প্রেমের_ধাঁরায় #পর্বঃ১৮ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
31

#প্রেমের_ধাঁরায়
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

আরহাম তার সেক্রেটারির মুখে ধৃতির নাম শুনে কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে। তারপর হঠাৎ করেই তার মুখে একটা ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি ফুটে ওঠে। আরহাম শান্ত আরামসে নিজের শারীরিক কসরত শুরু করতে করতে বলে,
“আরশাদ তো দেখছি নিজে থেকেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে। এখন তো আমাকে ওর ক্ষতি করার জন্য আরো বেশি সচেষ্ট হতে হবে।”

বলেই আরহাম নিজের সেক্রেটারিকে নির্দেশ দেয়,
“মিস্টার আশরাফ পাটোয়ারী কে ডাকো, ওনাকে বলো ওনার সাথে আমার অনেক বেশি জরুরি কিছু কথা আছে। উনি যেন সেখানে চলে আসেন।”

“বেশ, আপনি আমাকে যা বলছেন তা আমি ওনাকে তাই বলব। আমি তাহলে আসি।”

“হুম, এসো।”

★★★
গুলশেনারা বেগমের মন আজ সকাল থেকে ভীষণ ভাড়। পুরো বাড়ি জুড়ে উৎসবের আমেজ নামলেও তার মুখে যেন আমাবস্যার চাঁদ জেকে বসেছে। মালিনী পাটোয়ারী, যিনি চারদিকের তদারকি করছিলেন তিনি নিজের শ্বাশুড়ির এই ঝিমানো অবস্থা দেখে কিছুটা হোঁচট খান। যদিও তিনি বেশ আগেই বুঝতে পারছিলেন যে গুলশেনারা বেগম এই বিয়েটাকে এত সহজে মেনে নিতে পারবেন না৷ তবে এখন তিনি যেভাবে নিস্তেজ হয়ে বসে আছেন এতটাও মালিনী পাটোয়ারী আশা করেন নি। তাই তো এগিয়ে এসে বললেন,
“আপনি কি ঠিক আছেন আম্মা? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

গুলশেনারা বেগম সরু অথচ কর্কশ কন্ঠে বলেন,
“আর ঠিক কথা! আমাদের বংশমর্যাদা, আভিজাত্যে দাগ লাগতে চলেছে আর তুমি ঠিক থাকার কথা বলছ!”

মালিনী পাটোয়ারী একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“বিষয়টা এভাবে দেখছেন কেন আপনি আম্মা? একটু স্বাভাবিক ভাবেও তো নিতে পারেন। ফুল অনেক ভালো একটা মেয়ে। ওর সাথে আরহাম অনেক বেশি ভালো থাকবে।”

গুলশেনারা বেগম ক্রোধিত স্বরে বলেন,
“কিন্তু আমি ভালো থাকতে পারছি না। এই বিয়েটা আমার মুখে জুতা মা*রার সম্মান।”

এবার মালিনী পাটোয়ারীও খানিকটা রেগে গিয়ে বলেন,
“আপনি এই ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন আম্মা। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা একদম ঠিক না। এর আগেও আপনি নয়নার সাথে এমন করছিলেন। যার ফলে অনেক গুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে৷ আমি আপনার কাছে অনুরোধ করব, অন্তত ফুলের সাথে এমন কিছু করে একই অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি না করার।”

গুলশেনারা বেগম অটল স্বরে বললেন,
“যদি আমার বংশমর্যাদা রক্ষার জন্য আমাকে আবারো আরো এক বার এই ধরনের অন্যায় করতে হয় তবে আমি হাসতে হাসতে এমন অন্যায় করতে রাজি আছি। তবুও আমার বংশমর্যাদায় কোন আঘাত লাগতে দেব না।”

“আম্মা!”

গুলশেনারা বেগম দম্ভের সাথে স্থান ত্যাগ করেন। তিনি চলে যাবার পর মালিনী পাটোয়ারী হতাশ হয়ে পড়েন। তার মনে নানা শংকা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি মনে মনে ভাবেন,
“আমি কি ফুলের অতীতের সত্যটা সবার থেকে লুকিয়ে কোন ভুল করলাম? আম্মা তো এমনিতেই এত রেগে আছেন। এখন যদি আবার উনি সত্যটা জানতে পারেন তাহলে তো উনি…”

মালিনী পাটোয়ারী আর কিছু ভাবতে পারেন না। তবে তার কাছে এটুকু নিশ্চিত হয়ে যায় যে, এখন যাই কিছু হয়ে যাক না কেন সেটা ধৃতির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

এদিকে,
ধৃতি অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বেলকনি ঘেষে। হঠাৎ নিজের পেছনে কারো একটা অস্তিত্ব টের পেয়ে সে পেছন ফিরে তাকায়। আর এতে করে সে যা দেখে তাতে কিছুটা তব্দা হয়ে যায়। কারণ আরশাদ পকেটে হাত দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ধৃতি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“ওহ আপনি!”

ধৃতির এই কথায় আরশাদ খানিক হেসে বলে,
‘আমি ছাড়া আর কে আসবে?’

ধৃতি সামান্য হাসে। অতঃপর আবারো পেছন ফিরে আকাশের পানে তাকায়। আরশাদ ধৃতিকে জিজ্ঞেস করে,
“কি দেখছ?”

“ঐ অসীম আকাশটাকে দেখছি। আর ভাবছি এই বিশ্বটা কত সুন্দর করেই না সুন্দর করেছেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তাহলে এই পৃথিবীতে এত নিকৃষ্ট রকমের মানুষ কেন সৃষ্টি করেছেন উনি? যারা অন্য মানুষের জীবন নষ্ট করে দেয়?”

ধৃতির এহেন কথায় আরহাম খানিকটা হেসে বলে,
‘এটাই যে পৃথিবীর চিরসত্য। পৃথিবীর একদিকে যখন আলোকময়, অন্যদিকে তখন আঁধার। এই আলো-অন্ধকারের সমীকরণেই যে গড়ে উঠেছে এই পৃথিবী।’

“আপনি ঠিকই বলেছেন৷ আচ্ছা, আমার জীবন কি কখনো আলোময় হবে? নাকি আমার অতীতের কালো অন্ধকার সেই আলোকে গ্রাস করবে?”

আরশাদ ধৃতিকে নিজের খানিকটা কাছে টেনে নিয়ে ধৃতির কাধে হাত রাখে৷ অতঃপর বলে ওঠে,
“আমি আছি তো তোমার জীবনের কালো অন্ধকার অধ্যায় মুছে দিয়ে আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য।”

ধৃতি পরম আবেশে আরশাদের দিকে তাকায়৷ দুজনের দূরত্ব অনেকটাই ঘুচে গিয়েছিল। আরেকটু ঘুচতে যাবে তার পূর্বেই হঠাৎ করে ধৃতির মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। ধৃতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতে যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ করে ধৃতিকে আগলে নেয় আরশাদ। ধৃতির এই অবস্থা দেখে আতংকিত হয়ে বলে,
“কি হয়েছে তোমার ধৃতি? তুমি কি অসুস্থ?”

ধৃতি বলে,
“আমি ঠিক জানি না, হঠাৎ করে মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠল।”

আরশাদ আচমকা একটা অদ্ভুত কাজ করে বসল। ধৃতিকে কোলে তুলে নিল। অতঃপর তাকে কোলে নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ইউ নিড রেস্ট।”

বলেই কিছু সময় পর এসে আরশাদ ধৃতিকে তার রুমে শুইয়ে দিল৷ ধৃতি সেখানে শুয়ে ছিল কিছু সময় ধরে। আরশাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেই বাইরে চলে এলো। বাইরে আসতেই মালিনী পাটোয়ারীর মুখোমুখি হলো। মালিনী পাটোয়ারী আরশাকে দেখে ধন্দে পড়ে গেলেন। আরশাদ মালিনী পাটোয়ারীকে জিজ্ঞেস করল,
“বিয়ের আয়োজন শুরু করে দিয়েছ আম্মু?”

“হু,,”

“আমি আর বেশি দেরি করতে চাই না। কালকেই বিয়েটা সেরে নিতে চাই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার শত্রুতা ওঁত পেতে আছে আমার ক্ষতি করার জন্য৷ তাদের হাত থেকে আমায় নিজেকে আর ধৃতিকে রক্ষা করতে হবেই।”

মালিনী পাটোয়ারীর মনে হঠাৎ কিছু প্রশ্ন জাগে। তাই তিনি আরহামকে জিজ্ঞেস করে বসেন,
“আমাকে কিছু সত্যি কথা বলবে?”

“হুম, বলো।”

“তুমি ধৃতিকে বিয়েটা কেন করতে চাইছ? ওর প্রতি তো তোমার কখনো তেমন অনুভূতি লক্ষ করেছি, হঠাৎ করেই অপরিচিত একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এলে আর এখন তাকে..”

“আম্মু..তুমি এই কথা বলছ। তোমার থেকে অন্তত এটা আশা করিনি৷ দাদি বললেও তাও মানা যেত..”

“আমার কথা এভাবে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না। সত্যিটা বলো।”

“সত্যিটা হলো এটাই যে, আমি ধৃতিকে পছন্দ করি। আর এজন্যই আমি চাই, ধৃতিকে বিয়ে করে ওকে নিজের স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে। ওকে আমি সমাজে একটা সম্মান দিতে চাই। কারণ ওকে প্রথম দেখায় আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ওর নিষ্পাপ মুখ আমায় আকর্ষন করেছিল।”

“তাহলে প্রথমে আনিকাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে কেন?”

“কারণ তখন আমি নিজের ফিলিংস নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু এখন আমি শতভাগ নিশ্চিত যে, আমি ধৃতিকে ভালোবাসি।”

মালিনী পাটোয়ারী আরশাদের এমন সরল স্বীকারোক্তি দেখে ভাবেন আরশাদের কাছ থেকে কোন কিছু লুকানো ঠিক হবে না। তাই সে ঠিক করে আরশাদকে সব জানিয়ে দেবে ধৃতির অতীতের ব্যাপারে। যাতে করে গুলশেনারা বেগম পরে এ নিয়ে আর নতুন কোন সমস্যা করতে না পারেন। এজন্য মালিনী পাটোয়ারী বলতে উদ্যত হন,
“তোমাকে আমার কিছু বলার আছে ধৃতির অতীত..”

মালিনী পাটোয়ারী নিজের বলা কথা শেষই করতে পারেন না তার আগেই ধৃতির রুমের ভেতর থেকে একটা শব্দ ভেসে আসে। যার ফলে আরশাদ ও মালিনী পাটোয়ারী দুজনেই উদ্বিগ্ন হয়ে রুমে প্রবেশ করে। আর প্রবেশ করতেই দেখতে পায় ধৃতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here