এই দুজনের মধ্যে যেকোন একজনও হতে পারে। কথাটা বিশ্বাস করতে গিয়ে ভেতরটা কেমন করে ওঠে ওর। কিন্তু মনের এই অনুভূতির ওপর প্রভাব ফেলতে চায়না রুদ্রের ধূর্ত মস্তিস্ক।
উচ্ছাস আর জাফর নিজেদের সিগারেট জ্বা-লিয়ে অপেক্ষা
করল রুদ্রর কিছু বলার। রুদ্র আরও দুটো টান দিল সিগারেটে। ধীরসুস্থে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আরেকটু ভাবল। ভাবনাচিন্তা করে বলল, ‘দলে শয়তান আছে বলেই শয়তানী চিন্তা মাথায় এসেছে। সেসব আমাদে- দেখার বিষয় না। রাশেদ বাবা বলেছিলেন, কোন নির্দোষকে হ-ত্যা করা যাবেনা। কিন্তু আমরা যাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলি বা তুলবো তারা যে নির্দোষ সেটা তোকে কে বলল?’
উচ্ছ্বাস ভ্রুকুটি করল, ‘মানে?’
‘ব্যবসায়ীদের লিস্ট দেখেছি আমি। তাদের মধ্যে সং ব্যবসায়ীর সংখ্যা নগণ্য। আর আড়ালে-আবডালে ভয়ানক পাপ করে বড়ায় এমন অনেক ব্যবসায়ী আছে। খু/ন, ব্যভিচার, রে/প এমন প্রচুর কেস আছে। অর্থাৎ তারা মােটও নির্দোষ না। বেছে বেছে তাদের টার্গেট করতে হবে। বাপ বাপ করে টাকা দেবে।’
‘তবুও যথেষ্ট সময় লাগবে।’ বলল জাফর।
রুদ্র নির্বিকারভাবে বলল, ‘কাজ চলতে থাকুক। আজ রাতের মধ্যে কয়েকজনকে রেডমার্ক করব। কাল সকালে দলের বাকিদের নিয়ে মিটিংয়ে বসে ওদের কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। ঝড়ের গতিতে এগোবে কাজ। যদি তারপরও সব টাকা জোগাড় না হয় তখন অন্য ব্যবস্থা করব।’
অর্ধেক খাওয়া সিগারেটটাই অ্যাশট্রতে ফেলে দিল রুদ্র। অন্য ব্যবস্থা কী সেটা উচ্ছ্বাস বা জাফর কেউ জানতে চাইল না। কারণ বলার হলে রুদ্র নিজই বলতাে।
–
টেবিলে মাথা এলিয়ে বসে আছে কুহু। ছবি আঁকছিল। অর্ধেক একে আর শায় দেয়নি মন। মনটা অস্থির হয়ে আছে। এতোদিন ও নিজেই চাইতাে নীরব চলে যাক। ফিরে যাক ওর পরিবারের কাছে। বুকে বিশাল প্রস্তরখন্ড রেখে যা-তা বলেছে ছেলেটাকে। যাতে আত্মসম্মানের খাতিরে হলেও নীরব চলে যায় এখান থেকে। কিন্তু কুহু জানতোনা, কুহুর প্রতি নীরবের ভালোবাসার পাল্লা, আত্মসম্মানের চেয়েও বেশি ভারী। তাইতো এতাে অপমান সহ্য করেও চুপচাপ পড়ে আছে এখানে। ছায়ার মতো লেগে আছে কুহুর সঙ্গে।
কিন্তু নীরবের উদাস চাহনী, নীরব অভিমান পীড়া দিচ্ছে কুহুকে। মলিন ঐ মুখটা দেখলে বুক ভার হয়ে আসে ওর। সেই চঞ্চল, ছটফটে ছেলেটা শুধুমাত্র ওর জন্য এমন হয়ে গেছে মানতে কষ্ট হয় ওর। কুহুই বা কী করতো? কোন বাবা-মার দীর্ঘশ্বাস আর কষ্টের বিনিময়ে নিজের সুখ চায়নি ও। সত্যিই তো ও নীরবের যােগ্য কোনদিনও ছিল না। আর সেই দুর্ঘটনার পর কোনভাবেই না। নীরবের বাবা-মায়ের দোষ নেই তাতে। কিন্তু এখন কুহু বুঝতে পারে ওকে ছাড়া নীরব ভালো থাকবেনা। কখনও না। নীরবের এমন স্বার্থহীন ভালােবাসা দেখে বুক ফেঁটে কান্না পায় কুহুর। এখনতো নীরব কথাও বলেনা ওর সঙ্গে। বলবেই বা কেন? ইচ্ছে করেই নীরবের ভালােবাসাকে অপমান করেছে কুহু। ভীষণ কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ছেলেটাকে।
কথাগুলো চিন্তা করতে করতে চোখ দিয়ে জল বের হয় কুহুর। কান্না পায়। মাথায় কারো হাত পড়তেই চমকে ওঠে কুহু। দ্রুত চোখ মুছে মাথা তুলে বসে। আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে আরেকদফা চমকায় ও। রুদ্র এসেছে! সেই ঘটনার পর কুুহুর সামনে খুব একটা আসেনা রুদ্র। সরাসরি কথা বলেনা। হয়তো অপরাধবোধ, ব্যর্থতার গ্লানি থেকেই এড়িয়ে চলে কুহুকে। আজ হঠাৎ নিজে থেকে রুদ্রকে আসতে দেখে কুহু তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে। রুদ্র মলিন একটু হাসল। কুহুর মাথায় আলতাে করে হাত রেখে বলল, ‘কেমন আছিস?’
কুহু রুদ্রর দিকে নিম্পলক চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। আস্তে করে উঠে দাঁড়াল। চোখদুটো অশ্রুপূর্ণ হয়ে উঠল ওর। আচমকাই জাপটে জড়িয়ে ধরল রুদ্র্রকে। কিছুক্ষণ পর রুদ্র খেয়াল করল কেঁপে কেঁপে উঠছে কুহুর শরীর। দীর্ঘশ্বাস চাপল রুদ্র। ওদের এই পাপের জগতের সবচেয়ে বড় পরিণাম ওর নিষ্পাপ বোনটাকে ভােগ করতে হয়েছে। কথাটা চিন্তা করলেও চারপাশটা কেমন বিষাক্ত লাগে ওর। কুহুর সদা হাস্যজ্জ্বল সেই মুখটা হারিয়ে গেছে চিরকালের মতো। সেই বাচ্চাসুলভ মুখটা হঠাৎই অনেকটা বড় হয়ে গেছে। চোখের সেই চঞ্চল দৃষ্টি এখন ফ্যাকাশে। যতকিছুই হোক। কুহু আর কোনদিন আগের মতো হবেনা জানে রুদ্র। অপরাধবোধ আরও প্রবলভাবে গ্রাস করে ভেতরটাকে। আলতাে করে কুহুর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘কাঁদছিস কেন?’
কুহু মাথা না বোধক মাথা নাড়ল। বলল না, এতাদিন পর ভাইয়ের সংস্পর্শ, স্নেহ পেয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি নিজের আবেগ। আরও কিছুক্ষণ রুদ্রকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কুহু। রুদ্র নিজেই ছাড়াল। সযত্নে মুছে দিল বোনের চোখ। হাত ধরে নিয়ে বসাল বিছানায়। নিজেও বসল কুহুর পাশে। বলল, ‘জ্যোতি কিছু বলেছে?’
রুদ্রর দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল কুহু। বলেছে। ওর আর নীরবের এই শুক্রবারেই বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে।
‘কোন আপত্তি আছে?’
না বােধক মাথা নাড়ল কুহু। সত্যিই আর নেই। নীরবের অটল ভালাবাসার কাছে বাকি সবকিছু হেরে গেছে। নিয়ম, যােগ্যতা, পরিবার সবকিছু। মনে মনে স্বস্তি পেল রুদ্র। হালকা হেসে বলল, ‘তাহলে অযথা ছেলেটাকে এতো কষ্ট দিলি কেন?’
কুহু আবার জড়িয়ে ধরল রুদ্রকে। কেঁদে ফেলল। রুদ্র কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘আচ্ছা, কাঁদতে হবেনা। ঠিক হয়ে যাবে সব। ওর সঙ্গে কথা বলে নিস।’
কুহু কিছু বললনা। আরেকটু শক্ত করে আকড়ে ধরল রুদ্রকে। এতােদিনপর ভাইকে কাছে পেয়ে ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা। বেশ দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকে দুজনেই। নীরবতা ভেঙ্গে হঠাৎ রুদ্র বলে ওঠে, ‘এক কাজ করত হবে তোকে।’
কুহু ভ্রুকুটি করল। রুদ্রকে ছেড়ে মুখ তুলে তাকাল। রুদ্র বলল, ‘তাের ভাবিকে এই বাড়িতে, মানে আবার আমের ভিলায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের কারো কথা শুনবেনা ও। কিন্তু এই মুহুর্তে পারলে একমাত্র তুই পারবি ওকে রাজি করাতে।’
কুহু কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকল রুদ্রর দিকে। তারপর ইশারায় প্রশ্ন করল, ‘ভাবি আসবে?’
‘ আসবে। এখন আপাতত তাের বিয়ের কথা বলে নিয়ে আয়। ড্রামা করে, ইমোশনাল ব্লাকমেইল কর, এনিহাউ। একবার আসুক। পরে আমিও দেখি ম্যাডাম বের হয় কীকরে।’
রুদ্রর বলার ভঙ্গি দেখে এমন অবস্থাতেও হেসে ফেলল কুহু। এতােদিন পর বোনকে হাসতে দেখে ভেতরটা কেমন করে ওঠে রুদ্র। নিজেও হাসে এক টুকরো মলিন হাসি।
–
রাত সাড়ে বারোেটা বাজে। বিছানার হেডরেস্টে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে প্রিয়তা। ডান হাতটা কপালের ওপর রাখা। চোখদুটো বন্ধ। দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঘুমায়নি সে। অনেকটা বিদ্যুৎতের গতিতে কাজ করছে মস্তিষ্ক। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত। সবকিছু মিলিয়ে গভীর পরিকল্পনাও করে চলেছে সেটা। এক মুহুর্তের জন্যেও বিশ্রাম নেই তার। সারা জগত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ডুব
দিয়েছে গভীর চিন্তায়। ফোনের রিংটোনে মনোযােগ হারায় প্রিয়তা। ভ্রুকুটি হয়।
কিন্তু পাতা দেয়না। আবার ভাবনায় মগ্ন হতে চায়। কিন্তু
কল করা ব্যক্তি যেন নাছোড়বান্দা। বিরতিহীনভাবে কল করেই চলেছে। একপর্যায়ে বিরক্তিতে ‘চ্যাহ্’ শব্দ করে ওঠে প্রিয়তা। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে দেখে সম্রাটের নাম্বার। ঠোঁট চেপে সিলিংয়ের দিকে একবার তাকিয়ে কল রিসিভ করে প্রিয়তা, ‘দেখছাে কল রিসিভ করছিনা। বুঝতে হবে ব্যস্ত আছি। বাচ্চা তুমি সম্রাট?’
‘ এতাে রাতে কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলে?’ খানিকটা শক্ত গলায় বলে সম্রাট।
‘কাজ করছিলাম।’ প্রিয়তা নির্বিকার।
‘কী কাজ?’
‘ এতো প্রশ্ন কেন করছো বলোতো?’
‘কারণ তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিচ্ছোনা। বারবার এড়িয়ে যাচ্ছো। যখন আমের ভিলায় ছিলে তখনকার কথা মানা গেছে। কিন্তু এখন? এখন কী সমস্যা রাণী? সত্যি কথা বলোতো, কী চলছে তোমার মনে? কোনভাবে আমাকে ডাবলক্রস করতে চাইছাে নাতাে?’
‘পাগল হয় গেছাে তুমি।’
‘তুমি করে দিচ্ছো।’
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে প্রিয়তা। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বলে, ‘কীকারণে কল করেছো সেটা বলাে।’
‘আজকাল তোমাকে কল করতেও কারণ লাগবে? সম্পর্কটা এ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে নাকি?’
‘বাচ্চাদের মতো কথা বলোনা সম্রাট। এখনকার পরিস্থিতি তােমার জানা। নিব্বা-নিব্বিদের মতা প্রেম করে বেড়ানোর সময় বা অবস্থা নেই আমাদের। ‘ দাঁতে দাত পিষে বলল প্রিয়তা।
সম্রাটের মেজাজ আরও খারাপ হল। কিন্তু এখন কথায়
কথা বাড়বে। ঝগড়া করতে চাইছেনা ও। তাই কথা না
বাড়িয়ে বলল, ‘শুনলাম রুদ্র বোনের বিয়ে এই শুক্রবার, ঘরোয়াভাবেই হবে।’
‘জানি।’
‘তােমাকে নিশ্চয়ই নিয়ে যেতে চাইবে ঐ বাড়িতে আবার। দেখ রাণী, আমের ভিলায় দ্বিতীয়বার পা দেবেনা তুমি।’
প্রিয়তা একটু ভাবল। কপাল চুলকে বলল, ‘পরিস্থিতির ওপর ডিপেন্ড করছে। ও বাড়িতে গেলে আমার জন্যেও সমস্যা হয়ে যাবে। দেখি কী করা যায়।’
সম্রাট তেঁতে উঠল, ‘দেখাদেখির কিছু নেই। তুমি আর ঐ বাড়িতে যাবেনা। এটা তােমার উডবির অর্ডার।’
প্রিয়তা গম্ভীর হল। থমথমে গলায় বলল, ‘রাণী মীর্জা কারাে অর্ডার মানেনা। সেটা তােমার জানা উচিত। এইভাবে আমার সঙ্গে কথা বলার সাহস ভবিষ্যতে করোনা সম্রাট। উঁচু গলা পছন্দ না আমার।’
কথাটা বলে কল কেটে দিল প্রিয়তা। ফোনটা প্রায় ছুড়ে রাখল বিছানায়। সম্রাটের কথাগুলো মনে আসতেই গা জ্ব-লে উঠল একদম। রুদ্র আর রাশেদ ছাড়া অন্য কেউ এমন টোনে কথা বলেনি ওর সঙ্গে। আর বললেও ওর সহ্য হয়না।
অপরদিকে রাগে সর্বাঙ্গ কাঁপছে সম্রাটের। রাণীক ভালােবাসে ও। তাই শুরু থেকেই ঐ মেয়ের মেজাজ, তেজ, উগ্র আচরণ, গা ছাড়া ভাব হাসিমুখে মেনে নিতো। নম্র ব্যবহার করতো।
কিন্তু আজকাল পারেনা। রুদ্রকে জীবনে জড়ানোর পর থেকেই পারেনা। বারবার মনে হয় মেয়েটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর সেটা সত্যি হলে রাণীর পরিণতি কী করবে, মনেমনে সেটাও কল্পনা করে রেখেছে সম্রাট। ঐ মেয়েকে দাসী বানিয়ে পায়ের কাছে ফেলে রাখবে ও। ভালােবাস সত্যি। কিন্তু প্রতারণা মেনে নেওয়ার মতো লােক সম্রাট তাজওয়ার নয়।
#চলবে…