অন্তর্নিহিত কালকূট
লেখনীতে: অনিমা কোতয়াল
৮৩.
তাজওয়ারদের বিজনেসের শাখা অফিস। বড় কেবিনটার পাশেই কাউচ রাখা। সেটাতে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে সম্রাট তাজওয়ার। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। পুড়তে পুড়তে অনেকটা ছাই জমা হয়েছে সিগারেটের মাথায়। টানতে ভুলে গেছে সম্রাট। গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। চিন্তার বিষয় দলের বা ব্যবসার কোন কাজ না। ও ভাবছে রাণীকে নিয়ে। মেয়েটা আমের ভিলায় আছে। রুদ্রর কাছে। ব্যপারটা যতবার মাথায় খেলে যায় ততবার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে ওর। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত পিষে সামলায় নিজেকে। ঐ মেয়েটাকে এতোবার করে না করল সম্রাট, তবুও চলে গেল! অবাধ্যতার সীমা পাড় করে ফেলছে দিনদিন।
রাণীকে নিয়ে ইদানিং যথেষ্ট সন্দিহান সম্রাট। এখন যত দ্রুত সম্ভব এসব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে হবে। তারপর ঐ মেয়েকে উচিত শিক্ষা দেবে ও। ভালোবাসে বলে যা ইচ্ছা করবে না-কি? ইদানিং আর কিছু ভাবতে পারছেনা সম্রাট। বারবার এসব চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
পাশে বসে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ফাইল দেখছে শওকত মীর্জা। তার কোনকিছু নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। সবকিছুই তার পরিকল্পনাও মতো হচ্ছে, আর সে জানে বাকিটাও তার পরিকল্পনা অনুসারেই হবে। মেয়ে নামক হাতিয়ারটাকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা সে শিখেছে। চিন্তা শুধু একটা জায়গায়, উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার আগে রানি যদি কিছু টের পায়, সব বিগড়ে যাবে।
ফোনের আওয়াজে দুজনেরই ভাবনায় ছেদ ঘটে। সম্রাটের ফোন বাজছে। কল করেছে করিম তাজওয়ার। ফোনটা তুলে নেয় সম্রাট। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, ‘কোথায়? এখনো আসছোনা কেন?’
করিম জানালেন তিনি আসতে পারবেন না। প্রধান অফিসের কাজে আটকে গেছে সে। থাকাটাও স্বাভাবিক। এতো বিশাল বিশাল প্রজেক্ট এখন তাদের হাতে। এতো এতো অস্ত্র, ড্রাগস্ আড়ালে পাচার করা ভীষণ কৌশলের কাজ। পরিশ্রমেরও। ওদেরতো আর রুদ্র আমের নেই যে চট করে অভিনব কোন কৌশল আবিষ্কার করে ফেলবে। যার শাসনে কর্মচারী নিরন্তর একনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। করিম বলল, যে মূল পরিকল্পনাটা যেন ওরা করে রাখে। তারপর সেই কাজটা কীভাবে করবে সেটা নিয়ে রাতে আলোচনা হবে।
বিরক্ত হল সম্রাট। কিছু তিক্ত কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। আসবেনা যখন এতক্ষণ অপেক্ষা করাল কেন? শুধুমাত্র বাপ বলে মেজাজটা সামলে নিয়ে বলল, ‘আচ্ছা।’
ফোনটা রেখে বারান্দার দিকে একবার তাকাল সম্রাট। সিগারেটে জমা ছাইটা ঝাড়তে ঝাড়তে ‘শান’ বলে ডাকল। বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল শান। অপেক্ষা করছিল করিমের আসার। সম্রাটের ডাকে সুখটান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিল। কেবিনে ঢুকে বলল, ‘কী ব্যপার?’
‘বোসো, বাবা আসবেনা এখন। কী করা হবে সেটা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে।’ গম্ভীর গলায় বলল সম্রাট।
তিনজনই বসল। প্রত্যেকেই নতুন একটা করে সিগারেট জ্বালালো মিটিংটা জমপেশ করতে। কথা শুরু করল শান, ‘এতক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম আমি। আমাদের টার্গেট উচ্ছ্বাস নয়তো নীরব। এই দুজনের মধ্যে একজন।’
‘বাহ্! বেশ নতুন কিছু ভেবেছো।’ বিরক্তি আর টিটকারী মিশ্রিত গলায় কথাটা বলে ধোঁয়া ছাড়ল সম্রাট। কপালে ভ্রুকুটি।
ভ্রুকুটি করল শান নিজেও। ‘আগে কথা শেষ করতে দাও?’
‘করো।’ সম্রাটের দ্বায়সাড়া জবাব।
শানের ইচ্ছা হলো সম্রাটকে ঠাটিয়ে একটা চ-ড় মারতে। দিনদিন বেয়াদবির সীমা পাড় করে যাচ্ছে এই ছেলে। কবে যেন ওর হাতেই খু-ন হয়। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে শান বলল, ‘দেখো! নীরব ছেলেটা সহজসরল। আর বিয়ের আগে রুদ্র ওকে এমনিতেও বের হতে দেবে বলে আমার মনে হয়না। আর কোন কারণে দিলেও সঙ্গে যথেষ্ট গার্ড থাকবে।’
‘তো?’ প্রশ্ন ছুড়ল সম্রাট।
‘সেক্ষেত্রে উচ্ছ্বাসের বেলায় এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ ও ছন্নছাড়াভাবে চলতে পছন্দ করে। কোন মিশন ছাড়া কখনই নিজের সঙ্গে গার্ড রাখেনা।’
সম্রাট কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘তুমি চাইছো উচ্ছ্বাসকে টার্গেট বানাতে?’
‘হ্যাঁ। কারণ নীরবের চেয়েও উচ্ছ্বাসের কাছে আমাদের লোক পৌঁছনোর সুযোগটা বেশি।’
এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ওদের কথা শুনছিল শওকত। এবার মুখ খুলল, ‘কিন্তু উচ্ছ্বাসকে এতো হালকাভাবে দেখার কিছু নেই। এমনিতে চঞ্চল, হাসিখুশি মানুষ হলেও লড়াই করার ক্ষমতা রুদ্রর চেয়ে কোন অংশে কম নেই ওর। ওর রেকর্ডও কিন্তু যথেষ্ট শক্ত এবং ভয়ংকর।’
শান বলল, ‘সে খবর আমি জানি। নীরব টার্গেট সহজ কিন্তু সহজলভ্য না। অপরদিকে উচ্ছ্বাস টার্গেট কঠিন হলেও সহজলভ্য। আর আমাদের সহজলভ্যতার দিকেই এগিয়ে যাওয়া উচিত। এখন প্রয়োজন শুধু প্রপার একটা পরিকল্পনার। সেটা রাতে বাবা আর চাচা আসলেই ঠিক করা যাবে। রাণী থাকলে চিন্তাই করতে হতোনা আমাদের। ওর যা মাথা! আরও কৌশলী বুদ্ধি দিতে পারতো।’
‘পারতোনা। তোমার বোন ঐ বাড়ির আর কারো প্রাণ নিতে চাইতো বলে আমার মনে হয়না। মুখে স্বীকার না করলেও বেশ ভালোমতোই বোঝা যায় ওদের প্রতি দয়ামায়া গজিয়ে গেছে তোমার বোনের মনে।’ গম্ভীর গলায় বলল সম্রাট।
‘অযথাই বাজে বকছো।’ আরও বিরক্ত হল শান।
শওকত কিছু বলল না। সে জানে সম্রাট যা বলছে তা সত্যি। পরিকল্পনা নিয়ে গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ ভাবল। শান ভুল কিছু বলেনি। সবদিক তারও এটাই ঠিক মনে হচ্ছে। তবে মুখে বলল, ‘ভালো করে ভেবে নাও। উচ্ছ্বাস কিন্তু মোটেও সহজ টার্গেট না। লড়ে ওরা কতটা পারবে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’
সম্রাট বলল, ‘সেটা কোন ঘটনা না। আকস্মিক হামলায় দিশেহারা করে তুলব ওকে। কোথা কোথা থেকে আক্রমণ আসছে আর কোনদিকটা আগে সামলাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারবেনা। শুধু একা থাকলেই হলো।’
শান খানিকটা ভেবে বলল, ‘যা করা হবে, যেভাবে করা হবে যেন সাবধানে করা হয়। রুদ্রর ঐ বোনের ব্যাপারটা কিন্তু আমাদের অসাবধানতার কারণেই ঘেঁটে গেছে। সে কারণে এখনো সাফার করছি আমরা। এবার যেন তেমন কিছু না হয়।’
শওকত বলল, ‘সেরকম কিছু ঘটার সুযোগই নেই। সম্পূর্ণভাবে খু-নটা করার আগে ওরা কেউ নড়বেনা। একদম ডে-থ কনফার্ম করেই স্পট ছাড়বে ওরা।’
শান বলল, ‘তাহলে টার্গেট লকড? উচ্ছ্বাস!’
মাথা ঝাঁকাল শওকত। আলতো করে হাত রাখল নিজের কাঠের বাঁ পায়ে। আজও ট্রেনে কা-টি পড়ার সময়কার সেই ভয়ানক যন্ত্রণার কথা মনে পড়লেই রুহু কেঁপে ওঠে তার। চোখে ফুটে ওঠে অদ্ভুত হিংস্রতা। কোন অন্যায়কেই তখন অন্যায় মনে হয়না। রুদ্র আমেরকে মানসিক, শারীরিক সব দিক দিয়ে ধ্বংস করতে চায় সে। যেকোন মূল্যে। আর তারজন্যে এবার যদি উচ্ছ্বাসকে মরতে হয়। উচ্ছ্বাস ম-রবে। ম-রবে উচ্ছ্বাস।
–
নাজিফাদের বাড়ির পাশেই চমৎকার সুন্দর একটা পার্ক। সেখানকারই এক বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে উচ্ছ্বাস আর নাজিফা। দুজনেই চুপ। উচ্ছ্বাস বাদাম খাচ্ছে আর অস্থিরভাবে চোখ বোলাচ্ছে চারপাশে।
গোধূলি লগ্ন। চারপাশে আবছা আলো-অন্ধকারের মধ্যে লালের প্রোলেপ। সুন্দরভাবে পরিচর্যিত সবুজ গাছগুলো গাঢ় খয়েরি রঙ ধারণ করেছে। বেশ মোহনীয় লাগছে এ দৃশ্য।
নাজিফাদের বাড়িতে কুহুর বিয়ের দাওয়াত দিতেই এসেছিল উচ্ছ্বাস। ঘরোয়াভাবে হলেও খুব কাছের লোকদের বলা হচ্ছে। নাজিফার বাবাও রাশেদের খুব কাছের লোক ছিল। তাই এই দাওয়াত। তখনই নাজিফা উচ্ছ্বাসকে বলল তার কথা আছে। একটু আলাদা কথা বলতে চায়। সেকারণেই নাজিফাকে নিয়ে এখানে আসা। নাজিফার মাও আপত্তি করেননি। সে উচ্ছ্বাসের সাথে নাজিফাকে ছাড়তে একপায়ে রাজি।
অনেকক্ষণের নীরবতার পর উচ্ছ্বাস আবার তাকাল নাজিফার দিকে। মেরুন রঙের পা অবধি লম্বা একটা মেক্সি পরেছে নাজিফা। ওপরের ভারী সোয়েটার। সেই চিকনচাকন নাজিফাকে নাদুস-নুদুস গুলুমুলুভাবে আরও বেশি মিষ্টি লাগে। ঠান্ডায় লাল হয়ে আছে ফরসা ফুলো গালদুটো। একটু পরপর হাতের তালু ঘষছে। উচ্ছ্বাস বলল, ‘চা খাবে?’
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল নাজিফা। পাশেই হেঁটে হেঁটে ওয়ানটাইম কাপে চা বিক্রি করছিল একজন। উচ্ছ্বাস তাকে ডেকে দু কাপ চা নিল।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে উচ্ছ্বাস বলল, ‘কী বলবে বললে নাতো?’
চমকে উঠল নাজিফা। এতক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে দেখছিল লালচে আকাশটাকে। ভারী পেটটায় আলতো করে হাত রাখল ও। বলল, ‘মা সেদিন তোমাকে কী বলেছিল উচ্ছ্বাস?’
উচ্ছ্বাস থমকালো। একটু ইতস্তত করে বলল, ‘তেমন কিছু না। বাদ দাও।’
নাজিফা স্থির চোখে তাকাল উচ্ছ্বাসের দিকে। কাঠকাঠ গলায় বলল, ‘আমি কিন্তু জানি মা কি বলেছে।’
উচ্ছ্বাস কী বলবে বুঝতে পারল না। অস্বস্তিতে সবার্ঙ্গ অসাঢ় হয়ে এলো। নাজিফা মলিন হাসল। আবার নিজের দৃষ্টি খোলা আকাশে নিক্ষেপ করে বলল, ‘মার কথায় কিছু মনে করোনা। বয়স হচ্ছেতো। বাবাও চলে গেলেন। নিজেও জানেনা কী বলে, কী করে।’
‘আজব! মনে করব কেন? উনি যা বলেছেন সেটা স্বাভাবিক। এসময় মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করবেনাতো নিজের জন্যে মাঝবয়সী, রেডি টু মিঙ্গেল পাত্র খুঁজবে?’
নাজিফা উচ্ছ্বাসের বাহুকে কিল মেরে বলল, ‘বাঁদর! সবসময় ফাজলামি তাইনা?’
উচ্ছ্বাস শব্দ করে হাসল। হাসল নাজিফাও। উচ্ছ্বাস বলল, ‘আমি যখন থাকব না তখন আমার এই ফাজলামিগুলোই ভীষণ মিস করবে।’
নাজিফা কিছু বলতে গিয়েও বলল না। আবার কিছুক্ষণের নীরবতার পর আপনাআপনিই হাসি মিলিয়ে গেল দুজনের। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে উচ্ছ্বাস বলল, ‘নাজিফা?’
‘হুঁ?’
‘যদি আমি তোমার মাকে হ্যাঁ বলে দিতাম? রাজি হয়ে যেতাম তোমাকে বিয়ে করতে? তোমার উত্তর কী হতো?’
হৃদপিণ্ডটা যেন লাফ দিয়ে উঠল নাজিফার। সর্বাঙ্গ জমে যাওয়ার উপক্রম হলো। কিছুক্ষণ কোন কথাই বলতে পারল না। অতঃপর কেঁপে যাওয়া কন্ঠে বলল, ‘এসব ভিত্তিহীন কথার কোন মানে হয় উচ্ছ্বাস?’
‘ভিত্তিহীন?’
‘আমি বিধবা উচ্ছ্বাস। সন্তানসম্ভবা। তোমাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই আমার কাছে আর। এটা আর হয়না।
‘যদি বলি আমার কোন আপত্তি নেই।’
‘আমার আপত্তি আছে।’
‘নাজিফা!’
নাজিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আমরা একে অপরের জন্যে তৈরী হইনি উচ্ছ্বাস। যদি হতাম, তবে আলাদা হতে হতোনা। এক হওয়া আমাদের ভাগ্যে নেই। ভাগ্যকে মেনে নেওয়াই শ্রেয়।’
উচ্ছ্বাস মলিন হাসল। অসহায় গলায় বলল, ‘সেক্ষেত্রে আমার ভাগ্যটাই খারাপ। বরাবরের মতো।’
একটু চুপ থেকে আবার বলল, ‘জানো? আমাদের জীবনে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা হৃদয়ের সবটা জুড়ে থাকে। প্রতিটা রন্ধ্রে, প্রতিটা রোমে তাদের অস্তিত্ব বয়ে বেরাই আমরা। কিন্তু মজার ব্যপার হলো, সবটা জুড়ে থেকেও তারা আমাদের ভাগ্যে থাকেনা। তুমিও আমার জীবনের তেমনই একজন নাজিফা। যে আমার সবটা জুড়ে আছে, শুধু ভাগ্যে নেই।’
দমবন্ধকর এক পরিবেশ তৈরী হল যেন। কাউকে ভালোবাসা। তারসঙ্গে এতো সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত কাটানো, এতো স্বপ্ন সাজানো। হঠাৎই অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছেদ। প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে অচেনা কাউকে বরণ করার কষ্ট। নিজের ভালোবাসাকে অন্যের হতে দেখার হাহাকার। অতঃপর পাশাপাশি থেকেও একে অপরের হতে পারব না, সে উপলব্ধির সে কী যন্ত্রণা! নিদারুণ সে যন্ত্রণায় শ্বাস আটকে এলো দুজনেরই। কিন্তু এক ফোঁটা অশ্রুও ঝড়ালোনা ওর। এ কষ্ট ওদের সয়ে গেছে।
লম্বা শ্বাস ফেলল নাজিফা। তাকিয়ে রইল উচ্ছ্বাসের দিকে। উচ্ছ্বাস একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে চুমুক দিচ্ছে চায়ের কাপে। কালো রঙের একটা ফুলহাতা গেঞ্জি পরেছে উচ্ছ্বাস। এছাড়া বাড়তি কোন শীতের পোশাক নেই। তবে তামাটে গায়ের রঙে কালো রঙটা ফুটেছে বেশ। এলোমেলো চুলগুলো দুলছে ঠান্ডা হাওয়ায়। বারবার জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে নিজের সিগারেট পোড়া তামাটে ঠোঁটজোড়া। এ যেন অদ্ভুত সৌন্দর্য। উদাস সৌন্দর্য। সে সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই নাজিফা ভাবল, কীকরে রাজি হবে সে? উচ্ছ্বাসের রাজি হওয়াটাকে ওর দয়া মনে হয়। তারওপর একদিন নিজেই উচ্ছ্বাসকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ওর সামনে অসম্ভব শর্তের দেয়াল তুলে দিয়েছিল। ঐ হৃদয়টাকে ক্ষ-তবিক্ষ-ত করে, বিয়ে করে ঘর বেঁধেছিল অন্যকারো সঙ্গে। অন্যকারো সন্তান ধারণ করেছে নিজের গর্ভে।
আর আজ নিজের স্বার্থে, নিজের অসহায়ত্ত্বের কথা ভেবে বলবে, ‘হ্যাঁ আমাকে বিয়ে করো, আমি রাজি’? এতোটা নির্লজ্জ নাজিফা নয়। প্রসঙ্গ পাল্টে উচ্ছ্বাস বলল, ‘কাল কুহুর হলুদে তুমি থাকবে কিন্তু। কুহু বারবার বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে। না গেলে রাগ করবে। আমি নিজে এসে নিয়ে যাবো তোমাকে। দিয়েও আসবো।’
নাজিফা মুচকি হেসে বলল, ‘আচ্ছা।’
হঠাৎ কিছু একটা ভেবে নাজিফার দিকে ঘুরে বসল উচ্ছ্বাস। একটু দ্বিধান্বিত স্বরে বলল, ‘একটা কথা বলব?’
‘বলো?’
‘তোমার পেটে একটু হাত রাখতে পারি? জাস্ট হাত রাখব।’
নাজিফা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল উচ্ছ্বাসের দিকে। এর আগে কোনদিন উচ্ছ্বাস এমন আবদার করেনি। উচ্ছ্বাসের চোখে অসহায় আকুতি। সে আকুতি উপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই নাজিফার। ঘাড় কাঁত করে সায় দিল উচ্ছ্বাসের বায়নায়। সঙ্গে সঙ্গে নাজিফার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল উচ্ছ্বাস। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নাজিফার ভরাট পেটের দিকে। আলতো করে পেটে হাত রাখল। হালকা নড়ে উঠল নাজিফা। উচ্ছ্বাস বলল, ‘এইযে চ্যাম্পিয়ন? আমি জানি তুই খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবি। আর একদম সুস্থভাবেই আসবি। তোর মায়ের মতো তুইওতো একজন ফাইটার তাইনা?’
অপরহাতটাও নাজিফার পেটে রেখে বলল, ‘আর হ্যাঁ, একটা কথা! এসেই আবার মামা-টামা ডেকে আমার ভাঙা হৃদয়টা আরও ভেঙে গুড়া গুড়া করে দিসনা বাপ। এই গুনটা মায়ের কাছ থেকে নিবিনা। একদম না।’
উচ্ছ্বাসের এধরণের বাচ্চামো কথায় হেসে ফেলল নাজিফা। নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখে গেল নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে। আপনমনেই বলল, ‘তুমি আমার ভাগ্যেও কেন থাকলেনা উচ্ছ্বাস?’
–
প্রতিদিনের তুলনায় আজ বাড়িতে একটু তাড়াতাড়ি ফিরল রুদ্র। কাজ দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভাবনার তুলনায় বেশিই দারুণভাবে এগোচ্ছে কাজ। রুদ্রর করা পরিকল্পনা অনেকটা জাদুর মতো কাজ করছে। বেশ দ্রুতই টাকা উঠে আসছে। যারা দেবেনা বলে গোঁ ধরছে তাদের ঘাড়ে ব-ন্দু-ক ধরে রাজি করাচ্ছে। তাতেও রাজি না হলে, তাদের অবৈধ কাজের প্রমাণগুলো দিয়ে ব্লাকমেইল করছে। তাতেও যারা মানছেনা তাদের উপহার দেওয়া হচ্ছে মৃ-ত্যু। যা দেখে বেঁকে বসা আরও ব্যবসায়ীগুলোও সুরসুর করে টাকা দিয়ে দিচ্ছে। এসব কৌশলই রুদ্রর। এভাবে চললে ডেডলাইনের আগে পুরোটা না হলেও বিদেশী কম্পানিগুলোকে সামাল দেওয়ার মতো টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। আশাবাদী রুদ্র।
তবে প্রতিদিনকার মতো আজ আর আমের ভিলায় ফিরতে বিতৃষ্ণা কাজ করেনি ওর। বরং বাড়ি ফেরার জন্যে অজান্তেই ছটফট করছিল ওর অবচেতন মন। তার কারণটাও জানা রুদ্রর। প্রিয়তা আছে ওর ঘরে। ঘরটা আজ আর শূণ্য নয়। নিষ্প্রাণ মরুভূমির মতো খা খা করবেনা ঘরের প্রতিটা কোণ।
ঘরে ঢুকে রুদ্র চারপাশে তাকিয়ে খুঁজল প্রিয়তাকে। দেখল ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে বেনুনী বাঁধছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল রুদ্র। জিজ্ঞেস করল, ‘ঘুমাও নি এখনো?’
‘অপেক্ষা করছিলাম আপনার।’ চুল বাঁধতে বাঁধতেই বলল প্রিয়তা।
রুদ্র একটু থমকালো। বোতাম খোলা থামিয়ে অবাক কন্ঠে বলল, ‘হঠাৎ এতো দয়া?’
প্রিয়তা রুদ্রর টিটকারিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘খেয়ে আসেননি জানি। ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার বাড়ছি।’
রুদ্র কথা বাড়াল না। শার্ট খুলে রাখল পাশে। ব্রেসলেটটা খুলে ড্রেসিংটেবিলের ওপর রেখে চলে গেল ওয়াশরুমে। প্রিয়তা ব্রেসলেটটার দিকে তাকিয়ে থেকে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। ভাবছে কীকরে বলবে কথাটা। কাল কুহু আর নীরবেল হলুদ। আর হলুদের অনুষ্ঠানের জন্যে হলেও কিছু কেনাকাটা করতে হবে। যেগুলো সার্ভেন্টদের দিয়ে করানো যাবেনা। আর এটাকেই বাইরে বের হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে প্রিয়তা।
ভেবেছিল নিজে বলবে না। জ্যোতি বা নীরবকে দিয়ে বলাবে। সেই ভেবে প্রথমে জ্যোতির কাছে গিয়েছিল। সবটা শুনে জ্যোতি বলেছে, ‘দেখো ভাই। তোমার বরটা এখন সবসময় তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে ঘোরে। উল্টোপাল্টা কিছু বললেই ধমকে ওঠে। যদিও ওর ধমক হজম করার অভ্যেস আছে আমার। কিন্তু ওর অনিচ্ছায় ওকে দিয়ে কোন কিছু করাতে পারিনি কখনও। এ কাজটা সবসময় তুমিই পেরেছো। একমাত্র তোমার কাছেই ও নরম হয়। এখন যদি কারো কথা ও শোনে তবে তোমার কথাই শুনবে। তোমার বরকে তুমিই সামলাও।’
নীরবের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি। তার কথা ছিল, ‘ভাবি, এরচেয়ে আপনি আমাকে এই ডুপ্লেক্স বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিতে বলুন। আমি দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন না করে তাও দিয়ে দেব। তবুও আপনার ঐ সিংহ বরের মুখে আমাকে পাঠাবেননা। দয়া করুন।’
এদের কথাবার্তা শুনে প্রিয়তার হাসি পেয়েছিল বেশ। বরটা ওর আসলেই সাক্ষাৎ সিংহ। যার ভয়ে তটস্থ থাকে সবাই। তবে বুঝেছিল যা করার ওকেই করতে হবে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার এটাই একমাত্র সুযোগ। সে সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করবেনা ও।
একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর টাওজার পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো রুদ্র। শর্ট শাওয়ার নিয়েছে। দেখল প্রিয়তা খাবার বেরে রেখেছে ওর জন্যে। রুদ্রর দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয় প্রিয়তা। রুদ্রর আফটার শাওয়ার লুকটা বেশ ঘায়েল করা। এমনিতেই মানুষটা অস্বাভাবিক সুন্দর। এইভাবে যেন সৌন্দর্য এক লাফে কয়েকগুন বেড়ে যায় এই শ্যামপুরুষের। রুদ্র বিছানায় আসাম করে বসল। রাত অনেক হয়েছে। ক্ষিদেও পেয়েছে বেশ। শুরু করার আগে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘খেয়েছো?’
প্রিয়তা না বোধক মাথা নেড়ে বলল, ‘খাবো এখন।’
খাওয়ার মাঝে হটপট থেকে তরকারি তুলে রুদ্রর পাতে দিতে দিতে প্রিয়তা বলল, ‘একটা কথা ছিল।’
‘বাড়ি থেকে বের হওয়া ছাড়া যেকোন কিছু বলতে পারো।’
‘বের হওয়ার কথাই বলব।’
‘স্যরি।’
‘আরে! আমার পুরো কথাটা আগে শুনে নেবেনতো?’
খাওয়া ছেড়ে প্রিয়তার দিকে তাকাল রুদ্র। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘বেশ! বলো কী বলবে?’
প্রিয়তা খানিকটা ইতস্তত করল। গোটা ঘরজুড়ে ঘুরে এলো ওর এলোমেলো দৃষ্টি। নিজেকে যথাসম্ভব ধাতস্থ করে বলল, ‘কালতো কুহু আর নীরবের গায়ে হলুদ হবে। কিছু জিনিসপত্রতো কেনা লাগে তাইনা?’
রুদ্র খেতে খেতে নির্বিকারভাবে বলল, ‘কী কী লাগবে লিস্ট করে দাও। আমি আনিয়ে দেব।’
রুদ্রর কাছ থেকে এরকমই একটা উত্তর আশা করেছিল প্রিয়তা। সে অনুযায়ী নিজের কথাও সাজিয়ে রেখেছে। মনের মধ্যে সাজিয়ে রাখা কথাগুলোই আওড়ালো ও, ‘আজব! সবকিছু লোক দিয়ে হয়? নিজেরা দেখব, পছন্দ করব তারপর না কিনব। হলুদের টুকিটাকি অনেক জিনিস থাকে। ওসব মেয়েলী ব্যপার, আপনি বুঝবেন না।’
‘তাই? তা এগুলো কিনতে তুমি একা বের হতে চাইছো?’ ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করল রুদ্র।
প্রিয়তা এবার নিজেও বিরক্ত হল। ঝাঁজ দেখিয়ে বলল, ‘আশ্চর্য! আমি বলেছি আমি একা যাবো? জ্যোতি আপু আর নীরব ভাইকে নিয়েই যাবো।’
‘দরকার নেই।’ কোনকিছু না ভেবেই বলল রুদ্র।
প্রিয়তা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ‘আজব জুলুমবাজিতো! এমনিতেই বিয়েটা ঘরোয়াভাবে দিচ্ছেন। সেটা নিয়ে কিচ্ছু বলিনি। মেয়েটার হলুদের অনুষ্ঠানটাতো ঠিকভাবে করতে দিন। আপনি ভাই হলে আমিওতো ওর ভাবি। আমার ইচ্ছের কোন দাম নেই?’
রুদ্র জবাব দিচ্ছেনা। খেয়ে চলেছে একমনে। প্রিয়তা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আচ্ছা বেশ! আপনার চ্যালা-প্যালাদেরও সাথে পাঠিয়েন। তাহলে হবে নিশ্চয়ই?
রুদ্র এবার খানিকটা ভাবল। ভেবে বলল, ‘জ্যোতি, নীরব ওরাও যেতে চেয়েছে?’
‘তো আমি কী এমনি এমনি বলছি? আপনার ভয়েতো কেউ কিছু বলতেও পারেনা। কঠিন পুরুষমানুষ একটা।’
রুদ্র খাওয়া থামিয়ে তাকাল প্রিয়তার দিকে। মুচকি হেসে বলল, ‘আজ আবার তোমাকে বউ বউ লাগছে। আগের মতো।’
ভ্রুকুটি করল প্রিয়তা। প্লেট থেকে হাত তুলে নিয়ে বলল, ‘যেতে দেবেন কি-না বলুন?’
রুদ্রর খাওয়া শেষ। ও নিজেও প্লেট থেকে হাত তুলে নিয়ে বলল, ‘দেবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে।’
‘আপনি এখানেও শর্ত ঝুলিয়ে দেবেন?’
‘দেব।’
‘বলুন কী শর্ত?’
‘গতরাতের মতো সোফায় গিয়ে শুতে পারবে না। বিছানায় শুতে হবে।’
মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল প্রিয়তার। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। অতঃপর প্লেটদুটো গুটিয়ে নিয়ে চলে গেল ঘরের বাইরে। রুদ্রও উঠে গিয়ে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এলো। প্রিয়তা রুমে আসতেই রুদ্র বলল, ‘বললে না শর্তে রাজি আছো কি-না?’
‘যা করার আপনার বোনের জন্যেই করছিলাম। এতে আমার নিজের কোন স্বার্থ নেই যে আপনি এসব শর্ত জুড়ে দেবেন। আমার বলার কাজ আমি বলেছি। এবার সেটা রাখবেন কি-না তা আপনার ব্যপার। জোরজবরদস্তি করে বাড়িতে আটকে রেখেছেন সেটাই অনেক। এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করবেন না।’
কথাটা বলে বালিশ আর একটা ব্লাঙ্কেট নিয়ে সরে এলো প্রিয়তা। লাইটটা অফ করে সোফায় শুয়ে পড়ল। আবছা অন্ধকারে রুদ্র তাকিয়ে রইল প্রিয়তার দিকে। দীর্ঘশ্বাস চেপে নিজেও শুয়ে পড়ল বিছানায়। এক ছাদের নিচে, একই ঘরে থেকেও শারীরিক, মানসিকভাবে কতটা দূরত্ব দুজনের। রুদ্র বুঝতে পারছে, এ দূরত্ব ততদিন ঘুঁচবেনা যতদিন না রুদ্র ঐ অন্ধকার পাপের জগত ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে। তবে সে রাস্তা এখনো অনেক দূরে। রুদ্রর এখনো অনেক কাজ বাকি।
–
সকাল থেকেই আমের ভিলায় টুকিটাকি কাজ শুরু হয়ে গেল। যেহুতু বিয়েটা একদম ঘরোয়াভাবে হচ্ছে তাই তেমন বিশেষ কোন অয়োজন নেই। তবে শীত পড়েছে আজ। সকলের গায়েই ভারী শীতের পোশাক। সকালের নাস্তা করেই বের হওয়ার জন্যে তৈরী হয়ে নিল জ্যোতি, নীরব আর প্রিয়তা। হ্যাঁ, অনুমতি দিয়েছে রুদ্র। ওরা কেউই অবাক হয়নি তাতে। প্রিয়তার দ্বারা রুদ্রর সকল অটল সিদ্ধান্তকে টলিয়ে দেওয়ার ইতিহাস বেশ ভালোই আছে। তবে সঙ্গে করে যাবে বেশ কয়েকজন প্রহরী। যারা একমুহূর্তের জন্যেও ওদের চোখের আড়াল করবেনা। বলা বাহুল্য, সেকজনের মধ্যে জয় ওরফে রাজুও আছে।
কুহু যাচ্ছেনা। সে ঘটনার পর বাড়ি থেকে বের হয়না কুহু। শুধুমাত্র প্রিয়তাকে আনার দিন গিয়েছিল। ওরাও কেউ জোর করেনা। বোঝে, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় প্রয়োজন ওর। তাছাড়াও ও কনে। তাই না বের হওয়াই ভালো।
ওরা বের হওয়ার একটু আগেই রুদ্র আর উচ্ছ্বাস বের হচ্ছে। বের হওয়ার আগে রুদ্র একটু গম্ভীরভাবে তাকাল ওদের দিকে। থমথমে গলায় বলল, ‘মার্কেটে যাবে, দরকারি জিনিসগুলো কিনবে, এরপর সোজা বাড়ি চলে আসবে। মনে থাকবে?’
নীরব দ্রুত উপরনিচ মাথা ঝাঁকাল। জ্যোতিও ঘাড় কাঁত করে সম্মতি দিল। কিছু বলল না কেবল প্রিয়তা। ভ্রু কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
রুদ্র বিড়বিড় করে বলল, ‘ঘাড়ব্যাঁকা মেয়ে একটা।’
কথাটা শুনতে পেল উচ্ছ্বাস। দাঁত কেলিয়ে বলল, ‘তোর বউ বলে কথা।’
উচ্ছ্বাসকে কটমটে এক দৃষ্টি উপহার দিয়ে বেরিয়ে গেল রুদ্র। পেছন পেছন উচ্ছ্বাসও গেল।
জিপে গিয়ে বসল দুজনে। জিপ স্টার্ট দিতে দিতে রুদ্র বলল, ‘ওদিককার কী খবর?’
উচ্ছ্বাস বলল, ‘আক্কাস নামের লোকটা টাকা দিতে চাইছেনা। ঘাড়ত্যাড়ামি করছে। ঐটার দেখাদেখি আর দুজন ঘাড়ত্যাড়ামি শুরু করেছ।’
‘আজকেই সরিয়ে দে ওটাকে। মারার আগে চেক সাক্ষর করিয়ে নিবি। ওটাকে মরতে দেখে বাকি দুটোও সুরসুর করে টাকা দিয়ে দেবে।’
‘সেটাই ভাবছি।’
‘আর কিছু?’
‘না, এছাড়া আরকোন সমস্যা নেই।’
কিছুক্ষণ চুপ থাকল দুজনে। হঠাৎ রুদ্র বলে উঠল, ‘সে ব্যপারে কী ভাবলি?’
‘কোন ব্যপারে?’
‘নাজিফাকে বিয়ে করার ব্যপারে।’
‘আরে দূর! আমার এখন বিয়ে করার বয়স আছে নাকি? ঠিকসময় বিয়ে করলে তোর বয়সী একটা ছেলে থাকতো আমার।’
‘একটা লাথি দিয়ে জিপ থেকে ফেলে দেব, শয়তান!’
হো হো করে চারপাশ কাঁপিয়ে হেসে উঠল উচ্ছ্বাস। যেন ওর মতো সুখী মানুষ দুটি নেই। বুকের এতো কষ্টের পাথর চেপে কেউ কীকরে এভাবে হাসতে পারে জানেনা রুদ্র।
–
সুপার মার্কেটের কয়েকটা দোকান ঘুরে বেশ কিছু জিনিস কিনেছে ওরা। কুলো, কুহুর জন্যে কিছু কসমেটিকস্, হলুদ আর বিয়ের জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস। নীরবও কুহুর জন্যে কিছু জিনিস কিনেছে। নিজে পছন্দ করে। জ্যোতি আরও কিছু কিনতে চাইছে। যা দেখছে তাই ভালো লাগছে ওর। নীরব হতাশভাবে দেখছে সে কেনাকাটা। একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে বলেই বসল, ‘মেয়ে মানুষের এই এক অলৌকিক গুণ। এক কিলোমিটার হাঁটতে বললে এদের পা ব্যথা হয়ে যায়। নড়তে-চড়তে পারেনা। অথচ শপিংমলে ঢুকলে এরা যে পরিমাণ হাঁটে, তা একসঙ্গে করলে কয়েক মাইল হয়ে যায়। তবুও ক্লান্ত হয়না। ভাবখানা এমন, আর শ’খানেক দোকান অনায়াসে ঘুরে আসবে। কেমনে পারো তোমরা? টায়ার্ড লাগেনা?’
জ্যোতি বলল, ‘মেয়ে হলে বুঝতে। এখন বকবক না করে কিনতে দাও।’
প্রিয়তা কিছু বলছেনা। ওর চোখ বারবার নিজের ফোনের দিকে যাচ্ছে। বাহির দিয়ে স্বাভাবিকভাবে দোকানে সব কেনাকাটায় করলেও মন অস্থির। তখনই ফোনে কাঙ্ক্ষিত মেসেজটা পেল প্রিয়তাহ। তনুজার মেসেজ। ইংরেজি বর্ণের সাহায্যে লিখেছে, ‘ম্যাম, এদিকের অবস্থা ভালো না। সাব্বির টের পেয়েছে ইকবালকে কোথায় রাখা হয়েছে। সেখানেই পৌঁছনোর চেষ্টা করছে। কী করব?’
প্রিয়তা আড়চোখে একবার তাকাল জ্যোতি আর নীরবের দিকে। দ্রুত টাইপ করল, ‘কিচ্ছু করতে হবেনা। শুধু নজর রাখো। আমি আসছি। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে যোগাযোগ করবে আমার সাথে।’
তখনই জ্যোতি ডেকে উঠল, ‘প্রিয়তা? দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? চুড়িগুলো একটু দেখে যাও?’
প্রিয়তা লম্বা একটা শ্বাস ফেলে এগোলো। চুড়ি পছন্দ করল। পছন্দ করা চুড়িগুলো প্যাক করতে দিয়ে প্রিয়তা বলল, ‘জ্যোতি আপু, আমাকে একটু স্কুলে যেতে হবে। ইটস্ ইমার্জেন্সি। একটু আগেই মেসেজ এসেছে।’
জ্যোতি ভয় পেয়ে গেল। অস্থির গলায় বলল, ‘একদমই না। রুদ্র জানলে বিপদ হবে। ভীষণ রেগে কিন্তু প্রিয়তা।’
‘উনি কিছু জানবেনা।’
নীরব বলল, ‘সেটাতো আপনি বলছেন ভাবি। ভাইতো আপনাকে কিছু বলবেনা। গর্দা-ন নেবে আমাদের।’
প্রিয়তা ওদের বোঝানোর চেষ্টা করে বলল, ‘রুদ্র রাতের আগে আসবেনা। আর আমি লাঞ্চ টাইমের আগেই চলে আসব। প্রমিস। বিশ্বাস করো, যাওয়াটা দরকার। আর তোমাদের ভাইও বুঝবেনা সেটা। তাই না জানিয়ে যেতে হচ্ছে। তোমরা একটু বোঝ প্লিজ?’
‘কিন্তু যদি তোমার কোন বিপদ হয়?’ সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন করল জ্যোতি।
প্রিয়তা বলল, ‘হবেনা।’ এরপর ওদের সঙ্গে যেসব প্রহরী এসেছিল তার মধ্যে জয়কে দেখিয়ে বলল, ‘ওনাকে নিয়ে যাচ্ছি আমি। আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে আর নিয়ে আসবে। তাহলেতো কোন সমস্যা নেই?’
জয়ও সেকথা শুনে এগিয়ে এসে বলল, ‘আপনারা বললে আমি যেতে পারি। ম্যামের খেয়াল রাখব। সমস্যা নেই।’
জ্যোতি আর নীরবের মন শায় দিলোনা কিন্তু মেনে নিল প্রিয়তার কথা। কারণ প্রিয়তাকে দেখে সত্যিই মনে হচ্ছে ওর যাওয়া প্রয়োজন।
আসলে প্রিয়তার পরিকল্পনা এটাই ছিল। ও জানতো প্রহরী পাঠালে তারমধ্যে জয়কে রুদ্র পাঠাবেই। কারণ এখনো অবধি জয় রুদ্রর খুব বিশ্বস্ত। আর এদিকটা যে সামলাতে পারবে সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল প্রিয়তা। সত্যিই দারুণভাবে পরিস্থিতি সামলে জয়কে নিয়ে বেরিয়ে এলো সুপার মার্কেট থেকে।
–
চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় ঝিমছে ইকবাল। ইদানিং খুব বেশি কষ্ট হয়না ওর। গায়ে সয়ে গেছে সবকিছু। তবে প্রিয়তা যেদিন এসেছে তার পর থেকে আগের মতো সেই একবেলা অখাদ্য দেওয়া হয়না ওকে। তিনবেলাই খাবার দেওয়া হয়। তাও খাওয়ার যোগ্য। ভালো খাবার। আগের মতো নিষ্ঠুর অত্যাচার হয়না। তবে মাঝেমাঝে সেই পেনড্রাইভের কথা বলে, মারধর করা হয়। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারেনা সে। এখান থেকে মুক্তিরও কোন উপায় বা আশা দেখতে পাচ্ছেনা।কথাগুলো চিন্তা করে ঝিমুনি বাড়লো ইকবালের।
হঠাৎই কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঝট করে তাকাল। সাব্বিরকে দেখে ক্ষণিকের জন্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল ইকবাল। সম্বিত ফিরে পেতেই বলল, ‘তুই!’
সাব্বির দ্রুত এসে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলল, ‘রুদ্র ভাই পাঠিয়েছে। ভাগ্যক্রমে আপনার খোঁজ পেয়ে গেলাম। দেখি আপনাকে বের করা যায় কি-না।’
বলতে বলতে ইকবালের বাঁধনগুলো খুলতে শুরু করল।আশার আলো দেখল ইকবাল। অবশেষে তবে মুক্তি! বাঁধন খোলার ফাঁকেই অতি সংক্ষেপে প্রিয়তা অর্থাৎ রাণী মীর্জার ব্যপারে বলল সাব্বিরকে। সব শুনে কেমন বোকা বনে গেল সাব্বির। ওদের সেই সহজসরল ভাবি! সে এসব করেছে! তবে দ্রুতই সামলে নিয়েছে নিজেকে। এখন অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় নেই। কোনমতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ইকবাল। সাব্বির ধরল ওকে। বলল, ‘সাবধানে। চলুন।’
যেতে নিয়েও থেমে গেল ইকবাল। কিছু একটু ভেবে বলল, ‘দাঁড়া! এখান থেকে বের হতে পারব কি-না জানিনা। তাই আগে রুদ্রকে জানাতে হবে ব্যপারটা। ঐ কালনাগিনীর আসল সত্যিটা। কল কর ওকে। দ্রুত!’
সাব্বির মাথা নেড়ে ফোনটা বের করল। ডায়াল করতে যাবে তখনই একটা ছু-রি এসে গেঁথে গেল সাব্বিরের হাতে। চেঁচিয়ে উঠল সাব্বির। ফোন খসে পড়ে গেল। হাত ধরে বসে পড়ল ও। ইকবাল চকিতে তাকাল দরজার দিকে। দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। পরনে কালো টিশার্ট আর জিন্স। চুল ওপরে তুলে ঝুটি করা। ঠোঁটে কুটিল হাসি। একটু আগেই এসেছে ও। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল এরা কী করতে পারে। পেছনে জয় আর তনুজাও আছে। প্রিয়তা এগিয়ে আসতে আসতে বলল, ‘অনেকদিন হল প্রাকটিজ নেই। অথচ টার্গেট এখনো ঠিকঠাক আছে। তাইনা জয়?’
জয় কিছু বলল না। যান্ত্রিকভাবে একটু হাসল। জয় ইকবালের দিকে পি-স্ত-ল তাক করে আছে আর তনুজা সাব্বিরের দিকে। ব্যথায় চোখমুখ বিকৃত হয়ে গেছে সাব্বিরের। ছো-রাটা গভীরভাবে ঢুকে আটকে আছে হাতে। সেদিকে একবার দেখে নিয়ে প্রিয়তা ঠান্ডা গলায় বলল, ‘চুপচাপ চেয়ারটাতে বসে পড়ুন ইকবাল ভাই। নয়তো আমার এক ইশারায় জয়ের গু-লি আপনার মগজ ফু-টো করে বের হবে। ‘
জয়ের দিকে একপলক তাকাল ইকবাল। জানে একটুও মিথ্যে বলছেনা প্রিয়তা। বাধ্য হয়ে চুপচাপ বসে পড়ল চেয়ারে। প্রিয়তা তনুজাকে ইশারা করতেই তুনজা চলে গেল ইকবালকে বাঁধতে। সাব্বির হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল প্রিয়তার দিকে। ওর চেনা প্রিয়তা ভাবির সাথে এই মেয়েকে কোনভাবেই মেলাতে পারল না।
ইকবালকে বাঁধা শেষ হলে প্রিয়তা জয়কে বলল, ‘তুমি এবার হোলস্টারের কাছে চলে যাও জয়। মাইক্রোনে বেশিক্ষণ তোমার আওয়াজ না পেলে রুদ্র সন্দেহ করবে।’
মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল জয়। এই কথোপকথনের সুযোগ নিতে চাইল সাব্বির। নিজের পি-স্ত-লটা বের করে ফেলেছিল। প্রিয়তার দিকে তাক করতে যাবে তখনই ওর হাতে লাথি মারল প্রিয়তা। পি-স্ত-লটা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো। তনুজা গিয়ে তুলে নিল সেটা। সাব্বির লাথি মারতে গেল প্রিয়তাকে। কিন্তু অসাধারণ কৌশলে হাত দিয়েই লাথিটা ফিরিয়ে নিল প্রিয়তা। দক্ষ ভঙ্গিতে লাথি বসাল সাব্বিরের পেটে। সাব্বির পেট চেপে ধরে বসে পড়ল।
‘সাবধান!’ তনুজার পি-স্ত-লটা এখন সাব্বিরের দিকে তাক করা। তাই কোন দুঃসাহসও দেখাতে পারছেনা এখন। প্রিয়তা হাঁটু ভেঙ্গে বসল সাব্বিরের পাশে। চুলের মুঠি ধরে মাথাটা তুলে ধরে বলল, ‘রুদ্রর সঙ্গে আমার একটা অদ্ভুত এক মিল আছে জানিস? ওর মতো আমারও বিশ্বাসঘাতকদের সহজ মৃত্যু দিতে ইচ্ছে হয়না।’
বলেই জঘন্যভাবে ওর হাত থেখে ছু-রিটা টেনে বের হতে আনল প্রিয়তা। ঘর কাঁপিয়ে চিৎকার করল সাব্বির। এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার কথা বলল ইকবাল। ‘প্রিয়তা! মারার হলে ওকে একেবারেই মেরে ফেল। হিংস্র হয়োনা। ও রুদ্রর কথাতে এসেছিল। তোমার স্বামীর কথাতেই এসেছিল।’
সাব্বিরের পেটের একপাশে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিল প্রিয়তা। যন্ত্রণায় আবার আর্তনাদ করল করল সাব্বির। গলগল করে র-ক্ত বেরিয়ে এলো। কোনমতে বলল, ‘ভাবি! আপনি এমন না। এমন করতে পারেনা না আপনি। রুদ্র ভাই জানলে_’
কথাটা শেষ করার আগেই শক্ত একটা চ-ড় পড়ল সাব্বিরের গালে। ইকবাল বন্ধনমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে চেঁচিয়ে বলল, ‘আমি অনুরোধ করছি প্রিয়তা। দয়া করে এটা করোনা।’
প্রিয়তা ইকবালের দিকে তাকিয়ে নিষ্ঠুর হেসে বলল, ‘সেতো আপনিও আমার কথা রাখেননি ইকবাল ভাই। আপনাকে এতো যত্নে রাখার ব্যবস্থা করলাম আমি। অথচ আপনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন! রুদ্রকে সবটা জানাচ্ছিলেন! বিশ্বাস করুন। রুদ্রকে জানানোর চেষ্টাটা না করলে আমি ওকে এভাবে মা-র-তাম না। সত্যি বলছি। কিন্তু রুদ্রকে কেন বলবে ও? কেন?’
ইকবাল বলল, ‘আমি বলেছি বলতে। আমাকে শাস্তি দিতে পারো তুমি।’
‘অবশ্যই দেব। কিন্তু আপনার কথা শুনে ও যে ভুল করেছে তার শাস্তিতো দিতে হবে।’
এরমধ্যে প্রতিরোধ করতে যাচ্ছিল সাব্বির। কিন্তু অসাধারণ ইন্দ্রিয়ের পরিচয় দিয়ে ইকবালের দিকে তাকিয়েই আঘাত প্রতিরোধ করল ও। অতঃপর সাব্বিরের দুটো হাতেরই রগ কেটে ফেলল প্রিয়তা চোখের পলকে। যন্ত্রণায় চিৎকার করতেও ভুলে গেল সাব্বির। রাগে চোখে জল চলে এলো ইকবালের। ছটফট উঠে দাঁড়াতে গিয়েও রশিতে বাঁধা পেল।
‘রুদ্রকে আমার সম্পর্কে কিছু বলার অধিকার নেই কারো। উনি জানবেনা। কিচ্ছু জানবেনা। রুদ্রর সামনে শুধু প্রিয়তা থাকবে। শুধু প্রিয়। রাণী মীর্জা কোনদিন রুদ্রর সামনে যাবেনা। কিছুতেই না। শেষ করে দেব। যে সেই চেষ্টা করবে তাকেই শেষ করে দেব। সব শেষ করে দেব আমি।’
কথাগুলো বলতে বলতে এলোপাথাড়ি সাব্বিরের গায়ে ছু-রি চালাল প্রিয়তা। ইকবাল বাকরুদ্ধ, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। বিশ্বাস করতে পারছেনা নিজের চোখকে। প্রিয়তা! এটা প্রিয়তা! গলা শুকিয়ে গেল তনুজারও। ঘেমে গেছে। ভয়ংকর উদ্মাদিনী মনে হচ্ছে এখন প্রিয়তাকে। অপূর্ব চোখজোড়া হিংস্রতায় লাল হয়ে গেছে। র-ক্তের ছেটা লেগে গেছে পুরো শরীরে। শরীর হীম করা রূপ!
র-ক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের ফ্লোর। আঘাত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে সাব্বিরের গলায় শ্বাসনালী একটানে কে-টে দিয়ে থামল প্রিয়তা। র-ক্তের ছেটা এসে লাগল ওর মুখে। গ-লাকা-টা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে মা-রা গেল সাব্বির। চোখ বন্ধ করে ফেলল ইকবাল। মুখ ঘুরিয়ে নিল তনুজাও। বিড়বিড় করে বলল, ‘পিশাচিনী!’
#চলবে..