অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল
৮১.
ডিসেম্বরের সকাল। হাড়কাঁপা শীত। ঘড়িতে সাতটা বাজে। আস্তে করে প্রিয়তার দরজার সামনে গিয়ে দাড়াল জয়। দরজার দিকে তাকিয়ে বুঝল দরজাটা খােলা, ভেড়ানাে। অর্থাৎ প্রিয়তা জেগে আছে। নয়তো দরজা খােলা রাখতোনা সে। জয় দরজায় মৃদু টোকা দিয়ে বলল, ‘ম্যাম আসব?’
প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই ভেসে এলো প্রিয়তার গম্ভীর কণ্ঠস্বর, ‘এসাে।’
অনুমতি পেয়ে ভেতরে ঢুকল জয়। দেখল, বিছানার হেডরেস্টে হেলান দিয়ে বসে আছে প্রিয়তা। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। পরনে কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার। শীত লাগছেনা নাকি মেয়েটার! চোখদুটো দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রাতে ঘুমায়নি। কিংবা ঘুম হয়নি। সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থেকেই প্রিয়তা বলল, ‘হােলস্টারটা কোথায় রেখে এসেছাে?’
‘ ফ্ল্যাটের ডাইনিং স্পেসের সঙ্গে যে বাথরুমটা আছে। ওখানে রেখে এসেছি।’
‘পি-স্ত-ল?’
শার্টটা উঁচু করে পি-স্ত-লটা দেখাল জয়।
‘ওটার কথা সবসময় মাথায় রেখে কাজ করবে। ভুলে যেওনা ওটার মাধ্যমে যে তোমার ওপর নজর রাখছে সে রুদ্র আমের। এক ইঞ্চি পরিমাণ ভুলের পরিণতি তোমার মৃ-ত্যু হতে পারে।’
‘জানি ম্যাম। সাবধানে থাকব আমি।’
‘কী জন্যে এসেছাে এখন সেটা বলো।’
‘ম্যাম, আজ সম্ভবত স্যারের বাড়ি থেকে লোক আসবে আপনার সঙ্গে দেখা করতে।’
ভ্রুকুটি করল প্রিয়তা। সোজা হয়ে বসে বলল, ‘বলল?’
‘ইয়েস ম্যাম। আপনি স্কুলে যাবেন কি-না জানাতে বলল স্যার। বােধ হয়, কুহু ম্যামের বিয়ে বলেই নিয়ে যেতে আসবেন আপনাকে।’
‘কখন আসবে জানতে পেরেছাে?’
‘সম্ভবত বিকেলের দিকে। আপনার স্কুল ছুটি হওয়ার পর।’
‘ঝামেলা!’ বিড়বিড় করল প্রিয়তা। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গেছে ওর। আবার সেই নরম-তরম প্রিয়তা! চোখের জল। আবেগপূর্ণ কথাবার্তা। তিক্ত হয়ে উঠল মন। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। জয়কে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘সিগারেট আছে নিশ্চয়ই?’
জয় ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘ইয়েস ম্যাম।’
দ্রুত হাতে সিগারেট বের করে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিল জয়। প্রিয়তা আঙ্গুলের মাঝে তুলে নিল সেটা। লাইটার দিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে দিল জয়। তখনই ফোনে কল এলো প্রিয়তার। বিরক্তির ভ্রকুটি করা অবস্থাতেই ফোন রিসিভ করল ও। সিগারেটে মৃদু এক টান দিয়ে বলল, ‘সকাল সকাল কে মরছে?’
‘ছাপাখানায় আজ সকালে একজনের হাত থেতলে গেছে ম্যাম। হাতটা কে-টে বাদ দিতে হবে। ডক্টর আসছে।’ ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠ ভেসে এলো। মেয়েটার নাম তনুজা। প্রিয়তারই আরেক চ্যালা, এবং ডার্ক নাইটের দ্বিতীয় এবং শেষ মেয়ে সদস্য।
প্রিয়তা নির্বিকার কণ্ঠে বলল, ‘কোথায় আছে?’
‘ঢাকায় ডার্ক নাইটের সিক্রেট যে গোডাউনটা আছে সেখানে। তারই বেসমেন্টের একটা লুকোনো রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তার ওখানেই আসছে।’
‘আসতে বারণ করে দাও।’
চমকে উঠল জয়। ওপাশ থেকে তনুজারও একই অবস্থা। প্রিয়তা একটু থেমে বলল, ‘আমি আসছি। এক্ষুনি। আর হ্যাঁ নতুন ধা-র দেওয়া ছু-রিটা বের করে রাখবে।’ শেষ বাক্যটা খুবই ঠান্ডা গলায় বলল প্রিয়তা।
‘জ-জি ম্যাম।’ ওপাশ থেকে ভয়ে হীম হওয়া অবস্থায় বলল তনুজা।
কান থেকে ফোন নামিয়ে রাখল প্রিয়তা। হতবাক জয় ঘােরে থাকা অবস্থাতেই বলল, ‘আপনি গোডাউনে যাবেন ম্যাম?’
‘যাব। ঠিক করলাম অপারেশনটা আমি করব। শরীরের কোনাে অঙ্গ পঁচে গেলে সেটা কে-টে ফেলতে হয়। দলের ক্ষেত্রেও ব্যপারটা তাই। ঐটা আর কাজে লাগবেনা। পঁচে গেছে। ছেড়ে দিলে ভেতরের খবর বাইরে যাওয়ার রিস্ক থেকে যাচ্ছে। তাই কে-টে ফেলতে হবে।’
জয় শুকনো ঢোক গিলে বলল, ‘কিন্তু আপনি যাবেন ম্যাম? কাউকে বললেইতো এক গু-লিতে..। আপনার তাে স্কুলে যাওয়াটা বেশি জরুরি।’
‘সেসব নিয়ে তােমাকে ভাবতে হবেনা। স্কুলে আমি যাবো আমার সময়মতাে। তােমার মােবাইলে জায়গা মেসেজ করে দিচ্ছি। ওখানে গাড়ি পাঠাতে বলো বাবাকে। অবশ্যই মেসেজে পাঠাবে। মেসেজটা তােমার পার্সোনাল নাম্বার দিয়ে করবে। যেটা রুদ্রর কাছে নেই।’
মাথা নাড়াল জয়। কিন্তু ভেতর দিয়ে ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে গেলো ওর। উপলব্ধি করল ঘাড়ের পেছনের চুলগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। এই মেয়ে নিশ্চয়ই আবার মানসিকভাবে অস্থির হয়ে আছে। আর নিজের অস্থিরতা দূর করবে অন্যের র-ক্ত দেখে। নিজ হাতেই নৃ-শংস এক হ-ত্যা করে। হাত কে-টে যাওয়া লােকটার জন্যে করুণা হলে ওর। অন্য সময় হলে হয়তো এতো নিষ্ঠুরভাবে মরতে হতোনা ওকে।
‘আর কিছু বলবে?’
প্রিয়তার কথায় চমকে ওঠল জয়। চাবি দেওয়া পুতুলের মতাে না বোধক মাথা নাড়ল। প্রিয়তা হাতে ধরা সিগারেটটা দরজার দিকে ইশারা করে বলল, ‘তাহলে বিদেয় হও।’
জয় চল যেতে নিচ্ছিল। কিছু একটা ভেবে আবার থেমে গেল। প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তাহলে কী আপনি ঐ বাড়িতে ফিরছেন ম্যাম?’
প্রশ্নটা শুনে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকাল প্রিয়তা। হকচকিয়ে গেল জয়। প্রশ্নটা করা বোধ হয় ঠিক হয়নি। এই মুহুর্তেতো একদমই ঠিক হয়নি। নিশ্চয়ই ভয়ানক ধমক দিয়ে বসবে প্রিয়তা। নয়তো ছু-রি বা গু-লি চালিয়ে দেবে। কিন্তু প্রিয়তা তেমন কিছু করল না। আধখাওয়া সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে ফেলে দিয়ে নিরস গলায় বলল, ‘জানিনা। দেখছি, কোনভাবে যাওয়াটা আটকানো যায় কি-না। তুমি এখন যাও। আর হ্যা, যাওয়ার সময় হােলস্টারটা নিতে ভুলোনা।’
–
আমের ফাউন্ডেশনে যাওয়ার জন্যে তৈরী হচ্ছে রুদ্র। ওখানেই মিটিংটা হবে আজ। ব্যবসায়ীদের লাল তালিকা করা শেষ। এখন তাদের বায়োগ্রাফি, আর লাইফস্টাইল খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা হবে। তারপর ঠিক করা হবে যে কীভাবে চাঁদ তোলার কাজটা শুরু করবে, রাজি না হলে কী করবে, কে কোন কাজটা করবে ইত্যাদি। কাজের তুলনায় হাতে সময় একেবারেই কম। দ্রুত কাজ চালিয়ে কফির মগে চুমুক দিতেই বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে গেল রুদ্রর। কফিটা ভালো হয়েছে? জ্যোতি কফি ভালােই বানায়। কিন্তু কোথাও একটা শূণ্যতা অনুভব করল ও। টানা দুবছর, রোজ সকালে নিজের হাতে খুব সময় নিয়ে কফি বানাতো প্রিয়তা। সেই কফির মগে প্রথম চুমুক প্রিয়তাই দিতো। তার আগে রুদ্রর হাতে আসতোনা কফির মগ।
এমনই এক সকালে, শক্ত হাতে প্রিয়তার নরম শরীরটা কাছে টেনে, নিজের বুকে চেপে ধরে রুদ্র বলেছিল, ‘রোজ রোজ এই অদ্ভুত কাজটা করে কী শান্তি পাও তুমি?’
প্রিয়তা মুচকি হেসে, দু পা উঁচু করে হাত রেখেছিল রুদ্রর দুই কাঁধে। কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলেছিল, ‘আমি জানি, আমার ঠোঁটের স্পর্শ আপনাকে সারাদিন সজীব থাকার শক্তি দেয়। প্রতি মুহুর্তে মনে করিয়ে দেয়, রুদ্র আমের, আপনার প্রিয় আপনার অপেক্ষারত। সুস্থ, সজীবভাবে তার কাছে ফিরতে আপনি বাধ্য।’
রুদ্র প্রিয়তার হলদে উন্মুক্ত ফর্সা কোমর টেনে মিশিয়ে ধরেছিল নিজের সঙ্গে। আলতো হাতে জড়িয়ে ঘাড়ের চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে বলেছিল, ‘রুদ্র চিরকাল প্রিয়র পেছনেই চলবে। প্রিয় যতদূরেই থাক, রুদ্রকে তার প্রিয়র কাছেই ফিরতে হবে। মৃত্যুও এই সত্যিকে বদলাতে পারবেনা প্রিয়।’
‘কথা দিচ্ছেন?’
‘দিচ্ছি।’
কথাগুলাে চিন্তা করে দীর্ঘশ্বাস চাপল রুদ্র। মলিন হাসি ফুঁটে উঠল ঠোঁটে। কফির মগে আরেকটা চুমুক দিয়ে মগটা ওভাবে রেখে দিল। ড্রেসিং টেবিল থেক ব্রেসলেটটা তুলে হাতে পড়তে পড়তে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
কফির মগটা নেওয়ার জন্যে রুদ্রর ঘরে আসে জ্যোতি। কিন্তু মগে প্রায় সবটুকু কফিই পড়ে থাকতে দেখে বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যথা করে ওঠে ওর। একটা সময় ছিল, যখন জ্যোাতির হাতের কফি দিয়েই রুদ্রর দিন শুরু হতো। অথচ আজ সেই কফিই শেষ করার রুচি হয়না রুদ্রর। আমার যত্নে গড়া প্রতিটি বস্তু তামার অবহেলাতেই মনে মনে বাক্যটা আওড়ে দম বন্ধ করে ফেলল জ্যাতি। কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে গেল। ঠোঁট কামড়ে সামলালো নিজেকে। জ্যোতি জানে ওর খারাপ লাগা অযৌক্তিক। কেউ তার স্ত্রীকে অত্যাধিক ভালোবাসতেই পারে।
কিন্তু মন! মনের ওপরতাে কারো নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। তাইতাে দুটো বছর কেটে যাওয়ার পরেও রুদ্রর প্রতি ওর অনুভূতি একচুলও কমেনি। বরং বেড়েছে। বেড়ে চলেছে। একতরফা ভালোবাসার এই নিষ্ঠুর অনুভূতি কেন গ্রাস করল ওকে? প্রশ্নটাতে জ্যোতির অন্তরাত্মায় হাহাকার করে ওঠল।
–
ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা বৈঠক ঘরের দিকে এগোলো রুদ্র। উচ্ছ্বাস বা জাফর কেউ বাড়িতে নেই। রুদ্রই বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্য কাজ ধরিয়ে দিয়ে। ও চায়নি এই মুহূর্তে ওরা কেউ আমের ভিলায় থাকুক। বৈঠক ঘরে ঢুকতেই সাব্বিরকে দেখতে পেলো ও। সােলার সিস্টেমেরই সদস্য সে। ওকে দেখেই ঝটপট সালাম দিল সাব্বির। সালামের জবাব দিল রুদ্র। কোনরকম ভনিতা না করে সোজা কথায় আসল, ‘ডার্ক নাইটের ছাপাখানায় এক্সিডেন্ট একজনের হাত কা-টা গেছে। ওটাকে আর ওখানে রাখবেনা। এসব জায়গায় খুব গোণা লোক থাকে। আর তাই নতুন কাউকে খোঁজ করবে ওরা। কালকের মধ্যেই। সুতরাং তোকে ঢুকতে হবে ওখানে।’
‘বুঝেছি স্যার। কিন্তু কীভাবে ঢুকব?’
‘যেখানে যেখানে ওরা খোঁজ করে, কথা বলা আছে আমার। তােকে ঢুকিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ওদের। তোকে জাস্ট সাবধান থাকতে হবে।’
তারপর দুটো কাগজ সাব্বিরের হাতে ধরিয়ে বলল, ‘এখানে তার নতুন নাম-ধাম, ঠিকানা, বাদবাকি সব আছে। ঠাটা মুখস্থ করে ফেল। এক্ষুনি। আর ডকুমেন্ট সব ওরাই দিয়ে দেবে। সেটা নিয়ে তাকে ভাবতে হবে না।’
‘জি ভাই।’
‘যা। কিন্তু আবারও বলছি, সাবধান। সবসময় চোখকান খােলা রাখবি। সামান্যতম কোন ভুল যাতে না হয়।’
মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল সাব্বির। সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল রুদ্র। বিগত কয়েকমাসে হােলস্টারে রাখা মাইক্রোফোন আর দলের প্রত্যেকের দিকে যতটুকু নজর রাখা সম্ভব হয়েছে সে অনুযায়ী রেখেছে রুদ্র। তাতে একেবারে বিশ্বস্তু তিনজনকে পেয়েছে। রঞ্জু, রাজু ওরফে জয় আর আরেকজন সাব্বির। রঞ্জু নেই। রাজুকে সেকারণেই পাঠিয়েছে প্রিয়তাকে দেখে রাখার জন্যে। বাকি কাজটা সাব্বিরের। যেকোন কিছুর বিনিময়ে রুদ্রর এটা জানা প্রয়োজন, ব্লাক হােল আর ডার্ক নাইট অ-স্রের ডেলিভারি কোন জায়গা থেকে নিচ্ছে। কোথায়, কখন, কীভাবে ডেলিভারি হচ্ছে। পাসকোড না জানলেও সমস্যা নেই। রুদ্র আমের চুরি করেনা। ছিনিয়ে নেয়।
–
বিকেলেও ঠান্ডা পড়েছে বেশ। আকাশটা ধুসর মেঘ আর কুয়াশায় আচ্ছন্ন। চারপাশে ধূসর এক আবহওয়া। চাপা, গুমােট ভাব। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলেগেটের সামনে এসে পৌঁছায় প্রিয়তা। ডার্ক নাইটের গোডাউন থেকে সােজা স্কুলেই এসেছে। রুদ্র নিষেধের ধার ধারেনা। হঠাৎ যদি চলে আসে, আর প্রিয়তাকে স্কুলে দেখতে না পায়। সন্দহ করে বসতে পারে ওর রুদ্রর ধূর্ত মস্তিষ্ক। কোন রিস্ক নিতে চায়না ও। আজকের মতো ক্লাস করানাে শেষ। এখন ফ্ল্যাটে ফিরবে বলেই ঠিক করেছে। ঘন্টাকয়েক আগেই যে এক নৃ-শংস খুন করে এসেছে বােঝার কোন উপায় নেই। এ যেন অন্য এক মেয়ে, অন্য এক সত্তা।
গেইটের বাইরে পা রাখতেই থমকে যায় প্রিয়তার পা। দেখতে পায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে কুহু, নীরব আর জ্যোতি। প্রথমে অনেকটাই অবাক হয় ও। কুহুকে দেখে আরও বেশি অবাক হয়। সেই দু্র্ঘটনার পর এই প্রথম ঘর থেকে বেরিয়েছে মেয়েটা। এতোদিন পর কুহুকে দেখতে পেয়ে নিজের অজান্তেই ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফোটে প্রিয়তার। ধীরপায়ে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। সবার আগে কুহুর সামনে গিয়েই দাঁড়ায়। সেই দুর্ঘটনার পর বাচ্চাসুলভ সেই মিষ্টি মুখটা হারিয়ে গেছে। ফ্যাকাশে মুখটা এখনো অবধি ফিরে পায়নি নিজের আসল রঙ। দীর্ঘশ্বাস চাপল প্রিয়তা। আলতো করে কুহুর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘কেমন আছে আমার কুহুরাণী?’
কুহু কিছু বলল না। অভিমানী মুখ করে সরিয়ে দিল হাতটা। মুখ কালাে করে জ্যোতির পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। জ্যোতি প্রিয়তাকে বলল, ‘কেমন আছাে?’
প্রিয়তা তিনজনের দিকেই একপলক তাকাল। মলিন হেসে বলল, ‘ভালো। তামাদের কী খবর? সবাই সুস্থ আছো?’
নীরব বলল, ‘শুধু সুস্থ থাকাটাই কী সব? আমের ভিলার অবস্থাটাতো আপনার জানা ভাবি। এমন অবস্থায় আপনি আমাদের ছেড়ে দূরে থাকতে পারছেন?’
প্রিয়তা দীর্ঘযশ্বাস ফেলল। কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘হঠাৎ তােমরা সবাই একসঙ্গে এখানে যে? এতোদিনে আমার কথা মনে পড়ল?’
জ্যোতি মলিন হেসে বলল, ‘ভুলেতো তুমি গেছাে প্রিয়তা তাইতাে এতোদিনে একবারও আমের ভিলায় পা দিলেনা। কেবল ফোনে খোঁজ নিয়েই নিজের দায় সারলে। এমন কেউ নেই, যে তোমাকে অনুরোধ করেনিবাড়ি ফেরার জন্যে। সবরকমভাবে চেষ্টা করেছি আমরা সবাই। কিন্তু তুমি শুনছানা। তােমাকে ছাড়া আমের ভিলা কতটা শূন্য সেটা কী তুমি বুঝতে পারোনা প্রিয়তা?’
প্রিয়তা মাথা নিচু করল। দু সেকেন্ড়র মতো চুপ থেকে বলল, ‘বুঝতে পারলেও কী সবকিছু করা যায় আপু?’
‘ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে। একবার ইচ্ছে করেইতো দেখাে।’
‘ আচ্ছা, তামরা কী রাস্তায় দাঁড়িয়েই কথা বলবে?’
‘আমার ফ্ল্যাটটা বেশি দূরে না। চলো না। অনেকদিন মন খুলে কথা হয়না তােমাদের সঙ্গে।’ আরও একবার কথা
ঘােরালাে প্রিয়তা।
একেঅপরের দিকে তাকাল ওরা। অতঃপর মাথা নেড়ে সম্মতি দিল নীরব। হাত দিয়ে গাড়ির দিকে ইশারা করে বলল, ‘আমরা গাড়ি নিয়ে এসেছি ভাবি। চলুন।’
প্রিয়তার বিছানাতেই বসেছে জ্যোতি আর কুহু। নীরব বসেছে চেয়ারটাতে। তিনজনেই ভাবছে কীভাবে প্রিয়তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। রুদ্র অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে ওদের ঘাড়ে। পালনতাে করতেই হবে।
এতক্ষণ রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিল প্রয়তা। দ্রুতহাতে চা আর পিঁয়াজু বানিয়ে নিয়ে এলো নিজের রুমে। বিছানার ওপরেই ট্রেটা রাখতে রাখতে বলল, ‘ঘরে বেশিকিছু ছিলােনা। তাই এইটুকুই করতে পারলাম।’
জ্যোতি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তোমাকে এসবই বা করতে কে বলেছে বলোতো? আমরা তােমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। খেতে না। বসোতো।’
নীরবও শায় দিয়ে বলল, ‘হ্যা ভাবি বসুন প্লিজ। আমরাতো ঘরের লোকই। আমাদের নিয়ে এতাে ব্যস্ত হতে হবেনা।’
প্রিয়তা ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বিছানায় বসল। জ্যাতি বলল, ‘পাশের রুমে লোক নেই?’
‘আছে। শুনেছি ভাড়া হয়েছে। কিন্তু এখনোতো কেউ ওঠেনি।’
‘আচ্ছা।’
‘ প্লিজ তােমরা নাওনা। চা ঠান্ডা হয়ে যাবেতো। এতো কষ্ট করে বানিয় এনেছি আমি।’
জ্যোতি আর নীরব মৃদু হাসল। নিজেদের কাপ তুলে নিল হাতে। কুহু এখনো গোমড়া মুখ করে বসে আছে। কথা বলেনি প্রিয়তার সঙ্গে। নীরব চায়ের কাপ তুলে এগিয়ে দিল কুহুক। প্রিয়তা নিজেও নিজের কাপ তুলে নিল। কুহু আর নীরবের দিকে একপলক তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘তােমাদের বিয়ের খবরটাতে খুব খুশি হয়েছি আমি। তবে আমার ইচ্ছে ছিল জাকজমক করে, ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে হতে দেখব। কিন্তু যাই হােক, তােমার ভাইয়া যখন ঠিক করেছেন, অনেক দিক বিবেচনা করেই করেছেন।
জ্যোতি সুযোগ পেয়ে বলল, ‘এমনিতেই একদম ঘরােয়াভাবে হচ্ছে বিয়েটা। তারওপর বাড়ির একমাত্র বউ যদি বিয়েতে উপস্থিত না থাকে। তাহলে ওদের দুজনের ভালো লাগবে প্রিয়তা?’
নীরবও প্রায় সঙ্গেসঙ্গে বলল, ‘কুহুর কথা জানিনা। কিন্তু
আমার ভালো একদই ভালো লাগবেনা ভাবি। এমনিতেই বাবা-মার অনিচ্ছাতে, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়েটা করছি আমি। তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু আদোও তারা আসবে কি-না সেটাও জানিনা। রদ্র ভাইয়ের সঙ্গে আপনার কী হয়েছে আমি জানিনা। কিন্তু আমরা কী করেছি বলুন? আপনাকেও আমি আমার অভিভাবক বলে মনে করি
ভাবি। আপনি থাকবেন না আমার বিয়েতে?’
শেষের বাক্যটা খুবই করুণ স্বরে বলল নীরব। প্রিয়তার মন খারাপ হয়ে গেল। এতোদিন ফোনে, আজ গাড়িতে আসার সময় বারবার ফিরে যাওয়ার কথা বলছিল জ্যোতি আর নীরব। প্রিয়তা এড়িয়ে গেছে নানাভাবে। নয়তাে সােজাভাবে বলেছে, ও অনেক ভেবেচিন্তেই ঐ বাড়ি থেক বেরিয়েছে। ওর পক্ষে ফেরা সম্ভবে না। কিন্তু এখন নীরবের কথাগুলাে শুনে কেমন দ্বিধায় পড়ে গেছে ও। কিন্তু না করা প্রয়াজন। আমের ভিলায় আবার ফিরে যাওয়াটা প্রিয়তার জন্যে ঠিক হলেও রাণী মীর্জার জন্যে ঠিক হবেনা। গলে গেলে চলবেনা। যেভাবেই হোক যাওয়াটা আটকাতে হবে।
প্রিয়তা খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত কন্ঠে বলল, ‘বােঝার চেষ্টা করুন ভাইয়া। আমার পক্ষে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব না। আপনাদের ভাইও আমাকে অনেকবার জার করেছ, আমি যা বলার ওনাকে বলেছি।’
জ্যোতি বলল, ‘সব সম্পর্ক কী খালি রুদ্রর সঙ্গে প্রিয়তা আমাদের কারাে সঙ্গে তােমার কোন সম্পর্ক নেই? আমাদের কোন দাম নেই তোমার কাছে? আজ যদি রাশেদ বাবা বেঁচে থাকতেন? তুমি পারতে এভাবে তাকেফিরিয়ে দিতে? এভাবে আমের ভিলা থেকে দূরে থাকতে?’
খানিকটা নড়েচড়ে বসল প্রিয়তা। কী বলবে বুঝতে পারল না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এরা ওকে নিয়ে যাওয়ার পণ করেই এসেছে বুঝতে পারছে ও। কিন্তু গলে যে বিপদ! কোন উপায় না পেয়ে কোনরকম অপ্রস্তুত স্বরে প্রিয়তা বলল, ‘আচ্ছা বেশ। আজ মঙ্গলবারতো। শুক্রবার বিয়ে। বিয়ের দিন যাবো আমি। কথা দিচ্ছি।’
চায়ের কাপটা রেখে উঠে দাঁড়াল কুহু। বাকি তিনজনই চমকে যায়। কারণ এতক্ষণ কোন ‘রা’ অবধি করেনি মেয়েটা। কুহু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল প্রিয়তার সামনে। হাঁটু গেড়ে বসল। চোখজোড়া অশ্রপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইশারায় বলল, ‘আমার কথাটাও তুমি রাখবেনা ভাবি?’
প্রিয়তা কুহুর গালে হাত রেখে বলল, ‘একটু বোঝার চেষ্টা করাে।’
কুহু বুঝলােনা। আবারও ইশারায় বলল, ‘আমার মা নেই ভাবি। কখনও মাকে দেখিও নি। তােমাকে দেখেছি। তুমিতাে এখন আমার মায়ের মতো বলো? বাবা নেই। আমার জীবনের এমন একটা দিনে বাবা-মা কাউকে পাশে পাওয়ার ভাগ্য নেই আমার। তুমিও থাকবেনা? আমি কী এতােটা খারাপ ভাবি? ভাইয়ার জন্যে আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো? ভাইয়াও তােমাকে ছাড়া ভালো নেই বিশ্বাস করো। প্লিজ, শেষবারের মতো আমার কথা রাখো। প্লিজ।’
সত্যিই হাত জোড় করল কুহু। প্রিয়তার চোখর কোণে জল জমা হল। কুহুর জোড় করা হাতদুটো ধরে নামিয়ে বলল, ‘আমাদের কুহুরাণী বড় হয়ে গেছে।’
‘আমাদের সঙ্গে যাবেতাে তুমি?’ ইশারায় কাতরভাবে জানতে চাইল কুহু।
প্রিয়তা ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। বুঝতে পেরেছ আর কোন উপায় নেই। কোনভাবেই কোন লাভ হবেনা। তাই একটু ভেবে বলল, ‘বেশ, তবে আমার একটা শর্ত আছে।’
জ্যোতি সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘যেকোন শর্ত মেনে নেব আমরা। তুমি শুধু চলো প্লিজ।’
‘আমি যাবো। কিন্তু ওখানে গিয়ে আমি আমার মতো থাকবাে। তােমাদের ভাই যেন আমার ওপর কোন জোর খাটাতে না আসে। আর বিয়ের সবকিছু হয়ে গেলে আমি আবার চলে আসবো। তখন কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা।’
ওরা তিনজনই মেনে নেয়। তবে মনে মনে হাসে আর ভাবে, রুদ্র আমের তোমাকে আসতে দিলে তবেইনা আসবে।
–
ডার্ক নাইটের ছাপাখানাটা একটা কভার। ওখান থেকে ছাপা বইগুলোর ভেতরে ড্র-গস্, অ-স্ত্র ইত্যাদি ডেলিভারির কাজ হয়। কিন্তু সেটা যারা কাজ করছে তারা ছাড়া বাইরের কেউ জানেনা। ব্যপারটা খুবই গােপনীয়। দুর্ঘটনায় হাত কে-টে যাওয়া লোকটাকে সকালে খুন করা হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই তার লা”শটা গায়ব করতে সক্ষম হয়েছে ওরা।
ছাপাখানাতেই আলাদা করে বিশাল একটা ঘর আছে। সােফা, টি-টেবিল, চেয়ার, বসে কথা বলার মতাে সবরকম জিনিস আছে ওখানে। শওকত মীর্জা, শান, করিম তাজওয়ার, পলাশ মীর্জা উপস্থিত আছে। সােফায় আর চেয়ারে বসে আছে তারা। সিগারেট টানতে টানতে যে যার ভাবনায় মগ্ন। ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে চারপাশে। এরমধ্যেই ওখানে এসে উপস্থিত হল সম্রাট। কোনরকম সৌজন্যতা না দেখিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল। সবাইকে দেখে ওরও সিগারেটের তেষ্টা পেল। তাই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। একটা সিগারেটের ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরে লাইটার দিয়ে ধরাতে ধরাতে বলল, ‘কী ব্যপার? হঠাৎ জরুরি তলব?’
‘রানি ফিরে গেছে আমের ভিলায়।’ বলল শওকত।
চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল সম্রাটের। আবার! আবার সেই রুদ্র আমেরের সঙ্গে এক বিছানায় শোবে রাণী! রুদ্র ছোঁবে ওর রাণীকে! সিগারেট ঠোঁট থেকে নামিয়ে শক্ত হয়ে বসে রইল। শান বিরক্ত হয়ে শওকতকে বলল, ‘কী দরকার ছিল তােমার মেয়ের সকালের খু-নটা করার। এইমুহুর্তে নতুন লোক আনাটা কত রিস্কি জানােনা?’
শওকত নির্বিকার। কোনরকম বিচলিত না হয়ে বলল, ‘এক হাত দিয়ে এমনিতেও কোন কাজে লাগতানা। ঠিকই করেছে।’
করিম তাজওয়ার ধোঁয়া ছেড়ে পানসে গলায় বলল, ‘তােমার মেয়ে জিনিসটা মারাত্মক শওকত। আমার দুজন গুরুত্বপূর্ণ লোককে শেষ করে দিলো। কতবড় ক্ষতি হয়েছে আমার শুধু আমি জানি।’
‘বুঝিয়ে বললেই হয়। কথা বললেন না কেন ওর সঙ্গে।’ শওকত তখনও নির্বকার।
করিম সিগারেট অ্যাশট্রেতে গুজে রেখে বলল, ‘তােমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলার রুচি হয়না আমার। বড্ড বিশ্রী ব্যবহার তার। কে বলবে, আমি তার হবু শশুর! তবে একটা কথা বলছি, মেয়েকে এখনও একটু বোঝাও শওকত। এমন করলে কিন্তু চলবে না।’
পলাশ মীর্জা বলল, ‘ওসব ছাড়ুন। এখন আমাদের কী করণীয় সেটা ভাবুন। রাণী এখানে না থাকাতে লাভই হয়েছে।ও থাকলে অনেক কিছুই করতে পারিনা আমরা। আমের ভিলার অনেক সদস্যের প্রতিই ওর দুর্বলতা আছে। যা ভালাে লক্ষণ না।’
কিছু বলল না শওকত। ব্যপারটা সেও খেয়াল করেছে। আসলেই ভালো লক্ষণ না এটা। শান বলল, ‘তাছাড়াও রুদ্র কিন্তু হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। কিছুতো একটা করছে ও। আর সেটা ওকে করতে দিলে চলবেনা। ওকে কিছু করার সুযোেগ দেওয়া মানে আমাদের মূ-ত্যু ডেকে আনা।’
এতক্ষণে মুখ খুলল সম্রাট। সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে বলল, ‘তাই এমন কিছু করতে হবে যাতে টাকা শােধ করার ডেডলাইন শেষ হওয়ার আগে রুদ্র কিছু করার সুযাগটাই না পায়।’
‘সেটা কী?’ ক্রু কুঁচকে বলল করিম তাজওয়ার।
শওকত বলল, ‘আমি বোধ হয় বুঝতে পারছি।’
একই সুরে শান বলল, ‘আমিও।’
সম্রাট ঠোঁটে ধূর্ত হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘শুক্রবারদিন বিয়েতো! বিয়ে বাড়ি না, শোকবাড়িতে পরিণত হবে আমের ভিলা। শুক্রবারের মধ্যেই আমের ভিলায় আরও একটা লাশ পড়বে।’
পলাশ বলল, “সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু টার্গেট কে?’
শান নতুন একটা সিগারেট বের করতে করতে বলল, ‘মেয়েদের বাদ দাও। ডীষণ ঝামেলার কাজ। একটাকে নিয়ে এমনিতেই কম ঝামেলা হয়নি।’
শওকত সোফায় হেলান দিয়ে বলল, ‘সহমত। পুরুষদের মধ্যেও এমন কাউকে সরাতে হবে। যাকে সরালে রুদ্র আমের থমকাবে।’
সম্রাট সাগ্রহে বলল, ‘টার্গেট সহজ। উচ্ছ্বাস কিংবা কী যেন নাম ঐ ছেলের? ওদের হবু জামাই.. হ্যাঁ, নীরব। শুক্রবারের মধ্যে এই দুইজনের মধ্যে যেকোন একজনের লা-শ পড়া চাই। যেকোন মূল্যে।’
বাকি সকলেই সম্মত হল। এটাই সাময়িকভাবে রুদ্রকে থামিয়ে রাখার সেরা উপায়। তাই আর অপেক্ষা না করে পরিকল্পনা শুরু করল, কীভাবে উচ্ছ্বাস বা নীরবের মধ্যে যেকোন একজনকে হ-ত্যা করা হবে। শুক্রবারের মধ্যেই।
#চলবে…